#তুমি_আমি_আমরা💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০৩
“এক বিন্দু জল যদি চোখ দিয়ে পড়ে, সেই জলের ফোটা শুধু তোমার কথা বলে.. মনের কথা বুঝনা তুমি মুখে বলি তাই, শত আঘাতের পরেও তোমায় ভালোবেসে যাই..!!” [সংগ্রহিত]
কথাগুলো মনে মনে আওড়ালো ইসমাত।তারপর নিজের মনেই হেসে উঠলো।কি বেদঁনা সেই হাসিতে।ইসমাত চোখের জল মুছে আকাশপানে তাকালো।দৃষ্টি তার শূন্যে স্থির।শুধু সে চাইছে মনের কষ্টগুলো ওই নীল আকাশে উড়িয়ে দিতে।
কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব?নাহ! সম্ভব না।মনের কষ্টগুলো বক্ষ পৃঞ্জিরায় ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে।বাহির থেকে চেঁচামেচি’র শব্দ আসছে।ইসমাতের সেদিকে কোন ধ্যান নেই।এটা এখন থেকে হচ্ছে না বিগত এক ঘন্টা যাবত সবাই দরজা ধাকাচ্ছে।ইসমাত তাও দরজা খুলছে না।কেন? খুলছে না জানেন?কারন বৃত্ত এসেছে।আর ইসমাত বৃত্তের সামনে যেতে চাইছে না।বাহির থেকে বৃত্তের করূন গলা শোনা যাচ্ছে।
” ইসমাত প্লিজ দরজাটা খুলো।এটলিস্ট আমার কথাটা তো শোনো।প্লিজ ইসমাত। ”
কিন্তু ইসমাত তো শুনতে চায় না বৃত্তের কথা।আর বৃত্তই বা কেন এসেছে?কেন মিছে মায়া বাড়াতে এসেছে সে?ইসমাততো দিব্বি কষ্টগুলো আকড়ে ধরে দিন কাটাচ্ছিলো।
————
বৃত্ত সেই সকালেই ইসমাতদের বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে।বৃত্তকে এইখানে দেখে সবাই অবাক হয়েছিলো।সেই সাথে মিষ্টার এন্ড মিসেস শেখ তো ছেলেকে দেখে রেগে মেগে শেষ।ইসমাতের বাবা,মা, ভাইরও রাগ হচ্ছিলো কিন্তু যেখানে মিষ্টার আর মিসেস শেখ আছে তাই তারা দমে গেছেন।মিষ্টার আর মিসেস শেখ ছেলেকে কিছু বলতে নিবেন তার আগেই বৃত্ত তাদের সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়ে। হাতজোড় করে হাউমাউ করে কাঁদে।নিজের করা এতোবড় একটা পাপের জন্যে ক্ষমা চায়।নিজের শশুড় শাশুড়ির পায়ে পর্যন্ত ধরতে উদ্যত হয়েছিলো।বৃত্ত অস্থির হয়ে যায় কাঁদতে কাঁদতে। বার বার বলছে,
” আমি পাপ করেছি আমাকে তোমরা শাস্তি দেও।আমি আমার ইসমাতকে আমার সন্তানকে কষ্ট দিয়েছি। আমাকে মেরে ফেলে তোমরা এই নরক যন্ত্রনা আমি সইতে পারছি না।আমাকে মেরে ফেলো নাহলে আমার ইসমাতকে বলো যেন আমাকে ক্ষমা করে আমার বুকে ফিরে আসে।”
সবাই থেমে যায় বৃত্তের এমন হাহাকার দেখে।একটা ছেলে ঠিক কতোটা কষ্ট পেলে এইভাবে কাঁদতে পারে।সবার মন গলে যায়।তবুও তারা বলে যে ইসমাতের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত হবে।ইসমাত যা বলবে তাই হবে।সবটা নির্ভর করবে ইসমাতের উপর।বৃত্ত জানতে চায় ইসমাত কোথায়?কাজের মেয়েটি এসে জানায় ইসমাত বৃত্তের আসার কথা শুনেই ঘরের দরজা আটকে বসে আছে।অস্থির বৃত্ত উঠে দাঁড়ায় এলোমেলো পা ফেলে ইসমাতের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।তারপর একেরপর এক কথা বলে ইসমাতকে ডাকতে থাকে।কিন্তু ইসমাত একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেনি এই একটা ঘন্টায়।
———–
বৃত্ত কাঁদতে কাঁদতে দরজার সামনে বসে পড়ে।বলে,
” একবার শুধু একবার আমার কথাটা শোনো ইসমাত।তুমি চাইলে আমি আর কোনদিন তোমার সামনে আসবো না।দরকার পড়লে নিজেকে শেষ করে দিবো।কারন বেঁচে থাকলে আমি তোমার কাছে না এসে পারবো না।তার থেকে ভালো আমি মরে যাই।”
বৃত্তের এইসব কথা শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ইসমাত দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলে বৃত্তকে চর মেরে দেয়।আকস্মিক এমন হওয়ায় সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।কোনকালেও কেউ ভাবতে পারেনি যে ইসমাত বৃত্তকে চর মারবে।যেই ইসমাত কোনদিন বৃত্তর সাথে উঁচু গলায় কথা বলে নি আজ সেই ইসমাত কি-না বৃত্তকে চর মারলো।
বৃত্ত গালে হাত দিয়ে কান্না করছে।ইসমাতের মুখ রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।ইসমাত বললো,
“কেন এসেছেন এখানে?? সরেই তো এসেছি আপনার জীবন থেকে?আর কি চান?এখন আমাকে দয়া দেখাতে এসেছেন?”
থামলো ইসমাত। তারপর নিজের পেটে হাত দিয়ে কান্নাচোখে তাকালো বৃত্তের দিকে।বললো,
” আমি বুজতে পারছি, আপ..আপনি আমার বাচ্চাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিতে এসেছেন তাই না?আমাকে এখন আপনার সাথে নিয়ে যাবেন।তারপর আমার বাচ্চা পৃথিবীতে এলে আমাকে আমার বাচ্চা থেকে আলাদা করে দিবেন তাই না?আমি এটা হতে দিবো না।তার আগেই আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।আমাকেও পাবেন না আমার বাচ্চাকেও পাবেন না।”
কথাগুলো বলে শেষ করতে পারলো না তার আগেই বৃত্ত ইসমাতকে নিজের সাথে জোড়ে আকড়ে ধরে।ইসমাতের মাথাটা ওর বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
” শান্ত হও ইসমাত! আমি সন্তানের জন্যে আসেনি।আমি তোমার জন্যে এসেছি।হ্যা মানছি আমার সন্তানও দরকার।কিন্তু তার সাথে সন্তানের মাকেও আমার প্রয়োজন।আমার তোমাদের দুজনকেই চাই।তুমি ছাড়া আমি নিঃস্ব।প্লিজ ইসমাত আমায় ক্ষমা করে দেও।তোমার বৃত্তকে ক্ষমা করে দেও ইসমাত।আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি আমাকে শাস্তি দেও।তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।”
ইসমাত বৃত্তকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।ইসমাতকে উন্মাদের মতো লাগছে।ইসমাত দু-হাতে নিজের চুল খামছে ধরলো।বলে উঠে,
“আমার কোন কষ্ট নেই| হয়ত এই পৃথিবীতে সবথেকে সুখী আমি| ভালবাসি বলে আমি সুখি| ভালবাসতে পারি বলে আমার কষ্টগুলো আমাকে ছুঁতে পারেনা| তোকে আবারো বলছি, আমার কোন কষ্ট নেই| আমি জানি, যে হৃদয় ভালবাসতে পারে তার কোন কষ্ট থাকেনা| তুই কাঁদছিস? কেন কাঁদছিস?আমার কথা শুনে তোর চোখে জল? ভেবে ভেবে অবাক হচ্ছি… কেন কাঁদছিস? তুই যে ভালবাসতে পারিসনা তা তো নয়| শুধু তোর ভালবাসার মানুষটা হয়তো আমি নই| আমার জন্যে তোর মনে কোনদিন ভালোবাসা তো বাদ দিলাম এতোটুকু মায়াও জন্ম নেয়নি কোনদিন।তাহলে?তাহলে আমি কেন তোর কাছে আবার ফিরে যাবো বল?বল আমাকে কেন যাবো আমি তোর কাছে?আমি কি পেয়েছি এই দু বছরের সংসার জীবনে তোর থেকে?কিছুই না।বাড়ি,গাড়ি আর ব্যাগ ভরা টাকা দিলেই মানুষ সুখী হয় না।মানুষের ভালোবাসা চাই।আর সেটা তুই আমাকে কখনোই দিসনি।তাহলে আমি কেন যাবো তোর কাছে?”
বৃত্ত উন্মাদ ইসমাতকে দেখছে।মেয়েটা কেমন পাগলাটে হয়ে গিয়েছে।বৃত্ত আগালো ইসমাতের দিকে।বৃত্তকে আগাতে দেখে ইসমাত পিছিয়ে যেতে নিলে বৃত্ত দুহাত ইসমাতের গাল স্পর্শ করলো।
ইসমাত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।বৃত্ত চোখ বুজলো।উপস্থিত সবার সামনেই ইসমাতের কপালে চুমু খেলো।গভীর ভালোবাসাময় সেই স্পর্শ। ইসমাতটাও কেমন শান্ত হয়ে গেলো।ইসস! এমন ভালোবাসায় ভরপুর স্পর্শ পাওয়ার জন্যেই না ইসমাতটা কতো অপেক্ষা করেছিলো আজ তার অবশান ঘটলো।বৃত্ত খুললো
ইসমাতের মায়াভরা চেহারাটা খানিক দেখে নিয়ে ধীর গলায় বলে,
” ভালোবাসি ইসমাত।অনেক বেশি ভালোবাসি।হয়তো ভালোবাসা কি আমি কয়েকদিন আগেও বুজতাম না।কিন্তু তুমি চলে যাবার পর।প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত আমায় বুজিয়েছে আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি।তোমার শুন্যতাগুলো বার বার আমাকে জানিয়েছে যে আমি তোমায় ভালোবাসি।হ্যা ভালোবাসি।বড্ড বেশি ভালোবাসি আমার বাবুর আম্মু!”
বৃত্তের কথায় ইসমাত আর নিজেকে সামলাতে পারে না।বৃত্তের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।সেই কান্নায় রয়েছে প্রাপ্তি। নিজের ভালোবাসা পাবার প্রাপ্তি। আজ ইসমাত পূর্ণ। নিজের স্বামির ভালোবাসায় সে মাখামাখি হয়ে আছে।একটা মেয়ের কাছে তার স্বামির ভালোবাসা কি?তা সে নিজেরটা নিজেই উপলব্দি করতে পারে। কিন্তু সেটা ভাষায় প্রকাশ করে বুজাতে সে অক্ষম।
এদিকে পরিবারের প্রতিটা মানুষ আজ সাক্ষি হয়ে রইলো এই নতুন ভালোবাসার চাঁদরে মুরিয়ে যাওয়া দম্পত্তিদের এই সুখময় মুহূর্তের।সবারই চোখে জল কিন্তু ঠোঁটে সন্তুষ্টির হাসি।
আহা! প্রতিটা ভালোবাসাই যদি এইভাবে পূর্ণতা পেতো।প্রতিটি স্বামিই যদি নিজের স্ত্রীর গুরুত্ব বুজতো।তাহলে এতো এতো ডিভোর্স হতো না।এই পবিত্র বন্ধনের এইভাবে প্রতিনিয়ত বিচ্ছেদ হতো না।আল্লাহ্ তায়ালা যেন সবাইকে যেন এই মধুর সম্পর্কের গুরুত্ব বুজার তৌফিক দান করে আমিন।
#চলবে_________
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।