#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১৩
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
আরিয়া খেয়াল করলো লোকটার মুখে মাস্ক লাগানো। দরজা, জানালা আটকানো তাই পুরা রুম অন্ধকার হয়ে আছে। ফেইস টাও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। আরিয়া ছোটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
এতো ছটফট করছো কেন আরুপাখি?লোকটি ঘোর লাগা কন্ঠে বলল।
আরিয়া ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,, কে….কে আপনি? হাত ছাড়ুন দয়া করে?
আরুপাখি শান্ত হও আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না। আমার কথাটা শোনো।
তবু আরিয়া শান্ত হয় না। মনে মনে ভাবছে আল্লাহ রক্ষা করো। জানিনা এই লোকটা কে! কোনো ক্ষতি করবে না তো আমার। আব্বু আম্মু তো মরেই যাবে।
–হাত ছাড়ুন বলছি৷ না হলে কিন্তু..
আরিয়া পুরো বাক্য উচ্চারণ করার আগেই লোকটি বলল,, কী করবে আরুপাখি? মারবে আমায়? তোমার কী মনে হয় তুমি আমার সাথে পেরে উঠবে?
লোকটি কথা থামাতেই আরিয়া লোকটির হাতে কামড় দিলো! লোকটার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। সে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আরিয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরিয়া হাত ছাড়ানোর জন্য জোড় জবরদস্তি করতে লাগলো। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। লোকটার সাথে কিছুতেই আরিয়া পেরে উঠছে না।
আরু পাখি এভাবে ছটফট করে, কেন শুধু শুধু নিজের এনার্জি লস করছো বলতো। আমি বলছি তো কোন ক্ষতি করব না তোমার। যাকে ভালোবাসি কী করে তার ক্ষতি করব বলো?
মা…মানে!
লোকটি আবার বলল,, আমি তোমাকে খুব খুব বেশি ভালোবাসি আরুপাখি! নিজের থেকেও অনেক বেশি তোমাকে ভালোবাসি আরুপাখি।
❝ভালোবাসি আরুপাখি❞ কথাটা যেন বার বার আরিয়ার কানে বাজছে। তাহলে কী এই সে অচেনা লোকটা। যে আমাকে চিঠি লেখতো, মেসেজ দিত। কিন্তু এভাবে লোকচুরি কেন করছে লোকটা।
এই আরুপাখি কী ভাবছো?
আপনি কে? আর আমাকে আরুপাখি বলে কেন সম্মোধন করেন?
তোমাকে ভালোবাসি তাই। আর আমি কে সেটা সময় হলেই জানতে পারবে।
এখন কেন সামনে আসছেন না? কিসের জন্য এতো লোকচুরি? আড়ালে কেন আছেন? কেন ধূয়াশায় পড়ে আছেন?
এত প্রশ্ন একসাথে! শুনো উপযুক্ত সময়ে তোমার সামনে আসবো৷ আমি জানি তুমি একবার ভালোবেসে প্রতারিত হয়ছো। তাই আমি নিশ্চিত যে তুমি দ্বিতীয় কাউকে তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না, আর কাউকে বিশ্বাস করতেও পারবে না।
আরিয়া কিছু বলল না। সে নিজেও জানে তার পক্ষে আর কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব না আর কাউকে ভালোবাসতেও পারবে না।
–তাই যেদিন তোমার মন থেকে এসব ভাবনা দূর হবে সেদিন তোমার সামনে আসব!
আরিয়া কী বলবে বুঝতে পারছে না। তাই হুট করেই বলে ফেলল,, আচ্ছা কাল আপনি মেসেজ দেন নি কেন?
আরিয়ার কথা শুনে লোকটি চমকে উঠলো৷ মুচকি হেসে বলল,, কেন আরুপাখি আমাকে মিস করছিলে? আমার মেসেজের অপেক্ষায় ছিলে বুঝি!
আরিয়া লোকটির কথা শুনে লজ্জা পায়! সে বুঝতে পারছে এই প্রশ্ন টা করা একদম উচিত হয়নি। নিজেই নিজেকে মনে মনে গালি দিতে শুরু করলো।
আমি কেন আপনাকে মিস করতে যাব৷ আর আপনার মতো লুচু লোককে কেই বা মিস করবে!
কী আমি লুচু? তোমার সাথে লুচুগীরি কখন করলাম আমি!
অচেনা একটা মেয়ের হাত ধরে অন্ধকার রুমে নিয়ে আসলেন এটা কী ভালো মানুষের কাজ? না তো! এটা শুধু লুচু বেটারাই পারে।
প্রথমত আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার খুব কাছের কেউ, অচেনা কেউ না। আর এখন পর্যন্ত তো তোমার সাথে লুচুগীরির কিছু করি নি! তা এখন করবো নাকি। বলেই একটা চোখ টিপ দিল।
একদম না। দূরে সরে দাঁড়ান। আর আমাকে যেতে দেন প্লিজ।
লোকটা আরিয়ার দিকে কিছুটা ঝুঁকে দাঁড়ালো। সাথে সাথেই আরিয়া চোখ বুজে ফেলল। লোকটার নিঃশ্বাস আরিয়ার মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে। চোখ খুলার সাহস পাচ্ছে না। হঠাৎ লোকটা আরিয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল। আরিয়ার পুরো শরীলে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। এ কোন অনুভূতি? কী দেবে এই অনুভূতির নাম। রাতুলও তো মাঝে মাঝে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলতো ভালোবাসি আরু। তখন তো এমন অনুভুতি হতো না।
লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,, আরু পাখি এখন যেতে পার৷ তোমার ফ্রেন্ডরা তোমার জন্য ওয়েট করছে।
আরিয়া তখনও ঘোরের মধ্যেই আছে। লোকটা বুঝতে পেরে আরিয়াকে হালকা ধাক্কা দিল!
কী…কী হয়ছে?
এখন তো যেতে দিলাম যাচ্ছো না কেন? আমার কাছ থেকে যেতে মন চাচ্ছে না কি? তাহলে চল এক কাজ করি আমরাও আজ রাতুল আর ফারিয়াদের সাথে বিয়েটা সেরে ফেলি। কাজি তো বাড়িতেই আছে। কিছুটা দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলল।
রাতুল আর ফারিয়ার বিয়ের কথা মনে হতেই আরিয়ার পিলে চমকে উঠলো।
বলল মোটেও না। আপনার মতো লুচু লোককে বিয়ে করবো! কখনোই না।
–দেখা যাবে।
–বেরিয়ে যাওয়ার আগে আরিয়া পেছনে ফিরে তাকিয়ে লোকটার উদ্দেশ্যে বলল,, আমি হয়তো আপনাকে ভালোবাসতে পারব না। হ্যাঁ, আপনার ধারনাটাই ঠিক! আমি দ্বিতীয় বার কাউকে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারব না। এমনকি বিশ্বাসও করতে পারব না। সবাই ঠকবাজ! কেউ কথা রাখে না সবাই ছেড়ে চলে যায়। থেকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি তো শুধু মন রক্ষার্থে দেয়। ভালোবাসি বলে শুধু অভিনয় করে। ভালোবাসা সে তো শুধু মিছে বাহানার প্রবাদ বাক্য হয়। তবে সত্যি বলতে কী জানেন, আমার এখন আর কষ্ট হয় না, অনুভূতি গুলো আর কাজ করে না, আমার কোনো অস্থিরতা নেই আমার বুকের ভেতর আমার আর খারাপ লাগে না, আমার কোন কিছু হারানোর নাই আমার সব সহ্য করার ক্ষমতা হয়ে গেছে, আমার কোন সমস্যা হয় না, আমার বুকের ভেতর নিঃশ্বাস নিচ্ছি সেটা ও আমার এখন অনুভব করি না।
আরিয়া থামলে লোকটি বলল,, আমি জোর করব না তুমি আমাকে ভালোবাসো! কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি আরুপাখি। জানো আরুপাখি,, “ভালোবাসি” কথাটা একই থাকে শুধু ভালবাসার মানুষ পরিবর্তন হয় আর বদলে যায় ভালবাসার তালিকা। কিছু মানুষ অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলে ভুল মানুষকে যার ফলে ঠকে যেতে হয়। ভালোবাসার জন্য একটা পারফেক্ট মানুষ খুঁজতে গিয়ে হাজার ভুল মানুষের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা হয়ে যায়। এই ভাবে কিছু মানুষ একটু ভালো থাকার জন্য ভালবেসে বার বার ঠকে যাওয়ার পর আবারও কাউকে বিশ্বাস করে ভালোবেসে ফেলে। আর কিছু মানুষ একবার ভালবেসে ঠকে গেলে দ্বিতীয়বার আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। তাদের ভালোবাসা শব্দটির প্রতি ঘৃণা চলে আসে। তারা মনে করে ভালবাসায় জড়ানোর থেকে একা থাকাই ভালো। হয়তো অনেক কষ্ট হবে কিন্তু কাউকে পেয়ে হারানোর ভয় থাকবে না।
— এই ভালোবাসার জন্য ঠকানো, ঠকে যাওয়া ,ছেড়ে যাওয়া, মৃত্যুর সমান যন্ত্রণা সহ্য করা। এই একটা শব্দ পিছনে ছুটে বেড়ায় গোটা দুনিয়া। আর তারই সুযোগ নাই কিছু নিকৃষ্ট মানুষ। এরা ভালোবাসার নামে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বহু মানুষের জীবন নষ্ট করে দেয়। এই ভুলগুলোর জন্যই কত মানুষ ভালবাসতে ও ভালো থাকতে ভুলে গেছে । আর এই মানুষগুলোর জন্য ভালোবাসা শব্দটা অস্তিত্ববিহীন হয়ে গেছে। “আসলে ভালোবাসা জিনিসটা হচ্ছে আমাদের একরকম নেশা, অভ্যাস,ভালোলাগা নামের পৃষ্ঠাগুলোর সমন্বিত একটা বই এর মতোই। শব্দটা হয় এমন যে আমি তোমায় ভালোবাসি কিন্তু আসলে আসল জিনিসটা কি জানো তা হবে আমি তোমার প্রতি আসক্ত, তুমি আমার অভ্যাস, সবচেয়ে বড় কথা তুমি নামক যে জগতটা সেইখানে সব ভালোলাগার মূলেই তুমি। আসলে ভালোবাসাটা হচ্ছে প্রয়োগ করার মতো ওই কয়েকটা শব্দই আসল অর্থই হচ্ছে এইগুলো। তো এবার বলি যে এই অভ্যাস,ভালোলাগা, আশক্তি সবই পরিবর্তনশীল মনুষ্যজীবন এর জন্য। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। আর ভালোবাসা জিনিসটাও এইসব পরিবর্তনশীল জিনিসগুলোকেই ঘিরে। হয়তোবা কষ্ট হয় এসব ভুলতে কিন্তু একটা না একটা সময় না ঠিকি আবার জীবন সব গুছিয়ে নেয়। তখন ই দেখা যায় কারুর ক্ষেত্রে আবার সেই আসক্তি, ভালোলাগা,অভ্যাস তৈরি হয়েই যায় তখন এ আমরা আবার তার নাম দেই দ্বিতীয় ভালোবাসা। আমি বলবো কি ভালোবাসা একবারই হয় ওইটা ভুল মানুষ এর জীবন এ ভালোবাসা অবিরামও হতে পারে আর মনে রাখার বিষয়টা হচ্ছে কিছু কিছু অভ্যাস আমরা কখনই ভুলতে পারি না আবার অনেকের ক্ষেত্রে ভুলতে চাই না। ওই অভ্যাস এর মধ্যে দিয়েই হয়তো তাকেও ভুলতে পারি না।
–আমি কখনোই জোর করবো না তুমি রাতুল কে ভুলে যাও। ভুলতে বলবোও না। কারণ ও তো তোমার প্রথম ভালোবাসা। আর আমি তোমার শেষ ভালোবাসা হতে চাই। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার হাতটা ধরে রাখবো। খুব তাড়াতাড়ি একটা বিশেষ দিনে তোমার সামনে আসব৷ ততদিনে প্লিজ একটু বুঝতে চেষ্টা করো। এটা মনে রেখো সবাই প্রতারক না। মানুষ ছেড়ে যাওয়ার জন্য আসে না। কিছু মানুষ আমৃত্যু পাশে থাকবে বলে হাত ধরে পাশে থাকে। আমিও সেই মানুষদের মতো হতে চাই। আমিও তোমার হাত ধরে সারাজীবন একসাথে চলতে চাই। তোমার পাশে থাকতে চাই। শুধু একবার হাতটা ধরে রাখো। আমার মনের আঙিনায় রাণি করে রাখব তোমায়। কথা দিচ্ছি সারাজীবন #ভালোবেসে_থাকবো_পাশে আরুপাখি। (লোকটি)
আরিয়া কিছু না বলে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বাহিরে যেতেই দেখলো ছোঁয়া আর অন্তু এদিকেই আসছে!
এই আরু হাঁপাচ্ছিস কেন?
–দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছি।
–কেন আরু এখানে কী দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে? আর সেই কখন ফোন আনতে গেছিলি! তা বলি তুই কী রুমে ফোন আনতে গিয়ে নিজেই ফোন হয়ে গেছিলি? নাকি উদাও হয়ে গেছিলি?
আরে ছোঁয়া এত প্রশ্ন একসাথে করলে কীভাবে উত্তর দিবে ও! তুই বরং ওরে নিয়ে একজায়গায় বসা আর পানি দে।
–ওকে আহু।
ওরা চলে যেতেই আহিল ভাবছে আরু তো বেরিয়ে আসলো। কিন্তু ভাইয়া কেন আসছে না।
আরিয়া কিছুটা শান্ত হয়েছে। ছোঁয়া আরিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনি আরিয়ার আম্মু চলে আসে!
–এই আরু কই ছিলি এতক্ষণ? সেই কখন থেকে তোরে খুঁজে যাচ্ছি।
–আম্মু রুমে গিয়েছিলাম। তা বল কেন খোঁজছো।
–ফারিয়া সেই পাঁচ মিনিট ধরে বসে আছে। কবুল বলছে না। বলল তুই না যাওয়া পর্যন্ত নাকি কবুল বলবে না। আসলে মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে।
–ছোঁয়া বিরবির করে করে বলল ভালোবাসা না ছাই। ভালোবাসলে কখনো রাতুলকে আরিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নিত না।
–ছোঁয়া মা কিছু বললে?
–ছোঁয়া আমতা আমতা করে জবাব দিলো,, না না আন্টি কিছুই বলি নি।
–আচ্ছা। আরু চল মা।
__আরিয়া জানে ফারিয়া তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বসে আছে। তার চোখের জল নাকি ফারিয়াকে খুব আনন্দ দেয়। আরিয়া যত এগোচ্ছে তত তার নিশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু এমন টা কেন হচ্ছে। তার ভালোবাসা আজ সম্পূর্ণ ভাবে অন্যকারো হয়ে যাবে বলে! তার উপর আর কোন রকম অধিকার থাকবে না বলে! কিছুক্ষণ আগেও তো সেই অচেনা লোকটাকে কত কথা শুনিয়ে আসলো। তার আর অনুভূতি কাজ করে না, বুকের ভেতর আর কষ্ট হয় না, কাউকে হারানোর ভয় নেই তার মনে, তার সব সহ্য করার ক্ষমতা হয়ে গেছে! তাহলে এখন কেন এমন লাগছে। তাহলে কী আমি রাতুলকে এখনও ভালোবাসি! কথাটা ভাবতেই আরিয়া কেঁপে উঠলো।বিবেক বলছে না না আরু নিজেকে আর দুর্বল করিস না। রাতুল কিছুক্ষণ পরে পবিত্র কালেমা পড়ে, কবুল বলে সম্পূর্ণ ভাবে অন্যকারো হয়ে যাবে। আরিয়া নিজের লেহেঙ্গার দুই পাশে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো।
–ছোঁয়া আরিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে আরিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। আরিয়া শান্ত করার চেষ্টা করছে। আরু প্লিজ শান্ত হ। পাগলামি করিস না। দেখ আরু তুই তো বলছিলি নিজেকে শক্ত রাখবি তাহলে এখন কেন ভেঙে পড়ছিস? নিজেকে শক্ত কর! বেইমানদের সামনে চোখের জল ফেলতে নেই। তোর চোখে পানি দেখলে ওরা আরো মজা পাবে। আরু জানিস তো,, ভেঙে পড়লে চলবে না,, চিরদিন কেউ পাশে থাকে না।
—এই আরু তাড়াতাড়ি আয় মা।
–হ্যাঁ আম্মু আসছি। ছোঁয়া, অন্তু চল।
–আরু কথা গুলা মাথায় রাখিস প্লিজ!
-আচ্ছা চল এবার।
#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১৪
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
এই তো আরিয়া চলে এসেছে! কাজি সাহেব আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
আরিয়াকে দেখেই ফারিয়া একটা একটা বাঁকা হাসি দিলো। আর আরিয়া বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি উপহার দিলো।
রাতুলকে কবুল বলার জন্য বলা হয়ছে কিন্তু সে বলতে পারছে না। গলায় আটকে যাচ্ছে। আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছে না এমন কেন হচ্ছে। সে নিজেই তো আরিয়াকে ছেড়ে আসছিলো। এতদিন তো বিয়েটা নিয়ে অনেক এক্সাইটেড ছিলো। তাহলে এখন কিসের বাঁধা আসছে।
এই রাতুল কবুল কেন বলছিস না? বিয়ে করার ইচ্ছে নাই নাকি?
রাতুল চমকে উঠলো! বাবা এটা আবার কখন বললাম।
তাহলে বলে ফেল।
রাতুল কবুল বলার পর ফারিয়াও বলল। বিয়ে সম্পূর্ণ।
সবার চোখের আড়ালে আরিয়ার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। সাথে সাথে মুছে নিলো। আর কেউ খেয়াল না করলেও তূর্য ঠিকি খেয়াল করছে। এতক্ষন সে আরিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
ফারিয়াকে বিদায় দেওয়ার পর সবাই রুমে চলে গেলো।
____________________
তূর্য আরিয়া মন খারাপ ভালো করার জন্য সবাইকে বলল, ছাদে আড্ডা দিবে। সবাই রাজি হয়ে গেলো।
আরিয়ার পাশেই তূর্য বসেছে। তূর্যের পারফিউমের স্মেইল টা আগেও পেয়েছি। এটা তো একটু আগেই অচেনা লোকটির শরীল থেকে আসছিলো। তাহলে অচেনা লোকটিই কী তূর্য। না না এটা হতেই পারে না। উনার সাথে আমাকে মানাবে না। আর উনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। আর এটাও জানে আমি রাতুলকে কত ভালোবাসতাম।
এই আরু কী ভাবছিস?
কি…কিছু না।
এভাবে তোতলাচ্ছিস কেন?
এমনি!
আচ্ছা এখন বল তুই তখন রুমে গিয়ে কী করছিলি? ফোন আনতে এত লেট কেন করছিলি?
আরিয়া ওদের প্রথম থেকে সব বলল। সব শুনে ছোঁয়া বলল এত কিছু হয়ে গেছে আর তুই আমাদের এখন বলছিস! এতটাই পর ভাবিস আমাদের।
আরে ইয়ার রাগ কেন করছিস। সত্যিই আমার সময় ছিল না। আর আমি তো লোকটাকেও চিনি না। তোদের কী বলতাম বল!
আচ্ছা বাদ দে। তোর সব কথা শুনে মনে হচ্ছে লোকটা তোকে খুব ভালোবাসে! ওনি যেদিন তোকে সামনে থেকে ভালোবাসার কথা বলবে আই মিন প্রপোজ করবে তখন তুই কী করবি? ফিরিয়ে দিবে তাকে?
আরিয়া বলল,, আহু তুই তো জানিস ভালোবাসার প্রতি কতটা ঘৃনা জন্ম নিয়েছে আমার। কী করে তার ভালোবাসা গ্রহণ করবো আমি! জানিসই তো আমি একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ। আমি যাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি সে আমাকে ছেড়ে গিয়েছে। আমি যাকে ভালোবাসা দিয়েছি তার কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছি,, অপমান পেয়েছি। আমি তিন বছর যাবত একটা মানুষটাকে খুব ভালোবেসেছি সেই তো বদলে গেলো। আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। বিয়ে করে নিল। আর আমি বিনিময়ে কী পেলাম!
—দেখ সব মানুষ তো আর এক হয় না। রাতুল ছেড়ে চলে গেছে মানে যে অন্য কেউ তোকে ছেড়ে চলে যাবে সেটা তো কথা না। কেউ কেউ ছেড়ে চলে যাবার উদ্দেশ্যে আসে আর কেউ সারাজীবন হাতে হাত রেখে থাকবে সেই উদ্দেশ্যে আসে।
আচ্ছা আহু তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেন? তুই কী লোকটাকে চিনিস?
আহিল আমতা আমতা করে বলল, আরে আমি কই থেকে চিনবো৷ বাট তোর কথা গুলা শুনে মনে হলো লোকটা তোকে সত্যিই ভালোবাসে। আর আমি চাই তুই একজন ভালো মানুষকে বেঁচে নে আর তার সাথেই ভালো থাক।
আচ্ছা আমি ভেবে দেখবো।
আরিয়ার কথা শুনে তূর্যের বুক থেকে যেন পাথর নামলো। এতক্ষন মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।
তূর্য ভাইয়া আপনি একটা গান শুনান। আরুর মন তাও ভালো হবে।(ছোঁয়া)
এই তোকে কে বলল এই শিশুর গান শুনে আমার মন ভালো হবে!
তুমি সত্যিই খুব স্টুপিট। তোমাকে কে বলল আমি শিশু? আমাকে তোমার কোন দিক দিয়া শিশু মনে হয়?
আরে আরু চুপ থাক। ভাইয়া আপনি শুরু করুন তো।
তখনি সায়ান এসে বলল,, আমাকে ছাড়া কী হচ্ছে এখানে? আরু আমাকে ছাড়া তোরা আড্ডা দিচ্ছিস?
আপনি কোন দেশের মন্ত্রী যে আপনাকে নিয়া আড্ডা দিতে হবে?
ছোঁয়া তোমরা এভাবে ঝগড়া করলে আমি উঠে যাব!
—না ভাইয়া আর কথা কমু না। আপনি গান শুরু করুন।
–তূর্য আরিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে গান শুরু করলো!
__Aye mere humsafar ek zara intezar
Sun sadayein de rahi hai manzil pyaar ki
– Aye mere humsafar ek zara intezar
Sun sadayein de rahi hai manzil pyaar ki
__Ab hai judaai ka mausam
Do pal ka mehman
Kaise na jaayega andhera
Kyun na thamega toofan
__Ab hai judaai ka mausam
Do pal ka mehman
Kaise na jaayega andhera
Kyun na thamega toofan
– Kaise na milegi manzil pyaar ki
__Aye mere humsafar ek zara intezar
Sun sadayein de rahi hai manzil pyaar ki
_Pyar ne jahan pe rakha hai
Jhoom ke kadam ik baar
Wahin se khula hai koi rasta
Wahin se giri hai deewar
Pyaar ne jahan pe rakha hai
Jhoom ke kadam ik baar
__Wahin se khula hai koi rasta
Wahin se giri hai deewar
Roke kab ruki hai manzil pyar ki
__Aye mere humsafar ek zara intezar
Sun sadayein de rahi hai manzil pyaar ki
Aye mere humsafar ek zara intezar
Sun sadayein de rahi hai manzil pyaar ki
গান শেষ হতে সবাই একসাথে হাত তালি দিয়ে উঠলো। আর আরিয়ার ঘোর কাটলো৷ এতক্ষণ আরিয়া আর তূর্য দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে ছিলো৷ গান যেন তাকেই ডেডিকেট করে গাওয়া৷ আরিয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল। তা দেখে তূর্য মুচকি হাসলো।
অনেক রাত হয়ছে সবাই ঘুমাইতে যাও।
___________________
এগারদিন পর_
আরিয়া ঘুম উঠে হাতে ফোন নিতেই দেখলো রাতুলের মেসেজ।
মেসেজ ওপেন করে দেখলো,, আরু প্লিজ আজ একটা বার দেখা কর, খুব দরকার। তুমি যদি না আসো তাহলে আমি তোমাদের বাসায় চলে আসবো। আমার বিশ্বাস তুমি এটা কখনোই চাইবা না। আমরা সবসময় যেই রেস্টুরেন্টে দেখা করতাম সেখানে চলে এসো। ঠিক ১১ বাজে।
ওকে!
______________💜
বলো কেনো দেখা করতে বলছো।
–তুমি ছোঁয়া আর অন্তুকেও কেনো নিয়ে এসেছো?
–তুমি বদলে গেছো বলে কী সব বদলে যাবে? আগেও ওরা আমার সাথে আসতো আজও আসছে। এখন বলো কী জন্য ডেকেছো?
–আরু কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। যা বলব সবটা শুনবা পরে উত্তর দিবা।
–আচ্ছা বলো!
__প্লিজ তুমি আমাকে মাপ করে দাও। এখন আমি বুঝতেছি আমি ফারিয়াকে না তোমাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস কর আগেও তোমাকে বলতে চাইছিলাম। ফারিয়ার জন্য বলতে পারিনি৷ ফারিয়াকে আমি ছুয়েও দেখিনি! আমি বুঝে গেছি ও আমার মোহ ছিল। প্রথম প্রথম তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু কখন যে সৌন্দর্যের মোহে পড়ে গেছি নিজেও বুঝতে পারিনি। এই কয়টা দিন প্রতি মূহুর্তে তোমাকে খুব মিস করছি
। বিয়ের দিনটাতেও তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সুযোগ পাই নি। প্লিজ আরু তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি তোমাকে আজকেই বিয়ে করে বাসায় নিয়ে যাব আর ফারিয়াকে ডির্ভোস দিবো।
আরিয়া কী বলবে বুঝতেই পারছে না। ও অবাক হয়ে রাতুলকে দেখছে।
#চলবে…!!