নীল হতে নীলান্তে পর্ব ২

#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
দ্বিতীয় পর্ব

কথা -একি আন্কেল আপনি এখানে লেডিস ওয়াশরুমে কেন? জেন্ডস ওয়াশরুম ফেলে?

অরুপ কথার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল-

তোমায় দেখতে এসেছি সুন্দরী! এমন রুপ নিয়ে ঘায়েল করে দিলে বুকে!!
এতরুপ তোমার ঝলসে দিলে যে আমায়!
অরুপ এবার শক্ত করে কথার হাত ধরে রেখেছে।

ইশশ,কি যন্ত্রনা এই পাগল লোক আবার এলো কথা থেকে?
কথা- আন্কেল কি করছেন কি এগুলো!!
আর কি সব বলছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে?

অরুপ- আরে আরে! সুন্দরী দেখি ভয় পাচ্ছে! আহা সুন্দরী ভয় পাচ্ছো কেন?হুম!
কত ডেন্জারাহ কাজ তো এই হাতেই করো তুমি!
দৈনিক কত পরুষের সঙ্গে উঠবস করতে হয় তোমাকে।
ড্রাগস সাপ্লাই করার সময় তো ঠিকই ভয় পাও না।
তাহলে আমায় সময় দিতে ক্ষতি কি বলো!!
বলো না! কথার হাত ধরে।

কথা মনে মনে বলছে- ওহ, এই লোক ও তাহলে কোন ড্রাগস ডিলার হবে।
আমি এই কোম্পানিতে জয়েন আছি বলেই আমাকে ড্রাগস ডিলার ভাবছে। উমম এর থেকে আমাকে ইনফরমেশন বের করতে হবে।
সঙ্গে যে করেই বের ও হতে হবে।
ভেবেই কথা কান্নার ভাব করে আন্কেল আপনি কি ড্রাগস সাপ্লাইয়ার?

অরুপ কথার ছলেই বলে উঠলো – মামনি আমি শুধু ড্রাগস স্পালাইয়ার না এর চেয়ে বড় স্পালাইয়ার!

কথা- আন্কেল বড় অসহায় হয়ে এই জায়গায় এসেছি!
আমার বাবা খুব অসুস্থ! পরিবারে অর্থের সংকট! আমাকে এই পথে নিয়ে এসেছে।
আমি চাইনি এই পথে আসতে।

অরুপ-ওহ, আচ্ছা, ঠিক আছে চলো তোমাদের ডিলারদের সঙ্গে দেখা করে আসি।

– আচ্ছা আন্কেল বলেই কথা অরুপকে নিয়ে
হোটেলের পাচঁ তলার আর একটি রুমে নিয়ে গেল।
কথা এখানে আশার আগেই এখানকার সবকিছুর ইনফরমেশন নিয়েই এসেছে। তাই সে জানে কোথায় কি আছে। তাই সেই পথ অনুসরণ করেই অরুপকে নিয়ে চলল।

– অরুপ রুমটাকে ভালো ভাবে দেখে নিচ্ছে। ঘুরে ঘুরে দেখেই বলতে লাগলো।তোমার ডিলার রা সব কোথায়?
তাদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেও আমায়।
আমি ও দেখি তাদের।

-আসছে আন্কেল, এখুনি চলে আসবে।
কথা মনে মনে বলছে ডিলার না তোমাদের যম আসছে।বলেই কথা শীষ দিল সঙ্গে সঙ্গে রুমের ভিতর একদল লোক ডুকে পরল।
অরুপ বুঝে উঠার আগেই কথা তার মুখের মধ‍্যে কাপড় দিয়ে পেচিয়ে মুখ বন্ধ করে দিল।
অরুপ বেচারা কথার মুখের দিকে চেয়ে আছে।
সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
লোক গুলো দৌড়ে অরুপকে ধরে ফেলেছে।
তারা তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে।
অরুপ চেয়ার থেকে উঠার চেষ্টা করছে।
কথা অরুপের দিকে তাকিয়ে।
ওকে আপনারা দুজন পাহারা দিন !
আর শুনুন এ যেন কোনক্রমে বের হতে না পারে।লোক গুলো থেকে দুজনকে ইশারা করে। আর বাকিরা আমার সঙ্গে আসুন।
______________________________

কথা তিনতলার অডিটোরিয়াম এসে দেখল মোটামুটি সবাই বসে আছে। এখানো মিটিং চলছে।

কথা তাদের মিটিং রুম থেকে বেরিয়েই আলাদা রুমে এসে খুব সতর্কতার সঙ্গে আসপাশ দেখে নিজের হ‍্যান্ডি ওয়াকি-টকি লেডিস ব‍্যাগ থেকে বের করল।
ওয়াকি-টকি চালিয়ে সে বলতে লাগল-

– হ‍্য‍ালো, হ‍্যালো! অর্নিতা আফসারী স্পিকিং! এই মূহুর্তে যে বা যারা ডিউটি তে আছেন এই এলাকায় তারা দয়া করে আমার কথা শুনুন। দয়া করে আমি আবার ও বলছি যে যেখানে আছেন সবাই সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং আমার কথা শুনন।
আমি এখন তিনতলার একটি অডিটোরিয়াম এ অবস্থান করছি। আপনারা ও আমার পথ অনুসরণ করে এই ফ্লোরের এই রুমটিতে চলে আসুন এখুনি।
ওরা সবাই এখনো মিটিংয়ে আছে, তাই নিচে যত লোক আছে
এবং গেইট এ যত লোক আছে সবাইকে বের করে দিন।
একটা বাড়তি লোকজন যেন না থাকে!
মোট কথা কোন সাধারণ লোক যেন আমাদের জন‍্য কোন বিপদের মুখে না পরে সেই নিশ্চয়তা নিয়েই করবেন। আর রইল বাইরের কথা!কেউ যেন কোনভাবে বুঝতে না পারে।
আর শুনোন, ফোর্সদের বলুন খুবই সুক্ষভাবে হোটেল ম‍‍্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে।
কোন হইচই যেন নাহয়!
এখানে আমরা কিসের জন‍্য এসেছি তাও যেন বাহিরে কেউ না জানে! আমরা আমাদের সব কাজ শেষ করার পর বাহিরে তা প্রকাশ হবে।
ইভেন কোন মিডিয়ার লোক ও যেন না শুনে।
গোলাগুলি ও হতে পারে তাই নিজেদের সেফটি নিজেরা বুঝেই আগাবেন! এখানে আপনাদের সেফটি কেউ দিবে না!!

– অরুপের পাশে যে গার্ডরা আছে তাদের ওয়াকি-টকিতে বেজে উঠছে এই সংকেতটি!
এত সুন্দর ভাবে সতর্কতা বানী আজ পর্যন্ত মনে হয় কেউ দেয়নি।
অরুপ বারবার নড়াচড়া করছে। উমম করেও সে পার পাচ্ছে না।
একজন লোক অরুপের মুখ ধরে বলছে।
আহারে বেচারা! এই পথে আসছো যেহেতু মজা তো পাইতেই হবে চান্দু বলেই দুজনে মিলে দাত কেলিয়ে হাসছে।
অরুপ এর কপালটা আজ খুব খারাপ ওয়াকি- টকিটা সে বন্ধ করে রেখেছে। ওটা চালু থাকলে এই দুজন থেকে একটু হলেও রেহাই সে পেত।
অরুপ বেচারার হয়েছে জ্বালা মুখ ও বন্ধ!
কপাল ও মন্দ!!
আরাফ কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে দাড়ালো পাও ঝিমঝিম করছে এতক্ষণ কি বসে থাকা যায়।
অরুপ এসেছে সেই কখন কিন্তু তার দেখাই নেই।

আর দেখো নতুন ম‍্যাডাম ঘোষণা বানী ও দিয়ে দিয়েছে।
_________________________________________

অর্নিতা ফোর্স নিয়ে দরজায় আঘাত করে।
নিজেই সামনে এগিয়ে গেল।
দরজায় ভিতরের পাশে দাড়িয়ে থাকা রানার দরজা খুলে দিলে কথা নিজেই রুমের ভিতর ডুকে পরে।
কথার স‍্যার খানিকটা বিরক্তবোধ করলেন তবে কথাকে দেখে দেখে কিছু বলেনি। আর এর মধ‍্যেই সঙ্গে সঙ্গে পুরো ফোর্সের লোক দরজা দিয়ে ডুকে পিস্তল ও বন্দুকের নিশানা লাগিয়ে দিল সবার সামনে।

অর্নিতার হাতে রিভলবার! যে যেখানে আছেন সবাই দাড়িয়ে পরুন! সবাই! পালানোর চেষ্টা করবেন না! পালানোর চেষ্টা করলে ও লাভ হবে না সমস্ত পুলিশ, র‍্যাব, ডিবির বাহিনী এই হোটেল সহ পুরো এলাকার ছড়িয়ে আছে!
অতএব,আপনাদের আজ কোন নিস্তার ও নেই!

-দাড়িয়ে থাকা সে কোম্পানির মালিক অবাক! কথার হাতে রিভলবার!

নিজেদের পারসোনাল গান বের করার চেষ্টা করবেন না!
একটা গুলি করবেন! , আমার দল হাজার টা গুলি আপনাদের বুকে ছুড়বে!! তাই সাবধান!

– কথার বস থেকে শুরু করে উপস্থিত সব ক্লাইন্ট হতভম্ব!
একটু আগেই কথা তাদের সঙ্গে কি সুন্দর ভাবে কথা বলছিল। আর এখন কিনা তাদেরই বড় শত্রু!!এমনটা তারা আশাও করেনি ।

– স্টাফ এদের সবাইকে ধরুন! কথা ফোর্সের লোকদের উদ্দেশ্যে করে।
সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিশেষ এক কার্যালয়ে! গোয়েন্দা বিভাগের গোপনীয় এক কার্যালয়।
যেখানে সব ধরনের বড় অপরাধীদের ধরা হয় এবং নিয়ে যাওয়া হয়।
_________________________________

অর্নিতার বাবা চলে এসেছেন এইমাত্র তিনিও একটি কাজে চট্টগ্রামের হালিশহরে গিয়েছিলেন।
মেয়ের উপর এতবড় দায়িত্ব তিনি দিতে চাননি তবে মেয়ের জেদ আর আগ্রহ দেখে মেয়েকে তারই সংস্থায় কাজ করতে দিয়েছেন।
মেয়ের প্রতি বিশ্বাস তার বরাবরই ছিল।
এখনো আছে তবে যেকোন সময় দূর্ঘটনায় পরার আগে সবকিছু নিয়েই ভাবতে হয় বা পরিকল্পনা করতে হয়।
আগুন নিয়ে খেলতে হলে আগুনের উত্তাপ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে তা তিনি ভালো করেই শিখিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here