Game পর্ব -২১+২২+২৩+২৪+২৫

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২১ থেকে 25

কবীর চৌধুরী আজ বেশ খুশি! অবশেষে এতোদিন পর খান কোম্পানির সাথে ‌মিটিং এডেন্ট করতে পারবে। কবীর চৌধুরী অপেক্ষা করছে অভ্র’র জন্য। প্রায় অনেকক্ষণ পর একজন আসল। তবে এটা অভ্র না মেহেরিন! তাকে চিনতে কবীর চৌধুরী’র কষ্ট হলো না। মেহেরিন কে দেখে কবীর চৌধুরী উঠে তার সাথে হাত মিলালো। মেহেরিন মুচকি হেসে বলল…

– তো মিঃ কবীর চৌধুরী! অবশেষে ডিল টা পাচ্ছেন আপনি!

– অনেক দিন এটার জন্য অপেক্ষা করেছি আমি, আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। তোমাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছা অনেক দিনের আমার।

– শুনে ভালো লাগলো।

– এই যে ফাইল, একবার দেখে নাও।

– দেখা লাগবে না, ডিল টা আপনিই পাচ্ছেন।

– তবুও!

– দরকার নেই আমাদের সাথে বেইমানি করে আপনি পারবেন না। যাই হোক আপনার সম্পর্কে সব জানি আমি। খুব সৎ মানুষ আপনি।

– ধন্যবাদ তোমাকে!

– আমাকে মেহেরিন বলে ডাকতে পারেন। আপনার থেকে ছোট আমি নাম ধরে ডাকলে সমস্যা নেই।

কবীর চৌধুরী একগাল হেসে মেহেরিনের দিকে তাকালেন। মেহেরিন বলে উঠে..

– তা আপনার ছেলের নাকি বিয়ে!

– হুম মেহেরিন! এই যে কার্ড তোমার জন্য। তোমরা সবাই আসলে খুব খুশি হবো।

মেহেরিন কার্ড’টা হাতে নিয়ে বলল..
– তাহলে কাজ কাল থেকে শুরু করে দিন মিঃ কবীর!

– জ্বি অবশ্যই! আজ তাহলে আমি আসি।

– আশা করছি খুব দ্রুত আপনার সাথে দেখা হবে।

কয়েকদিন পর…

আহিয়ান আর নিতি বিয়ের শপিং করতে মলে গেলো। সেখানে গিয়ে আহিয়ান একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করল নিতি’র জন্য। মেরুন রঙের একটা লেহেঙ্গা, কিন্তু নিতি লাল রঙের লেহেঙ্গা কিনার জন্য জোর করল। তাই আহিয়ান লাল রঙের লেহেঙ্গা কিনল। শপিং করে দোকান থেকে বের হবার সময় নিহা’র সাথে দেখা হলো। নিতি নিহা কে দেখে বলে…

– আরে নিহা! কেমন আছো!

– অনেক ভালো তুমি! বিয়ের শপিং করতে এলে বুঝি।

– হ্যাঁ আর কয়েকদিন পরেই তো বিয়ে! বিয়েতে আসবে কিন্তু!

নিহা আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– আমি না আসলে বিয়ে হবে কি করে!

– মানে!

– মানে আমি না আসলে বিয়ে টা দেখবো কিভাবে! তোমাকে বউ সাজে দেখতে হবে তো।

আহিয়ান নিহা কে দেখছে। খুব স্বাভাবিক লাগছে তাকে। আহিয়ান জানত নিহা কে এমন’ই পাবে কারন ও বাইরে থেকে খুব স্ট্রং। কিন্তু আহিয়ান জানে ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পাচ্ছে নিহা। আর এই কষ্ট আরো দ্বিগুন হবে যখন নিতি কে তার সাথে বিয়ে হতে দেখবে।
.

বিয়ের আগের রাতে…

নিহা ঘরে লেহেঙ্গা পরে নিজেকে আয়নায় দেখতে লাগল। খুব মিষ্টি লাগছে তাকে। হঠাৎ কেউ বলে উঠে…

– বলতে হবে আমার জিজু’র পছন্দ আছে।

নিহা তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিহা বলে উঠে…

– তুই কিভাবে জানলি!

– জানি জানি জিজু এটা তার এক্স উড বি ওয়াইফ এর জন্য পছন্দ করেছিলো কিন্তু সে পছন্দ করে নি। কিন্তু তুমি ঠিক’ই পছন্দ করলে।

– কেন উনার পছন্দ কেমন সেটা কি আমাকে দেখলে বুঝা যায় না।

– হ্যাঁ যায় তো। তার এই ভূতনি বউ যে বিশ্ব সুন্দরী সেটা তো জানি!

– তুই এটাও জানিস!

– দারুন নাম কিন্তু হুম ভূতনি!

– হুম উনিও দারুন।

– হুম দেখেছি বলতে হবে আমার বোনের পছন্দ খারাপ না। আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো কাল বিয়ে তোমার। সারারাত জেগে থাকলে মুখের নকশা নষ্ট হয়ে যাবে।

– পাকনা মেয়ে একটা!

– অনেক হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড়ো। কাল আমি নিজে সাজিয়ে দেবে তোমাকে!

নিহা মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল!

এদিকে আহিয়ান একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ দেখছে। তখন হঠাৎ নিহা’র একটা কথা পড়ল তার! নিহা বলেছিল..

– পুরো আকাশের বুকে যেমন একটা চাঁদের আবাস, তেমনি তোমার মনে শুধু আমার আবাস!

কথাটা মনে পড়তেই আহিয়ান’র ঠোঁটের কোনে অজান্তেই হাসি ফুটল। তবে সেটা বেশিক্ষণ’র জন্য না। কারন নিহা’র জন্য তার মনে শুধুই ঘৃনা। এছাড়া আর কিছু নেই। হঠাৎ কারো উপস্থিত পেলো সে। এটা নিতি, নিতি আহিয়ান’র সামনে এসে দাঁড়ালো। বলল…

– এতো রাতে এখানে কি করছো!

– কিছু না। কিন্তু তুমি এখানে!

– এমনেই ঘুম আসছিলো না আসলে বিশ্বাস’ই হচ্ছে না কাল তোমার আমার বিয়ে। খুব ভালোবাসি তোমায় আহি!

বলেই আহিয়ান কে জরিয়ে ধরল। আহিয়ান এক হাত দিয়ে ধরল তাকে।
.
বিয়ের দিন…

চৌধুরী বাড়িতে আজ খুশির আমেজ। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে’র বিয়ে বলে কথা। পুরো রাজকীয় আয়োজন। বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তার সাথে মিডিয়াও উপস্থিত আছে। স্টেজে বসে আছে আহিয়ান তবে নিতি এখনো আসে নি। তার এখনো সময় লাগবে আসতে। এদিকে মানুষজন সব এসে গেছে। আহিয়ান তার বাবা কে বলে..

– তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন ড্যাড!

– একজন বিশেষ অতিথি আসবে তার জন্য!

– কে সে?

– এলেই দেখতে পারবে!

আহিয়ান আর কিছু বললো না। আহিয়ান’র মা এসে তার পাশে বসলো। হঠাৎ তার বাবা অস্থির হয়ে উঠলেন। আহিয়ান ভাবল হয়তো সেই বিশেষ অতিথি চলে এসেছে। কবীর চৌধুরী তাদের স্বাগতম জানানোর জন্য কয়েকজন লোক কে নিয়ে গেলো। আহিয়ান’র মা নিজেও গেলেন। আহিয়ানের কৌতুহল বেড়ে গেল। বিশেষ অতিথি কে দেখবার জন্য।

অবশেষে লোকজন এখানে আসতে লাগলো। প্রথমেই কয়েকজন গার্ড আসলো। সেখানে ডেভিল কে দেখে আহিয়ান ভাবল হয়তো নিহা আসছে। তবে তার ধারনা ভুল হলো যখন দেখলো একটা সবুজ রঙের লেহেঙ্গা পড়ে মেহেরিন আসছে। আহিয়ান অবাক হয়ে বলল…

– মেহেরিন বর্ষা খান! ও এখানে!

শুধু তাই নয় সেম রঙের লেহেঙ্গা পড়ে নিশিও আসলো। তার সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে নীল ওরা সবাই হাজির। কিন্তু নিহা কে দেখতে পেলো না সে। আনহা প্রেগন্যান্ট বলে সে আসেনি আর তাকে দেখাশোনার জন্য অভ্র ও আসেনি। কিন্তু তারা কেউ জানে না আজ নিহা’র বিয়ে। এমনকি এখানে উপস্থিত কেউ জানে না শুধু মেহেরিন ছাড়া। মিডিয়ার লোকজন মেহেরিন দের ছবি তুলতে ব্যস্ত। এক পর্যায়ে মেহেরিন আর আহিয়ান’র চোখাচোখি হলো। মেহেরিন তাকে দেখে একটা রহস্যময় হাসি দিলো। তবে এই হাসির মানে বুঝলো না আহিয়ান।

আহিয়ান খেয়াল করল তার মা আর বাবার সাথে মেহেরিন’র খুব ভাব। প্রায় অনেকক্ষণ পর কনে কে আনা হলো। কনে’র মুখ দেখা যাচ্ছে না কারন পুরো মুখ ঘোমটা দিয়ে ঢাকা। তবে তার লেহেঙ্গা দেখে সে ভারী অবাক। কারন এটা তার পছন্দ করা সেই মেরুন রঙের লেহেঙ্গা! কনে কে নিয়া আসা হচ্ছে স্টেজে’র কাছে। মেহেরিন উঠে গিয়ে কনের হাত ধরে আহিয়ান’র সামনে এসে দাড় করালো। আহিয়ানের এবার সন্দেহ হলো কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না। মেহেরিন বলে উঠে…

– হবু বউ’র হাত ধরে তাকে বসানোর দায়িত্ব আপনার তাই নয় কি?

মেহেরিন’র কথা শুনে আহিয়ান এসে কনের হাত ধরল। হাত ধরার পর আহিয়ানের আর বুঝতে বাকি নেই এটা নিহা! আহিয়ান কাউকে কিছু না বলে ঘোমটা সরিয়ে ফেলল। অতঃপর তার সন্দেহ ঠিক হলো। কারন এটা নিহা। আহিয়ান বলে উঠে….

– নিহা তুমি!

আহিয়ানের কথা শুনে রোদ্দুর, নিশি, নীল সবাই অবাক। মিডিয়ার লোকজন সবাই এখন আহিয়ান আর নিহা’র দিকে ক্যামারে ধরে আছে। সব নিউজ চ্যানেলে এখন এই খবর প্রচারিত হতে লাগলো। আহিয়ান চৌধুরী’র সাথে নিহারিকা নিহা খান’র বিয়ে হতে চলেছে। এক্ষেত্রে মেহেরিন বলে উঠে…

– তাহলে আর কে থাকবে জিজু!

– কে থাকবে মানে নিতি থাকবে। আমার উড বি ওয়াইফ তো সেই!

– সরি সেটা উড বি হবে না হবে এক্স উড বি ওয়াইফ! আর সে ওয়াইফ হবে না হবার কথা ছিলো।

– মানে!

নিহা বলে উঠে..
– মানে টা আপনাকে আমি বুঝাচ্ছি আহিয়ান চৌধুরী!
বলেছিলাম না আপনার প্রতিশোধের ঋণ এখনো বাকি আছে।

– আমি তোমাকে বিয়ে করবো না কোনোমতে না।

নিহা আহিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে তার দিকে ঝুঁকে বলে…
– বিয়ে তো আপনি আমাকেই করবেন। হয়তো নিজ ইচ্ছায় না হলে জোর করে করবেন তো আমাকেই। বলেছিলাম না আপনার আকাশে শুধু আমার নামেই চাঁদ থাকবে। ভাবলেন কিভাবে সেখানে অন্য চাঁদের আবদার আমি মেনে নেবো। এভাবেও চাঁদ একটাই থাকে। কিন্তু আপনি তো দেখি চাঁদ ছেড়ে তাঁরা কে নিজের করতে চেয়েছেন।

– বাজে কথা একদম বলবে না।

মেহেরিন স্টেজ থেকে নিচে নেমে বলে…
– বাজে কথা কোথায় বললাম জিজু!

– নিতি কোথায়? নিতি কোথায় মেহেরিন!

– আরে জিজু আমি এতোটাও খারাপ না যে আপনার এক্স কে মেরে ফেলবো। সে বেঁচেই আছে। তবে আপনার আর দি’র বিয়ের পর’ই তার মুখ দেখতে পারবেন আমি।

– আমি এই বিয়ে করবো না।

– আমি তো ঘি চামচ দিয়ে উঠাই আপনি বলবে ছুরি ইউজ করতে রাজী আছে। ওভার অল আমার জিজু বলে কথা। এতো টুকু কষ্ট তো করতেই পারি।

আহিয়ান মেহেরিন’র কথার অর্থ ঠিক’ই‌ বুঝতে পারলো। সে যে তাকে নিতি’কে মারার হুমকি দিচ্ছে সে বুঝতে বাকি নেই তার। কিন্তু যাই হোক এই বিয়ে সে করবে না। নিহা কে বিয়ে তার ভাইয়ের খুনি কে কখনো বিয়ে করবে না সে। আহিয়ান বলে উঠে…

– তবুও বিয়ে করবো না আমি। কখনো বিয়ে করবো না এই মেয়েটাকে!

মেহেরিন মুচকি হাসি দিয়ে আবারও স্টেজে উঠে। অতঃপর নিহা কে সরিয়ে আহিয়ান’র সামনে দাঁড়ায়। অতঃপর আস্তে করে বলে…

– বুদ্ধিমান আপনি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা কে অনেক ভালোবাসেন আপনি। তাই বিয়েটার জন্য বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে না আমার। কিন্তু দেখছি আপনি খুব জেদি। পুরো আমার দি এর মতো। আচ্ছা একটা কথা বলি! প্রাক্তনের কথা নাই চিন্তা করলেন তবে নিজের মা বাবা’র চিন্তা তো ঠিক’ই করতে পারেন।

মেহেরিন’র কথায় কথায় আহিয়ান তার মা বাবা কে খুঁজতে পায়। অতঃপর দেখে তারা এক পাশে দাঁড়ানো। আহিয়ান দৃষ্টিহীন ভাবে তাদের দেখতে থাকে। মেহেরিন আহিয়ানের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে…

– আরে আরে আমি নির্দয় নই। উনারা বেচেই আছে। তবে বয়স হয়েছে কিন্তু। কোনো বড় শক তাদের জন্য ঠিক না।

আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। মেহেরিন বলে উঠে…
– আচ্ছা বুঝতে পেরেছি অনেক কনফিউশন এ ভুগছেন আমি ক্লিয়ার করি ওকে। আপনার বাবা অনেক সাধনার পর অবশেষে খান কোম্পানির সাথে ডিল করতে পেরেছে। এখন বুঝতেই পারছেন আমি যদি ডিল টা ক্যান্সেল করে দেই তাহলে কি হতে পারে। আপনাদের কোম্পানী পুরো ঢুবে যাবে। একবারে মাটিতে মিশে যাবে, এখন একটা কথা বুঝুন যত তাড়াতাড়ি মাটিতে মিশবে তত তাড়াতাড়ি কিন্তু সেটাকে উঠাতে পারবেন না। কোম্পানি উঠাতে উঠাতে যুগ পাড় হয়ে যাবে। রাস্তার ফকির হয়ে যাবেন। এই বয়সে বাবা মা দের এই কষ্ট দিবেন।

– মেহেরিন.. তুমি এটা কিভাবে করতে পারো!

– আমার দি এর জন্য আমি কি করতে পারি সেটা সম্পর্কে আপনার ধারনা নেই। এখনও যদি না বুঝতে চান তাহলে আপনার মা বাবা’র সাথে কথা বলতেন পারেন। তারা কিন্তু রাজী এই বিয়েতে। এই নিয়ে তাদের সাথে আমার অনেক আগেই কথা হয়ে গেছে। বাকি টা আপনার ইচ্ছা!

আহিয়ান কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। মেহেরিন নিহা কে আহিয়ান’র পাশে বসিয়ে দেয়। আহিয়ান যে সব জায়গা দিয়ে ফেঁসে গেছে সেটা সে ভালোই বুঝতে পেরেছে। তবে এরকম যে হবে এটার ধারনা ছিলো না তার। মেহেরিন বুঝে গেছে আহিয়ান হার মেনে গেছে। সে কাজী কে ডাক দেয় বিয়ে পড়ানোর জন্য। অবশেষে আহিয়ান আর নিহা’র বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ে শেষ হবার পর নিতি দৌড়ে আসে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তাকে অজ্ঞান করা হয়েছিল। আহিয়ান’র বিয়ে হয়ে গেছে শুনে আবারও অজ্ঞান হয়ে যায় নিতি। আহিয়ান’র কিছু বলার থাকে না। দুজনেই যায় আহিয়ান মা বাবা’র কাছে। তারা দুজনেই খুব খুশি। কাব্য মেহেরিন কে খুঁচিয়ে বলে…

– এটা কি হলো?

– বিয়ে!

– কিন্তু নিহা দি!

– কেন জিজু ভালো লাগে নি।

– না তা না কিন্তু তুই তো জোর করিয়ে বিয়ে দিলি।

– এটা দরকার ছিলো তাই। এখন চল!
.
মেহেরিন’র কথায় নিহা আর আহিয়ান কে নিয়ে খান বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। যদি ও এটা নিয়ম না তবুও নিহা কে সে এখানে রাখতে রাজী না। আহিয়ানের মা বলে উঠে…

– আমাকে তোমার বিশ্বাস হয় না মেহেরিন!

– আরে সুইট আন্টি, কি যে বলো তুমি! তোমাকে বিশ্বাস করবো না তো কাকে করবো কিন্তু তোমার এই ছেলেকেই আমার বিশ্বাস নেই। একা পেয়ে যদি আমার দি কে মেরে ফেলে তখন।

মেহেরিন’র কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে এমনকি আহিয়ান নিজেও। এসব ভাবে নি সে। মেহেরিন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে…
– আমি রিস্ক নিতে চাই না। সবকিছু ঠিকঠাক হলে দি আর জিজু কে নিজেই দিয়ে যাবো। ততোদিন থাকুক আমার সাথে।

মেহেরিন’র কথার উপরে কেউ কিছু বললো না। অবশেষে খান বাড়িতে যাবার জন্য রওনা দিলো সবাই। আহিয়ান’র যাবার আগে আহিয়ান কে বললেন…

– ঠিক আর ভুল বিচার করার বুদ্ধিমত্তা তোমার আছে। নিজেকে সময় দিলে তুমি নিজেই সেটা বুঝতে পারবে।
আহিয়ান কিছু বলে না। মা নিহা কে ও অনেক আদর করে।

খান বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিহা আর আহিয়ান। ওদের সামনে অভ্র আর আনহা। নিহা’র পিছনে তাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরিন। সে একটু পর পরই উঁকি দিচ্ছে। বাকি সবাই বাড়ির ভিতরে। অতঃপর…

#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২২

খান বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিহা আর আহিয়ান। ওদের সামনে অভ্র আর আনহা। নিহা’র পিছনে তাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরিন। সে একটু পর পরই উঁকি দিচ্ছে। বাকি সবাই বাড়ির ভিতরে। অতঃপর অভ্র বলে উঠে….

– আদুরী!

– হামম হামম।

– এসব কি হলো?

– কিসব আবার বিয়ে হলো।

– বিয়েটা কি করে হলে সব’ই‌ টিভিতে দেখেছি আমি!

– তাহলে আবার জিজ্ঞেস কেন করছো?

– বিয়েটা জোর করে হয়েছে তাই!

– জোর করে! কে বললো জোর করে বিয়ে হয়েছে!

– তুমি এখানে আসো!

মেহেরিন সামনে গেলে অভ্র মেহেরিন’র‌ কান ধরে বলে..
– আমার সাথে চালাকি, বলেছিলে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছি আর এখন তো দেখি তুমি বিয়ে পড়াতে গেছো।

– দা তুমি দেখছি এতোটুকুও জানো না। বিয়ে তো কাজী পরায় আমি না। এখন বিয়ে তো হয়েই গেছে এসব বলে আর লাভ কি! নাও তোমার বোনের আর বোনের বর কে ভিতরে আসতে বলে।

নিহা অভ্র’র দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে দেখছে তাদের হঠাৎ করেই আনহা এসে বললো…

– দেখি সরুন সামনে থেকে।

– তুমি!

– হ্যাঁ আমি আরে আমার ননদিনী বিয়ে করে বর কে নিয়ে এসেছে তাকে বরণ করতে হবে না।

মেহেরিন বলে উঠে..
– এজন্য’ই তোমাকে মিষ্টি ভাবী বলে ডাকি আমি।

অভ্র বলে উঠে..
– মানে আমার কোনো দাম আছে নাকি।

– হ্যাঁ আছে তো। কে বললে নেই, যদি না থাকতো তাহলে দি এতোক্ষণে ঘরের মধ্যে থাকতো।

অভ্র মেহেরিন’র হাত ধরে বলে…
– তুমি আমার সাথে এসো।

বলেই মেহেরিন কে নিয়ে যায়। আনহা নিহা আর আহিয়ান কে বরণ করে ঘরে নিয়ে আসে। তবে এখানেও কাব্য আর ইহান বলে কোলে তুলে না নিলে ঘরে ঢুকতো দেওয়া হবে না। অতঃপর আহিয়ান অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিহা কে কোলে তুলে। তবে সেটা দু’কদম অবদি। এদিকে অভ্র ডেভিল থেকেই সব শুনেছিল, এখন মেহেরিন কে জিজ্ঞেস করে..

– যা করলে এটা কি ঠিক করলে!

– দা ভুল কি করলাম!

– তোমার কি মনে হয় আদুরী, বিয়েটা কোনো খেলা না। দু’টো মানুষের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিলে কেউ সুখী হবে না।

– জিজু যা করেছে সেটা!

– জানি ঠিক করে নি তবে তাই বলে বিয়ে!

– দা তুমি’ই তো বলেছিলে Life is a game. আর এই গেম’এ জিতার জন্য অনেক কিছুই করতে হয় যদিও সেই পরিস্থিতিতে সেটা ঠিক বলে মনে না হয় তবুও।

– কিন্তু নিহা!

– নিহা দি খুব হ্যাপি থাকবে। তোমায় কথা দিচ্ছে আদুরী। আমাকে কি বিশ্বাস করো না তুমি!

– আমার বিশ্বাস তুমি!

– তাহলে চিল করো। তোমার বোনের বিয়ে হয়েছে। কালকে পার্টির আয়োজন করো ঠিক আছে আমি গেলাম।
বলেই মেহেরিন চলে গেলো। অতঃপর অভ্র ‌নিজে নিজেই বলে…
– আদুরী বিয়ে, ভালোবাসা, প্রেম এসব সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। তুমি ভেবেছ এটাতে তোমার বোন সুখি হবে। কিন্তু ঘৃনা কে ভালোবাসায় পরিণত করতে অনেক সময় লাগবে আমি জানি না তুমি সেটা করতে পারবে কি না।
.
আনহা রোদ্দুর কে বলে আহিয়ান কে রুমে নিয়ে যেতে, অতঃপর আহিয়ান নিহা’র ঘরে চলে যায়। গিয়ে দেখে পুরো রুম ফুল আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো কারন আজ তার বাসর। রোদ্দুর আহিয়ান কে দিয়েই চলে যায়। আহিয়ান রাগের কারনে পুরো ঘর উলোটপালোট করে দেয়। সব ফুল ছিঁড়ে ফেলে।

এদিকে আনহা আর নিশি মিলে নিহা’র‌ সাথে‌ মজা করতে থাকে। অতঃপর মেহেরিন আসলে সে নিহা কে নিয়ে ঘরের দিকে যায়। নিহা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর তারা সবাই মিলে বাগানে যায় বাজি ফুটানোর জন্য।

নিহা ঘরে ঢুকে দেখে পুরো ঘরের অবস্থা বেহাল। আহিয়ান চেয়ারে বসে ছিল। সে নিহা কে দেখে তার সামনে এসে দাঁড়াল।

– এতোটা নিচে না নামলেও পারতে!

– আপনি নিজেই তো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন তাহলে নিচে তো নামবই তাই না।

আহিয়ান নিহা’র বাহু ধরে বলে…
– এই বিয়ে আমি মানি না বুঝলে

– পুরো দুনিয়া মানে… আচ্ছা বাদ দিন এইসব কথা। ঘরের এই হাল কেন করলেন।

– তাহলে কি আশা করেছিলে আমার কাছে!

– আপনি নিহারিকা নিহা খান’র বর। এর চেয়েও ধামাকার কিছু আশা করেছিলাম আমি।

আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে। নিহা আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জলন্ত কয়েকটা মোমবাতি ছুঁড়ে মারে বিছানায়। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে পুরো বিছানায়। আহিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।

– এটা কি করলে!

– যেটা আপনার করার দরকার ছিলো!
আহিয়ান রেগে ঘর থেকে বের হতে নিলে দেখে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। আহিয়ান নিহা’কে বলে..

– এটা কে করল!

– যা করার সে করেছে। এতো রাগছেন কেন

– থাকবো না তোমার সাথে আমি এক ঘরে।

– এখানেই থাকতে হবে আপনাকে।
বলেই আহিয়ান টেনে চেয়ারে বসাল।

– কি করছো।

– বাসর করছি!
বলেই আহিয়ান’র কোলে বসে পরল।

– এই এই নামো আমার কোল থেকে।

– কেন নামবো। আর নেমেই বা কি করবো। বিছানা আগুন জ্বলছে আমি ঘুমাবো কোথায়!

– তাই বলে আমার কোলে ঘুমাবে তুমি।

– হ্যাঁ!

– নিহা!

আহিয়ান’র গাল টেনে…
– রেগে লাভ নেই আমি তো এখানেই ঘুমাবো বর সাহেব।

– এসব ভালো হচ্ছে না কিন্তু নিহা।

– আপনার মুখে নিহা নামটা শুনতে আমার ভালো লাগছে না। ভূতনি নামে অভস্ত আমি।

আহিয়ান মুখ ফিরিয়ে নেই। নিহা আহিয়ান’র গাল ধরে একটা চুমু খেয়ে বলে…

– গুড নাইট!

অতঃপর জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। আহিয়ান না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিছানার দিকে, দাউদাউ করে জ্বলছে! এই আগুনের মতোই তার মনে এখন আগুন জ্বলছে। রাগ ঘৃণা দুইটার সংমিশ্রণে তা আরো ভয়াবহ হচ্ছে।

মেহেরিন, নীল , রোদ্দুর সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছে নিহা’র ঘরের জানালা দিয়ে আগুনের ধোঁয়া বেরুচ্ছে। কেউ বুঝতে পারছে না এই সম্পর্কের ইতি কি হবে। বেশি চিন্তা করছে অভ্র। এভাবে না তার বোনের জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়! মেহেরিন দেখছে আগুনের ধোঁয়া আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে…

– তোমাদের মধ্যে’র দূরত্ব আমি মিটাবো দি!
.
সকাল সকাল মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে নিহা’র ঘরের সামনে। ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল সে। অবাক হয়ে দেখছে আহিয়ান চেয়ারে বসে আছে আর নিহা তার কোলে বসেই ঘুমিয়ে গেছে। মেহেরিন দুজনকে এভাবে দেখে বলে..

– আউউউ কি সুন্দর লাগছে এভাবে দেখতে। কিসি কি নজর না লাগে! কাল রাতে বিছানায় আগুন ধরিয়ে এভাবে ঘুমালো অবশেষে। একটা ছবি তুলে রাখি।

বলেই একটা ছবি তুলল। তখন হুট করে কেউ মেহেরিন কে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নিশি। নিশি মেহেরিন’র মাথায় বাড়ি মেরে বলে..

– তুই কি জীবনে কিছু শিখবি না।

– আমি আবার কি করলাম।

– এভাবে দি এর রুমে নক না করে ঢুকি বলছিস কি করেছিস

– তো কি হয়েছে?

– কিছু না কিন্তু মনে রাখবি দি এখন বিবাহিত। তাই নক করেই ঢুকবি।

– ওকে ওকে এখন তো ঢুকেই গেছি চল ডাক দেই।
বলেই মেহেরিন আবারও রুমে ঢুকতে যায়। তখন নিশি ওকে ধরে বলে..

– কি বললাম তোকে এতোক্ষণ ধরে আমি। নক কর!

– করছি!

অতঃপর মেহেরিন দরজা নক করল। নিহা’র ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে চট করে আহিয়ানের কোল থেকে নেমে গেল।
দরজা খুলে তাকিয়ে দেখে নিশি আর মেহেরিন দাঁড়ানো। মেহেরিন’র নিহাকে দেখে দাঁত বের করে হেসে বলল…

– গুড মর্নিং দি।

– মনিং!

– ঘুম ভেঙেছে না আরেকটু ঘুমাবে।

– না ঠিক আছে।
বলেই নিহা ঘর থেকে বের হয়ে বসার রুমে আসল। বাড়ির সবাই তখন সেখানেই ছিলো। নিহা এখনো বউ সাজেই আছে। সে বোতল টা নিয়ে পানি খেতে লাগলো। নীল বলে উঠে…

– কি রে দি তুই এখনো ফ্রেশ হয়ে আসিস নি।

– মাত্র’ই ঘুম ভাঙলো!

রোদ্দুর বলে উঠে..
– তা দি কাল কি আগুন জ্বালিয়েছিলে নাকি!

মেহেরিন বলে উঠে..
– হুম বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আর সারারাত জিজু’র কোলেই ঘুমিয়েছে!

মেহেরিন’র‌ কথায় সবাই অবাক। নিহা পানি খেতে গিয়েই বিষম লেগে যায়। অভ্র সব শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়। নিহা সবার দিকে একবার তাকিয়ে রুমে চলে যায়। নিশি আবারো মেহেরিন’র মাথায় বাড়ি মেরে বলে..

– তুই কি জীবনে শুধরাবি না। কোথায় কি বলতে হয় আজও শিখলি না।

এদিকে মেহেরিন বুঝতেই পারল না সে ভুল টা কি বলেছে।
.
আহিয়ানের সাথে বাড়ির সবাই খুব স্বাভাবিক আচরণ করে, এতে আহিয়ানের অনেক অবাক লাগে কিন্তু তবুও যেন মনে হয় তারা সব জেনেও তার সাথে এমন ব্যবহার করে। যদি তারা সব জানেই তাহলে তাদের কাছে এরকম আচরণ আশা করে না সে। রাতে নিহা আর আহিয়ান’র বিয়ে উপলক্ষে একটা পার্টির আয়োজন করা হয়। সেখানে সবাই থাকে। আহিয়ান’র‌ মা বাবা আর নিতিও। নিতি আহিয়ান কে কিছু জিজ্ঞেস করে না। আর করেও লাভ নেই। সে সবকিছুই জেনেছে। আহিয়ান কে বিয়েটা জোর করেই দেওয়া হয়েছে।‌

পার্টিতে আহিয়ান ইচ্ছে করেই নিতি’র সাথে ডান্স করে। নিহা একপাশে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। এদিকে মেহেরিন এসব দেখে সবাইকে নিয়ে এসে কাপল ডান্স করতে থাকে। অনেক কাপল ডান্স করে একসাথে। তারা সবাই গোল হয়ে নাচতে থাকে। একবার ডান্স করার পর সবাই তার পার্টনার চেঞ্জ করে। একপর্যায়ে আহিয়ান আর মেহেরিন নাচ করে। মেহেরিন আহিয়ান কে বলে..

– খুব ভালো ডান্স করেন আপনি জিজু, তবে আপনার পার্টনার শুধু আমার দি হবে!

আহিয়ান মেহেরিন’র কথায় কপাল কুঁচকে তাকায়। অতঃপর মেহেরিন কে ঘুরিয়ে দিয়ে আরেক পার্টনার’র হাত ধরে। মুহুর্তে সকল লাইট নিভে যায়। আহিয়ান এখনো হাত ধরে আছে আর এটা যে নিহা’র হাত এটা বুঝতে বেশিক্ষণ লাগে না তার। শুধুমাত্র একটা লাইট জ্বলে উঠে সেটা আহিয়ান আর নিহা’র ওপর। সবাই হাততালি দেওয়া শুরু করে তার সাথে চেয়ারআপ করতে থাকে। আহিয়ান এখন ইচ্ছে করেও হাত ছাড়াতে পারে না। মিউজিক অন হয়, আহিয়ান আর নিহা নাচতে থাকে। অনেক সুন্দর করেই নাচে তারা। নিতি এসব দেখে রেগে যায়। তখন পাশ থেকে নিশি বলে উঠে..

– সেই জিনিস তোমার না সেটা নিয়ে রেগে কিন্তু লাভ নেই।

– ভুলে যেও না তোমার বোন জোর করে বিয়েটা করেছে আর বিয়েটা আমার সাথেই হবার কথা ছিলো।

– হবার কথা ছিল কিন্তু হয় নি। জিজু’র স্ত্রী কিন্তু তুমি না। এটা মনে রেখো। আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম যাতে আমার জিজু’র আশেপাশে তোমায় না দেখি কারন এখন ভালো ভাবে বুঝাচ্ছি তখন নাও বুঝাতে পারি।
বলেই চলে আসে নিশি। নিতি রেগে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।

ডান্স শেষে আহিয়ান নিতি কে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে কল করে। নিতি আহিয়ানের কল দেখে রিসিভ করে কাঁদতে থাকে..

– নিতি কাঁদছো কেন তুমি!

– আহি!

– কাঁদছো কেন? কোথায় তুমি!

– আমাকে অনেক অপমান করেছে তোমার ওয়াইফ এর বোন। বলেছে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে আমি চলে এসেছে।

– কি? এখন কোথায় তুমি!

– অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। আসবে তুমি!

– আছো কোথায় তুমি সেটা বলো।

– বেশি দূরে না কাছেই আছি। এখানে’ই একটা পার্কে। তোমার জন্য’ই বসে আছি। তুমি যদি না আসো আমি এখানেই থাকবো সারারাত!

– নিতি আমার কথা শোন নিতি..
কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল। আহিয়ান আর বসে না থেকে বের হয়ে গেল গাড়ি নিয়ে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখতে পেলো একটা বেঞ্চে একটা মেয়ে বসে আছে। পার্কে আর কেউ নেই। আহিয়ান ভাবল এটা হয়তো নিতি। সে এগিয়ে গিয়ে বেঞ্চে’র কোনায় বসলো।

#চলবে….

[ ৯ টা বাজে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৩

আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে…

– নিতি! তোমাকে আমি মিথ্যের আশ্বাস দেবো না কিন্তু এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি যত’ই বলি না কেন নিহা’কে আমি স্ত্রী হিসেবে মানি না তবুও সেই আমার স্ত্রী। ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে সবার ধারনা আছে। নিতি.. খুব খারাপ ভাবে ফেঁসে গেছে আমি বিশ্বাস করো খুব খারাপ ভাবে। আমি জানি তোমার মনের মধ্য দিয়ে কি যাচ্ছে। অনেক কষ্ট পেয়েছো তুমি। তোমাকে বোঝতে পারি আমি! কিন্তু আমার সত্যি কিছু করার নেই।

– নিতি কে বুঝতে পারেন কিন্তু আমাকে নাহ!
আহিয়ান চমকে উঠে কারন এটা নিহা’র গলা। সে চট করে উঠে নিহা’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে…

– তুমি! তুমি এখানে! নিতি কোথায়?

– আমি কি বললাম আপনাকে!

– নিহা নিতি কোথায়?

– আপনি ওকে খুব ভালোবাসেন না!

আহিয়ান রেগে নিহা’র দুই বাহু চেপে ধরল। অতঃপর বলল..
– নিতি কোথায়? কি করেছে ওর সাথে। মেরে ফেলেছো ওকে।

নিহা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে..
– ওকে মেরে আমার লাভ কি! ও তো কিছুই করে নি যা করবার সব তো আপনি করলেন। চিন্তা করবেন না বাসায় আছে ও।

নিহা ছেড়ে দিয়ে..
– এতোক্ষণ লাগলো এইটা বলতে!

– খুব ভালোবাসেন না ওকে।

– হ্যাঁ বাসি তো!

– কিছু না আপনার ওপর অধিকার আছে কিন্তু আপনার মনের ওপর অধিকার করতে পারি না। তবে আমার জন্য শুধুই কি ঘৃনা আছে!

– হ্যাঁ শুধুই ঘৃনা আছে আমার তোমার জন্য। আর কিছু নেই!

– আপনি কেন বুঝতে পারেন না আহিয়ান।

– কারন তুমি বোঝার মতো কিছুই করো নি।

– সত্যি ভালোবাসি আপনাকে। সব করতে পারি আপনার জন্য.

– সব করতে পারবে।

– মরে যেতে বলছেন।

– পারবে মরতে!

– মরতে আমি ভয় পাই না আহিয়ান।

– তাহলে মরে যাও। তোমার জন্য আমার ভাই মারা গেছে, তাহলে তুমি বেঁচে থাকবে কেন?

– নিজের হাতে মারবেন আমায়!

আহিয়ান তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে। নিহা পিছন থেকে একটা গান বের করে আহিয়ান’র হাতে দিলো।‌ বলল…

– নিন মেরে ফেলুন আমাকে।

-……

– কি হলো মারুন।

নিহা আহিয়ান’র হাত ধরে গান টা নিজের কপালে ঠেকাল। অতঃপর আহিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আহিয়ান গান ছুড়ে ফেলে বলল..

– তোমাকে এভাবে মেরে ফেললে তোমার আর আমার মাঝে পার্থক্য কি রইল। এভাবে মারবো না তোমাকে তিলে তিলে মারবো!

বলেই আহিয়ান চলে এলো। নিহা পেছন থেকে বলল …

– আমাকে কখনোই আপনি মারতে পারবেন না আহিয়ান। আপনি ভালোবাসেন আমাকে! আপনার পক্ষে আমাকে মারা সম্ভব না।

– তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই ভাবো!

বলেই আহিয়ান চলে এলো।
.
কয়েকদিন কেটে গেল, তবে আহিয়ান আর নিহা’র মাঝে এখনো কিছু ঠিক নেই।‌ মেহেরিন কলেজ থেকে রাস্তা দিয়ে আসার সময় ভাবছে কি করা যায়। কিভাবে তাদের সম্পর্ক ঠিক করবে। হঠাৎ করেই একটা বিড়ালের আওয়াজ পেলো সে। মেহেরিন আশেপাশে খুঁজতে লাগলো কোথায় বিড়াল ডাকছে। পাশেই কনস্ট্রাকশন এর জিনিসপত্র পড়ে ছিল। মেহেরিন হাঁটতে হাঁটতে সেখানে গেলো। দেখল কিছু মাটি’র মাঝে একটা বিড়ালের বাচ্চা পড়ে আছে। মেহেরিন সেটা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে নিতে গেলো। কিন্তু মাটিতে অনেক পানি থাকায় সেও ধপাস করে পড়ে গেলো।‌ পুরো মাটিতে মাখামাখি একটা অবস্থা। মেহেরিন এই অবস্থায় কোনমতে বিড়াল কে নিয়ে বের হলো। বলতে লাগল…

– দেখলে বিড়াল বাচ্চা তোমার জন্য আমার কি হলো! দা অনেক বকবে আমায় এই অবস্থায় দেখলে। তোমার অবস্থা ও ভালো না। এখানে আসলে কিভাবে তুমি!

বিড়াল মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো। মেহেরিন আবার বলল..

– বিড়াল বাচ্চা দা তোমাকে রাখতে দেবে কি না জানি না। মনে হয় তোমার সাথে আমাকেও বের করে দেবে বাড়ি থেকে। তোমার কি মনে হয়।

বিড়াল আবারও মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো। মেহেরিন এবার বলল..

– তুমি দেখি মিয়াও মিয়াও ছাড়া কিছুই জানো। সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দেবো।

এর মধ্যে ডেভিল চলে এলো। তার হাতে আইসক্রিম! সে মেহেরিন কে বলতে লাগল..

– ম্যাম আপনার এমন অবস্থা কেন? আমাকে আইসক্রিম আনতে বলে আপনি কোথায় চলে গেছিলেন। অভ্র স্যার জানলে খুব রাগ করবে।

– এটা তো এই বিড়ার বাচ্চা কে দেখলেও বলবে। আচ্ছা এখন বাসায় চলো!

– জ্বি ম্যাম!

মেহেরিন বিড়াল কে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাসায় ঢুকল। কোনোমতে অভ্র’র সামনে পড়া যাবে না। মেহেরিন দেখল অভ্র সোফায় বসে ল্যাপটব টিপছে। মেহেরিন অভ্র’র পেছন দিক দিয়ে যেতে লাগল। হুট করে অভ্র বলে উঠে…

– আদুরী দাঁড়াও!

মেহেরিন চোখ বন্ধ করে বলে..
– যা ধরা পড়ে গেলাম।

– তোমার এই অবস্থা কেন?

– আসলে দা এই বিড়াল বাচ্চা টার জন্য!

– বিড়ার বাচ্চা!

– হুম কিউটি কিউটি বিড়াল বাচ্চা!

তখন নিহা আর আহিয়ান আসলো। নিহা মেহেরিন কে বলে..
– তোমার এই হাল কেনো আদুরী!

আহিয়ান বলে উঠে..
– মাটি এতো পছন্দ করো নাকি!

– আরে আমি তো মাটির মানুষ জানেন না জিজু।

– কিন্তু তোমার এই হাল কেনো!

– আসলে দি এই বিড়াল টা পড়ে ছিল মাটিতে তাকে নিতে গিয়ে…

– তাকে নিতে গিয়ে তুমিও বিড়াল হয়ে এলে।

– দা!

– এই বিড়ার রাখা যাবে না এখানে। সব চেয়ে বড় বিড়াল বাচ্চা তো তুমি। তোমাকে সামলাতে সামলাতেই আমাদের নাজেহাল অবস্থা!

– দি….!

– আচ্ছা দা এটা নিয়ে পড়ে কথা হবে আদুরী আগে আমার সাথে এসো পরিষ্কার হয়ে নেবে!

– হুম হুম চলো চলো!

নিহা মেহেরিন’র হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে লাগল। তখন আহিয়ান বলে উঠে..
– বিড়াল টাকে আমাকে দাও!

– মেরে ফেলবেন নাকি!

– তোমার মাথায় এসব চিন্তা ভাবনা আসে কিভাবে?

– তাহলে এটা নিয়ে কি করবেন।

– পরিষ্কার করবো এটা দেখছো না এটার হাল।

– পারবেন!

– বেশি বক বক করো দাও এটা!

– আপনার বিড়াল পছন্দ আগে বললেই হতো। যাক ভালো হলো আপনি এটাকে পরিষ্কার করুন আর দি আমাকে বড়ুক।

– হ্যাঁ বড় বিড়াল বাচ্চা কে ‌ও পরিষ্কার করুক আর ছোট বিড়াল বাচ্চা কে আমি!
বলেই আহিয়ান বিড়াল টাকে নিয়ে চলে গেলো। নিহা মেহেরিন কে নিয়ে গেল।
.
মেহেরিন শাওয়ার নিয়ে সোজা বসার ঘরে আসে। দেখে আহিয়ান বিড়াল বাচ্চা টাকে নিয়ে বসে আছে। মেহেরিন বলে উঠে..

– ইশ বিড়াল বাচ্চা টাকে এখন আমার মতো আরো কিউটি কিউটি লাগছে।
বলেই বিড়াল টাকে নিয়ে বসে পড়ল। নিহা তোয়ালে নিয়ে এসে মেহেরিন’র চুল মুছতে লাগলো। মেহেরিন বিড়াল টাকে আদর করতে করতে বলল..

– খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করেছেন দেখি বিড়ার বাচ্চা টাকে!

– হুম আমার ছিল এরকম একটা বিড়াল বাচ্চা!

– ওটা কোথায় আমাকে দিন না তাহলে আমি দুইটা বিড়াল বাচ্চা পালবো।

– সেটা এখন আর নেই মারা গেছে!

– ওহ সরি ! আচ্ছা সমস্যা নেই আপনি চাইলে আমার বিড়াল বাচ্চা থেকে ভাগ নিতে পারেন আমি মাইন্ড করবো না!

আহিয়ান মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। মাঝে মাঝে মেহেরিন কে চিন্তে পারে না সে। এই অনেক ভালো ভাবে কথা বলে, মনে হয় একটা বাচ্চা। আবার এমন ভাবে কথা বলে যেন মেরে ফেলবে ওকে। ও আসলে কি বুঝতে পারে না আহিয়ান।
হঠাৎ ওর পাশে বসে নিহা বলে উঠে..

– এটা নিহা না মেহেরিন! ওকে বোঝতে বোঝতে আপনার জীবন পার হয়ে যাবে। আমাকে বোঝা সহজ হলেও তাকে আপনি বুঝতে পারবেন না।

আহিয়ান নিহা’র দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর মনের কথা কিভাবে যে নিহা বুঝলো সেটা বুঝতে পারে না সে।
.
নীল আজ বেশ খুশি খুশি মুডে আছে। তার অবশ্য কারন হলো আজ প্রায় কয়েকদিন পর সে এসেছে ভার্সিটিতে! তবে ভার্সিটিতে এসেই সবার প্রথমে দেখল নীলাশা কে। তাকে দেখেই মাথা গরম হয়ে গেল তার। নীলাশা ওর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। দু জনের চোখাচোখি হয়ে গেল। নীলাশা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। নীল বিড় বিড় করে বলে..
– কি সমস্যা এই মেয়েটার, সবসময় আমার সামনেই আসতে হয় ওকে।

এদিকে নীলাশা বলে উঠে..
– এই ঝিল টা কেন যে আমার সামনেই আসে বুঝি না। এখন’ই দেখতে হলো এই ঝিল টাকে। আজ আমার দিন’টাই খারাপ যাবে বলে মনে হচ্ছে!
.
আহিয়ান বসার ঘরে বসে ছিল। নিহা বাসায় নেই কোথাও গেছে তবে এই বাড়ি থেকে তার বের হবার অনুমতি নেই। বের হতে গেলেই গার্ড এসে ‌আটকে ধরে বলে “ম্যাম আপনাকে বাইরে যেতে মানা করেছে”।

তাই কিছু না করে শুধু শুধু বসার ঘরে বসে ফোন টিপছে সে। মেহেরিন বাকি ওরা বোধহয় ছাদে। হঠাৎ কেউ তার সামনে পাকড়া আর চা রাখল। আহিয়ান তাকিয়ে দেখল আনহা। আনহা হেসে বলল..

– নাও খাও তোমার জন্য বানিয়েছি। একা একা বসে থেকে খুব বোর ফিল করছো।

– ভাবী আপনি! আপনি এইসব কেন করতে গেলেন।

– আরে সমস্যা নেই খাও। আমাকে মিষ্টি ভাবী বলো সবাই সেই নামেই ডাকে।

আহিয়ান একটা পাকড়া মুখে দিয়ে বলে..
– এই বাড়িতে শুধু তোমাকেই ভালো লাগে আমার।

আনহা হেসে বলে..
– আমার শরীরে খান দের রক্ত নেই বলে!

আহিয়ান হেসে মাথা নাড়ায়। আনহা বলে..
– তবে আর যাই বলো তুমি আর আমি এক পথের যাত্রী! তোমার ও বাড়ী থেকে বের হওয়া বারন আর আমার তো অনেক আগে থেকেই!

– বাইরে যাবে তুমি মিষ্টি ভাবী!

– তোমার দা মানা করে গেছে!

– আমার সাথে যাবে।

– তোমার সাথে!

– হুম চলো আমার সাথে। দুজনে একসাথে ঘুরে আসবো।

– আমার না অনেক দোকানের তেলে গরম গরম ভাজা পুরি খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তোমার দা আমাকে খেতেই দেয় না।

– আচ্ছা চলো তাহলে আমার সাথে।

– বলছো!

– আরে চলো না তুমি!

অতঃপর আনহা আর আহিয়ান বের হলো। তবে আহিয়ান কে বের হতে দেয় নি। আনহা সাথে ছিল বলে যেতে দেওয়া হয়েছে।‌ সারা সন্ধ্যা মিলে দুজন ঘুরল। আনহা অনেক খাবার দাবার গেলো। এখানে আহিয়ান এতো দিন পর বাইরে আসতে পেরে ভালো লাগছে। দুজনেই খুব মজা করলো।

এদিকে অভ্র বাসায় এসে আনহা না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলো। নিহা দেখল আহিয়ান ও বাসায় নেই। মেহেরিন খোঁজ নিয়ে জানল দুজনে একসাথে গেছে। একথা শোনার পর সবাই একটু হলেও শান্তি পেলো কারন সবাই জানে এই বাড়িতে আহিয়ান আর আনহা’র খুব ভাব।
প্রায় অনেকক্ষণ পর আনহা হাতে আচারের প্যাকেট থেকে আচার খেতে ঢুকল। তার সাথে আহিয়ান ও। আনহা সোফায় অভ্র কে বসে থাকতে দেখে চট করে আচারের প্যাকেট টা লুকিয়ে ফেলল। অভ্র আনহা’র‌ সামনে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগে আহিয়ান বলল…

– দা আমি নিয়েগেছিলাম ‌মিষ্টি ভাবী কে।এখানে ভাবী’র কোনো দোষ নেই।

অভ্র কিঞ্চিত হেসে আহিয়ান’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল..
– তুমি সাথে ছিলে বলেই চিন্তা করছিলাম না। তবে তোমার ভাবী তোমাকে পটিয়ে খুব আজেবাজে জিনিস খেয়েছে তাই তো বকবোই!

– মোটেও না আমি কোনো আজেবাজে জিনিস খায়নি।

– আচারের প্যাকেট ফেলে দাও বলছি!

– আর একটু আছে!

অভ্র রেগে আনহা’র হাত থেকে আচারের প্যাকেট নিয়ে ফেলে দিলো।
– এইসব জিনিস তোমার জন্য ভালো না। ঔষধ খেতে হবে চলো।

বলেই তাকে ঘরে নিয়ে গেলো। এদিকে আহিয়ান এখনো অভ্র’র কথা ভাবছে। তাকে বিশ্বাস করে সে। কিভাবে হতে পারে এটা। আমাকে বিশ্বাস কেন করছে সবাই!
এসব কথা ঘুরতে থাকে ওর মাথায়। হঠাৎ নিহা এসে বলে..

– ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার বাড়ছি!

আহিয়ান কিছু না বলেই চলে গেলো, তবে নিহা এতে কিছু মনে করল না। কারন এতে তার অভ্যাস আছে।
.
১ মাস পর…
সেই লোকটা একটা গান নিয়ে একটা ছবি বরাবর বার বার শুট করছে। ছবিটা ছিল মেহেরিন’র হাসিমাখা একটা মুখ। আরেকটা লোক এসে তখন বলতে লাগল…

– আর কতোদিন এভাবে ছবি তেই মারবে ওকে।

– এছাড়া আর কি করবো বলো!

– তবে ওদের বন্ধুত্ব ভাঙার একটা প্ল্যান পেয়েছি!

– কি প্ল্যান!

– রোদ্দুর’র গার্লফ্রেন্ড!

– গার্লফ্রেন্ড!

– কি বলো তো ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব এতে কোনো থার্ড পারসন একবার আসতে পারলে সেই বন্ধুত্ব হোক আর ভালোবাসা টিকে না!

– গুড প্ল্যান! তাহলে অপেক্ষা করছো কিসের?

– তোমার অনুমতি!

সে বাঁকা হাসি হেসে শেষবারের মতো মেহেরিন’র ছবিতে গুলি করে বলে…
– শুরু করো!

#চলবে….

/#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৪

মেহেরিন একা একাই বাস্কেটবল খেলছিল। আসলে সেদিন ইহান, রোদ্দুর, নীল আর কাব্য বাইরে গিয়েছিল। অভ্র আনহা কে নিয়ে গেছে হসপিটালে। নিশি ঘুমাচ্ছিল আর নিহা কাজে ব্যস্ত ছিল তাই মেহেরিন একা একা বোর হচ্ছিল। বাস্কেটবল টা একবার এদিক একবার ওদিক করছিল। হঠাৎ করেই আহিয়ান বল টা ধরল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল ‌আহিয়ান হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বলল..

– বাস্কেটবল খেলবেন আমার সাথে!

– তুমি পারবে!

– দেখা যাক!

অতঃপর দুজনেই খেলতে শুরু করল। দুজনেই খুব ভালো খেলল। মেহেরিন খুব ভালো ভাবেই আহিয়ান কে টক্কর দিলো। দুজনেই খেলে খুব হাঁপিয়ে গেল। বসে পানি খেতে লাগল হুট করেই গাড়ির শব্দ আসায় মেহেরিন লাফ দিয়ে উঠল। সে বলতে লাগল..

– দা এসেছে, মিষ্টি ভাবী কে নিয়ে!

বলেই দৌড়ে যেতে লাগল।‌ হঠাৎ করেই পা মোচকে গেলো তার। সে পা ধরেই ধপাস করে বসে ভ্যা ভ্যা করতে লাগলো। আহিয়ান দূর থেকেই এসব দেখে হাসতে লাগলো। মেহেরিন তার নকল কান্না থামিয়ে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল..

– আমি ব্যাথা পেলাম আর জিজু আপনি হাসছেন!

আহিয়ান হাসি থামিয়ে বলল..
– দা ঠিক’ই বলেছিল, তুমি আসলেই একটা বিড়াল বাচ্চা! হুটহাট করে যখন তখন লাফ দেও আর পড়ে গিয়ে বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করো।

– আমি কিন্তু সত্যি বাচ্চা!

– হ্যাঁ‌‌ হ্যাঁ জানি তো!

মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে জোরে জোরে বলতে লাগল…
– দা, ভাইয়া, দি, আপু কোথায় তোমরা! তোমাদের আদরের আদুরী খুব ব্যাথা পেয়েছে। পিচ্চি মেয়েটা বসে আছে উঠতেও পারছে না। এ্যা এ্যা।

আহিয়ান মেহেরিন’র পাশে বসে বললো….
– সব তো ঠিক আছে কিন্তু তুমি শব্দের অর্থ কেন বলছো। দা অর্থ যে ভাইয়া, দি অর্থ আপু আমরা সবাই জানি!

– আচ্ছা আমাকে বলুন তো আপনাকে আমার জিজু কে বানিয়েছে!

– তুমি! এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে, ব্লেকমেইল করে বিয়ে করিয়ে দিলে নিজের দি’র সাথে।

– ওহ হ্যাঁ মনে এসেছে। কিন্তু জিজু আমি শব্দের অর্থ বলছি না। দা অর্থ বড় ভাইয়া ‌, দি অর্থ বড় আপি , ভাইয়া অর্থ ছোট ভাইয়া মানে নীল ভাইয়া আর দি মানে..

– নিশি মানে ছোট তোমার ছোট আপু রাইট!

– ইয়াপ ইয়াপ!

– কিন্তু আমাকে বলে এরকম শব্দের অর্থ কবে থেকে হলো!

– যেদিন থেকে আমার জন্ম। আসলে ওরকম বড় ভাইয়া বড় আপু ডাকতে ডাকতে আমি ক্লান্ত!

– দিনে ৪০ বার ডাকলে এরকম তো হবেই!

– আমার দা আমার দি আমি ডাকি। আপনার কষ্ট কোথায়?

– আমার কষ্ট নেই তবে তোমার পায়ের ব্যাথা কি কমে গেছে!

– খুব ব্যাথা করছে, এ্যা এ্যা! দি কোথায় তুমি! আমি ব্যাথা পেয়েছি আর তোমার বর আমাকে নিয়ে মজা করছে!

– আরে আরে মজা করলাম কোথায়, আর তোমার এই ন্যাকা কান্না বন্ধ করো। কাঁদছো না তো কিছুই বরং পুরো বাড়ি মাথায় নিচ্ছো!

– আপনার আমাকে দেখে মনে হয় এতো শক্তি আমার আছে!

– আচ্ছা তোমাকে ধরে নিয়ে যাবো, ওরা মনে হয় না কেউ তোমার ডাক শুনছে!

– ধরবেন মানে কোলে তুলুন। আমার পায়ে ব্যাথা, হাঁটব কিভাবে?

– ওকে!
বলেই মেহেরিন কে কোলে তুলল! মেহেরিন বলতে লাগল..

– হিসেব করলে কিন্তু আমি আপনার শত্রু হই তাই না জিজু!

– কিন্তু শত্রু বিপদে পড়লে সাহায্য করতে হয় তাই আমি করছি!

– এটা কি আপনাকে সুইট আন্টি বলেছিল!

– কেন?

– না আমার মা‌’ও আমাকে এই কথা বলতেন। শত্রু বিপদে পড়ে সাহায্য তাইলে তাকে সাহায্য করা উচিত!

– সব মায়েরাই এই কথা বলে বুঝলে!

মেহেরিন আবার ও সবাইকে ডাকতে লাগল। চেঁচিয়ে ডাকার কারনে আহিয়ান’র কান ফেটে যাচ্ছিল। এদিকে মেহেরিন’র কথা শুনে অভ্র, নিহা আর নিশি দৌড়ে এলো। মেহেরিন কে আহিয়ানের কোলে দেখে সবার অস্থিরতা বেড়ে গেলো। জলদি ডাক্তার ডাকা হলো।
আহিয়ান শুধু ওর তিন ভাইবোনের ছোটাছুটি দেখছিল। তারা সবাই যেনো পাগল হয়ে গেছিল!
.
রাতে নিহা এক গ্লাস দুধ আর চকলেট নিয়ে যায় মেহেরিন’র রুমের দিকে। তাকে দেখে আহিয়ান ও সাথে যায় মেহেরিন কেমন আছে তা জানতে। সেখানে গিয়ে আহিয়ান মাথা ঘুরিয়ে মেহেরিন কে দেখার চেষ্টা করে। সে বিছানায় পা আর মেঝেতে মাথা রেগে ফোনে গেমস খেলছে। সবাই সেখানেই ছিল! আহিয়ান বলল…

– তোমার না পায়ে ব্যাথা!

– তাই তো পা বিছানায়!

– তোমাকে বোঝা সত্যি দায়! পায়ের ব্যাথা এখন কেমন!

– কিউট কিউট আছে!

এরমাঝে মেহেরিন’র‌ বিড়াল বাচ্চা এসে হাজির। সে মেহেরিন মাথার কাছে বসে মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো! আহিয়ান বিড়াল টাকে নিয়ে বলল..

– ওর ক্ষুধা পেয়েছে আমি ওকে খেতে দেই!
বলেই তাকে নিয়ে গেল।

নিহা মেহেরিন কে উঠিয়ে বসাল। নিশি বলে উঠে..

– জিজু’র রাগ কমেছে কমেছে বলে মনে হচ্ছে!

– উনার বিড়াল পছন্দ বলে এমন… মেহেরিন গরম দুধটা খেয়ে নাও!

– ছিঃ ইয়াক আমি এসব খাবো না!

কাব্য বলে উঠে..
– পায়ের ব্যাথা কমে যাবে!

– সেটা কাল অবদি এভাবেই ঠিক হবে!

নিহা বলে উঠে..
– এটা খেলে চকলেট দেবো! ভেবে নাও তুমি দাঁড়াতে পারবে না আর আমি কাউকে তোমাকে চকলেট ও দিতে দেবো না!

-….

– তাকিয়ে লাভ নেই খেয়ে নাও। তারপর ঘুমিয়ে পড়ো!

অবশেষে মেহেরিন হার মেনে খেয়ে নেই। গ্লাস টা নিহা নিতেই নিহা’র হাত থেকে চকলেট টা কেড়ে নিয়ে বলে…

– কে জানে এর লোভ দেখিয়ে আর কি কি করতে বলবে তুমি আমায়।

মেহেরিন’র‌ কথায় সবাই হেসে একাকার!
.
আহিয়ান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, নিহা এক কাপ চা ওর সামনে রাখল। আহিয়ান কিছু না বলেই চা টা নিলো। নিহা ওর পাশে দাঁড়াল।

– ধন্যবাদ!

– কেনো?

– তখন মেহেরিন’র‌ সাহায্য করার জন্য!

– …..

দুজনের মাঝেই নিস্তব্ধতা! আহিয়ান হঠাৎ বলে উঠে…
– তোমার লাইফের সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্টে কে?

– আমার বোন!

– আমি শুনেছি তোমরা নাকি কখনো কাঁদো না!

– না!

– কেন? আমার আর নিতি’র বিয়ের কথা শুনেও কি তুমি কাঁদো নি!

নিহা মুচকি হেসে বলল..
– না!

আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। নিহা বলে উঠে…
– আমি শেষ বার কেঁদেছি যখন আমার মা মারা গেছেন। আর আগেও কখনো কাঁদেনি মা কাঁদতে দিতো না। মা মারা যাবার আগে বলেছিলেন খান বাড়ির কেউ যেনো কখনো না কাঁদে বিশেষ করে আদুরী। কারন চোখের পানি আমাদের দুর্বলতা, হ্যাঁ এটা আমাদের কষ্ট নিধন করে তবে আমরা কান্না কে নিজের রাগে পরিনত করি। সেদিন বাসায় আসার পরও অনেক রেগে ছিলাম আমি! কাঁদতেই যাচ্ছিলাম তখন আদুরী আমাকে অজ্ঞান করে দেয়।

– আসলেই তোমার অদ্ভুত! পুরো খান বাড়ি একটা গোলক ধাঁধা!

নিহা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আহিয়ান চলে যায় সেখান থেকে!
.
মাঝ রাতে হঠাৎ করে গোলাগোলি’র‌ শব্দ হয়। আহিয়ান আর নিহা ঘুম থেকে উঠে পড়ে। নিহা উঠেই দরজা খোলার চেষ্টা করে কিন্তু দরজা বাইরে থেকে লক করা। এদিকে গোলাগুলি’র শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। নিহা অনেক চেষ্টা করছে দরজা ভাঙার কিন্তু পারছে না। শুধু নিহা না বাকি সবাই ও তাদের দরজা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু কেউ পারছে না। আহিয়ান নিহা কে শান্ত করার চেষ্টা করছে। নিহা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে..

– আমার বোনের কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না আহিয়ান!

বলেই বেলকনির দিকে গেল। বাইরের সব গার্ড ঘরের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছে তবে কেউ পারছে না। নিহা আর না ভেবে বেলকনির গ্রিল ধরে নিচে নামতে শুরু করে! কারন তার ধারণা বাড়ির দরজা লক করা। আর সেই লক সে খুলতে পারবে। এদিকে ঠিক এক ভাবেই আহিয়ান, নিশি, নীল, কাব্য, ইহান সবাই বের হলো। অভ্র বের হতে পারে নি কারন হলো আনহা!

এদিকে নিহা নিচে এসে দেখে ডেভিল নেই। সে তাড়াহুড়ো করে সদর দরজা খুলে। তখন হঠাৎ করে গোলাগুলির শব্দ ‌থেমে যায়। নিহা কেমন যেনো থেমে গেল। আহিয়ান নিহা’র হাত ধরে ভিতরে ঢুকল। সবার ঘরের দরজাও খুলে গেল। আহিয়ান বসার ঘরে ঢুকার সময় শুধু এখানে ওখানে লাশ দেখতে পাচ্ছে।‌ সবাই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সবাই হাঁটতে হাঁটতে বসার ঘরে আসে। কোনো লাইট জ্বলছে না, কাব্য এসে সুইচ অন করল। সবাই দেখে ভয় পেয়ে গেলো। মেহেরিন সোফায় বসে আছে। দু’হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। তার পাশেই ডেভিল দাঁড়ানো।‌অভ্র কোনোমতে আনহা কে ঘরে রেখে বাইরে এসে এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে মেহেরিন’র কাছে আসল। নিহা ওরা সবাইও মেহেরিন’র কাছে। শুধু মাত্র আহিয়ান দেখছে। কি হলো সে কিছুই বুঝতে পারলো না।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা…
কিছু লোক বাড়িতে ঢুকে সদর দরজা বন্ধ করে দিল। অতঃপর বাড়ির সবার ঘরের দরজা বন্ধ করে মেহেরিন’র ঘরের দিকে গেল। মেহেরিন কে বিছানায় পেয়ে কিছু লোক হিংস্র ভাবে সেখানে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। অনেকক্ষন ধরেই ছুরি চালাতে লাগলো তারা। তখন পাশ থেকে কেউ বলে উঠল..

– হেই গাইস! আদুরী এখানে!

সবাই তাকিয়ে দেখল মেহেরিন দূরে কফি মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ছুটে তাকে মারতে গেলো। তখন ডেভিল এসে একের পর এক গুলি করতে লাগলো। মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু কফি খেতে লাগল আর এসব দেখতে লাগল। এক পর্যায়ে লোকজন আরো বেশি আসতে লাগল। একজন পেছন থেকে ডেভিল কে মাথায় মারলো। অতঃপর ডেভিল খানিকক্ষণ’র জন্য পড়ে গেলো। তারা সবাই মেহেরিন’র দিকে ছুটে গেল। মেহেরিন কফি মগ টা রেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে খোলা হাতে তাদের সামনে দাঁড়াল। সবাই ভয় পেয়ে গেল। আর যাই হোক মেহেরিন যে কতোটা হিংস্র এটা সবাই জানে। কিছু লোক ভয়ে পিছু হটে গেল। কিন্তু বাকি রা মেহেরিন কে আঘাত করতে গেল। অতঃপর কেউ পেরে উঠলো না। বাকিরা দৌড়ে বাসর ঘরের দিকে আসলো। মেহেরিন ছুরি নিয়ে তাদের পিছন পিছন দৌড়াতে লাগল। তারা সবাই দরজা সামনে এসে খুলতে যাবে আর আগেই মেহেরিন সেখানে দাঁড়িয়ে গেল। বাঁকা হেসে বলল..

– আমার বাড়িতে এসেছো, মেহনাবাজি তো করতে দাও!

অতঃপর মেহেরিন সবাইকে মেরে শুধু একজন কে বেঁচে রাখল। সে প্রান ভিক্ষা চাইলো মেহেরিন শুধু তাকে তাদের বসের নাম জিজ্ঞেস করল। কিন্তু সে বললো না। তাও মেহেরিন তাকে ছেড়ে দিলো! সে সুযোগ পেয়েই মেহেরিন কে মারতে গেলে ডেভিল এসে তাকে গুলি করল!

সব শুনে নিহা রেগে গেল। কারা এরা, কে পাঠিয়েছে সব খোঁজ করতে বলল ডেভিল কে। মেহেরিন কিছু না বলে অভ্র’র কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।‌ কিন্তু সে রাতে আর কারোই ঘুম হলো না!

কয়েকদিন পর ডেভিল এসে জানালো তাদের পাঠিয়েছে মিঃ রায়। আর তাদের শুধুই মেহেরিন কে মারার জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহা’র বুঝতে পারল সে তার ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এমন টা করেছে। তবে জানা গেছে মিঃ রায় এখন পলাতক। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিহা ডেভিল কে খোঁজ চালু রাখার কথা বললো!
.
প্রায় অনেকদিন পর আহিয়ান এসেছে তার মায়ের সাথে দেখা করতে। বাড়িতে ঢুকেই সে অবাক হয়ে গেল। কারন নিহা এখানে বসে তার মায়ের হাতে খাবার খাচ্ছে। তার মা ও খুব আদরের সাথে তাকে খাওয়াচ্ছে। তিনি আহিয়ান কে দেখে হেসে বললেন ফ্রেশ হয়ে আসতে। কিন্তু আহিয়ান তো নিহা’র দিকে তাকিয়ে আছে। নিহা মুচকি হেসে আহিয়ান’কে চোখ টিপ দিলো। আহিয়ান নিহা’র থেকে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলল। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে আসলে মা ওদের দুজনকে খাইয়ে দেয়। নিহা খাবার খেয়ে উপরে চলে যায় কিন্তু আহিয়ান ওর মা’র সাথেই থাকে। সে বলে উঠে…

– এসব কি মা!

– কোনসব?

– এই তুমি ওকে কেনো এতো আদর করছো। নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছো ওকে।

– আমার বউ মা ও! ওকে খাওয়াবো না তো কাকে খাওয়াবো।

– মা! ওর জন্য আহনাফ আজ আমাদের মাঝে নেই। তুমি জানো না সেটা!

– আহনাফ নেই এটা ঠিক তবে সেটা নিহা’র কারনে নয়। সেটা ওর নিজের কারনেই!

– মা!

– আহি! যা হয়েছে তাতে নিহা’র কোনো দোষ নেই। তুমি ও জানো আর আমিও জানি আহনাফ ঠিক কতোটা জেদি ছিল। যেটা ওর চাই তো চাই! তুমি তো জানো না আর আগেও অনেকবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে ও। তবে তখন আমরা বাঁচাতে পেরেছিলাম ওকে। তবে…

– কি হয়েছে কি মা তোমাদের।‌ নিহা কি তোমাদের বস করেছে নাকি। সবসময় ওর সার্পোট কেন টানো!

– কারন এবার আমার ছেলে ভুল করছে আর সে ঠিক!

– মা!

– আহি কারো ভালোবাসা নিয়ে খেলা করা ঠিক না বাবা। সেটা যে তুমি কবে বোঝবে জানি না। একটা কথা মনে রেখো এমন না হয় যখন তুমি সব বুঝতে পারলে কিন্তু তোমার করার কিছু রইল না।

আহিয়ান কিছু না বলে ঘরে চলে গেল। সেখানে গিয়ে দেখল নিহা তার ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ান রেগে নিহা’র দুই বাহু চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল..

– কি করেছো আমার মা কে!

– আমি কি করবো মা কে।

– তাহলে তোমার এতো গুনগান কেন করছে। সত্যি করে বলো।

– কি বলুন তো আমি তো ভূতনি। তাই অলৌকিক শক্তি আছে আমার কাছে। এভাবেই এসব করি।

– মজা করছো আমার সাথে!

– আরে কি যে বলেন। আপনার সাথে মজা করবো এতো সাহস আছে আমার কাছে।

আহিয়ান রেগে নিহা কে ছেড়ে দিলো। নিহা আবার ও আহিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান মুখ সরিয়ে ফেলল। নিহা আহিয়ানের মুখ নিজের দিকে ফিরাল। অতঃপর আহিয়ানের হাত ধরে নিজের কোমড়ে রাখল। নিহা আহিয়ানের গলা জরিয়ে ধরে আহিয়ানের কাছে চলে আসল।‌বলে উঠে..

– ভালোবাসি আপনাকে!

আহিয়ান মুখ সরিয়ে নিলো। নিহা মুচকি হেসে বলল..
– একসময় এই কথাটা শোনার জন্য কি না কি করতেন!

আহিয়ান কিছু না ‌বলে নিহা কে ছেড়ে বাইরে চলে গেলো।‌
.
মেহেরিন বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। আনহা’র এখন ৫ মাস চলছে। সবাই এখন আগের থেকেও আনহা’র আরো বেশি বেশি খেয়াল রাখছে। তখন হুট করেই ইহান আসলো। তাকে দেখে বেশ অস্থির লাগছিলো। কিন্তু সে সবাইকে কাজের চাপ আছে বলে এমন লাগছে এরকম কয়েকটা অযুহাত দিলো।

রাতে…
ইহান ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে আছে, তখন মেহেরিন আসলো সেখানে।

– কি হয়েছে তোর!

– কি হবে কিছু না!

– সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারিস তবে আমার না। বল কি হয়েছে!

– জান তুই বিশ্বাস করিস তো আমায়!

– না করি না তো!

– আমি সিরিয়াসলি কথা বলছিলো।

– তোর সিরিয়াস কথা তাহলে এটা!

– না তবে এটার সাথে যুক্ত!

– হয়েছে কি?

#চলবে….
/#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৫

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে। ইহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেরিন’র দিকে তাকালো।

– কথাটা রোদ্দুর’র গফ কে নিয়ে!

– রোদ্দুর’র গফ!

– হুম!

– হয়েছে টা কি ইহান!

– আসলে একটা কাজে আমি সেদিন হোটেলে গিয়েছিলাম। দি পাঠিয়েছিল আমাকে। একটা মিটিং এডেন্ট করার ছিল। মিটিং শেষ করে আমি বের হতে দেখি রোদ্দুর এর গফ মানে লিসা একটা ছেলে’র সাথে।

– তো! এরকম একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে তুই এরকম টা কিভাবে ভাবতে পারিস।

– শুধু এতো টুকু না জান। এর পর আমি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ছেলের সাথে লিসা কে দেখছি আর তাও অনেক ঘনিষ্ঠ। তাই ফাইনালি আমি ভাবলাম আসল খবর টা কি। তাই গতকাল ডেভিল কে দিয়ে লিসা’র ব্যাকগ্রাইড চ্যাক করালাম। আর ডেভিল আজ এসে আমাকে জানালো…

– কি জানালো!

– লিসা ভালো মেয়ে না! সি ইজ অ্যা গোল্ড ডিজ্ঞার!

– What!

– প্রথমে আমার ও বিশ্বাস হয় নি, অন্য কেউ বললেও আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু তুই ও জানিস ডেভিল কখনো ভুল খবর দেয় না!

– এখন কি করবি! রোদ্দুর কে বলবি!

– ও অনেক ভালোবাসে, বিশ্বাস করবে না আমার কথা। ভুল বুঝবে আমায়!

– কিন্তু যখন ওই ঠকায় তখন!

– বুঝতেই পারছি না কি করবো। তুই কিছু কর!

– আমি যাই করি এর ফল ভালো খারাপ দুইটাই হতে পারে।

– আর কোনো চয়েজ নেই। যা করার তুই কর!

– আচ্ছা তুই বললে কেন বিশ্বাস করবে না।

– ভুলে গেলি, সেদিন নিশি বলেছিল আমি ওর গফ কে পছন্দ করতাম।

– ওহ্ হ্যাঁ তাই তো। তো এখনো কি করিস!

– তুই ও এইটা ভাবলি। তাহলে রোদ্দুর কি ভাববে..

মেহেরিন হেসে ইহান’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– ফ্রেন্ডশিপ বুঝি তবে ভালোবাসা আমার মাথায় ঢুকে না। কিন্তু এতো টুকু জানি কোনো সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি আসা মানে সে সম্পর্কের ইতি টানা। আচ্ছা টেনশন করিস না আমি দেখছি ব্যাপারটা!

বলেই মেহেরিন নিচে নেমে যায়। ইহান সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যাপারটা এতো সহজে শেষ হবে না। কিছু না কিছু তো হবেই! কিন্তু সেটার জন্য না তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে!
.
বেশ কয়েকদিন পর…
রোদ্দুর খুব জোরে গাড়ি চালিয়ে মাত্র ঢুকল খান বাড়িতে। সবাই বসার ঘরেই ছিল। রোদ্দুর খুব রেগে আছে। মেহেরিন রোদ্দুর কে দেখে সোফা থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল। রোদ্দুর সোজা মেহেরিন’র পিছনে পিছনে গেল! মেহেরিন ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বার করছে।

– তুই এটা কেন করলি!

– আমি আবার কি করলাম, কার সাথে করলাম, কখন করলাম!

– গতকাল করেছিস বিকাল ৫ টার দিকে রেস্টুরেন্টে লিসা’র সাথে। তুই তাকে শাসিয়ে এসেছিস যেন আমার সাথে আর সম্পর্ক না রাখে!

মেহেরিন আইসক্রিম’র বাটি টা নিয়ে সোফায় গিয়ে বসল। রোদ্দুর ও ওর সামনে বসল। সবাই শুধু ওদের কথাই শুনছে!

– কি হলো বল!

– এখন কি হয়েছে সেটা বল!

– কি আর হবে! ব্রেকআপ করেছে ও আমার সাথে! কেন করলি এমন!

– পার্টি দিবি কবে এটা বল!

– আদুরী… তুই খুশি হলি!

– খুশি না হলে কি আর ওকে শাসিয়ে আসতাম!

– তার মানে তুই সত্যি!

– হুম করেছি!

– তুই এমনটা কিভাবে করতে পারিস!

ইহান বলে উঠে..
– রোদ্দুর তুই আগে শান্ত হ একটু। আমি বলছি তোকে সব গুছিয়ে!

– ওহ্ আচ্ছা তাহলে এর মধ্যে তুই ও আছিস!

– রোদ্দুর শোন তো একবার!

মেহেরিন কিছু বলে না শুধু আইসক্রিম খেতে থাকে। রোদ্দুর বলে উঠে..

– তাহলে আমার সাথে লিসা’র ব্রেকআপ করানোর শুধু একটাই কারন আর সেটা ইহান তাই তো আদুরী!

– ….

ইহান বলে উঠে..
– রোদ্দুর তুই এটা কি বলছিস!

– ইহান প্লিজ আমি শুধু জান’র সাথেই কথা বলবো! কি হলো বল!

-…

– তুই আমার সাথে এটা কিভাবে করতে পারিস, তুই তো জানিস আমি কতোটা ভালোবাসতাম ওকে!

– …

– তুই শুধু ইহানের জন্য আমার সাথে এমন করলি!

– তোর কাছে প্রথমে কি ভালোবাসা না বন্ধুত্ব!

– তুই এখন আমার বন্ধুত্বে আঙ্গুল তুলছিস আদুরী!

– জিজ্ঞেস করলাম প্রথমে কি?

– তুই!

– তাহলে বাদ দে এই টপিক!

– কেন বাদ দেবো।

– কারন আমাকে বলা হয়েছে মেয়েটা ভালো না তাই!

– কে বলেছে, ইহান!

– হ্যাঁ তো!

– আর তুই বিশ্বাস করে নিলি, যদি ও মিথ্যে বলে থাকে তো! তুই তো জানিস ও লিসা কে পছন্দ করে। এটা যে ও ইচ্ছে করে বলেনি এটার প্রমাণ কি!

সবাই অবাক রোদ্দুর’র এমন কথাবার্তায়। ইহান এটা আশা করলেও তবুও নিজের মন কে বুঝিয়েছিল এটা নাও হতে পারে। এদিকে মেহেরিন আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে রোদ্দুর’র দিকে তাকাল। অতঃপর বললো..

– তোর কি এটা মনে হয়!

– অবশ্যই এটাই মনে হয়। এটা না মনে হবার কারন কি বল!

মেহেরিন চোখ টা খানিকক্ষণ’র বুঝে, আবার চোখ মেলে মুচকি হাসি দিয়ে রোদ্দুর এর দিকে তাকিয়ে বলে..

– তাহলে ছেড়ে দে এই বন্ধুত্ব! রাখিস না। এমন বন্ধু রেখে কি করবি বল যে তোর ভালোবাসা কেড়ে নেয়!

– আদুরী!

– এভাবে কেন চমকে যাচ্ছিস, এটাই তো সত্যি নাহ। যেসব ফ্রেন্ড এভাবে তোকে ঠকায় তাদের সাথে তুই কেন থাকবি।

– আমাদের বন্ধুত্ব কি এতোটাই ঠুকনো! আমাদের বন্ধুত্ব এই ১০ ১২ দিনের নয়। ছোট থেকে আমরা একসাথে। সবাই সবাইকে বুঝি, ছোট থেকে একসাথে বড় হয়ে এসেছি।

– তাহলে এই বন্ধুত্বে কেন আঙ্গুল তুলছিস! কেন বলছিস তোর ভালোবাসা তোর বন্ধু কেড়ে নিয়েছে!

– আদুরী আমি তো…

– ব্যস এখানেই অফ যা। আমাদের বন্ধুত্বে আর আসিস না।

– তুই এভাবে বলতে পারলি।

– হ্যাঁ পারলাম। ভুল টা কি বললাম আমি!

– ওকে!
বলেই রোদ্দুর চলে গেল। সবাই চুপ, কেউ কিছু বলছে না। এরকম ঝগড়া কখনো হয় নি ওদের মাঝে। নীল আর কাব্য গেলো রোদ্দুর’র পিছু পিছু। মেহেরিন সোফা থেকে উঠে খুব জোরে টি – টেবিলে একটা লাথি মারল। অতঃপর সোজা রুমে গেল। রুমে যাবার আগে সামনে ‌কয়েকটা ফুলদানি ফেলে দিও।

বিকালে আহিয়ান আসল মেহেরিন’র ঘরে। মেহেরিন তখন দোলানায় বসে ছিল।‌ আহিয়ান প্রথমে নক করলে মেহেরিন তাকে আসতে বলল। আহিয়ান বেলকনিতে একটা চেয়ার পেতে বসল।

– এভাবে বন্ধুত্ব শেষ করে দিলে!

– যে থাকতে চায় না তাকে জোর কেন করবো।

– তাহলে তো তুমি আমাকেও জোর করেছিলে বিয়ের জন্য নাহ!

– আপনি আর ও এক না। আপনি আমায় বুঝেন না কিন্তু ওরা বুঝে। ওর বোঝা উচিত ছিল আমি ওর ভালোর জন্যই এটা করেছি!

– সব পরিস্থিতি মনমতো চলে না মেহেরিন!

– এই কথা আপনি বিশ্বাস করেন জিজু!

– অবশ্যই করি!

– তাহলে এটাও বিশ্বাস করুন আমার ভাইয়ের সুইসাইড টাও এরকম একটা পরিস্থিতি’র স্বীকার ছিল!

– …

– পারলেন না তো!

– তোমাদের বন্ধুত্ব নাকি অনেক পুরোনো!

– আমরা ছোটবেলা থেকেই একসাথে থাকি!

– আসল কারন কি ছিল।

– মেয়েটা ভালো না শুধু টাকার লোভে রোদ্দুর’র সাথে ছিল। ইনফেক্ট অন্য ছেলেদের সাথেও।

– একথা ইহান বলেছে!

– ইহান আর রোদ্দুর দুইজনকেই আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। তবুও এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমি বিশ্বস্ত কারো’র সাহায্য নিয়েছি!

– তাহলে ডেভিল ভুল বলে নি। তবে তুমি এটা শান্ত ভাবে বলতে পারতে রোদ্দুর কে!

– এরকম কথা শুনলে ও কষ্ট পেতে পারতো তাই নয় কি! জিজু কেউ ধোঁকা দিলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না আর সে যদি আপনার কাছের কেউ হয় তাহলে তো কথাই নেই। এরকম একটা কথা রোদ্দুর কে বলার ইচ্ছা আমার ছিলো না।

– তাহলে এভাবেই কি শেষ হয়ে যাবে!

– জানি না!

অতঃপর আহিয়ান সেখান থেকে চলে যায়!
.
এদিকে সেই দুই ব্যক্তি তাদের বিজয়ের উল্লাসে হেসে বেড়াচ্ছে। কারন অবশেষে তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পেয়েছে। এই ফাটল যে ভবিষ্যতে তাদের সুবিধা করবে এই সম্পর্কে তাদের খুব ভালো করেই জানা আছে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here