অস্তিত্বে চাই তোমার ছোঁয়া পর্ব -২৮+২৯

#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৮

৫৩.
নাজমুল অস্থীরচিত্ত হয়ে পায়চারী করছে রুমে। ক্রোধে এক দুটো জিনিসপত্র ভাঙচুর করলেও ক্রোধ যেন ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে তার। মাথার চুল চেপে ধরে একে একে হিসেব মিলাতে লাগল। বিড়বিড় করে বলে,

‘তুই হে তুইই আমাকে হুমকি দিছিলি। কেমনে ভুলব তোকে! তোর হুমকি যেন আমার হিংস্র পশুত্বকে জাগিয়ে দিয়েছে। তোর ইফদিয়ার তাই না! ওকে তো আমি নিজের আস্তনায় বেঁধে লুপে নিবো এক এক অপমানের শোধ। ওর শরীর যদি কেটেকুটে নদীতে না ফেলি তাহলে শান্তি পাবো না।’

নাজমুল ধপ করে সিঙ্গেল সোফায় গা হেলিয়ে দিল। তার রুমের বর্হিভাগ হতে চেয়ারম্যান সাহেব পর্যবেক্ষণ করছিলেন নিজের ছেলেকে। দাঁতে দাঁত খিচে চেপে ধরলেন উনি। এমনি তার ছেলে বেহায়াপনার সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছে। তার উপর ইফদিয়ার পিছে ঘুরে ইভটিজিং এর মত অপরাধ পূর্ণ কর্ম চালান দিচ্ছে। যদি ছেলের কর্ম এভাবে চলতে থাকে। একসময় মান-সম্মান খোয়াতে হবে। চেয়ারম্যান পদান্নতি থেকে অবনতির ন্যায় ঝড়ে পড়তে হবে। শয়তানি বুদ্ধি চাপলেন তিনি নিজের মনে। সন্তোপর্ণে প্রস্থান নিলেন ছেলের রুমের বাহির হতে। নিজ রুমে এসে বিছানার পাশে থাকা ড্রয়ার হতে ফোনটি হাতে নিলেন তিনি। ফোনের মধ্যে একজন ব্যক্তির নাম্বার খুঁজে কল লাগালেন। অপরপাশের ব্যক্তি ফোনটি দু’তিনেক মিনিট পর উঠালেন।

‘কেমন আছিস ভাই?’

‘খবরাখবর বাদ দিন। এতদিন পর কল দিলেন নিশ্চয় কোনো কান্ড ঘটাতে হবে। রাইট মিস্টার মোখলেস মির্জা !’

শয়তানি হেসে উঠলেন তিনি। পুনরায় কলের মধ্যে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কুবুদ্ধির উদ্দেশ্য জানায়। শুনে অপরপাশের ব্যক্তি খানিকক্ষণ চুপ থাকলেন। পরক্ষণে বলে উঠলেন।

‘আপনি ভাবতে পারছেন যাকে উঠানোর কথা বলছেন তিনি কার কি হোন সম্পর্কে !’

‘ওসবে আমার কিছু যায় আসে না। একবার ছেলের ক্ষুধাবর্ধক মিটাতে সক্ষম হলেই বাঁচি। না হলে সমাজের সামনে নিজের সম্মানহানির মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।’

‘তা বুঝলাম। তবে আপনার ছেলে কি মেন্টালি সিক! আই মিন সে এখন বিবাহিত মেয়ের পিছে লাগল যে।’

‘এতে তোমার নাক না গলালেও চলবে।’

অপরপাশের ব্যক্তি অট্টহাসি দিলেন। তিনি বাঁকা হেসে বলেন,

‘সম্মান দিয়ে কথা বলুন মিস্টার মির্জা! আমাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। আমার উপরই ধমক। এটা মানা দায়! সরেন বাদ দিলাম ব্যাপারটা। এখন বলুন কাজ বড় যেহেতু কর্ম ফল সেহেতু দ্বিগুণ বড় হওয়া চায়।’

মোখলেস বিরক্তর কণ্ঠে ফোঁস করে বললেন।

‘তোমার কাউন্টে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়ে যাবে।’

‘গুড আই লাইক ইট! আপনার কাজ হয়ে গেলে জানিয়ে দেবো।’

কট করে অপরপাশের ব্যক্তি কল কেটে দিলেন। মোখলেস এর কাছে ব্যাপারটা অসম্মানের মত লাগল। তবুও মুখ ফুটিয়ে এখনি পদক্ষেপ নিতে চাইলেন না। কেননা কাজ অপূর্ণ থাকা অব্দি উনার ভেজা বিড়ালের ন্যায় আচরণ করতে হবে। একবার কাজ সম্পূর্ণ হলে স্বার্থ হাসিলে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে উঠেপড়ে লাগবেন। আপাত দৃষ্টি মোতাবেক অসম্মান এর বিষয়টি ধামাচাপা দিলেন। ফোনটি রেখে বিড়বিড় করে বলেন,

‘ছেলেকে কষ্ট পেতে দেখে মুটেও সহ্য হচ্ছে না। বিধায় তোর সহায়তা নিয়েছি। কাজ হয়ে গেলে তোরও উচিৎ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা।’

বলেই খানিক বাঁকা হাসলেন। পুনরায় নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলেন।

‘আর রইল আহসান এর মেয়ের কথা। সে কার স্ত্রী তা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। একবার ছেলের পৈশাচিক ক্ষুধা মিটে গেলে মেয়েটিকে গুম করে দেব। কিন্তু এর জন্যে মেয়ের স্বামীকে দৃষ্টিভ্রম এর মাঝে ফেলতে হবে। পদক্ষেপ অনুসারে তার স্বামীকে টাকার গরম দেখাতে হলে তাও দেখিয়ে দেব।’

ক্ষমতা থাকায় মোখলেস নিজের কুবুদ্ধিতায় বিজয়ের ন্যায় হাসি দিলেন। নাজমুল হঠাৎ রুমে প্রবেশ করায় হকচকিয়ে উঠলেন তিনি। এখনি চমকপ্রদ দিতে চাননা ছেলেকে। যখনি মেয়েটিকে ছেলের বিছানায় অানতে সক্ষম হবেন তখনি ছেলেকে চমকে দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন মনে। নাজমুল অতীব ক্রোধ দমিয়ে নিজের বাবার সম্মুখীন হলো। মোখলেস চুপ করে ছেলের কর্ম দেখছেন। শান্ত কণ্ঠে মোখলেসকে বলে উঠল সে।

‘বাপ মুই ইফদিয়ার ভার্সিটি পড়বাম চায়।’

‘কি বলছিস অসময়ে ভর্তি হবি। যেখানে তুই পড়াশুনা এইচএসসি- তে এসেই থামিয়ে দিয়ে ছিলি।’

‘কথা কম। মুই ইফদিয়ার রে চায়। হের লাইগা ওর ভার্সিটি ভর্তি কইরা দাও।’

মোখলেস চিন্তিত ভঙ্গিতে ছেলের পানে চেয়ে রইলেন। ছেলে একটা বিবাহিত মেয়ের জন্যে কিনা ভার্সিটি ভর্তি হতে চায়। কিন্তু আদৌ মেয়েটা ভার্সিটি পড়বে! এ নিয়ে সন্দেহ জাগ্রত হলো উনার মনে। অন্যথায় মেয়েটা পূর্বে ছাত্রী অবিবাহিত কুমারী ছিল পরবর্তীতে বিবাহিত নারী হয়ে গেল। উনার ভাষ্যমতে, মেয়ে সাংসারিক জীবনে আবদ্ধ হলে পড়াশুনা দমিয়ে ফেলে। হয়ত সেই মেয়েটাও দমিয়ে নিবে বলে ধারণা করলেন। নাজমুলকে অধর্য্য হতে না দিয়ে উদগ্রীব গলায় বলেন,

‘তুই বলছিলি মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। এখন সে ভার্সিটি পড়বে!’

নাজমুল কথাটি শুনে উত্তেজনা ছাড়িয়ে নিল নিজের শরীর হতে। ভাবনায় ডুবে গেল। তার বাবার কথায় যুক্তি পেয়ে খানিক আমতা আমতা করে বলে,

‘মুই খবর নিয়া জানাব। তহন কিন্তু মুই ভর্তি হইয়া চায়।’

মোখলেস মৃদু হেসে ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন,

‘অফকোর্স মাই সান গো।’

নাজমুল বারতি কথন ব্যক্ত না করে বেড়িয়ে গেল রুম হতে। মোখলেস তপ্ত এক শ্বাস ফেলে আনমনে ভাবেন।

‘ছেলেটার উৎকট আচরণ করার পিছনের মূল কারণ আমি। যদি না ব্যবসায়িক কাজে বাহিরে ছুটাছুটা করতাম। তাহলে বুঝি ছেলেটা সুন্দর জীবন পেতো। অসহায় নিসঙ্গ থেকে নিজেকে অন্ধকারে ধাবিত করে নিল সে। তাই ভাগিদার আমি হলেও অপূর্ণ রাখব না ছেলের আবদার। একটা মাত্র ছেলে । স্ত্রী গত হয়েছেন বহু বছর আগে। যখন ছেলে কিনা পাঁচ বছর বয়সী ছিল। নিজ হাতে বড় করতে না পারলেও আবদার পূরণে অবাধ্য হবো না। একটা মেয়েকে কেন হাজার মেয়ে হলেও টাকা দিয়ে কিনে নিবো তোর জন্যে বাবা। অপেক্ষা কর।’

নাজমুল বাহিরে এসে তার দলের সঙ্গে যুক্ত হলো। দলের ছোট চামচা ঠাট্টার সুরে বলে,

‘মামা বেডি রে হাসিল করতে পারলি!’

‘না রে এহোনো বেডি লাইনে আহে নাই।’

মেঝ চামচা হঠাৎ প্রশ্ন করে উঠে।

‘ওসব বাদ দে। হেই কো তুই তো শুদ্ধ বাংলা কইতে পারস। তইলে আমাগোর মত কেন কথা কস!’

নাজমুল বিশ্রী হাসি দিল। রাস্তায় যাতায়াত করা মেয়েদের শরীরের দিকে তাকিয়ে বিদঘুটে অহং নিয়ে বলে,

‘মাইয়াগো রে উৎক্ত করবাম লাইগা এমনডা ভাষায় কথা কই।’

নাজমুল এর সঙ্গে উচ্চস্বরে ঠাট্টাময়ী বিশ্রী হাসি আসতে আরম্ভ করে তারা। সে আপাত ইফদিয়ার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে দলবল থেকে বেরিয়ে আসে। ইফদিয়ার বাসার সম্মুখে এসে দেখে দরজায় তালা দেওয়া। দৃশ্যটা সহ্যহীন লাগল তার। ধড়াম করে পা দ্বারা লাথি দিল দরজায়। আশপাশের প্রতিবেশীরা সরু চুক্ষে হেঁটে হেঁটে নাজমুল কে লক্ষ করে চলে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যস্থল এ। কিন্তু নাজমুল এর কাছে এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। কেননা সে ক্ষমতাপূর্ণ। নিজের শার্টের কলার হাত দিয়ে টান টান করে অহংকারী ভাব নিতে লাগল। ইফদিয়ার বাসার খুব সন্নিকটে একজন বুড়ির বাসা বিদ্যমান। বাসাটির দশা খুব দুরুহ। টিনের ছাউনীর অর্ধ অংশ ভেঙ্গে গড়িয়ে আছে। দরজার তালা ভাঙ্গা। মেঝের মধ্যে গর্ত দেখা যাচ্ছে। একপাশে নালার মত খনন করা। শহরের প্রতিটা আনাচে কানাচে বুঝি তাই নালার অপদস্থ দশা এ কারণেই।
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
বুড়ির বাসা থেকে বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যা রাস্তার ধারপ্রান্তে না ছড়ালেও বাসার নিকটে গেলে নাকের মধ্যে প্রবেশ করছে। পীড়ন নিয়ে নিজের নাক রুমাল নিয়ে বেঁধে নিল নাজমুল। বুড়িকে চেঁচিয়ে বলে,

‘আপনার প্রতিবেশীরা কই!’

‘মোর প্রইতাবেশী বিয়তবাড়ি গেছে।’

নাজমুল কথাটির পূর্ণ অর্থ বুঝতে পেরে আর দাঁড়িয়ে থাকল না। গাড়ির কাছে এসে বসে পড়ে। এখনো সন্ধ্যা গড়ায়নি। সন্ধ্যা হলেই বউভাত এর অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে। যা রাতের ২টা অব্দি বহমান থাকবে। গাড়ি নিয়ে উদ্দেশ্যপূর্ণ হয়ে নাজমুল বউভাত এর অনুষ্ঠানে যুক্ত হতে চলে যায়।

৫৪.

যাবিয়াজ পরন্ত বিকেলের দিকে বেরিয়ে পড়ে। দেশ আসতে না আসতেই সে কর্মঠ হয়ে উঠেছে। দিনের আরম্ভে স্ত্রীর সঙ্গে স্বাদরে কাটাতে পারলেও দুপুরের দিকে স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা করা হয়েছে। খ্যাতিমান অনুষ্ঠানের নামডাক বড় হওয়ার ভিত্তিতে বউভাত অনুষ্ঠানটি বড়জোড় ভাবে আয়োজিত হয়েছে। শহরের নামিদামী বিশেষজ্ঞ অথিতিবৃন্দ আসার আমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে। যাবিয়াজ বিয়ের পূর্বেই তার অস্ট্রেলিয়ার কলিগদের আমন্ত্রণ জানায় ইমেইল এর মাধ্যমে।
কিন্তু সকালের মুহূর্তটা থেমে গেলে ভালো হতো বলে মনে করছে যাবিয়াজ। তাহলে বউ এর সঙ্গে আদুরী মুহুর্ত বাড়াতে পারতো। ভেবেই আনমনে হাসল সে।
তাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় এরফান। সে বন্ধুর হাতের কনুইয়ের মধ্যে নিজের কনুই দিয়ে ধাক্কা দিল। সম্মতি ফিরে পাওয়ায় সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে কিঞ্চিৎ সন্দেহ প্রবণতা বজায় রেখে জিজ্ঞাসা করে যাবিয়াজ।

‘তোর বুঝি আমার সুখ সই না।’

‘বাপু আমি বুঝি কিছু করেছি।’

‘কেন আমার স্বপ্নের বাসরটা একসেকেন্ডে মিটাইয়া দিলি ওইটা তোর মনে বুঝে না।’

‘উপস আইম সরি। আমি ভাবছি কাজের ঠেলায়।’

‘তোর খুশির ঠেলায় শা***লা।’

এরফান প্রথমে মিছামিছে হাসি দিলেও এবার যেন প্রাণচঞ্চল হাসি দিয়ে যাবিয়াজ এর পিঠে চাপড় মারে। যুবক নিজেও আনমনে ভাবনা ঝেড়ে লেপটপে বায়োজেনেটিক প্রোগ্রাম এর ওয়ার্ক কমপ্লিট করছে। নতুন আরেকটি প্রজেক্ট এসেছে প্ল্যান্টেশন নিয়ে। যা উদ্ভিদ বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে গঠিত হবে। তবে এর জন্যে জীব বিজ্ঞানের কার্যকারিতা কিরুপ প্রভাব পড়ে তার বিস্তারিত ধারণাও নিম্নে উল্লেখ করছে সে। টাইপিং স্লিক যাবিয়াজ এ বরাবরই দুর্দান্ত। চোখ বন্ধ অবস্থায়ও সে শুদ্ধভাবে বাক্য গঠণ করতে পারে। বাক্য মিলিয়ে অপর বাক্যের সংযোজন করার বিনিময়ে তার বিন্দুমাত্র ভুলত্রুটি হয় না। এরফান যাবিয়াজ এর টাইপিং দেখে বিরক্তবোধ করে ‘বা’ উচ্চারিত করার পূর্বেই নিজেকে দমিয়ে নিল। ফোঁস করে বিরক্তির শ্বাস ছেড়ে যাবিয়াজ এর হাত ধরে। হঠাৎ হাত থেমে যাওয়ায় কিঞ্চিৎ ভ্রু নাড়িয়ে ইশারা করে বুঝায় ‘কি হয়েছে!’
এরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘আস্তে চালা ভাই। লেপটপও হাঁপিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তুই হাঁপাইতাছিস না কেন। যা পানি খাইয়া আয়।’

‘জ্ঞান দিচ্ছিস দেখি।’

এরফান কথা না বাড়িয়ে যাবিয়াজকে টেনে বসা থেকে উঠিয়ে নিল। যাবিয়াজ কে তার কেবিন থেকে প্রস্থান করিয়ে ক্যান্টিনে নিয়ে গেল। সেখানে ফেরদৌস চিল মুডে বসে ফোনে গান শুনছে। চুক্ষদ্বয় নিমীলিত রেখে মাথা খানিক পর পর কিঞ্চিৎ নেড়ে গানের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। এরফান ঠোঁট কামড়ে ধীরস্থীর পায়ে এসে ফেরদৌস এর মাথায় থাবড়া বাজানোর মত পিঠিয়ে উঠল। বেচারার কিছু বোধগম্য হওয়ার পূর্বেই কেমন যেন বেক্কল বনে গেল। ফোনটা ঠাস করে টেবিলের উপর যায়। এমনকি তার স্মার্টলি স্পাইক করা চুলগুলি আওলা জাওলায় পূর্ণ হলো। এরফান পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে তার পাশে বসে পড়ে। নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ক্যামেরায় প্রেস করে। ক্যামেরার ফেস সাইডটি ফেরদৌস এর মুখ বরাবর ধরে এরফান বলে,

‘পুরুই বলদ লাগছে।’

ফেরদৌস ক্রোধান্বিত ভাব নিয়ে এরফান এর শার্টের কলার চেপে ধরে থাবড়ে উঠে। সেও এক পর্যায়ে নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে এমন মনে করতে লাগল। এরফান ছাড়া পেতে সম্মুখে শান্তপূর্ণ হয়ে বসা হ্যান্ডসাম যুবক অর্থাৎ যাবিয়াজ কে চেঁচিয়ে বলে,

‘দোস্ত বাঁচা মরে। না হলে মরণ সন্নিকটে।’

যাবিয়াজ স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ নিক্ষেপ করে ফেরদৌস কে আদেশানুসারে বলে,

‘একমগ পানি নিয়ে এরফানের মাথায় ঢেলে দে শান্তি পাবি।’

ফেরদৌস যেন আকাশের চাঁদ পেল। কি সুন্দর বন্ধুর কথা ভাবা যায়! এরফান কিছু বলার পূর্বেই ফেরদৌস তার সঙ্গে রাখা কোকের বোতল সন্তোপর্ণ ঢেলে দিল এরফানের উপর। যাবিয়াজ হাসি দমিয়ে রেখে দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে। কিন্তু এরফান এর বাচ্চামো মুখখানি দেখে সে হাসির কণ্ঠে বলে,

‘খাড়া মামা তোর ছবি উঠাইয়া তিয়ু ভাবিরে পাঠায়।’

ক্যাচ করে কয়েকটা ছবি উঠিয়ে নিল নিজ ফোনে যাবিয়াজ। ‘বন্ধুগণের পুনরাবৃত্তি’ ক্যাপশনটি দিয়ে দু’টি ছবি নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে দিল সে। তার আইডির ফলোয়ার বেশি অর্থাৎ সেলিব্রেটি হওয়ার ফলে হাজারের উপর পর্যায়ে অবস্থান করছে। সুতরাং এক সেকেন্ডে পোস্ট করা ছবির মধ্যে প্রায় কয়েক’শ লাইক, লাভ রিয়েক্ট পড়েছে। হাসির রিয়েক্টও অনেকে করেছে। তার উপর কমেন্টে মেয়েদের গা জ্বালানো কথাবার্তা দেখার কোনো প্রকার ইচ্ছে পোষণ করল না যাবিয়াজ। পিক তুলেছে পোস্ট করেছে কাজ শেষ। বাকিটা দশকবৃন্দ দেখে যা বলে বলুক! যাবিয়াজ আনমনে কমেন্ট এর দিকে তাকিয়ে বলে,

‘তুগো মিরচি লাগে তো মে কেয়া কারুম!’

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোনটা পকেটে গুজে নিল। ওয়েটার বয় কে ঢেকে নিজেদের জন্যে খাবার অর্ডার দিল। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে হবে কেননা রবিউল সাহেবের কড়া আদেশ। অমান্য করলে বউ ছাড়া করে দিবেন বলে জানিয়েছেন। এখন ঘন ঘন কাজ সম্পূর্ণ মিটিয়ে বাসার জন্যে তৈরি হবে ভেবে রাখল। এরফান কিছুক্ষণ হলো ওয়াশরুমে গিয়ে ছিল কোক পরিষ্কার করতে। টিস্যু দিয়ে মুখের পানি মুছতে মুছতে এসে টেবিলের চেয়ার টেনে বসে পড়ে। ওয়েটার বয় ততোক্ষণে সুপ, ফ্রেড রাইস, চিকেন ফ্রাই নিয়ে এলো। একে একে তিনজনের প্লেটে পরিবেশন করতে দিল। এতে যাবিয়াজ, এরফান আর ফেরদৌস মিলে কাজের ব্যাপারে খুঁটিনাটি কথাবার্তা আলাপ করল।

_______

ইসমাইল আজ এনজিও তে যায়নি। কেননা যাবিয়াজ ফিরে আসায় এনজিওর দায়িত্ব খানিক নিজ কাঁধে বহন করেছে। অবশ্য এই এনজিওর উদ্যোক্তা শ্রেয়িতার স্টেপ ফাদার হওয়ার সুবিধার্থে সে আর যাবিয়াজ ভাগ পেয়েছে। এখনো শ্রেয়িতার সঙ্গে তার স্টেপ ফ্যামিলির সঙ্গতা, পারিবারিক মিলবন্ধনতা বজায় আছে। লক্ষ্মীনা দিনের যথেষ্ট সময়টিতে মেয়েকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেন। উনাদের পরিবারের প্রশংসা অতুলনীয় বটে। ইসমাইল বিছানায় বসে ফাইল ঘাঁটছে। আড়চোখে শ্রেয়িতাকে পরখ করছে। পরী সযত্নে ইসরাইবকে ফিডিং করাচ্ছে। অন্যথায় চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে মায়ের মমতা। ইসমাইল আলতো হেসে ফাইলটি রেখে বিছানার উপর বসে। ঘুমন্ত ইসরাইব এর কপালে চুম্বন একেঁ পরীর দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকায়। শ্রেয়িতা সম্মুখে কারো ঘন নিঃশ্বাসের আভাস পেয়ে পিটপিটিয়ে চোখ উম্মুক্ত করল। নিজ মুখের উপর ইসমাইলকে ঝুঁকা অবস্থায় দেখে কোনো প্রকার বিরুপ প্রতিক্রিয়া করেনি। লাজুক হেসে দৃষ্টিনত করে ফেলে। কিন্তু ইসমাইল পরীর থুতনী চেপে মুখ উপরে করে। মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে,

‘জানি না পূর্বে কোন প্রকার সওয়াব করেছিলাম। যার ফলে তোমায় পেলাম। আল্লাহর কাছে লাখ শোকরিয়া। তুমি তো জানো আমিও তোমার মত এক এতিম ছিলাম। তারপর কপালে পরিবার নামক ছায়া এসে হাজির হয়। তুমিও যে সদস্য হলে এটাই বোধ হয় আমার মত অধমের কপাল।’

শ্রেয়িতা ইসরাইবকে এক হাতে আঁকড়ে রেখে অপর হাতে ইসমাইলের মাথা আঁকড়ে মুখোমুখি ঝুকাঁয়। কপালে নিজ ভালোবাসার গভীর স্পর্শ দিয়ে বলে,

‘আজীবন তোমার সঙ্গে থাকার প্রেরণা করেই তো আবদ্ধ হয়েছি পবিত্র বিয়ে নামক বন্ধনে।’

ইফদিয়ার দরজার আড়াল হতে তার ভাই আর ভাবির সুখী দৃশ্য দেখে তৃপ্তিময় প্রশান্তি লাভ করে। চুক্ষদ্বয়ের মধ্যে অবাধ্য জল এসে ভীড় করল। ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে চওড়া হাসি ঠোঁটের কোণায় টেনে দরজায় কটকট শব্দ করে। দু’মানবের ধ্যান স্বচক্ষে গিয়ে থামে দরজার দিকে। দরজার বাহিরে কেউ এসেছে দেখে শ্রেয়িতা উঠতে নিলে ইসমাইল চোখ রাঙিয়ে হাত ধরে বসিয়ে রাখে। নিজ দায়িত্বে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে তার ইফদিপাখি দাঁড়িয়ে আছে। ইফদিয়ার ভাইকে দেখে হাসি চওড়া করে বলে,

‘ভাই পার্লার যাব। ভাবি যাবে না!’

ইসমাইল হাত উঠিয়ে হামি দেওয়ার ভান করে বলে,

‘বউহীন করে দিবি শাকচুন্নী!’

‘কি বললি ভাই তোর সাহস কম না।’

‘আমার সাহস বরাবরই বটে।’

ইফদিয়ার মুখ ভেটকিয়ে ঘুমন্ত ইসরাইবকে নিভৃত যত্নে বিছানায় শুয়ে দিল। আর ইসমাইল কে টেনে বাচ্চার পাশে বসিয়ে দিল। কড়া নির্দেশ স্বরুপ বাণী প্রদান করে।

‘ভাই যদি আমার ভাতিজা কান্না করছে। তোর এপাশ ওপাশ পিঠিয়ে ভর্তা বানাব।’

শ্রেয়িতাকে টেনে ইসমাইল এর কথা উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়ে। বেক্কল এর মত মুখ করে ইসমাইল তাদের যাওয়ার পানে চেয়ে মৃদু হেসে উঠে।
কয়েক মিনিটে পার্লারে এসে পৌঁছায় মেয়েদল। সবার উর্ধ্বে ইফদিয়ারকে টানাহিঁচড়া করা হচ্ছে। কে কেমনে সাজিয়ে দিবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। অবশেষে দুজন বিউটিশিয়ান পার্লারে প্রবেশ করে। শ্রেয়িতা তাদের দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করল।

‘তোমরা কে এখানে কি কাজ!’

‘ম্যাম আমাদের যাবিয়াজ স্যার পাঠিয়েছেন।’

বাণীটি কর্ণপাত হতেই ইফদিয়ার ত্রপাট মুখে দৃষ্টি লুকানোর ভান করে। গালে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। শ্রেয়িতার সঙ্গে থাকা কাজিনগুলো ‘উউউউহহু ভাবি’ বলে চেঁচিয়ে উঠে। ইফদিয়ার শান্তভাবে বসে থাকে। বিউটিশিয়ান তাদের সাজানোর কর্ম আরম্ভ করে। শ্রেয়িতা আর বাকিরাও নিজ নিজ দায়িত্বে সাজতে লাগে।
ইফদিয়ার মুখের সাজের সঙ্গে তাকে ঘন বেগুনি রঙের শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে অপর বিউটিশিয়ান। তাৎক্ষণিক সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পর ইফদিয়ারকে রুমে রেখে পার্লার হতে মেয়েরা রেস্টুরেন্টে গেল। ইফদিয়ারকে সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করলে সে তৎপরতায় ‘না’ বলে। কেননা সে সকালে নাস্তা করেছিল। আপাত খিদা বলতেই নেই। ইফদিয়ার রুমে বসে ফোনে ফেসবুক দেখছে। সেখানে যাবিয়াজ এর আইডিতে পোস্ট দেখে হেসে উঠে। কিন্তু কমেন্টে লুচি মেয়েদের কমেন্ট দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘লুচ্চি পরোটাদের ঢং দেখো। অন্যের জামাইয়ের সঙ্গে রংলিলা বানানোর শখ! তোদের মাইরি এমন শিক্ষা দিবো যা ভুলা মুশকিল অপেক্ষা কর।’

ইফদিয়ার নিজের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চেপে ফোন লাগায় যাবিয়াজ এর ফোনে। কয়েকক্ষণ দুবার ফোন লাগতেই রিসিভ করে যুবক। ইফদিয়ার মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘ওই মিয়া আমার সঙ্গে রিলেশন স্ট্যাটাস মারেন।’

‘কেন হিংসা হচ্ছে!’

লেপটপে একহাতে টাইপিং করতে থেকে বলে উঠে সে। রমণী সাপের মত ফোনা তুলে ফোঁস ফোঁস করে বলে,

‘আপনি শুনবেন নাকি আপনার আইডি হ্যাক করব।’

‘আল্লাহ ব্লাকমেইল দেখো মেয়ের। এত ক্ষমতা আছে বুঝি!’

‘কম কথা কাজ বেশি।’

‘আমার ডায়লগ আমারি উপর।’

‘হাহ আপনার মিসেস বলে কথা।’

যাবিয়াজ নাকুচি করে কলটা কেটে দিল। রমণীর রাগ সপ্তম আকাশে পৌঁছে যায়। সে তৎক্ষণাৎ রিলেশন উইড যাবিয়াজ দিয়ে রিকুয়েস্ট পাঠায় স্বামীর আইডিতে। কিন্তু ইতিবাচক ফলাফল না পেয়ে রেগে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিল। মুখ ফুলিয়ে বসে রইল। হঠাৎ কে জানি এসে ইফদিয়ার নাকে বিকট গন্ধময় রুমাল চেপে ধরে। যা রমণীর ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে পৌঁছে যাওয়ায় মৃদুভাবে নেতিয়ে পড়ে। চেয়ারে ঠেকে যায় তার মাথা। চোখজোড়া বন্ধ হয়ে যায়। তখনি বাঁকা হাসি দিয়ে ভেতরে এলো একজন পুরুষ।
#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#বোনাস_পর্ব

৫৫.
ইফদিয়ার নিখোঁজ হওয়ায় যেন সকলের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ছিল যাবিয়াজ। ইসমাইল তো মরিয়া হয়ে পড়েছে বোনের নিখোঁজ হওয়ার শোকে। এক প্রকার গুরুগম্ভীর পরিবেশ যেন বাসার প্রতিটা কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। হাসির প্রাণচঞ্চল প্রাণটি হুট করে নিখোঁজ হওয়া ব্যাপারটা অনেকের কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। ইসমাইল ছলছল দৃষ্টিতে শ্রেয়িতার হাত আঁকড়ে ধরে বলে,

‘ইফদিপাখি না জানি কোন দশায় ভোগছে। কোথায় আছে আল্লাহ জানেন!’

এরফান পরিবারের সকলের চোখ-মুখে যে গণহারে চিন্তিত ভাব লক্ষ করছে। তার বিন্দুমাত্র চিন্তার রেশও যাবিয়াজ এর মুখশ্রীতে দেখতে পেল না। বরঞ্চ রহস্যময়ী হাসি যেন ঘন ঘন তার ওষ্ঠধারে ভেসে উঠছে। যা সকলের চুক্ষগোচর না হলেও এরফানের চুক্ষ এড়ায়নি। তার মনের কোণায় আকস্মিক একটি প্রশ্ন উদয় হলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) খানিক ভেবে সে যাবিয়াজ এর কান বরাবর ঝুঁকে এলো। সন্দেহ দূরীকরণে ফিসফিসানো কণ্ঠে বলে,

‘ইফদি ভাবীর নিখোঁজের পিছে কি তুই আছিস!’

যাবিয়াজ শুনে চুক্ষদ্বয় কিঞ্চিত পরিমাণে তুলে উপরের ওষ্ঠ দ্বারা নিচের ওষ্ঠের সংঘষ করে নেতিবাচক উত্তর স্বরুপ ‘না’ বলে। শব্দটি শুনেও যেন এরফান মনে তৃপ্তি পেল না। কেননা এখনো কোথাও না কোথাও সন্দেহটা দৃঢ় হতে লাগল যাবিয়াজ এর স্বাভাবিক ভঙ্গিমায়। রবিউল সাহেব তেঁতো অনুভূতি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। এতক্ষণ মাথা চেপে ধরে বসে ছিলেন। বিয়ের এক দিন আগে বউমা নিখোঁজ হওয়াটা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে তিনি ধাতস্থ হলেন। যাবিয়াজ চিন্তিত হয়ে তার বাবার মুখশ্রীর দিকে লক্ষ করল। রবিউল সাহেব তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে এমন কিছু বললেন। যা শুনার পর সকলের মুখশ্রী হতে আতঙ্কের ছাপ সরে গেল। ফুটে উঠল বিস্ময়তা! রবিউল সাহেব ব্যঙ্গ করে বললেন।

‘নালায়েক ছেড়া। এত বললাম মেয়েটাকে ভয় লাগাইস না। তাও তোর জ্ঞান হয় না। ১২টা বাজা অব্দি কেউ অপেক্ষা করবে! মেয়েটারও ক্ষুধা,পিপাসা,দৃষ্টির তৃষ্ণা আছে তো নাকি।’

যাবিয়াজ মুখ ফুলানোর ভান করে বলে,

‘উফ ড্যাড আজ ইফস্পরীর জম্মদিন। চাইছি বিরাট কিছু উপহার দিতে। তাই তো একটুখানি ভয়তা প্রাপ্য স্বরুপ তাকে দিলাম।’

‘লে শুনো ছেলের জবাব। বলে কিনা সারপ্রাইজ দিবে। আরে তুই সারপ্রাইজ দিবি ওরে বুঝলাম। সবাইরে কেন টেনশনে ফেলছিস।’

‘যে সয় সে রয়। এর অর্থ নিশ্চয় সকলের অজানা নয়।’

ইসমাইল শান্তি পেল। তার কলিজার রক্তশূন্যতা নিমিশেষে সেরে গেল। কিন্তু যাবিয়াজ এর উপর স্বল্প পরিমাণে আক্রোশ জম্মালো। যদি আজ সত্যি তার ইফদিপাখির সঙ্গে কিছু হয়ে থাকতো! তখন কি হতো তার ফলাফল বিষন্নতার রুপ নিতো। ভেবেই চওড়া ক্রোধান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। শ্রেয়িতা শুকনো ঢোক গিলে স্বামীর পানে তাকায়। তার যাবিয়াজ ভাইয়ের উপর ঝাড়ি পড়বে এ ব্যাপারে নিশ্চিত সে! যাবিয়াজ ইসমাইল এর ক্রোধে ঢাকা মুখশ্রী দেখে আলতো হেসে ফেলে। সেও দাঁড়িয়ে প্রস্তুত ভঙ্গিতে ভাব নিল। ইসমাইল তিক্ত কণ্ঠে বলে,

‘বোনের জন্যে করছিস ভালো কথা। একবার জানালে কি তোর সারপ্রাইজে পানি ঢেলে দিতাম! তবুও কেন ভাইটাকে বোনের নিখোঁজ এর সম্মুখীন করলি।’

যাবিয়াজ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,

‘শালা সাহেব তোর বুঝি সই না আর। তোর বউ হলে রাতের আঁধারে ছাদে গিয়া সারপ্রাইজ দিবি। আমি করলেই দোষ!’

ইসমাইল থতমত খেয়ে গেল। শ্রেয়িতা ত্রপাট দৃষ্টিতে চুক্ষদ্বয় ডিম্বাকার করে স্বামীর দিকে তাকায়। তার মত ইসমাইলও তার পরীর দিকে দৃষ্টিকোণ ফেলে। তারা বুঝতে পারছে না যাবিয়াজ জানল কি করে! যাবিয়াজ দু’মানবের মনের কথা আঁচ করে গলা ঝেড়ে দৃষ্টি আর্কষণ করল।

‘খুক খুক আসলে এসবে জ্ঞান আহরণ করা আমার বাঁ হাতের ব্যাপার।’

যুবক আর দাঁড়াল না। সন্তোপর্ণে নিজ রুমে চলে গেল। তিয়ানা মুচকি হাসল পরক্ষণে হাতে ব্যথা অনুভব করায় দৃষ্টি নামিয়ে দেখল। কিন্তু দেখার আর প্রয়োজন বোধ করল না। কেননা তার পাশে লোহার ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে এরফান। হতচ্ছাড়ীর আরেক জ্বালাতন সহ্য করতে হচ্ছে। সেই কবে যে এই খচ্চর লোকটার সঙ্গে বাসার ভেতর এলো! তখন থেকে হাতটা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন হিসেব নেই। ভাবতেও তার গা-পিত্তি জ্বলে উঠল। তেঁতে উঠে এরফান এর হাত থেকে নিজের হাত সরানোর চেষ্টা করে। যা আন্দাজ করতে পেরে চুক্ষদ্বয় তীক্ষ্ম রাঙিয়ে দৃষ্টি ফেলে তিয়ানার উপর। সে আমতা আমতা করে বলে,

‘ব্যথা পাচ্ছি।’

এরফান কথাটি শুনে উত্তেজিত হয়ে অতীব মুহুর্তে রুমে নিয়ে এলো তিয়ানাকে। সে যেন এরফান এর কর্মে হতভম্ব হয়ে যায়। অবাক কর চাহনী নিয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘কি ব্যাপার রুমে আনলেন কেন!’

এরফান টু শব্দ না করে সযত্নে তিয়ানাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিল। ফাস্ট এড বক্স বের করে ব্যথাতুর স্থানে স্বল্প পরিমাণে মলম লাগিয়ে দিল। তিয়ানা স্বামীর যত্নে করা দৃশ্যে যন্ত্রণার কথা প্রায় ভুলে গেল। তৃপ্তির ন্যায় মৃদু হাসি চলে আসে তিয়ানার ওষ্ঠের কোণায়। এরফান মলম লাগিয়ে ভালোবাসার গভীর চুম্বন এঁকে দিল তিয়ানার হাতের গোড়ায়। যে স্থানে সে চেপে ধরে রেখেছিল। অস্পৃষ্ট কণ্ঠে তিয়ানার দিকে দৃষ্টিকোণ রেখে বলে,

‘তোমাকে অজান্তে পেয়ে বসলাম সেই বছর পাঁচেক আগে। বন্ধুর প্রতি যে টানপড়ান আছে তা হৃদয়ের গহীনে আজও স্পন্দিত হয়। তবুও তোমায় অপেক্ষার প্রহরী করে রাখলাম না। কেননা ভালোবেসে আগলেই নিলাম। না হলে হারাতে দেরি নয়। তুমি যে ছায়া রুপী হয়ে আমার সঙ্গে পথ চলে যাচ্ছো। এর জন্যে আমি আল্লাহর কাছে তোমাকেই জান্নাতুল ফেরদৌস এ চায়।’

তিয়ানার চুক্ষদ্বয়ে অশ্রু জমাট হলো। কিন্তু পড়তে দিল না এরফান। রমণী সূক্ষ্ম কণ্ঠে অাফসোসী বোধক ভাব নিয়ে বলে,

‘পাঁচটি বছর কেটে গেলেও তোমায় বাবা ডাক শুনাতে পারিনি প্রিয়। কেমনে আমায় গ্রহণ করে চলছো। তোমায় জায়গায় অন্য কেউ হলে বুঝি এতদিনে ডি….।’

এরফান পূর্ণ হতে দিল না তিয়ানার শেষাক্ত বাক্যটি। কেন দিবে যে শব্দটি শুনলে সম্পর্কের মায়াজালের ইতি ঘটবে। সে শব্দটি উঠিয়ে কেনো এই গভীর প্রণয়পর্বের সমাপ্তি ঘটাবে। তাই তো প্রেয়সীর ওষ্ঠজোড়ায় নিজের স্থান বুজে নিল এরফান। তিয়ানাও চুক্ষদ্বয় পরম অাবেশে নিমীলিত করে ফেলে। যুবক প্রেয়সীর সাড়ায় উম্মাদ হয়ে কোমর জড়িয়ে মিশিয়ে নিল নিজের সঙ্গে।

কিছুক্ষণ পর এরফান অনুভব করল তার প্রেয়সী নিদ্রামগ্ন হলো। যুবক নিশব্দে হেসে তার তিয়ুপাখিকে বিছানার নরম বালিশে শুয়ে দিল। মাথার চুলে বিলি কাটতে থেকে ডুবে গেল পাঁচ বছর সেই স্মৃতির বইয়ের পাতায়। যে পাতায় খনন করা হয়েছিল বিষাদের একটি দৃশ্যপট।

পাঁচবছর পূর্বে…..

যাবিয়াজ এর বিদেশ গমনের পর আলাদা হয়ে যায় বন্ধুমহল। যার একটি নাম আখ্যায়িত ছিল ‘ইতি দিন’। সেই দিনকে কেন্দ্র করে সবাই দূর দূরান্তরে পাড়ি জমিয়ে ছিল। কিন্তু কোনো ভাবেও ভুলতে পারিনি এরফান তিয়ানাকে। তবে বন্ধুর চলে যাওয়ার পিছনে ইফদিয়ার হাত হলেও। তিয়ানা ছিল তারই বান্ধবী। যার ফলে কোনো না কোনো ভাবে মস্তিষ্কের নিউরন এ ক্রোধের সৃষ্টি হতো। তিয়ানা যাবত কয়েকদিন এরফান এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উম্মাদ হয়ে উঠে। ইফদিয়ার জন্যে তার কষ্ট হলেও এরফান এর অবহেলায় যেন দ্বিগুণ কষ্ট পেতে লাগল। বান্ধবীর সঙ্গে হাসিখুশি দিন কেটে রাতের প্রহরে এরফান এর জন্যে কেঁদেছে সে। ইফদিয়ার কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিল। তার মন খারাপ কেনো?
কথা ঘুরানোর জন্যে তিয়ানা হাসার ভান করে বলে,

‘না এমনি বাসায় সমস্যা চলছিল।’

ইফদিয়ার কি ভেবে যেন বলে,

‘এরফান ভাইয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক আছে কি!’

তিয়ানা কথাটি শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। তখন ইফদিয়ার গম্ভীর ভাব করে বলে,

‘তোদের মধ্যে সম্পর্ক আছে তা আমি আগে থেকে জানতাম। তোদেরকে ইসমাইল ভাই দেখেছিল। ভাইয়ার ভাষ্যমতে তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস।’

তিয়ানা নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না। বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে অবহেলার গুপ্ত পাতা ভাগাভাগি করে নিল। ইফদিয়ার সিদ্ধান্ত নিল যে করেই হোক! তার জন্যে কেনো তার বান্ধবী কষ্ট পাবে। কষ্ট পেলে সে পাবে তবুও বান্ধবীকে তার মূলর্থ স্বাথে পৌঁছে ছাড়বে। তিয়ানাকে আজকের মত বুঝিয়ে বাসা অব্দি পৌঁছে নিজ বাসস্থানে ফিরে গেল। বাসায় আসার পথে নতুন সিম কিনে ফোনে ঢুকিয়ে নিল। এরফান এর নাম্বারে কল দেয়। অপরপাশের ব্যক্তি অর্থাৎ এরফান ফোনটি রিসিভ করে। ইফদিয়ার নিজেকে ধাতস্থ করে গলাটা খানিক নিম্র করে বলে,

‘তিয়ানাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। যদি ভালোবাসাকে পেতে চান শিগ্রী নিজের পরিবার নিয়ে তার বাসায় যান।’

কট করে ফোনটা কেটে দিল ইফদিয়ার। সিমটা খুলে রেখে দিল। বুকভরা শ্বাস ফেলে মুচকি হাসল সে। কেননা তার বান্ধবীর আগাম দিন শুভ দিনের ন্যায় প্রতিফলিত হবে। এরফান আননোন নাম্বার এর কল স্বাভাবিকতর উঠায় না। কিন্তু আজকের কলটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে উঠিয়ে নেওয়ায় আতঙ্কময়ী বাণী শুনে তার বুকটা যেন কেঁপে উঠল। আনমনে বলে উঠে।

‘তিয়ুপাখির বিয়ে! না না আজই আব্বু-আম্মুকে নিয়ে যেতে হবে। বন্ধুকে হারিয়েছি ভালোবাসাকেও হারাতে চায় না।’

এরফান হতদন্ত হয়ে তার বাবা-মাকে পছন্দের কথা জানিয়ে দেয়। এতে উনারা তাৎক্ষণিক ভাবে নিরবতা পালন করলেন। যা অধর্য্য করে তুলেছিল এরফান এর মনকে। পরক্ষণে উনারা হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী নিয়ে রওনা দিল তিয়ানার বাসায়। তিয়ানা ড্রয়িং রুমে মনমরা হয়ে বসে ছিল। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠায় নিজ দায়িত্বে দরজা খুলে দিল। কিন্তু দৃষ্টির সম্মুখে বড় চমক থাকায় যেন বিস্ময়ে পঞ্চভূত অবস্থা তার। এরফান বাঁকা হেসে চোখ টিপ মারল। যা দেখে থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। সে ভাবছে এটা কি সত্যি নাকি মিথ্যে জাল! পরক্ষণে বুঝতে সক্ষম হলো সে বাস্তবে তার সম্মুখে এরফানকে দেখছে। খুশি হতে চেয়েও পারল না চাপা অভিমান মনের কোণায় ধরা দিল তার। দরজা আঁটকে দিতে চেয়ে খেয়াল করল দুজন বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা হাসিমাখা চেহারায় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাকে দেখে খানিক বিচলিত হয়ে পড়ল তিয়ানা। স্বয়ংসম্পূর্ণ রুপে স্বাদরে বাসার অন্তে প্রবেশ করতে অনুরোধ করল। এরফান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বয়স্ক দুজনের পিছনে গেল। যার ফলে তিয়ানা অবাক না হয়ে পারছে না। সে বুঝছে না উনারা আসলে কারা! যার সঙ্গে এরফান এসেছে। কোনো কাজ সম্বধনীয় নয় তো! হতে পারে আব্বুর ডায়াবেটিস এর চিকিৎসার ভিত্তিতে এসেছে। কিন্তু আব্বুর চিকিৎসায় অধীনস্থ এরফান। তার সঙ্গে আঙ্কেল-আন্টির মত দেখতে উনাদের কি কাজ! কে জানে। তিয়ানা নিজের মত আপাত দৃষ্টিতে ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে নিল। মেহমানদের সঙ্গে ড্রয়িং রুমে এলো। তার বাবা সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। এরফান এর সঙ্গে দুজন অপরিচিত ব্যক্তিগণের মুখখানি দেখে তিনি সন্তোপর্ণে জিজ্ঞেস করলেন।

‘এরফান উনারা কে!’

এরফান দৃঢ় এক শ্বাস ফেলে বলে,

‘ইনারা হলেন আমার আব্বু-আম্মু। আপনার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে এসেছেন।’

তিয়ানার বাবা কথাটি শুনে মুহুর্তে খুব খুশি হলেন। তিনি আহ্লাদে কয়েকবার এরফানকে তার পরিবারসহ আসতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু প্রতিবার এরফান কাজের উসিলায় চলে যেতো। আজ যেন বামন হয়েও আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন তিনি। মুচকি হেসে সালাম আদায় করলেন এরফান এর বাবা-মার কাছ হতে। তিয়ানা চুপটি করে দেখে চলেছে সকলেল হাবভাব। ইতিমধ্যে সেখানে তিয়ানার মাও চলে এলেন। তিনি আসার পরই এরফান এর বাবা বললেন।

‘যাক ভাবী আপনিও এলেন। এখন না হয় বলেই ফেলি। আমরা আপনার মেয়ের হাত চাইতে এসেছি। নিজের ছেলে এরফান এর জন্যে। আপনার মেয়েকে এরফান ভীষণ ভালোবাসে।’

তিয়ানাসহ তার বাবা-মা হতবাক। বিস্ময়ে তিয়ানার বাবা তিয়ানার দিকে তাকান। মেয়ের মুখে লাজুক আভা দেখে তিনি মনে মনে নিশ্চিত সম্বধনে তার কোনো আপত্তি নেই। তাও মনের সন্দেহটা দৃঢ় না করে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন।

‘মা তুই বল বিয়েতে তোর কি মত!’

তিয়ানা আড়চোখে এরফান এর দিকে দৃষ্টিকোণ ফেলে। কিন্তু যুবক তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। যার চোখের ভাষা বুঝা অত্যন্ত সহজ ব্যাপার। তার চোখের ভাষায় স্পষ্ট প্রত্যয়মান যে, ‘একবার না করে দেখো। তারপর বুঝাব কত ধানে কত মই।’
বেচারীর কি করার ছিল ! এরফান এর তীক্ষ্মতায় ভয় পেয়ে লাজুক হেসে মাথা নাড়ল। পরক্ষণে দৌড়ে নিজ রুমে চলে যায়। যা দেখে এরফান সহ সকলে হেসে ফেলল। তিয়ানা রুমে এসে দরজা আঁটকে দিল। তার বিশ্বাস হচ্ছে না বাস্তবে তার বিয়ে হবে এরফান এর সঙ্গে। স্বপ্নটা বুঝি সত্য হতে চলল! এই বাস্তবধর্মীর খুশির মুহুর্তটা সে ইফদিয়ার সঙ্গে ভাগ না করে পারল না। সন্তোপর্ণে ফোনটা নিয়ে কল দিল ইফদিয়ারকে।

ইফদিয়ার রুমে তার হিজাবের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছে। সুতা যেন আড়াআড়িভাবে না লেগে যায় তাই সাবধানে সুই প্রবেশ করাচ্ছে হিজাবে। তার হিজাবটি দরজার ফাঁকে লেগে খানিক ছিঁড়ে গিয়ে ছিল। যার ফলে এখন কষ্ট করে সেলাই করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে সুই ঢুকানো জায়গাটি ভরাট করতে গিয়ে ফোন এর ভাইব্রেশনে তার সেলাই করার ধ্যানটা বিগড়ে যায়। ফোঁস করে হতাশার শ্বাস ছেড়ে অর্ধ সেলাই করা হিজাবটি বিছানার অপর পাশে রেখে দিল। ফোন হাতে নিয়ে দেখল তিয়ানার কল। সে উঠিয়ে কথা আরম্ভ করার পূর্বেই তিয়ানা আনন্দে চেঁচিয়ে বলে,

‘দোস্ত আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এরফান এর সঙ্গে বিয়ে পাক্কি।’

ইফদিয়ার খুশিতে লাফিয়ে উঠল। ফোনটা শক্ত করে কানে চেপে ধরে বলে,

‘সত্যি দোস্ত মিরাক্কেল হলো।’

‘হ্যা আলহামদুলিল্লাহ। তোকে কিন্তু বিয়ের প্রতিটা দায়িত্বে থাকতে হবে।’

ইফদিয়ার চাপা বিজয়ীর হাসি দিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলে কলটি কেটে দিল। আনমনে নিজের প্রতি গর্ব বোধ করল সে। কেননা তার বান্ধবীর জীবনটা বেদনায় অতিবাহিত হতে দিল না।
দুসপ্তাহ পর তুমুলবেগে বিয়ের প্রস্তুতি আরম্ভ হলো। এনগেজমেন্ট হওয়ার পূর্বে তিয়ানার বাবা এরফান এর পরিবারকে একটি সত্য ঘটনা জানিয়ে দিল। যা শুনে তিয়ানার মন বিষাদপূর্ণ হয়েছিল। তবে সে জানতো কখনো না কখনো সেই সত্যতা সকলের সম্মুখে চলে আসবে। ফলাফল রুপে চলেও আসল। এরফান ঠাই নিরব রইল। কেননা ঘটনাটি করুণ ছিল। তিয়ানা জম্ম হতে বন্ধ্যা। প্রেয়সীর করুণ দশা জেনে যেন এরফান তৎপর হলো প্রেয়সীকে আগলে নেওয়ার। আল্লাহ কাউকে অপূর্ণ রাখেন না। কোন না কোন দিন পূর্ণতা দান করেন। এই ভেবে সে তার পরিবারকে মানিয়ে নিল। এরফান এর বাবা-মাও আপত্তি করলেন না। তিয়ানাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছেন উনাদের। বিধায় তিয়ানাকে দেখতে আসার সুবাদে আংটি পরিয়ে দিয়ে ছিল।

আজ তাদের বিয়ের দিন। বিয়ের পূর্বের কটা দিনে গায়েহলুদ-মেহেদী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়ে ছিল। ইফদিয়ার ছন্দবেশে পাত্রপক্ষের সম্মুখে ছিল। সে চায় না তার কারণে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দের সৃষ্টি হোক। অনুষ্ঠানটা যেহেতু তিয়ানার আনন্দের শুভারম সেহেতু কলহ সৃষ্টি করা নিতান্তুই অপ্রকৃষ্টের ব্যাপার। আনমনে ভেবে খেয়াল করল এরফান কে। তাকে দুলাভাই এর রুপে দেখে ইফদিয়ার দোয়া করল তাদের জীবনপথ যেন সহিসালামতে চলে।

ভাবনার পরিচ্ছেদ কাটিয়ে এরফান দু’অক্ষির অশ্রুজোড়া তর্জনী আঙুল সহযোগে মুছে নিল। ইফদিয়ার কে সে বউমনির নজরে দেখে। আড়চোখে ঘুমন্ত তিয়ানার গালে নরম প্রণয়ঘটিত স্পর্শ এঁকে দাঁড়িয়ে যায়। বর্তমানে অনুষ্ঠান বহমান রয়েছে। বর্হিভাগের কাজের থাকা তার দায়িত্ব। নিশব্দে বেরিয়ে যেতে গিয়ে ভাবে।

‘ইফদি ভাবীর সঙ্গে একবার কথা বলে ক্ষমা চেয়ে নেবো।’

৫৬.

ইফদিয়ার নিভু নিভু চুক্ষদ্বয় উম্মুক্ত করে চৌপাশে চুক্ষদ্বয় বুলিয়ে নিল। রুমের মধ্যে পরিপাটি বিছানা, লাল কার্পেট তার উপর গোলাপ ফুল ছড়ানো, রুমের মধ্যে সুগন্ধিময় নেশাক্ত পারফিউমও ছিটানো রয়েছে। ত্রুটিহীন সৌন্দর্যে রাঙিয়ে রইল রুমটি। ইফদিয়ার আনমনে দাঁড়িয়ে যায়। লাল কার্পেট এ পা রেখে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা উম্মুক্ত করে দৃষ্টিকটু নিয়ে তাকায়। পুরু রুম আলোকিত হলেও সম্মুখ পথ ঘন অন্ধকারে ছেয়ে আছে। আধাঁরিয়া বসতবাড়ির চৌকাঠে পা রেখে ঢোক গিলে এগিয়ে গেল ইফদিয়ার। আকস্মিক সাদা বাতির রশ্নি তার উপর পড়ল। তীব্র রশ্নির আলোকে তার হাত আপনাপনি চুক্ষদ্বয় ঢেকে নিল। পরক্ষণে হাত সরিয়ে খেয়াল করে। সাদা বাতির সহায়তায় বাসাটি সূক্ষ্মতায় রশ্নিময় হয়েছে। মেহমান সঙ্গে পরিবারের লোকজনকে দেখে খুশি হলো বটে। তবুও আশঙ্কা রয়ে গেল মনের কোণায়। কেননা তার ধারণা অনুযায়ী সে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল। তাও আবার কোনো প্রকার রুমাল এর উপর ছিটিয়ে থাকা ক্লোরোফর্ম এর কারণে। তাহলে রুমালটা কে ধরেছিল!
মনের ভাবনা যেন দল পাকিয়ে উদয় হলো তার। সে যত কদম পেড়িয়ে পরিবার এর সন্নিকটে যাচ্ছ তত তীব্রতায় পুরু বাড়ি আলোকিত হয়ে উঠছে। উষ্ণ চঞ্চলতায় পা থমকে গেল তার। সম্মুখে এসে হাটুগেড়ে বসল যাবিয়াজ। তাকে দেখে কয়েক সেকেন্ড নিরব রইল। যুবক বাঁকা হেসে বলে,

‘ট্রেডটা জোস ছিল রাইট!’

ইফদিয়ার সন্তোপর্ণে আন্দাজ করে নিল যাবিয়াজ এর বলা বাণীটির অর্থ কি! এতটা ভয় কেউ লাগায় বুঝি। ঠোঁট বাঁকিয়ে দুহাত বুকের উপর গুজে মুখ ভেটকিয়ে অন্যদিক ফিরে তাকায়। তার ফিরে তাকাতেই চুক্ষদ্বয় শীতল হয়ে গেল। ডান পাশে দৃষ্টিকোণ রাখতেই নজর আঁটকে গেল একটি বোর্ড এর উপর। যার মধ্যে শিরোনাম স্বরুপ লিখা রয়েছে।
‘জম্মদিনের শুভেচ্ছা ইফস্পরী।’
বেগুনী-নীল রঙের সঙ্গে ব্লাশ ব্যবহার করে বোর্ডটাকে উজ্জ্বলতায় পূর্ণ করা হয়েছে। বোর্ড এর রঙটি ইফদিয়ার পরিহিত শাড়ির সঙ্গে মিল সম্পূর্ণ। কিন্তু রমণী এমুর্হুত বোরকা পরিহিত থাকায় সকলের কাছে বিষয়টি অপ্রকাশিত। ইফদিয়ার বিস্ময়ের আঁখিজোড়ায় যাবিয়াজ আলতো হেসে প্রেয়সীর হাত স্পর্শ করে। হাতের উল্টো পিঠে চুমু এঁকে বলে,

‘পূর্বেই অবহিত করে ছিলাম।
কষ্ট যেহেতু দিয়েছি সেহেতু চিরঞ্জীব ভালোবাসায় ভরিয়ে দেওয়ার প্রতিক্ষাও করেছি। হে তাই বলে শাসন অত্যাচার করব না তা নয় কিন্তু! এমন ভাবলে ভুলে যাও। বকাও যেমন খাবে মাইরও তেমন খাবে ঠান-ঠানা-ঠান।’

ইফদিয়ার বাণীটা শুনে গোমরা মুখ করে বিড়বিড়িয়ে বলে,

‘লে হালুয়া বজ্জাতের হুমকি দেখো। ভালোবাসা দেখাচ্ছে নাকি হুমকি মারছে আল্লাহই জানেন! কি খারুশ পোলা একখান।’

যাবিয়াজ দাঁড়িয়ে মৃদু করে ইফদিয়ারকে জড়িয়ে ধরে। রমণীর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘এত বিড়বিড়িয়ে লাভ নেই। যা বলেছি তাই করব। মেরে তেরে দ্বিগুন আদর করার মজায় আলাদা।’

ইফদিয়ার সম্মুখীন হলো লজ্জাময় পরিস্থিতিতে। সকলে তাদের দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে। যাবিয়াজ আড়চোখে তার ইফস্পরীকে দেখছে। লজ্জাময়ী যুবতীর নেকাপের অন্তরালে থাকা লাজুক মুখশ্রী উপভোগ করছে।
#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৯

৫৭.
ইফদিয়ার বোরকা পরিহিত অবস্থায় কেমনে আলাপন করবে ভেবে পাচ্ছে না। তথাপি সে নিজেই রবিউল সাহেব এর বলা রেওয়াজ বুঝেনি। যাবিয়াজ মিটমিটিয়ে তার ইফস্পরীর অসহায় মুখখানি দেখছে। যা ইফদিয়ার আড়চক্ষে দেখে চক্ষু রাঙিয়ে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যাবিয়াজ তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে এদিক ওদিক তাকানোর ভান করে। ইফদিয়ার মনে মনে তীব্র আক্রোশে ফুলে উঠে বলে,

‘বাবুমশাই এর ভাব দেখো। লুটেও বুঝি প্রাণ ভরে না। এখন আমার মজা নিতাছে পোলা। কোথায় এসে বউকে বুঝাবে তা না উল্টা টাকিং মারছে মাইয়াগোর লগে।’

আসলেই যাবিয়াজ ইফদিয়ারকে জ্বালানোর জন্যে শ্রেয়িতার কাজিনদের সঙ্গে হেসে হাত উঁচিয়ে নিচিয়ে কথা বলছে। যা দূর থেকে দেখে দাঁত কিড়মিড় করছে রমণী। যুবক তো রমণীর রাগভরা মুখশ্রীতে সায় পেয়ে ক্রমশ জ্বালানো বাড়িয়ে দিল। কিন্তু তার অন্তরালে সে ভীষণ বিরক্ত উক্ত মেয়েদের উপর। কেননা তার কাছে নারী বলতে শুধু তিনজনই প্রিয়। প্রথম মা দ্বিতীয় বোন তৃতীয় স্ত্রী। এদের ছাড়া বাকি সব মেয়ে তার চোখে সম্মানের হলে বোন ঠেকবে না হয় লুচিদের খাতায় নাম লিখিয়ে নিজের বিপদ ডাকবে। তার কাছে শ্রেয়িতার কাজিনদের চালচলন পোশাক-আশাক দেখে বুঝতে সক্ষম হলো। মেয়েগুলো তৃতীয় শ্রেণির লুচি মেয়ে। চুক্ষজোড়া ঘুরিয়ে নিরবতা পালন করছে যাবিয়াজ। অথচ মেয়েগুলো রেকর্ডের মত পকপক করেই চলছে। ইতিমধ্যে বিরক্তবোধ সহ্যসীমার বর্হিভাগে প্রদীপ্ত হওয়ায় যাবিয়াজ কাজের অজুহাত দেখিয়ে সরে এলো। এসেই তার বাবার পাশে ধপাস করে বসে পড়ল।
রবিউল সাহেব সোফায় বসে বাচ্চাদের খেলা দেখছেন। আজকের বউভাতের অনুষ্ঠানে ইফদিয়ার কে দেখতে এসেছে সকলে। যেহেতু যাবিয়াজ অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ডাক্তার এর খ্যাতিনাম আর ভার্চুয়াল ওয়ার্ক এ সেরা হয়েছে। সেহেতু মানুষের কাছে সে অপরিচিত নয়। যাবিয়াজ মেশরাফ এর স্ত্রীকে দেখার প্রয়াসে আত্মীয় অনাত্মীয়দের ভীড় লেগেছে। একে একে সকলে নতুন বউ এর সঙ্গে সালাম বিনিময় করে গেল। খাবারের আয়োজন এখনো আরম্ভ হয়নি। বিধায় খাবারের পূর্বে বিয়ের পর বউভাত উপলক্ষে নতুন বউকে আলাপন করার আদেশ দিলেন রবিউল সাহেব। মূলত ইফদিয়ার দক্ষতা পর্যবেক্ষণ করার জন্যে তিনি আদেশটা করলেন। কেননা যাবিয়াজ এর কাছে ইফদিয়ার আলাপন করার কথা শুনেছিল। তার কারণে তিনি আজকের দিনটাই শ্রেষ্ঠ দিন বলে বিবেচিত করলেন। ইফদিয়ার ঢোক গিলে শ্বশুরের সোফার থেকে খানিক দূরে করে বসেছে। সোফায় রবিউল সাহেব, যাবিয়াজ, ইসমাইল, শ্রেয়িতা বসে আছে। এরফান এনজিও তে গিয়েছে কাজের জন্যে। তার নাকি কোনো ইমেইল এর উত্তর দিতে হবে। সেই সূত্র ধরে চলে গেল। কবে আসবে তা জানায় নেই। যাবিয়াজও ঘাটল না ব্যাপারটায়। আপাত সে ফেরদৌসকে কল করছে। কিন্তু ছেলের ফোন অফ। চিন্তিত হয়ে বলে,

‘কই মরল রে হারামীটা!’

যুবক এর চিন্তিত মুখশ্রীকে এমুর্হুত এর জন্যে স্বাভাবিক করে নিল। ইফদিয়ারকে ঘাবড়াতে দেখে যাবিয়াজ সন্তোপর্ণে এসে দাঁড়িয়ে যায় তার কাছে। ইফদিয়ার হাতে থাকা রঙ প্লেট এ বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ করে এগিয়ে দিল ইফস্পরীর দিকে। চোখ বন্ধ করে দৃঢ়স্থ শ্বাস ছেড়ে ইফদিয়ারকে আশ্বস্ত করে। ফলে রমণী একটুখানি হলেও সাহস পেল। মৃদু হেসে প্লেটটা নিয়ে তুলি দ্বারা মেঝের উপর আলাপন শুরু করল। আগ্রহদীপ্ত নয়নে সকলে নতুন বউয়ের হাতের অঙ্কন দেখছে। যাবিয়াজ বসল না স্ত্রীর সহযোগিতায় সে দিব্য দাঁড়িয়ে রইল। ইফদিয়ার কয়েকবার ইশারায় বসতে বলেছিল। তবুও যুবক নাছোড়বান্দা। নিজের প্রিয় জিনিসের কদর যত্নে সে অবহেলাপূর্ণ নয়। আলাপন পূরণ হতে আর ২০ মিনিট আছে ইফদিয়ার। তারই মধ্যে খবর এলো খাবারের পরিবেশন সম্পন্ন হয়েছে। যাবিয়াজ প্রিয়তমার হাতের রঙ থেকে আহ্লাদ করে খানিক রঙ নিয়ে আলাপন এর মধ্যে জে প্লাস ই অঙ্কন করে দিল। লাজুক হেসে দাঁড়িয়ে গেল দু’প্রাণ। রবিউল সাহেব উঠে প্রশংসামুখর হয়ে নতুন বউকে দোয়া দিল। ইফদিয়ার কাঁধে হাত রেখে এগিয়ে এলো ডাইনিং রুমে। যাবিয়াজ এর সঙ্গে বউকে বসানোর পর খাবার পর্ব আরম্ভ হলো।

অনুষ্ঠান মধ্য রাত অব্দি চলেনি। কেননা সকল এর খুব খাঠুনি ধকল গিয়েছে। ফলে চূড়ান্ত ভাবে ৮টায় বউয়ের দর্শন পর্বের সমাপ্তি ঘটলে একে একে মেহমানদের গমনাগমন আরম্ভ হলো। ইসমাইল শ্রেয়িতা ভাবীও ফিরে গিয়েছে নিজ বাসস্থানে। যাওয়ার পূর্বে ইফদিয়ার চক্ষু-নাক এর অশ্রু একাকার হয়ে ভিজল ভাইয়ের শার্ট। শ্রেয়িতা অশ্রু চোখযুগল হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে বারংবার মুছে চলছিল। কেননা বছর পেড়িয়ে গেলেও তারা আলাদা হয়নি। আকস্মিক বিচ্ছেদ হওয়া যেন আপনজন এর মনে শিহরিত করে তুলেছে। ইসমাইল জানে তার বোন নিরাপদ বাসস্থানে আছে। সুতরাং ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবুও মনের কোণায় ভাইয়ের স্নেহতা রয়ে যায় বোনের প্রতি। যাবিয়াজ পকেটে হাত গুজে ভাই-বোন এর স্নেহশীল বিদায়পনায়তা দেখছে। তার নিজস্ব কোনো বোন বা ভাই নেই। ফলে সে এর মমার্থ খুব একটা না বুঝলেও শ্রেয়িতাকে সে নিজের বোনের নজরে দেখে। ফেরদৌস, এরফান এরা বন্ধু কম ভাই এর রুপে বেশি আগলে রাখার মত মানব। এদের দ্বারা স্বল্প পরিমাণে ভাইবোন এর টানপীড়নতা বুঝতে সক্ষম। ইসমাইল নিজেকে শক্ত রেখে ইফদিয়ার মাথা বক্ষপিঞ্জরে চেপে রেখে যাবিয়াজকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘কখনো ভাবিনি এই এতিম ছেলের মা-বোন নামক ছায়াহরণী আসবে। আল্লাহ পাক আমার কপালে লিখে রেখে ছিলেন বিধায় বোনটা ছোট হতে বড় হয়ে গেল। আজ তার নিজস্ব স্বামীর বাসা বিদ্যমান। তোকে ভাই নয় দোস্তের চোখে দেখিরে যাবিয়াজ। বোনটাকে আগলে রাখিস। তবে কোনো প্রকার সহায়তা লাগলে শুধু একটা কল দিবি। এই বান্দা সর্বদা হাজির হতে তৎপর থাকবে। আর হে, তোর দোস্তের বোন কিন্তু অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করলে এক্করে মেরে গুম করে দেবো।’

যাবিয়াজ চওড়া হাসি দিয়ে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে আমলে নিল শুদ্ধভাবে। তবুও ইফদিয়ার ক্রন্দররত দশা দেখে খানিক ফাজলামি করে বলে,

‘হিইইই আইছে বোনের ভাই। কি করবি হে? তোর বোনরে পিঠমু, মাইর দিমু। ইহা মেরা হক হে।’

ইসমাইল ভ্রু কুঁচকে যাবিয়াজ এর দিকে অপ্রকট দৃষ্টি দিল। দেখল তার ওষ্ঠজুড়ে বাঁকা হাসি বহমান। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইসমাইলও ক্রোধ হওয়ার ভান করে বলে,

‘এক কেস মেরে জেলের ভাত খাওয়ামু।’

ইফদিয়ার প্রথমত চক্ষু রাঙিয়ে যাবিয়াজ এর দিকে পরখ করে ছিল। কিন্তু ভাই এর মুখে সায়পূর্ণ কথা শুনে যেন খুশিতে মনে মনে লাফিয়ে উঠল। সেও কোমরে হাত রেখে যাবিয়াজ এর দিকে আঙুল দেখিয়ে ভাব নিয়ে বলে,

‘হাহ্ এবার মেরে দেইখো। ভাইরে এক কল মেরে তোমার ফান্দা ফাটিয়ে দিবো।’

যাবিয়াজ হাই তুলে এক জটে ইফদিয়ার কোমর টেনে কাছে নিয়ে আসে। নিজ বক্ষে আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেপে ধরে ইসমাইল এর দিকে তাকিয়ে বলে,

‘দেখ তোর বোনরে উঠাইয়া নিসি।’

‘তোরই বউ এতে আমি অবলা পুরুষ আর কি কমু।’

ইফদিয়ার অবাক হয়ে বলে,

‘ভাইয়া।’

‘সরি রে বোন। তোর জামাই মানা কেমনে করুম।’

ইফদিয়ার গাল ফুলিয়ে অন্য দিক মুখ বাঁকিয়ে রইল। ইসমাইল হেসে শ্রেয়িতার হাতে থাকা একটি প্যাকেট নিল। সেটি সন্তোপর্ণে ইফদিপাখির হাতে দিয়ে স্নেহময়ী কণ্ঠে বলে,

‘তোর জম্মদিন এর উপহার। অবশ্যই আমার কাজের আয়ে কিনেছি। আশা করি তোর ভালো লাগবে। কয়েকমাস পর আমাদের এনির্ভাসেরী পার্টি দিবো। সেখানে জিনিসটি পরে আছিস।’

ইফদিয়ার প্রশ্নতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে ইসমাইল ভেবে বলে,

‘তোর জন্যে নিজ পছন্দের জুয়েলারি দিয়েছি।’

ইফদিয়ার ইতস্ততঃ বোধ করে আবেগী গলায় বলে,

‘এর দরকার ছিল না।’

‘এক ভাই তার বোনকে দিয়েছে।’

ইফদিয়ার কথা বাড়ালো না। কেননা তার ভাইকে শত বলে ফিরিয়ে দিতে চাইলেও সে ফেরত নেওয়ার মত মানুষ নয়। ফলে সময়ের প্রেক্ষিতে তারা গাড়িতে উঠে পড়ল। মেহমান এর যাত্রা কমে এলো। রবিউল সাহেব বউমার আলাপন করা অঙ্কনে ঘোরের মত দৃষ্টি রেখেছেন। আলাপন এর সম্মুখে একটি চেয়ার নিয়ে বসলেন। পকেট থেকে ফোনটা বের করলেন। বর্তমানে কোনো ফোন কলের নং খুঁজতে উনার অসুবিধা হয়না। পূর্বে বেশ অসুবিধে হতো। যেহেতু পূর্বে তিনি অন্ধত্বের জীবন অতিবাহিত করছিলেন সেহেতু সাময়িককাল স্বচক্ষে পরখ করতে পারছেন। ফোন কল এর কনটাক্ট লিস্টে নামবিহীন একটি সংখ্যা পেলেন। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে সংখ্যাটির দিকে চেয়ে রইলেন। তিন-পাঁচেক মিনিট পর শুকনো এক ঢোক গিলে সবুজ রঙে রাঙা কল এর মত ছবির উপর চাপ দিলেন। চাপ দেওয়ার সঙ্গেই লিখা উঠছিল কলিং। রিংগীং না হওয়ায় উনার মনজুড়ে হতাশার আস্তানায় ছড়িয়ে গেল। পরক্ষণেই একটি সার্ভিস অফিস এর মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে উঠল।

‘আপনার কল দেওয়া নাম্বারটি যোগাযোগের বাহিরে রয়েছে।’

শুনে তিনি অপেক্ষা করলেন না কলটি কেটে দিলেন। যাবত পাঁচ বছর ধরে সংখ্যাটির উপর কম প্রভাব ফেলেননি। অর্থাৎ কয়েক’শ বার কল দিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল একটিই কাঙ্ক্ষিত মানুষের অস্তিত্ব নেই। যেন বিলীন হয়ে গেল বনের মাঝে। যোগাযোগ এর বাহিরে এর অর্থ দ্বারা তিনি বুঝতে সক্ষম নাম্বারটির ইতি ঘটেছে। পুনরায় জাগ্রত হবার আশা করা হলো বৃথা মনোভাবনীয়।
রবিউল সাহেব নিষ্পন্নভাবে শ্বাস ছেড়ে ফোনটি পাঞ্জাবীর পকেটে গুজে নিল। আলাপন এর দিকে পুনরায় দৃষ্টি নিক্ষেপণ করলেন।
কেন যেন ইফদিয়ার প্রদর্শিত চারিত্রিক ব্যবহারে তিনি আপনজনকে দেখতে পান। যার সাথে কয়েক বছর আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল সম্পর্ক নামক বন্ধনটি। তবে এককালীন প্রিয় মানুষের খাতায় ‘আপনজনটি’ ছিল সর্বোচ্চ উচ্চমানীয় মানব। দৃঢ়স্থ এক শ্বাস ফেলে আলাপন এর উপর ছোঁয়া দিলেন। অালাপন এর জলস্রোত এতক্ষণে শুকিয়ে গিয়েছে। বিধায় রবিউল সাহেব এর হাতে জল এর স্পর্শতা বোধ হয়নি। যাবিয়াজ বাসার গেটে দারোয়ান এর সঙ্গে আলাপ শেষে কিছু পরিমাণে বকশিশ দিল। গেট বন্ধ করতে আজ্ঞা করে সে বাসার ভেতর প্রবেশ করে। নিঃশব্দে দরজাটি লাগিয়ে ড্রয়িং রুম পাড় হতে না হতে বাবাকে দেখল বসে রইতে। বাবা কে এখনো অনুষ্ঠানের পরিহিত পোশাকে দেখে বুঝল তিনি এখনো ফ্রেশ হোননি। বাবার কাছে গিয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে ‘ড্যাড’ বলে উঠল। রবিউল সাহেব এর ধ্যান ফিরল। চোখ উঠিয়ে দেখলেন ছেলে তার দিকে বিস্ময় চাহনী নিয়ে দেখছে। তিনি গলা ঝেড়ে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

‘কিছু বলবে বাবা!’

‘হুম এশার এর আযান দিবে। সময় পেড়িয়ে গেল মাগরিব এর নামাজ কাযা পড়তে হবে। তবে তোমাকে উদাসীন কেনো দেখাচ্ছে। কিছু হয়েছে কি!’

রবিউল সাহেব হালকা হেসে মাথা ডান-বাম নেড়ে না বোঝায়। যুবক সন্দেহ করতে চেয়েও করল না। হতে পারে তার বাবা খুশির আপ্যয়ন করছেন নিজ স্বেচ্ছায়। তিনি শান্তবেগে হেঁটে গেলেন রুমের দিকে। যাবিয়াজ বাবার যাওয়ার দিকে ক্ষণসময় তাকিয়ে সন্তোপণে নিজ রুম এ আগালো। রুমে এসে দেখে তার ইফস্পরী জায়নামাজে সিজদারত রয়েছে। সাদামাটা পোশাক পরিদান করে আছে। বুঝায় যাচ্ছে দিনের সাজসরঞ্জাম ওযুর দ্বারা মোচন করে ফেলেছে। যা বেশ ভালো লাগল যুবকের। সে মৃদু হেসে দরজার ছিটকিনি মেরে ওয়াশরুমে গেল। এখনো অনুষ্ঠান এর পোশাক পরিহিত সে। অতঃপর স্ত্রীর মত সাদামাটা রুপ ধারণ করে ওযু করে নিল। ইফদিয়ার সিজদা ছেড়ে বসল। নফল নামাজ পড়া শেষ করে জায়নামাজটা অর্ধ উম্মুক্ত রেখে বিছানায় বসল। এশার এর আযান হতে ২০ মিনিট সময় আছে বটে। উক্ত সময়ে তসবিহ পাঠ করার অনুভব গড়ল। যাবিয়াজ গোসল সেরে মাথা মোচন করতে করতে বেরুল। ইফদিয়ার বিস্ময় চাহনী নিয়ে বলে,

‘আপনি কবে এলেন আর এখন গোসল কেনো করলেন! শীতের আরম্ভ হয়েছে। রাতে গোসল করলেই ঠান্ডা লাগতে পারে।’

‘আস্তে একটু জিরিয়ে কথা বলো। আর রইল গোসল এর ব্যাপার। সকাল থেকে তোমার জন্যে খাটিয়েছি কাঠুনি। একটু পাওনা অাবশ্যিক।’

ইফদিয়ার অবগত হলো যে, ধকল এর ফলাফলে গরম লাগছে যাবিয়াজ এর। সুতরাং গোসল করাটাকে সে মন্দ ভাবেনি। যাবিয়াজ ফুলহাতা পাতলা, ঢিলেঢালা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে মাথায় টুপি এঁটে মসজিদ ওর জন্যে তৈরি হলো। যাওয়ার আগে পর্দারত স্ত্রীর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল। ইফদিয়ার আনমনে মৃদু হাসল।

৫৮.

রাত ৯টা তিয়ানা ঘুমভাব নিয়ে উঠে বসে। ঘাড়ে হালকা ব্যথা অনুভব করল। বিছানায় পরখ করে দেখে বালিশটা নিজ জায়গায় নেই। ফলে ঘাড়টাও বেঁকে ব্যথা লাগচ্ছে তার। বালিশটা সস্থানে রেখে থ্রিপিচটা টানটুন করে ঘড়ির দিকে খেয়াল করে। হুট করে তার মাথায় বাজ পড়ল। রাত ৯টা ৫ মিনিট হয়ে পড়েছে। জানালার দিকে অক্ষি মেলে দেখে নিস্তধ্ব রাতের প্রহর আরম্ভ হয়েছে। সে দিনের অনুষ্ঠান এ উপস্থিত হতে পারেনি। কপালে চাপড় মেরে আফসোস এর গলায় বলে,

‘ইশ! উনিও আমায় জাগালেন না। এখন বান্ধপ্পী বুঝি রাগে টাই টাই ফিস করে দেবে।’

‘করব না বান্ধপ্পী।’

তিয়ানা ইফদিয়ার কণ্ঠ পেয়ে অক্ষিযুগল দরজার ধারে নিক্ষেপ করে। রমণী হালকা হেসে খাবারের প্লেট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। তিয়ানার সম্মুখে প্লেট রেখে আহ্লাদময়ী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘শরীর কেমন!’

‘ভালো শুধু ঘুমটা বেশি হয়ে গেল।’

‘সমস্যা নেই। ফ্রেশ হয়ে নে খাবার আনছি খেয়ে নিস।’

তিয়ানা মাথা নাড়তেই মৃদু আর্তনাদ করে উঠল। ইফদিয়ার ঘাবড়ে বান্ধবীর পাশ ঘেষে বসে। তার কাঁধে স্পর্শ করে চিন্তিত সুরে বলে,

‘কি রে কোথায় ব্যথা হচ্ছে!’

‘ঘাড় ব্যথা করছে। না জানি ঘুমের মধ্যে বালিশটা নড়বড় কেমনে হলো।’

ইফদিয়ার বিষয়টি আমলে তাকে বসতে বলে চটজলদি নিজের রুমে গেল। আলমারী থেকে ব্যথা দূরীকরণীয় স্প্রে বোতলটি হাতে নিয়ে তিয়ানার রুমে আসে। তার ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে স্বয়ং স্বেচ্ছাসেবক হয়ে স্প্রে করল ইফদিয়ার। তিয়ানা স্বল্প পরিমাণে ঘাড় নাড়তে পারল। ক্ষণ যন্ত্রণা রয়ে গেলেও সে হেসে বলে,

‘হয়েছে।’

ইফদিয়ার জানে তিয়ানা সংকোচবোধে যন্ত্রণার কথা বলছে না। তাই সে নিজ দায়িত্বে নিশ্চুপে রান্নাঘরে গেল। জলের স্যাক ব্যাগে কুসুম গরম জল ভর্তি করে রুমে এসে তিয়ানার হাতে সমর্পন করে। তিয়ানা ভ্রু নাড়িয়ে অভিমানী কণ্ঠে বলে,

‘নতুন বউদের ওত কাজে মানায় না।’

‘আইছে রে জ্ঞান দানকারী। যা ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার খেয়ে নে।’

ইতঃপূর্বে রান্নাঘরে শেফস রান্না আরম্ভ করে দিল। ইফদিয়ার প্রবণ দৃষ্টিতে পরখ করে রুমে গেল। সময় কাটছে না এখনো অব্দি বাসায় ফিরল না যাবিয়াজ। ফলে কোনো কাজ না পাওয়ায় ফোন হাতে নিয়ে বসে। ফোনের ওপেন বাটন প্রেস করতেই দৃষ্টিকটু হলো একটি নোটিফিকেশন। যেটি ছিল হোয়াইটসআপে আননোন কনটাক্ট হতে আগত। ধারণার পুরিশুদ্ধি করতে মেসেজ অপশনে চাপ প্রসারণ করে। স্বয়ং দৃষ্টিতে আতঙ্কে তৎপর হলো সে। হাতটা ক্রমান্বয়ে কাঁপতে লাগল তার। কেননা মেসেজটি এসেছে অচেনা নাম্বার হতে। মেসেজের মধ্যে থাকা ভিডিওটি দেখে সে ভীষণ আতঙ্কে ফোনটি আপাত বিছানায় রেখে দিল। পুনঃপুনঃ ফোনটি সুইচড অফ করে দিল। দু’হাটু গেড়ে হাত দ্বারা প্রসারিত করে নিজেকে গুটিয়ে নিল। মেসেজের ভিডিওটি চক্ষু দৃষ্টিতে ভেসে উঠছে। আনমনে মাথা চেপে ধরে মৃদু চিৎকার করে উঠল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
যাবিয়াজ সবেমাত্র রুমের সম্মুখে এলো। অন্তভাগ হতে প্রিয়সীর মৃদু আর্তনাদ তার কর্ণাটক এ গ্রহিত হলো। সময় বিলম্ব না করে অবিরাম ধারায় বেগে রুমে প্রবেশ করল। প্রিয়সীর অতি ক্ষণসময়ে বিধ্বস্ত মুখশ্রী দেখে বক্ষপিন্ড মুচড়ে উঠল। ইফস্পরীর কাছে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিল। ইফদিয়ার আপন মানুষের উষ্ণতা পেয়ে জাপ্টে ধরল তাকে। ফুঁপিয়ে অশ্র নিক্ষেপ করে কাঁপা কণ্ঠে বলে,

‘ও ও আব আবার আমার পি পিছে লেগেছে। আমায় ভুল বু বুঝবেন না প্লিজ।’

যাবিয়াজ নরম কণ্ঠে ইফদিয়ার থুতনীর উচু করে কপালে গাড় চুম্বন দিয়ে বলে,

‘হুস অামি থাকতে কেউ তোমার পিছু নেবার নয়।’

ইফস্পরীর মাথাটা বক্ষপিন্ডে আঁকড়ে রেখে চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিল। রমণীর অঢের অশ্রুপাতের কারণবশত নিদ্রামগ্ন হয়ে গেল। যাবিয়াজ পরম যত্নে স্ত্রীর মাথাটা বালিশে ঠেকিয়ে দিল। নরম তুলতুলে গালে নিজের হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে ক্ষাণিক বুলিয়ে বিছানার চৌপাশ এ চক্ষু বুলিয়ে নিল। সন্দেহপ্রবণ কিছু না পাওয়ায় আকস্মিক নজর আঁটকে এলো ইফস্পরীর ফোনের উপর। ঘন সন্নিবেশিষ্ট অক্ষিযুগল নিয়ে ফোনটি হাতে নিল। ইফদিয়ার তার ফোনে কখনো লক বা প্যাটার্ন ব্যবহার করেনি। সেই সুবাদে ফোনের মধ্যে পূর্বের সময়ের নোটিফিকেশন চেকআউট করে। ফলাফল স্বরুপ হোয়াইটহআপে আননোন মেসেজটি পেয়ে সেখানে প্রবেশ করে। একটি ভিডিও যার ফ্রেমটি কালো। অতঃপর সন্দেহটা দৃঢ় করে ভিডিওটি চালু করল।
করতেই যেন যাবিয়াজ এর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে আক্রোশে কেঁপে উঠে। ভিডিওর মধ্যে নাজমুল এক কিশোরীর নগ্ন শরীরে ছুড়ি বসিয়ে কেটেকুটে দেখাচ্ছে। কিন্তু এতেই সে দম ফেলেনি। বরং মাটির উপর রক্তাক্ত ছুড়ি নিয়ে ‘ইফদিয়ার’ নামটি সংক্ষেপে ‘ইফদি’ লিখল। এই ভিডিওর দৃশ্যপটে ভীষণ আতঙ্কে উঠে ছিল ইফদিয়ার। যা বুঝতে সক্ষম হলো যাবিয়াজ। ইফস্পরীর দিকে নিষ্পলক দৃষ্টি দিয়ে পুনরায় ফোনের মধ্যে দৃষ্টি রাখে। মেসেজটি ডিলেট করে আননোন নাম্বারটি ব্লক করে দিল। ফোনটি নিয়ে বেরিয়ে গেল। বাহিরের দরজা খুলার সময় তিয়ানাকে সম্মুখে পেল। কিছু না ভেবে ডাক দিল। তিয়ানা প্লেটে আপেল কাটছিল রবিউল সাহেব এর জন্যে। যাবিয়াজ এর ডাক শুনায় পিছু ফিরে তাকায়। সৌজন্য কণ্ঠে ‘জ্বি দুলাভাই’ বলে সম্বধন করে। যাবিয়াজ এসে তিয়ানাকে বলে,

‘উইল ইউ ডু মি এ ফেভার!’
(তুমি কি আমার একটি উপকার করবে!)

‘জ্বি কেনো নয়।’

যাবিয়াজ ফোনসহ কিছু টাকা তিয়ানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

‘রহিম চাচুকে নিয়ে ফোনের দোকানে যাও। সেখান থেকে সিম কিনে ফোনে সেটিংস করে দিও। টাকা যত দিছি তাতে হয়ে যাবে। আর যদি বারতি লাগে তুমি ম্যানেজ করে নিও। বাসায় এসে ইফদিয়ার রুমে রেখে এসো। এখন সে ঘুম।’

তিয়ানা শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। যাবিয়াজ অপেক্ষা না করে পুনরায় আক্রোশপূর্ণ মুখে বেরিয়ে গেল। গাড়িতে বসেই ফোন নিয়ে কল লাগাল এরফানকে। সে এমাত্র গাড়িতে বসেছিল যাবিয়াজ এর বাসায় যাওয়ার জন্যে। ইঞ্জিন চালু করতে না করতেই যাবিয়াজ এর কল চলে এলো। এরফান চট করে ফোন উঠাতেই যাবিয়াজ শান্ত ককর্শভরা গলায় বলে,

‘গেট রেডি টু কিডনাপ।’

এরফান পুনঃ প্রশ্ন করল না। বাঁকা হেসে যাবিয়াজ এর কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলে,

‘ওকে বস আইম কামিং।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here