#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২
মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সে দেখে বিছানায় বসে বসে আরোহী ঘুমাচ্ছে। শুভ্র কিছু সময়ের জন্য আরোহীকে তার ভালোবাসার মানুষ যে কিনা আরোহীর জমজ কয়েক মিনিটের বড় বোন “মেহেরিমা আয়ানা তারা” ভেবে ঘোরে পরে এগিয়ে যায় আরোহীর সন্নিকটে। হাঁটু গেড়ে আরোহীর সামনে বসে আলতো হাতে মুখের উপর পরে থাকা এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দেয় শুভ্র। মুখে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ছুটে যায় আরোহীর। আচমকা চোখ মেলে নিজের খুব নিকটে শুভ্রকে দেখে কিছুটা ভরকে যায়। শুভ্রর ঘোর কাটে। কিছুটা ইতস্তত ভাবে সরে যায় সেখান থেকে। আরোহী শুভ্রকে হঠাৎ করে নিজের কাছে এবং এভাবে চলে যেতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আরোহী ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নিতে।
_______
এবার আসি পরিচয় পর্বে:
“মুশায়রা আরোহী রৌদ্রিতা” ও “মেহেরিমা আয়ানা তারা” দুই জমজ বোন। দুই বোন দেখতে একইরকম হলেও কিছু ভিন্নতা আছে যা কোনো অচেনা কেউ প্রথম দেখায় ভিন্নতা করতে পারবে না। এমনকি বহুদিন পর দেখলেও ভিন্নতা করা মুশকিল।
আয়ানা ফর্সা আর আরোহী উজ্জল বর্ণের তবে ওদের দুজনের গায়ের রং মাত্র এক শেড ভিন্ন যা দুজনকে একসাথে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলে বুঝা যায়।
আয়ানার নাকের নিচে বাম পাশে একটা তিল ও বাম ভ্রুয়ের নিচে নাকের পাশে একটা তিল আছে। ভ্রুয়ের কাছের তিলটা চশমা পড়ার কারণে ঢেকে থাকে।
আরোহীর নিচের ঠোঁটের নিচে একটা তিল আছে যা সহজে দেখা যায় না আর আরেকটা নাকের নিচে ডান পাশে। আরোহীর চশমা লাগে না।
আয়ানার চুল গুলো কালো বর্ণের আর আরোহীর গুলো কালচে লাল বর্ণের। সূর্যের প্রখর আলোতে গেলেই এই পার্থক্যটা দৃশ্যমান হয়। আয়ানার চোখের মণি কালচে বাদামী আর আরোহীর কালো।
আরোহী ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি ও আয়ানা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। দুজনের চুল কোমর ছাড়ানো।
আয়ানা ও আরোহীর স্বভাবে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আয়ানা চুপচাপ থাকে, শান্তশিষ্ট এবং যথেষ্ট আবেগী। আর আরোহী, সে চঞ্চল, দুরন্ত ও জেদী স্বভাবের। তবে দুজনের অনেক স্বভাবে মিল আছে।
আরোহী ও আয়ানা দুজনেই ২২ বছরের তরুণী। ওদের বড় দুই ভাই ওদের থেকে ছয় বছরের বড়। বাবা ও মা দুজনেই ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।
মিস্টার মুনতাসির ও মিসেস নুরের চার সন্তান। বড় দুই ছেলে তারাও জমজ।
আরোহী ও আয়ানা দুজনেই মেডিকেল তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। ঢাকার ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হসপাতালে দুই বোন অধ্যায়নরত।
শুভ্রদ্বীপ মাহতাব শান, উজ্জল শ্যাম গায়ের রং ও লম্বায় ৬ ফুটের এক সুদর্শন ২৭ বছরের যুবক। মা মিসেস কিয়ারা ও বাবা মিস্টার মাহতাব। শুভ্র একজন ডাক্তার। সে মাত্র ছয় মাস হলো রেজিস্টার ডাক্তার হয়েছে সরোয়ার্দি মেডিকেলের। সে একজন হার্ট সার্জন হতে চায় তাই এর জন্য প্র্যাকটিস করছে।
আরেকজন যাকে আয়ানা ভালোবাসে সে হচ্ছে, “ধ্রুবায়ন খান পূর্ব।” বাবা মায়ের এক ছেলে এবং ধ্রুবর বড় একটা বোন আছে। উজ্জল শ্যাম বর্ণের, ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ২৩ বছরের ছেলে। ধ্রুব মেডিকেল চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করে। ধ্রুব সরোয়ার্দি মেডিকেলে অধ্যায়নরত।
______
আরোহী ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। সুতি নীল শাড়িতে তাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সে চুল শুকাচ্ছে। শুভ্র এতক্ষন ব্যালকনিতে ছিল তখন রুমে এসে আয়নার সামনে আরোহীকে দেখে আবারো একই ভুল করতে যাচ্ছিলো। যখনি শুভ্র আরোহীর পেছনে যায় তখন আরোহী শুভ্রকে আয়নায় প্রতিচ্ছবি দেখে বলে,
–কিছু বলবেন শুভ্র ভাই?
ঘোর কেটে যায় শুভ্রর। সে কিছু বলবে তার আগে আরোহী বলে,
–আমি জানি আপনি বারবার আমায় আয়ু (আয়ানা) ভেবে কাছে আসছেন। একই রকম দেখতে কিনা!
কথাটা বলে তাচ্ছিল্য হাসে আরোহী। শুভ্র প্রতিবাদ স্বরূপ কিছু বলবে তার আগে আরোহী বলে,
–উহুম! আপনি বলবেন যে, আপনি আমায় আয়ু ভাবছেন না কিন্তু আমি সেটা বিশ্বাস করবো না। একইরকম দেখতে আমরা দুই বোন। যা পার্থক্য আছে তা সূক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষন না করে বুঝা যায় না। একমাত্র কাছের মানুষরাই তা ধরতে পারে। আর আপনি! আপনি তো আমাদের বাসায় অতো যেতেন না আর গেলেও আমাদের দুই বোনকে ব্যাবহার দ্বারা পার্থক্য করতেন। আমার বোন একটু নরম স্বভাবের আর আমি কিছুটা উগ্র বলা যায়। আর আয়ানাকে সবাই খুব সহজে বুঝতে পারে কিন্তু আমায় পারে না। মূলত আমি চাই না কেউ সহজে আমায় বুঝুক।
শুভ্র চোখে মুখে গম্ভির্যতা ফুটিয়ে তোলে ট্রাউজারের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে বলে,
–তোমাদের দুই বোনকে একই রকম দেখতে বলেই আমার মা তোমার সাথে আমায় বিয়ে দিয়েছে। তারা (আয়ানা) তো অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই যখন আমি ও আমার মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই তখন সে নিজের এতোই খারাপ অবস্থা করেছে যে আমার মা আমার ও তারার কথা ভেবে তোমার সাথে বিয়ে ঠিক করলো। মামা-মামি দুজনেই তারার সাপোর্টে ছিলো। কিন্তু তোমার সাথে বিয়ে ঠিক করার আগে আমাকে একবারো জিঙ্গাসা করলো না যে, আমি তোমায় বিয়ে করতে রাজী কিনা!
আরোহী দাঁতে দাঁত কেটে বলে,
–ওহ রিয়ালি! আপনার কাছ থেকে পারমিশন নেবে? আপনি সরাসরি মানা করেছিলেন এবং আপনি পূর্ব ভাইয়ার কাছে গেছেন তার সাথে দেখা করতে। কেনো গিয়েছিলেন? এটা দেখতে যে পূর্ব ভাই ও আপনার মধ্যে কিসের কমতির কারণে আয়ু আপনাকে ভালোবাসলো না?
শুভ্র একরোখা ভাবে বলে,
–গিয়েছি তো কি হয়েছে? আমি কি পূর্বকে থ্রেট দিয়েছি যে তারার জীবন থেকে সরে যেতে?
আরোহী শুভ্রর কথার জবাবে বলে,
–একদম না। আপনি থ্রেট কেনো দিবেন! আপনি তো আপনার ভালোবাসা জাহির করেছেন মাত্র। তখন এটা খেয়াল করেননি যে আপনি কার সামনে বলছেন। আচ্ছা যদি আমার বাবা-মা আয়ুর সাথে পূর্বের ভালোবাসা মেনে না নিতো তাহলে আপনি কি করতেন?
শুভ্র তখন ভ্রুকুটি করে বলে,
–তাহলে আজকে তোমার জায়গায় তারা থাকতো। আর আমিও আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়ে যেতাম।
আরোহী উচ্চস্বরে হেসে বলে,
–তাহলে আপনি হতেন সবচেয়ে দুর্ভাগ্যবান পুরুষ। কেনো জানতে চান না?
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় আরোহীর দিকে। আরোহী সম্মতি পেয়ে বলে,
–আপনি আয়ুকে নরম মনের দেখেছেন। আয়ুকে চুপচাপ দেখেছেন। একদম আমার স্বভাবের বিপরীত চরিত্র দেখেছেন। একই চেহারার দুই বিপরীত চরিত্র আমি ও আয়ু। কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, জমজ হয়ে ওদের স্বভাব পুরোটা ভিন্ন কিভাবে? মানে চেহারা তো একই। নীড় ও মেঘ ভাই এদের কিন্তু কিছু ব্যাবহার মিলে যায় তাই যখন দুই ভাইয়া একই মুডে থাকে তখন চিনা যায় না কোনটা কে!
শুভ্র একই ভাবে চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরোহী তা দেখে মুচকি হেসে বলে,
–আয়ু ও আমার একটা সবচেয়ে কমন স্বভাব, যখন কাউকে আমরা ভালোবাসি তখন তার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারিনা। আর কেউ যখন এটাতে বাধা হয় তখন সে যতই ভালোবাসা দেখাক সে হয়ে যায় অপ্রিয়। আমরা দুই বোন কেউই মিথ্যা পছন্দ করি না। সত্য বলতে না পারলে চুপ করে থাকি তবে মিথ্যা বলি না।
শুভ্র আরোহীর কথায় জবাব দেয়,
–তোমার ও তারার ভালোবাসায় কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাই এসব আমায় বলে লাভ নেই।
শুভ্র রুম থেকে ধপাধপ পা ফেলে চলে যায়। আরোহী শুভ্রর যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে আপন মনে বলে,
” যেদিন আয়ু তার লুকায়িত স্বভাবকে প্রকাশ করবে সেদিন এই কথা গুলোর মানে বুঝবেন “শান”! আয়ু (আয়ানা) তার আরুর (আরোহী) প্রাণ। ঠিক তেমনি আরু তার আয়ুর শক্তি। আরু তার আয়ুকে এবং নিজেকে আগলে রাখে বলে আয়ুর প্রয়োজন হয় না নিজেকে প্রকাশ করার। একে অপরের শক্তি আমরা দুই বোন। ”
আরোহী ঘড়িতে সময় দেখে নিজেকে পরিপাটি করে খাবার রুমের উদ্দেশ্যে চলে যায়। এই বাড়িতে সাড়ে আটটায় নাস্তা খায় তা তার জানা।
#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৩
ডায়নিং টেবিলে সবাই ইতিমধ্যে বসে গেছে। রিয়ানা তার তিন বছরের মেয়েকে ঘুম থেকে তোলে ফ্রেশ করাচ্ছে এরপর আসবে। আরোহী রান্নাঘরে তার ফুফি যে কিনা এখন তার শাশুড়ি, তার কাছে যায়। আরোহীর ফুফি আরোহীকে জোর করে ডায়নিংয়ে এনে বসায়। ডায়নিংয়ে শুভ্রর ফুফি ও ফুফাতো বোন সামিরা বসে আছে। শুভ্রর ফুফি আরোহীকে বসতে দেখে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
–নতুন বউ কোথায় শশুর বাড়িতে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে সকলের জন্য নাস্তা বানাবে, তা না করে সে সরাসরি নাস্তা খেতে এসেছে!
রিয়ানা নিজের মেয়েকে নিয়ে মাত্র ডায়নিংয়ে আসলো আর এসেই এরূপ মন্তব্য শুনে রাগ উঠে যায়। সে জানে তার ফুফি চেয়েছিল সামিরাকে শুভ্রর বউ বানাতে। তাই রিয়ানা বলে,
–আরে ফুফি! তুমিও না! এখন ওসব কেউ মানে নাকি? আর আরোহীতো আমাদের পর না সে তো আমাদের বাড়ির মেয়ে। আরোহী তাও কিন্তু রান্নাঘরে গিয়েছিলো মা কে সাহায্য করতে। আর সামিরাকে দেখো! সে কি পারতো না সকাল থেকে আমি যেমন মা কে কাজে সাহায্য করেছি তেমনি সেও আমার সাথে একটু কাজে হাত লাগাতে? কিন্তু সামিরার কি সেই ফুসরত আছে বলো! হাতেপায়ে ম্যানিকিউর, প্যানিকিউর করে পটের বিবির মতো সোফায় বসে বসে ফোন চালাচ্ছে।
সামিরা এসব শুনে জবাব দিবে তার আগেই শুভ্রর ফুফি মেয়ের সম্পর্কে এমন কথা শুনে ফুসে উঠে বলে,
–আমার মেয়ে কি এখানে কাজ করতে এসেছে নাকি? সে কি বাড়ির বউ যে এসব কাজ করবে? শুভ্রর বিয়ের জন্য এসেছি আর তোরা আমাদের কাজ না করার খোঁটা দিচ্ছিস!
আরোহী চেয়ারে বসে মুখ টিপে হাসছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে তবে শুভ্রর এবং শুভ্রর মায়ের নজর এড়ায় না। শুভ্রর মা আরোহীর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। আরোহীকে মিটিমিটি হাসতে দেখে আলতো ধাক্কা দিয়ে থামতে বলে। আরোহীও তার ফুফির কথায় মুখে হাত দিয়ে ঘার নারায় যে সে আর হাসবে না কিন্তু তাও সে মুখে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হাসছে। শুভ্র এসব দেখে ভাবে, আরোহীর জায়গায় তারা (আয়ানা) হলে কি করতো?
শুভ্র ভেবে এই উত্তর পায় যে, তারা (আয়ানা) হলে মাথা নিচু করে চুপ করে থাকতো! আর শুভ্র নিজে তখন তারার হয়ে প্রতিবাদ করতো।
রিয়ানা তার ফুফির কথায় মুচকি হেসে বলে,
–তোমরা তো বিয়ে খেতে এসেছো। তাহলে ভালো করে বিয়ে খাও। আমার ভাইয়ের বউকে এভাবে কথা শোনানোর কি আছে বলো? আমার মা যেখানে কিছু বলছে না সেখানে তোমার কি দরকার এগুলো বলার।
শুভ্র ফুফি নিজের ভাগ্নির কথা শুনে রাগে কটমট করতে করতে নিজের ভাইয়ের দিকে তাকায়। শুভ্রর বাবা খাবারের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলে,
–আপা, তোমার কি দরকার আরুমাকে এতোকিছু বলার? থাক না। কাল এতো ধকল গেলো তাই সকাল সকাল আসতে পারে নি। তুমি তোমার মতো খাও আর রিয়ানা! উনি তোমার ফুফি হয়। এভাবে বলবে না আর।
শুভ্রর ফুফি মুখ ভেংচি দিয়ে খাবারে মনোযোগ দেয়।
—–
যখন শুভ্রর ফুফি জানতে পারলো শুভ্রর সাথে আয়ানার বিয়ের কথা বলবে তখন ইনিয়েবিনিয়ে নিজের মেয়ের কথা বলেছিলো শুভ্রর বাবা তথা তার ছোট ভাইকে। এরপর যখন শুনলো আয়ানা শুভ্রকে বিয়ে করতে রাজী না তখন তো সে খুশিতে নিজের মেয়ের সাথে শুভ্রর বিয়ের কথা বলেই ফেলে কিন্তু শুভ্রর বাবা “মিস্টার রিয়াদ” ওই মূহুর্তে মনে হয়েছে আয়ানা নাহয় কিন্তু আরোহীকে নিজের পূত্রবধু করাই যায় এমনকি তার স্ত্রী “মিসেস কিয়ারা” তারও একই মতামত। মিস্টার রিয়াদ ছেলের মনের ভাব জানেন আয়ানার প্রতি তাই সেই কষ্টে কিছুটা মলম লাগানোর জন্য সে আরোহীকে শুভ্রর বউ করার প্রস্তাব রাখে। আরোহীর বাবা-মায়ের কোনো আপত্তি ছিলো না তবে তাঁদের আরোহীর মতামতের প্রয়োজন। তাই আরোহীকে জিঙ্গাসা করলে আরোহী রাজী হয়ে যায়। কারণ আরোহী শুভ্রকে ভালোবাসে অনেক আগে থেকে তবে শুভ্রকে এবং কাউকেই জানায়নি এ বিষয়ে।
আরো একটি কারণ হচ্ছে শুভ্রকে আয়ানা বিয়ে করতে মানা করে দেওয়ার পরে শুভ্র ধ্রুবের কথা এবং ডিটেইলস জানতে পেরে ধ্রুবের সাথে দুইদিন দেখা করে। প্রথম দিন তো ধ্রুবকে বলেই ফেলে, ” তারার (আয়ানা) থেকে দূরে থাকতে।” এগুলা যখন আয়ানা শুনে তখন আয়ানা সারারাত কান্না করে কাটিয়ে দিয়েছে। তারপরের দিন আবারো শুভ্র ধ্রুবের সাথে দেখা করে এবং সে যে আয়ানাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে তা জানায়। আরো বলে সে তারাকে (আয়ানা) বিয়ে করতে চায় কিন্তু তারা (আয়ানা) চায় না।
এগুলো যখন আরোহী জানতে পারে আর সাথে এটাও যে শুভ্রর বাবা-মা তাকে শুভ্রর বউ করতে চায়। তখন আরোহী আর মানা করেনি। আরোহী রাজী হয়ে যায় বিয়েতে। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে যাবে এবং নিজের বোনের ভালো থাকা নিশ্চিত হবে।
________
ধ্রুব এদিকে আয়ানাকে ফোন করেছে।
–“ধ্রুবতারা”!
আয়ানা কল রিসিভ করে ধ্রুবের মুখ থেকে “ধ্রুবতারা” সম্বোধন শুনে তার সব চিন্তা যেনো হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
–ধ্রুবতারা, কিছু বলো? আরুর জন্য তোমার চিন্তা হচ্ছে?
আয়ানা ধ্রুবকে উদ্দিগ্ন হয়ে বলে,
–চিন্তা তো হচ্ছেই। আরু আমার জন্য এই বিয়েটা করেছে। এটা আমায় এবং সবাইকে বললেও আমি আমার বোনকে চিনি। আরু আমার কাছ থেকে যতোই লুকিয়ে রাখুক, আমি জানি আরু শুভ্র ভাইকে ভালোবাসে!
ধ্রুব অবাক হয়ে বলে,
–কি বলছো এগুলা! আরু শুভ্র স্যারকে ভালোবাসে? কিন্তু কিভাবে? আরুকে কখনো শুভ্র স্যারকে নিয়ে কিছু বলতে দেখি নি।
আয়ানা মলিন হাসে। এরপর বলে,
–আমাকে আগলে রাখতে যেয়ে সে নিজের অনুভূতি জাহির করা ভুলে গেছে। সবার কাছে আরু দূরন্ত, ডানপিঠে ও চটপটে। তবে আমার কাছে আরু আমার ছোট বোন কিন্তু ওর ব্যাবহারে মনে হবে আমি ওর ছোট! জমজ হলেও কয়েক মিনিটের ছোট আরু আমার। আর আরু আমাকে আগলে রাখে, একজন বড় বোন যেভাবে তার ছোট বোনকে আগলে রাখে সেভাবে। আমার জন্য সে ভালোবাসা পাবেনা জেনেও শুভ্র ভাইকে বিয়ে করেছে তবে আরোহী নিজে শুভ্র ভাইকে ভালোবাসে।
” আমরা যখন কাউকে ভালোবাসি কিন্তু সে মানুষটা যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে তখন আমাদের কতটা কষ্ট হয় তা একমাত্র তারাই বুঝে। ”
আয়ানার কথায় ধ্রুবর মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। শুভ্রর সাথে যতবার ধ্রুবর দেখা হয়েছে ঠিক ততোবার শুভ্র ধ্রুবের দিকে ব্যাথিত নয়নে চেয়েছিল। একই মেডিকেলে একজন অধ্যায়নরত আর আরেকজন ডাক্তার। প্রায় প্রতিদিন একবার হলেও ওদের পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। কোথাও বসে কথা হয়েছে দুই বার তবে দেখা তো অনেকবার হয়েছে। ধ্রব ব্যাথিত সুরে বলে,
–শুভ্র ভাইয়ের চোখে আমি তোমাকে হারানোর স্পস্ট ব্যাথা দেখেছি। জানো, যখন আমরা জানতে পারি,
” আমাদের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কেউ তার মনের রানীর জায়গা দিয়েছে! তখন নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর ভয়ে মন ব্যকুল হয়ে উঠে। ” আমাদের অগ্রমস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের কাজ এগুলা।
ক্ষুদা, তৃষ্ণা, ঘাম, ঘুম, রাগ, পীড়ন, ভালোলাগা, ঘৃণা, উদ্বেগ, এসবের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে হাইপোথ্যালামাস।
আয়ানা ব্যঙ্গ করে বলে,
–ডাক্তার সাহেব! আমি বুঝতে পারছি, আপনি নিউরোসার্জন হতে চান। কিন্তু আমি আবার এই নিউরোসার্জন হতে চাই না!
আয়ানা সবসময় এমন করে কথা বলে যা শুনে কেউ কষ্টের কথা বলতে নিলেও হেসে ফেলে। ধ্রুব হাসতে হাসতে বলে,
–তুমি তাহলে কি হবা? অার্থোপেডিক্স? নাকি হার্ট সার্জন?
আয়ানা ভাব নিয়ে বলে,
–আমি মেডিসিনের এবং ব্লাড স্পেশালিস্ট হবো। হার্ট সার্জন এর মধ্যে আরু ইন্টারেস্টেড, আমি না।
ধ্রুব প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে,
–আজ তো আরুর রিসেপশন। আমি কি যাবো?
আয়ানার ভ্রু কুঁচকে আসে ফোনের অপর পাশ থেকে। তারপর বলে,
–তুমি কেনো যাবানা? আমার আম্মু-আব্বু, ভাইয়ারা আর আরু নিজে তোমাকে বলছে। তাহলে তুমি কেনো যাবানা?
ধ্রুব ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–কেউ হয়তো আমাকে দেখে সহ্য করতে পারবে না। কারো হৃদয়ে আমাকে দেখে রক্তক্ষরণ শুরু হবে।
আয়ানা বুঝতে পারে ধ্রুবের কথা। তাও সে ধ্রুবকে নিয়েই যাবে।
–দেখো ধ্রুব, তোমাকে যেতেই হবে। তুমি যে কারণে যেতে চাইছো না সেটা হলেও তোমার কিছু করার নেই। শুভ্র ভাইকে মেনে নিতে হবে সবটা। আমার বোনকে আমি কষ্ট পেতে দিবো না।
আয়ানা কথাগুলো যেনো রাগ নিয়ে বলে। আয়ানা আবার বলে,
–এতোদিন আরু আমাকে আগলে রেখছে। সবসময় আমার শক্তি হয়েছে। এখন থেকে আমার বোনকে আমি আগলে রাখবো। আর ধ্রুব তুমি জলদি আঙ্কেল-আন্টি কে নিয়ে চলে আসবে। রাখছি! অনেক কাজ পড়ে আছে।
আয়ানা ফোন রেখে দেয়।
______
জলদি করে নাস্তা শেষ করে শুভ্র টেবিল থেকে উঠে রুমে যায় আর দশ মিনিটের মাথায় ফর্মাল ড্রেসআপে ড্রয়িং রুমে আসে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,