#মেঘের_ওপর_আকাশ_উড়ে
#Part_06
#Writer_NOVA
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পুরো পৃথিবী। শুধু ঘুম নেই মৃদুলের চোখে। সাবা হাত-পা ছড়িয়ে এলোমেলোভাবে বিছানায় শুয়ে আছে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। গলির মুখে একটা কুকুর একটানা ঘেউ ঘেউ করে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। বাইরের টিমটিম আলোর লাইটের আলো ভেন্টিলেটর ভেদ করে রুমে এসে উক্তি দিচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মৃদুল। হুট করে ঘুমটা ভেঙে গেছে।দুপুরে চিংড়ি মাছ খাওয়ার ফল ভোগ করছে এখন। সারা শরীরে এর মধ্যে লাল লা রাশ উঠে গেছে নিশ্চয়ই।যা ভীষণ চুলকাচ্ছে।সাবা ও মৃদুলের বাসা ওপর তলা নিচ তলা তফাৎ। তবুও প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি একটা সাবাদের বাসায় আসা হতো না তার।এত রাতে ঔষধ বা পাবে কোথায়?তাই চুপটি মেরে শুয়ে আছে। কিছু সময় এপাশ ওপাশ করে উঠে বসলো মৃদুল। একবার সাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। পুরো খাট দখল করে শুয়ে আছে। মৃদুলকে ওর সাথে ঘুমাতে বলেছিলো। কিন্তু সে জেদ করে নিচে শুয়েছে।বিরবির করে বললো,
— পাগলী মেয়ে! এতো অগোছালো মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি। আমি এতো গুছালো বলেই হয়তো ও এতো অগোছালো। ওড়না কোথায় আছে, জামা কোথায় আছে তারও ঠিকঠিকানা নেই। ঘুমের মধ্যে ওকে বাইরে নিয়ে ফেলে দিলেও হয়তো ওর হুশ ফিরবে না।
আস্তে করে বারান্দার দরজাটা খুলে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো মৃদুল। গলির মুখের কুকুরটা এখনো চেঁচাচ্ছে। তাতে মৃদুলের কপাল কুঁচকে গেলো। তা এখন সিগারেট খাওয়ার ভীষণ ক্রেভিং হচ্ছে। যদিও সে তুখোড় সিগারেটখোর নয়। তবুও মাঝে মাঝে বন্ধুদের পাল্লায় দুই -তিনটা অনায়াসে টানতে পারে। কিন্তু এখন তার কাছে সিগারেট নেই। কিছু সময় ছটফট করে রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। যেইমাত্র চোখ দুটো লেগে এসেছে ওর ওপর ধপ করে কিছু একটা পরলো। বিষয়টা বুঝতে ওর কিছু সময় লাগলো। যখন বুঝলো চেচিয়ে বললো,
— সাইব্বানিরে! ও আল্লাহ আমি আজ নেই।
সাবা ওর মাথাটা হালকা একটু তুলে ঘুম কাতুরে কন্ঠে বললো,
— কি হয়েছে?
— আল্লাহ গো আমায় বাঁচাও। এই তোর পুরো খাটেও কি হয় না? খাট থেকে পরলি তো পারলি আমার ওপরই পরতে হলো?
— ঘুমাতে দে মৃদুল।
মৃদুলের এখন চিনচিন করে রাগ উঠছে। মেয়েটার কি আসলেই মাথার কোন স্ক্রু ঢিলা নাকি? মাঝে মাঝে মৃদুলের তাই মনে হয়। খাট থেকে নিচে পরে গেছে তাও কোন হুশ নেই। মৃদুল অবশ্য ভুল বলেনি তখন। সাবা ঘুমালে দিন-দুনিয়ার হুশ থাকে না। অথচ মৃদুলের গায়ে সামান্য মশা বসলেই ওর ঘুম নষ্ট। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেছে সাবা। মৃদুলের অস্বস্তি লাগছে। হুট করে শরীরে ৫০ কেজি ভারের কিছু পরলে সে কি আদোও ঠিক থাকতে পারে? যদিও সাবার ওজন ৫০+। কোনরকম ঠেলেঠুলে সাবাকে ওর থেকে সরালো। উঠে লাইট জ্বালাতে গিয়ে পিঠ ধরে হালকা চেচিয়ে বললো,
— আল্লাহ আমার পিঠ!
ডিম লাইটটা জ্বালিয়ে সাবাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। কিন্তু বিপত্তিতে পরলো মৃদুল।সাবা ওর এক হাত জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো। মৃদুল ওর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো,
— আমি কি ওর সাথে ঘুমাবো? সকালে দেখলে কি ভাববে? সারা বাসা তো চেচিয়ে মাথায় তুলে ফেলবে।
মৃদুল নিজের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলো। ও দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে। কিছু সময় নিজের সাথে যুদ্ধ করে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
— একসাথে ঘুমাতে সমস্যা কি? আমার বউ তো।
মৃদুল এক হাতে নিচ থেকে বালিশ তুলে নিলো। তারপর সাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো। অদ্ভুত বিষয় হলো মিনিট পাঁচেকর মধ্যে মৃদুলের চোখে ঘুম এসে ভর করলো।
💞💞💞
সাবার উঠার আগেই মৃদুল উঠে গেলো। যাতে সাবা কিছুই জানতে পারলো না। সাবা উঠে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো। মৃদুলকে সে দেখতে না পেয়ে মনে মনে খুশি হলো। বিরবির করে বললো,
— যাক বাবা, আপদ বিদেয় হয়েছে।
দুই হাত নাড়িয়ে নাচতে আরম্ভ করলো। পেছন থেকে মৃদুল গম্ভীর কন্ঠে বললো,
— কোন আপদ বিদেয় হয়েছেরে সাবা?
মৃদুলের কন্ঠ পেয়ে সাবা নাচ বন্ধ করে নিজের কপালে একটা চাপর মারলো। তারপর পিছনে ঘুরে দেখলো মৃদুল দুই হাতে দুটো কফির মগ হাতে নিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সাবা, মৃদুলের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো,
— কোন আপদ, কিসের আপদ?
— আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। তাই ভনিতা না করে জলদী বল।
— তোর থেকে বড় আপদ আমার জীবনে আছে নাকি?
— ওহ তাহলে আমার কথা বলা হচ্ছিলো?
— হুম, ভেবেছিলাম তুই চলে গেছিস।
— কোথায় যাবো আমি?
— বাসায়।
— শ্বশুর বাড়ি বেড়ানো এখনো হয়নি তো।
— ইস, আসছে শ্বশুর বাড়ি বলার লোক।
— নে ধর।
মৃদুল একটা মগ সাবার দিকে বাড়িয়ে দিলো।সাবা এক ভ্রু উঁচু করে সন্দেহের দৃষ্টিতে বললো,
— হঠাৎ এতো ভালো ব্যবহার? কোন মতলব নেই তো? তোকে আমি হারে হারে চিনি।
— এর জন্যই বলে কারো ভালো করতে নেই। ভালো মনে নিজ হাতে বানিয়ে নিয়ে এলাম তা ভালো লাগলো না। যাঃ তোর খেতে হবে না। আমিই দুই মগ খেয়ে নিবো। আজকাল ভালো করলে ভালো নেই।
মৃদুলের সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলা কথাগুলো সাবাকে কিছু সময় ভাবালো। মৃদুল কফির মগ নিয়ে চলে যেতে নিলে সাবা বললো,
— থাক, এত কষ্ট করে যেহেতু এনেছিস তাহলে আর নিবি কেন? আমাকে দে। আমি কষ্ট করে খেয়ে নেই।
— কোন দরকার নেই, তোর কষ্ট করে খাওয়ার।
সাবা, মৃদুলের কথা না শুনে ছোঁ মেরে কফির মগটা নিয়ে গিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। অথচ মৃদুলের মনে তো প্রথম থেকেই শয়তানি বুদ্ধি খিচুড়ি পাকাচ্ছে। নয়তো সে কি নিজ হাতে কফি বানিয়ে নিয়ে আসে। সাবা কপাল কুঁচকে ছোট করে এক চুমুক দিলো। না, সব ঠিক আছে। তবুও মৃদুলের ভালো মানুষি তে তার ঢেঢ় সন্দেহ হচ্ছে। এ ছেলে তো এতো ভালো ব্যবহার করার মানুষ নয়। অপর দিকে মৃদুল মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। এক ধ্যানে সাবার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাবা খোঁচা মেরে বললো,
— তুই কিছু মিলাসনি তো? তোকে বিশ্বাস হয় না।
— এতো সন্দেহ নিয়ে খেতে হবে না। দে আমার কফি ফেরত দে।
— থাক, থাক লাগবে না। তুই এভাবে তাকিয়ে থাকিস না তো আমার সন্দেহ হয়।
মৃদুল কোন উত্তর দিলো না। মুচকি হাসলো। সাবা এবার বেশ বড় করে একটা চুমুক দিলো। মৃদুল এটারই অপেক্ষা করছিলো। সাবা মুখে কফি নিতেই মৃদুল কানের সামনে এসে বললো,
— জানিস সাবা তোর কফির মগে কি মিলিয়েছি?
সাবা চোখ দুটো রসগোল্লা করে কফি না গিলে মৃদুলের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর কথা শুনে কফি গিলতেও পারছে না, ফেলতেও পারছে না। বিস্মিত চাহনিতে মৃদুলের মুখের পানে তাকিয়ে আছে কি বলবে তা শোনার জন্য। মৃদুল একটা বিজয়ী হাসি দিয়ে বললো
— কিছুই মিলাইনি শুধু একটু থুথু দিছিলাম।
থুথুর কথা শুনে সাবা ফুস করে সব কফি মুখ থেকে মৃদুলের বুকের ওপর ফেলে দিলো। তাতে মৃদুলের টি-শার্ট কিছুটা ভিজে গেলো।ভেতর থেকে সব গুলিয়ে আসছে সাবার। ওড়না দিয়ে জিহ্বা,ঠোঁট মুছতে মুছতে মৃদুলকে ঝাঁঝালো গলায় বললো,
— খাচ্চোর ছেমরা। পিশাচ, সর সামনের থেকে। ওয়াক থু🤢। আমার বমি পাচ্ছে।
— ইট’স রিভেঞ্জ। গতকাল দুপুরে আমাকে জুঠা পানি খাওয়ার শাস্তি এটা। দেখ এবার কেমন লাগে!
সাবা এখন কথা বলার মুডে নেই। আরো কয়েকবার ওয়াক ওয়াক করতে করতে ওয়াশরুমে ছুটলো। মৃদুল হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পরলো। তবে এটা মিথ্যে কথা ছিলো। সে সাবার কফিতে মোটেও থুথু দেয়নি। শুধু ওকে শায়েস্তা করার জন্য মিথ্যে বলেছে। ওয়াশরুম থেকে সাবার ওয়াক ওয়াক করার আওয়াজ আসছে। একবার কান পেতে সেই শব্দ শুনে বিজয়ী ভঙ্গিতে হাসলো।তার প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে। তারপর আয়েশ করে নিজের কফির মগে বিশাল এক চুমুক দিলো। মুখের কফি টুকু শেষ করে বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে তা ধীরে ছাড়লো। প্রতিশোধ নিতে পেরে তার মনটা এখন বেশ ফুরফুরে। নিজে নিজে বলে উঠলো,
— আহ্ কি শান্তি!
#চলবে