শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -১০

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_10
#Writer_NOVA

❝জীবন মানে ছুটতে হবে,থামা মানে শেষ
দু’দিনের এই ভবে থেকে কেন হিংসা দ্বেষ?
জীবন থাকুক ভালোবাসায়,বন্ধু থাকুক সাথে,
শুভকামনা জানিয়ে গেলাম, এই সুপ্রভাতে ❞🌹

…………….. শুভ সকাল………….

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এরকম একটা চিরকুট পাবো তা আমি কল্পনায়ও ভাবিনি।আজ হালকা আকাশি রঙের কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে খুব সুন্দর করে উপরোক্ত কথাগুলো লিখা ছিলো। চায়ের কাপের সাথে ছিলো চিরকুটটা। চিরকুট দেওয়ার মানুষ খুঁজে পেলাম না।চা ঠান্ডা হয়ে পানি হয়ে গেছে। বহু সময় আগে দিয়ে গেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। মাঝে কেটে গেছে আরো একটা দিন।আজকে কলেজ খোলা।কলেজে যাওয়ার কথা মনে হতেই কান্না পায়।আল্লাহ জানে আমার কপালে কি আছে!!এখন আবার এই চিরকুট!! আগের হলুদ চিরকুটের সাথে মিলিয়ে দেখলাম একই হাতের লেখা। তার মানে আগে যে দিয়েছিলো সেই দিয়েছে।কিন্তু কে?চিরকুটটা হাতে নিয়ে তন্বীকে ডাকলাম,

—তন্বী, ঐ তন্বী এদিকে একটু আয় তো।

তন্বী কিচেন থেকে চেচিয়ে উত্তর দিলো,
—কেন নোভাপু?

—একটু আয় না দরকার আছে।

—আচ্ছা আসতেছি।

আমি একবার চিরকুটের দিকে তাকালাম আরেকবার দরজার দিকে।কিচেন থেকে আসতে এতো দেরী হয়? রাগ লাগছে তন্বীর ওপর।তন্বী ওড়নার গিট খুলতে খুলতে রুমে এসে বললো,

—কি হয়েছে? এতো চেচাচ্ছো কেন?

—আমাদের রুমে কি কেউ এসেছিলো?

—কই নাতো।

—চা কে দিয়ে গেছে?

—আমিতো দেইনি।আম্মুও কিচেনে কাজ করছিলো।কেন কি হয়েছে?

—আমাদের রুমে কে এসেছিলো তাও জানিস না, চিরকুট কে দিয়েছে তাও বলতে পারিস না।তাহলে এই চা ও চিরকুট কি হাওয়ায় উড়ে উড়ে এসেছে?

—কোন চিরকুট?

আমি আমার হাতের চিরকুটটা তন্বীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,

—এই যে এটা।

তন্বী আমার হাতের থেকে চিরকুটটা নিয়ে বিরবির করে পড়লো।তারপর আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

—এটা কে দিলো?বাহ্ হাতের লেখাগুলো তো অনেক সুন্দর। সাথে কথাগুলো খুব সুন্দর।

—হ্যাঁ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু দিলোটা কে?

—তোমার কোন প্রেমিক পুরুষ।

তন্বী কথাটা বলে মুখ টিপে হাসলো।আমি ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই ও চুপ হয়ে গেলো।হঠাৎ আমার একটা কথা মনে এলো।আমি খুশি চোখে তন্বীকে জিজ্ঞেস করলাম,

—হ্যাঁ রে তন্বী, আজ কি তায়াং ভাইয়ার কোন ফ্রেন্ড আসছিলো বাসায়?

—হ্যাঁ এসেছিলো তো।সকাল আটটার দিকে এসেছিলো।একটু আগে ভাইয়া তাদের নিয়ে বের হয়ে গেলো।

—কে এসেছিলো?

—অনেকগুলি ফ্রেন্ড এসেছিলো।

—এর মধ্যে কেউ একজন তো অবশ্যই আমার রুমে এসেছিলো।আর আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম।সে চায়ের কাপ ও চিরকুট রেখে গিয়েছে।

—কে এসেছে আমি জানি না। আমি আম্মুর সাথে কিচেনে ছিলাম।তাদের জন্য চা বানিয়ে দিলাম।ভাইয়া ট্রে নিয়ে তার বন্ধুদের দিয়েছে। তুমি ঘুমিয়ে আছো বলে আমি চা দিয়ে যাইনি।তোমাকে চা দেওয়া মানে চা নষ্ট হওয়া তাই।

—অপমান্স😒।

—যা সত্যি তাই বলছি।

—হইছে আমার সত্যবাদী বোইন।কথা কম বলে জলদী রেডি হো।আজকে যে কলেজ আছে তা কি তুই ভুলে গেছিস?তোর যদি রেডি হতে দেরী হয় তাহলে আমি তোকে রেখেই চলে যাবো।

—কি বললে আবার বল তো?প্রত্যেকদিন কে দেরী করে? আমি রেডি হয়ে বসে থাকি।কিন্তু তোমার তৈরি
হতে হতে ক্লাশে দেরী হয়ে যায়।আর আমাকে বলা হচ্ছে আমার দেরী হলে আমাকে রেখে চলে যাবে।নিজে যে লেট লতিফা তা কেন বলছো না?আমিও দেখবো আজকে কার দেরী হয়।

—ঐ চুপ থাক।যা তৈরি হতে যা।বেশি কথা বলে।

তন্বীর মাথায় একটা চাপড় মেরে ওয়ারড্রব থেকে
জামা-কাপড় বের করে দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।তন্বী রুমের থেকে!”নোভাপু” বলে একটা চিৎকার দিলো।কারণটা হলো আমি ওর ওয়ারড্রবের জামা-কাপড় ইচ্ছে করে উলোটপালোট করে এসেছি।
আমাকে লেট লতিফা বলার শাস্তি এটা।

💖💖💖

কলেজ গেইট দিয়ে ঢুকেই আমি রওনকদের খুঁজতে আরম্ভ করলাম।গতকাল রাতে প্রাকটিকাল খাতা নিয়ে বসেছিলাম।একঘন্টায় আমার প্রাকটিকাল কমপ্লিট। এতো সুন্দর করে একেকটা চিত্র এঁকেছি যে জীবনেও আর আমাকে প্রাকটিকাল খাতা দেওয়ার নাম নিবে না। ওদের হাত থেকে কি করো বাচবো তার শয়তানি বুদ্ধিও জমিয়ে ফেলেছি।এখন শুধু আমার প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলেই হলো।রওনককে বেশি সময় খুঁজতে হলো না। কিছু দূর গিয়ে দেখলাম রওনক তার দল নিয়ে শহীদ মিনারের পাশে বসে আছে। আমি গুটিগুটি পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।হাত দুটো ব্যাথা হয়ে গেছে। পাঁচটা তন্বীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছি।আর পাঁচটা আমার হাতে।তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।তারা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে দেখে শাওন চেচিয়ে রওনককে বলে উঠলো,

—বড় ভাই, দেখেন দুইদিন পর খাতা নিয়ে হাজির হয়েছে। আবারও আপনার কথা শুনে নাই।

রওনক চোখ দুটো ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকালো।আমি বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে একটা হাসি দিলাম।কিন্তু ব্যাটা রওনককে বোধহয় ইমপ্রেস করতে পারলাম না।গম্ভীর গলায় আমাকে রওনক বললো,

— তোমাকে খাতাগুলো বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় কলেজে এসে দিয়ে যেতে বলেছিলাম।কিন্তু তুমি তা না করে শনিবার এসেছো।

আমি জানতাম এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হবো।তাই তার কথার তোয়াক্কা না করে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

—বৃহস্পতিবার বন্ধ ছিলো।আমি বন্ধের দিন কলেজে কেন আসবো? আর আমি খবর নিয়ে জানতে পেরেছি আপনাদের খাতা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট আগামীকাল। তাই আসিনি।

আমার এমন খামখেয়ালী কথায় রওনক না রাগলেও সাথের সাঙ্গপাঙ্গরা রেগে গেলো।একটা ছেলে আমাকে ধমকে বলে উঠলো,

—তুমি তো দেখছি বড্ড বেশি বুঝো।ভাইয়ের সাথে একের পর এক বেয়াদবি করে যাচ্ছো।সিনিয়রকে কি করে সম্মান করতে হয় তা কি তুমি জানো না? তোমার বাবা-মা কি কোন শিক্ষা দেয়নি তোমাকে?

বাবা-মা তুলে কথা বলায় আমার রাগ উঠে গেলো।রেগে বললাম,

—খবরদার, বাবা-মা তুলে কথা বলবেন না।তাহলে কিন্তু অনেক খারাপ হয়ে যাবে।আর সম্মান অর্জন করে নিতে হয়।চেয়ে পাওয়া যায় না।আপনারা জুনিয়রদের হেনেস্তা করবেন আর জুনিয়ররা আপনাদের সম্মান করবে এমনটা ভাবলেন কি করে?

আমার রাগ দেখে রওনক চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।কোন কথা বললো না।পাশের থেকে তন্বী ফিসফিস করে আমাকে বললো,

—নোভাপু,চুপ হয়ে যাও।কি শুরু করেছো? ওদের সাথে ঝামেলা করো না। পরে বিপদে পরতে হবে।

—তুই চুপ থাক।এরা পেয়েছেটা কি? এদের আমি ভয় পাই না।এরা কি আর করবে? পারবে শুধু এই কলেজ থেকে বের করে দিতে।বের করে দিলে দিক।যেই কলেজের ভিপি এমন সেই কলেজে পড়ার থেকে না পড়াই ভালো।

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই একটা থাপ্পড়ের শব্দে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।আমি ভেবেছিলাম থাপ্পড়টা আমার গালে পরেছে।তাই গালে হাত দিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি তখন যে ছেলেটা আমাকে বাবা-মা তুলে কথা বলেছিলো সে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর রওনক রাগে ফুঁসছে। রওনক ঐ ছেলেটাকে থাপ্পড় মেরেছে। রওনক দুই হাত কোমড়ে রেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে ছেলেটাকে বললো,

—আমি যে এখানে আছি তা কি তুই দেখেছিস মাহিম?

থাপ্পড় খাওয়া ছেলেটির নাম তাহলে মাহিম।মাহিম গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বললো,

—হ্যাঁ ভাই।

—তাহলে আমি থাকতে তুই এসব কথা বলার সাহস কোথা থেকে পাস?বাবা-মা নিয়ে কেন কথা বললি তুই? এত সাহস তোকে কে দিলো?

—সরি ভাই আমি বুঝতে পারিনি।

—পরেরবার থেকে সাবধান।এমন ভুল যেনো দ্বিতীয় বার না হয়।

—আচ্ছা।

এদের কথোপকথন শুনে আমি একটা ভেংচি কাটলাম। এখন নিজের লোক কে মেরে ভালো সাজা হচ্ছে। এসব কলেজের ভিপিদের আমার ভালো করে চেনা আছে। তা যতই ভালো হওয়ার অভিনয় করো না কেন, তা আমার কাছে সাজছে না।পাশে তাকিয়ে দেখি তন্বী ভয়ে আরিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রওনক আমার দিকে ঘুরে শাওনকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—তাকিয়ে দেখছিস কি তোরা? খাতাগুলো ওদের থেকে নে।

—আচ্ছা বড় ভাই।

শাওন হাতির চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকালো।তারপর আমার হাত থেকে প্রাকটিকাল খাতাগুলো নিলো।তন্বীর থেকে আরেকটা ছেলে খাতা নিয়ে রওনকের সামনে গেলো।আমাকে এখন এখান থেকে মানে মানে কেটে পরতে হবে। কারণ প্রাকটিকাল খাতা খুললেই আমি শেষ। আমি কুচোমুচো করে রওনককে বললাম,

—ভাইয়া, আমরা তাহলে আসছি।

—এক মিনিট।

—কিনু🥺?

—আমি সবগুলো খাতা চেক দিবো তারপর যাবে।

রওনকের কথা শুনে আমার কলিজায় পানি নেই। বড়সড় ঢোক গিলে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।রওনক একটা খাতা খুলে রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো।তারপর একে একে সবগুলো পেজ উল্টালো।যত পেজ উল্টাচ্ছে ততই রওনকের চেহারার রং পাল্টে যাচ্ছে। একটা দেখা শেষ হতেই আরেকটা ধরলো।সেটা দেখে আরো রাগ। তন্বী বুঝতে পারছে না কেন রওনক এমন করছে।কারণ ওকে আমি প্রাকটিকাল খাতা খুলতেই দেইনি।কিন্তু আমি তো জানি আমি কি করেছি।রওনক সেই খাতাটাও উল্টেপাল্টে আমাকে ধমকল বললো,

—কি করেছো তুমি এগুলো?

—কেন প্রাকটিকাল করেছি।

—আমি তোমাকে এসব আঁকতে বলেছিলাম?তোমাকে ইন্সট্রাকশনের নোটস দেওয়া হয়েছিলো।কিন্তু তুমি সেগুলো না করে এগুলো কি আঁকছো?

রওনকের রাগ দেখে সবাই ভয় পেলেও আমি কিন্তু বেশ মজা পাচ্ছি। যার কারণে মিটমিট করে হাসছি।আমাকে হাসতে দেখে রওনক রেগে আমার দিকে তেড়ে আসলো।ওকে তেড়ে আসতে দেখে আমি………..

#চলবে

রওনকের তেরটা বাজাবো আগামীকাল। সাথেই থেকেন।আগামী পর্বেই এনাজকে নিয়ে আসবো।কয়েকটা পর্বে রওনক অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে আর এতটা পাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here