#শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত
অন্তিম পর্ব
#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা
অর্নর কাছে নিজেকে সপে দিতে ওর মনের মাধুরি মিশিয়ে ওর প্রিয়র জন্য সবটা সাজিয়েছে ও নিজ হাতে।নিজেকে ও সাজিয়ে তুলেছে ঠিক সেদিনের মত করে।অর্নর ঘরে একদিন গোছগাছ করার সময় ও অর্নররপার্সোনাল ডায়েরিটা পায়।কৌতুহল মিটাতে ও সেটা খুলে দেখে এবং প্রথমেই যেটা চোখে পড়ে সেটন হলো।পৃথার হাস্যোজ্জ্বল মুখ।যেটা পৃথার অগোচরেই ক্যামেরা বন্দি করেছে ও।কালো রঙ ওর একটা শাড়ি পরিহিত এই রমনি মিষ্টি হেসে ঘাড় বাকিয়ে কোন সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত।পৃথার মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা যেদিন প্রথম ও শাড়ি পড়েছিল। তাও কলেজের নবীন বরনে।বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে আর সেটাই থিম থাকার ফলে এক প্রকার পড়তে বাধ্য হয়েছিল।ও শাড়ি পড়তে পারে না।আর তোমন কমফোর্টেবল না হওয়ায় ওর অপছন্দের একটা তালিকায় শাড়ি পড়াটকে যুক্ত করতো ও।সেদিন দুটো পাখির খুনসুটি দেখতে ভিষন ব্যস্ত ছিল ও।তারপর আস্তে আস্তে ডায়েরিটা পড়তে শুরু করে।
সেখানে প্রথমেই অর্নর পৃথাকে ভালোলাগার দৃশ্যটি অন্তত ভালোবাসাপূর্ন আবেগে লিখনীতে প্রকাশ করেছে অর্ন। প্রথম যেদিন ওদের দেখা হয়।সেদিন পৃথা ওর রেজাল্ট পাওয়ার পর বাড়ি ফিরছিলো খুশি মনে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাস্তার দুস্থ ও গরীব অসহায় মানুষদের খাবারের আয়োজন করেছিল। ওদের তৃপ্তি করে খেতে দেখে যেন ওর প্রান তৃপ্ত হয়েছিল।বাড়ি ফেরার পথে এক বৃদ্ধ ব্যক্তির রাস্তাপারে অসুবিধা হওয়ায় ও রিক্সা থেকে নেমে সাহায্য করেছিল।তাকে রাস্তা পারাপারে।বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সালাম করে আশির্বাদও নিয়েছিল।ঠিক সেসময় সেখান দিয়ে নিজের পার্সোনাল গাড়ি করে যাচ্ছিলো অর্ন।ও যখনই লোকটিকে সাহায্য করতে গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনই পৃথা আসে সেখানে।একটা শুভ্র রঙের গোলজামা পড়নে সাথে হোয়াইট চুরিদার আর স্কাইব্লু রঙের ওড়না।হাতে সুন্দর কারুকাজ করা নীল চুড়ি আর চোখে কাজল।অপরুপ সুন্দরী সেই রমনীতে মুগ্ধ হয়েছিল অর্ন।ওর ঘন কালো উন্মুক্ত কেষে যেন হারিয়ে গিয়েছিল অর্ন।আর তার সাথে এভাবে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির দিকে ওর সাহায্যের হাত বাড়ানোই ওর সর্বপ্রথম ভালোবাসার কারন।সেদিন প্রথমই ও পৃথার অমায়িক হাসিতে আটকে গেছিলো।বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছিলো।কেনো জানো না এই অচেনা অজানা মেয়েটাকে খুি কাছের মনে হচ্ছিল। মনের অন্তস্তল থেকে মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিল ও।তারপর থেকে ওর প্রতি লক্ষ রাখা। ওর সম্পর্কে সবকিছু খোঁজ খবর নেয়া।ওর দিকে কেউ বাজে নজরে তাকালে তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া।মুলত খুব বাহে ভাবে আসক্তিতে ঘিরে ফেলেছিলো ওকে।পৃথার আর তনয়ের কথা জানতে পেরে অর্ন খুব রেগে গিয়েছিল। খুব ভাংচুর করেছিল।তনয় মেরে ফেলতে চেয়েছিল।কিন্তু ওর এমন আচরন পৃথার মনে বিরুপ প্রভাব ফেলছিল।কারন পৃথা তনয়কে নিজের প্রানের চেয়ে ও বেশি ভালোবাসাতো।অর্ন যখন তনয়কে থ্রেট করে তখণপৃথাও অর্নকে বলে দেয় যদি তনয়ের সামান্য আচর ও লাগে। তবে ও নিজে শেষ করে দিবে।
ওর এমন উক্তিতে অর্নর বুকে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।যখন আপনারই ভালোবাসার মানুষটি আপনাকে ব্যতিত অন্য একজনকে ভালোবাসে তাও এতটা লয়াল ভাবে তখন অপর ব্যক্তির বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।তারপর থেকে ও তনয়ের কোন ক্ষতি করেনি।সরে যেতে চেয়েছিল ওদের জীবন থেকে। পৃথার ভালোবাসা আর ঘৃনা ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ও ভালোবাসার যোগ্য নয়।অন্তত রাগী জেদি অর্ন পৃথার ভালোবাসায় কখন যে বদলে গেছে বেচারন নিজেও টের পায়নি।তবে অন্যায় সহ্য করা অসম্ভব ব্যাপার। তাই অন্যায় কারীকে ও নিজ হাতে শাস্তি দিত।
একদিন অর্ন জানতে পারে যে তনয় পৃথাকে ঠকাচ্ছে। তখন ওর মাথায় রক্ত চেপে বসে।পৃথার থেকে নিজেকে দুরে রাখার চেষ্টা করলেও সবসময় ওর উপর নজর ছিল।পৃথার জন্য তনয়কে কিছু না করতে পারলেও পৃথাকে বাধ্য করে নিজের কাছে ধরা দিতে।এভাবেই প্রথম থেকে শেষ অবধি ভালোবাসায় ভরা আবেগি অনুভূতির মিশ্রন থাকলেও। পৃথার অবহেলায় ওর ভিতরটা কতটা দ্গ্ধ হয়েছে সেটা আর কাউকে না জানালেও নিজের একাকিত্বের সঙ্গি এই ডায়েরির পাতায় ঠিকই লিপিবদ্ধ করেছে।ওর পার্সোনাল ডয়েরটা সবসময় তালা বদ্ধ থাকলেও আজকে হয়তো ভুলেই অর্ন সেটা খোলা ফেলে চলে গেছে।পুরো আলমারির এক কর্নারে খুব সুন্দর করে গোছানো কিছু পেইন্টিংস পায়।সেগুলো দেখে ওর চোখে জল চিকচিক করে।অর্নর ভালোবাসার রঙ তুলি দিয়ে পৃথার হাসোজ্জল কিছু অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর কিছু পেইন্টিংস।এই সবটা জানার পর সেদিন খুব করে কেদেছিল পৃথা।লোকটা ওকে এত ভালোবাসতো অথচ ও কিনা সে মানুষটাকে প্রথম দিন থেকেই শুধু কষ্ট আঘাত আর অপমানে জর্জরিত করেছে।সেদিন থেকেই অর্নর ভালোবাসায় নতুন করে আবদ্ধ করে নিজেকে।
———————————————-
ফোনের ওপাশের ব্যক্তির বক্তব্য শুনে যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো পৃথার মাথার উপর।তীব্র বজ্রপাতের শব্দ কানে বাজতে লাগলো।ও থমকে গেছে।মুহূর্তেই চারপাশটাও নিস্তব্ধ হয়ে উঠেছে।পৃথার হাত ফোনটা নিচে ঘাসের উপর পড়ে গেল আর ও নিজের ভর ছেড়ে দিল মাটিতে।ধপ করে বসে পড়লো মাটিতে।কোন কথা নেই। একটা নিষ্প্রাণ বস্তু।শুন্য অনুভূতিহীন চাহনি আটকে আছে ঠিক সামনের দিকটায়। এমতাবস্থা দূর থেকে একটা গার্ডের দৃষ্টিগোচর হলো। যে অর্নর পার্সোনাল বডিগার্ড।সে দৌড়ে এসে পৃথার এমন অবস্থা থেকে উত্তেজিত হয়ে পড়লো। কি করবে বুঝতে পারছে না। এদিকে পৃথা তো হুশেই নেই।যে কোন কিছু বোঝাবে পারবে।ও শুধু পলকহীন চাহনিতে তাকিয়ে।শকড ও ভিষন ভাবে।মারাত্মত রকমের শকড পাওয়া ওর বোধ শক্তি হারিয়ে গেছে।কোন কিছু বোঝার মত অবস্থায় নেই ও।এদিকে আরও কিছু গার্ড ছুটে এসেছে।চিন্তিত কন্ঠে বারবার হাক ছেড়ে প্রশ্ন করছে।
— কি হয়েছে ম্যাম।প্লিজ বলুন! কি হয়েছে।আপনি এরকম করছেন কেনো? কিছু বলুন ম্যাম কি হয়েছে? আপনি তো বললেন স্যারকে কল করবেন? কি হয়েছে? স্যার কোথায়? স্যারের কিছু…….
বাকিটা মুখে আনতে পারলো না ও।বুকটা ধুকপুক করছে ওর।এতদিন ধরে স্যারের সাথে কাজ করে। স্যার কতটা ভালোবাসে ওদের।কতটা স্নেহ করে।এই ভালো মানুষটার সাথে খারাপ কিছু হওয়ার কথা ও ভাবনাতেই আনতে পারে না।ও ভাবনার শেষ হবার আগেই পৃথা গগন বিদারি আওয়াজে চিৎকার করে উঠলো অর্ন বলে।চিৎকার করে কাদতে লাগলো।গার্ডের বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে।সে অনায়াসে বুঝে গেল নিশ্চয় তার স্যারের বিপদ হয়েছে।ও পৃথাকে সামলানোর উদ্দেশ্য বললো,
— কিচ্ছু হবে না ম্যাম! স্যারের কিচ্ছু হবে না। বলুন স্যার কোথায় আছে? আপনি কাঁদবেন না প্লিজ! আমরা দেখিছ কি করা যায়।
ও পৃথার ফোন তুলে সবটা জেনে ওর ও কেমন যেন লাগছে।অর্নর এক্সিডেন্ট হয়েছে সে এখন হাসপাতালে।ভাবতেই বুকটা কেমন ভয় হচ্ছে। তাও ওকে সাহস রাখতে হবে।সেটা ভেবে কোনমতে পৃথাকে নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।আর বাকিরাও সাথে গেল।
—————————————————-
আর এদিকে…..
অর্নর এমন একটা খবর পেয়ে অর্নর বাবা ভিষন ভেঙে পড়েছেন।অর্নর মায়ের কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ।জানার পর থেকে কেঁদেই চলেছে।বারবার সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে। অনিলাও কেদেই যাচ্ছে। সাথে অর্নর প্রিন্সেস আনিশাও।হসপিটালে ফোন পেয়ে জানতে পারে সবটা।
পৃথা হসপিটালএ পৌছে দৌড়ে অর্নকে খুজতে ছুটে আসে।গাড়ি থামাতেই কোনমতে নেমে দৌড় লাগায় ও।রিসেপশনে গেলে রিসিপশনিষ্ট মেয়েটি ছলছল চোখে সামনের একটা স্ট্রেচার দেখিয়ে দেয়।যেখানে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা সুবিশাল দেহ।এ দৃশ্য দেখে ও প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। পৃথার বুকটা কেপে ওঠে অজানা আতঙ্কে। ভয়!হারানোর ভয়!খুবই আপন খুবই কাছের প্রানপ্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর তীব্র ভয় ঝেকে বসেছে ওর মনে।সামনের এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না ও।শুন্য মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে এ হতে পারে না! এ কিছুতেই হতে পারে না!রিসেপশনিস্ট এগিয়ে আসে ওর কাছ। ওর অবস্থা বুঝতে পেরে হালকা করে ধাক্কা দেয় পৃথাকে।রিসিপশনিষ্ট মেয়েটার ধাক্কায় হুসে আসে পৃথা।মেয়েটা ওকে ইশারায় এগিয়ে যেতে বলছে।মলিন চেহারায় অনুভূতি হীন চাহনিতে একপলক মেয়েটাকে ঘাড় বাকিয়ে দেখে তারপর সামনে তাকিয়ে চেয়ে থাকে সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহটাতে।কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে যায়।সাহস হচ্ছে না ওর।দম বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।নিশ্বাস আটকে আসছে।হার্টের বিট বেড়ে গেছে অসম্ভব গতিতে। ঘন ঘন নিঃশববাস আসছে।আর এতোকিছুর পারও ও প্রার্থনা করছে ওর ভালোবাসা যেন ভালো থাকে সুস্থ থাকে।এ যেন অর্ন কিছুতেই না হয়।একপা এগোলে চারপা পিছিয়ে যাচ্ছে। ওর অবস্থা দেখে আশেপাশের সবাই কান্না ভেজা চোখ নিয়ে ওকে নিষ্পলক দেখে চলেছে।কেউ কেউ আফসোস করছে।কেউ কেউ ওর জন্য চিন্তার পাহাড় গড়ে তুলছে।এইতো যেমন,
–এটুকুন একটা মেয়ে, এ বয়সে স্বামী হারাইছে।আহারে বেচারির কি হইবো।মনে হয় খুব ভালোবাসতো!
সবাই নানা কথা বলে যাচ্ছে ।সবটা কানে এলেও মস্তিষ্কে পৌছুতে অক্ষম। ও কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে এলো ওই স্ট্রেচারের সামনে।ওখানে পৌঁছাতেই ওর নিশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছিলো ভয়ে অন্তরাত্মা কাপছে। ও তো মানতে পারবে না।কিছুতেই পারবে না! অর্ন কি করে পারলো ওকে এত বড় ধোকা দিতে।ওর ভালোবাসায় আবদ্ধ করে ওকে নিঃস্ব করে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে। না চাইতেও কাঁপা কাঁপা হাতে সাদা কাপড়টা সরাতে লাগলো।মুখটা দৃষ্টিগোচর হতেই ও ভয়ানক এক চিৎকার দিয়ে সেখানেই সেন্স হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে লাগলো তৎক্ষণাৎ দুটো বলিষ্ঠ হাত এসে আকড়ে ধরলো। পৃথা চোখ বন্ধের আগে স্পষ্ট একটা অবয়ব দেখতে পেলো।চোখটা ঝাপসা ছিল ভিষন তবুও বুঝতে কষ্ট হয় নি অর্নর মায়াবী শীতল সেই মারাত্মক চাহনি।অস্ফুটস্বরে অর্নর গালে আলতে করে এক হাতে ছুয়ে বলে উঠলো,
–অ্ অর্ন..
আর কিছু বলতে পারলো না।অর্নর বুকে লুটিয়ে পড়লো।
সেন্স ফিরে হসপিটালের হোয়াইট সিলিং টা চোখে পড়লো।ঝাপসা লাগায় ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে ও।আস্তে ধীরে ঠাওর করতে পারলো ও।তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে ডাক লাগালো অর্নকে।ওর ওমন গগন বিদারি চিৎকারে অর্নর বাইরের সিটিং থেকে ছুটে এসে হরবরিয়ে রুমে ঢুকলো।ওকে দেখে পৃথার চোখ দিয়ে নিরব অশ্রু ঝড়ছে।অর্ন আরো দুপা সামনে এগোতেই ঝাপিয়ে পড়লো ওর বুকে।চিৎকার করতে করতে বললো,
— কেনো!কোনো এত দুষ্ট আপনি? এভাবে কেউ ভয় দেখায়? জানেন আমার কি অবস্থা হয়েছিল আমার।আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না অর্ন।আপনাকে ছাড়া বেঁচে থাকা বড় দায়।মরেও শান্তি পাব না আমি।প্লিজ আর কখনো এমন করবেন না।আমি মরে যাবো।
— হুস! এসব বাজে কথা মুখে আনবে না।আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কাটানো মৃত্যু সমতুল্য আমার কাছে।
“আমার নিশ্বাসে মিশে আছো
হৃদয়মাঝে বসত করছো
তুমিহীনা নিঃস্ব আমি
মূল্যহীন এ জীবনে
আমার প্রতিটি নিশ্বাসে
প্রশ্বাসে চাই শুধু শুধুই তোমাকে”
আমার রুপোলি চাঁদের জোস্নায় স্নিগ্ধ ঝলমলে কিরনে আমি চাই শুধুই আমার #শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত হতে।
— “ভালোবাসি ”
খুব ভালোবাসি। হয়তো আপনার মত বর্ননা করতে পারি না।তবে আমার অনুভুতিগুলো বর্ননাতীত।যা বর্ননা করে শেষ করা যাবে না।আমার অনুভূতিতে, রাগে-অনুরাগে,সুখে-দুঃখে, হাসি- কান্নায়,আমার প্রতিটি নিশ্বাস প্রশ্বাসে আপনাকে চাই!শুধুই আপনার মাঝে মিশে থাকতে চাই!আপনাতে হারিয়ে যেতে চাই!আপনাতে বিমোহিত হতে চাই!আপনার ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হতে চায়।
ওদের ভালোবাসার স্বীকারক্তির মাঝেই কেবিনে প্রবেশ করলো অনিলা।
–আমাদের তো তোরা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।এরকম কেউ করে বলতো? একটু ভাবলি না আমাদের কথা। এমন কেন রে তোরা? জানিস কি যাচ্ছিলো আমাদের উপর?
পৃথার কাছ থেকে অনিলা আসার সাথে সাথেই দুরে সরে গেছিলো অর্ন।এখন বোনের এমন অভিযোগ মাখা রাগান্বিত চেহারা দিকে তাকিয়ে ও একটা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেললো।সবাইকে সবটা জানানোর পরও সবাই ওকে বকাঝকানকরে যাচ্ছে। প্রথমে মা তারপর বাবা ওই পুচকে টাও এখন আবার আপু আর তারপর তার স্বামী মহোদয় আর সবশেষে স্ত্রীর কাছে একগাদা কথা শুনতে হবে।এই ভেবেই ওর কপালের ঘাম ছুটতে লাগলো।
আয়োজন শেষে পৃথা অর্নর জন্য রেখে যাওয়া চিরকুট পেয়ে বাড়ি ফেরার দু মিনিটের মধ্যে আবার ছুটে যায় গন্তব্যের উদ্দেশ্য। রাস্তায় তাজা ফুলের দোকান দেখতে পায় অর্ন।সেখান থেকে পৃথার পছন্দের ফুল কিনতে নেমে যায় ও।আজ সাথে কোন গার্ড নেই।তাই ফোন আর চাবি গাড়িতেই ফেলে গিয়েছিল ভুলে।আর সেসময় সেখান থেকে সুযোগ বুঝে এক চোর গাড়িটি চুরি করে নেয়।আর দুর্ভাগ্যবশত এক্সিডেন্টে তার মৃত্যু ঘটে।এটা মুলত একটা প্রি প্ল্যানড মার্ডার।অর্নর মারার উদ্দেশ্যই এক্সিডেন্ট করানো হয়েছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তা সফল হয়। অর্ন সবটা জানার পরপরই তাদের শেষ ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছিল।অর্নর শত্রুতাকে বাঁচিয়ে রাখে না।কারন পরবর্তীতে সে শত্রুই বিষাক্ত নাগিনীর মত ফনা তুলে ওকেই ছোবল মারবে।ফোন আর গাড়িটির মাধ্যমেই সবাই শনাক্ত করে যে এটা অর্ন।অর্নর আসতে দেরি হওয়ায় পৃথা ফোন করলে এমন ভয়াবহ দুঃসংবাদ শুনে নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
পৃথা যখন সেই সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশটা দেখেছিল তখনই সেটার বিভৎসতা দেখে আতকে উঠেছিল।
——————————————–
কেটে গেছে আরো কিছুদিন। খুবই ধুমধামের সাথে বিয়ে হয়েছে পৃথা আর অর্নর।পৃথা বারান্দায় রাতের আকাশের অগণিত তারার মেলা দেখতে ব্যস্ত। ঠিক সেসময় দুটো বলিষ্ট হাত তার পেটে হাত রেখে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ের চুলে নাক ডুবায়।পৃথা কেপে উঠে অর্নর এমন আদুরে স্পর্শে। আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয় পৃথা।অর্ন খানিকটা বাদে মুখ তুলে পৃথাকে সামনে ঘুরিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে,
–“ভালোবাসি আমার শ্যামাকন্যা”।
–“আমিও আপনাকে ভিষন ভিষণ ভিষণ ভালোবাসি ”
— আপনার এই বুকে একটু ঠায় দিবেন?
— শুধু এই বুকে নয়! আমার এই সম্পুর্ন আমিটাকেই আমি তোমার নামে লিখে দিয়েছি অনেক আগেই। আমরন আমি শুধুই তোমার আর তুমি আমার।
❤️এমন মোহময় ভালোবাসা আদলে বাধা পড়ুক প্রেমিক যুগল।শত বাধা বিপত্তিকে কাটিয়ে এক হয়ে যাক ভালোবাসায় বাধা দুটো মন❤️
সমাপ্ত