তোমার সমাপ্তিতে আমার প্রাপ্তি ৩ পর্ব -০৯+১০

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (৯)

” এখন একটু বেঁচে থাকো। আমি চলে যাওয়ার পর নাহয় মরে যেও। ”

তিহি লজ্জায় লাল হলো। চোখ নামিয়ে লাজুক হেসে বলল,
” আমার তো এখনও মরে যেতে ইচ্ছে করছে! ”

ইশাদ তিহির হাতের পিঠে ছোট্ট চুমু খেল। বুকের মাঝে ছুঁয়িয়ে বলল,
” এমনি মরতে পারবে নাকি আমাকে কিছু করতে হবে? ”

তিহি চোখ তুলে এক পলক ইশাদের মুখখানা দেখল। তারপরেই চোখ নামিয়ে হাত টেনে নিয়ে বলল,
” করার কি বাকি আছে? ”
” নেই? ”

তিহি প্রশ্ন পিঠে প্রশ্ন শুনে থতমত খেল, স্তব্ধ হলো। বিস্ময়মাখা চোখদুটো স্থির করল ইশাদের পায়ে। মনের শীতল হাওয়া শরীরে ছড়িয়ে পড়লে কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ! অস্থির হয়ে পড়া অনুভূতিটুকু স্থির করতে একহাতে শাড়ির আঁচল খামচে ধরল। অন্য হাতে ভেজা চুলের নিম্নভাগ আঙুলে প্যাঁচিয়ে নিল।

তিহির এই নতুন রূপে ইশাদের চোখের চাহনি নেশায় ডুবল। নিশ্বাসে আলস্য ছড়িয়ে পড়ল। মুগ্ধ হয়ে চক্ষুদ্বয়ের তৃষ্ণা মেটাতে চেয়েও পারল না। ব্যাঘাত ঘটাল এক শিশু কণ্ঠ,

” আম্মু, তুমি শাড়ি পরেছ? ”

ইশাদ ও তিহি চকিতে তাকাল শিশু কণ্ঠের দিকে। রুকমিনি মুখার্জির হাতের বাঁধন থেকে ছুটে এলো ইনা। তিহির আপাদমস্তক দেখল ভীষণ মনোযোগে। চোখদুটো চকচকে হয়ে আসতে মহাউৎসাহে বলল,
” আমিও শাড়ি পরব, আম্মু। ”

তিহি উত্তর দিল না। লজ্জায় রাঙা মুখটায় বিরক্ত জমছে ধীরে ধীরে। ইনা তিহির হাত নাড়িয়ে চুড়ির রিনিঝিনি ছন্দ তুলে বলল,
” কী সুন্দর চুড়ি! আম্মু, আমাকে কয়েকটা দিবে? ”

তিহি আর চুপ থাকতে পারল না৷ চোখের ভেতরটা টকটকে লাল হয়ে আসল। চোখমুখ ফুলিয়ে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলতে ইশাদ ইনাকে কোলে তুলে নিল। এক কদম পেছনে সরে উল্টো ঘুরে দাঁড়াল। ইনার শিশুসুলভ মুখটায় চেয়ে আদুরে গলায় সুধাল,
” তোমারও শাড়ি, চুড়ি চাই? ”

ইনা সাথে সাথে উত্তর দিল না। ইশাদের কানের পাশ দিয়ে তিহির গলার দিকে তাকাল। তারপরেই আহ্লাদে ভেসে বলল,
” চাই-ই তো। আম্মুর গলার হলুদ রঙের ঐ সুন্দর মালাটাও চাই। ”

ইশাদ চট করে তিহির গলার দিকে তাকাল। মৃদু হেসে বলল,
” ঠিক আছে, মামনি। তুমি এখন দাদির কোলে যাও, আমি তোমার জন্য শাড়ি, চুড়ি আর হলুদ রঙের মালা কিনে আনছি। ”

ইশাদ রুকমিনি মুখার্জির নিকট এগিয়ে গেল। ইনাকে তার দিকে বাড়িয়ে দিলে ইনা ইশাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
” আমি আম্মুর কোলে যাব। ”

ইশাদ থেমে গেল। রুকমিনি মুখার্জির দিকে এক ঝলক চেয়ে তিহির দিকে ঘুরে দাঁড়াল। এগুতে এগুতে ভাবছে, কিছুক্ষণ আগের না ঘটা ঘটনাটির কথা। তিহি কি একটুও বদলায়নি? ইনাকে এখনও মেনে নেয়নি? রুকমিনি মুখার্জির মুখ থেকে সবটা শোনার পরও তার আচরণে একটুও পরিবর্তন আসেনি। কেন?

ভাবতে ভাবতে তিহির একদম কাছে এসে দাঁড়াল ইশাদ। নিজের ঠোঁটদুটো তার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসে বলল,
” যদি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে এই বাচ্চা মেয়েটিকে আর কখনও আঘাত করবে না। ভাববে, ইনা হাসছে মানে আমি হাসছি, কাঁদছে মানে আমি কাঁদছি। ”

রুকমিনি মুখার্জি দূর থেকে অবাক হয়ে দেখলেন, তিহি সানন্দে ইনাকে কোলে তুলে নিচ্ছে।

ইনাকে তিহির কোলে দিয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসল ইশাদ। ইমদাদ তার নিকট এসে দাঁড়াল উশখুশ নিয়ে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করার আগেই ইশাদ ফিরে তাকাল রুকমিনি মুখার্জির দিকে। তিনি সিঁড়িপথের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন। সেদিকে চেয়েই ইশাদ বলল,
” যদি ভেবে থাকেন ইনাকে প্রমাণ বানাবেন তাহলে বলব, রিপোর্ট বদলে দিতে আমার এক পয়সাও খরচ করতে হবে না। ”

ইমদাদকে নিয়ে বের হওয়ার আগে সতর্ক করে গেল,
” এবার একা ফিরে যাচ্ছি, পরেরবার তিহিকে নিয়ে যাব। ”

____________

ইমদাদকে নিয়ে ইশাদ প্রায় বেরিয়ে এসেছে। গেইট পার হবে, সেই সময় তার চিন্তা-চেতনায় অদৃশ্য কিছু আঘাত করে গেল। নদীর স্রোতের মতো তার চিন্তার প্রবাহ প্রতিকূলে ছুটল। অকস্মাৎ থমকে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছে কিছু একটা। ইমদাদ জিজ্ঞেস করল,
” দাঁড়িয়ে পড়লি যে? ”

ইশাদ উত্তর না দিয়ে পেছন পথে ছুটল। বাগান পেরিয়ে সদর দরজার সামনে এসে খটখট করল তুমুল শব্দে। এবার দরজা খুললেন রুকমিনি মুখার্জি। তার মুখ চোখের সামনে প্রত্যক্ষ হতে ইশাদ হাতদুটি টেনে নিল। কপালে ছুঁয়ে অনুতাপের গলায় বলল,
” আমি ভুল করেছি। আপনার সাথে অন্যায় আচরণ করেছি। আমাকে মাফ করে দিন। ”

রুকমিনি মুখার্জি অপ্রস্তুত হলেন। হতবুদ্ধিতে তাকিয়ে থাকলে ইশাদ আগের কণ্ঠেই বলল,
” আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আপনার বলা প্রত্যেকটা কথা সত্য। তবুও অবিশ্বাসের অভিনয় করেছিলাম। শুধু তিহিকে পাওয়ার জন্য। অথচ আপনি তাকে দ্বিতীয় জীবন দান করেছেন। মেয়ের মতো আগলে রেখেছেন এতগুলো বছর। কোনো শাশুড়ি এমন পারে না। হয়তো আমার মাও পারবে না। ”

এতটুকু বলে ইশাদ থামল। সময় নিয়ে নিজেকে সামলাল। ঘনঘন ঢোক গিলে, ভারী নিশ্বাস টেনে হঠাৎ বলল,
” আপনি কি তিহির হাতের ঐ গভীর দাগটা দেখেছেন? পায়ের তলার পুড়ে যাওয়া চিহ্নগুলোও? ”

মুহূর্তে রুকমিনির মুখার্জির মুখের ভাব পালটে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
” দাগ! কিসের দাগ? ”

ইশাদ অসহিষ্ণু গলায় বলল,
” আড়াল করার চেষ্টা করবেন না, আন্টি। আমি দেখেছি মানে আপনিও দেখেছেন। ”

রুকমিনি মুখার্জি এমনভাবে এক কদম পেছনে সরে গেলেন যেন তাকে কেউ ধাক্কা মেরেছে। চোখের চাহনি লুকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল,
” হয়তো এক্সিডেন্টের সময় আঘাত পেয়েছে। ”

ইশাদ প্রতিবাদ করে উঠল,
” না, ওগুলো এক্সিডেন্টের আঘাত নয়। আপনি আমাকে ভুল বুঝাতে চাচ্ছেন। ”

উত্তেজনায় ইশাদের গলার স্বর খানিকটা জোরাল হওয়ায় রুকমিনি মুখার্জি চমকে উঠেন। ভীত স্বরে জিজ্ঞেস করেন,
” তাহলে? ”

ইশাদ খানিকটা নিভল। শান্ত ও গভীর চোখে চেয়ে বলল,
” একজন মা-ই বলতে পারবে তার সন্তান কেমন। কারণ, তার চোখের সামনেই সন্তান ভালো-মন্দ স্বভাবে বড় হয়ে ওঠে। ”

রুকমিনি মুখার্জি বিস্ফারিত চোখে তাকালেন। রাগে ফুঁসে উঠে বললেন,
” আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। এখনই। নাহলে কিন্তু…”

রুকমিনি মুখার্জি নিজের কথা শেষ করলেন না। সশব্দে দরজা আটকে দিলেন। ইশাদ বন্ধ দরজার বাইরে থেকে বলল,
” তিহিকে আমি জোর করে বিয়ে করব না। ছেড়েও দিব না। আপনার সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হবে। কারণ, একমাত্র আপনিই জানের তিহির কাকে প্রয়োজন। ”

__________
বাড়িতে পৌঁছে রাতের খাবার খাচ্ছিল ইশাদরা। পরিবেশন করছে মিহি। শাহিনা শাইখা ভাত মাখতে মাখতে মিহিকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ইমদাদের প্লেটে মাছের আস্ত টুকরো থাকতেও যখন আরেকটা টুকরো তুলে দিল তখন তিনি হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতে ইমদাদের ঠাণ্ডা বকাটাও কর্ণগোচর করলেন। বকুনি খেয়েও ঠোঁটে হাসি ধরে রাখা মিহির ভোলা চেহারাটাও উপভোগ করলেন।

খাবার শেষে ইমদাদ বিদায় নিতে আসলে শাহিনা শাইখা জিজ্ঞেস করে বসলেন,
” একাই যাচ্ছ? মিহিকে নিবে না? ”

ইমদাদ হালকা হেসে ভদ্র সাজে বলল,
” না, আন্টি। এখানে কয়েকদিন থাকার আবদার করেছে। না রেখে পারি বলুন? ”

ইমদাদের মন ভোলানো কথা শাহিনা শাইখাকে ভুলাতে ব্যর্থ হলো। প্রশ্ন করলেন,
” মিহি আবদার করেছে? ”
” হ্যাঁ। ”
” কিন্তু আমার কাছে যে বলল, তোমার সাথে চলে যাবে।”

ইমদাদের চোখ বড় হয়ে গেল। এদিকওদিক মিহিকে খুঁজতে খুঁজতে জিজ্ঞেস করল,
” মিহি বলেছে? ”
” হ্যাঁ, মিহিই বলেছে। ”

রুমের কোথাও মিহিকে না পেয়ে ইমদাদের দৃষ্টি ফিরে এলো শাহিনা শাইখার দিকে। সন্দিহানে জিজ্ঞেস করল,
” মিহি নিজের মুখে এ কথা বলেছে? ”

শাহিনা শাইখা মিটিমিটি হাসলেন। দরজার দিকে তাকিয়ে ইশারায় মিহিকে ডাকলেন। সে এতক্ষণ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ইমদাদকে দেখছিল।

মিহি ভীরু পায়ে শাহিনা শাইখার পাশে এসে দাঁড়ালে তিনি একহাতে পাশ থেকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,
” মুখে বলেনি, চালচলনে বলেছে। ”

ইমদাদ কথাটা ধরতে পারল না। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলে শাহিনা শাইখা বললেন,
” তোমার বউ কাল রাতে আমাকে একটুও ঘুমাতে দেয়নি। সারারাত স্বামীকে নিয়ে গল্প করেছে, আমি গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলে ছটফট করেছে। সকালে তোমাকে দেখতে না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল। আরেকটু হলে তো আমাকে দিয়ে কেসও করিয়ে ছাড়ত। ভাগ্যিস ইশাদ ফোন করে জানিয়েছিল তোমরা তিহিদের বাসায়! ”

ইমদাদ কঠিন চোখে তাকালে মিহি মাথা নিচু করে ফেলল। আন্টির কাছ থেকে সরে যেতে চাইল। শাহিনা শাইখা ছেড়ে দিয়ে বললেন,
” যা, তৈরি হয়ে নে। ইশাদকে পাঠাচ্ছি, রিকশা ডেকে দিবে। ”

ইমদাদ কিছু একটা বলতে চেয়েও পারল না। নীরবে রাগটুকু আড়াল করে মিহির তৈরি হয়ে আসার অপেক্ষা করছে। ইশাদ রিকশা ডাকতে নিচে চলে গেলে শাহিনা শাইখা ইমদাদের কাঁধে হাত রাখল। আদুরে মর্দন করে বলল,
” তোমার মধ্যে ইশাদের বাবার ছায়া দেখছি। তার মতো পাষাণ হয়ো না। মিহি আমার মতো সরল হলেও বয়সে খুব ছোট। সামলাতে পারবে না। ”

মিহির উপর চটে থাকায় শাহিনা শাইখার কথাটার মর্মার্থ ধরতে পারল না ইমদাদ। হয়তো ঠিকমতো শুনেওনি।

___________
রিকশা ইশাদকে ছেড়ে একটু দূরে ছুটে আসতেই ইমদাদ এক প্রস্থ ঝেড়ে দিল মিহিকে। মিহি রাগ করল না। অভিমানও না। সে চুপচাপ নীরব মনে বলল, ‘ আপনার সাথে থাকতে আমার ভালো লাগে। খুব ভালো। ‘ সেই সময় কোমর জড়িয়ে ধরল ইমদাদ। মিহি আশ্চর্য হয়ে ইমদাদের দিকে তাকালে সে কড়া গলায় বলল,
” ঠিক করে বসতে পার না? এখনই তো পড়ে যাচ্ছিলে। ভাইকে দিয়ে মার খাওয়ানোর ধান্দা না? ”

মিহি উত্তর দিল না। মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকলে ইমদাদ আবার বলল,
” বোকার মতো চেয়ে থাকলেই বোকা হয়ে যাবে না। তুমি অত্যন্ত চালাক একটা মেয়ে। ইচ্ছে করেই আমাকে বিয়ে করেছ, যাতে আমাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পার, তাই না? এত সহজ নয়। ফের ঝামেলা করার চেষ্টা করে দেখ না, একদম তুলে আছাড় মারব। ”

ইমদাদের হুমকিতেও মিহির মুগ্ধতা কাটল না। কোমল মনে প্রেম প্রেম গন্ধে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল তার সকল জাগতিক চিন্তা-ভাবনা।

__________
পরের দিন হসপিটালে পৌঁছে নিজের চেম্বারের দিকে হাঁটতে ইশাদ ছোটখাট বিষম খেল। অপেক্ষারত কক্ষে তার জন্মদাতা ঝিমুচ্ছে। একজন নার্স পাশ কাটার সময় সালাম দিল ইশাদকে। উত্তর দিতেই সোবহান শাইখ চোখ মেলে চাইলেন। দুজনের চোখাচোখি হলো। ইশাদ বাবাকে উপেক্ষা করে চেম্বারে ঢুকতে ঢুকতে ওয়ার্ডবয়কে জানিয়ে দিল,
” আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কেউ যেন ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। ”
#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (১০)

ইশাদ চেম্বারে প্রবেশ করার পাঁচ মিনিট বাদেই দরজায় বাবার ছায়া টের পায়। বাবার দিকে না তাকিয়ে চিৎকার করে তার কাজে নিয়োজিত ওয়ার্ডবয়কে ডাকে। সে বাইরে দেয়ালের সাথে ঠেস দেওয়া ছোট টেবিল-চেয়ারে বসে রোগীদের সিরিয়াল নাম্বার টুকছিল। আচমকা হুংকারে ছুটে ভেতরে ঢুকে। সঙ্গে সঙ্গে ঝারি দিতে থাকে ইশাদ,
” তোমাকে না বলেছি, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিবে না? ”

ওয়ার্ডবয় থতমত খেল। ভয়ে ভয়ে পুরো রুমে চোখ বুলাল। সে রকম কাউকে দেখতে না পেয়ে মিনমিনে বলল,
” কেউ তো ঢুকেনি, স্যার! ”

ইশাদ রাগে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল। অগ্নিশর্মা হয়ে বলল,
” তাহলে ইনি কে? তোমার কি এনাকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না? ”

কথার মধ্যে ইশাদ হাত উঁচিয়ে আঙুল তাক করেছিল সোবহান শাইখের দিকে। ওয়ার্ডবয় সেদিকে তাকিয়ে চমকে গেল। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
” ইনি তো আপনার…”

ইশাদ তাকে মাঝপথেই আটকে দিল। টেবিলে দুই হাত ফেলে ওয়ার্ডবয়ের দিকে ঝুঁকে আসল। শান্ত ও ধীর স্বরে বলল,
” তোমাকে যতটুকু কাজ দেওয়া হয়েছে ততটুকুই করো। এর বাইরেরটা না দেখলেও চলবে। ”

ওয়ার্ডবয় নতজানু অবস্থায় সোবহান শাইখের কাছে গেল। কিছু বলার আগেই সোবহান শাইখ দরজা ছেড়ে কাউন্টারে চলে গেলেন।

ইশাদ একের পর এক রোগী দেখছে। মনোযোগ দিতে পারছে না ঠিকমতো। বাবাকে ফিরিয়ে দিলেও মনে মনে তার আসার অপেক্ষায় আছে যেন। এক রোগী বিদায় দিয়ে অন্য রোগী পাঠানোর জন্য বেইল টিপেই দরজার দিকে উৎসুকে চেয়ে থাকে। বাবার মুখের বদলে অন্য কাউকে দেখলে হতাশ হয়। মলিন বদনে চিকিৎসা করে, প্রেসক্রিপশন লিখে। প্রায় চল্লিশজন রোগী বিদায় দেওয়ার পর বাবার মুখ দেখার সৌভাগ্য হলো ইশাদের। আনন্দে দাঁড়িয়ে পড়ল। চোখের চাহনিতে হর্ষদীপ্ত ছড়িয়ে পড়ল। কত দিন পর দেখল এই মুখটা? একটু কি শুকিয়ে গেছে? চলনে এত দুর্বলতা কেন? ক্লান্ত চাহনি ইশাদের চোখে পড়তে মায়া কেটে গেল তার। চেতনা ফুরল বুঝি! বাবা একদম নিকটে এসে দাঁড়াতে কব্জি উল্টে হাতঘড়ি দেখল ব্যস্তভঙ্গিতে। তারপরেই টেবিলে রাখা মোবাইলটা পকেটে ভরে হেঁটে গেল দরজায়। বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,
” বাকিদের লাঞ্চের পর দেখব। ”

কথাটা বলেই এক মুহূর্তও দেরি করল না ইশাদ। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রিকশায় উঠল। বাসায় মা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।

______________
ইশাদ খেতে বসে টুকিটাকি কথা বলছিল মায়ের সাথে। তার মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছিল। বাবার কথাটা কিভাবে উঠাবে সেই সুযোগও খুঁজছিল। সেরকম কোনো উপায় না পেয়ে মিথ্যা বলল,
” ইমদাদ বলছিল শুটকির বোরা খায় না অনেক দিন। আজ রাতে আসতে বলব? ”

শাহিনা শাইখা ছেলের জন্য পানি ঢালছিলেন। হঠাৎ থামলেন। ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন শান্ত চোখে। বেশ কিছুক্ষণ পর হালকা হেসে বললেন,
” বাসায় তো শুটকি নেই। আসার সময় নিয়ে আসতে বলিস। বসে থেকে নিয়ে যাবে। ”

ইশাদ আশাহত হলো। তার ভাবনা ছিল অন্যকিছু। এদিকে বাবার কথা না বলে শান্তিও পাচ্ছে না। তাই সরাসরি বলেই ফেলল,
” বাবা এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে। ”

শাহিনা শাইখা স্বাভাবিকভাবেই বললেন,
” তোকে খুব ভালোবাসে তো। তাই দেখতে এসেছিল মনে হয়। ”

কথাটা বলে খাবার টেবিল ছাড়লেন। রান্নাঘরের দিকে হাঁটা ধরলে ইশাদ এক হাত চেপে ধরে বলল,
” আমার এক কথায় তুমি বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছ, ব্যাপারটা আমি এখনও হজম করতে পারছি না। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আম্মু, আমি কি স্বপ্ন দেখছি? ”

শাহিনা শাইখা ছেলের দিকে ঘুরলেন। মৃদু হেসে বললেন,
” স্বপ্ন ভেঙে গেলেও সমস্যা নেই। কারণ, আমি তাকে বাস্তবেও ছেড়ে এসেছি। ”

ইশাদ মনে ব্যথা পেল। মায়ের এমন রূঢ় আচরণ তার পছন্দ হলো না। আগের সেই নরম আচরণের মা’কে মনে হতে লাগল খুব। ব্যথিত মনেই প্রশ্ন করল,
” কেন আসলে? ”

শাহিনা শাইখা ছেলের প্রশ্নটা বুঝেনি এমনভাবে তাকালে সে আবার বলল,
” আমি বলেছি, তুমি চলে এসেছ এমনটা আমি মানতে পারছি না। মানা উচিতও না। কারণ, তুমি অন্য কারণে এসেছ। আমি সেই কারণটাই জানতে চাই, আম্মু। ”

ছেলের কাছে ধরা পড়ে একটুও বিচলিত হলেন না শাহিনা শাইখা। উপরন্তু অহংকারের প্রদীপ্ত আলো ছড়িয়ে পড়ল চোখেমুখে। এই তুখোর বুদ্ধিমান ছেলেটি তার ভাবতেই গর্বে বুক ভরে গেল।

ইশাদ চেয়ার ছেড়ে মায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
” বলবে না আমাকে? ”

শাহিনা শাইখা উদাস গলায় বললেন,
” অধিকাংশ মেয়েরাই বুঝতে পারে না তারা উপহারের চেয়ে ভালোবাসা পেতে পছন্দ করে। কেউ কেউ ভালোবাসার চেয়েও বেশি পছন্দ করে সম্মান পেতে। যতক্ষণে বুঝতে পারে ততক্ষণে সম্মান পাওয়ার যোগ্যতাটুকু হারিয়ে ফেলে। আমিও ফেলেছি, সেজন্যই তোর বাবা আমাকে সারাটা জীবন অসম্মান করেছে। আমি তার কাছে উপহার চাইনি, ভালোবাসাও না, একটু সম্মান চেয়েছিলাম শুধু। দেয়নি কখনও। যখন-তখন যার-তার সামনে ছোট করেছে। আমি দুঃখ পেলেও সয়ে নিয়েছি। নিজেকে আড়াল করেছি সবসময়। কিন্তু সেদিন যখন তোর সামনে ঐ কথাগুলো বলল, আমার ধৈর্যের বাদ ভেঙে গেল। মন ভেঙে গেল। বুঝে গেলাম আমার বাড়া হাত আজীবন খালিই ফেরত দিবে! ”

ইশাদ মাকে জড়িয়ে ধরল আলতো করে। সে অবস্থায় পকেট থেকে ফোন বের করে তার বিভাগের অন্য এক ডাক্তারকে তার চেম্বারে পাঠিয়ে দিতে বলল। আজ সে হসপিটালে যাবে না।

___________
ইমদাদ রাতে খেতে বসে খেয়াল করল তার খাবার বাড়ছে বেতনে রাখা রাধুনি। সে কপাল কুঁচকে আশেপাশে মিহিকে খুঁজল। না পেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” মিহি কোথায়? ”
” রান্নাঘরে। ”
” ওখানে কী করছে? আর তুমি এখনও বাসায় যাওনি কেন? ”

রাধুনি উত্তর দেওয়ার আগেই মিহি উপস্থিত হলো। খাবার টেবিলে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” সব ঠিকমতো দিয়েছেন? ”

রাধুনি মাথা একপাশে কাত করে হ্যাঁ বুঝালে, সে গিন্নির মতো বলল,
” রান্নাঘরে আপনার জন্য খাবার বেড়ে রাখছি। বাসায় নিয়ে খেয়ে নিবেন। ”

তারপরে তাকাল ইমদাদের দিকে। অনুরোধের সুরে বলল,
” উনাকে একশ টাকা দিবেন? ”

ইমদাদ ভ্রূ উঁচিয়ে বলল,
” কেন? ”
” উনি তো সন্ধ্যায় চলে যান, আমার কথায় আজ থেকেছেন এতক্ষণ। ”
” কেন থেকেছে? ”

মিহি নিরুত্তর থাকলে ইমদাদ বিরক্ত হলো। একই প্রশ্ন দ্বিতীয়বার করতে চাইল। সেসময় রাধুনি চলে আসায় দ্রুত পকেট থেকে একশ টাকা বের করে বলল,
” নেও। ”

মিহি টাকা নিলে সে খাওয়াই মন দিল। রাধুনি চলে গেলে মিহি দরজা আটকাতে আটকাতে বলল,
” আপনার সামনে সব দেওয়া আছে। তারপরও কিছু লাগলে আমাকে ডাকবেন। আমি ভেতরে আছি। ”

ইমদাদ উত্তর দিল না। পেছনও ফিরল না। ভাত মেখে এক নলা মুখে দিতে ভীষম খেল। চিৎকার করে বলল,
” পানি কোথায়? ”

মিহি দৌড়ে আসল। ইমদাদের প্লেটের সামনে খালি গ্লাস দেখে চিন্তায় পড়ে গেল। তাড়াহুড়ায় পানি ঢালতে গিয়ে হাত থেকে জগ পড়ে গেল। পানি ছিটে গেল ইশাদের কাপড়ে। সে আচমকায় উঠতে উঠতে বকাঝকা শুরু করল।

” পানিও ঢালতে পার না? উফ! ”

ইমদাদ ভেজা গেঞ্জি খুলল মুখে ঝারি নিয়ে। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে কী ভেবে পেছনে তাকিয়ে দেখে মিহি কাঁদছে। সে থেমে গেল। সন্দেহ চোখে এসে দাঁড়াল মিহির সামনে। নিশ্চিত হলো মিহি সত্যিই কাঁদছে। সে অবাক হলো। বকাঝকা তো আজ প্রথম নয়, তাহলে কাঁদছে কেন? অন্যদিন তো কাঁদে না! সে সন্দেহ নিয়েই বলল,
” কাঁদছ কেন? ”

মিহির নীরব কান্না এবার শব্দে পরিণত হলো। হেঁচকি তুলে বলল,
” জ্বলছে! ”
” জ্বলছে? কোথায়? কেন? ”

মিহি হাতদুটো ইমদাদের সামনে মেলে বলল,
” এখানে। ”

ইমদাদের চোখদুটো অস্বাভাবিক রকম বড় হয়ে গেল। খানিকটা চিৎকার করেই বলল,
” এগুলো কী? ও মাই গড, পুরো হাতে ফোস্কা পড়ে গেছে! ”

মিহি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” পানি লাগার পর অনেক জ্বলছে! ”

ইমদাদ বুঝতে পারল পানি ঢালতে গিয়ে কিছু একটা হয়েছে। যার ফলে চামড়া উঠে গেছে। এখন পানি লাগায় অসহণীয় জ্বালা হচ্ছে। সে তাৎক্ষণিক ডাক্তারি ব্যাগের খুঁজে গেল। মলম বের করতে করতে জেনে গেল রান্না করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। মলম লাগাতে গিয়ে বলল,
” আমাকে আগে বলোনি কেন? ”

মিহি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” আপনাকে বললে, ইশাদ ভাইয়া জেনে যেত। তারপর উনি আপনাকে বকত, মারত। আপনাকে কেউ বকলে আমার ভালো লাগে না। ”
” আমাকে বললে ও জানবে কেন? ”
” আপনি উনাকে সব বলে দেন। মার খান, তাও বলেন। ”

ইমদাদ মলম লাগানো বন্ধ করে বলল,
” আসলেই সব বলে দেই? ”

মিহির কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলছে। সে অবস্থায় বলল,
” হ্যাঁ। ”

ইমদাদ যেন ব্যাপারটা এই প্রথম ধরতে পারল এমন ভাব করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার মলম লাগাচ্ছে।

______

রুমের লাইট নিভিয়ে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে ইমদাদ। পাশ থেকে ফোন নিয়ে ইশাদকে কল দিবে সে সময় মিহি বলল,
” ভাইয়াকে বলবেন না কিন্তু আমি হাত পুড়িয়েছি, তাহলেই বকা খাবেন। ”

ইমদাদ খানিকটা ঘাবড়ে গেল। যদি সত্যিই বলে দেয়? সে ভয়ে ফোন আগের জায়গায় রেখে দিল। চোখ বন্ধ করতে মিহির আগের বলা কথাটা মনে পড়ল, ‘ আপনাকে কেউ বকলে আমার ভালো লাগে না। ‘ সে আপন মনে বিড়বিড় করল, ‘ তোমাকে যে আমি বকি তখন খারাপ লাগে না? ‘

মনের প্রশ্নের উত্তর আসে না। কিন্তু অনেক কিছু ভাবিয়ে ফেলে। ভাবতে ভাবতে এক সময় উঠে বসল। মিহি তখনও শুয়ে। হাতদুটোতে ফু দিচ্ছে একটু পর পর। চোখ বন্ধ থাকায় ইমদাদের উঠে বসা দেখেনি। ইমদাদ নিজেই ডাকল,
” মিহি? ”

মিহি চোখ মেলল। তাকে বসা দেখে চমকালও। দ্রুত উঠে বলল,
” আপনার কিছু লাগবে? ”

ইমদাদ উত্তর দিল না। এই প্রথম মিহির দিকে ভালো করে তাকাল। বুঝতে পারল দেখতে আহামরি সুন্দর না হলেও বদনখানা স্নেহপূর্ণ ও আদুরে।

” না, কিছু লাগবে না। ”

ইমদাদের এতক্ষণ পরে এই উত্তরে মিহি হতাশ হয়ে বলল,
” তাহলে? ”
” তোমার সাথে কথা আছে। ”
” কী কথা? ”

ইমদাদ একটু চুপ থেকে বলল,
” ইশাদ যাতে তিহিকে বিয়ে করে সেজন্য আমি তোমাকে একটু অভিনয় করতে বলেছিলাম। কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম তুমি ছোট একটা মেয়ে, বয়স কম, বুদ্ধিও কম। সেই ভুলের জন্য তোমার আমার সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম ওদের বিয়েটা হয়ে গেলে ইশাদকে সত্যিটা বলে উকিলের সাথে কথা বলব। কিন্তু ভাগ্য খারাপ! ওদের বিয়ে হলো না। এখনও হচ্ছে না। কবে হবে জানিও না। আর না হওয়া পর্যন্ত সত্যিটা ইশাদকে বলতেও পারছি না, তোমাকে ছাড়তেও পারছি না। তাই বলছি, এই যে বউয়ের মতো সারাক্ষণ আমার ভালো-মন্দ খোঁজ রাখছ এগুলো করতে হবে না। এগুলো করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করছ, কষ্ট পাচ্ছ। তাছাড়া কী দরকার আমার জন্য রান্না শেখার? কয়েকদিন পর তো আলাদা হয়েই যাব। ”

এই এতক্ষণে মিহি প্রশ্ন করল,
” আমরা আলাদা হয়ে যাব? ”
” হ্যাঁ, ওদের বিয়ে হলে তোমাকে ডিভোর্স দিব। ”
” ডিভোর্স! ”

মিহি এমনভাবে ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করল যে ইমদাদ ভাবল, সে ডিভোর্সের মানে বুঝেনি। তাই বুঝিয়ে বলল,
” ডিভোর্স মানে স্বামী-স্ত্রী আইনিভাবে আলাদা হয়ে যাওয়া। বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া। তখন আর আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকব না। ”
” কিন্তু আপনি যে ঐদিন বললেন, আমাকে সারাজীবন আপনার সাথে থাকতে হবে? ”

ইমদাদ মৃদু হেসে বলল,
” ওটা মজা করে বলেছিলাম। তোমার উপর রাগ করে। ”
” আমার আম্মুও মজা করে বলেছে? ”
” তোমার আম্মু আবার কী বলেছে? ”

মিহি সে উত্তর না দিয়ে বলল,
” ডিভোর্স হলে আপনি আর আমার স্বামী থাকবেন না? ”
” না। ”

মিহি একটু চুপ থেকে বলল,
” ইশাদ ভাইয়া সত্যি জানলে রাগ করবে না? ”
” তা তো করবেই। ”
” আপনাকে যদি মারে? ”
” মারলে, মারবে। সে আমি হজম করে নিব। ”

তারপর করুণ গলায় আবার বলল,
” শুধু এখন একটু ভালোমতো থাকো। যাতে ইশাদ সন্দেহ না করে। ও কিন্তু খুব চালাক! ”
” আচ্ছা। ”

মিহি ছোট্ট শব্দে সম্মতি প্রকাশ করে শুয়ে পড়ল। ইমদাদও আর বসে থাকল না। বালিশে মাথা ঠেকিয়ে বলল,
” এখনও জ্বলছে? ”

মিহির বলতে ইচ্ছে হলো, ‘ হ্যাঁ, খুব জ্বলছে। কিন্তু কোথায় জ্বলছে বুঝতে পারছি না। ‘ বলা হলো না। চোখ বন্ধ করে ভারী নিশ্বাস ফেলল।

চলবে

[ আমার পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে। তার আগেই গল্পটা শেষ করব। প্রতিদিন হয়তো দেওয়া সম্ভব হবে না, কিন্তু চেষ্টা করব। কেমন হচ্ছে একটু বিস্তারিত জানাবেন। ]
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here