দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -০৭

#দ্বিতীয়_বসন্ত-৭
Zannatul Eva

রুহি ঘার ঘুরিয়ে তাকিয়ে মাহিরকে দেখে তেড়ে গিয়ে বলল, আপনি কী আমাকে ফলো করছেন নাকি! সেদিন শপিং মলে আবার আজকে এখানে। কী ব্যাপার বলুন তো?

মাহির নিচু স্বরে বলল, একটু পানি পেতে পারি? আসলে আমি বাবার সাথে একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ করে বাবার বুকে প্রচন্ড
ব্যাথা শুরু হয়।

রুহি মাহিরকে একদমই পছন্দ করে না কিন্তু ওর বাবার কথা শুনে মাহিরের দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো।

মাহির পানির বোতল নিয়ে দৌড়ে তার বাবার কাছে গিয়ে পানি খাওয়ালো। রুহি আর রুম্পাও এগিয়ে এলো।

তামজিদ আহমেদ বললেন, তোমরা কী এই গ্রামেই থাকো? কোন বাড়ি তোমাদের?

রুহি কিছু বলার আগেই রুম্পা বলল, ঐ যে বড় খান বাড়ি ঐটাই আমাদের বাড়ি। আর এটা আমার চাচাতো বোন।

তামজিদ আহমেদ কপাল কুঁচকে বললেন, বড় খান বাড়ি! মানে আশরাফদের বাড়ি?

রুহি এবং রুম্পা দুনজনেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।

তা তোমাদের নাম কী মামনিরা?

আমার নাম রুম্পা। রুম্পা বলল।

আর তোমার নাম?

আমার নাম রুহিতা। সবাই রুহি বলেই ডাকে।

বাহ খুব সুন্দর নাম তো! তুমি কী আশরাফের মেয়ে?

রুহি নিচু স্বরে বলল, জ্বী।

তামজিদ আহমেদ বললেন, ঠিক ধরেছিলাম আমি৷ দেখতে তো একদমই আশরাফের মতো হয়েছো। ছোটবেলায় দেখেছিলাম যদিও কিন্তু এখন তো মাআশাল্লাহ অনেক বড় হয়ে গেছো। তা কিসে পড়ো তুমি?

আমি আইনি বিভাগের স্টুডেন্ট। সেকেন্ড ইয়ার।

বলেই রুহি মাহিরের দিকে তাকালো। ভাবছে মাহির না আবার বলে বসে তারা একই ভার্সিটিতে পড়ে। আবার কেমন হা করে তাকিয়ে আছে ছেলেটা! দেখলেই বিরক্ত লাগে। ভার্সিটি, শপিং মল এখন গ্রামে এসেও শান্তি নেই।

তামজিদ আহমেদ বললেন, বাহ খুব ভালো। তা তোমার বাবাকে বলো একদিন আমাদের বাসায় আসতে৷

রুহি বলল, জ্বী আঙ্কেল বলবো। আপনার বুকের ব্যাথা কি কমেছে? নয়তো চলুন আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।

আরে না না আমি ঠিক আছি৷ ঐ শুধু মাঝেমধ্যে ব্যাথাটা হঠাৎ বেড়ে যায়। বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

আচ্ছা আঙ্কেল, আমরা তাহলে এখন আসছি।

ঠিক আছে মামনিরা। সাবধানে যেও।

রুহিরা চলে যাচ্ছিলো এমন সময় মাহির রুহিকে ডেকে বলল, এই রুহি আঙ্কেল এলে সাথে তুমিও আমাদের বাড়িতে এসো কিন্তু।

রুহি কোনো উত্তর না দিয়েই একবার পেছনে তাকিয়ে তারপর চলে গেলো।

তামজিদ আহমেদ বললেন, তুই চিনিস নাকি ওকে?

মাহির বলল, চিনবো না কেনো! আমরা তো একই ভার্সিটিতে পড়ি। ও আমার জুনিয়র।

তামজিদ আহমেদ বললেন, মেয়েটা ভীষণ ভালো। মনে মনে আবার বললেন, ছেলের জন্য এমন একটা মেয়ে পেলে সত্যিই খুব ভালো হতো।

মাহির মৃদু হেসে মনে মনে বলল, যাক বাবার রুহিকে ভালো লেগেছে৷ পরের ধাপে এগোনোর জন্য পথ অনেকটা সহজ হয়ে গেলো। কিন্তু রুহির সাথে আমার কথা বলা উচিত। ও আমাকে যেমন ছেলে ভাবে আমি আসলে তেমন না। এটানকী করে বোঝাবো রুহিকে! আজকে সাথে বাবা না থাকলে কথা বলা যেতো। শুনেছি সবুরে নাকি মেওয়া ফলে। দেখা যাক।

__________________________________________________

রুম্পা, দাদিজান মনে হয় এতোক্ষনে উঠে পরেছে৷ আমাদের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে।

রুম্পা বলল, আজকে মনে হয় ধরাই পরে যাবো। দাদিজান যদি জানতে পারে আমি তোমাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে গিয়েছি তাহলে আর রক্ষে নেই।

রুহি বলল, সব হয়েছে ঐ মাহিরের জন্য। ও না ডাকলে তো আমরা আরও তারাতারি চলে আসতাম। অবশ্য ঐ আঙ্কেলের উপকার করতে পেরে ভালোই লাগছে। কী আর করার! ভালো কাজের জন্য না হয় একটু বকুনি খেলাম।

আচ্ছা ঐ ছেলেটা তোমাকে কি করে চেনে? রুম্পা বলল।

সেসব পরে বলবো তোকে৷ এখন আগে সবার নজর এড়িয়ে পেছন দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে।

রুম্পা বলল, দাঁড়াও তুমি এখানে। আমি আগে গিয়ে দেখে আসি আশেপাশে কেউ আছে নাকি।

রুম্পা পা টিপে টিপে পেছনের দরজার ওখানে গিয়ে দেখলো, দরজার বরাবর দাদিজান বসে আছেন। হাতে আবার লাঠিটাও আছে। একবার যদি দেখে ফেলে লাঠি দিয়েই মারতে শুরু করবে দুজনকে। কী করা যায়! ভাবতে ভাবতে দেখলো, রুম্পার মা এসে দাদিজানের সাথে কী যেনো কথা বলছে। এই মুখ্যম সময়। দাদিজান ব্যস্ত থাকতে থাকতেই আমাদের ভেতরে ঢুকে পরতে হবে।

রুম্পা রুহিকে ইশারা করে ডেকে বলল, আসতে। রুহি পা টিপে টিপে দরজার পাশে এসে দাঁড়ালো। রুম্পা বলল, আগে আমি ঢুকছি। তারপর তুমি আমার পেছন পেছন ঢুকবে। আমাকে দেখলে সমস্যা নেই কিন্তু তোমাকে দেখলেই শেষ।

রুম্পা আস্তে আস্তে করে ভেতরে ঢুকছে আর রুহি তার পেছন দিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে এক পর্যায় দাদিজান রুম্পাকে দেখে ফেলল। বলল,, দেখতাছোস না এইহানে তোর মা আর আমি কথা কইতাছি! বড়রা কথা কওয়োনের সময় হেই হানে থাকতে নাই কতবার শিখাইম? যা ভেতরে যা। তোর পেছনে ঐ টা কে রে? কারে জানি দেহা যাইতাছে!

রুম্পার মা বলল, আহা আম্মা আপনি ওর কথা বাদ দেন তো। জরুরি কথাটা শোনেন…….

দাদিজানও রুম্পার মায়ের কথা শোনায় ব্যস্ত হয়ে পরলেন।

এই ফাকে রুম্পা এবং রুহি দুজনেই এক দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দুজনেই বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

রুম্পা বলল, খুব জোর বেঁচে গেছি আজকে।

সাথে সাথে নাছিমা রুম্পার কান মুলে বলল, কোথায় গিয়েছিলি তুই রুহিকে নিয়ে?

মা তুমি সব……..

হ্যাঁ সব জানি৷ তোরা দুটোয় মিলে কাকভোরে কোথায় গিয়েছিলি বলতো! ঠিক সময়ে আমি আম্মাকে ম্যানেজ না করলে তো আর উপায় ছিল না। আর রুম্পা তোর কি একটু ভয়ডর নেই? রুহি বলল আর তুই ওমনি নাচতে নাচতে ওকে নিয়ে বাইরে চলে গেলি! রুহির সাথে কী ঘটেছিলো তা কি ভুলে গেছিস? দিনকাল ভালো না৷ আর রুহি তোকেও বলছি, এবার অন্তত একটু সাবধানে চলাফেরা কর।

রুহি মুখ ভার করে মনে মনে বলল, সারাটা জীবনই আমাকে এই কলঙ্কের ঘানি বয়ে বেড়াতে হবে৷ আমার কি বাঁচার অধিকার নেই! সবাই মিলে বারবার আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমি একজন ধর্ষিতা। আমার আর পাঁচটা মেয়েদের মতো চলতে ফিরতে নেই।

এসব ভেবেও রুহি মুখে এক চিলতে হাসি এনে বলল, থ্যাংক ইউ ছোট চাচি। থ্যাংক ইউ সো মাচ আমাদেরকে বাঁচানোর জন্য।

এবার বলতো তোরা দুটোয় মিলে কোথায় গিয়েছিলি?

একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। আসার পর থেকে তো শুধু বাড়ির মধ্যেই বসে আছি। কতক্ষন ভালো লাগে এভাবে! তাই আজকে লুকিয়েই বেরিয়ে পরেছিলাম। সরি ছোট চাচি।

ঠিক আছে। কিন্তু আর যেনো না দেখি এভাবে কাউকে কিছু না বলে কয়ে তোরা দুটোয় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিস। আম্মা দেখলে কিন্তু কঠিন শাস্তি দেবে। মনে থাকবে?

রুম্পা এবং রুহি দুজনেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।

____________________________________________________

সন্ধ্যায় মাহিরের বাবা-মা এলো রুহিদের বাড়িতে। সাথে মাহিরও এসেছে। মাহিররা এসেছে শুনেই রুহির বুকের মধ্যে ধরফর করতে শুরু করলো।

আশরাফ খান এতো বছর বাদে নিজের ছোটবেলার বন্ধুকে দেখে ভীষণ খুশি হলো। আসার পর থেকেই মাহির এদিক সেদিক তাকিয়ে শুধু রুহিকে খুঁজছে। আজকে যে করেই হোক রুহির সাথে একটু কথা বলতেই হবে। রুহিকে বোঝাতে হবে সে খারাপ ছেলে না৷ কিন্তু মহারানীর তো কোনো পাত্তাই নেই।

সবাই ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছিলো এমন সময় মাহিরের বাবা বলল, তোর মেয়ে কোথায় আশরাফ? সবাইকে দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ও নেই! ডাক তোর মেয়েকে। বড্ড লক্ষী মেয়ে হয়েছে তোর।

আশরাফ খান অবাক হয়ে বললেন, তুই চিনিস নাকি আমার মেয়েকে?

তামজিদ আহমেদ বললেন, হ্যাঁ আজ সকালেই তো আমাদের পুকুরের ওখানে ওর সাথে পরিচয় হলো।

সায়েদা বেগম একথা শুনে বললেন, কিহ! রুহি কহন বাড়ি থেইকা বাইর হইলো! এই রুহি…..এদিকে আয় তো একবার।

রুহি দরজার পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল। যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হলো। এবার দাদিজানের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here