আষাঢ়ে প্রেমের গল্প পর্ব -১১+১২

#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ১১

বর্ণ যখন প্রথমবার হ্যালো বললেন তখনও আমি জবাব দিলাম না। এবার বর্ণ বেশ বিরক্তি নিয়েই বললেন,

— কে বলছেন আপনি?

আমি এবার হালকা গলায় বললাম,

— মেহুলিকা।

— মেহুলিকা! তুমি আমাকে কল ও দিয়েছো? রিয়েলি! আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। একটা চিমটি কাটো তো আমাকে।

— ফোনে কীভাবে চিমটি কাটা যায় তাঁর মাধ্যম আমার জানা নেই। জানা থাকলে অবশ্যই দিতাম।

— ধুর! তুমি কী একটু ও রোমান্টিক হতে পারো না? ভালো লাগে না আমার।

— আপনার ভালো লাগার জন্য কী? এখন আমাকে রোমান্টিক কীভাবে হওয়া যায় সেটা জানতে হবে?

— তোমার প্রশ্ন কী শেষ হবে মেহুলিকা? এবার এসব ছাড়ো। আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো এখন।

— হুম বলুন।

— কী করছো তুমি মেহুলিকা?

— এই কথাও আবার এত মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে?

— অবশ্যই। আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেই হবে।

— হুম বুঝলাম।

— তো বলো, কী করছো এখন?

— কিছু না, এমনি বসে আছি। আপনি?

— আমি ও সেম।

–আচ্ছা আপনি এখন যেখানে আছেন ওখানে কী কোনো ছোট বাচ্চা আছে?

— কেন? এটা মনে হলো কেন?

— না,ছোট বাচ্চারা যখন কোনো খেলনা দিয়ে খেলে তখন যেই আওয়াজ হয়। এটা এখন আপনার ওপাশ থেকে পাচ্ছি।

— তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান মেহুলিকা।

— মেয়েরা বুদ্ধিমান হয় না বুদ্ধু। মেয়েরা বুদ্ধিমতী হয়।

— ওই একই হলো সব।

— মোটেও একই জিনিস না সব।

— আচ্ছা, ম্যাডাম আমিই ভুল। আপনিই ঠিক বলেছেন।

— এত কিছু না বলে যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলুন।

— হুম, তুমি ঠিক ধরেছো। আমার সামনে আমার বোনের মেয়ে। মানে আমার ভাগ্নী বসা। ও খেলছে বিছানায় বসে বসে খেলনাপাতি দিয়ে।

— বাহ্ বয়স কত ওর?

— এইতো, এক বছর হলো কিছুদিন আগে।
— মাশাল্লাহ্। নাম কী বাবুর?

— আয়রা।

— ওরে বাবাহ্, ওর নাম কী আপনার পায়রাগুলোর সাথে মিলিয়ে রেখেছেন না কি?

— হিহি, তুমি বুঝলে কীভাবে?

— আমি নিশ্চিত হয়ে বলিনি। আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছি আর লেগে গেছে।

— হাহা, ভালোই কথা জানো দেখছি।

— কথা আবার মানুষ জানে কীভাবে? কথা তো মুখ থেকে বের হয়। কথা কী জানার জিনিস না কি?

— তুমি না পারোও বটে মেহুলিকা!

— আপনার কাছে একটা প্রশ্ন ছিল আমার। আসলে ঠিক প্রশ্ন না আমি একটা জিনিস জানতে চাই আপনার কাছে।

— হুম বলো।

— যখন আপনি আমাকে চিরকুট লিখে পাঠাতেন তখনকার কথা এটা। পায়রাগুলো তো আপনার ছিল। তাহলে হিসাবমতে পায়রাগুলো আপনাদের বাসার ছাঁদ থেকে আসার কথা। তাহলে, আপনাদের বাসার ছাঁদ থেকে না এসে পায়রাগুলো ; আপনাদের পাশের বাসার ছাঁদ থেকে কেন আসতো?

— আমি খাবার ছুঁড়ে দিতাম আমাদের ছাঁদ থেকে ওই ছাঁদে। তাই, পায়রাগুলো তখন ওই ছাঁদ থেকেই আসতো।

— বাহ্ কী বুদ্ধি মাথায়! এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমান কীভাবে? বালিশে আপনার মাথা আটে?

— হুম, আটে আটে! হাহা!

— শুধু শুধু হাসবেন না বলে দিলাম।

— আচ্ছা, যাও হাসবো না আর।

–আচ্ছা, আপনি যখন চিঠিগুলো লিখতেন তখন তো আপনি বাসায় ছিলেন না। তাহলে চিঠিগুলো কীভাবে লিখে পাঠাতেন?

— কে বলেছে? আমি ছিলাম না। আমি তখন বাসায়ই ছিলাম।

— কই আমি তো একবারও দেখিনি। ওই রুমেও তো আপনি ছিলেন না।

— ওই রুমে ছিলাম না। কিন্তু, বাসায় ছিলাম। তুমি তো বাসা থেকে বের হও না বেশি। বাসা থেকে বের হলে ঠিকই দেখতে।

— হুম, আচ্ছা আমি এখন রাখছি।

— এত তাড়াতাড়ি? থাকো না আরেকটু।

— পরে আবার কথা হবে। এখন কাজ আছে ; রাখছি এখন।

— আচ্ছা, তোমার ফেসবুক আইডি নেই মেহুলিকা?

— হুম, আছে তো। কিন্তু কেন?

— কেন মানে? তোমার আইডির নাম বলো। আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাবো।

— আপনার কিছু করতে হবে না৷ সময় হোক আমিই রিকুয়েষ্ট দিবো আপনাকে। এখন রাখছি বায়।

আমি কলটা কেটে ফোনটা বিছানার একপাশে রেখে দিলাম। চিন্তা হচ্ছে খুব, মনে হচ্ছে কোনো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছি আমি।

কিছুক্ষন পরে ফোন চেক করে দেখি বর্ণ ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়ে রেখেছে। আমি সাথে সাথেই একসেপ্ট করিনি। আমার কথা শুনেনি। অতএব এখন ওনার শাস্তি হলো তিন-চার দিন ঝুলে থাকা। এখন থাকুক ঝুলে। আমি আমার সময়মতোই রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করবো।

এর পাঁচ মাস পর বর্ণ একদিন আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন যে উনি বাসায় আসছেন। আমিও মনে মনে বেশ খুশি হলাম উনি বাসায় আসছেন শুনে।

বিকালবেলা বারান্দায় গিয়ে দেখি বর্ন হাজির। আমাকে দেখে হাত নাড়িয়ে বোঝাচ্ছে যে সে এসেছে। আমিও ইশারা দিয়ে বোঝালাম যে আমি তাঁকে দেখেছি।

বর্ণ বারান্দায় এসে আমার সাথে কথা বলতে চাইলে; আমি বর্ণকে থামিয়ে দিয়ে বললাম যে, আমরা রাতে কথা বলবো।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি শুধু অপেক্ষা করতে লাগলাম যে, কখন আব্বা আম্মা ঘুমাবে আর আমি বর্ণের সাথে একটু কথা বলবো। ওইদিন আব্বা, আম্মা ঘুমাতে গেলেন রাত একটায়। সাধারণত আব্বা, আম্মা দুজনেই বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু আজকে কী হলো কে জানে। আজকে একটু দেরি করেই ঘুমাতে গেলেন। আমি আর কী করবো? আব্বা, আম্মা ঘুমাতে যাওয়ার পর আস্তে করে রুমে ঢুকে রুম ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলাম। এরপর খুব সাবধানে বারান্দায় ঢুকলাম।

বারান্দায় গিয়ে দেখি, বর্ণ সাহেব বারান্দায় বসে বসে ঝিমাচ্ছেন। আমি এবার মজা করে বর্ণকে রাগানোর জন্য বললাম,

— বাহ্ বারান্দা এত পছন্দ? বারান্দায়ই ঘুমিয়ে পড়েছেন দেখছি। আচ্ছা থাক, আপনি ঘুমান আমি এখন যাই।

বর্ণ এরপর বসা থেকে উঠে একবারে আমাকে বললেন,

— আমি মোটেও ঘুমাচ্ছি না। তুমি যাচ্ছো কোথায়? ইশ্ মেহুলিকা ভালো লাগে না কিন্তু আমার।

— ভালো না লাগলে আর কী করার থাকতে পারে বলুন? ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যায়।

— ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যায়। এটা তোমাকে কী বললো? এইসব অদ্ভুত বিদ্যা কে শেখায় তোমাকে?

— যে-ই শেখাক তাতে আপনার কী?

— আমার অনেক কিছু। এইসব অদ্ভুত আজগুবি বিদ্যা শিখে তুমি আমার উপরে প্রয়োগ করো। আমি তো সরল সোজা মানুষ তাই কিছু বলতেও পারি না।

— কী! আপনি আর সরল সোজা? বাহ্ আমি তো জানতাম আপনার মনে জিলিপির মতো প্যাঁচ।

— হুম, তোমাকে বলেছে তো!

— আপনি কিন্তু ঝগড়া করছেন বলে দিলাম!

— করলে করেছি।

— আপনার ঝগড়া শেষ হলে বলুন কী বলবেন।

— তোমাকে অনেক খুশীর একটা খবর দিবো। জানো আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। আমি কানাডায় চলে যাচ্ছি।

–মানে!

— হ্যাঁ, আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব রেডি। এখন ২৮ তারিখে আমার ফ্লাইট।

— কবে হলো এত কিছু?

— বেশ কিছুদিন আগেই।

— বেশ কিছুদিন আগে আর আপনি আমাকে এখন বলছেন?

— কেন তুমি খুশী হওনি?

— হুম হয়েছি, তবে আগে জানালে আরও খুশী হতাম।

— আমি আসলে সরাসরি তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম কথাটা। তাই তোমাকে আগে জানাইনি।

— দেশে আসবেন কবে?

— আমার ইচ্ছে ওখানেই সেটেল হয়ে যাওয়া। দেশে ঘুরতে আসবো তবে ওখানেই সেটেল হয়ে যেতে চাই।

— হুম বুঝলাম।

— হুম, ঘুমাবে না?

— হ্যাঁ, কিন্তু আরেকটু পরে। কালকে ক্লাস নেই। তাই দেরিতে ঘুমালেও সমস্যা নেই।

— ওহ, চলো আমরা তাহলে গল্প করি।

— আচ্ছা,

— বিকালে কথা বললে না কেন?

— আম্মা, আব্বা সবাই তখন বাসায় কীভাবে কথা বলবো আমি?

— তুমি আংকেল আন্টিকে এত বেশী ভয় পাও কেন?

— আমি না, ওনারা আমাকে নিয়ে বেশি ভয় পান।

— হ্যাঁ, তোমাকে এত বেশি পাহারা দিয়ে কেন রাখে বলো তো? কারো সাথে কথা বলতে দেন না তোমাকে। কারো মিশতে দেন না বেশি। বাইরেও যেতে দেন না। এটা আসলে কোনো জীবন হলো? এরচেয়ে তো জেলখানা ভালো।

— সবকিছুর পেছনেই একটা কারণ থাকে বর্ণ। এসবের পেছনেও আছে এবং ছিল।

— আমি না কিছুই বুঝতে পারলাম না। একটু খোলাখুলি ভাবে বলো তো।

— আসলে আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী আমার বড় আপা। ওনার জন্যই আব্বা, আম্মা আমাকে জেলখানার মতো বন্দী করে রেখেছেন।

— তোমার বড় আপা। মানে ওই আপাটা? ওই যে কী নাম যেন অমালিকা। হ্যাঁ, অমালিকা-ই। অমালিকা আপু কেন তোমার সাথে এমন করবে?

— অমালিকা আপা আমার বড় আপা নন।

— মানে?

— অমালিকা আপা আমার মেজ আপা।

— তাহলে তোমার বড় আপা কে?

— চন্দ্রালিকা আপা।
#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ১২

— আমার বড় আপার নাম চন্দ্রালিকা আপা।

— আচ্ছা ওয়েট, তোমরা তো দুবোন। তুমি আর অমালিকা আপু। তাহলে এই চন্দ্রালিকা-টা আবার কে? একটু বুঝিয়ে বলো প্লিজ। সবকিছু আমার মাথার একহাত উপর দিয়ে যাচ্ছে।

— আমরা এখন দুবোন কিন্তু আমরা আসলে তিনবোন ছিলাম।

— মানে?

— হুম, এটাই সত্যি।

— তাহলে, তোমার বড় আপুর সঙ্গে তোমাকে এভাবে পাহারা দিয়ে রাখার কী সম্পর্ক?

— হুম, সব বলছি আমি।

— হুম বলো।

— আমি, অমালিকা আপা এবং চন্দ্রালিকা আপা। আব্বা আর আম্মা। আমাদের পাঁচ জনের পরিবার খুব সুন্দর করেই চলছিল। আমার কোনো বড় ভাই নেই। কিন্তু, এতেও আব্বা কিংবা আম্মা কারোই আফসোস ছিল না। আমাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল। আব্বা আম্মা কখনোই কিছু বলতেন না। এবার আসল ঘটনায় আসি। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি। অমালিকা আপা তখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে। আর বড় আপা মানে চন্দ্রালিকা আপা তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। অমালিকা আপা আর চন্দ্রালিকা আপা পিঠাপিঠি ছিল। মানে এক বছরের ছোট বড় ছিল আরকি। বড় আপা আর মেজ আপা দুজনের চেহারায় যে-রকম মিল ছিল ; মনের মিল ও ঠিক সেরকমই ছিল।

হঠাৎ একদিন আম্মা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন আলমারির দরজা কিছুটা খোলা৷ আম্মা আলমারির দরজা ঠিক করে লাগাতে গিয়ে দেখেন, যে ডয়ারে আম্মা গহনা রাখতেন সেই ডয়ারও খোলা। আম্মা ডয়ারটা ঠিকমত খুলে দেখেন সেখানে একটা; গহনা তো দূরের কথা কোনো কানাকড়ি ও নেই। আম্মা ভেবেছিেন বাসায় হয়ত চোর ঢুকেছে। আম্মা তাড়াতাড়ি করে আব্বাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেন। আব্বা ঘুম থেকে উঠে দেখেন আব্বা যেখানে;টাকা রাখতেন সেখানে কোনো টাকা নেই।

অনেক খোঁজাখোজি করেও কিছু পাওয়া গেল না। আম্মা তখন চন্দ্রালিকা আপার ঘরে গিয়ে দেখেন আপা নেই। আপার টেবিলে একটা কাগজে ছোট্ট করে লিখা ছিল,

” আমাকে আর তোমরা খুঁজো না। আমি আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে পালিয়ে যাচ্ছি। ”

আম্মা কাগজটা পরেই সাথে সাথে একটা চিৎকার দিলেন। আম্মার চিৎকার শুনে আমি, আব্বা আর অমালিকা আপা কোনো রকমে দৌড়ে এলাম। পরে আমরা গিয়ে শুনি আসলে এই ঘটনা। বাসার গহনা, টাকাপয়সা আসলে কিছুই চুরি হয়নি। চন্দ্রালিকা আপা-ই তাঁর সাথে এগুলো নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

— আল্লাহ্ তারপর কী হলো?

— তারপর আব্বা খুব রেগে গেলেন। আব্বার কথা ছিল একটাই যে, আপার যদি ওই ছেলেকে এতই ভালো লাগতো তবে; সেটা আব্বাকে বললেই পারতো আপা। আব্বাকে বললে আব্বা নিজেই কিছু একটা ব্যবস্থা করে তাঁদের দুজনকে মিলিয়ে দিতেন। কিন্তু, আপার হঠাৎ এভাবে পালিয়ে যাওয়ার;কোনো যুক্তিগত কারণ খুঁজে পেলেন না আব্বা।

আব্বা ঠিক করলেন যে তিনি আপাকে খুঁজে বের করবেন। দরকার হলে আপাকে বাসায় এনে তাঁর পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে দেবেন। কিন্তু, তবুও আপাকে খুঁজে পাওয়া চাই।

কয়েকদিনের ভেতরেই আব্বা চন্দ্রালিকা আপার বন্ধু বান্ধব যা কিছু আছে সব খোঁজ;খবর করে জানতে পারলেন আপা কার সাথে পালিয়েছে। এরপর পুলিশ নিয়ে শুরু হলো খোঁজাখোজি। ইতিমধ্যে ওই ছেলের নাম, বাড়ির ঠিকানা ও উদ্ধার করে ফেললেন সবাই মিলে। এরপর ঠিকানা অনুযায়ী ছেলের বাসায় গিয়ে জানলেন ছেলে না কি বাসায় একাই থাকে। কিন্তু ছেলেটা তখন বাসায় ছিল না। রুমে তালা দেওয়া ছিল। কিছুদিন ধরেই না কি বাসায় আসছিলেন না উনি। তবুও রুমের তালা ভেঙে রুমে ঢোকা হলো। কারন যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায়। যদি জানা যায় যে, আপাকে নিয়ে এখন কোথায় আছেন উনি।

পুরো রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছু পাওয়া গেল না। রুমে বিকট গন্ধ। দুর্গন্ধের মাত্রা এতটাই বেশি যে ঠিকমত শ্বাস নেওয়া যাচ্ছিল না। এরপর লাস্টে খাটের নিচ থেকে একটা বড় বস্তা উদ্ধার করা হলো। এতবড় বস্তা এভাবে মুখবন্ধ অবস্থায় দেখে কৌতুহলের বসত পুলিশের লোকজনরা বস্তার মুখটা খুলে দেয়। এরপর বস্তার মুখটা খুলেই অবাক হয়ে গেল সবাই। কারন এত দুর্গন্ধের উৎস ওই বস্তাই ছিল।

— ওই বস্তাতে আসলে কী এমন ছিল যে, এত গন্ধ বের হচ্ছিল?

আমার বুকটা ভারী হয়ে গেল বর্ণের এই প্রশ্নে। আমি বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বললাম,

— আমার আপার লাশ!

— আল্লাহ্ কী বলছো এইসব?

— হুম, জানো**** আপাকে মেরে আপার লাশ বস্তায় ভরে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। আপাকে কখনো ভালোই বাসেনি নরপশুটা। আপার আনা টাকা, স্বর্ন আর গহনার লোভে এসব করেছিল। আপা বুঝতে পারেনি। যাঁর ফলে এতবড় একটা বোকামি করে বসে। যখন কাজ হয়ে গেল জানো**** আপাকে মেরে বস্তাবন্দি করে রেখে গেল!

— ইস্ কতটা ভয়ানক!

— আব্বা এসব দেখে স্ট্রোক ও করেছিলেন। আম্মা এসব শোনা মাত্রই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। অমালিকা আপা পুরো বোবা হয়ে গিয়েছিলেন বলতে গেলে। কয়েকদিন অবধি কারো সাথে কথাই বলেননি।

— আমি কী বলবো বুঝতেই পারছি না। আমি আসলে এসবের কিছুই জানতাম না।

— আপনি এখানে থাকতেন না বিধায় জানতেন না। আপনার আব্বা আম্মা সবাই এসব জানে।

— হুম, আজকে বুঝতে পারলাম আসলে কেন এতটা খেয়ালে খেয়ালে রাখা হয় তোমাকে।

— হুম, আব্বা আম্মা এখনও মনে করেন যদি আমিও এরকম কিছু করে ফেলি। আমিও ওনাদের মনের অবস্থাটা বুঝতে পারি। তাই এসব নিয়ে কখনো কিছু বলি না। একটা বাবা মায়ের কাছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তাঁদের সন্তান। তাই সন্তানের ভালোর কথা চিন্তা করেই তারা এসব করে থাকেন। একটা মানুষ যদি আমাকে এভাবে আঁটকে রেখে শান্তি অনুভব করেন। তাহলে আমার আর কী বলার থাকতে পারে বলুন?

— হুম।

— আমার আজও বিশ্বাস হয় না আপার মতো একটা বুদ্ধিমান মেয়ে কীভাবে এমন বোকামি করতে পারে।

— ভালোবাসা মাঝে মাঝে মানুষকে অন্ধ করে দেয়। তখন ঠিক ভূল কিছুই মাথায় থাকে না। তখন একটাই ঝোঁক থাকে কীভাবে ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পাওয়া যায়। তাই হয়ত বলা হয়, ভালোবাসা ভালো কিন্তু এত অন্ধ ভালোবাসা ভালো না।

বর্ণের সাথে এত আলাপ আলোচনা করতে গিয়ে কখন যে এতটা সময় কেটে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি। ঘড়িতে দেখি গল্প করতে করতে রাত চারটার মতোন বেজে গেছে। আমি এরপর বর্ণকে বললাম,

— আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। আবার পরে কথা হবে আমি এখন যাচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।

— আল্লাহ হাফেজ।

পরেরদিন দুপুরবেলা বর্ণ হঠাৎ আমাকে ফোন দিলো৷ আমি আঁতকে উঠলাম হঠাৎ এভাবে ফোন দেওয়ায়। আম্মা দুপুরবেলায় ঘুমিয়ে ছিলেন তাই বিষয়টা খেয়াল করেননি৷ নাহলে, একটা না একটা বিপদে পড়তামই আমি। বর্ণের কলটা রিসিভ করেই বর্ণকে দিলাম এক ঝারি। বেচারা এমন হঠাৎ ঝারি খেয়ে চমকে গেছে। আমি এবার আবার ঝারি দিয়ে বর্ণকে বললাম,

— বলুন কী হয়েছে? এই অসময়ে ফোন দিয়েছেন কেন?

— তুমি একটু বাসা থেকে বের হতে পারবে মেহুলিকা।

— মানে?

— একটু বাইরে তো যেতেই পারো আমার সাথে?

— আমাকে যদি জীবিত অবস্থায় দেখতে চান তবে একথা আর কখনো মুখে আনবেন না। আম্মা শুনলে আমাকে মেরে মাটিতে পুঁতে রাখবে।

— উহুম, ভালো লাগে না আমার কিছু।

— কী ভালো লাগে তাহলে আপনার? ভালো না লাগলে নেই। ভালো না লাগলে চুপচাপ কলটা কেটে একটা ঘুম দিন। তারপর ঘুম থেকে উঠে দেখবেন সব ভালো লাগবে। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা বলে রাখি আপনাকে। আর কখনো আমাকে এভাবে হঠাৎ করে ফোন দেবেন না। কেউ যদি কিছু দেখে বা শোনে তাহলে আমাকে পাটাতে পিশে ফেলবে একেবারে।

— হুম বুঝলাম, তোমার কোনো ভালো ফ্রেন্ড নেই? যাকে তোমার আম্মু আব্বু চেনে অথবা ভালো জানে।

— কেন বলুন তো? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করলেন?

চলবে…
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here