রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -০৬

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_06

বৃষ্টির মনের মাঝে চৈত্র মাসের উত্তপ্ত রোদের মতো জ্বালা-পোড়া করছে। কেনো? কিসের জন্য এর উওর নেই তার কাছে। সব কিছুর সব সময় উওর হয় না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বাড়িতে প্রবেশ করে।

বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথে শিকদার মির্জা বলেন,”মা শা আল্লাহ! তুমি তো দেখছি যা বলেছিলে সেই মতো কাজ ও শুরু করে দিয়েছ। তোমাকে নিয়ে তো আজ আমার গর্ব হচ্ছে। ”

বৃষ্টি ঠোটের কোণায় একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলে,”এই বৃষ্টি যা বলে তা সে কাজে করে দেখাতে পারে। আমি সত্যি কথা সব সময় বলি। তবে আফসোস সবাই যদি বিশ্বাস করতো আমার কথা।”

শিকদার মির্জা ভ্রু কুঁচকে বলে,”কি বলতে চাইছো তুমি?”

-” তেমন কিছু নয়। শুধু এটা বলতে চাইছি যে আমার উপর একটু ভরসা রাখবেন। আমি আমার মতো করে নিজেকে গড়ে তুলবো। আমার কোনো কাজের মধ্যে কেউ নাক গলাতে আসবেন না। যদি কখনো সাহায্যের প্রয়োজন বোধ করি। তখন অবশ্যই সাহায্য চাইবো আপনাদের কাছে।

শিকদার মির্জা – এমন কথা কেনো বলছো তুমি?

-” কারন আমি চাই- না আপনার পরিবারের সদস্য আমি সেই পরিচয়ে লোকে আমাকে চিনবে! আমি নিজের যোগ্যতায় নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলতে চাই।

শিকদার মির্জা – আচ্ছা সমস্যা নেই। তোমার উপর কখনো জোর করা হবে না। তুমি যখন এই পরিবারের জন্য এতো কিছু চিন্তা করছো। তখন তো তোমাকে তোমার পরিচয় তৈরি করার পথে বাধা দিতে পারি না।

বৃষ্টি মির্জা সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। সোজা আলমারি থেকে ড্রেস নিয়ে বাথরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। কিছু সময় পর সে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গভীর ভাবে অবলোকন করতে থাকে। একটা সময় চোখ থেকে বৃষ্টির ধারা ঝড়তে শুরু করে। নিজেকে এমন রুপে দেখে তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে,”বৃষ্টি তোর এতো রুপ রং থেকে কি লাভ হলো? এই রুপের জন্য তোর আজ এই বেহাল-দশা। কি দরকার ছিলো এতো মাধুর্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করার? যে মাধুর্য তোর সারা জীবনের বেদনার কারণ। এতো মাধুর্য দিয়ে কি হলো? জীবনের সব রং গুলো তো আজ ধূসর রঙ এ রঞ্জিত।
তবে সেদিন বেশি দূরে নয়। আমি আমার জীবনটা কে আবারো নতুন ভাবে সাজাবো। নিজেকে সাজানোর জন্য দরকার হলে অন্যের জীবনের সব গুলো রং বে-রঙ্গিন করে দিবো। তবুও নিজের সাথে আর কাউকে অন্যায় করতে দিবো না।”

এসব বলে নিজের সামনে উপস্থিত আয়নার উপর কালো পর্দায় আচ্ছাদিত করে দেয়।

নিজের রুমের বারান্দাতে এসে বৃষ্টি নিজের মুঠোফোন টা হাতে নিয়ে কারো নাম্বারে ডায়াল করে। অপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ হবার সাথে সাথে গম্ভীর কন্ঠে কেউ একজন বলে ওঠে,” তোমার লাজ-লজ্জা নেই? বার বার কেনো আমাদের বিরক্ত করো? বুঝতে পারো না? তোমার জন্য আমরা বিপদে পড়তে চাই না। নিজের যুদ্ধ নিজে করো। আমাদের মাফ করো। তোমার ঐ বিষাক্ত জীবনের ছায়াটা আমাদের উপর পড়তে দিও না।”

টুট টুট টুট করে ঐ পাশ থেকে ফোনের লাইনটা কেটে দেয়। বৃষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”জানতাম প্রতিবারের মতো এবারো আমি অপমানিত হবো। তারপর ও নির্লজ্জ অন্তরটা তো মানে না।”



এদিকে বাড়িতে ফিরতেই রিয়ানা সাদিকের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চলে যায়।

রিয়ানা- সাদিক ভার্সিটির ঐ নিয়মবিরুদ্ধ মেয়েটা কে ছিলো গো? ডানপিটে মেয়েটা কাউকে দেখে ভয় করে না। বেপরোয়া মেয়েটা- নিজেই সবার মাঝে আতঙ্কসৃষ্টি করছিল। তবে যাই বলি মেয়েটার সাহসের তারিফ করতে হয়।

সাদিক – হ্যাঁ! মেয়েটা অনেক সাহসী। আর বৃষ্টির এই সাহসিক স্বভাবের জন্য আজ ওর জীবনটা এমন ছন্নছাড়া। মেয়েটা প্রথমে যদি নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতো তাহলে ওর জীবনের গল্পটা আজ অন্যরকম হতে পারতো।

রিয়ানা – তুমি কি বলছো! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আর তুমি কি মেয়েটাকে পারসোনাল ভাবে চেনো?

সাদিক তাচ্ছিল্যের সাথে জবাব দেয়- হ্যাঁ চিনবো না কেনো? এ অঞ্চলের একজন নামকরা রাজনীতিবিদের পরিবারের সদস্য সে। এটাই তার বড় পরিচয়।

রিয়ানা – এটা কেমন কথা। সে হতেই পারে রাজনীতিবিদ পরিবারের সদস্য। তাই বলে সে তার প্রভাব সবার উপর এভাবে বিস্তার করবে? কই রোদের বাবাও তো রাজনীতির সাথে জড়িত আছে। তাই বলে তো কেউ এই পরিবারের কাউকে মামুজানের রাজনীতির জন্য চেনে না। মামু-জান রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী। তাকে তো সবাই ব্যবসায়ী হিসাবে চেনে। আর রোদের নিজের একটা নিজস্ব পরিচয় আছে। সবাই তাকে সেই পরিচয়ে চেনে।

সাদিক বলে,”দেখো রিয়ানা বৃষ্টির জীবনের গল্পটা তুমি জানো না। আর আশা করবো জানার চেষ্টা করবে না। ও একটা রহস্যের মতো। তাই রহস্য কে রহস্য থাকতে দাও। কি দরকার বৃষ্টিকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে এতো আলোচনা করার। বৃষ্টি তো আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য না। বাহিরের একটা মেয়ে তাকে নিয়ে আলোচনা না করাটা ভাল।”

রিয়ানা – আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই। ঐ বৃষ্টির বিষয়ে আর জনতে চাইবো না। তবে আমরা তো এখন বন্ধু তাই-না। ভাই-বোনের সম্পর্ক এখন আড়ালে পড়ে থাক।

সাদিক- হুম আচ্ছা সমস্যা নাই।

রিয়ানা – তাহলে আজকের পর থেকে আমরা ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে ঘুরাঘুরি করবো। এই মাস্টার্স শেষে তো সবাই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবো। নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার সময় আর জীবনটা উপভোগ করতে পারবো না।

সাদিক বলে,”হুম,,তুমি ঠিক বলছো! এখুনি সময় নিজেদের শেষ জীবনটা একটু সুন্দর ভাবে উপভোগ করার।”

এরপর দুজনে একটু গল্পগুজব করতে থাকে।


এদিকে রিনি বিছানাতে বসে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে আর ভাবছে বৃষ্টি কি জেনে গেছে রোদ আমার ভাই? আর জানালেও তো কোনো সমস্যা নেই। ওর কি বা করার আছে। বৃষ্টি তো ডানাকাটা পাখি। সে চাইলেও কোনোদিন মুক্ত আকাশে উড়তে পারবে না। তাই বৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তার কোনো মানে হয় না। অযথা অতিরিক্ত চিন্তা করে নিজের চেহারার মাধুর্য নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। রিনি- তুই এসব কথা বাদ দিয়ে তোর মনের মানুষকে নিয়ে চিন্তা কর তাকে কি করে নিজের করে পাবি।


রোদ ফ্রেশ হয়ে এসে অবসাদগ্রস্ত দেহ-মন নিয়ে বিছানাতে শয়ন করার সাথে সাথে গভীর নিদ্রা তে ডুবে যায়। এতোটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায় যে কোনটা স্বপ্ন আর কোনটা বাস্তবতা সে বুঝতে পারে না।
রোদ একটা নদীর পাড়ে বসে আছে।
সময়টা শেষ সায়হ্ন। পশ্চিম আকাশের বুক জুড়ে রক্তিম লাল আভাতে রাঙা। সেই আলোতে শুভ্র বস্ত্র পরিহিত এক রমণী তার থেকে কিছুটা দুরে দাঁড়িয়ে আছে। রোদ একভাবে নেই রমনীর দিকে তাকিয়ে আছে। হারিয়ে যাচ্ছে কোনো এক গভীর মায়ার মাঝে। কিছু একটা আছে এই অজানা রমণীর মাঝে।
নয়তো তাকে এক দেখাতে কেনো এতোটা আগ্রহী হচ্ছে তাকে নিজের করে পাবার জন্য। কই জীবনে এতো রমনী দেখেছে সে কারো প্রতি এতোটা টান অনুভব করে নাই। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না একটু খানি তাকে ছুঁয়ে দেখার। তাই দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। এরপর ধীরে ধীরে বৃষ্টির কাছে এসে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে যেইনা বৃষ্টিকে স্পর্শ করবে তখনি সে জলন্ত আগুনের লেলিহান শিখাতে পরিণত হয়। রোদের হাতটা সে আগুনে পুড়ে যায়।সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে ওঠে। ঘুমটা ভেঙ্গে যায় রোদের। দ্রুত রুমের লাইট জ্বালিয়ে নিজের হাতটা ভাল করে দেখে। কই হাতের তো কিছুই হয় নি? তাহলে এটা স্বপ্ন ছিলো? কিন্তু এটা কেমন স্বপ্ন? আর সে কেনো ঐ মেয়েটাকে নিয়ে বা এমন স্বপ্ন দেখছে। আজব কাহিনী চেনা নেই, জানা নেই, সেই মেয়েটা আমার সাধের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলো।
একটুপর দূর মসজিদ থেকে আজানের মিষ্টি মধুর ডাক শোনা যাচ্ছে সে দ্রূত বিছানা ত্যাগ করে নামাজ পড়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চলে যায়। এই স্বপ্নটাকে সে দুঃস্বপ্ন মনে করে ভুলে যেতে চায়।
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here