#নিয়তি
#সেলিনা আক্তার শাহারা
#পর্ব—-৫
___________________
তুর্জের পা চালানো বন্ধ হয়ে গেলো,
নেশা ভরা চোখে নন্দিনির দিকে এগুতে গিয়েও চোখ আটকে গেলো বিছানায় রাখা কাপরের উপর,(শার্ট পেন্ট!!!
তাহলে ও এমন বললো কেন শাড়ি পরতে, কাপরতো সব আছে!
তুর্জের যা বুঝার বুঝে নিয়েছে, কোন কথা না বলে ওখান থেকে একটা নীল শার্ট আর কালো জিন্সটা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো,
অবশ্য সে জিন্স পরে না, কারন তার প্রফেশনে এটা মানায় না বিধায়,
নন্দিনির হাসি এবার থেমেছে দরজা ধম করে আটকানোর শব্দে,
বুইড়াটা কি রেগে গেলো নাকি, অনেক ক্ষন পর তুর্জ ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছে, গায়ে যা বাজে গন্ধ লাগছিলো অবশেষ তা এখন নেই,
তুর্জ বের হওয়ার পর নন্দিনির আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমে এগুচ্ছে, যেতে যেতে তুর্জ কে এক নজর দেখে নিলো পুরাই হিরো লাগছে মন চাইছে গাল দুটো টেনে দেই,
চুপ করে নন্দিনি ভিতরে ঢুকে গেলো,
একটু পর সেও বের হল তবে অবাক করা কান্ড হল দুজনের কাপরই নিল রংগের,
নন্দিনি তা খেয়াল করেনি, পরো অবশ্য রুম থেকে বের হওয়ার পর তার জেঠিমার কথায় খেয়াল করে দেখে ঠিকইতো, নন্দিনির জেঠিমা দুজন কে দেখে বললো বাববাহ মিয়া বিবি এক রংগে মেখেছিস নাকি,
জেঠিমার কথায় তুর্জও বোকা হয়ে গেলো আমি নিল পরলাম তাই কি নন্দিনিও নিল পরলো নাকি??কেন পরলো।
কেও আর কোন শব্দ করে নি চুপ করে নন্দিনি তুলিকে খাওয়াতে লাগলো নিজেও মুখেও একটু দিলো,
সবাই খাবার মুখে দিয়ে অবাক,কি বিচ্ছি স্বাদ এগুলা কি মানুষ খায় নাকি!!
সবাই কিছু না বলে মুখে নিয়ে আর গিলতে পারছেনা এবার তুর্জ ওর শশুর আর জেঠু মুখে নিয়েই নিজেরাই ওয়াক থু থু করতে করতে ওয়াস রুমে ঢুকে গেলো,
এতে সবাই হাসিতে মেতে উঠেছে কি বড় বড় কথা আর এখন কি রান্না করলো তা কুকুরও মুখে তুলবেনা,
তিন জন অপরাধির মত মাথা নত করে দারিয়ে আছে কি নাকটাই না কাটা গেলো, কেন যে পাংগা নিতে গেলাম, নন্দিনি চুপ চাপ বসে আছে কিছু বলছে না,
এখন কি না খেয়ে থাকতে হবে নাকি! জেঠিমার করুন স্বরে নন্দিনি সোজা রান্না ঘর থেকে খাবার এনে সবাইকে দিলো, সবাই অবাক খাবার কোথা থেকে এলো!!
নন্দিন খাবার দিতে দিতে বললো আসলে তোমরা চলে জাওয়ার পর আমি এই সাদা ভাত আর চিংড়ি ভূনা /মাছের ডিম ভাজি করে ফেলেছিলাম, আমি আগেই জানতাম এগুলো খাওয়া জাবেনা,
আর উনিতো সবজিতে অল্প দুধ চিনিও মিশিয়েছে তা দেখেছিলাম। ( সবাই আবুল হয়ে রইলো)
সবাই আর কথাই বললোনা চুপ করে খাচ্ছে কারন খুব খিদাও পেয়েছে নাস্তা সেরেই দুপুরের খাবার তৈরিতে লেগেছিলো তাও একটা ডিসও ভালো হল না ধ্যাত।
সবাই খেয়েছে তবে তুর্জের খাওয়া হল না কারন সে খুব লজ্জিত হল একেই তো বুড়ো বুড়ো বলে খেপায় এখন তো আরেকটা পেলো,
খাওয়া শেষে সবাই যার যার রুমে চলে গেলো,
তুর্জও রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো তুলিও ঘুমিয়েছে, এই সুজোগটাই নন্দিনি খুজছিলো নিলয়ের কাছে জাওয়া একটু দূর থেকে দেখবো তাকে সে যে অক্সিজেন এক নজর না দেখলে দম আটকে যায়।
আর জানতে চাইবো কেন এমন টা করলো, সবইতো ঠিক ছিলো তাহলে কেন দূরে সরে গেলো, তবে আমার মনে হয় না নিলয় অন্য কারোর জন্যে আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে,
ওকে আমি খুব ভালো করে চিনি,
সেদিন নিলয়ের ফিরিয়ে দেওয়ার পর আর দেখা হয় নি তাই নন্দিনির বহু পশ্নের জবাব পাওয়া বাকি,
যে ছেলে কিনা এক দিন না দেখলে, দেয়াল টপকে বাড়ি এসেছে সেই মানুষটা কি করে এখন আছে আমায় তা দেখতে হবে,
তুর্জের চোখ লেগে গেছে সেই কখন, কিন্তু নন্দিনি শাড়ির আচল কাচু মাচু করে যাচ্ছে কারন কি বলে বের হবে! আর জদি এর মধ্যে ওনি উঠ পরে,,
আর উঠলেই কি আমি কি ভয় পাই নাকি, আমার লাইফ যা খুশি করবো কারো মতামত আমি গ্রহন করবো না,
নন্দিনি তার মায়ের কাছ থেকে বলে বের হয়েছে, বলেছে তার বান্ধবি ফোন দিয়েছে বহুদিন দেখা হয় না তো তাই একটু,
নন্দিনির মা অমত করেন নি মেয়েটার মন সে বুঝে মা তো তাই।
নন্দিনি তার বাবার গাড়িটা নিয়ে বের হয়েছে,
সে খুব ভালো ড্রাইভ করে, তবে তুর্জের গাড়িতে হাত দেয়া ঠিক মনে করেনি তাই নিজের বাবার টা নিয়েই চলেছে,
১০ মিনিটের রাস্তা শেষ করে তাদের বাড়ির সামনে দারিয়ে আছে নন্দিনি তবে ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছেনা,
একবুক সাহস নিয়ে ধিরে পায়ে এগুচ্ছে নিলয়ের বাড়ির ভিতরে, দরজা টা খুলাই ছিলো তাই আর কলিং বেল চেপে ডাকতে হয় নি,
দরজাটা আরেকটু ধাক্কা দিয়ে ভিতরে দেখার চেষ্টা করছে, নিলয়ের মা আর বাবা ডাংনিং
টেবিলে বসে আছে দুজনেই খাবার নিয়ে বসে আছে একটু একটু করে মুখে নিচ্ছে যেনো জোর পূর্বক মুখে তুলছে,
নিলয়ের মা এত সাস্থবান মহিলাই ছিলেন এত শুকনো কেন দেখাচ্ছে ওনাকে কি হয়েছে, ওরা খাচ্ছে নিলয় কোথায় সে কেনো খেতে বসে নি,
ওকে ছারা তো ওর মা বাবা কখনো খেতে বসে না।
নিলয়ের মার চোখ দরজার দিকে পরতেই হালকা ভেজা চোখ গুলো আরো ভিজে এসেছে,
নিলয়ের মা জোরে পা চালিয়ে নন্দিনির কাছে এসে তাকে জরিয়ে ধরে চাপা কান্না কাদঁছে, কেন এমন করছে।
নন্দিনি নিলয়ের মায়ের কাছ থেকে নিজেকে ছারিয়ে ওনার মুখের দিকে চেয়ে বললো আন্টি নিলয় বা তার বৌ কোথায় ওহহ সরি ওরা বিয়ে করেছে কিনা তাও তো জানিনা।
নন্দিনির কথায় নিলয়ের মা তার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছেনা,
নন্দিনি নিলয়ের মায়ের চাহনি তে কিছু খুজছে, তবে তা বিচ্ছেদ ঘটালো নিলয়ের বাবা,
উনি চেয়ারে বসেই বললো ভালো আছো নন্দি!!
জ্বি আংকেল”
তোমার স্বামিকে নিয়ে আসতে,যাই হক এদিকে এসো,
নন্দিনি অবাক একবার ও উনি কাছে এলেনা আমায় ডাকছে, আগেতো দেখলে মা মা বলে পাগল করে দিতে, হয়তো ছেলের পছন্দ পাল্টেছে তাই বাবারও পাল্টেছে,
নিলয়ের বাবার কাছে আরেকটা চেয়ার টেনে বসেছে নন্দিনি,
নন্দিনি এবার খেয়াল করলো উনি বা হাতটা নাড়াতে পারছে না,
পশ্ন শোচক হয়ে কিছু বলবে তার আগেই, নিলয়ের মা বললো কিছু দিন আগে স্টোক করে, বাম পাশ অবশ তাই বা হাত বা পা কিছুই তেমন নাড়াতে পারেনা,,
নিলয়ের মায়ের কথায় নন্দিনি চেয়ার ছেরে উঠে দুকদম পিছিয়ে গেছে, কি বলবে ভাষাই পাচ্ছে না, নিলয়ের বাবা প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললো আমার ছেলে খুব শান্তিতে আছে মা তাকে দেখা দিয়ে অশান্তি বারিয়ো না সে খুব সুখে আছে, তাই তুমিও তোমার সংসারে মন দাও, এতেই সবার ভালো আর কোন দিন ওর খুজে এখানে আসবেনা,
নন্দিনি কিছু না বলেই চলে আসতে নিয়েও তার চোখ আটকে গেলো দেয়ালের ছবিটার দিকে একি এতো সেই ছবিটা,
আমি আর নিলয় প্রথম দেখার সময় বৃষ্টি হচ্ছিলো, তখন আমায় হাটু গেরে বসে প্রপোজ করেছে তা সরন হিসেবে রাখার জন্য ক্যামেরায় বন্দি করেছিলো।
তবে এই ছবি এখনও ঝুলানো কেন!! তার বৌ দেখেনি,
কি চায় নিলয় সে কি আমায় শান্তি দিবেনা৷ জদি আমায় নাই চায় তাহলে ছবিটা এখনো ফেলেনি কেন,
হাজার পশ্ন বুকে চাপা দিয়ে বেরিয়ে পরলো নিলয়দের বাড়ি থেকে।
বাড়ি জাওয়ার রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে বে খেয়ালি হয়ে চালাচ্ছে নন্দিনি,
এদিকে বাসার সবাই এতক্ষনে জেনে গেছে নন্দিনি বাড়ি নেই, তুর্জ চুপচাপ তুলিকে কোলে নিয়ে বসে আছে, বার বার নন্দিনির নাম্বারে কল করেই যাচ্ছে,
সন্ধা হয়ে এলো তবু তার খুজ নেই কোন বান্ধবীর বাড়িও সে যায় নি সবার বাসায় ফোন করেছে কহিনুর বেগম।
তুর্জ আর স্থির থাকতে পারছে না, তুলিকে রেখে নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হতে নিলো,
এমন সময় ফোন আছে সালাম সাহেবের কাছে,
হ্যালো”
জ্বি এই মোবাইলটা যার তিনি একসিডেন্ট করেছেন, আমরা উনাকে হাসপাতালে এনেছি,
আর আপনার নাম্বার টা বাবা দিয়ে নোট করা তাই কল দিলাম,
সালাম সাহেবের মোবাইল হাত থেকে পড়ে গেলো,
তুর্জ দৌড়ে এসে ফোনটা নিয়ে লোকটার সাথে কথা বলে ঠিকানা নিয়ে নিলো,
সবাই ছুটে চলছে হাসপাতালের দিকে,
তুর্জের মনে ঝর বইছে তাহলে কি সায়মার মত নন্দিনিও ফাকি দিবে না না এ হতে পারেনা আমার তুলির জন্য হলেও নন্দিনিকে চাই,
সবার চোখে পানি কহিনুর বেগম তো একবার বেহুস হয়ে গিয়েছিলো,
কিছু ক্ষনের মধ্যেই হাসপাতালে পৌছে গেলো তারা, তুর্জ ধুমছে গাড়ি চালিয়েছে,
ভিতরে ঢুকে আবার নন্দিনির নাম্বারে কল দিলে সেই লোকটা ফোন ধরে বলে উপরে আসতে ১০৮ নং কেবিনে আছে চলে আসুন।
সবাই হন্ত দন্ত হয়ে কেবিনের সামনে হাজির,
তুর্জের হুস জায় আসে প্রায়।
সবাই রুমে ঢুকে দেখে নন্দিনি শুয়ে আছে বেডে পাশে একটা লোক হয়তো উনিই কল করেছিলো,
সাথে নার্সও দারিয়ে, তাদের দেখে লোকটা বললো আপনারা!!!
জ্বি আমি ওর স্বামী” না চাইতেও তুর্জের মুখে কথাটা চলে এসেছিলো তা নিজেই খেয়াল করেনি।
( তুলিকে জেঠিমার কাছে রেখে এসেছে তুর্জ)
নন্দিনির এখনও জ্ঞান ফিরেনি,
হাতের কুনুইতে ব্যাথা পেয়েছে আর মাথায়ও হালকা ব্যাথা পেয়েছে,
এটুকুই দেখা জাচ্ছে,৷ নার্স এসে বললো চিন্তার কোন কারন নেই হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি ওনার জ্ঞান ফিরলে বাড়ি নিয়ে জেতে পারেন,
তবে হাতটা নাড়াতে পারবেনা ৩/৪ দিন আবার আনলে ব্যান্ডেজ খুলে দেব তখন।
কহিনুর বেগম মেয়ের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে, তুর্জ সব ঔষধ বুঝে নিয়েছে,
লোকটার নাম জানতে চাইলে বললো আফজাল!
তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কি হয়েছিলো,
আফজাল এবার আমতা আমতা করে বললো দেখুন স্যার আমি ঐ রাস্তার সাইডে চায়ের দোকানে ছিলাম, তখনই একটা বিকট আওয়াজে পিছন ফিরে দেখি একটা গাড়ি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়েছে,
আমরা দৌড়ে ওখানে গেলে দেকি ওনি অচেতন ছিলেন আর মাথা থেকে রক্ত ঝরছিলো, তাই আগে হাসপাতালে এনে ওনার ব্যাগ থেকে মোবাইলটা নিয়ে আপনাদের কল করি।
আফজাল কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলো, আজকাল এমন মানুষেরও দেখা পাওয়া যায়,
উনি চাইলে দামি মোবাইল ওর গহনা ব্যাগের টাকা সব নিয়ে চলে জেতে পারত, কিন্তু তা করে নি, হয়তো ওনার মত মানুষ এখন বেচেঁ আছে বলে দুনিয়া চলছে।
কিছু ক্ষন পর নন্দিনির ও জ্ঞান ফিরলো,
উঠতে গিয়েও আবার বা হাতে মাথাটা চেপে শুয়ে পরলো,
ডান হাতটা ব্যান্ডেজ করা কুনুই পর্জন্ত,
তুর্জ দৌড়ে এসে নন্দিনিকে তুলে পিছনে বালিশ দিয়ে বসিয়ে দেয়,
সাথে একটা পশ্নও ছুরে মারে নন্দিনির দিকে।
কোথায় গিয়েছিলে?
আর একসিডেন্টই বা হল কি করে????
চলবে।