রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -০৭

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_07

রোদ নিজের যান্ত্রিক জীবনে খুব ব্যস্ত। আজ তার জন্য হসপিটালে অনেক রোগী অপেক্ষা করছে। কিন্তু দুঃখে বিষয় আজকে রোদের বাড়ি থেকে বাহির হতে দেড়ি হয়ে গেছে। ভোরে নামাজ পড়ে ঘুমানো জন্য এমন হয়েছে। সে এতো সময় ধরে ঘুমিয়ে আছে বাড়ির কেউ ডাক দেয় নি। তারা ভেবেছে আজ হয়তো রোদের ছুটি। কারণ যেদিন রোদের ছুটি থাকে সেদিন সে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। আর তাছাড়া রোদ কে কখনো কারো ডাকার প্রয়োজন হয় না। সে নিজের সময়সূচী অনুযায়ী সব সময় সব কাজ করে। বেশি পারফেক্ট হলে যা হয় আর কি। রোদ বেশি পারফেক্ট বলে আজ তার দেড়ি হয়ে গেছে। এবার ঠেলা বোঝাে মিস্টার রোদ।

বাড়ি থেকে খুব তড়বড় করে না খেয়ে বেড়িয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সে হসপিটালে পৌঁছাতে চাই। তবে কথায় আছে না তাড়াতাড়ির কাজ শয়তানের কাজ। রোদের সাথেও আজ তাই হচ্ছে।

রোদ আজ দ্রুত পৌঁছানোর জন্য হসপিটালে যাবার শর্টকাট রাস্তায় যায়। তবে সেখান যাবার পর বাধে বিপত্তি। মাঝপথে এসে দেখে এখানে এক্সিডেন্ট হয়ে অবস্থা খারাপ। আশেপাশে গাড়ি চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক না। এখানে ছোটখাটো একটা জ্যামের সৃষ্টি হয়েছে।

রোদ গাড়িতে বসে নিজের কপালে নিজে চাপড়াতে থাকে। আল্লাহ কেন যে গাড়ি নিয়ে আসতে গেলাম।আমার বাইকটা আনলে ভাল হতো। এখানে যে কোনো রাস্তার ফাঁকতাল দিয়ে বেড়িয়ে যেতে পারতাম। এখন না পারছি পেছনে যেতে না পারছি সামনে এগুলো।
উফফফফফ কি বিরক্তিকর এক অবস্থা।

এসব ভেবে মনে মনে পরিতাপ করছিল রোদ।

ঠিক এমন সময় রোদের চোখ সামনে আটকে যায়। নিজের চোখে কি সে ভুল দেখছে? গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে সে বাহিরে এসে দেখে বৃষ্টি ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু একটা তো সে করছে কিন্তু কি? তা জানার জন্য রোদের মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই দ্রুত সে ভীড়ের ভেতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করে। এবং সে সফল হয়।

সেখানে যাবার পর দেখে একটা গর্ভবতী মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় সেখান আত্মনাদ করছে। আশেপাশে আরো অনেকই আহত হয়ে পড়ে আছে। তবে মহিলার অবস্থা দেখে রোদের বুঝতে সমস্যা হয় না। এখুনি যদি তাকে হসপিটালে এডমিট না করা হয় তাহলে তাকে বাঁচানো সম্ভব না।

বৃষ্টি চারপাশে চিৎকার চেঁচামেচি করে সবাই কে বলছে প্লিজ আমাদের সাহায্য করেন। অযথা এভাবে ভীড় না বাড়িয়ে আমাদের হসপিটালে যেতে সাহায্য করুণ। দয়া করুণ আপনারা। এখানে কোনো তামাশা হচ্ছে না। কারো জীবন মরণের প্রশ্ন আছে। এসব বলে বৃষ্টি ক্রন্দন করে মহিলার পাশে বসে তাকে ধরে উঠাইতে চেষ্টা করছে।

রোদ একজন ডাক্তার। আর সে ডাক্তার হয়ে এভাবে চুপচাপ মানুষের কষ্ট দাঁড়িয়ে দেখতে পারবে না।
তাই সে দ্রুত সেখান গিয়ে উপস্থিত হয়। মহিলার পাশে হাটুতে ভর দিয়ে বসতেই বৃষ্টি তার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে।

বৃষ্টির কান্নায় মাখা মুখটা দেখে রোদের মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কিসের জন্য এমন হচ্ছে সে জানে না। আর এখন জানতেও চাইছে না।

রোদ বৃষ্টি কে বলে আমার পিছু পিছু আসেন। তাই বলে সে ঐ গর্ভবতী মহিলা কে কোলে তুলে নেয়। তারপর সোজা নিজের গাড়িতে এনে বসিয়ে বৃষ্টিকে বসতে ইশারা করে। বৃষ্টি আর কোন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে।

বৃষ্টির মুখ দিয়ে কোনো কথা বাহির হচ্ছে না।
সে পাথরের মতো নির্বাক হয়ে গেছে। হঠাৎ করে এমন দুর্ঘটনা তাদের সাথে কেনো হতে হলো?

রোদের এমন কাজ দেখে আশেপাশের মানুষেরা তাদের গাড়ি দ্রুত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। সামনে একটা ছোট গলি ছিলো। আল্লাহর রহমতে গলিটা ফাঁকা থাকার কারণে সে পথ ধরে দ্রুত তারা হসপিটালে পৌঁছে যায়।

হসপিটালে এসে রোদ তার পরিচিত মহিলা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে। এবং গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসার ব্যবস্থা দ্রুত করে। মহিলা কে যখন অপারেশন থ্রিয়েটরে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন বৃষ্টি চিৎকার দিয়ে কান্না করে বলে,”আমার জন্য আজ আপনার এই অবস্থা ভাবী!” বলেই সে মেঝেতে বসে পড়ে।
ঐ দিকে অপারেশন শুরু হয়ে গেছে।

রোদ বৃষ্টির মুখে ভাবী ডাক শুনে বুঝতে পারে তার ভাইয়ের বউ। কিন্তু সে কি ভাবে দায়ী?

রোদ এবার বৃষ্টির দিকে একবার ভাল করে নজর বুলিয়ে নেয়। মেয়েটা ক্রীম কালারের ড্রেস পড়ে আছে। তবে পুরো ড্রেসে রক্তের ছোপ ছোঁপ দাঁগ লেগে আছে।
আরো একটু গভীর ভাবে খেয়াল করতেই বুঝতে পারে বৃষ্টির আঘাত লেগেছে। হিজাব পড়ে আছে দেখে বোঝার উপায় নেই। কপালের একপাশে দিয়ে রক্ত ঝরছে।

রোদ বৃষ্টির হাত ধরে তাকে দাঁড় করাতেই বৃষ্টি চেঁচিয়ে বলে,”আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে এভাবে স্পর্শ করার।”

রোদ স্বাভাবিক ভাবে বলে,”দেখুন আপনি ব্যাথা পেয়েছেন। আপনার ট্রিটমেন্টের দরকার। ”

বৃষ্টি – আমার ট্রিটমেন্টের দরকার নেই। একটু রক্ত ক্ষরণে আমি মরবো না। তবে অপারেশন থ্রিয়েটরে যে আছে তার কিছু হলে আমি নিজেকে কোনোদিন ও মাফ করতে পারবো না।

রোদ – বৃষ্টিকে আশ্বাস দেয়। রোগীর কিছুই হবে যদি আল্লাহ চাই। তার ট্রিটমেন্ট করার জন্য ভেতরে হসপিটালে বেস্ট গাইনোকোলজিস্ট আছে। তাই আপনি আমার সাথে আসুন।

বৃষ্টি কিছু বলবে তার আগেই নিজের জ্ঞান হারিয়ে রোদের সামনে ঢলে পড়ে। রোদ বৃষ্টিকে কোলে করে পাশের একটা কেবিনে নিয়ে চলে আসে। সেখানে বেডের উপর শোয়াই দেয়। বৃষ্টির কপালে ব্যান্ডেজ করতে হলেও তো হিজাব খুলতে হবে। তাই চুপচাপ হিজাব খুলে কপালের সাইডে ব্যান্ডেজ করে দেয়। সাথে হাতে পায়ে যেখানে কেটে-ছিলে গেছে সেখানে একটু মেডিসিন লাগিয়ে দেয়।

অতিরিক্ত টেনশন আর অনেকটা রক্ত বাহির হবার জন্য তার শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। রোদ বৃষ্টিকে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয়। এতে করে ওর ব্যাথা কমে যাবে।

এদিকে অটির সামনে এসে দেখে অনেক মানুষর ভীড়। রোদ তাদের সামনে গিয়ে বলে,”হসপিটালে অটির সামনে প্লিজ এতো মানুষের ভীড় করবেন না। পরিবারের সদস্য ছাড়া সবাই চলে যান। ”

রোদের কথামত বাকিরা চলে যায়। সেখানে থাকে শিকদার মির্জা আর তার বউ ডায়না মির্জা। অটি তে আরে কেউ না তাদের বড় বউ পাপিয়া। হ্যাঁ সে গর্ভবতী ছিলো।

শিকদার মির্জা রোদের সামনে গিয়ে বলে,”আপনি কি?”

রোদ – জ্বি আমি একজন ডাক্তার আর হ্যাঁ চিন্তা করবেন না। দোয়া করেন যেনো ভালভাবে অপারেশন কমপ্লিট হয়ে যায়।

শিকদার মির্জা বলে,”ডাক্তার আপনার পুরো শরীরে এতো রক্ত মেখে আছে কেনো?”

রোদ এবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি তার শার্ট প্যান্টে রক্তের দাগ লেগে আছে। ঐ যে তখন মহিলাকে কোলে করেছিল।কথা গুলো ভাবতে থাকে রোদ।

পেছন থেকে ঢুলতে ঢুলতে বৃষ্টি এসে বলে,”কারণ উনি ভাবীকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। আর এখানে এনে অপারেশনের সব ব্যবস্থা সে নিজেই করেছে।”

শিকদার মির্জা রোদের হাত ধরে বলে,”ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব। ”

রোদ ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোট করবেন না। এটাই আমার পেশা। মানুষের সেবা করা আমার উদ্দেশ্য।

শিকদার মির্জা মলিন হাসি উপহার দেয়।

রোদ বৃষ্টির দিতে তাকিয়ে বলে, ” আপনার এভাবে এখানে আশাটা উচিৎ হয় নি। আপনার শরীর দুর্বল। আপনার বিশ্রাম করা দরকার। ”

বৃষ্টি কিছু বলবে তার আসেই অটির দরজা খুলে একজন নার্স বেড়িয়ে আসে।

বৃষ্টির হার্ট বিড ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার থেকে বেশ দ্রূত যাতায়াত করছে। কোনো খারাপ খবর না সামনে না আসলেই হলো।

(আর কিছুই বলবো না😷😷)



চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here