হলুদ বসন্ত পর্ব -০৬

#হলুদ_বসন্ত
#পর্ব_০৬
#Eshika_Khanom

নুহাশ ইশারা করে আয়াতকে দেখিয়ে দিল। আদ্রাফ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর নুহাশকে বলল,
“ও হলো আয়াত, আমার কাজিন।”

নুহাশ বলল, “আচ্ছা আচ্ছা।”

আদ্রাফের দাদী দিলারা জাহান রেগে গিয়ে বললেন,
“এসব কি যা তা বলছিস আদ্রাফ? নিজের বউকে কেউ কাজিন বলে? এই নুহাশ, আয়াত আদ্রাফের বউ। কোনো কাজিন টাজিন নয়।”

আদ্রাফ মাথায় হাত দিল। নুহাশ প্রচণ্ড রকমের অবাক হলো। আদ্রাফের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,
“শয়তান পোলা! তুই বিয়ে করলি আর আমায় জানালি না? এক পেট এক্সট্রা দাওয়াত খাওয়াইতে কি বেশি টাকা যাইতো তোর?”

আদ্রাফ বলল, “আমি তো জানতামই না তুই দেশে ব্যাক করেছিস। তোকে আবার খাওয়াবো কেন?”

নুহাশ বলল, “ওহ এখন যেহেতু এসে পড়েছি তাই ট্রিট থেকে বাঁচার জন্যে তুই ভাবীকে কাজিন বানিয়ে দিলি। এমনিতেই তো ভাবীর উপর ক্রাশ খেয়ে বসেছিলাম। দাদী এখন না বললে তো লাইন মারা শুরু করতাম।”

আয়াত তখনো বোকার মতো দাঁড়িয়ে সব শুনছে। আসলে আদ্রাফ একটু আগে যা বলেছে তা আয়াতের মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। সে নাকি আয়াতের কাজিন। বউকে কেউ কাজিন বলে! সেই শক কাটিয়ে উঠতেই আয়াতের বেশ সময় লাগলো। অবশেষে শক কাটিয়ে উঠে সে বলল,
“আমি উপরে যাই দাদী।”

এটা বলে চলে যেতে নিলে নুহাশ পিছন দিয়ে বলল,
“কি ভাবি আমার সাথে কথা বলবেন না? নাকি আমায় পছন্দ হয়নি?”

আয়াত পিছনে ঘুরে নুহাশকে বলল,
“আপনাকে আমার পছন্দ বা অপছন্দ হওয়ার কিছুই নেই ভাইয়া। আর আমি আপনার সাথে বলার মতো কিছু পাইনি দেখে বিনাবাক্যে এখানে থেকে চলে যাচ্ছি।”

আয়াত আর কারো উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে গেল। নুহাশ আদ্রাফকে কানে কানে প্রশ্ন করল,
“কিরে কি করেছিস তুই ভাবীর সাথে? ভাবীর মুড অফ কেন?”

আদ্রাফ বলল, “আরে না মুড অফ থাকবে কেন? ও এমনিতেও অচেনা মানুষের সাথে কম কথা বলে। পরে যখন তার সাথে ফ্রি হয়ে যায়, মন খুলে কথা বলে।”

আদ্রাফের দাদী বললেন, “আদ্রাফ আর নুহাশ দুইজনেই বাহিরে থেকে এসেছো, যাও উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

এটা বলে দাদী চলে গেলেন তার রুমে। নুহাশ আদ্রাফের হাতে চাটি মেরে বলল,
“তোর সাথে তো আমি পরে হিসেব করছি আদ্রাফ।”

নুহাশ এক সার্ভেন্টের সাহায্যে গেস্ট রুমে চলে গেল। আদ্রাফ কতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সেও চলে গেল ফ্রেশ হতে।
.
.
.

“নুহাশ তোকে যা বলতে যাচ্ছি একটু মন দিয়ে শোন,” শান্তস্বরে বলল আদ্রাফ।

নুহাশ কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ বল।”

আদ্রাফ বলল, “নুহাশ আমি এইডস আক্রান্ত। ”

নুহাশ কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, “ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।”

আদ্রাফ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, “তুই অবাক হলি না?”

নুহাশ এক ধ্যানের থেকেই কফিতে আবার আরেক চুমুক দিয়ে বলল,
“হুম তুই এইডস আক্রান্ত। ”

পরক্ষণেই নুহাশ মুখ থেকে কফি ফেলে দিল। আসলে নুহাশের মস্তিষ্কে কথাটা পৌছতে একটু সময় লেগেছিল আরকি। নুহাশ জোরে বল উঠলো,
“কি তুই কি বললি? তুই এইডস আক্রান্ত? ”

আদ্রাফ নুহাশের ঠিকমতো সাড়া পেয়ে একটু খুশি হলো। তারপর বলল,
“এতোক্ষণের শুনলি তাহলে ঠিকমতো।”

নুহাশ বলতে থাকে, “তুই এতো স্বাভাবিক আছিস কেমনে ভাই? তুই এইডস আক্রান্ত। ভাবি জানে? তোরা একসাথে থাকিস কিভাবে?”

আদ্রাফ হতাশা নিয়ে বলল,
“তোর ভাবি জানে। দুইদিন আগে আয়াতের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আর আমরা আলাদাই থাকি। এইডস যেহেতু ছোয়াঁচে রোগ নয় তাই এমনি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলে সমস্যা নাই।”

নুহাশের দুই চোখ ভিজে আসছে। নিজের প্রিয় বন্ধুর সাথে আর কয়েকদিনই থাকতে পারবে সে। এরপর চিরতরে হারিয়ে ফেলবে তাকে। নুহাশের কথাগুলো গলায় আটকিয়ে আসছে। তারপরও সে বলল,
“আদ্রাফ আমি তোকে জড়িয়ে ধরলে কি কোনো সমস্যা আছে কি?”

আদ্রাফ বলল, “নাহ সমস্যা নাই।”

নু্হাশ চটজলদি আদ্রাফকে জড়িয়ে ধরল। সঙ্গে সঙ্গেই তার চোখ থেকে অশ্রুবর্ষণ শুরু হলো। ছেলেদের নাকি কাঁদতে হয় না লোকে বলে। কিন্তু ছেলে হলেও বন্ধুকে হারানোর ভয়ে কেঁদে উঠছে নুহাশ। আদ্রাফের দুই চোখ ভিজে আসতে লাগলো। নুহাশ কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“তুই মিথ্যে বলছিস বল না আদ্রাফ। আদ্রাফ এটা কিন্তু খুব বাজে মজা।”

আদ্রাফ নুহাশের পিঠে হালকা বাড়ি দিয়ে বলল,
“আমি সত্যিই বলছি নুহাশ।”

নুহাশ আদ্রাফকে ছেড়ে দিল। তারপর চোখে মুছে হাসিমুখে বলল,
“আমি কিছুদিন এই বাড়িতে থাকলে কি তোর কোনো সমস্যা হবে?”

আদ্রাফ প্রশ্ন করল,”আমার মরার দিন পর্যন্ত?”

নুহাশ আদ্রাফের গালে এক চড় বসিয়ে দিল। তারপর বলল,
“তুই যদি আর একবার মরার কথা বলেছিস তবে দেখ আমি তোকে কি করি!”

আদ্রাফ মৃদু হাসলো। নুহাশ বলল,
“তোর ভাবির সাথে কি কিছু হয়েছে?”

আদ্রাফ বলল, “আয়াত আমার ভালোবাসা নুহাশ। আমি আমার ভালোবাসার কোনো ক্ষতি হতে দিতে পারিনা। আমার ওর সাথে কিছুই হয়নি। জীবনে হয়তো ভালোবাসাকে সম্পূর্ণ নিজের করে পাওয়া হলো না আমার, তবে আমার ভালোবাসাকে আমার ভালোবাসা সম্পর্কে অবগত করে তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কাটিয়ে মরতে চাই। আমি চাই আমার জীবনের শেষ সময়ে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চাই আয়াত, তোর আর দাদীর মুখটা দেখে রে৷”

নুহাশ আবার আদ্রাফকে জড়িয়ে ধরল। দুই বন্ধুই অঝোরে অশ্রু ফেলছে। প্রিয় মানুষদেরকে হারানোর বেদনা হয়তো এমনই কষ্টদায়ক।
.
.
.

“তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি,
ডুবতে রাজি আছি, আমি ডুবতে রাজি আছি॥
সকাল আমার গেল মিছে, বিকেল যে যায় তারি পিছে গো,
রেখো না আর, বেঁধো না আর কূলের কাছাকাছি॥

মাঝির লাগি আছি জাগি সকল রাত্রিবেলা,
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা।
ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরব না তার ভ্রূকুটিতে
দাও ছেড়ে দাও, ওগো, আমি তুফান পেলে বাঁচি॥”

আপনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান গাইছিল আয়াত। পিছনে যে আদ্রাফ এসে দাঁড়িয়েছে তার খেয়াল নেই। আদ্রাফ আয়াতের কানে হালকা করে ফুঁ দিল। কেঁপে উঠলো আয়াত। আদ্রাফ মুচকি হাসল। আয়াত পিছনে ফিরে আদ্রাফের দিকে রাগী চোখে তাকালো। আদ্রাফ বলল,
“একটু আগে তো বলছিলে আমি তুফান পেলে বাঁচি, তবে আমার এই উষ্ণ ফুঁ পেয়েই চমকে উঠলে কেন?”

আয়াত উত্তর দিল না। মাথা নিচু করে রইল। আদ্রাফ বলল,
“আমি এমন বলায় কষ্ট পেলে নাকি?”

আয়াত মাথা নিচু রেখেই প্রশ্ন করল,
“কেমন বলায়?”

আদ্রাফ বলল, “ওইযে নুহাশকে বলেছিলাম তুমি আমার কাজিন।”

আয়াত আদ্রাফের দিকে তাকালো। নয়নজোড়ায় এক ধরণের অভিমান ফুটে উঠলো যা আদ্রাফের বোধগম্য হলো। আদ্রাফ বারান্দা থেকে বেরিয়ে গেল। পিছু পিছু আয়াতও বেরিয়ে এলো। আদ্রাফ আয়াতকে সোফাতে বসতে বলল। আয়াত তার কথামতো বসলো। আদ্রাফ দাঁড়িয়েই রইল। তারপর আয়াতকে বলল,
“তুমি যদি বুঝতে যে কেন তোমাকে আমার বউ বলার জায়গায় কাজিন বলে পরিচয় দিলাম তাহলে হয়তো এতো অভিমান করতে না।”

আয়াত প্রশ্ন করল, “কেন বলেছিলেন?”

আদ্রাফ বলল, “আমি যখন দুনিয়াতে থাকবো না তখন টের পাবে আয়াত।”

আয়াত বলল, “খালি মরার কথা কেন বলেন আপনি।”

আদ্রাফ বলল, “মরবই তো একদিন।”

আয়াত বলেন, “ধ্যাত বের হন তো এখানে থেকে।”

আদ্রাফ প্রশ্ন করল, “আমার বাড়ি থেকে আমায় বিদায় করছ?”

আয়াত বলল, “উহু আমার রুম থেকে আপনার বিদায় করছি মিস্টার আদ্রাফ।”

আদ্রাফ আয়াতের সামনে এসে একটু ঝুকে বলল,
“আচ্ছা তোমার রুম?”

আয়াত জোর গলায় বলল, “হুম আমার রুম।”

তখন আদ্রাফ আয়াতের মুখের সামনে আরও ঝুকে বলল,
“আচ্ছা তাহলে আপনি কার মিসেস আয়াত?”

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here