সেই মেয়েটি আমি নই
#৭ম-#পর্ব
ইশতিয়াকের ঘুম ভাঙলো অচেনা এক নাম্বার থেকে কল পেয়ে। তাকিয়ে দেখে ঘড়িতে মাত্র সাতটা বাজে। অনেকটা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে সে,
– ‘হ্যালো।’
– ‘আসসালামু আলাইকুম ভাই, আমি রফিক। ওইদিন কাশবনে পুলিশের সঙ্গে ছিলাম। পরনে ছিল হলুদ গেঞ্জি।’
ছেলেটির পরিচয় শুনে ইশতিয়াক শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
– ‘হ্যাঁ চিনতে পেরেছি, কিন্তু এখন আবার আপনি আমার কাছে কি চান?’
ফোনের ওপাশ থেকে রহস্যের হাসি ভেসে এলো। তারপর ছেলেটি বললো।
– ‘ভাই চাওয়ার তো কথা আপনার। আপনার অগোচরে কত কিছু যে হয়ে যাচ্ছে টেরই পাচ্ছেন না।’
– ‘দেখুন ভাই, সাত-সকালে কল দিয়ে নাটক করবেন না। আমার অফিস আছে। আমি আটটায় উঠে গোসল খাওয়া-দাওয়া করে অফিসে বের হই। আপনি ভোরে কল দিয়ে ঘুম নষ্ট করেছেন।’
– ‘ভাই জীবনই যেখানে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ঘুমিয়ে কি হবে? সত্যি বলতে আপনাকে দেখে ভালো মানুষ মনে হইছে। দুদিন থেকে ভেবেই যাচ্ছি, দুনিয়াতে বুঝি ভালো মানুষের সঙ্গেই শুধু এমন হয়।’
– ‘ভাই আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বলুন। না হয় আমি কল কেটে দেবো।’
– ‘ভাই আপনাকে জরুরি কিছু তথ্য দিতে চাচ্ছি। ওইদিন ভাবী টাকা দিয়ে বললেন আপনাকে না শোনাতে। তাই কিছু বলিনি। কিন্তু আজ ভেবে দেখলাম তাতে আপনার বিরাট ক্ষতি হচ্ছে।’
ইশতিয়াকের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে, পায়ের তালু ঘেমে যাচ্ছে। সে শঙ্কিত হলেও বুঝতে দিল না রফিককে। বিরক্তি নিয়ে বললো,
– ‘আরে ধুর ভাই, কথা এতো না প্যাঁচিয়ে বলুন কি হইছে।’
– ‘ভাই এভাবে তো বলা যাবে না। ভাবী আমাকে ভ্যানিটিব্যাগে যত টাকা ছিল সব দিয়ে গেছে আপনাকে না বলার জন্য।’
– ‘কিসব আবোল-তাবোল কথা বলছেন। ও কখন টাকা দিল?’
– ‘টাকা যে দিছে সেটারও ভিডিয়ো আছে ভাই।’
– ‘টাকা কেন দিছে?’
– ‘আমি ভাবীর ফোন হাতে নেয়ার পর দেখি একটা নাম্বার থেকে অনেক কল এসেছে, সঙ্গে একটা মেসেজ। সেখানে লেখা আমাদের পুরনো কিছু ছবি দিয়েছি হোয়াটসঅ্যাপ দেখো। আমি তখন হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে পাই।’
– ‘কিসের ছবি?’
– ‘এরকম তো হবে না ভাই। ভাবী আমাদের টাকা দিয়ে গেছে আপনাকে না দিতে। আর ভাই আরেকটা সমস্যা দেখা দিছে। আমার সাথের ছেলেটা ভিডিয়ো আর ছবিগুলো যখন-তখন নেটে দিয়ে ভাইরাল করে দিতে পারে। ওর না-কি কিসের একটা পেইজ আছে৷ সেটার রিচের জন্য, ভাইরাল করার জন্য এগুলো না-কি একেবারে পারফেক্ট। তখন তো আপনার ইজ্জৎও যাবে…।
ইশতিয়াক ধমক দিয়ে উঠলো,
– ‘আরে ব্যাটা ভূমিকা বন্ধ কর। কি চাস সেটা বল। ছবি-ভিডিয়ো কি আছে পাঠা দেখি।’
– ‘ভাই হোয়াটসঅ্যাপে বিকাশ নাম্বার দিচ্ছি। পাঁচ হাজার টাকা পাঠান আগে। আর সব তথ্য পেয়ে গেলে আরও পাঁচ হাজার পাঠাবেন।’
ইশতিয়াকের ক্রোধে শরীর কাঁপছে। সে নিজেকে সামলে নিয়ে অবিকৃত গলায় বললো,
– ‘আগে পাঁচ হাজার পাঠানোর পর এডিট করা ছবি দিলে? অথবা কিছুই না পাঠালে?’
– ‘ভাই আপনাকে আগে পাঠাচ্ছি ভাবী যে আমাকে টাকা দিচ্ছিলেন তার ভিডিয়ো। তারপর আপনি টাকা পাঠান।’
ইশতিয়াকের মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজা মুঠোয় নিয়ে মোচড়ে ধরেছে। সে প্রাণপণে চাচ্ছে এই ছেলেটার ভিডিয়ো যেন এডিট করা থাকে। সবকিছু যেন মিথ্যে হয়। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেন প্রতারণা করে কিছুই না পাঠায়।
সে শঙ্কিত গলায় বললো,
– ‘আচ্ছা ‘
– ‘তাহলে ফোন রাখছি, আপনি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাক করুন। ভিডিয়ো এর সঙ্গে বিকাশ নাম্বার দিচ্ছি।’
ইশতিয়াক ফোন রেখে চোখবন্ধ করে দুইহাতে মুখ আঁজলা করে ধরে বসলো। হোয়াটসঅ্যাপ নোটিফিকেশন টিউন বাজতেই মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ছেলেটি ভিডিয়ো পাঠিয়েছে। ইশতিয়াকের বুকে ধুকপুকানি বেড়ে যায়, পা যেন অসাড় হয়ে আসে। মাথার রগগুলো ফুলে যাচ্ছে। কান দিয়ে গরম ভাপ বেরুচ্ছে। তার কাছ থেকে তথ্যগুলো লুকোতে তুলি এই ছেলেদের টাকা দিয়েছে ভাবতেই পারে না সে। কাঁপা কাঁপা হাতে ভিডিয়োতে ক্লিক করে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারছে না। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে সে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছে। তুলি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ভ্যানিটিব্যাগ আঁড়াল করে টাকা দিচ্ছে ছেলেটিকে। অথচ রিকশায় কিংবা বাসায় এসেও তাকে একথা বলেনি তুলি। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। মোবাইল বিছানায় রেখে দুই আঙুল দিয়ে কপাল ঘষছে। মস্তিষ্কের ভেতর খুব দ্রুত সন্দেহের গাছ রোপণ হয়ে, সেই গাছ বড়ো হয়ে ডালপালাও ছাড়তে শুরু করেছে। তার বিকাশে এত টাকা এখন নেই।
মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজ দিল,
– ‘বিকাশ নাম্বার দেন, আমি টাকা পাঠাচ্ছি। আপনি আমাকে সবকিছু হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করেন। আর আমাকে দিয়ে সবকিছু ডিলিট করে দেবেন। টাকা লাগলে আরও দেবো। তবুও এগুলো ডিলিট চাই। নেটে ছাড়লে আমি মামলা করতে বাধ্য হবে।’
ছেলেটি মেসেজ দিল,
– আরে ভাই এগুলো ভাববেন না। বিকাশ নাম্বার দিছি দেখুন। টাকা ছাড়েন তাড়াতাড়ি।’
বিকাশ নাম্বার পেয়ে ইশতিয়াক উঠে দাঁড়ায়। একটা গেঞ্জি গায়ে দেয়৷ মানিব্যাগ মোবাইল নিয়ে বের হয়ে পড়ে। রাস্তায় গিয়ে মনে পড়লো সিগারেট আনেনি। পাশের দোকানে গিয়ে সিগারেট নিল একটা। ঘন ঘন টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে গেল মোড়ের বিকাশের দোকানে। সে টাকা পাঠিয়েই হোয়াটসঅ্যাপ আর চ্যাক করলো না। কোলাহলের এই রাস্তায় কিছুই দেখতে চায় না। দোকান থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকে৷ নিজেকে বুঝায় যাই-ই ঘটুক, যাই-ই হোয়াটসঅ্যাপে দিক, সে তুলিকে এভাবেই ভালোবেসে যাবে৷ সময় সবকিছু ঠিক করে দেবে। এতো রেগে যাওয়ার মানেই হয় না। তার জায়গায় অন্যকেউ হলে এগুলো হয়তো খেয়ালই করতো না। সে এমন তো নিজেই জানে। বাড়ির সবাইই বলে। এখন বিবাহিত। আগের স্বভাব ছাড়তে হবে। নিজেকে শাসন করতে করতে ইশতিয়াক বাসায় চলে আসে। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাক না করে বিছানায় বসে আরেকটা সিগারেট ধরায়। ধোঁয়া ছাড়ে ঘন ঘন। ডাটা অন করে সে। টংটাং শব্দ করে একের পর এক ছবি আসতে থাকে। এগুলো তাকে না দেয়ার জন্য তুলি লুকিয়ে টাকা দিয়ে এসেছে ছেলেদের। কথাটা মনে পড়তেই ইশতিয়াক সিগারেট ছুড়ে মারে দেয়ালে। মোবাইল হাতে নেয়। কাঁপা কাঁপা হাতে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে।
প্রথম ছবিই একটা ছেলের সঙ্গে ধান ক্ষেতের জমির আইলে বসা। আরেকটা সবুজ ঘাসে ওই যুবকটির বুকে শুয়ে আছে। আরেকট খড়ের স্তুপের ওপর বসে ঠোঁটে চুম্বনরত অবস্থায়। কিছু ন্যুড পিকচার। একটা ভিডিয়ো সেল্ফি ক্যামেরায় তোলা। যেখানে দেখা যাচ্ছে দু’জনই একটা জমির আলে বসে আছে। সামনে পেছনে সবুজ ধান তাদেরকে ঢেকে রেখেছে নিরাপত্তার চাদরে। ছেলেটি ওর স্তনে হাত রেখে চোরা চাহনিতে চারদিকে তাকিয়ে দেখছে কেউ আসছে কি-না। ইশতিয়াক আর ভিডিয়োটি দেখতে পারে না। মোবাইল ছুড়ে ফেলে বিছানায়। সে জন্মের পর থেকে কখনও তার কিছুতেই অন্যের ভাগ, অন্যের ছোঁয়া সহ্য করতে পারে না। ছোট ভাইটিকে একবার তার গেঞ্জি পরায় বেধড়ক মারধর করেছিল। সেই তারই স্ত্রীকে অন্য কেউ…?
আর তুলি? ভাবতেই তার গা গুলিয়ে উঠলো। এত জঘন্য মিথ্যেচার। বাসর রাতেই বলেছিল সেইই না-কি প্রথম পুরুষ, কোনো পরপুরুষের ছোঁয়া এর আগে সে কখনও পায়নি। আর এই ছবি ভিডিয়োগুলো গোপন রাখতে তার অগোচরে টাকাও দিয়ে এসেছে? জায়গাটা গ্রাম এলাকা মনে হলো, ছেলেটা ওর মামার বাড়ির হয়তো। আচ্ছা তুলি যে ছেলের সঙ্গে এতো ঘনিষ্ঠ ছিল তাকে কেন বিয়ে করেনি? ভাবতেই ইশতিয়াকের ঘেন্নায় গা ‘রিরি’ করে উঠলো। সে একজন ব্যাংকার বলে ওই ছেলেকে ফেলে বিয়ে বসেছে? তাহলে এসব প্রেম-ভালোবাসা, প্রণয়বাক্য সবই মনভোলানো? একদলা ‘থুতু’ টাইলসের মেঝেতেই ফেলে দিল ইশতিয়াক। মোবাইল বেজে উঠলো। রফিক কল দিয়েছে। সে রিসিভ করে বিধ্বস্ত অবস্থায় বললো,
– ‘হ্যালো।’
– ‘ভাই বাকি পাঁচ হাজার পাঠান।’
ক্রোধে অশ্রাব্য ভাষার গালিগালাজ শুরু করে দেয় ইশতিয়াক। ছেলেটি অবস্থা বুঝতে পেরে ‘পরে যোগাযোগ করব’ বলে হাসতে হাসতে ফোন রেখে দেয়।
দুই হাতে মুখ ঢেকে ইশতিয়াক বিছানায় বসে। নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। তুলি তো তার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই সংসার করছে। তবে কেন সে এতো ভেঙে পড়বে? কেন রেগে যাবে? তার এসব বাজে স্বভাবের জন্যই কারও সঙ্গে থাকতে পারে না। মিশতে পারে না। এখন থেকে এসব ছাড়তে হবে। সবকিছুরই সমাধান থাকে। যা হবার হয়ে যায়৷ বাঁচতে হয় বর্তমান নিয়ে।
সে মনস্থির করে ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টা নিয়ে তুলির সঙ্গে কথা বলবে। সে এখন থেকে ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। ব্যাংকে চাকরি করা ভদ্রলোক। জীবনে এই প্রথম সে নিজেকে সামলে নিতে পারলো। এখন থেকে সব সময় পারবে। একেবারে শান্তশিষ্ট হয়ে গেল। এভাবেই শান্ত থাকবে। সে এখন গোসল করবে। গোসল করতে আরাম। গোসল তার প্রিয়৷ আই লাভ ইউ গোসল। গোসল থেকে শান্তির কিছু নাই। ইশতিয়াকের মনে হলো মাথা ঝিমঝিম করছে। চোখে ঝাপসা লাগছে৷ সকালে কিছু খায়নি বলে হয়তো। প্রেশার কি লো না-কি হাই? মেঝেতে শুয়ে যাবে সে, অনেক আরাম। ইশতিয়াক মেঝেতে খানিক্ষণ পড়ে রইল। ঘাম ছাড়লো তার পুরো শরীর থেকে। ফোটা ফোটা ঘামে টাইলস ভিজে যাচ্ছে। কানে কেমন ‘ঝিমঝিম’ শব্দ হচ্ছে। শরীর খুব দূর্বল লাগছে। ইশতিয়াক খাবে এখন। সকালে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হয়। নাশতা করতে হয়। সে কি-না কোথাকার রফিক-টফিকের পাল্লায় পড়েছে। ইশতিয়াক উঠে ধীরে ধীরে। এলোমেলো পায়ে হেঁটে টেবিলে গিয়ে এক চুমুকে পুরো গ্লাস পানি খেল। সকালে বেশি পানি খাওয়া নিয়ম। ইশতিয়াক একের পর এক গ্লাসে পানি ঢেলে খায়। খালি পেটে শুধু পানি খেলে হয় না। সঙ্গে কিছু খেতে হয়। ইশতিয়াক ব্রেড আর জেলি নিয়ে এলো। ব্রেডে জেলি লাগিয়ে এক পিস শেষ করে তার মনে পড়লো দাঁত ব্রাশ করেনি। ব্রেড জেলি রেখে চলে গেল বাথরুমে। আয়নায় তাকালো সে। চোখ অস্বাভাবিক লাল হয়ে গেছে। ঘুম হয়নি ঠিকঠাক। মনে মনে গালি দিল ধান্ধাবাজ রফিককে। সে আর বেশিক্ষণ নিজের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারলো না। শাসিয়ে রাখতে পারলো না। কান্না দলাপাকিয়ে এলো গলায়। তাড়াতাড়ি শাওয়ার ছেড়ে দেয় ইশতিয়াক। বসে পড়ে মেঝেতে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। তুলিকে কেউ চুমু দিয়েছে, বিশেষ অঙ্গে স্পর্শ করেছে৷ তুলি সেটা উপভোগ করেছে। এখন আবার তার সঙ্গে একেবারে নিষ্পাপ বালিকার অভিনয় করে সংসার করছে। ইশতিয়াক যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না৷ তার নিজের রুচি নিয়েই এখন হতাশ হচ্ছে। সে কি করে তুলির মতো…।
না তুলিকে নিয়ে এগুলো ভাববে না সে। তুলিকে আগের মতোই ভালোবাসবে। ছবিগুলো এডিট করা, ভিডিয়ো এডিট করা। দুনিয়া কোথায় গেছে তার জানা নেই। প্রযুক্তি কোথায় গেছে তার জানা নেই। এগুলো নিখুঁত এডিট। তুলির সঙ্গে সে কথা বলবে। শাওয়ারের পানির সঙ্গে তার চোখের জলগুলো মিশে যায়। উঠে দাঁড়ায় ইশতিয়াক। ভেজা কাপড় ছেড়ে, টাওয়েল দিয়ে শরীর মুছে নেয়। কাপড় পালটে নাশতা করতে বসে। নিজেকে বুঝায় যেন কিছুই হয়নি। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। খাওয়া গোসল সবকিছু ঠিকঠাক করতে হবে। অফিসে কল দিয়ে আজকের জন্য ছুটি নিয়ে নেয়। নাশতা শেষে বের হয় রিকশা নিয়ে। তুলিদের বাসার কাছাকাছি যখন পৌঁছে গেছে তখন ঠিক দুপুর বারোটা। ইশতিয়াক বাড়ির গেইটের অনেক দূরে থাকতেই দেখে তুলি একটা রিকশা নিয়ে কোথাও যাচ্ছে। সেও রিকশা নিয়ে ফলো করে পিছু পিছু যায়। খানিক পর একটা পার্কের সামনে গিয়ে থামে ওর রিকশা। ভাড়া চুকিয়ে তুলি গেইট দিয়ে ঢুকে পড়ে। ইশতিয়াকও তাড়াতাড়ি রিকশা ভাড়া দিয়ে সাবধানে ছুটে যায় সেদিকে। তুলি একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কাউকে কল দিচ্ছে। খানিক পর ফোন কানে নিয়ে তুলির দিকে এগিয়ে এলো ছবির সেই ছেলেটি। তুলিকে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
– ‘তুমি কিভাবে পারলে আমাকে রেখে বিয়ে বসতে? কিভাবে পারলে তুমি? আমাদের কত স্মৃতি, আমরা একে অন্যের শরীরের প্রতিটা পশম পর্যন্ত চিনি। আর তুমি এখন বলো আমাকে চেনোই না। এরকম কেন করলে আমার সঙ্গে? জানি তুমি বাধ্য হয়ে বিয়ে বসেছো। আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। চলো আমরা পালিয়ে যাই এখান থেকে কোথাও।
কথাগুলো শুনে ইশতিয়াকের মাথায় যেন আগুন ধরে যায়। পুরো শরীরের লোম মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কান দিয়ে বেরুচ্ছে গরম ভাপ। হাতের মুষ্টি শক্ত হয়ে এসেছে। তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। সে কি কোনো স্বপ্নদৃশ্য দেখছে?
___চলবে___
সেই মেয়েটি আমি নই
লেখা: জবরুল ইসলাম