#বোকা_প্রেমিকা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৭
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
ইদানীং জলের বাবা মদ্যপান শুরু করেছেন।কয়েকদিন আগে ফিরোজা বেগম জলকে ফোন করে এ সম্পর্কে অবগত করেন।যদিও তাতে জল কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি।প্রত্যেকটা মানুষেরই স্বাধীনতা আছে।জল কেন যে চে অন্যের স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করবে?আর তাছাড়াও জলও মাদক গ্রহণে সাথে জড়িত।মাদক বলা ভুল হবে।মন হালকা করার ওষুধ। ছেলেদের মতো জলও সিগারেটের ধোঁয়ায় কষ্ট উড়াতে শিখে গেছে।বর্ষণের কাছ থেকে সে প্রায়োরিটির আশা ছেড়ে দিয়েছে বহুদিন হলো।কিন্তু সে বর্ষণকে ছাড়ছে না।সম্পর্কটাকে যেভাবেই হোক জল বিয়ে অবদি নেবে।আজ দীর্ঘদিন দিন পরে জল ছাদে এলো।চাঁদের জোছনায় ছাদ আলোকিত হয়ে অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে জল একেরপর এক সিগারেট শেষ করে যাচ্ছে।এরই মধ্যে জলের ফোনটা মেসেঞ্জারের শব্দে কেঁপে ওঠে।ফোন তুলে স্ক্রিনে বর্ষার আইডি দেখতে পায় জল।বর্ষা বর্ষণের ছোট বোন।কয়েকদিন হলো জলের সাথে ফেসবুকে এড হয়েছে।বর্ষণের সাথে কথা না হলেও বর্ষার সাথে জলের প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়।মেয়েটা বড্ড মিশুক।সবেমাত্র স্কুলের গন্ডি পাড় হয়ে কলেজের চৌকাঠে পা দিয়েছে।খুব চটপটে স্বভাবের মেয়ে।সারাদিন কি হলো না হলো সব জলের সাথে শেয়ার করে।বিয়ের পর জলের সাথে,জলকে নিয়ে কি করবে তা নিয়েও তার জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
” কি করছো আপু?”
শুরুর দিকে বর্ষা জলকে ভাবি ডাকতো।জলই না করেছে তাকে ভাবি ডাকতে।জল বর্ষাকে নিজের বোনের মতো দেখে।আর যাকে কেন্দ্র করে জল আর বর্ষার সম্পর্ক সে জলের অনেকটাই দুরের মানুষ হয়ে আছে।সম্পর্কটা একপ্রকার ঝুলেই আছে।ফর্মালিটি আর জেদে কারণে।
” ছাদে বসে চাঁদ দেখছি।”
বর্ষা ওয়াও রিয়াক্ট দেয় জলের মেসেজের।
” এ বাবা!রাত দেড়টা বাজে তুমি এখনো ছাদে?একাই আছো?”
” একা আবার একা না।সাথে বাতাস,জোছনা আর তেনারা আছে বলতে পারো।”
” তোমার ভয় করে না?”
” ভয়ের কি আছে?তেনারাও তো একসময় আমাদের মতো ছিলো নাকি?তারা আমাদের বংশধর আর আমরা তাদের পুর্বপুরুষ।”
” ধুরররর!রাত দুপুরে এরকম কথা বলো না তো!ভয় করে।”
” আচ্ছাহ!বলবো না।”
” রাতে কি খেয়েছো?”
” জ্যাম পাউরুটি।”
” আমি তোমায় যখনই খাবারের কথা জিজ্ঞেস করি তখনই তুমি জ্যাম পাউরুটির কথা বলো।তুমি কি এটা ছাড়া অন্য কিছু খাও না?”
” খাই।তবে আমার সেগুলো বানাতে আলসেমি।আর আমি পারিও না ওভাবে বানাতে।রান্নাবান্না কম জানি।”
” তাহলে আমি ভাইয়াকে বলে দেবো নি রান্না শিখতে।”
” আচ্ছা বলে দিও।”
” আপু আমি যাই আজকে।আম্মু উঠে পড়েছে।আল্লাহ হাফেজ।”
” আল্লাহ হাফেজ।টেইক কেয়ার।”
জল বর্ষার মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে ডাটা অফ করে।তারপর আবার একেরপর এক সিগারেট টানতে লাগে।মাঝে মাঝে জল নিজেই নিজের আচরণে অবাক হয়ে যায়।সে আদোও বাঙালি মেয়েদের মধ্যে পড়ে?যেখানে বাঙালি মেয়েরা প্রেমিককে সিগারেট ছাড়াতে জান দিতেও প্রস্তুত সেখানে জল নিজেই সিগারেটে আসক্ত।বাঙালি মেয়েরা নাকি কথা বলার আগেই কেঁদে দেয়।অথচ জল কাঁদতে ভুলে গেছে বহুদিন হলো।
____________
আজ জল ওর মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।বেশ কয়েকদিন ধরেই জলের মা ফোন করে কাকুতি মিনতি করছিলেন যাতে জল তার সাথে দেখা করে আসেন।জলের মায়ের নতুন স্বামী বলে খুব কড়া ধাচের মানুষ।একপ্রকার ঘর বন্দীই করে রেখেছেন জলের মাকে কারও সাথে মিশতে দেন না।যোগাযোগ করতে দেন না।জলের মায়ের নতুন স্বামীর স্ত্রীও বলে জলের মায়ের মতো একই কারণে ছেড়ে চলে গেছে।তাছাড়া লোকটার একটা বাজে অভ্যাস আছে।অতিরিক্ত মদ্যপান।প্রায় রাতেই লোকটা মদ্যপান করে এসে আগের স্ত্রীকে মারধর করতেন।যদিও জলের মায়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্ন।লোকটা জলের মায়ের ওপর কখনো হাত তুলে নি।তবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ আর অতীত নিয়ে প্রায়ই কথা শোনান।জলের মা এতটুকু জলকে ফোনে জানিয়ে।জলের বুঝতে বাকী রইলো না যে জলের মা ভালো নেই।আর মামারা সেই আগের ভুলই করেছে।টাকা দেখেই মায়ের বিয়ে দিয়েছে।একবারও যাচাই করে দেখলো না যার সাথে বিয়ে দিচ্ছে লোকটা আদোও মানুষ কিনা!
বাসায় ঢুকতেই লোকটার মানে জলের মায়ের নতুন স্বামীর মুখোমুখি হয় জল।জলকে দেখেই লোকটা যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে।
” তুমি?”
” মাকে দেখতে আসলাম।”
” মাকে দেখে তোমার কি লাভ?তুমি বাবার সাথে থাকছো তাকে নিয়েই থাকো না!”
” না জেনে মানুষের নামে মন্তব্য করবেন না।এতে আপনিই ছোট হবেন।আমি একা থাকি।বাবার সাথে না।আর লাভ লোকসানের হিসাব নিশ্চয়ই আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই ”
” অবশ্যই বাধ্য।কারণ তোমার মা আমার স্ত্রী।”
” আপনার স্ত্রী হওয়ার আগে উনি আমার মা।”
” প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি কেমন!”
” বুঝতে পেরেছিলেনই যখন তাহলে এভাবে যে চে তর্ক করতে এসেছেন কেন?চিন্তা করবেন না।আপনার বাড়িতে আমি এক গ্লাস পানিও খাবো না।মাকে দেখা হয়ে গেলেই চলে যাবো।”
কথায় কথা বাড়ে।যার দরুন জল কথাটা বলে এক মুহুর্তও দেরি করে না।চলে আসে লোকটার সামনে থেকে।কাজের বুয়াকে জলের মা আগেই বলে রেখেছিলো জল আসবে।সে জলকে দেখে বলে,,
” আপনেই কি খালাম্মার আগের ঘরের মাইয়া?”
” জ্বী।মায়ের ঘরটা কোনদিকে?”
” আমার লগে আহেন।আমি দেহায় দিতাছি।আপনার কথা খালাম্মা আগেই কইছাল।খালু থাকতে খালাম্মা হের ঘর থিকা বাইর হবার পায় না।খালু রাগ করে।”
” ঘর থেকে বের হলে আপনার খালু রাগ করেন কেন?”
” কি জানি।আপিসের বেগানা পুরুষ মানুষ আহে তো প্রায়ই।খালু মান চান না খালাম্মা বেগানা পুরুষের সামনে যাইক।”
” আপনার খালুর কোনো সন্তান নেই?”
” আছে।এডা পোলা আছে।ওইডা মায়ের লগে থাহে।”
” আচ্ছাহ!”
বুয়া জলকে মায়ের ঘরে নিয়ে যায়।গিয়ে দেখে মা বিছানা ঝাড়ছে।
” মা”
জলের ডাকে পেছন ঘুরে থাকায় জলের মা।জলকে দেখে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে জলকে জড়িয়ে ধরেন।অনবরত চুমু খেতে থাকেন জলকে।
” কেমন আছো?”
” ভালো।তুমি?”
” আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ভালোই রেখেছেন।”
” সত্যিই কি ভালো আছো তুমি মা?”
মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে জল।জলের মা কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যায়।চাপা হাসি দিয়ে বলেন,,,
” যেমন আছি ভালোই আছি।আমি যে অবস্থায় আছি অনেকে হয়তো এর থেকেও খারাপ অবস্থায় আছে।তাই আলহামদুলিল্লাহ।”
” আমার সাথে চলে এসো মা।”
” সম্ভব না।আর তোমার সাথে থাকলে আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব সেই ঘুরে ফিরে তোমার বাবার কাঁধেই আসবে।যা আমি চাই না।”
” জেদের বশে তুমি বিয়েটা করো নি তো মা?”
” জেদের কি আছে জল?একা থাকা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব না।আর কয়দিনই বা তোমার মামাদের ঘাড়ে বসে খেতাম?”
জল মায়ের কথার প্রত্যুত্তর খুঁজে পায় না।জলের নীরবতাকে ভেঙে জলের মা বলেন,,,
” কি খাবে বল।”
” কিচ্ছু না।আমায় দেখতে চেয়েছিলে তাই এসেছি।তাছাড়া আমারও বেশ কয়েকদিন ধরে তোমায় দেখতে ইচ্ছা করছিলো।আমার কাজ শেষ আমি চলে যাবো।”
” তাই এভাবে কিছু না খেয়ে চলে যাবে?”
” হু।তাছাড়া তুমি জানো আমি মাত্রাতিরিক্ত শুচিবায়ু।”
” কিন্তু এখানে তো আমি আছি জল।”
” প্লিজ জোর করো না।”
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জল বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।পথে বর্ষণকে আদিবার সাথে দেখে ফুচকা খেতে।জল আন্দাজ করেছিলো বর্ষণ শুধরাবে না।মিলেই গেলো শেষমেশ জলের আন্দাজ।শুধু শুধু তো আর বলা হয় না! বন্ধুকএর গুলি মিস যায় কিন্তু মেয়েদের আন্দাজ ভুল হয় না।জল জ্যামে বসে ছিলো।সে ঠাস করে আদিবা বর্ষণকে ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে।কোনো একসময় হয়তো কাজে দিবে সেই স্থির চিত্রটা।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ