#দ্বিতীয়_বসন্ত-৬
Zannatul Eva
পরের দিন রুহি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ভাবলো, গ্রামটা একটু ঘুরে দেখবে। কিন্তু দাদিজান যদি জানে সে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছে তাহলে খুব রাগারাগি করবেন। কী করা যায়! চাচাতো বোন রুম্পাকে ঘুম থেকে তুলে বলল, এই রুম্পা আমাকে নিয়ে একটু বাইরে যাবি?
রুম্পা ঘুমঘুম চোখে বলল, ঠিক আছে। সে ভালো করে চোখ কচলে নিয়ে চারদিকে একবার তাকালো। তারপর রুহিকে বলল, তুমি যেনো আমাকে কী বললা!
বললাম যে আমাকে নিয়ে বাইরে বের হতে। গ্রামের শীতের সকাল মানে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য্য। চলনা যাই!
রুম্পা বলল, হ্যাঁ আমি তোমাকে নিয়ে বের হই আর তারপর দাদিজান আমার মাথার সব চুল গুলো ছিড়ে দিক। না বাবা আমি পারবো না।
তুই না গেলে আমি একাই যাবো। ঘরে বসে থাকতে থাকতে ভীষণ বোর হয়ে গেছি।
এই না না। একা যেতে পারবে না তুমি। এতো ভোর বেলা কেউ একা বের হয় নাকি! দাঁড়াও আগে দেখি দাদিজান উঠে গেছি নাকি।
কেউ উঠেনি। দাদিজান নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পরেছে।
রুম্পা বলল, আচ্ছা দাঁড়াও ঝটপট ফ্রেশ হয়ে আসছি। কিন্তু বেশি দূর যাওয়া যাবে না আর বেশিক্ষন বাইরে থাকা যাবে না।
ঠিক আছে ঠিক আছে। চল তো এখন।
_____________________________________________________
মাহির উঠেনি? তামজিদ আহমেদ বললেন।
রেহনুমা আহমেদ বললেন, না। তোমার ছেলে এতো ভোরে ঘুম থেকে উঠার মানুষ নাকি!
আগে উঠেনি তো কী হয়েছে! এখন উঠবে। ডেকে তুলো মাহিরকে। ওকে নিয়ে একটু হাঁটতে বের হবো৷
রেহনুমা বলল, ডেকে দিতে পারবো কিন্তু উঠবে কিনা জানিনা।
এই মাহির….মাহির……উঠ বাবা সকাল হয়ে গেছে।
রুমের ভেতর থেকে মাহিরের ঘুমঘুম কন্ঠ ভেসে এলো, উমমমহুম মা ঘুমাতে দাও প্লিজ। এখন মাত্র ছয়টা বাজে। এতো ভোরে কেউ উঠে নাকি! আমি আরও ঘুমাবো।
তোর বড় দাদাভাই যদি দেখে এখনও তুই ঘুমোচ্ছিস তাহলে কিন্তু ভীষণ রেগে যাবেন৷
বড় দাদাভাইর নাম শুনতেই মাহির এক লাফে উঠে গেলো। বড় দাদাভাই মানে তামজিদ আহমেদের বড় চাচা তালেব আহমেদকে এ বাড়ির সবাই ভীষণ ভয় পায়। তালেব আহমেদকে গ্রামের সবাই এক নামে চেনে। গ্রামের সব বিচার আচারে ওনাকে ডাকা হয়। এক সময় উনার রাগে পুরো গ্রাম কাঁপতো। এতোটা দাপটের সাথেই তিনি এতো গুলো বছর গ্রামে বসবাস আসছেন। মাহির তাকে খুব মানে। ছোট বেলায় নিজের দাদাকে পায় নি। যতদিন গ্রামে ছিল বড় দাদাভাই নিজের দাদার অভাব পূরন করেছে৷ যখন সুস্থ ছিলেন তখন তালেব আহমেদ ঢাকায় গিয়ে মাহিরকে দেখে আসতেন। আজকাল শরীর আর তেমন চলতে চায় না। কিন্তু এখনও সবাই তাকে ভীষণ ভয় পায়। মাহিরও তাকে খুব মানে।
মাহির উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো।
তামজিদ আহমেদ বললেন, চলো তোমাকে নিয়ে একটু হেঁটে আসি। হাঁটতে হাঁটতে আমাদের জমিজমার এক অংশ দেখা হয়ে যাবে৷
মাহির বলল, বড় দাদাভাই?
তোমার বড় দাদাভাই এখন কোরআন পড়ছেন। ওনাকে আর ডাকার দরকার নেই। চলো বের হওয়া যাক।
মাহির নিচু স্বরে বলল, হুম।
___________________________________________________
ইশশশ ঘাসের উপর পা রাখতে কী যে ভালো লাগে! কতদিন শিশির ভেজা ঘাস দেখিনি। কুয়াশার ভেতর এভাবে গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
রুম্পা মুখটিপে হেসে বলল, হ্যাঁ তুমি হারিয়ে যাও আর তারপর দাদিজান আমার মাথার চুল গুলো সব ছিড়ে ফেলুক। বেশি দূর কিন্তু যাওয়া যাবে না।
উফফ তুই আর তোর মাথার চুল! এইতো এটুকু এটুকু চুল। তার থেকে কিছু চুল ছেড়া গেলে তেমন কিছুই হবে না৷ আয় তো পুকুর পাড়ের ঐ দিকটায় যাই।
____________________________________________________
দেখো মাহির, এই পুকুরটা আমাদের। তোমার চাচা এখানে মাছ চাষ করেন। ওরা সব সময়ই এই পুকুরের মাছ খায়। আর ঐ যে পাশের জমিটা দেখছো ওটাও আমাদের। সময় পেলে একদিন দলিলপত্র নিয়েও বসবো তোমার সাথে।
মাহির প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। বাবার কথায় শুধু মাথা নাড়াচ্ছে আর মনে মনে বলছে, এসব জমিজমার হিসাব বুঝে আমি কী করবো! এখানে যার জন্য আসা তার সাথে কিভাবে দেখা করা যায় তাই বুঝতে পারছি না। রুহিদের বাড়িটা কোনদিকে তাও তো জানিনা।
মাহির পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, তার বাবা মাটিতে বসে আছে৷ সে তারাতারি বাবাকে ধরে বলল, কী হয়েছে তোমার?
তামজিদ আহমেদ বললেন, বুকের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে৷ একটু পানি পেলে…….
মাহির এদিক ওদিক তাকিয়ে আশেপাশে কোথাও টিউবওয়েল বা পানি পাওয়া যায় এমন কোনো বাড়িও খুঁজে পেলো না। এই জায়গাটা লোকালয় থেকে একটু ভেতরে। মাহির উঠে দাঁড়িয়ে একটু এগোতেই দেখলো, দুটো মেয়ে পুকুরের পাড় দিয়ে হাঁটছে। দূর থেকে মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। একটা মেয়ের হাতে পানির বোতল আছে দেখা যাচ্ছে। মাহির কোনো কিছু না ভেবেই ওদেরকে ডাকলো, এক্সকিউজ মি একটু শুনুন।
চলবে……..