#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
“আদ্রিক স্যারের সাথে খুব সখ্যতা দেখি।আবার নিজের প্রেমে ফেলার চেষ্টা করছো নাতো?” কায়াসাকে টোন মেরে কথাটা বলে জেমি।কায়াসা কিছু না বলে চলে যেতে নিলেও জেমি তার পথ আটকে দাঁড়ায়।জেমির কথা শুনে কায়াসার বিরক্ততে কপাল কুচকে যায়।
” এরকম কিছুইনা।”
” তাহলে তোমার এতো কেয়ার করে কেন?সিঁড়ি থেকে পড়ে গেলে ব্যথা পাবে এতে ওনার কতো চিন্তা।আমার তো মনে হয় তোমার চিন্তায় ওনার রাতে ঘুমই আসেনা।”
” সামনে থেকে সরুন।আমাকে ক্লাসে যেতে দিন।”
” আরে সত্যি কথা বলছি দেখে জ্বলছে নাকি?আহারে।”
” কোন সত্যি কথা বলছেন না আপনি।সব আপনার ভুল ধারণা।উনি আমার আগে থেকে পরিচিত বিদায় আমার সাথে একটু কথা বলেন।আর আমি ওনার স্টুডেন্ট সেই হিসেবে ওনি আমাকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছে।এতে অন্যকিছু না ভাবলেই ভালো।” কথাটা বলে জেমিকে সাইড করে চলে যেতে নেয় কায়াসা তবে কয়েকটা এগোতেই সে থেমে যায়।
” দেখো আবার বলাতো যায়না কখন কি হয়।আমার কথাও সত্যি হতে পারে।হয়তে পারে আসলেই তোমার চিন্তায় ওনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে বা অন্যকারো।আবার এটাও হতে পারে তুমি ওনার প্রেমে পড়ে গেলে আর এতে তোমার রাতের ঘুম উড়ে গেলো।কখন কি হয় বলা যায় না,সাবধানে রেখে নিজেকে আর নিজের মনকে।”
জেমির কথা শুনে কায়াসা বিরক্তি নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।সে পেছনে ফিরে দাঁতে দাঁত চেপে জেমির দিকে তাকাই।কায়াসা তাকাতেই জেমি তাকে হাতের ইশারায় বাই বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়।
” গাধাকে যেমন হাজার পড়াশোনা করালেও গাধা থাকে,তেমনি ওনাকেও হাজার বোঝালেও বোঝেনা।সবসময় নিজের বাজে কথা বলতে থাকে।”
কায়াসা নিজের ক্লাসে চলে আসে।ক্লাসে এখনো টিচার আসেনি।কায়াসা এদিক-ওদিক তাকিয়ে আরোহীকে খুঁজে আর একসময় ক্লাসের কোণার একটা বেঞ্জে সে আরোহীকে দেখতেও পেয়ে যায়
আরোহীকে দেখে কায়াসা তাড়াতাড়ি ওর পাশে গিয়ে বসে।কায়াসাকে বসতে দেখে আরোহী সরে বসে কিন্তু কায়াসাও আরো ওর কাছে এসে বসে।এরকম আরো দুই-তিনবার আরোহী সরে বসে আর কায়াসাও তার কাছাকাছি এসে বসে।এবার আরোহী চোখ রাঙিয়ে কায়াসার দিকে তাকাই।আরোহীর তাকানো দেখে কায়াসা বোকার মতো হাসে।কায়াসাকে হাসতে দেখে আরোহী মুখ ঘুরিয়ে নেয়।কায়াসা আরোহীকে একহাতে জরিয়ে ধরে।
” এই আরু কথা বলবিনা আমার সাথে?” ছোট বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বলে কায়াসা কিন্তু আরোহী কোন জবাব দেয় না।আরোহীকে চুপ থাকতে দেখে কায়াসা তাকে কথা বলার জন্য জেদ করতে থাকে আর হাত দিয়ে তার হাত ঝাঁকাতে থাকে।
” থাম থাম।আমি কি ওষুধের বোতল যে এভাবে ঝাঁকাচ্ছি?ও আল্লাহ আমার পুরো হাতটা ব্যথা করে দিলো।”
” রাগ করেছিস?”
” না না রাগ কেন করবো?আপনি কি কিছু করেছেন যে আমি রাগ করবো?”
” তুই একটু বোঝার চেষ্টা কর আরু।আমার এসব পার্টি ভালো লাগেনা।আমার বেশি লোকজনে অস্বস্তি হয়।”
” বেশি লোকজন আসবেনা তো।২০/২৫ জনই আসবে।আর সবাই আমার কাজিন আর কয়েকটা পুরোনো ফ্রেন্ড।তুই বেশিনা আধাঘন্টা থেকে তারপর চলে আসিস।তাও প্লিজ আয়।”
” শুধু আধাঘন্টা কিন্তু।”
” তার মানে তুই আসবি?হে……….”
” আমি চেষ্টা করবো আসার কিন্তু মনে থাকে যে আধাঘন্টা।”
” হুম হুম ঠিক আছে।”
২ দিন পর,
আজ আরোহী জন্মদিন।বিকেল থেকে আরোহী ফোনের উপর ফোন করে কায়াসা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আজ তার জন্মদিনের পার্টি আছে আর তাকে আসতে হবে।কায়াসা টিউশন শেষে একটা দোকানে এসেছে আরোহী জন্মদিনের জন্য কিছু কিনতে।গিফট কেনা শেষ হলে কায়াসা বাসায় এসে তৈরি হয়ে পার্টি যে রেস্টুরেন্টে হচ্ছে সেটার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।
রেস্টুরেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কায়াসা।আরোহী জন্মদিনের জন্য রেস্টুরেন্টের দোতলা বুক করেছে।কায়াসা বাইরে দাঁড়িয়ে আগে ইতি ফোন করে জিজ্ঞেস করে নেয় সে আসছে কিনা।ইতি উত্তরে বলে সে রাস্তায় আছে,কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।কায়াসা এরপর আরোহীকে ফোন করে কিন্তু আরোহী ফোন রিসিভ করেনা।কায়াসা একবার পুরো বিল্ডিংটাকে দেখে নেয়।নিচ তালায় একটা ক্যাফে।দোতলায় একটা রেস্টুরেন্টে আর তিনতালায় একটা ক্ল্যাব।কায়াসার ইচ্ছে করছে এখান থেকেই বাড়ি ফিরে যেতে।কিন্তু এসেছে যখন তখন দেখা করে যাওয়াটাই বেটার মনে করে কায়াসা।আশেপাশে তাকিয়ে কায়াসা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে।
চারিদিকে বিভিন্ন রঙের লাইট দিয়ে সাজানো।কয়েকজন কথা বলছে,কয়েকজন সেলফি তুলছে তো আবার কয়েকজন ডান্স করছে।কায়াসা গুটি গুটি পায়ে সামনে এগোতে থাকে।কিছুটা দূর যাওয়ার পরেই কায়াসা আরোহীকে দেখতে পাই।আরোহী একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আরোহীকে দেখে কায়াসা ভ্রু-কুচকে উঠে।কারণ তার ড্রেস।আজ আরোহী একটা কালো রঙের ড্রেস পড়েছে কিন্তু ড্রেসটা অনেকটা খোলামেলা যার কারণে আরোহীর শরীরে অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে যা কায়াসার মোটেও ভালোলাগেনি।কায়াসা বুঝতে পারছেনা যে আরোহী কলেজে সবসময় শালীন পোশাক পড়ে আসতো সেই আরোহী কি করে এধরণের পোশাক পড়তে পারে।তার উপর কায়াসা খেয়াল করেছে যে ছেলেটার সাথে আরোহী কথা বলছে ছেলেটা আস্তে আস্তে তার অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে।এসব দেখে কায়াসার মোটেও ভালো লাগছেনা কিন্তু কিছু করার নেই।কায়াসা আস্তে আস্তে আরোহীর কাছে এসেছে দাঁড়ায়।
” আরু।”
আরোহী পেছন ফিরে কায়াসাকে দেখে খুশিতে তাকে জরিয়ে ধরে।
” কায়ু তুই এসেছিস?আ…..আমি তো ভেবেছি তুই আসবিনা।জানিস তোকে দেখে আমার কি পরিমাণ খুশি লাগছে।”
” হ্যাপি বার্থডে।” গিফ্টটা আরোহীর দিকে বাড়িয়ে বলে কায়াসা।
” ও সো সুইট।এটা আমি পরে দেখবো।” আরোহী গিফ্টের বক্সটা সাইডে একটা টেবিলে রাখে।আরোহী বক্সটা রাখার জন্য গেলে আরোহীর সাথে থাকা ছেলেটা কায়াসার সামনে এসে দাঁড়ায়।
” হাই।”
কায়াসা কিছুনা বলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।ততক্ষণে আরোহী চলে আসে।
” কি কথা বলছো তুমি ওর সাথে?” ছেলেটাকে বল আরোহী।
” কিছুনা।দেখেনা তোমার বান্ধবীকে হাই বললাম কিন্তু সে কোন উওরই দিলোনা।”
” আরে তোমাকে বলেছিলাম না ও একটু চুপচাপ।অপরিচিতদের সাথে কথা বলেনা,তোমাকে চিনতে পারেনি তাই কিছু বলেনি।কায়ু এ হচ্ছে রাতুল আমার বয়ফ্রেন্ড আর রাতুল তুমি তো ওর সম্পর্কে জানোই।”
‘ বয়ফ্রেন্ড’ কথাটা শুনে কায়াসা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আরোহীর দিকে তাকাই।সে আরোহীর কানে কানে বলে —-
” আরু এসব কি?বয়ফ্রেন্ড?”
” তোকে একটু পরে বলছি আমি সব।রাতুল তুমি বরং একটু দেখো সব ঠিকঠাক আছে কিনা।আমি একটু ওর সাথে কথা বলি।”
” আচ্ছা তবে তাড়াতাড়ি এসো।”
আরোহী আর কায়াসা সাইডে চলে আসে।
” আরু এসব কি হচ্ছে?ছেলেটা কে?আর তুই এসব কি ধরনের ড্রেস পড়েছিস?”
” তোকে তো বললামই ওর নাম রাতুল আমার বয়ফ্রেন্ড।তোকে একটা বলবো প্লিজ তুই রাগ করিসনা।”
” কি?”
” সেদিন তুই বলেছিলিনা না আমাকে তুই একটা ছেলের সাথে বাইকে দেখেছিস।আসলে ওটা আমার কোন ভাই ছিলনা।ওটা রাতুলই ছিল।আর সেদিন রেস্টুরেন্টের বাইরে রাস্তায় ওটা আমিই ছিলাম,রাতুলের সাথে।”
আরোহীর কথা শুনে কায়াসা অবাক।সে কখনো ভাবতেই পারেনি আরোহীর কারো সাথে রিলেশন থাকতে পারে।
” তা না হয় ঠিক আছে কিন্তু তুই এটা কি পড়েছিস?”
” কেন ড্রেস পড়েছি।দেখ ড্রেসটা সুন্দর না?এটা আমাকে রাতুল দিয়েছে।”
” রাতুল?আরু তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস?এখানে শুধু মেয়েরা থাকলে একটা কথা ছিল কিন্তু এখানে অনেকগুলো ছেলে আছে।আর তুই তাদের সামনে এরকম খোলামেলা ড্রেস পড়ে কি করে?আর তোর বয়ফ্রেন্ডেই বা কি ধরনের যে তোকে এরকম ড্রেস গিফ্ট করলো?”
” কায়ু প্লিজ শান্ত হ।আমি জানি তোর এই ড্রেস পছন্দ হয়নি।আমারো প্রথমে পছন্দ হয়নি।রাতুল জোর করেছে বিধায় পড়েছি কিন্তু পড়ার পর আমার এটা খুব ভালো লেগেছে।”
কায়াসা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা।সে আজ যেন নতুন এখন আরোহীকে দেখছে।যে আরোহীর সাথে তার কলেজের বান্ধবী আরোহীর কোন মিলই সে খুঁজে পাচ্ছে না।
চলবে……..