#এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব:- ১৭
অনিচ্ছা সত্ত্বে বাসায় ফিরে এলেও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারেনি রামিশা। সে নিজের বোনের বাসায় না গিয়ে গতকাল রাতে সাজুর যে বন্ধুর বাসায় ছিল সেখানে গেল। তাকে সবকিছু বলতে পারলে সে নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। নিজের বোনের বাসায় গেলে সেখানে বসে কিছু করতে পারবে না সে।
লিয়াকত আলী বাসায় নেই। তার স্ত্রী সবকিছু শুনে সঙ্গে সঙ্গে হাসবেন্ডকে মোবাইল করলেন। তিনি এমনিতেই একটু পরে বাসায় আসবেন লাঞ্চ করার জন্য। তবুও তাকে কল দিয়ে জরুরি ভাবে ডাকা হয়েছে কারণ কোনো কাজে যদি আটকে যায় তাহলে নাও আসতে পারে।
|
|
মাহিন এখন বসে আছে রেললাইনের পাশের এক বস্তিতে বন্ধ ঘরের মধ্যে। ছটকু নামের যে ছেলেটা তাকে আটকে রেখেছিল তাকে কৌশলে জখম করে এখানে বন্দী করেছে মাহিন। তার মোবাইল নিজের কাছে রেখেছিল আর সেখানেই একটা মেসেজ পেয়েছিল মাহিন।
ছটকুর কাছে আসার কারণ হচ্ছে সাজুকে মারার ব্যবস্থা করে করেছে সেটা জিজ্ঞেস করা। মাহিন আরও একটা কথা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে, তা হচ্ছে মাহিশার খুনি কে?
মাহিশার বাবা নিজের মেয়েকে এভাবে কোনদিন খুন করাবেন না। যদি মেয়েকে মারার ইচ্ছে হতো তাহলে সেটা বাগেরহাটের মধ্যে করতে পারতো। শুধু শুধু ঢাকা শহরে নিয়ে আসার নিশ্চয়ই কারণ ছিল, কিন্তু সেই কারণটা কি?
কে করেছে এই কাজ?
মাহিন প্রতিজ্ঞা করেছে মাহিশার খুনের প্রতিশোধ না নিয়ে সে ছাড়বে না। দরকার হলে সম্পুর্ণ দলটা সে চূর্ণ বিচুর্ণ করে দেবে, এই দলের অনেক গোপন খবর সে জানে।
স্বার্থ ছাড়া মানুষ কিছু করে না। নিজের দলের কাউকে দিয়ে তথ্য না পেয়ে মাহিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাজুকে ধরতে হবে। তাকে অনুসরণ করলেই সে জানতে পারবে আসল রহস্যের কথা। সাজু ভাই নিশ্চয়ই বের করবে, আর তারপর নাহয় নিজের কাজটা করবে মাহিন।
তাই সাজুকে এই মুহূর্তে সাহায্য করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। চমৎকার একটা মানুষ, পছন্দের।
ছটকু ছেলেটা পানি পানি বলে ফিসফিস করছে।
– মাহিন বললো, আমাকে মারার জন্য তোকে কে বলেছিল, দাদাজান?
– চুপচাপ।
– একটা সময় আমাদের কতো ঘনিষ্ঠতা ছিল তাই না ছটকু? আর এখন পরিস্থিতি আলাদা, গতকাল তুই আমাকে খুন করতে চাইলি। আর আজকে আমি তোকে মারতে এসেছি, অদ্ভুত।
– ওরা তোকে বাঁচতে দেবে না মাহিন। যদি বাঁচতে চাও তাহলে বর্ডার পেরিয়ে চলে যা, নাহলে অনেক বড় ভুল হবে।
– লিডারের মেয়েকে খুন করেছে কে? আমি জানি তুই সবকিছু জানিস ছটকু, নাহলে আমাকে মারার দায়িত্ব তোকে দেওয়া হতো না।
[ মাহিশার বাবাকে সবাই লিডার নামে চেনে আর মূল যিনি আছেন তাকে চেনে সবাই দাদাজান। ]
– লিডারের মেয়ে আমি চিনি না মাহিন, তবে আমি শুনেছি তার মেয়ে খুন হয়েছে। আর কাজটা করেছে আমাদের দলের বাইরের কেউ, ভিতরের কেউ এমন কাজ করে নাই।
– বাহিরের কারো এতসব কলিজা আছে? কীভাবে বাহির থেকে এসে লিডারের মেয়েকে খুন করার সাহস পাবে?
– দেখ মাহিন, তোর সাথে লিডারের মেয়ে নিয়ে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে? নাহলে তুই লিডারের মেয়ে হত্যার বিষয় নিয়ে এতটা আগ্রহী কেন?
– মাহিশা আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল ছটকু।
– কিহহ? তারমানে এজন্যই তোকে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে? কিন্তু লিডার তার মেয়েকে বিয়ে দেবার আগে এটা করলো না কেন?
– চুপ কর! আমাকে বল সাজুকে মারার জন্য ওই মেসেজ তোকে কে দিয়েছে?
– চুপচাপ।
মাহিন এবার ছটকুর মুখটা কসটেপ দিয়ে আটকে দিয়ে ছটকুর বাম হাতের একটা আঙ্গুলের মাথা কেটে দিল। গোঙানির মতো শব্দ করতে লাগলো ছটকু, মাহিন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
আরেকটু কাটার চেষ্টা করার আগেই ছটকু ইশারা দিয়ে বললো যে ” সে সবকিছু বলবে। ”
★★
দাদাজান নামে পরিচিত ওই ব্যক্তির কাছে যাবার কোনো ইচ্ছে নেই রবিউলের। লোকটা তাকে দিয়ে কিছু অন্যায় কাজ করিয়ে নিয়েছে, এতে খুবই হতাশ হয়েছে সে। যদিও তার সবগুলো কাজই অন্যায়, কিন্তু তবুও সে যে নিয়ম মেনে চলে সেটা ভেঙ্গে গেল।
আজিমপুর থেকে ফেরার পথে মংলা থেকে একটা কল এসেছে রবিউলের কাছে। তার নিজের নিযুক্ত করা সেই ইনফর্মার বলেছে,
” দারোগা সাহেবের একটা মেয়ে আছে, সে ক্লাস সিক্সে পড়ে। দাদা-দাদির সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে দারোগা সাহেবের মেয়ে। ”
রবিউল আপাতত নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে। যেভাবেই হোক আব্দুল কাদেরকে বাঁচাতে হবে, তাকে পুলিশের হাত থেকে বের করে আনতে হবে।
আর সেজন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে ওই দারোগা সাহেবের মেয়ে।
আপাতত নিজের পারসোনাল নাম্বার বন্ধ করে দিয়েছে রবিউল।
★★
দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে মাহিনের বাইক। একটু আগে সে বস্তিতে ছটকুকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু তার আগে সে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য বের করতে পেরেছে।
সাজু এখন সাদেকের হাতে বন্দী, ছটকু যখন জানালো যে সাদেক ও তাকে হুকুম করা হয়েছে সাজুকে মারার জন্য। তখন সঙ্গে সঙ্গে ছটকুর মোবাইল দিয়ে সাদেকের কাছে কল করে মাহিন। মাহিনের শেখানো সব প্রশ্ন করে ছটকু। আর তখন জানতে পারে সাদেক সাজুকে আটকে রেখেছে আর একটু পরে খুন করা হবে।
কিন্তু কোথায় আটকে রেখেছে সেটা তারা বলে নাই। জোর করে জিজ্ঞেস করেও জানা যায়নি।
মাহিন বারবার সাজুর নাম্বারে কল দিচ্ছে কিন্তু নাম্বার বন্ধ। টেনশনে বাইক ড্রাইভ করতে গিয়ে ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট করে ফেলে। কোনরকমে পার হয়ে এসে সে এখন বসে আছে মিরপুরের দুই নাম্বারে, স্টেডিয়ামের পাশে। মাথা ঠান্ডা রেখে কিছু একটা বুদ্ধি বের করতে হবে।
পকেটে নিজের মোবাইল বেজে উঠলো মাহিনের। বের করে নতুন নাম্বার দেখে রিসিভ করে চুপ করে রইল। ওপাশ থেকে শুধু বললো,
– স্যরি মাহিন।
– মানে? কে আপনি?
– আমি সচারাচর কাউকে স্যরি বলি না, তোমাকে বলতে ইচ্ছে করছিল তাই বললাম। আমি আসলে ভুল তথ্য জেনে মাহিশাকে কিডন্যাপ করে খুন করেছি। আমার উচিৎ ছিল একটু যাচাই করে তারপর কাজটা করা। স্যরি আবারও।
– কি বললি তুই? কু*ত্তা*র বাচ্চা তুই আমার মাহিশাকে খুন করে আবার আমাকে কল দিয়ে স্যরি বলিস?
– আমি ঠান্ডা মাথায় বলছি ভুল হয়েছে, প্রিয়জন হারানোর শূন্যতা আমি জানি। বলতে পারো সেই শূন্যতা থেকেই কাজটা বেশি আগ্রহ নিয়ে করেছি। কিন্তু পরে জানলাম সবটাই উল্টো, যে আমাকে কাজটা দিয়েছে সে গাদ্দারি করেছে।
– তোকে আর তোর সেই লোককে আমি নিজের হাতে মারবো।
– আমাকে তুমি কোনদিনই পাবে না, তবে যিনি আমাকে কাজটা দিয়েছে তাকে আমি ঠিকই শাস্তি দেবো। তবে তার আগে আমাকে একটা কাজ করতে হবে তাই সেটা শেষ করতে যাচ্ছি।
– শু*য়ো*রে*র বাচ্চা।
– গালাগালি আমার একদম অপছন্দ, আচরণ তোমাকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। কাজটা আমি করতে পারতাম কিন্তু সামান্য রিস্ক আছে তাই তোমাকে দিচ্ছি।
– তোর কাজ করবো আমি?
– সকালে যার সঙ্গে তুমি রেস্টুরেন্টে দেখে করেছিলে সেই সাজু লোকটা তোমাদের দলের সাদেকের হাতে বন্দী। আমি একটা নাম্বার দিচ্ছি, সাজুর সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল এটা তার নাম্বার। তুমি শুধু তাকে কল দিয়ে বলবে সাজু প্রচুর বিপদের মধ্যে আছে।
– সাজু ভাই বিপদে আছে আমিও জানি কিন্তু কোন যায়গা আছে সেটা বল তুই।
কল কেটে দিয়েছে রবিউল। তাই শেষের কথা কিছু শুনতে পায়নি সে। একটু পরে মাহিনের ফোনে মেসেজে একটা নাম্বার এলো।
মাহিনকে মেসেজ দিয়ে নাম্বারটা বন্ধ করে দিল রবিউল। রামিশার সঙ্গে গতকাল তার অনেক কথা হয়েছে তাই কণ্ঠ চিনে ফেলতে পারে। সেজন্য সকাল বেলা যেহেতু মাহিন তাদের সঙ্গে দেখা করেছে তাই তাকে দিয়েই কাজটা করে নিল।
যদিও সে একটা মেসেজ দিয়ে জানাতে পারতো রামিশাকে। কিন্তু আজকাল সিম। কোম্পানির বিভিন্ন আজেবাজে মেসেজের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক মেসেজ মানুষ চেক করে না।
★★
সাজুকে এখানে নিয়ে আসার পর তার মোবাইল চালু ছিল। হঠাৎ করে একবার কল আসতেই সাদেক মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
মোবাইল হাতে নিয়ে চোখ উজ্জ্বল হয়ে যায় তার। কারণ কলটা এসেছে লন্ডন থেকে, সেভ করা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা সাজুর বাবার নাম্বার।
অচেতন সাজুর হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে লকটা খুলে ফেলে সহজেই। তারপর কলটা নিজেই রিসিভ করে কথা বলে।
– হ্যালো কে বলছেন?
– আমি সাজুর বাবা, আপনি কে? সাজু কোথায়?
– আপনি তো ঠিক সময়ে কল করেছেন, আপনার ছেলেকে একটু আগে আমরা কিডন্যাপ করেছি।
– কি..? কিডন্যাপ?
– হ্যাঁ কিডন্যাপ, আপনার একমাত্র সন্তানকে পেতে হলে ৬ ঘন্টার মধ্যে এক কোটি টাকা যোগাড় করুন।
– কি বলছেন এসব? আমার ছেলে কোথায়? সে ঠিক আছে তো?
– আপনার ছেলে তো মেয়ে নয় যে এতক্ষণে রেপ করে ফেলবো। সে ঠিক আছে, আপনি টাকার যোগাড় করুন আমি তিন ঘন্টা পরে আবার কল দিয়ে আপনার কাছে খবর নেবো।
– আমি তো দেশের বাইরে, এতো টাকা।
– আমি কিছু জানি না, সন্তানকে পেতে হলে টাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
কলটা কেটে মোবাইল বন্ধ করে দেয় সাদেক। সে এমন কাজ অনেক করেছে, সবকিছু কীভাবে করা লাগে ভালো করেই জানে।
সাদেক মোবাইল বন্ধ করে দেবার কারণে সাজুর নাম্বারে কেউ কল দিয়ে পায়নি।
অনেকক্ষণ ধরে পাশের আরেকটা রুমে চুপচাপ বসে ছিল সাদেক। হঠাৎ করে তার সঙ্গী রুমের মধ্যে এসে বললো,
– ভাই লোকটার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে আর মুখ দিয়ে সাদা ফেনার মতো বের হচ্ছে। মেডিসিন বেশি হয়ে গেল নাকি?
সাদেক তাড়াতাড়ি রুমে এসে দেখে সত্যি সত্যি সাজুর অবস্থা খারাপ। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আস্তে করে বললো,
– শালা মইরা গেল নাকি?
– ভাই কি করবেন এখন?
– কি আর করবো? ওর বাপের কাছে কল দিয়ে টাকার কথা বলে দিছি। এখন মরে না গেলেও তাকে মারতে হবে, দেরি করার দরকার নেই।
#এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব:- ১৮
– সাদেকের সঙ্গী বললো, মেরে ফেললে যদি তার পরিবার টাকা দিতে রাজি না হয়?
– না হয়ে যাবে কোথায়? আর আমরা তো তাকে বলবো না যে একে মেরে ফেলেছি। ওরা যখন খুঁজে খুঁজে হয়রান হবে তখন এমনিতেই টাকা নিয়ে চলে আসবে।
– এক কোটি টাকা দেবে তো সাদেক ভাই?
– যেভাবে ভয় দিছি তাতে টাকা না দিয়ে কোনো উপায় নেই, পুরোটাই দিতে হবে।
এমন সময় দরজা আঘাতের শব্দ পেল। পুরনো আমলের বাড়ি তাই কলিং বেলের ব্যবস্থা এখানে নেই। সাদেক ও তার সঙ্গী দুজন মিলে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সাদেক নিজেই এগিয়ে গেল দরজার দিকে। সাজুকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেটা ভালো করে বন্ধ করলো।
পিস্তল হাতে তাক করে আস্তে আস্তে দরজা খুলে দিল সাদেক।
দরজা খুলে সাদেক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে রিতীমত বিস্মিত হয়ে গেছে, এমনটা হয়তো সে কোনদিনই আশা করে নাই। তার নিজের মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,
– রাব্বি ভাই আপনি এখানে?
চারিদিকে সামান্য চোখ বুলিয়ে রবিউল আস্তে করে বললো,
– যে ছেলেটাকে ধরে নিয়ে আসছো সে কোথায়?
★★
লিয়াকত আলী বাসায় এসেই পাগলের মতো হয়ে গেল। কারণ এইমাত্র সাজুর বাবা তার কাছে কল দিয়ে সাজুর কিডন্যাপারে কথা জানিয়েছে। সে বাসার সামনে আসতেই তার ফোনটা বেজে উঠে। সাজুর বাবার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল, কল রিসিভ করে সালাম দিতেই বিপদের আশঙ্কা করে সে।
– কি হয়েছে আঙ্কেল?
– একটু আগে আমি সাজুর নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করছে অন্য কেউ। আমাকে বললো সাজুকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, ৬ ঘন্টার মধ্যে এক কোটি টাকা লাগবে।
– বলেন কি? সাজু গতকাল রাতে আমার বাসায়ই ছিল, ওর সেই বন্ধু রামিশাও সঙ্গে ছিল। সকালে উঠে আমি অফিসে গেলাম আর সাজু চলে গেল উত্তর বাড্ডা।
– নতুন কোনো মামলায় জড়িয়েছে?
– হ্যাঁ আঙ্কেল। আমি ভেবেছিলাম আজকে বাসায় ফিরে ওর মামলাটা আমাদের ডিবি পুলিশের আন্ডারে নেবার বিষয় কথা বলবো। এটা অনেক বড় একটা চক্র, এদের সঙ্গে বেসরকারিভাবে মামলা সমাধান করা যাবে না।
– ওকে আমি হাজারবার নিষেধ করেছি কিন্তু কে শোনে কার কথা? সেই ছোটবেলা থেকে সাজুকে আমি কোনদিন সবসময় নিজের কাছে পাইনি। ওর মা তো দুনিয়া ছেড়ে গেল, আর ওকে যেন আমার কাছে না আনি সেই ওছিয়ত করে গেল। নাহলে ওকে ইউরোপে মানুষ করতে পারতাম।
– আসলে আঙ্কেল, সাজু সখের জন্য এসব কাজ করে। কিন্তু সেটা গ্রামের মধ্যে ছোটখাটো খুনের মধ্যে করা যায়, সমস্যা নেই। তবে শহরের মধ্যে বিশাল মাফিয়া চক্রের সঙ্গে লড়াই করার জন্য সরকারি কিছু সুবিধা দরকার। ওর সঙ্গে নিজেকে রক্ষা করার একটা পিস্তল পর্যন্ত নেই।
– আমি এখন কি করবো? ওর নাম্বার তো বন্ধ।
– আমি দেখছি কি করা যায়। তবে আমার মনে হয় ওই কিডন্যাপাররা সাজুর মোবাইল দিয়ে আর কল করবে না। ওরা নতুন নাম্বার দিয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
– আমি কি টাকার ব্যাবস্থা করবো?
– আমি বাসায় গিয়ে আপনাকে জানাচ্ছি, আমি আমার টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।
– সময় কিন্তু ছয় ঘন্টা।
– আচ্ছা ঠিক আছে চিন্তা করবেন না। তাছাড়া ওরা টাকা না পেলে সাজুকে কিছু করবে না এটা মনে হচ্ছে।
আমি তোমাকে একটু পরে আবার কল দেবো।
– ঠিক আছে আঙ্কেল।
বাসায় এসে নিজের স্ত্রী ও রামিশার কাছে সবটা বলার পরে রামিশা কান্না শুরু করে। লিয়াকত সাহেব তার অফিসে কল বিস্তারিত বলে দিলেন। আর সাজুর নাম্বারটা ওপেন হলেই যেন সেটা কোথায় আছে লোকেশান ট্রাক্ট করতে বলে দিল।
– রামিশা বললো, আমাকে সিএনজি নিয়ে যখন বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে আমি তখনই বুঝতে পেরেছি কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা এতটা ভয়ানক হবে আমি জানতাম না, তাহলে তাকে আমি কোনদিনই যেতে দিতাম না।
– লিয়াকত বললো, সাজু তোমাকে কোনজায়গা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে? আচ্ছা সকাল বেলা তোমরা আমার বাসা থেকে বের হয়ে এখন পর্যন্ত কি কি ঘটেছে বলো আমাকে।
– আমরা প্রথমে থানায় গেলাম, ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা হলো, তারপর সাজু ভাইকে কে যেন কল দিলো। সাজু ভাই তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে জেলের মধ্যে একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলে। এরপর আমরা সেখান থেকে বের হয়ে মাহিন নামের একটা ছেলের সঙ্গে দেখা করি। সেই ছেলে হচ্ছে খুন হওয়া মাহিশার বয়ফ্রেন্ড। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আবারও ওসি সাহেব কল করেন। সাজু ভাইকে সেই বাড়িতে যেতে বলেন যে বাড়িতে খুন হয়েছে মাহিশা। তারপর আমরা দুজন মিলে রওনা দিলাম, কিন্তু সিএনজির ভিতরে থাকার সময় মাহিন কল করে। সাজু ভাইকে কিছু কথা বলে যেটা আমি জানি না, তবে তারপর সাজু ভাই সিএনজি থেকে নেমে যায়। আমাকে বোনের বাসায় যেতে বলে কিন্তু আমি সরাসরি আপনার বাসায় এসেছি।
– তারমানে সাজুর নাম্বারে আজকে যতগুলো কল এসেছে সবগুলো চেক করতে হবে। মাহিন ছেলেটা কেমন মনে হয় তোমার কাছে?
– ভালো মনে হচ্ছে।
– তার নাম্বার আছে তোমার কাছে?
– না।
– আচ্ছা সমস্যা নেই আমি বের করতে পারবো।
লিয়াকত সাহেব আবারও অফিসে কল দিলেন। সাজুর নাম্বারে আজকে যতগুলো কল এসেছে সবগুলোর ডিটেইলস বের করতে বললেন। তারপর কল কেটে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
– রামিশা বললো, ভাই আপনি একটু সেই ওসি সাহেবকে কল দিবেন? তাকে জিজ্ঞেস করে তো জানতে পারবো যে সাজু ভাই তার সঙ্গে দেখা করতে গেছে কি না। সাজু ভাই সেই বাড়িতে যাবার আগেই কিডন্যাপ হয়েছে নাকি বাড়ি থেকে বের হবার পরে কিডন্যাপ হয়েছে।
বাহহ তাই তো। লিয়াকত সাহেব এটা মাথাতেই আনে নাই। ওই ওসিকে কল দিয়ে তো অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে সে।
মোবাইল বের করে প্রথমে ওসি সাহেবের নাম্বার যোগাড় করলেন। তারপর তাকে কল দিলেন সঙ্গে সঙ্গে, ওসি সাহেব রিসিভ করে বললো,
– কে বলছেন?
– ডিবি অফিসার লিয়াকত আলী হাসান বলছি, সাজুর বিষয় একটু কথা বলতে চাই।
– কিহহ সাজু?
ওসি সাহেবের কণ্ঠ শুনে মনে মনে বিস্মিত হয়ে গেল লিয়াকত আলী। লোকটা এভাবে ঘাবড়ে গেল কেন?
★★
রামিশার নাম্বার পেয়েও এখনো কল দেয়নি মাহিন কারণ কি বলবে বুঝতে পারছে না। রামিশাকে কল দেবার চেয়ে সাদেকের কাছে কল দেবার কথা চিন্তা করলো সে, তাহলে হয়তো সবকিছু ভালো করে জানা যাবে। কিন্তু সবকিছু সত্যি সত্যি বলবে কিনা এটাই সন্দেহ তার মনে।
মাহিন তার নতুন নাম্বার দিয়ে সাদেকের কাছে কল দিল। তিনবার রিং বাজতেই রিসিভ করলো সাদেক, কিন্তু কিছু বললো না।
কথা বললো মাহিন,
– কিরে সাদেক, কোথায় তুই?
– কে?
– মাহিন আমি, কণ্ঠ শুনে চিনতে পারিস না?
– তুই? তুই আমাকে কল করেছিস কেন?
– সাজু ভাই তোর কাছে?
– হ্যাঁ, তো? সাজুর খোঁজ না নিয়ে নিজের কথা চিন্তা কর, এখনো মরিসনি?
– সাজু ভাইকে ছেড়ে দে, নাহলে ছটকুর মতো তোর কপালেও দুঃখ আছে।
– বললাম তো নিজের জীবন বাঁচা, আর যার কথা বলতে কল করেছিস তার লাশ এতক্ষণে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
– কি বললি?
– ঠিকই বলছি, কাজ শেষ।
– কাজটা ঠিক করিস নাই সাদেক, এরজন্য কিন্তু তোদের অনেক মূল্য দিতে হবে।
– আচ্ছা দেখা যাক।
– সাজু ভাইয়ের লাশ কোথায় ফেলেছিস?
– তোকে বলবো কেন? পোস্টমর্টেম করবি?
– সত্যি সত্যি তাকে মেরে ফেলেছিস?
– হ্যাঁ সত্যি সত্যি।
কল কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মাহিন। তখন বারবার নিষেধ করেছিল মাহিন কিন্তু সাজু ভাই তার কথা শোনেনি। যদি শুনতো তাহলে এমন বিপদে পড়তে হতো না, কপালে ছিল তাই আরকি। কিন্তু এমনটা সে আশা করে নাই, খবরটা দেবার জন্য রবিউলের পাঠানো নাম্বারে কল দিল সে।
– আমি মাহিন, সকাল বেলা আপনাদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে।
– ভাইয়া আপনিই তো সাজু ভাইকে কল দিয়ে সাবধান করেছিলেন তাই না?
– জ্বি আপু।
– আপনি কি একটু আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন? সাজু ভাইকে কারা যেন কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে, তারা এক কোটি টাকা দাবী করে। এখন আপনি সকাল বেলা সাজু ভাইকে কেন সাবধান করেছিলেন সেটা যদি বলতেন তাহলে আমরা তাকে উদ্ধার করতে পারবো। আপনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন আগেই সেহেতু বিপদের সম্পর্কে ধারণা আছে আপনার।
মাহিন কিছুটা অবাক হলো। কিডন্যাপ? মুক্তিপণ, ইত্যাদি। অথচ সাদেক তাকে বলেছে সাজুকে নাকি মেরে ফেলেছে তারা। মাহিন বললো,
– কীভাবে জানলেন সাজু ভাই কিডন্যাপ হয়েছে।
– আঙ্কেলের কাছে ওরা কল করেছিল।
– আপনি এখন কোথায়?
– সাজু ভাইয়ের পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায়।
– আপনি ঠিকানা দেন আমি আসছি।
★★
ওসি সাহেব বললেন,
– হ্যাঁ সাজু সাহেব আমার সঙ্গে সেই বাড়িতে দেখা করতে এসেছিলেন। আমি তাকে ডেকেছিলাম।
– আপনারা কতক্ষণ ছিলেন সেখানে?
– বেশিক্ষণ নয়, হঠাৎ করে সাজু সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছিল, তাই আমি তাকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসি। আমার সঙ্গে দুজন পুলিশ ছিল তারা ধরাধরি করে নামিয়ে এনেছিল নিচে।
– তাহলে তো সে আপনার কাছে থাকার কথা, একজন অসুস্থ মানুষ।
– আমি তাকে আমার গাড়িতে করে হাসপাতালে নিতে চাইলাম কিন্তু সে রাজি হলো না। আমাকে বললেন যে একটা সিএনজি ঠিক করে দিলেই সে চলে যেতে পারবে।
– আপনি কি করলেন?
– আমি তাকে সিএনজিতে উঠিয়ে দিলাম, একা একা চলে গেলেন তিনি।
– সাজু কিডন্যাপ হয়েছে, আর মুক্তিপণ হিসেবে এক কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।
– বলেন কি? এতটুকু সময়ের মধ্যে এতকিছু হয়ে গেল? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
– আপনি কি আমার সঙ্গে কোনকিছু লুকচ্ছেন?
– না না কি লুকাবো?
– রামিশার কাছে সবকিছু শুনে মনে হচ্ছে আপনি নিজেও চান না সাজু এই মামলাটার রহস্য বের করুক। তাই আমার ধারণা আপনি নিজেও মনে হয় অপরাধীদের সাহায্য করছেন।
– দেখুন, আপনি সরাসরি এভাবে আমাকে দোষ দিতে পারেন না। আমাকে অপমান করার মতো কিছু আমি করিনি, বুঝতে পেরেছেন?
– আমি ঠিকই বুঝতে পারছি, কিন্তু আপনার মধ্যে যদি কোনো ঘাবলা থাকে তাহলে আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবো।
লিয়াকত কল কেটে দিলে ওসি সাহেব টেবিলের উত্তর রাখা পানির বোতল থেকে ডগডগ করে পানি পান করলেন। এতটুকু সময়ের জন্য সাজুর গুমের কথা ডিবি পুলিশের কাছে চলে গেছে।
ও মাই গড।
এখন যদি ডিবি পুলিশ এগুলো তদন্ত করে তাহলে সে নির্ঘাত ফেসে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।
ওসি সাহেব তাড়াতাড়ি দাদাজান নামের সেই ভদ্রলোকের কাছে কল দিল। কোনপ্রকার ভনিতা ছাড়া বললো,
– সাজুকে কিডন্যাপ করে টাকা দাবি করার কি দরকার ছিল স্যার?
– কি বলছো এসব? আমি তো এমন কিছু বলিনি, তাদের অন্য কিছু করতে বলা হয়েছে।
– আমাকে এইমাত্র ডিবি পুলিশ কল দিয়ে বললো যে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর মুক্তিপণ হিসেবে এক কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।
– পাগল নাকি? তাছাড়া এ খবর ডিবির কাছে কীভাবে গেল?
– আমি জানি না, আপনি একটু আপনার লোকের সঙ্গে কথা বলে দেখেন তারা গোপনে গোপনে টাকা দাবি করেছে মনে হয়।
– অসম্ভব, এটা কোনদিনই হবে না। তবে তুমি যখন বলছো তখন তখন আমি জিজ্ঞেস করে নিতে পারি। ভয় পেও না, আমি আছি।
★★
রামিশা আর লিয়াকত আলীর কাছে সবকিছু শুনে সাদেকের সঙ্গে তার কথোপকথন আর বলতে পারলো না। হতেও পারে সাদেক তাকে মিথ্যা কথা বলেছে, আবার সত্যি ও হতে পারে কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি দেখে সরাসরি মৃত্যুর খবর বলতে ইচ্ছে করছে না তার।
যদি সত্যি সত্যি মারা যায় তাহলে নিশ্চয়ই এরা জানতে পারবে সেই কথা। কেউ মারা গেলে তার মৃত্যুর খবর আপনজনদের কাছে দিতে কতটা কষ্ট হয় তাই না?
তাহলে ডাক্তাররা কেমন করে?
যখন একটা মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় কিংবা কোনো মা-বাবার একমাত্র সন্তান মারা গেলে সেই খবর কীভাবে দেয়?
কঠিন হৃদয়ের মানুষ মনে হয়।
মাহিন বললো,
– টাকার ব্যবস্থা আমি করবো, আপনি আপনার পুলিশে খবর দেন। ওরা টাকা নিতে এলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।
– এক কোটি টাকা আপনি দিবেন?
বিস্ময় নিয়ে কথাটা বললেন লিয়াকত।
– হ্যাঁ আমি দেবো, চিন্তা করবেন না।
– কিন্তু এতো টাকা কোথায় পাবেন?
– সেটা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, আর সেই টাকা আসল নয় নকল।
– মানে?
– আমি বুঝতে পারছি।
বললো রামিশা।
– কি?
– উনি সকাল বেলা বলেছিলেন এর আগে নাকি নকল জাল টাকার ব্যবসা করে তারা। মনে হয় নকল টাকা দিয়ে কাজটা করতে চায়।
– কি? নকল টাকা?
– হ্যা।
– আমি একজন আইনের লোক। আর এতগুলো নকল টাকার অনুমতি দিতে পারি না।
– আমি এখব ওসব ছেড়ে দিয়েছি, আমিও চাই এদের এই দলটা ধ্বংস হয়ে যাক। তাই আপনারা যেরকম সাহায্য চান আমি করতে পারি।
লিয়াকত চোখ বন্ধ করে রইল। হঠাৎ করে মাহিন বললো,
– স্যার আপনি তো ডিবি পুলিশ তাহলে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশান ট্রাক্ট করতে পারবেন?
– হ্যাঁ কিন্তু কার নাম্বার?
– যিনি আমাকে রামিশা আপুর নাম্বার দিয়েছেন তিনি বলেছিলেন সাদেক নামের একটা ছেলের হাতে সাজু ভাই বন্দী। আমার কাছে সাদেকের মোবাইল নাম্বার আছে আর সেটা চালু।
– তাহলে তো অনেক ভালো, তাড়াতাড়ি নাম্বারটা দাও। আরেকটা কাজ করি, তুমি আমার সঙ্গে চলো আমার অফিসে। বারবার কল দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা না বলে নিজে যাবো।
– ঠিক আছে চলেন।
লিয়াকত আলী ও মাহিন বের হবার সময় রামিশা বললো,
– আমি আপনাদের সঙ্গে যাবো ভাই।
– ঠিক আছে চলো তাহলে।
খাবার জন্য বাসায় এসে না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেল লিয়াকত আলী। মাহিন বাইকে করে আর রামিশা ও লিয়াকত সাহেব তার গাড়িতে করে রওনা দিল। পথে রামিশা বললো,
– ওই নাম্বারটা নিয়ে কল দিয়ে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা যাবে না ভাই?
– মনে হয় না তারা কথা বলতে দেবে, তাছাড়া সেখানে আমরা কল দেওয়া ঠিক হবে না।
– কেন?
– কারণ ওই নাম্বার আমরা মাহিনের কাছে পাচ্ছি তাই না? কিন্তু এটা তো তারা জানে না, আমরা যদি কল করি তাহলে নাম্বার বন্ধ করে ফেলবে।
– বুঝতে পেরেছি।
অফিসে এসে দ্রুত নিজের ডেস্কে গেল লিয়াকত। সাদেকের নাম্বার বাসা থেকে বের হবার আগেই অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সব বের করা হয়েছে তাই ফলাফল জানতে হবে।
একটু পরে একটা ছেলে এলো, তারপর বললো,
– স্যার আপনাকে কল দিলাম কয়েকবার।
– গাড়িতে ছিলাম তো।
– স্যার যে নাম্বারটা দিয়েছেন সেটা তখন থেকেই বন্ধ, নাম্বারটা কোথায় আছে সেটা বের করতে পারিনি।
চলবে….
[