#অনুভূতিহীন (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আমি রিক্সা থেকে নেমে হাসতে লাগলাম। আর সে মুখটা গম্ভির করে বসে আছে এখনো। উঠে দাড়াতে পারছে না। হয়তো পায়ে চোট লেগেছে। ওনার চোট লাগায় আমার খারাপ লাগলেও আমি সময়ের সৎ ব্যবহার করার সুজুগ টা কখনো ছারি না। এখন নিশ্চই বাড়ি ফিরে যাবে। আর একা একা তো মোটেও যেতে পারবে না।
সো সে না চাইলেও আমার হেল্প লাগবে তার। আর আশে পাশেও তেমন মানুষ চোখে পরছে না। সো আমার হেল্প চাইতে সে বাধ্য।
পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেনি রিক্সা চালক চাচাও। হয়তো সে নিজের দোষ ভোবে ভয় পেয়েছে তাই তো আমি ইশারা দেওয়ার সাথে সাথেই চলে গেলো সেখান থেকে।
এবার কোথায় যাবে আমার জামাই টা। এখন আমার হেল্প ছারা তুমি শুন্য। যতই দুড়ে থাকতে চেয়েছো, এখন তার চেয়েও বেশি কাছে আসতে হবে তোমায়।
যখনই আমি রিদ ভাইয়াকে তোলার জন্য হাত বাড়ালাম তখনই একটা বাইক এসে হুট করে থামে আমাদের সামনে। বাইকে দুইটা ছেলে।
আরে এটা তো ফাহিম ভাই। রিদ ভাইয়ের ফ্রেন্ড।
রিদ ভাইয়ের কথায় যা বুঝলাম, সামনে বাইক চালাচ্ছে ওটা ফাহিম ভাইয়ের ছোট ভাই।
হুট করে এমন সময় ফাহিম ভাইকে দেখে খুব রাগ হলো আমার। হুট করে কোথায় থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের রোমান্টিক টাইম টা নষ্ট করে দিলো। রাগে একটার মাথার সাথে আরেকটার মাথা পিটাতে ইচ্ছে করছে আমার।
– কি রে ব্যাটা, এতো জায়গা থাকতে তুই রাস্তার মাঝে পা ধরে বসে রইলি কেন?
ফাহিম ভাইয়ের কথায় রিদ ভাই রেগে বললো,
– আগে তো আমায় তুলবি নাকি?
রিদ ভাইয়ের কথায় হাত বাড়ায় ফাহিম ভাই। ফাহিম ভাইয়ের হাত ধরে ভর করে উঠে দাড়ায় সে। এই মুহুর্তে আমার রাগ হলো খুব। কোথায় ফাহিম ভাইয়ের জায়গায় এখন আমি থাকতাম। আর সারা রাস্তা সে আমায় ধরে ধরে বাসায় যেতো। কিছুই হলো না ধেৎ।
– তোর ভাবি কে নিয়ে হাটতে বের হয়েছিলাম। হুট করে পা মচকে পরে যাই, আর এর পরই তুই আসলি। থ্যাংক্স রে দোস্ত। এবার আমায় কষ্ট করে বাড়ি অব্দি পৌছে দে।
রিদ ভাইয়ের এমন ডাহা মিথ্যা কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। নিরামিশ বেডা এখন নিজেকে রোমান্টিক প্রমান করতে চাইছে। শপিং করতে বের হয়েছে তাও আবার মায়ের চাপে পড়ে। আর এখন বলছে আমায় নিয়ে রাতে হাটতে বের হয়েছে।
এর মাঝেই ফাহিম ভাইয়া বললো,
– আচ্ছা রিদ এক কাজ কর, তুই নাঈমের পেছনে উঠে বস। সে তোকে বাড়ি পৌছে দিবে। আর ভাবিকে আমি নিয়ে আসছি।
রিদ ভাই একটু ভেবে বললো,
– আরশি কেন তোর সাথে আলাদা যাবে?
ফাহিম ভাই একটু হাসলো। তার পর বললো,
– আচ্ছা তাহলে ভাবি আপনি নাঈমের সাথে বাড়ি চলে যান, আমি রিদকে নিয়ে আসছি।
আমিও যেন একটা সুজুগ পেলাম। আগেই বলেছি আমি সুজুগের সৎ ব্যবহার ছারতে চাইনা। আমি চট করে বললাম,
– আইডিয়া টা মন্দ না ভাইয়া। আমি বরং চলে যাচ্ছি আপনি ওকে নিয়ে আসুন।
এর মাঝেই রিদ ভাইয়াও চট করে উত্তর দিলো,
– একধম না,,,
আমি ভ্রু-কুচকে বললাম,
– কেন?
ওনি আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে বললো,
– আমি বলছি তাই।
এখন আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে আমাকে নিয়ে কত জেলাস সে।
– এই ফাহিম তুই একটা গাড়ি ডাকতো ভাই, সবাই এক সাথেই যাবো।
ফাহিম ভাইয়ার কাধে ভর করে বাসায় ঢুকলো রিদ ভাই। তখনই মামি ভুত দেখার মতো চমকে এগিয়ে আসে আমাদের দিকে। অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে,
– কিরে কি হয়েছে তোর? এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো?
ফাহিম ভাইয়া বললো,
– না আন্টি এক্সিডেন্ট হয় নি, হাটার সময় একটু পা মচকে গেছে।
এর পর রিদ ভাইয়াকে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো ফাহিম ভাই। আমি গিয়ে তার পাশে বসতেই সে বললো,
– ওয়াড্রবের ভিতর একটা বক্স আছে ওই বক্সে একটা মলম আছে, একটু পায়ে মালিশ করে দাও তো আরশি।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো উঠে মলম এনে তার পায়ে আস্তে আস্তে মালিশ করে দিচ্ছিলাম।
ফাহিম ভাইয়া তাকে আধ সোয়া করে বসিয়ে তার পাশে বসলো।
রিদ ভাই ফাহিম ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
– তো দুই ভাই কোথায় থেকে আসছিলি?
হটাৎ ই ফাহিম মাথা নিচু করে ফেললো। একটা লজ্জা ভাব প্রকাশ পেলো তার মাঝে। এর পর আমার দিকে আড় চোখে চেয়ে রিদ ভাইকে বললো,
– তোকে একটা সু-খবর জানানো হয় নি।
– কি?
– বাবা আমার আর আদিবার সম্পর্ক টা মেনে নিয়েছে। হয়তো দুই এক দিনের মাঝেই আদিবাকে দেখতে যাবে। এর পর সব ঠিকঠাক থাকলে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলবো।
হুট করে রিদ ভাই রেগে বললো,
– তুই এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হ।
– আরে ভাই রাগ করছিস কেন,,
– তো কি করবো? তোকে মাথায় তুলে নাচবো? এতোকিছু হয়ে গেছে, অথচ আমায় জানালি না তুই। তোর সাথে আমার এই ফ্রেন্ডশিপ?
– আচ্ছা আমার সাথে ঘটে গেছে, আর তা আমি তোর সাথে শেয়ার করিনি। এমন টা কি হয়েছে কখনো? আমার সব কিছুই তোর সাথে শেয়ার করি। আর এটা করতে পারিনি, কারণ বাবা মত জানালো আজ সন্ধায়। হুটহাট, তোকে জানানোর সময় পেলাম কই? তোকে এখন সবার আগে জানালাম, আর তুই রাগ দেখাচ্ছিস?
রিদ উৎসাহ নিয়ে বললো,
– আর আদিবার ফ্যামিলি?
– সে বললো, তার ফ্যামিলিকেও সে রাজি করিয়েছে। এবার বাকিটা উপর ওয়ালার হাতে। দোয়া করিস ভাই। আচ্ছা আমি এখন গেলাম, বাসায় পৌছে তোকে ফোন দিবো।
– খেয়ে যাবি না?
– না রে ভাই, আজ সম্ভব না। রাত হয়েছে, বাসায় মা অপেক্ষা করছে। আজ আসি।
– আচ্ছা শুন, নিরব কোথায় রে? ওইদিন বিয়ের পর যে হাওয়া হলো আর খবর নেই।
– আর বলিস না ভাই, সালা এখন দেবদাস হয়ে আছে।
– কেন ছ্যাকা ট্যাকা খাইছে নাকি?
– ওরোকমই,,,,
– কাহিনি কি বলতো,
– তুই তো জানতি নিরব গত এক বছর ধরে ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করতো।
– হুম, ওদের না এই কয়েক দিনের মাঝে দেখা করার কথা?
ফাহিম একটা দির্ঘশ্বাস নহয়ে বললো,
– আর বলিস না ভাই, ওই আইডির মালিক ছিলো এক বিচি ওয়ালা আপু।
– মানে?
– আমাদের ফ্রেন্ড সাগর আছে না? গত বছর বিদেশ গেলো। ওই সাগরই ফেইক আইডি দিয়ে নিরবের সাথে বছর খানেক প্রেম করলো। এখন দুই দিন আগে নিরব ধরে ফেললো যে এটা সাগর, এর পর আর কি? বেচারা নিরব দেবদাস হয়ে বাসায় বসে আছে।
ফাহিম ভাইয়ের কথা আমি না হেসে আর থাকতে পারলাম না। ফাহিম ভাইও হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মামি অনেক জোরাজুড়ি করলো খেয়ে যেতে কিন্তু চলে গেলো সে।
কিছুক্ষন পর আমি খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রিদ ভাইয়ার সামনে এসে বসলাম।
– হা করেন?
– কেন আমার হাত নেই?
– সব সময় ত্যারামি করেন কেন? আমি খাইয়ে দিলে প্রব্লেম কোথায়?
– তুমি কি ইনডিরেক্টলি আমায় ত্যারা বললা?
– কথার মাঝে এতো প্যাচ ধরেন কেন? কথার পিঠে কথা বুঝেন না?
– তো মেয়েদের হাতে আমি কেন খেতে যাবো?
– কারণ আমি এখন আপনার স্ত্রী।
কথাটা বলতেই কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভুতি তৈরি হলো আমার। ওনি আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলেন।
রাত তখন প্রায় এগারো টা। সে এখনো বিছানায় আধসোয়া হয়ে বসে আছে। পা টা ফুলে আছে, হয়তো ব্যাথাও করছে প্রচুর। আমি তার পাশে গিয়ে বললাম,
– আজকে কিভাবে সোফায় ঘুমাবেন?
– আজ মনে হয় আর ঘুম হবে না পায়ের ব্যাথায়। তুমি এক কাজ করো, ঘুমিয়ে পড়ো। ট্রাস্ট মি. আমার সাথে তোমার স্পর্শও লাগবে না।
– আপনি ঘুমাবেন না?
– এক কাজ করো, ওখান থেকে হলুদ কালারের উপন্যাসের বই টা এনে দাও। ওটা একনো পড়া হয়নি। রাত টা সুন্দরে পার করা যাবে।
আমি চুপচাপ গিয়ে দুইটা উপন্যাসের বই নিয়ে এলাম। আমিও তার সাথে উপন্যাস পড়বো। দুজন মিলে এক সাথে কিছু করার অনুভুতিটাই অন্য রকম।
সে চট করেই আমার হাত থেকে দুইটা বই ই নিয়ে নিলো। আমি ভ্রু-কুচকে বললাম,
– একটা আমায় দিন, আমিও আপনার সাথে পড়বো।
– পড়বে ভালো কথা, প্রেমাতাল ছারা বাকি গুলো পড়ো। ওখানে একটা রুপকথার গল্পের বই আছে। তুমি বরং রুপ কথার গল্প পড়ো। ওগুলোই তোমার জন্য ঠিক আছে। এসব রোমান্টিক গল্প তোমার মতো পিচ্চির জন্য প্রযোজ্য নয়।
– দেখেন আমি মোটেও পিচ্চি না। আমি রোমান্টিক গল্পই গড়বো।
– আমি বলছি না, পড়বে না তুমি।
– আচ্ছা পড়বো না। তবে একটা শর্ত আছে।
– আবার কি শর্ত?
– শর্ত নয়, অপশন,,
– কি?
– হয়তো আমি এই বই পড়বো, নয়তো আপনি আমাকে একটা চুমু দিতে হবে।
রিদ ভাই একটু ভ্রু-কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– বয়স কতো তোমার?
আমার ঝটপট উত্তর,
– ১৭ ক্রস করে ১৮ তে পা দিয়েছি। আর কয়েক মাস পরেই আমি এডাল্ট।
আমার কথায় তিনি হু হু করে হেসে দিলো।
– এডাল্ট হতে পারলে তখন এভাবে আপ্পা চাইতে এসো। তোমার এখনো হর্লিক্স খাওয়ার বয়স, চুম্মা খাওয়ার না।
বলেই তিনি হাসতে হাসতে উপন্যাসের বই খুললেন। আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বুঝে উঠতে পারছি না, উনি কি কি আমায় এতোটাই বাচ্চা মনে করে?
#অনুভূতিহীন (পর্ব ৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
এতো মানুষের ভিড়ের মাঝে খেয়াল করলাম দুর থেকে দুটু ভয়ঙ্ক চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে আমার।
রিদ ভাইয়া আমায় এক হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে ভিড় পার হচ্ছেন। আমি চুপচাপ তার সাথে হাটছি। আর চার দিকে তাকাতে লাগলাম। আমার দৃষ্টি ওই ভয়ঙ্কর চোখ দুটি খুজতে ব্যস্ত। সে এখানেও চলে এসেছি ভাবতেই হৃদপিন্ড টা জোড়ে জোড়ে লাফাতে লাগলো আমার। কিন্তু হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলো সে? এতো মানুষের ভিড়ে তাকে দৃষ্টি দিয়ে খুজে বের করাটাও মুশকিল।
এতো মানুষের মাঝে আমার গায়ে অন্যদের ধাক্কা লাগছে দেখে রিদ ভাই হুট করেই এক হাত দিয়ে আমায় নিজের সাথে চেপে ধরলো। যেন আর কারো সাথে ধাক্কা না লাগে আমার। এতো মানুষের সামনে বিষয় টা লজ্জা জনক মনে হলো আমার কাছে। তাই চোক্ষু যুগল নিচের দিকে স্থির রেখে হাটতে লাগলাম।
আজ রাস্তায় অনেক জ্যাম। মানুষেরও ভির বেশি। সে ভির থেকে বেড়িয়েই আমায় ছেড়ে দিলো। তার পর টিসু বের করে কপালের ঘাম মুছে নিলো। সাথে আরেকটা টিসু নিয়ে আমার ঘামও মুছে দিতে লাগলো। আমি এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি জানি সে আমায় ভালোবাসে৷ কিন্তু প্রকাশ করে না। তাই বলে তার এতো ভালোবাসার জন্য মোটেও আনন্দ লাগছে না আমার। ভয় হচ্ছে খুব। তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। এই পাঁচ ছয় দিনে খুব আপন হয়ে গেছে মানুষ টা।
আমার দৃষ্টি এখনো চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই বুঝি আসিফ চলে আসবে এখানে। রিদ ভাইয়াকে মারবে খুব। মুখ দিয়ে র*ক্ত ঝড়ে রিদ ভাইয়া লুটিয়ে পরবে মাটিতে। আমি কাঁন্না করে দিবো। তার কাছে আকুতি মিনতি করবো রিদ ভাইয়াকে ছেরে দিতে। আমার এমন পাগলের মতো কাঁন্না দেখে চার পাশে মানুষের ভির জমে যাবে। আর রিদ ভাইয়া রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকবে মাটিতে।
কেন যে এসব আজে-বাজে চিন্তা আমার মাথায় ঘুরছে তা আমি নিজেও জানিনা। তবে ভয় হচ্ছে খুব। চার দিকে দৃষ্টি মেলেও ওই ভয়ঙ্কর চাহোনির চোখ দেখতে পাইনি আমি।
হুট করে রিদ ভাইয়ার কথায় আমার ভাবনার জগতের ইতি ঘটলো। আামার দিকে সে অপরাধী চোখে চেয়ে বললো,
– সরি, তোমাকে এভাবে টার্চ করার জন্য। আমি ইচ্ছে করে করিনি। ভিড়ের মাঝে মানুষদের সাথে তোমার ধাক্কা লাগছিলো এটা আমার সহ্য হচ্ছিলো না। তাই নিজের সাথে ধরে ভিড় পার করলাম তোমায়। রাগ করো না প্লিজ। আ’ম রিয়েলি সরি।
ওনি এক প্রকার কান ধরেই কথাটা বললেন। মনে হচ্ছে খুব অপরাধ করে ফেলেছন আমায় এভাবে ধরে। আমার এখন তাকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে, ‘নিজের স্ত্রী’কেই তো টার্চ করেছেন। এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে কেন?’
কিন্তু আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। সব কিছু যেন কেমন অস্থির লাগছে আমার করলো সেই ভয়ঙ্কর চাহোনির উপর দৃষ্টি পড়ার পর থেকেই। আমি ঘামতে লাগলাম।
হয়তো তিনিও বুঝতে পারছেন আমার নার্ভাস ফিল হচ্ছে। হয়তো কারণ টা জানেনা। তবে এটা বুঝতে পারছে যে, আমার খুব অস্থি হচ্ছে।
আমাকে নিয়ে আরেকটু হেটেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো সে। আর দুজনের জন্যই কোল্ড ড্রিংক্স এর অর্ডার দিলো। শরির টা একটু ঠান্ডা হবে এতে।
ফাহিম ভাইয়ার বিয়ে। কালকে গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে। ওখানে যাওয়ার জন্যই শপিং করতে এলাম দুই জন। গত কাল ভাইয়ার বিয়ের কেনাকাটা হয়ে গেছে। রিদ ভাইয়া তাদের সাথে গিয়েছিলো, আমি যাইনি। আর আজ আমাকে নিয়ে বের হলো। আমাদের আরো আগে আশার কথা ছিলো, কিন্তু তার পা মচকে যাওয়ার পর দুই দিন আর আশা হয়নি।
শপিং মলে ঢুকতেই একটা মেয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। রিদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাস্যজ্জল মুখে বললো,
– হাই রিদ কেমন আছো?
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– হুম ভালো,
আমি একটু অবাক হলাম তাদের কথা শুনে। মেয়েটা বয়সে রিদ ভাইয়ের চেয়ে ছোটই হবে। আর সে রিদ ভাইয়াকে তুমি করে বলছে। আর রিদ ভাইয়া তুমি বলার বিপরীতে আপনি করে বলছে। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে আমার। তবে তাদের এমন হেসে হেসে কথা বলার ধরণ দেখে প্রচুর রাগ হচ্ছে আমার।
– হুম, আমার আপাততো তেমন একটা ব্যস্ততা নেই। তোমরা চাইলে তোমাদের হেল্প করতে পারি সমস্যা নেই।
এবার আমার আরো রাগ হলো। চিনিনা জানিনা, আমাদের মাঝে আসছে কাবাবের হাড্ডি হতে।
রিদ ভাইয়া কিছু বললো না, শুধু বললো,
– আপনার কষ্ট হবে না?
– আরে না, কি বলো। তোমার সাথে থাকলে সময়টা তো আরো ইনজয়ে কাটবে। কষ্ট হতে যাবে কেন।
প্রায় দুই ঘন্টা আরশির পেছন পেছনে ঘুরলো রিদ। এখন প্রায় ক্লান্ত সে। আরশির এটা পছন্দ হলে ওটা হয় না, আবার এটা এদিকটা ঠিক থাকলে ওদিক টা তার পছন্দ হয় না। এভাবে একটার পর একটা ঘুরতেই থাকে।
এজন্যই বাবা কখনো মাকে নিয়ে শপিং এ আসতে চায় না। আগে বুঝতো না সে। কিন্তু আজ মানতে বাধ্য যে, মহিলাদের সাথে শপিংএ আসা মানে স্ব-ইচ্ছায় নিজের পা দুটু গাড়ির পেছনে একটা দড়ি দিয়ে বেধে দেওয়া। এর পর গাড়ি যেদিকে ছুটবে তাকেও টেনে হিছড়ে পেছন পেছন নিয়ে যাবে। ভাবতেই একটা দির্ঘশ্বাস ছারলো রিদ।
অনেক কষ্টে ম্যাচিং করে চয়েস করতে সক্ষম হলাম আমি। কিন্তু তাতে ঘোর বিরোধিতা আমাদের সাথে থাকা মেয়েটার। বলছে, আমাদের দুজনকে কিছুতেই মানাবে না এটায়। এর পর সে একটা চয়েস করে প্যাক করে দিতে বললো। রিদ ভাইয়াও কিছু বলছে না, চুপচাপ বসে আছে।
প্রচুর রাগ হচ্ছে আমার। আমরা দুইজন এসেছি ভালো কথা তোকে এর মাঝে ঢুকতে কে বললো?
একটা রিক্সা ডেকে উঠে বসলাম আমি আর রিদ ভাই। মুখটা গোমড়া করে বসে আছি। মামা মামি আমি ও তার জন্য সবার জন্যই শপিং করলো। অথচ আমাদের জন্য আমার চয়েস করা গুলোই নিলো না। মেয়েটার ফোন আসলে সে চলে গেলো। যাওয়ার সময় রিদ ভাই একটা শাড়ি গিপ্ট করলো তাকে। প্রচুর রাগ হলো তখনও। কারণ আমি খুব জেলাস।
– মন খারাপ?
আমার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো রিদ ভাই। আমি চুপ রইলাম। এর পর সে হেসে আমার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো। এর পর বললো,
– কি ভেবেছো, তুমি পছন্দ করবে আর আমি তা ফেলে আসবো?
মুহুর্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমি রিদ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। আমার রাগ এখনো কমেনি। আমি ওই ব্যাগ টা হাতে নিলাম, যেটা মেয়েটার পছন্দে কেনা হয়েছিলো। রিদ ভাইয়া কারণ জানতে চাইলেও আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ বসে রইলাম।
বাড়ির সামনে এসে নামিয়ে দিলো আমাদের। রিদ ভাই ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার পর আমি রিক্সা ওয়ালা মামাকে বললাম,
– বাসায় আপনার স্ত্রী আছে না?
সে হেসে বললো,
– জ্বি আপু,,,
– এই নিন, এটা নিয়ে তাকে দিবেন। আর এটা আপনার জন্য। আর এই নিন টাকা, বাসায় যাওয়ার সময় কিছু ফুল কিনে নিবেন। তার পর বাড়িতে গিয়ে সব মামির হাতে দিবেন। দেখবেন খুব খুশি হবে সে।
রিক্সা ওয়ালা মামা প্রথমে নিতে না চাইলেও পরে নিলো। তার চোখে মুখে আনন্দে খুশির ঝিলিক দিয়ে উঠলো। এর পর চলে গেলো। পুরো সময় টায় আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো রিদ ভাই। আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– এবার ভেতরে চলুন। এগুলো ওকে দিয়ে দিলাম কারণ, অন্য কোনো মেয়ের পছন্দ করা জিনিস আমি পড়বো না, আর আপনাকেও পড়তে দেবো না। আর অন্য কোনো মেয়ের সাথে এতোটা ফ্রি হওয়ার দরকার নেই। আমার সহ্য হয় না এসব।
বাসায় ঢুকে মামিকে ডাক দিলো তিনি। মামা এখন অফিসে। আর শিলা দুপুরের রান্না করছে। দুজনই এগিয়ে এলো আমাদের সামনে। মামা মামির জন্য নিয়ে আসা কাপর গুলো তাদের দিকে এগিয়ে দিলাম। আর শিলার টাও শিলাকে দিলাম।
মামি একটু হেসে বললো,
– বাহ্ আমার বৌ মার তো পছন্দ আছে?
আমার একটু অন্যরকম ফিল হলো। কারণ আমাদের বিয়ের আগে মামি আমাকে আরশি মা বলেই ডাকতো। আর এখন হুটহাট তার এই বৌ মা ডাকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরে যাই। এর মাঝখানে শিলা বললো,
– ভাবি, মোর লাইগা আমনে এক কাম হরতেন। ওই যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস আছেনা, ওই যে হাতা কাটা তার পর পেট দেখা যায় টিভিতে দেখি। মোর লাইগা ওইগুলা নিয়া আইতেন।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
– তুমি ওগুলো দিয়ে কি করবে?
– ওম্মা আফায় কি কয়? মুই কামের বেডি হইলে কি হইবে, মোর কি শখ আহ্লাদ নাই নাকি? আমনে কি জানেন, মোগো বরিশালে কতো মাইয়া এইসব ড্রেস পরে নদীকে গোছল গোসল করে।
আমি একটু হেসে বললাম,
– আচ্ছা পরের বার নিয়ে আসবো।
পর মাঝেই মামি আমাদের দুজনের হাত ধরে একসাথে দাড় করালেন। তার পর বললো,
– মা’শা আল্লাহ্ দুজনকে খুব মানিয়েছে। দাড়া কয়েকটা ছবি তুলে নিই। এর পর যখন তুই চলে যাবি আর আমার ছেলেটা একা হয়ে যাবে, তখন ছবি গুলো দেখে হলেও নিজেকে শান্তনা দিতে পারবো যে হুট করে আমার কিছু হয়ে গেলেও আমার ছেলেটাকে দেখে রাখার জন্য কেউ একজন আছে।
হুট করে কোনো এক অজানা কারণে আমি মামিকে জড়িয়ে ধরে বললাম যে,
– ওকে আমি কখনোই ছেড়ে যাবো না মামি।
To be continue…..
To be continue…..
~