রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -০৫

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_05

ভার্সিটির ভেতরে প্রবেশ করতেই রোদের চোখ কপালে উঠে যায়। আল্লাহ এটা ভার্সিটি তো? না কি আমি ভুল করে অন্য কোথাও চলে আসছি। তাই বলে বাহিরে এসে গেটের উপর বড় বড় অক্ষের বিশ্ববিদ্যালয় লেখাটা দেখে শিউর হয়ে নেয়।

তারপর সামনে এগিয়ে যায়। সবার মতো রোদ মানুষের ভিড় ঠেলে সামনে দাঁড়িয়ে দেখে শুভ্র সাদা রং এর থ্রি-পিস পড়া এক মহিষী রমণী দুইটা ছেলেকে মনের সুখে উরাধুরা পেঁদানি দিচ্ছে।

আশেপাশের সব মেয়েরা সামনের রমণী কে আরো উৎসাহিত করছে মারার জন্য।
কিন্তু মেয়েটা ছেলে দুটাকে যে ভাবে হকি স্টিক দিয়ে পেঁদানি দিচ্ছে। তা দেখে আমার ওদের অবস্থা যে খুব খারাপ তা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না।

রোদ আশেপাশে মানুষের কাহিনী দেখে অবাক। মেয়েটা মারছে এরা তাকে না থামিয়ে আরো মারতে বলছে। এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট গুলো কি সাংঘাতিক ভাবা যায়।

রোদ দ্রুত পেছন মেয়েটার নিকটে গিয়ে স্টিক টা ধরে ফেলে। তারপর মেয়েটার চেহারা না দেখে বলে,”আপনার মায়াদয়া বলে কিছু নেই? এভাবে অমানুষের মতো কেউ কাউকে পেঁদানি দেয়?”
আর আশেপাশের মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনারা সবাই স্টুডেন্ট হয়ে অন্য স্টুডেন্টের কষ্টে সাহায্যদান না করে তাদের কষ্টের কারন হচ্ছেন। আপনাদের তো লজ্জা হওয়া উচিৎ। ”

এবার মেয়েটা রোদের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে মুখের সামনে আঙ্গুল উঁচু করে বলে,”এই লাফাঙ্গা গুলো কি আপনার ভাই যে এদের হয়ে সাফাই গাইতে আসছেন? এতো কিসের দরদ আপনার এদের প্রতি?”

রোদ এবার সামনে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। আরে এ তো সেই রাতের মেয়েটা। যা বেয়াদব মেয়ে। এই মেয়েটার সাথে অযথা কোনো তর্ক করার মানে হয় না।

রোদ বৃষ্টির কথার কোনো উওর না দিয়ে তাকে ইগনোর করতে থাকে।

তখন পেছন থেকে একটা মেয়ে এসে বলে, “আপু ছেলে দুটাকে ছাড়বে না। এরা খুব খারাপ। মেয়েদের রেগিং করার নাম করে তাদরের শরীরের নানারকম স্থানে স্পর্শ করে। রেগিং এর নাম করে এরা।মেয়েদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। সিনিয়র বলে এদের সাথে কেউ লাগতে যায় না। এদের তো আরো বেশি মার খাওয়া উচিৎ। ”

তখন আরেকটা মেয়ে এসে রোদ কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি কে হ্যাঁ! যে বৃষ্টি আপুর কাজের মধ্যে বা হাত ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। না জেনে বুঝে লেকচার দিতে আসছেন? ”

বৃষ্টি বলে,”আরে বাদ দাও। যার যেমন চরিত্র সে তো তেমন মানুষকে সাপোর্ট করবে তা-ই না। উনি যদি ভালো ব্যক্তিত্বের মানুষ হতেন তাহলে আশেপাশে থেকে খোঁজখবর নিয়ে আমার সামনে আসতেন। হুট করে আকাশ থেকে টপকে পড়ার মতো আমার কাজের মাঝে এসে বাধা সৃষ্টি করতেন না।”

রোদ বলে,”মানুষ যতো খারাপ হোক না কেনো তাকে অমানবিক ভাবে পেটানোর কোনো অধিকার কারো নেই। দেশে আইন আছে তার সাহায্য নিতে পারেন।নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার কোনো মানে হয় না।”

এবার বৃষ্টি রোদের শার্টের কলার ধরে নিজের অনেকটা কাছে এনে বলে,” রাখেন মিয়া আপনার আইন। এদের মতো ফালতু মানুষের জন্য আইন ভালোদের সাহায্য করে না।এই বেয়াদব গুলো আইন কে তাদের পকেট রাখে। এদের সাথে একটু অমানবিক আচরণ করলে কিছুই হয় না। এরা যেমন কুকুর! আমিও ঠিক তেমন মুগুর দিচ্ছি। তাতে বাধা দেওয়ার আপনি কে মশাই? ”

এমন সময় সেখানে রিয়ার, সাদিক, রিনি চলে আসে।
নিজের ভাইকে বৃষ্টির সাথে দেখে রিনির হাত পা কাঁপতে শুরু করে দেয়। রিনির আর সাহস হচ্ছে না বৃষ্টির সামনে যাবার। আল্লাহ রোদ ভাইয়ারে কেন বৃষ্টির সামনে আনলে? উফফ আমার সাহস হচ্ছে এই বৃষ্টির সামনে যাওয়ার। এতোদিন পর হঠাৎ করে ভার্সিটিতে কেন আসছে এই আপদবিপদ।

সাদিক হুট করে বৃষ্টির হাত থেকে রোদের কলার্ট ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”ভাইয়া তুমি হঠাৎ ভার্সিটি কি মনে করে আসলে? আর আসছো যখন আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?”

রিয়ানা বৃষ্টি কে উদ্দেশ্য করে বলে,”এই অভদ্র মেয়ে।তোমার সাহস হয় কি করে রোদের গায়ে হাত দেওয়ার। একটা অপরিচিত ছেলেকে স্পর্শ করতে তোমার লজ্জা করলো না?”

বৃষ্টি অগ্নি দৃষ্টি তে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টি কিছু বলার আগেই সাদিক বলে ওঠে,”রিয়ানা তুমি ভুল মানুষের সাথে লাগতে যাচ্ছ।বৃষ্টি যদি তোমাকে কথা শোনাতে শুরু করে তাহলে বিনা পানিতে ধুয়ে দিবে।”

রোদ কিছু বলবে তার আগে বৃষ্টি সাদিকের উদ্দেশ্যে বলে,”সাদিক ভাই!”

বৃষ্টির মুখে সাদিক ভাই ডাকটা শুনে ওর কলিজা কেঁপে ওঠে।

তারপর নিজেকে সংযোত করে বলে,”কিছু বলবে বৃষ্টি?”

বৃষ্টি- আমি যতো দূর জানি আপনার কোনো ভাই নেই। তাহলে এই ভাই কই থেকে টপকে পড়লো?

সাদিক তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”তোমার না জানালেও চলবে!”

বৃষ্টির এবার রাগের সহিত বলে,”সাদিক ভাই আপনার ভাই- কে বলে দিবেন এই বৃষ্টির কোনো কাজে যেনো নাক গলাতে না আসে। নেক্সট টাইম আমার কাজে নাক গলাতে আসলে উনার ঐ উঁচু নাকটা থেতে দিবো।”

রোদ – এই মেয়ে বড়দের সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলতে জানো না?

বৃষ্টি – আপনার মতো সো কল্ড লোকের কাছে অবশ্যই ভদ্রতা শিখতে যাবো না।

সাদিক একটু ধমকের সুরে বলে,” বৃষ্টি রোদ ভাইয়ার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো।”

বৃষ্টি – রোদ নামটা শুনে চমকে ওঠে। তারপর অবাক দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রোদ তো অগ্নিদৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে।কি বেয়াদব মেয়ে। সেদিন রাতেই বুঝে গেছিলাম এই মেয়ে মোটেই সুবিধের না।

বৃষ্টি আর ওদের সাথে কোনো কথা না বলে, আহতথাকা ছেলে দুটোর সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,”আজকের মারের কথা আশা করি কোনোদিন ও ভুলবেন না। নেক্সট টাইম কোনে মেয়ের শরীরে স্পর্শ করার আগে এই বৃষ্টির হাতে পেঁদানি খাওয়ার কথাটা মাথায় রাখবেন। যদি ভুলে যান সমস্যা নেই আমি মনে করিয়ে দিবে। আর হ্যাঁ একটা কথা ভালো হতে পয়সাকড়ি কিছুই লাগে না। তবে খারাপ হবার জন্য টাকা লাগে। বাবার টাকা গুলো অযথা এভাবে নষ্ট না করে ভালো কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন। ”

বলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটা ছেলেকে এদিকে এগিয়ে আসতে ইশারা করে। তারা এগিয়ে আসলে বৃষ্টি ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু টাকা বাহির করে দিয়ে বলে,”এদের হসপিটালে ভর্তি করিয়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। আর হ্যাঁ আরো টাকার দরকার হলে আমাকে বলবেন। তবে এদের চিকিৎসার কোনো অবহেলা চাই না।”

বৃষ্টি চলে যাবার পর দ্রুত রিনি রোদের সামনে এসে উপস্থিত হয়।

রিনি- ভাইয়া তুমি অযথা কেনো যেতে মেয়েটার সামনে গেলে? কি দরকার ছিলো এসব ভেজালে নিজেকে জড়ানোর?

রোদ কিছু বলবে তার আগে সামনে থাকা ছেলে গুলো বলতে থাকে, “তোদের সাথে আজ বৃষ্টি যে ব্যবহার করেছে একদম ঠিক কাজ করেছে।এখানে এমন কোনে মেয়ে নেই যার সাথে তোরা বেয়াদবি করিশ নাই।কথায় আছে না চোরের দশদিন তো গৃহস্থের একদিক। আজ তোরা ভুল মেয়ের সাথে লাগতে গেছিস। বৃষ্টির সাথে বেয়াদবি করাটা বড় ভুল কাজ ছিলে। সে যাই হোক বৃষ্টির এমন কাজে তাকে বাব্ বাহ না দিয়ে পারছি না। সে তোদের উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে।”
এরপর ছেলে গুলো ওদের ধরে হসপিটালে নিয়ে যায়।

এদের সবার কথা শুনে বুঝতে পারে রোদ ভুল মানুষদের সাপোর্টে কথা বলছিল। আর বৃষ্টি মেয়েটা বড়ই অদ্ভুত। কেমন জানি অদ্ভুত রকমের সিগ্ধতা তার চেহার মাঝে। ব্যবহার যদি এতোটা কঠোর না হতো তাহলে হয়তো এতো সময় মেয়েটার প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতো।

রোদ আর কারো কথার উওর না দিয়ে হুট করে স্থান ত্যাগ করে।

বৃষ্টি মেয়েটা সত্যি বড়ই অদ্ভুত। কোথায় শুরু কোথায় শেষ কেউ জানে না।ভুল এুটি থাকলে বলবেন সংশোধন করবো। আর হ্যাঁ গল্পটা রেগুলার দিতে পারবো না।কারণ আমি মানুষিক ভাবে ভোগান্তিতে আছি। কারণ নিজের লেখাপড়া নিয়ে একটু ডিপ্রেশনে আছি। আমার ভুলের জন্য দুইটা বছর অপেক্ষার পর আমি একবছর নিজের হাতে নষ্ট করেছি। নিজের লেখাপড়া নষ্ট হওয়ার কষ্টটা কেউ হয়তো বুঝবেন না।তাই কাউরে বোঝাতে চাই না।


‘চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here