#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:১০
এনগেজমেন্ট এ আংটি বদল করতে গিয়ে বাঁধলো বিপত্তি।আদ্রিয়ান এর হাতে ব্যান্ডেজ।
জাফর:হাত কিভাবে কাটলো আদ্রিয়ান?
আদ্রিয়ান:অসাবধানতায়।
আদ্রিয়ানের মা:এবার আংটি বদল কি করে হবে?
বিথী:আব..থাক না ।যখন হাত ঠিক হবে তখন পরিয়ে দিবো।
সবাই সম্মতি জানালো।নিচে সবাই মজা করলেও আদ্রিয়ান ছাদে চলে গেলো।ভালোলাগছে না তার কিছু।যখন অরিন ওর ধারণা ছিল অরিন ওকে ধোঁকা দিয়েছে,তখন ও নিজ এলাকায় ফিরে আসে। কারো সাথে কথা বলত না,গম্ভীর হয়ে থাকতো।ঠিক মত খেতো না। আদ্রিয়ানের মা আদ্রিয়ানের এই অবস্থা মানতে পারছিলেন না।তাই ঠিক করলেন আদ্রিয়ানের বিয়ে দিবেন।কিন্তু আদ্রিয়ান রাজি না। পরে আদ্রিয়ান এর মামা অসুস্থ হলে সে জানায় সে তার মেয়েকে আদ্রিয়ান এর সাথে বিয়ে দিতে চায়।তখনও আদ্রিয়ান আপত্তি জানায়।কিন্তু মামার করুন অবস্থার কথা আর সবার জোরাজুরিতে রাজি হয় আদ্রিয়ান।আজ যদি হৃদিতা এই কাজ না করতো তাহলে হয়তো ও আর অরিন এক থাকতো।অবশ্য হৃদিতা সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া যায় না।ওর কিংবা অরিনের একবার হলেও খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল আসল ঘটনা কি।ওদের ভুলের শাস্তিই ওরা পাচ্ছে।
আজ গায়ে হলুদ।বিথী দুপুরে সবার ঘরে উকি দিচ্ছে। শেষে আকাশের ঘরে উকি দিতেই দেখে ঘর ফাঁকা।বিথী চুপি চুপি ঘরে ঢুকলো।উদ্দেশ্য আকাশের ওই ডায়রি।বিথীর অজানা জিনিসের প্রতি কৌতূহল বেশি ।অনেক খুজাখুজি করে ডায়রি টা পেলো।আর নিয়েই এক দৌড়ে নিজের রুমে।দরজা আটকে বিছানায় আয়েশ করে বসলো।ডায়রি পড়া শুরু করলো।বেশ কয়েকটা পাতায় তাদের নিয়মিত কাহিনী।এক পাতায় গিয়ে থমকে গেলো বিথী।তার হাস্যজ্বল এক ছবি ডায়রি তে সুন্দর করে গল্পের পাপড়ি দাড়া আবদ্ধ করে লাগানো।আর ছবির নিচে লেখা “মনের রানী”
বিথী পরের পাতা উল্টালো।আকাশের প্রথম দেখায় বিথীর আলাপ।
“আজ দিনটা সত্যি খুব সুন্দর,অবশেষে নিজের দেশে ফিরেছি(আকাশ আগে সিডনি থাকতো)প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো মুহুর্ত শ্রেষ্ট।আর আজ যে আমার মনের রানীকেও দেখতে পেলাম।এতদিন শুধু লামিয়ার থেকে ছবি নিতাম।আজ সামনা সামনি দেখলাম।একদম ছোট পরি।আর এই পরিটা জানেও না তাকে কেও পাগলের মতো ভালোবাসে।”
লেখাটুকু পড়ে স্তব্ধ বিথী।আরো পড়তে লাগলো।প্রতিটা পাতায় তাকে নিয়ে লিখা কবিতা।তাকে নিয়ে লিখা ছন্দ।তার নামের প্রেমকথন।বিথীর চোখ দিয়ে অজান্তেই জল পড়ছে।
“আজ বিথীর খুশির দিন।অবশেষে ও ওর মনের মানুষকে পেতে চলেছে।আদ্রিয়ান!খুব ভালোবাসে বিথী ওকে।আমি?আমার ভাগ্যে বিথী ছিল না ।তাই তো ওর মনে আমার বাস নেই ।ভেবেছিলাম ওকে নিজের মনের কথা জানাবো, কিন্তু তার আগেই জানতে পারলাম বিথী আদ্রিয়ান মানে ওর ফুফাতো ভাই কে ভালোবাসে।আমার ভালোবাসা আর প্রকাশ করা হলো।আর ও কোনোদিন জানবেও না এই আকাশ নামে ওর এক পাগল প্রেমী আছে।জানতে দেবো না আমি।থাক না সুখে ওর মনের মানুষের সাথে। ভালোবাসলেই যে পেতে হয় ,এমন কোনো মানে আছে নাকি?”
বিথী মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। পরবর্তী কয়েকটা পাতা উল্টানোর পর দেখলো এনগেজমেন্টের আগের কথা লিখা।
“কালকে বিথীর এনগেজমেন্ট,আর আমাকে খালু সব দায়িত্ব দিয়েছে।আমি ই প্রথম ব্যাক্তি যে কিনা নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ের দায়িত্বে আছি।ভাগ্য!!বিথী কে খুব খুশি লাগছে ।নিজের ভালোবাসার মানুষকে খুশি দেখলেই আনন্দ লাগে। ফ্যামিলির সব কাজিনদের তুই করে ডাকলেও ওকে তুমি ডাকতাম।কিন্তু আজ থেকে হয়তো সেই ভেবে তুমি ডাকা হবে না।কারণ কালকে সে অন্য কারোর হয় যাবে।আর আমি?হয়তো মধ্যরাতের ওই চাঁদের মত একাকী থাকবো,কিন্তু কেনো এত কষ্ট হচ্ছে?আচ্ছা বিথী কে ছাড়া বাঁচতে পারব তো?যাকে নিয়ে সেই স্কুল লাইফ থেকে স্বপ্ন দেখতাম,তাকে ছাড়া বাঁচতে পারব?”
নিচে কিছু লাইন লিখা,
“হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দনে আছো তুমি,
প্রতিটা অনুভবে তুমি…..
অনুভূতি গুলো উকি মেরে বলে
হৃদমাঝারে শুধু তুমি”-
(~সাবরিন জাহান~)
বিথী আর পড়তে পারলো না,ডুকরে কেঁদে উঠলো।কেও ওকে এতটা পাগলের মত ভালোবাসে যে ওর জন্য নিজের সব দিয়ে দিতে পারে।দরজায় টোকা পড়ায় বিথী চোখ মুছে হাসি মুখে দরজা খুললো।তনয়া,লামিয়া,সোহা,আরিফা,অরিন সবাই ওকে সাজাতে এসেছে।কিছুক্ষণ পর যে গায়ে হলুদ।লামিয়ার প্রত্যেকটা কথার মানে এখন বুঝেছে বিথী।কোনো বোন তার ভাইকে কি এভাবে দেখতে পারে।সাজানোর পর বিথীকে স্টেজ এ নিয়ে গেলো।নিজের ভালোবাসার মানুষের হবু বউকে নিজে সাজাচ্ছে ভাবতেই বুক মুচড়ে উঠে অরিনের।দূরে আকাশ দাড়িয়ে বিথীকে দেখছে।আর এই কয়েকজন ভালোবাসার মানুষের কষ্টের সাক্ষী হিসেবে আছে তনয়া,আরিফা,সামান্তা,হৃদিতা,অনিক,সাগর,মমি আর লামিয়া। পরিণতি কী সত্যি এরকম অপূর্ণ রইবে?
বিথীর মা:আকাশ,অরিন এদিকে আয়।তোরা হলুদ লাগাবি না বিথী আর আদ্রিয়ানকে?
অরিন আর আকাশ হাসি মুখে গেলো।আকাশ আদ্রিয়ানকে হলুদ লাগিয়ে বিথীকে হলুদ দিতে গিয়ে ওর চোখ ছল ছল করে উঠলো।জলদি করে স্টেজ থেকে নেমে গেলো।ওর চোখের জল কেও না দেখলেও বিথী আর লামিয়া দেখেছে।অরিন বীথি কে হলুদ দিয়ে আদ্রিয়ান কে কাঁপা হাতে হলুদ লাগলো। দুইজনেরই চোখে জল।অরিন আর থাকতে পারলো না দৌড়ে ছাদে চলে গেলো।বুক ফেটে কান্না আসছে ওর।সবাই কাজে বিজি হওয়ায় সবাইকে ফাঁকি দিয়ে আদ্রিয়ান ছাদে আসলো।অরিন আকাশের ঐ চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে।
আদ্রিয়ান:অরিন!
অরিন তাকালো, আদ্রিয়ানেরও চোখে পানি।
অরিন:এডি!কাঁদছো কেন?
আদ্রিয়ান:সত্যি কি হৃদিতার ওই সাজানো নাটকের জন্য আমাদের এত বছরের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে হবে?
অরিন:উপায় নেই, যা হবে ভালোর জন্যই হবে।কি বলোতো,ভাগ্য না ..চায় না আমরা এক থাকি।তাইতো আজ আলাদা আমরা।
আদ্রিয়ান:কিন্তু আমি কে তোমাকে ছাড়া অন্য কাওকে মানতে পারবো না।আমার হৃদমাঝারে যে শুধু তুমি।
অরিন:মানতে হবে এডি।বিথী খুব ভালো।প্লিজ ওকে কষ্ট দিও না আর ভুলে যাও আমাদের মধ্যে কিছু ছিল।
বলেই চলে আসার জন্য পা বাড়ালেই আদ্রিয়ান বলে উঠে,
আদ্রিয়ান:অরি পাখি!শেষ বারের মত জড়িয়ে ধরবে?কালকেই তো সারাজীবনের মত আলাদা হয়ে যাবো আমরা।প্লিজ
অরিন ঝাপটে ধরলো আদ্রিয়ান কে।ওর ও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু দুইজনই নিরুপায়।অরিন আর পারলো না ,আদ্রিয়ান কে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে উঠলো।আদ্রিয়ান ওকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর অরিন আদ্রিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল।আদ্রিয়ান মলিন চোখে তাকালো ।অরিন এক দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।আদ্রিয়ান ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো,
আদ্রিয়ান:এমনটা কেন হলো,পারতো তো সব ঠিক হতে।
অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়লো আদ্রিয়ানের চোখ থেকে।আর এসব দেখে নিজের অজান্তেই পিছাতে লাগলো বিথী।তখন আদ্রিয়ানকে আসতে দেখে ওর পিছু নিয়েছিলো।আর যা বুঝার বুঝে গিয়েছে।আদ্রিয়ান আর অরিন একে অপরকে ভালবাসে!!
থাকলো না আর ওখানে নিজ রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো।আর আকাশ পুকুর পাড়ে বসে সিগারেট টানছে।কি করবে?কষ্টে যে ওর বুক ভারী হয়ে যাচ্ছে।এত চেষ্টার পরও আর পারলো না কান্না আটকাতে।পাশে থাকা নিজের বোনকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
আকাশ:বোন আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে রে। পারছিনা রে।খুব কষ্ট হচ্ছে।
লামিয়া কি বলবে? ও নিজেও পারছে না আর সইতে নিজের ভাইয়ের এই কষ্ট।অরিন কে সামলাচ্ছে হৃদিতা আর মমি ।কিন্তু কেও পারছেনা। কেঁদেই চলেছে। ভালোবাসার দহনে পুড়ছে সবাই।ভালোবাসায় এত কষ্ট না থাকলে কি খুব ক্ষতি হত।আজ চার চারটে প্রাণ নিজের ভালোবাসার জন্য কাঁদছে।কি হবে পরবর্তীতে?
“দুনিয়া এ জিত গেই
দিল হার গেয়া..
নেহি সচা থা মিল কার
কাভি হংগে জুদা…
ও খুদা..বাতা দে কেয়া লাকি রোমে লিখা
হামনে তো.. হাম্নে তো বাছ ইশক হি কিয়া”
#চলবে
(