#দ্বিতীয়_বসন্ত-১
Zannatul Eva
আমি একজন ধর্ষিতা। বিয়ের আগে সত্যি কথাটা বলে দেয়া উচিত বলে মনে করি আমি। আপনার যদি সব জেনে শুনে আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি না থাকে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু সত্যিটা গোপন রেখে, আপনাকে অন্ধকারে রেখে ঠকাতে পারবো না আমি। তাতে যদি আমাকে সারাজীবন অবিবাহিত হয়েই থাকতে হয় তবে থাকবো।
ছেলেটা অবাক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। একটা ধর্ষিতা মেয়েকে কোনো ছেলে তার স্ত্রী হিসেবে মানলেও তার বাড়ির লোকেরা কখনও এমন মেয়েকে বউ করে তাদের ঘরে নিয়ে যাবে না। রুহিকে দেখতে আসা পাত্র ভাবলো, কথা না বাড়িয়ে এখানেই সম্বোন্ধটা ক্যান্সেল করে দিতে হবে।
ছেলেটা একটু ইতস্তত হয়ে বলল, আসলে আমি বলতে চাচ্ছি যে……
বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চাইছেন। সমস্যা নেই এরকম প্রশ্নের সামনে আমি বহুবার পরেছি। তাই এখন আর আমার কোনো সমস্যা হয় না উত্তর দিতে। আপনি আমার সেই সময়ের অনুভূতির কথা জানতে চাইছেন তাই তো?
আরে না না। আপনি ভুল ভাবছেন। আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না। দেখুন আমাদের বংশ বেশ উঁচু। সমাজে আমাদের একটা মান সম্মান আছে। আর আমার বাবা-মা এই কথা জানতে পারলে কখনই রাজি হবেন না।
সংসার কী আপনার বাবা-মা করবেন?
জি? বুঝলাম না।
রুহি খুব সহজভাবে আবারও বলল, সংসার কি আপনি করবেন নাকি আপনার বাবা-মা করবেন?
ছেলেটা বলল, সংসার আমি করলেও আমার ফ্যামিলির বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে পারবো না আমি।
একথা বলেই ছেলেটা উঠে চলে গেলো।
রাতে রুহির বাবা আশরাফ খানের কাছে পাত্রপক্ষের ফোন এলো। ফোন ধরতেই পাত্রের বাবা ওপাশ থেকে বললেন, আপনার মেয়ে যে রেপ হয়েছে সেটা আগে বলেননি কেনো আমাদের? আগে জানলে এমন বাড়িতে মেয়েই দেখতে যেতাম না। ছিঃ ছিঃ লোকজনের কাছে আমার মাথাটা নিচু হয়ে গেলো।
আশরাফ খান কোনো কথা বলার সুযোগই পেলেন না। তার আগেই পাত্রের বাবা ফোন কেটে দিলো। ফোন রাখতেই আশরাফ খান ভীষণভাবে হতাশ হয়ে গেলেন। মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে আগে একবার স্ট্রোক হয়ে গেছে। রুহির মা মমতা খানম বললেন, আপনি এতো চিন্তা কইরেন না তো। আল্লাহ ঠিক একটা পথ দেখাইবো। আমগো মাইয়ার কি কোনো দোষ ছিলো! দুনিয়ায় কতো মাইয়া গো লগেই তো এমন অঘটন ঘটে। আপনি এমনে ভাইঙ্গা পড়লে মাইয়াটা আরও ভাইঙ্গা পড়বো।
রুহির মা তুমি তো কত সহজে বইলা দিলা কিন্তু ভালো সম্বোন্ধ কি আসবো? যাও দুই একটা আসে তাও ওইসব কথা শুইনা সবাই মুখ ফিরায়া চইলা যায়।
রুহি পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের সমস্ত কথা শুনে ফেললো। কিন্তু এখন আর আগের মতো খারাপ লাগে না। এর আগে বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু কপালে মৃত্যু লেখা না থাকলে হাজার চাইলেও তখন সঠিক সময়ের আগে মৃত্যু কারো কাছে ধরা দেবে না। কী দোষ ছিলো তার? প্রেম! ভালোবাসা!! সব কিছুর উপর থেকে রুহির মন উঠে গেছে। নিজের প্রেমিক তো সেদিনের পরেই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। নতুন কারো সাথে এখন হয়তো অনেক ভালো আছে। ভালোবাসা যে শুধুই শরীরের জন্য রুহি তা আগে বুঝতে পারে নি। ভালোবাসা শব্দটাকে এখন সে ঘৃনা করে। শুধু বাবার কথা ভেবে বিয়ের জন্য মত দিয়েছে। নয়তো এই নরপশুদের দুনিয়ায় গায়ে কলঙ্ক নিয়ে নিজেকে কখনও জগৎ সংসারে আটকানোর কথা চিন্তা করতো না।
ছোট ভাই ‘টমটম’ (রায়হানের ডাক নাম) সবে মাত্র কলেজে উঠেছে। সেখানেও রেহাই নেই। কলেজে গেলে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। বেচারা চুপচাপ কলেজে যায় আর আসে। আজকাল কোনো বন্ধুদের সাথেও মিশে না। রুহি টমটমের রুমের সামনে গিয়ে কতক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। বোধহয় মরে গেলেই ভালো হতো। যে মরে যায় তাকে আর ক’দিন মনে রাখে মানুষ!
আমার জন্যই পরিবারেরই লোক গুলোর মুখের দিকে তাকানো যায় না। বাবা-মায়ের কপালে চিন্তার ভাজ। ছোট ভাইটার রাস্তাঘাটে লোকজনের কথা শুনে হেনস্তা হওয়া এসব আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
রুহি একটা নিশ্বাস ফেলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিলো।
রুহি রুমের দরজা বন্ধ করলেই মমতা খানের কলিজায় পানি থাকে না। মেয়েটা এর আগেও অনেক বার এমন করেছে। এর মানে খুব ভালো করেই জানে সে। আজ আবার কিছু একটা অঘটন ঘটতে চলেছে।
চলবে……
ছবি:ইন্সটাগ্রাম