সঞ্চারিণী
আফনান লারা
২৫.
-‘তোমাদের দুজনের চোখ কোনদিকে ছিল?তোমাদের সামনে থেকে আমাদের আরেকজন অফিসার গায়েব হয়ে গেলো আর টেরই পেলেনা??তোমাদের দুজনকে আনাই উচিত হয়নি।যেখানেই দেখি হাসাহাসি করতে থাকো।কাজের প্রতি কোনো মনোযোগই তোমাদের নেই।নিতু এখন থেকে সাজিদের সঙ্গে যাবে।আর সামিয়া নুহাশের সাথে।মেধাকে খুঁজতে হবে এবার।এই মেয়েটা কোন বিপদ ডেকে আনবে কল্পনাও করতে পারছিনা।ওর কিছু হলে সবার আগে ওর বাবা এসে আমার কলার ধরবে’
——
মেধা হাসছে বসে বসে।তার হাত পা বাঁধা। চোখটাও বাঁধা।তার সামনে বসে আছে একজন সুদর্শন পুরুষ।এপাশে আরেক সুদর্শন পুরুষ।একজন ফর্সা আর আরেকজন শ্যামলা।একজনে শার্ট প্যান্ট পরে আছেন সাহেব সাহেব ভাব নিয়ে।আর আরেকজন জ্যাকেট পরিহিত।
দুজনের চোখ মেধার দিকে।তাদের লোকেরা মেধার ব্যাগটা সার্চ করছে মনোযোগ দিয়ে।পাউডার,ক্রিম,টিস্যু ছাড়া কিছুই পাওয়া গেলো না ব্যাগটা থেকে।
মেধা হেসপই যাচ্ছে।একটা সময় হাসি থামিয়ে বললো,’তোমরা তাহলে সেইজন যারা কিনা আমার কাছে লোক পাঠাতে ক্লিপটার জন্য??ক্লিপ দিয়ে কার লাভ হতে পারে।উমমমম ভাবতে হচ্ছে।আরে হ্যাঁ!!রেদোয়ানের ভাইয়ের লাভ হতে পারে।অনেক বড় লাভ!
তাহলে আমার সামনে এখন কারা কথা বলছে?রকি??আচ্ছা তা বুঝলাম।কিন্তু আরেকজন কে??আর কে হতে পারে ঐ ক্লিপের দাবিদার? ‘
-‘চুপচাপ ক্লিপটা কোথায় আছে বলে দাও নাহলে আমরা এখন শুট করতে বাধ্য হবো’
-‘মারো।প্লিজ মারো।আমাকে মারলে তোমরা ক্লিপটা মঙ্গল গ্রহ গেলেও পাবেনা’
-‘তুমি তো এমনিতেও দিচ্ছো না।তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ?’
-‘লাভ বলতে ঐ একটাই।অল এবাউট দ্যা ক্লিপ।সেটার মায়া না থাকলে আপনারা গুলি মারতে পারেন।ক্লিপ আর এমন কি।সুন্দর কয়েকখানা ভিডিও সেভ করা তাতে।সেটাতে আর কার কি যায় আসবে!!’
-‘কি চাও তুমি?’
-“ছেড়ে কাশলেন তাহলে।আমার চাই রকি এবং এ্যামিলিকে’
রকি হাসতে হাসতে বললো,’মামার বাড়ির আবদার নাকি??’
—–
রকির এই কথাটার পর আর কারো কথা শোনা গেলোনা।ঘরটা নিশ্চুপ হয়ে গেলো।মেধা হাত পা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে কয়েকবার হেল্প বলে চিৎকার করেও কারো সাড়া না পেয়ে বসে বসে জায়গা পরিবর্তনের চেষ্টা চালালো।দরজা অবধি এসে বোঝার চেষ্টা করলো কারো কথা শোনা যায় কিনা।সে যেই দরজার কাছে এসে থেমেছে সেখানে ওদের কারোর কথা শোনা না গেলেও বিপরীত পাশ থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল।তার মানে সবাই ওপাশে।মেধা যেখানে এসে থেমেছে সেখানে দরজা খুললেই নিচ তলায় যাওয়ার সিঁড়ি।চোখ বাঁধা বলে মেধা বুঝতে পারছিলনা।সে একটু একটু করে দরজা সরিয়ে বের হবার চেষ্টা করছিল।সিঁড়িতে বসতেই পড়ে যাওয়া ধরলো সে।দুটো হাত তাকে ঠিকসময়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ফেলেছে।মেধা চুপ করে আছে।ভাবলো ওরা তাকে ধরে ফেললো বুঝি।হঠাৎ কানের কাছে শুনতে পেলো “আমি” শব্দটা
গলার আওয়াজটা শাওনের।সে মেধার চোখ থেকে বাঁধন খুলে দিয়ে এবার হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে বললো,’ওরা কোথায়?’
-‘ওপাশে মনে হয়’
শাওন সেদিকে গেলো।মেধা তার পায়ের রশিটা খুলছে এবার।
শাওন হ্যান্ডস্ আপ বলতেই সামনে যে দুজন ছিল তারা হাত উপরে তুলে সামনের দিকে দৌড় লাগালো।শাওন ওদের দুজনের মুখ দেখলোনা।বাধ্য হয়ে শুট করলো সে।কিন্তু তাদের কিছুই হলোনা।একজনের হাতে গুলি লাগলো আর আরেকজনের পায়ে তাও একবারের জন্য ও তারা থামেনি।মূহুর্তেই পালিয়ে গেছে।সামনে বাস এসে পড়ায় চোখে ধুলো দিতে পারলো খুব সহজেই।শাওন নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হয়ে গেছে।কেন সে ধরতে পারলোনা ওদের।
ওয়াকিটকিতে সাজিদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পেছনে তাকাতেই মেধাকে দেখতে পেলো।সঙ্গে এ্যামিলিকে নিয়ে এদিকে আসছে সে।হাসতে হাসতে বললো,’দলের একজনকে ভুলবশত ফেলে গেছে’
শাওনের মুখে হাসি ফুটলো।মেধার দিকে তাকিয়ে বললো,’সাবাস’
-‘ধরতে পারতেন না।কাজের বুয়ার মতন সেজে রাস্তা পরিষ্কার করার ভান করছিল।পরে দেখলাম যেটা ঝাড়ু দিচ্ছিল সেটা এতই পরিষ্কার যে চিকচিক করছে।তাহলে তার ঝাড়ু দেওয়ার কারণ কি হতে পারে’
এ্যামিলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
মেধা এ্যামিলির হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,’আচ্ছা আগে বলুন আপনি আমাকে পেলেন কি করে?’
-‘মালদ্বীপ বৃহত্তম না।সামিয়া খুঁজতে কোনো জায়গা আমরা বাদ রাখিনি।সর্বশেষে রয়ে গিয়েছিল বিচের সাথের এই জায়গাটা।কেউ স্বপ্নেও ভাববে না এখানে তারা হতে পারে।অন্ধকারে তীর ছুড়লাম আর তা নিশানায় লেগে গেলো।সামিয়ার বেলায় লাগলোনা।কিন্তু তোমায় বেলায় লেগে গেলো’
-‘আপনি না আসলেও আমি নিজের রক্ষা নিজেই করতে পারতাম।আপনাকে অজানা একটা বিষয় জানিয়ে দিচ্ছি।আর তা হলো আমি ইচ্ছে করেই কিডন্যাপ হয়েছি।যাতে রকি আর এ্যামিলি অবধি পৌঁছাতে পারি।যখন তারা আমাকে গাড়ীতে উঠাচ্ছিল আমি টু শব্দটাও করিনি।কারণ আমার ইচ্ছেই ছিল কিডন্যাপ হওয়ার’
-‘থাক।এত দাপট দেখাতে হবেনা।আমি না বাঁচালে এতক্ষণে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে নাক ফাটাতে তুমি।তা এই সাদা ফার্মের মুরগীটাকে কি করা উচিত?তার বয়ফ্রেন্ড রকির জন্য তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।আচ্ছা ম্যাডাম মুরগী একটু বলুন তো আপনার কাছে কি আর কোটি টাকার লিপস্টিক আছে নাকি কোটি টাকার অন্য কিছু আছে যেটা আমরা জানিনা’
-‘হোয়াট আর ইউ টকিং এবাউট?আই ডোন্ট নো এনিথিং’
সঙ্গে সঙ্গে মেধার একটা থাপ্পড়ে এ্যামিলি ভ্যাঁত করে কেঁদে ফেললো।শাওন কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’এমন করে আমি থাপ্পড় মারি।আমাকে কপি করতেছো?’
-‘আপনাকে থাপ্পড় দিতে দেখিনি কখনও।মনে হয় আপনি কপি করছেন আমাকে’
শাওন আবারও হাসলো।এ্যামিলি গালে হাত দিয়ে বললো,’আমি কিছু জানিনা’
-‘ঐ তো বাংলা কথা বেরিয়েছে।
সেটা পরে দেখা যাবে।এখন বলো রকিকে কোন জায়গায় গেলে পাবো?’
-“সেটাও জানিনা’
শাওন মেধার দিকে তাকালো।মেধা আরেকটা থাপ্পড় মেরে দুতেই এ্যামিলি বললো,’মেরে ফেললেও বলবোনা’
-‘তুমি মরে গেলো রকি আরেকটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করবে।মরেও শান্তি পাবানা তখন।তার চেয়ে বরং সত্য কথা বলে মরো।পরে এই ভেবে শান্তি পাবা যে রকি প্রেম করছে না,জেলে রুটি বানাচ্ছে’
-“আমি কিছুই জানিনা’
-‘মেধা বাদ দাও।কড়া ডোজের রিমান্ড নিলে ফরফর করে সব বলে দেবে।আই থিংক আমাদের এখন ফিরে যাওয়া উচিত হোটেলে।এরেও সঙ্গে করে নিতে হবে।গিয়াস স্যার যেটা বলবে সেটা হবে’
———–
মেধা এ্যামিলিকে টানতে টানতে আনছে।শাওন বাকিদের জানিয়ে দিলো হোটেলের দিকে আসতে।হোটেলে এসে একটা চেয়ারে এ্যামিলিকে শক্ত করে বেঁধে বসিয়ে রেখেছে তারা।গিয়াস স্যার বলেছে রকিকে খুঁজতে।আর এ্যামিলির মুখ থেকে সত্য কথা বের করে আনতে।মেধা আর সামিয়া রেডি হচ্ছে এ্যামিলির মুখে কথা ফুটানোর জন্য।শাওন পানির বোতল একটা নিয়ে দূরে বসেছিল।নুহাশ আর সাজিদ বলছে হয়ত তারা এখন মালদ্বীপ ছেড়ে পালাতে চাইবে।কারণ মালদ্বীপে যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন সহজেই ওদের ধরা যাবে।শাওন মেধার দিকে তাকিয়ে আছে এক চাহনিতে।ওদের কথা শুনছেনা সে।
মেধা চুলে খোঁপা করে সামিয়ার থেকে কোটটা নিয়ে পরে নিয়েছে।এ্যামিলিকে কিসব বলছে আর এ্যামিলি উত্তরে বলছে জানে না কিছু।
-‘মেধা এমন কেন??হুটহাট দারুণ কাজ করে বসে।ভাবনার বাহিরের কাজ সে করে।যে কাজ আমরা এতজন অফিসার করতে পারলাম না সে কাজ ও করে ফেলেছে।এখন মনে হচ্ছে রেদোয়ানের কেস ও সলভ করবে।রকিকে খুঁজে পেতে হবে তার আগে।আচ্ছা শোনো তোমরা।আমরা এখন এয়ারপোর্টে যাবো।ওরা পালানোর চেষ্টা করতে পারে।মেধা,সামিয়া আর নিতু এখানেই থাকুক।সঞ্চারিণী
আফনান লারা
২৬.
এয়ারপোর্টের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে গেছে নুহাশ।সাজিদ আর শাওন মেইন ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রকিকে দেখলেই ধরে ফেলবে।কথা হলো সে আসছেনা।
দীর্ঘ ৩ঘন্টা অপেক্ষা করেও তাদের আসতে কিংবা যেতে দেখা গেলোনা।সিসি ক্যামেরাতেও কোথাও চিহ্নিত হলোনা।
তাই তারা ফিরে আসলো হোটেলে।সামিয়া এতক্ষণ চেষ্টা করছিল এ্যামিলির মুখ থেকে কথা বের করার জন্য।এ্যামিলিকে মারতে মারতে ওর হাল খারাপ করে ফেলেছে তাও মুখ থেকে কথা বের হলোনা তার।
মেধা হ্যান্ড ক্রিম লাগাচ্ছে দূরে বসে বসে।সামিয়া গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বললো,’আমার দ্বারা হচ্ছেনা।এবার তুমি ট্রাই করে দেখো পারো কিনা’
মেধা গায়ের কোটটা খুলে এসে এ্যামিলির সামনে একটা চেয়ার টেনে বসলো।এ্যামিলির নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।মেধা এ্যামিলির গলার সিলবারের লকেটটা খিঁচিয়ে ধরে বললো,’পেডিকিউর করা নখগুলোকে উপড়ে ফেলবো নাকি? ‘
-‘আমি কিছু জানিনা।সোজা কথা বুঝোনা তোমরা?’
মেধার রাগ হলো খুব।এ্যামিলিকে দু তিনটা চড় মেরে ওর চুল টেনে ধরে বললো,’এভাবে মানবেনা তাইনা?এত টান তোমার রকির জন্যে?’
কথাটা বলে এ্যামিলির চুল ছেড়ে দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে শাওনকে দেখতে পেলো সে।ও দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল সেসময়ে।মেধা ওকে চোখ দিয়ে ইশারা করে এ্যামিলির দিকে তাকিয়ে বললো,’রকিকে তো আমরা পেয়ে গেছি।শাওন স্যার ফোন করেছিল।এবার তোমায় কিছু বলতে হবেনা।যা জানার তার থেকে জানবো।আমরা তো ভেবেছিলাম তুমিও হয়ত কিছু জানো।এখন মনে হয় জানোনা।তাহলে রকিকেই মেরে দেখি কথা বের হয় কিনা’
শাওন ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,’রকি স্বীকার করেছে।রেদোয়ানকে সে মেরেছে’
-‘না এটা হতে পারেনা।রকি রেদোয়ান ভাইয়াকে মারেনি’
মেধা কপাল কুঁচকে বললো,’কি বললে?রেদোয়ান ভাইয়া?’
শাওন এ্যামিলির সামনে এসে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।রেদোয়ান এ্যামিলির ভাইয়া হয় কি করে?সে কি রেদোয়ানের প্রেমিকা ছিলনা?
সামিয়ার শরীর খারাপ লাগছিল বলে সে উঠে রুম থেকে চলে গেছে ফ্রেশ হতে,নিতু ও বললো যাবে।এ্যামিলি মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।মেধা শাওনের দিকে তাকিয়ে আরও কিছু বলার জন্য সংকেত দিলো।শাওন কনফিডেন্স নিয়ে বললো,’রকি তো এটাও বলেছে দুটো খুনই তোমরা দুজন মিলে করেছো’
-‘রেদোয়ান ভাইয়াকে আমি মারিনি।রকি মিথ্যা বলছে’
-‘তার মানে আশাকে তুমি মেরেছো’?’
এ্যামিলি আর কিছু বললোনা।শাওন এ্যামিলির হাতটা ধরে বললো,’মেয়েদের রিমান্ড বেশিরভাগ মেয়ে অফিসাররাই নেয়।কিন্তু মাঝে মাঝে জরুরি ভিত্তিতে আমরাও নিতে পারি।সোজা কথা তো বলবেনা।আই এম সরি তাহলে….’
কথাটা বলে শাওন এ্যামিলির হাতের কব্জিকে চেয়ারের হাতলের সঙ্গে চেপে ধরলো।এ্যামিলি চিৎকার করে উঠেছে।
চেঁচিয়ে বললো,’হ্যাঁ আমি আশাকে মেরেছিলাম।শুধু আমি না।রকিও সঙ্গে ছিল’
শাওন মুচকি হেসে হাত ছেড়ে দিলো।তারপর শান্ত গলায় বললো,”কেন?’
-‘রেদোয়ান বলেছিল।ওর কথাতেই আমরা আশাকে মেরেছি সেদিন রাতে’
মেধা একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’কি দোষ করেছিল তোদের??মেয়েটা সহজসরল,ছিল তার কোনো অপরাধ ছিলনা।স্বামীর কুকীর্তি সয়ে এত বছর ছিল।কেন মারলি বল!!তোর প্রতিদিন আসা যাওয়াতেও তো সে কিছু বলতোনা।তাহলে কেন মারলি?’
কথাগুলো বলতে বলতে মেধা কেঁদে ফেললো।শাওন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।মেধা এমনভবে কথা বলছে যেন সব তার চোখের সামনে ঘটেছে।এ্যামিলি নিরবে কেঁদে চলেছে।শাওন মেধাকে থামতে বলে এ্যামিলিকে জিজ্ঞেস করলো রেদোয়ানকে তাহলে কে মেরেছে।এ্যামিলি ঢোক গিলে চুপ করে আছে এখনও।শাওন সেই আবারও ওর হাতের উপর টর্চার করতে এগোলো ঠিক সেসময়ে জানালা ভেদ করে আসা একটা গুলিতে এ্যামিলি মারা গেলো মূহুর্তেই।গুলিটা তার বুকে গিয়ে লেগেছে।
শাওন মেধাকে নিয়ে নিচে বসে পড়েছে।মেধা গান নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো একজন সামনের বিল্ডিং থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
শাওন আর মেধা একসাথে হোটেলের নিচে নেমে ছুটে গেলো সেদিকে।
ছেলেটা দালান থেকে নেমে রাস্তার অন্য পাশে চলে গেছে।শাওন আর মেধাও তাকে ফলো করতে করতে সেদিকে গেলো।ছেলেটা বুঝতে পেরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।শাওন থেমে গিয়ে বললো,’তুমি এদিক দিয়ে যাও আমি ঐ দিক দিয়ে যাচ্ছি।শর্টকাট হবে।দুপাশ থেকে ধরবো’
মেধা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।সে যে পথ দিয়ে গেলো সেটা একটু জলদি শেষ হলো।ছেলেটা বাসের অপেক্ষা করছে।শাওনও এগিয়ে আসছে এদিকে।মেধা ছেলেটার থেকে চোখ সরিয়ে দেখতে পেলো রোডের অপর প্রান্তে সেম পোশাকে আরেকটা ছেলেটা গান তাক করেছে শাওনের দিকে।মেধা দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কথা বাদ দিয়ে ছুটে গেলো শাওনের দিকে।শাওন খেয়াল করলোনা।সে আস্তে আস্তে এগোচ্ছে ঐ ছেলেটাকে ধরবে বলে।মেধা ছুটে এসে শাওনকে সরিয়ে ফেলে দিতেই গুলি তার হাতে লাগলো।শাওন নিচ থেকে উঠে মেধাকে আগলে ধরে ফেলেছে।যে দুজন হামলাকরী ছিল তারা পালিয়েছে।মেধা হাত চেপে ধরে বললো,’আপনি ওদের ধরুন।’
শাওন মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো যে ছেলেটা মেধাকে শুট করেছে তাকে বাসে ওঠা ছেলেটা শুট করে বাসে উঠে গেছে।শাওনের ঘটকা লাগলো।সে বাসটাকে আটকাতে পারলোনা।
মূহুর্তেই বাস চলে গেছে।শাওন মেধাকে ধরে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করলো কিন্তু সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে।বাসে ওঠা ছেলেটা এই ছেলেটাকে কেন মারলো তা মাথায় ঢুকছেনা।
মেধাকে কাছের একটা হসপিটালে নিয়ে আসলো সে।
বাকিদের কনফার্ম করে ঐ লাশটাকে সার্চ করতে গেলো সাজিদকে সাথে নিয়ে।ছেলেটার কাছ থেকে কিছুই পাওয়া গেলোনা একটা গান বাদে।মানিব্যাগ ও না।
-‘মেধার সাথে রেদোয়ানের কেস সম্পূর্নটা জড়িয়ে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।মেধাকে ভুলবশত গুলি মেরেছে বলে বাকি ছেলেটা ঐ ছেলেটাকে শুট করে চলে গেছে।ছেলেটা আমায় না মেরে মেধাকে মেরেছে এটা তার দোষ।শুধু তাই নয়।ঐ দিন আমাদের সবাইকে শুট করে ভুলেও মেধার গায়ে গুলি ছোড়েনি কেউ।তার মানে মেধা ওদের কিছু হয়??’
——
মেধা যখন চোখ খুললো হাতে ব্যান্ডেজ অবস্থায় একটা বদ্ধ ঘরে নিজেকে পেলো।রুমটাতে একটা বিছানা,চেয়ার টেবিল ছাড়া আর কিছু নেই।দরজা জানালা সব বন্ধ।একটা লাইট জ্বালানো শুধু।তার কাছে যে গান থাকার কথা তার একটাও নেই।হাত ধরে উঠার চেষ্টা করলো মেধা।কিন্তু প্রচণ্ড ব্যাথার সঙ্গে পেরে উঠলোনা।সে তো হসপিটালে থাকার কথা তাহলে এই বদ্ধ ঘরে কি করে আসলো।বাকিরা কোথায়??যদি রকি এমন করে থাকে তাহলে সে এমন করে আটকে রাখবে কেন?আমি তো বললাম আমার কাছে ক্লিপ নেই এখন।তাহলে আমাকে এখানে কে নিয়ে আসলো। কেন আনলো??
এসব ভেবে নিচে বসে আর্তনাদ করছে সে।কষ্ট হচ্ছে এভাবে নিচে বসে থাকতে।
কান্না করার সময় হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে সজাগ হয়ে গেলো মেধা।ঘুরে সেদিকে চোখ রাখলো।
চলবে♥