#পরানের দুলাভাই
#সেলিনা আক্তার শাহারা”
#পর্ব—-১৫
—————————-
মিতু সেই কখন থেকে নিতুর সাথে তার রুম এ বসে আছে, তাই আর মুগ্ধ ঐদিকে যায় নি তবে ঘরে কি হচ্ছে তা একটু পর পরই খেয়াল রাখছে কারন মিতুকে বিশ্বাস নেই, সে যে কোন সময় কিছু একটা করে ফেলতে পারে,
সন্ধা হয়ে এলো মিতুর ঘর থেকে বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই, এবার মুগ্ধ ঘরে ঢুকে নিতুকে বললো হল এবার তোমাদের নিতু মিতুর সাথে হাসাহাসি করছিলো, তাই হাসিটা দুমিয়ে বললো আরে আসুন না বসুন আমাদের সাথে,
মুগ্ধ কিছু বললোনা গিয়ে সোফায় ল্যাপটপ টা নিয়ে বসলো,
মিতু একটু আসছে বলেই চলে গেলো,
সাগর উদাস হয়ে ছাদের এক কোনায় দারিয়ে আছে, বাহিরে হালকা অন্ধকার ছেয়ে এসেছে, একটু পরই পুরা অন্ধকার হয়ে জাবে,
মিতু সেই সুজোগটাই খুজছিলো, তাই সে সাগর এর পাশে গিয়ে দারালো,
সাগর মিতুকে দেখে চলে জেতে নিলো, মিতু দুলাভাই বলে ডাক দিয়ে বললো,
মনের অশান্তির কারন তো আর আমি নই দুলাভাই তাই আমার কাছ থেকে কেন পালাচ্ছেন,
যার জন্য আমার উপর রাগ হয়ে আছেন সে তো দিব্বি সংসার করছে ২ দিন পর বংশের বাতিও আসতে চলেছে,
আপনারতো এখন ও কোন বাচ্চা কাচ্চা হল না, কি ফুটা কপাল আপনার চ্চু চ্চু বলেই বাকা হাসি দিয়ে আফসুস করলো নাকি সাগর এর রাগ টা আরো বাড়িয়ে দিলো বুঝাটা দায় হয়ে পরেছে সাগর এর জন্য,
সাগর কিছু বললোনা অন্য দিক তাকিয়ে বললো তুমার এত চিন্তা না করলেও হবে, এখানে থেকে জাও তুমি আমার সালার বৌ এর বোন সেই হিসেবেই থেকো এর বেশি কিছু না,
মিতু হালকা হেসে বললো বাহ বা তেজ তো ভালোই দুলাভাই আপনার, আমিইতো আপনার সালা বৌ হতাম বাস একটুর জন্য মিস হয়ে গেলো, থাক ওসব কিন্তু আপনি আপনার তো এত মন মত মেয়ে পেয়েও আপনায় সন্তান সুখ দিতে পারলো না অনিকা আপু, আপনি নেহাত ভালো মানুষ, আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এমন বৌকে ডিভোর্স দিয়ে, আবার বিয়ে করে বাচ্চার মুখ দেখতে, আপনি মরলেও তো আপনার কবরে দুমুঠো মাটি ও পাওয়ার নসিব হবে না আপন কারো কাছ থেকে।
যাই হোক আমি চললাম, বলেই মিতু হাসতে হাসতে ছাদ থেকে নেমে গেলো, মিতু মনে মনে বলছে এতো প্রথম ডোজ দিলাম সাগর সাহেব, আপনায় তো শান্তি দিতে পারিনা নিজের বোন কে এত বড় শাস্তি দিতে চলেছি, আর আপনিতো পরই, আপনিই নিতুকে বিয়ে করতে মুগ্ধকে বাদ্ধ করেছিলেন/ আমিও দেখতে চাই কি করে মনের মানুষ কে নিয়ে সুখে সংসার করেন,
এদিকে রাতের রান্না শেষ করে বের হচ্ছে অনিকা কনিকা,, কাজের মেয়েরাই সব রেডি করেছে ওরা রান্নাটা করলো শুধু, নিতুকে ভুলেও রান্না ঘর এর এদিকে আসতে দেয় না মুগ্ধর মা, রাতের খাবার টেবিল বসেছে সবাই সাগর এর চেয়ার টা খালি, তাই মুগ্ধর বাবা বললো আরো সাগর কোথায়?
( অনিকা কি বলবে সাগর আসতে চায় না সে তার সন্তান শুকে ভুগছে, মনে মনে)
কিরে আপু দুলাভাই কোথায়( মুগ্ধ)
ওহ ওর মাথাটা ধরেছে একটু পর খাবে ( অনিকা মাথা নত করে)
মুগ্ধ শুধু অনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে বললো হুম বুঝেছি আপু/
বিলাশ এর কোন দিকো খেয়াল নেই রসিক মানুষ বিলাশ সে তার খাওয়া খাচ্ছে আর নিতু কে জ্বালাচ্ছে,
নিতু অনিকার কথা টা একটু হলেও বুঝতে পারছে,
কারন কয়দিন ধরেই সাগর এমন আচরন করছে,
খাওয়ার শেষে সবাই রুম এ চলে গেলো মিতু ও হাই তুলে বললো ঘুম পাচ্ছে নিতু আমি জাই,
মুগ্ধ যেনো হাফ ছেরে বাচলো, যে আবার ওর রুম এ আড্ডায় আর বসা হবে না,
নিতুও রুম এ ঢুকে সোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মুগ্ধ পিছন থেকে এসে নিতুকে জরিয়ে ধরে আদর করছে,
হুম জনাব কি হল শুনি( নিতু)
হবে আবার কি আদর হচ্ছে ( মুগ্ধর গারে নাক ঘসতে ঘসতে)
নিতু মুগ্ধকে ছারিয়ে বললো না না আমি ঘুমাবো,
তো ঘুমাও তুমি আমি আদর করি, ( মুগ্ধ)
নিতু এবার দৌড় দিয়ে রুম এ বাহিরে চলে গেলো,
গিয়েই অনিকার সাথে ধাক্কা খেলো,
আহা এত দৌরাচ্ছো কেন?
ব্যাথা পেয়ে গেলে কি হবে শুনি( অনিকা হালকা ধমক সুরে)
নিতু এবার চুপ করে দারিয়ে আছে মুগ্ধও নিতুর পিছন পিছন এসেছে,
অনিকা এবার তার হাতে থাকা দুধ এর গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বললো নাও একটানে খেয়ে নাও দেখি মুচকি হাসি দিয়ে/
নিতুও গ্লাস টা হাতে নিয়ে দুধটা মুখে দেয়ার আগেই মিতু দৌড়ে এসে গ্লাসটা নিতুর হাত থেকে নিয়ে নিচে ফেলে দিলো,
গ্লাস ভাংগার আওয়াজ এ,মুগ্ধর মা রান্না ঘড় থেকে দৌড়ে এলো সবাই যার যার রুম থেকে বের এল কিসের শব্দ হল তা জানতে।
সবার নজর দুধ এর গ্লাসের দিকে পুরো ফ্লোর ছিটকে আছে দুধও গ্লাস এর টোকরা,
অনিকা আর নিতু বেকার মত হা হয়ে আছে,
মুগ্ধের রাগ কখনো প্রকাস না করলেও এই মিতুটা তার রাগ চরম পর্যায়ে উঠিয়ে দেয়,
মুগ্ধ আর দেরি না করে মিতুর এক হাত এ চেপে ধরে বললো এটা কি হল কি কেন ফেলে দিলেন নিতুর দুধ এর গ্লাস কেন ( চিৎকার করছে মুগ্ধ)
মিতু এবার চোখ ভিজিয়ে বললো মুগ্ধ ঐ গ্লাসে বিষ ছিলো!!!!
নিতু বিষ নাম টা শুনেই তার হাতটা পেট এ দিয়ে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে মিতুর দিকে।
, এবার মুগ্ধ দাতেঁ দাতঁ চেপে বললো সব কিছুর একটা লিমিট আছে মিতু আমি তুমায় বরদাস্ত করছি কারন তুমি নিতুর বোন বলে নয়তো!!!
কথাটা পুরা শেষ করার আগেই মিতু এক ঝটকায় মুগ্ধর কাছ থেকে হাত ছারিয়ে বললো হ্যা আমি নিতুর বোন আর তাই ওর কোন ক্ষতি হতে আমি দিব না,অনিকা আপু নিতুর দুধ এর মধ্যে বিষ মিশিয়েছে জাতে তোমাদের বাচ্চা টা নষ্ট হয়ে জায়।
সবাই শক মিতুর কথায় নিতু এক হাত পিছন এ গিয়ে ধপ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে পরে, মুগ্ধও বাকরুদ্ধ্য হয়ে আছে, মুগ্ধর মা কি বলবে বুঝতে পারছেনা সাগর শুধু সব শুনছে পিছন এ দারিয়ে কনিকা আর বিলাশ মুখ টা বন্ধই রেখেছে এখানে কথা বলা মানে বাঘের মুখ হাত দেয়া যা করার মুগ্ধই করবে।
এটা বেশি বারা বারি হয়ে যাচ্ছে মিতু ব্যাস বেরিয়ে জাও আমার বাড়ি থেকে, ( মুগ্ধ)
হ্যা বেরিয়ে জাবো তবে সব বলে জাবো, তেমার বোন এর বাচ্চা হয় নি তাই হিংষা করছে, আর তাই সে দুধ এ বিষ মিষিয়েছে, আমি নিজ চোখে দেখেছি অনিকা আপুকে বিষ মিশাতে এই দেখো বিষ এর খালি বোতল( একটা বিষ এর বোতল সবাই কে দেখিয়ে)
বাড়ির সবাই তা এগিয়ে দেখছে,
মুগ্ধ কিছুতেই বিশ্বাস করতে রাজি নয়,
সবার মুখের বুলি জেনো বন্ধ হয়ে গেছে/
মিতু আবার বলে উঠলো কি হল কেও কিছু বলছেন না কেন?
আমার বোন বা তার বাচ্চার জদি কিছু হয়ে জায় তাহলে আমি কাওকে ছারব না, আমার বোন কে আমি আমাদের বাসায় রাখবো এখানে থাকতে দেবোনা,
মুগ্ধ এখানে নিতু থাকলে তোমার বাচ্চাও নিতুর প্রানের ঝুকি আছে ,
মুগ্ধ এবার নিরবতা ভেংগে বললো আমার বোন এমন নিচু মনের নয় মিতু, যে নিজের বাচ্চা নেই বলে অন্যের বাচ্চা সে নষ্ট করবে, আমি আর এ বিষয়ে একটা কথা শুনতে চাই না,
বলে মুগ্ধ তার রুম এ চলে গেলো, অনিকা ফ্লোরে কখন থেকে পাগল এর মত বসে আছে, চোখ দিয়ে পানি ঝরছে একটু আগে লাগানো এমন দুষ সে মানতে পারছে না,
কেন নিজের ভাই এর বাচ্চা নষ্ট করবো সে তো আমাদেরই রক্ত মিতু এমনটা কিভাবে বলতে পারলো,অনিকার গলা থেকে আওয়াজ নামছে না, সে বলতে চেয়েও পারছে না যে এমন জঘ্যন্ন কাজ সে করে নি,
সাগর তার রুম এ চলে গেলো , কনিকার স্বামি বাহির থেকে একটা বিড়াল ধরে এনে ফেলা দুধ টুকু খেতে দিলো,
বিড়াল টা দুধ টুকু চেটে খাওয়া ২ মিনিট পরই নাক মুখ দিকে রক্ত বেরিয়ে ছটফট করে মারা গেলো,
এতে সবাই অনেক ভয় পেয়ে গেলো বিষ যেই মিশিয়ে ছে না কেন,নিতু এটা খেয়ে ফেললে কি হত,
মিতু এবার বিশ্ব জয়ি হাসি দিয়ে মনে মনে বললো একেই বলে এক ঢিল এ দুই পাখি মারা,
সাগর এর চোখে অনিকা কে বিষিয়ে দিলাম, মুগ্ধর মনে একটু হলেও আমার প্রতি বিশ্বাস জন্মেছে তাই আর কথা না বলে চলে গেছে, আর নিতুতো আগেই আমায় বিশ্বাস করেছিলো এবার বিশ্বাস টা আরো গারো হল। এবার আমার প্লেনটা সাক্সেস হতে সমস্যা হবে না।
মুগ্ধর মা আর কনিকা নিতুর কাছে গিয়ে বললো মা নিতু, অনিকা এই কাজ কখনোই করতে পারেনা তুই ভুল বুঝিস না,
নিতু কিছু না বলে তার রুম এ চলে গেলো,
মুগ্ধর মা আর কনিকা মিলে অনিকা কে উঠিয়ে রুম জেতে বললো, অনিকা এবার জুরে হাও মাও করে কাদঁছে, আর বলছে মা আমি এমন কাজ করিনি করতে পারিনা নিমের রক্তকে কি কেউ মেরে ফেলতে পারে বলো মা বলে,
কনিকা এবার অনিকার চোখ এর পানি মুছে বললো তুই কাদিস না এসব মিতু করেছে মুগ্ধ বিশ্বাস করেনি রে তুই শান্ত হো কেউ বিশ্বাস করিনা মিতুর কথা,
কারন এমন কিছু করতে চাইলে তো তুই আগেই করতে পারতি, কিন্তু আজ মিতু আসার পরই কেন এমনটা হল বল,
তুই কাদিস না রুমে জা,
বলেই অনিকাকে তার রুম এর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে গেলো,
নিতু রুমে গিয়ে দেখে মুগ্ধ আধশোয়া হয়ে কপালে হাত ভাজ করে শুয়ে আছে।
নিতু গিয়ে মুগ্ধর পাশে বসে, মুগ্ধর চুল এএ হাত দিতেই মুগ্ধ চট করে উঠে নিতুকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পরেছে, আর বলছে নিতু আজ জদি তোমার বা আমার বাচ্চার কিছু হয়ে জেতো তাহলে আমি কি নিয়ে বাচঁতাম বলো কি নিয়ে, কপাল ভালে মিতু এসে দুধ টুকু ফেলে দিয়েছিলো।
নিতু এবার মুগ্ধকে বললে তোমার কি সত্যি মনে হয় অনিকা আপু এই কাজ করেছে,
না নিতু একদমই না তবে চোখ এর সামনে জা হল তাতে!!!( মুগ্ধ)
নিতু এবার মুচকি হাসি দিয়ে বললো আমরা চোখের সামনে যা দেখি তা সব সময় সত্য হবে এমন তো কোন কথা নেই।
মানে??( মুগ্ধ)
মানেটাই তো খুজতে হবে আমাদের( নিতু)
নিতু এবার মুগ্ধকে তার বুকো টেনে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরেছে,
নিতু মুগ্ধর চুল হাত বুলাচ্ছে আর ভাবছে কপাল গুনে কি স্বামী পেলাম, আমায় শান্তনা দিবে তা না নিজেই বাচ্চাদের মত কান্না করে জাচ্ছে,
তাই নিতুই মুগ্ধকে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে অনিকা কখন থেকে খাটের এক কেনায় বসে আছে, সাগর অনিকার দিকে অপলক ভাবে রাগে চেয়ে আছে,
নিরবতা ভেংগে সাগর বলে উঠলো ছি অনিকা ছি এমন জঘন্ন কাজ কি করে করতে পারলে, নিজের ভাইয়ের সন্তান নস্ট করতে চাইছিলে নিজের বাচ্চা হয় নি বলে???
অনিকা এত কষ্ট তখন ও পায় নি যখন মিতু কথা শুনাচ্ছিলো, কিন্তু সাগরও কিনা তাকে ভুল বুঝলো এই তার বিশ্বাস এই সাগর তো অনিকার নয়।
সাগর আবার কঠিন গলায় বলে উঠে এমন বন্ধা আর খুনির সাথে আমার কেন সম্পর্ক থাকতে পারে না,
আমি ডিভোর্স চাই বাস////
এই কথাটায় যেনো অনিকার মাথায় আকাশ ভেংগে পরেছে, কি বললো এখন সাগর, কি বললো ও বার বার ওর কানে গুজছে তাহলে কি অনিকা ভুল শুনলো না তো না না এমন কথা সাগর বলতে পারে না কখনই না।
মিতু তার রুম বসে একাই দাবা খেলছে,
আর একটা উজিরকে আউট করে দিয়ে বললো এবার রাজার কাছে পৌছানোর রাস্তা সোজা হয়ে দারিয়েছে,
ইস তখন জদি ঐ অনিকাটা দুধটা রেখে অন্য কাজে মন না দিতো তাহলে আমি বিষটা মিসাতেই পারতাম না।
কালকে হবে ফাইনাল আরেক ডুস বলেই হেসে দিলো মিতু//
চলবে??