#তুমিময়_বসন্ত
৮.
#writer_Mousumi_Akter
টানা ছয়ঘন্টা জার্নির পর গাড়িটা এসে থামলো ক্যান্টনমেন্ট এর গেট এ।গেট এ একজন পুরুষ আর একজন মহিলা আর্মি বসে পাহারা দিচ্ছে।তাদের অনুমতি ছাড়া ভেতরে বাইরে কেউ যাতায়াত করতে পারেনা।আয়াস কে দেখে গেটে ডিউটিরত দুজন আর্মি সালাম দিলো।আয়াস গাড়ি থেকে আমাদের ব্যাগ পত্র নামিয়ে নিলো।গাড়ি থেকে আমাকে নামতে দেখে তারা দুজনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তারা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মানে তারা বুঝতে পারছে আমি আয়াসের ওয়াইফ কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেনা।
আয়াস তাদের মুখভঙ্গী দেখে বললো,
‘আপনাদের ভাবী।’
তারা দুজনে আমায়িক হাসি দিয়ে আমাকে সালাম দিয়ে বললো স্যার খুব মানিয়েছে আপনাদের দুজনকে।আমি সালামের উত্তর দিয়ে আর কিছুই বললাম না।কেননা আমার কিছুই বলতে ইচ্ছা করছে না।এই লোকটার বউ হিসাবে ভাবি ডাক আমার আরো জঘন্য লাগছে।আয়াস যেনো এমন কথা শুনে খুশিতে গদগদ ভাব।মুখে অত্যান্ত মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো থ্যাংক ইউ সো মাছ।
আয়াসের সাথে ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে গেলাম।ক্যান্টনমেন্ট এর এরিয়া যে এত বড় হতে পারে অনুমান ছিলো না আমার।ভেতরে বিভিন্ন ফলের গাছে,পুকুর,ফুলের গাছ অনেক গুলা বিল্ডিং সব মিলিয়ে বিশাল এক এরিয়া।তবে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
আয়াস কে বললাম,
আমরা কি এখানেই থাকবো?
‘না, আমি বাসা নিয়েছি পাশেই সেখানে থাকবো।এখানে আমার কিছু জিনিস আছে সেগুলো নিয়ে একবারে বের হবো।এখানে তো আর থাকবো না তাই জিনিস গুলো রেখে তো লাভ নেই।’
‘ওহ!তাহলে আমাকে একবারে সে বাসায় রেখে আপনার জিনিস নিয়ে যেতেন।’
‘তোমাকে রেখে আসলে গিয়ে যদি আর না পেতাম।’
‘কেনো আমি কি হারিয়ে যেতাম।’
‘তোমার দ্বারা সব ই সম্ভব মেয়ে।’
মানে আমাকে একবিন্দু নিজের থেকে কাছ ছাড়া করছেন না।এভাবে জোর করে আমাকে কতদিন আটকে রাখবেন উনি।ভীষণ অবাক হচ্ছি উনার ব্যাবহারে। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছেন আমাকে।ব্যাপারটা আরো বিরক্ত করছে আমাকে।উনার কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আবার বেরিয়ে এলেন।ক্যান্টনমেন্ট থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে উনার বাসা।একটা পাঁচতলা বিল্ডিং এর সামনে এসে নামলাম।বিল্ডিং এর সামনে বিশাল বড় ঝাউ গাছ আছে দুইটা।দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ পূরণো।গেটের দারোয়ান গেট খুলতেই লিফট এ উঠে পাঁচ তলায় পৌছালাম।করিডরের ডান পাশের ফ্লাট এ আয়াস থাকে।দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি বিশাল বড় একটা খাট।উনার বোধ হয় বড় খাট ই বেশী পছন্দ।কেননা উনার বাড়িতেও বড় খাট দেখেছি।
মাথায় যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে আমার অন্য কোনো কিছু আর খেয়াল করলাম না।কিন্তু তার থেকে কোনো হেল্প নিবো না বলে কষ্ট ভোগ করছি তবুও তাকে বলছিনা।আমাকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললো,
“মাইগ্রেন আছে তোমার?”
প্রশ্নটা শুনে ভীষণ অবাক হলাম।সত্যি আছে উনি কিভাবে জানলো।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“হুম বাট কিভাবে জানলেন।”
আমার সামনে একটা মাইগ্রিক্স ওষুধ এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ টাফনিল এর থেকে এটা বেটার আছে।মাথায় যন্ত্রণা আমার ও হয়।আর আমি জানি এটা অনেক ভয়াবহ পেইন দেয়।’
বলে আয়াস এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো আমার সামনে।মাথার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পানির গ্লাস টা নিয়ে ওষুধ টা খেয়ে নিলাম।তারপর ই আয়াস এক গ্লাস সরবত দিয়ে বললো,এটা খেয়ে নাও ভালো লাগবে।শরীর এতটায় খারাপ লাগছে আয়াস এর এই সাহায্য না নিয়ে উপায় নেই আমার।সরবত আর ওষুধ খেয়ে বিছানায় সুয়ে চোখ বুজে রইলাম।আর সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গেলাম।আয়াস আমার মাথার সামনে একটা স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে দিলো।ঠান্ডা বাতাসে ঘুম যেনো জড় সড় হয়ে এলো।
-যখন ঘুম ভেঙেছে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত।লম্বা ঘুম দিয়ে উঠে দেখি রুমের লাইট জ্বলছে আয়াস রুমে নেই।ফ্লোরে সুটকেস টা পড়ে আছে।সাথে সাথে মনে পড়লো আমার ফোনের কথা।আয়াস আশে পাশে নেই এই সুযোগে অভিকে ফোন করা যাবে।ফ্লোরে নেমে সুটকেস টা খুলে সব কাপড় বের করলাম।ফোনটা যেখানে রেখেছিলাম সেখানে নেই।মনের মাঝে অজানা ভয় আর অশান্তি দানা বেঁধেছে মনে হচ্ছে অনেক মূল্যবান কিছু খুজে পাচ্ছিনা।সমস্ত কাপড় ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেও ফোন মিললো না।মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবছি অন্য কোথাও রেখেছিলাম কি?কিন্তু না এখানেই তো রেখেছিলাম।
এমন সময় আয়াসের পুরুষালী কন্ঠ আমাকে ডেকে বললো,
‘কি খুজছো মুগ্ধতা। ‘
আমি যেনো বৈশাখের কাল বৈশাখী ঝড়ের গতিতে পেছনে তাকালাম।আয়াস বেলকনিতে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছছে।আয়াসের ডাকে হৃদপিন্ড ভয়ে কেঁপে উঠলো।এক অজানা জড়তা দানা বাঁধলো আমার ভেতরে।কিন্তু কেনো?কিসের এই জড়তা।কেনো আয়াস কে ভয় পাচ্ছি আমি।আমিতো আয়াস কে আমার প্রতি কোনো অধিকার ফলাতে দিবোনা।আমি তো তাকে ডিরেক্ট বলে দিয়েছি তাকে ঘৃনা করি।তবুও কেনো এমন মনে হচ্ছে আমার সে আমার স্বামি তার সামনে প্রেমিকের নাম উচ্চারণ করা যাবেনা।হঠাত করে এই অদ্ভুত ফিলিংস কেনো জন্ম নিলো আমার ভেতরে।আমি এক্ষুণি আয়াস কে বলবো আমার ফোন খুজছি আমি অভির সাথে কথা বলতে চাই প্লিজ লিভ মি।কিন্তু কিছুতেই আমি পারলাম না আয়াস কে এমন কথা বলতে।আমার ভেতরের অজানা কোনো অনুভূতি আমাকে আটকে দিলো।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আয়াস আবার বললো,
‘মুগ্ধতা কিছু খুজছো তুমি?’
আয়াস এর এমন প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললাম,
‘ইয়ে মানে।না কিছু নাতো।’
আয়াস মাথা থেকে টাওয়াল টা নামিয়ে হাতে ধরে আমার দিকে প্রখর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘মিথ্যা বলছো কেনো মুগ্ধতা।’
বলেই আমার কাছে এসে সামনের ছোট চুলের পানি হাত দিয়ে ঝাঁকালো।সাথে সাথেই দু’ফোটা পানি আমার নাকে এসে পড়লো।আমি আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আয়াস সম্পূর্ণ সিওর হয়েই বলছে আমি মিথ্যা বলছি।কিন্তু কিভাবে বুঝে গেলো আমি মিথ্যা বলছি।কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,
‘ মিথ্যা বলবো কেনো?’
‘ফোন খুজছো তাইনা?’
সাথেই সাথেই বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠলো।আয়াস এটা বুঝে গেলো কিভাবে।কিছুটা ভয় ও পেলাম আমি।আমি যে ফোন লুকিয়ে রেখেছিলা বুঝলো কিভাবে আয়াস।টেনশনে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছি।ফোনটা কি তাহলে আয়াস এর হাতে।আয়াস কি ফোনের ভেতরে থাকা সব দেখে ফেললো।দেখলে দেখুক আমার কি।সেতো জানেই আমার রিলেশন আছে।তবুও নমনীয় ভাবেই বললাম,
‘না মানে এখানে রেখেছিলাম খুজে পাচ্ছিনা।’
‘ওটা গাজীপুরেই দাফন কাফন করে রেখে এসেছি।’
মাথা চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো আমার।ওই ফোনের মাঝেই আমার আর অভির হাজার ও স্মৃতি।আমাদের হাজারো ছবি,হাজারো গল্প।ফোনটা না থাকা মানে আমাদের দুজনের সব স্মৃতির চিহ্ন মুছে যাওয়া।আমার করা মেসেজের উত্তর অভি কি দিয়েছিলো ফোন ছাড়া আমার তো জানা হবেনা।মানুষটার প্রতি ঘৃনা আরো তীব্র হলো আরো প্রখড় হলো।আমার সব আনন্দের সামনে কাঁটার মতো এই মানুষ টা দাঁড়াচ্ছে।নিমিষেই চোখে পানি চলে এলো।তীব্র ঘৃনা নিয়ে বললাম,
‘কেনো করেছেন এমন।আপনি জানেন ওই ফোনের মাঝে আমার কত স্মৃতি আছে।একটা পারসোনাল ফোনে মানুষের কতকিছু থাকে।’
‘তুমি আমার ওয়াইফ।তুমি কোনো পাপ করলে সেটার দায়ভার আমার উপর ই পড়বে।আমি চাইনা তুমি কোনো অপবিত্র কাজ করে আমাদের পবিত্র সম্পর্কটা নষ্ট করো।ফোনটা লুকিয়ে রেখে নিজের সো কলড বয়ফ্রেন্ড এর সাথে যোগাযোগ করবে সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিবো না।’
‘কেনো নিবেন না মেনে?’
‘বিকজ নাথিং,বাট তোমার রাগ হচ্ছে তোমার হোক।ঘৃণা হচ্ছে আমার প্রতি হোক সমস্যা নেই।আমার ফোনটা তুমি ইউজ করতে পারো কোনো প্রব্লেম নেই। ‘
ভীষণ মন খারাপ করে আবার ও বিছানায় সুয়ে পড়লাম।বিষাক্ত অনুভূতিরা ঘিরে ধরেছে আমাকে।ভীষণ যন্ত্রণায় জ্বলে যাচ্ছে বুক।মন পোড়া আর্তনাদ কাউকে বোঝাতে পারছিনা।এমন কেউ নেই তাকে বলবো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।এমন সময় আয়াস আমার কাছে খাবার নিয়ে এসে বললো,
‘মুগ্ধতা খাবার খেয়ে নাও।তোমার ফেভারিট ছোলার ডাল আর গরুর মাংস।না খেয়ে থাকলে যুদ্ধ করবে কিভাবে।নিজে না খেয়ে অন্যর উপর প্রতিশোধ নেওয়া যায়না।এটা কিন্তু এক প্রকার বোকামি।’
‘আমি খাবো না খুদা নেই আমার।’
‘আচ্ছা খাবেনা।তুমি যে আমাকে এক দিনেই এতটা ভালবাসবে আমি বুঝতে পারিনি।হাউ লাকি আই এ্যাম। মানুষ যাকে ভালবাসে তার উপর অভিমানে না খেয়ে থাকে এটা যুগে যুগে প্রমানিত। ‘
‘আপনাকে আমি ভালবাসি না ক্লিয়ার।’
‘তাহলে আমাকে এত ইমপর্টেন্স দিয়ে না খেয়ে থাকার মানে কি।আমি কি ধরে নিবো এটাই ভালবাসা।’
‘নো নেভার।কিসের ভালবাসা।’
‘তাহলে খাচ্ছো না যে।হয় খাবার খাও,না হলে আমাকে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ বলো।খাবার না খেলে বুঝে নিবো ভালবাসো।’
খুদা পেটে তাকে ভালবাসি না প্রুভ করতে প্রচুর খাবার খেয়ে নিলাম।তার দিকে তাকিয়ে রাগে রাগে যতটা খাবার ছিলো ফিনিশ করে দিলাম।খাবার খাওয়া শেষে আয়াস আমাকে তার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘তোমার দেবর কথা বলবে ফোনটা নাও।’
#তুমিময়_বসন্ত
৯.
#writer_Mousumi_Akter
‘তোমার দেবর কথা বলবে ফোনটা নাও।’
আয়াসের দিকে রইলাম আমি। তার একটা ছোট ভাই আছে শুনেছি। এখনো কথা হয়নি।আয়াস আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ ইশারা দিয়ে বললো,
‘অয়ন লাইনে আছে কথা বলো।’
আমি নিঃশব্দে ফোনটা কানে নিয়ে?মিহি কন্ঠে সালাম দিলাম।
‘আসসালামু আলাইকুম। ‘
ফোনের ওপাস থেকে বেশ শান্ত কন্ঠের একটা ছেলে উত্তর দিলো,
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবি।কেমন আছেন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ আপনি।’
‘ভাবি আমি আপনার বয়সে বড় হবো।আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি।তবে আমাকে প্লিজ আপনি করে বলবেন না।আমাকে তুমি করেই বলবেন অনুরোধ রইলো।’
‘বাট আমার থেকে তিন ইয়ারের সিনিয়র তুমি বলতে কেমন বাঁধছে।’
‘ভাবি বড়দের যে তুমি বলা যায় না ব্যাপার টা এমন নয় কিন্তু।আমি আপনার ভাই এর মতো তাই আপনজন মনে করেই তুমি বলে ডাকবেন।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
‘আপনাদের বিয়েতে আমি থাকতে পারিনি খুব খারাপ লাগছে।কলেজের পিকনিক ছিলো সাজেক।অনেক দিনের প্লান তাই যেতেই হয়েছিলো।’
‘মা বলেছিলো তুমি পিকনিকে গিয়েছো।’
‘রাতে খেয়েছেন। ‘
‘হ্যাঁ, তুমি খেয়েছো।’
‘হ্যাঁ খেয়েছি।’
এমন সময় আয়াস ফোনটা মিউট করে বললো,
‘অয়ন কে বলো যে পাশে মা -বাবা থাকলে তাদের কাছে দাও।আমার সাথে ফাইট করো ব্যাপার না বাট মা -বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করো তারা ভীষণ খুশী হবে।আর আমার মা -বাবা খুশী হলেই আমি খুশী।তুমি জাস্ট তাদের সাথে একটু ভালো ব্যবহার করবে এটা ছাড়া আর কিছু চাইনা আমি।’
আয়াসের কথা শুনে রাগে চোখ পাকিয়ে আয়াসের দিকে তাকালাম আমি।মানে কি আমাকে কি এতই ষ্টুপিড ভাবে যে আমি তার মা -বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো।দাঁত কিড়মিড় করে আয়াস কে বললাম,
‘সেটা আপনাকে শিখিয়ে না দিলেও চলবে ওকে।আমি এমনিতেও এখন অয়ন কে বলতাম মায়ের কাছে ফোনটা দিতে।’
আমার কথা শুনে আয়াস এর টেনশনে থাকা মুখটা সাথে সাথেই স্নিগ্ধ হয়ে গেলো।আনন্দে চিকচিক করছে মুখের অদল।আয়াসের মুখে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে তাকে পৃথিবীর সর্বোত্তম নিউজ টা দেওয়া হয়েছে।
ফোন আনমিউট করে অয়ন কে বললাম,
‘মা কি পাশে আছেন অয়ন।’
‘জ্বী ভাবি কথা বলবেন।’
‘হ্যাঁ বলবো,তবে তোমাকেও আমাকে আর আপনি আপনি করা চলবে না। আমাকে তুমি করেই বলবে।কি বলবে তো।’
‘হুম।’
‘হুম বললে কাজ হবেনা।আমি শুনেছি তুমি অনেক লাজুক প্রকৃতির একটা ছেলে।কথা একেবারেই কম বলো।’
অয়ন মৃদু হেসে মায়ের কাছে ফোনটা দিলো।
ফোনের ওপাস থেকে মা বললেন,
‘মুগ্ধতা মা কেমন আছো?’
‘জ্বী মা ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?’
‘ভালো আছি মা মুগ্ধতা। বলছি তুমি কখনো মন খারাপ করোনা।আমি বুঝতে পারছি তোমার মন খারাপ।আমার আয়াস অত্যান্ত ভালো ছেলে।কখনো তোমার কোনো কষ্ট হতে দিবেনা দেখে নিও মা।অন্য ছেলেদের মতো তোমার উপর জোর খাটাবে না।তোমাকে ভালো রাখার সব চেষ্টা করবে দেখে নিও।আস্তে আস্তে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। শুধু এটুকু বলবো আমার ছেলেকে ছেড়ে চলে যেওনা। তাহলে আমার ছেলেটা কি করবে তার ঠিক নেই।’
‘জ্বী মা ঠিক আছে।’
ফোনটা আয়াসের হাতে আবার দিয়ে দিলাম।আয়াস কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেলো।আয়াস ফিরে এসে বললো,
‘অয়ন যে ভালোই কথা বললো।ওতো প্রথম পরিচয়ে এতটা ক্লোজভাবে কারো সাথে কথা বলেনা।’
‘আপনার মতো অসভ্য না অয়ন বুঝলেন।ভদ্রতা আছে ওর মাঝে।’
‘শুদ্ধতা শোনো।’
‘বলুন।’
‘একটু অসভ্যতা করতে দিবে প্লিজ।বর হই তো তোমার।একটু অসভ্যতা করলে কি হয়।’
‘মতলব কি আপনার।’
–এটুকু বলার সাথে সাথে আয়াস তার ওষ্ট গাড় ভাবে ডুবিয়ে দিলো আমার গালে।আমি ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠলাম।হঠাত যেনো ঠান্ডা হীম হয়ে গেলো আমার শরীর।শরীরের লোমকূপ সব দাঁড়িয়ে গেলো।যেনো মাঘমাসের কড়া শীতে কাঁপছি আমি।জীবনে প্রথম কারো ওষ্টের ছোঁয়ায় হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।সে ওষ্ট ডুবিয়ে খানিকক্ষণ পরে ছাড়লো।ডান গালে যেনো ভায়াবহ কোনো তুফান বয়ে গেলো আমার।আমি ভীষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।অথচ তার মুখে ড্যামকেয়ার ভাব।যেনো খুব সাধারণ কোনো কাজ সে করেছে।তাকে দেখে একটুও মনে হচ্ছেনা ভয়ংকর রকমের কোনো কাজ সে করেছে।এ কাজের জন্য একটুও অনুতাপ নেই ভেতরে।তার স্পর্শ একটুও ভালো লাগলো না আমার।যার জন্য মনে জায়গা নেই তার স্পর্শ কতটা বিরক্তিকর এটা যার সাথে ঘটে সে একমাত্র অনুভব করতে পারে।মনের ভেতরে অভি নামক অনুভূতি আবার ও দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।অভি ছাড়া কারো স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।মা -বাবা জেনে বুঝে কেনো আমাকে এই পাপের দুনিয়ায় ভাষিয়ে দিলো।আমি বিবাহিত আমার স্বামির অধিকার আছে আমাকে চুমু দেওয়ার আমাকে স্পর্শ করার।এ সব অধিকার একমাত্র তার ই।কিন্তু আমার মনে তার জন্য জায়গা নেই বলে তাকে মেনে নিতে পারছিনা।এত বাজে অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ম*রে যাওয়ায় বেশী ভালো।হাত দিয়ে গাল মুছে আয়াসের দিকে তাকালাম।ইচ্ছা করছে মুখের চামড়া তুলে ফেলি।বারবার ডলাডলি করছি হাত দিয়ে।আয়াসের প্রতি বিরক্তি নিমিষেই আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো।
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এত ডলাডলি করে কি হবে মুগ্ধতা।মুখের চামড়া তুলে ফেলতে চাও নাকি।কিছুদিন পরে তো চুমু দিতে দিতে আমাকে আহত করে ফেলবে।’
রাগে -দুঃখে, অপমানে,লজ্জায় আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না।শুধু বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম আয়াসের দিকে।আয়াস আমার মুডের ভাব বুঝে বললো,
‘আমার বউ কোনো পাপ করুক আমি সেটা চাইনা।এখনো অসভ্যতা করিনি।হুদাই অসভ্য বললে তোমার ই পাপ হবে বউ।তোমাকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে অসভ্যতামি করলাম কিছুটা।এখন থেকে সারাদিন অসভ্যতার মন্ত্র পড়বে ওকে।এবার গুড নাইট।’
আয়াস ঘুমিয়ে পড়লো।আমিও নিশ্চুপ হয়ে আয়াসের পাশে গিয়ে সুয়ে পড়লাম কিন্তু ঘুন হলোনা।দু’চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে।ইচ্ছা করছে এক ছুটে অভির কাছে চলে যায়।কতকাল যেনো অভির সাথে কথা হয়না আমার।অভিকে দেখার জন্য ছটফট করছে মন।কথা বলা বা দেখার কোনো সুযোগ নেই।
কেটে গিয়েছে দুইদিন আয়াসের করা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য টোটাল একটা কথা ও আয়াসের সাথে বলিনা।আয়াস নিজের মতো বক বক করে কিন্তু আমি কোনো কথা বলিনা।মনে চাইলে খাবার খাচ্ছি,না চাইলে খাচ্ছিনা তবে কথা বলছিনা।দুইদিন পরে সকালে দেখি আয়াস তার ইউনিফর্ম পরে কিছু খুজছে।আয়াস কে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে ইউনিফর্ম এ।এমনিতেই আয়াস দেখতে ভীষণ হ্যান্ডসাম।আর্মি পারসন রা বরাবর দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম হয়।সারা বছর ব্যায়াম এ এমনিতেই বডির ফিটনেস ভালো হয়ে যায়।আয়াস হন্য হয়ে খুজে যাচ্ছে কিছু।বুঝতে পারছি ইমপর্টেন্ট কিছু খুজছে আয়াস।আলমারি তন্ন তন্ন করে ফেলছে খুজতে খুজতে।বাবা হলে এত সময় মায়ের সাথে চিল্লসচিল্লি শুরু করতো যে একটা জিনিস ও গুছিয়ে রাখতে পারোনা।মানুষের বাড়িতে কিছু চাইলেই সাথে সাথে পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের বাড়িতে পাওয়া যায় না।বাবা সব ছোড়াছুড়ি শুরু করতো।মা দ্রুত গিয়ে সাহায্য করতো।মায়ের কথাটা ভেবে আমিও আয়াস কে হেল্প করতে গেলাম।
কাছে গিয়ে বললাম,
‘কিছু খুজছেন?’
‘আয়াস আমার দিকে না তাকিয়েই বললো,অফিসের একটা ফাইল পাচ্ছিনা।খুব প্রয়োজন।’
আমি আলমারিতে উঁকি মেরেই দেখি হলুদ কালারের একটা ফাইল পড়ে আছে।ফাইল টা হাতে নিয়ে আয়াসের সামনে ধরে বললাম,
‘এটা।’
আয়াস ফাইল টা হাতে নিয়ে বললো,
‘হ্যাঁ এটা।’
‘সামনেই তো ছিলো খুজে পেলেন না যে।’
‘আমি তো এখানেই খুজলাম পেলাম না।’
‘মন কোথায় ছিলো। ‘
‘তুমি কথা না বললে আমার সব এলোমেলো লাগে মুগ্ধতা।আরেক টু হলে হয়তো নিজেকেই হারিয়ে ফেলতাম কোথায় জানিনা।’
‘খেয়ে যাবেন না।’
‘আধাঘণ্টা আগে বললে খেতাম।এখন লেট হয়ে গিয়েছে খাওয়ার সময় নেই।’
‘কাল রাতে ও খান নি,দুইদিন কি রোজা রেখেছেন।’
আয়াস মৃদু হেসে দিলো।আমি দেখি আয়াস রোজ সকালে এক গ্লাস দুধ খেয়ে বের হয়।আয়াস আজ দুই দিন দেখছি খাচ্ছেনা।আমাকে বলেছিলো সে রোজ সকালে দুধ বা জুস কিছু একটা খায়।আয়াস কে বললাম জাস্ট এক মিনিট।এক গ্লাস দুধ এনে আয়াসের সামনে ধরে বললাম এটা খেয়ে বেরোন।আয়াস আমার হাত সহ দুধের গ্লাস ধরে মুখে দিয়ে চুমুক দিলো।তার হয়তো আমার হাতেই খেতে ইচ্ছা করছিলো।বেরোনোর সময় বললো,
‘ভালোভাবে দরজা লাগাবে।দুপুরে বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যাবে খেয়ে নিও।আলমারির চাবি রাখো টাকা আছে যা লাগে ইচ্ছামতো খরচ করো। তবে একা একা বাইরে যেওনা প্লিজ।যদি তুমি হারিয়ে যাও আমিও হারিয়ে যাবো।’
আয়াস বেরিয়ে গেলো।আমি ওর যাওয়া তাকিয়ে দেখছি। কিছুক্ষণ পরে নিচে এলাম অভিকে ফোন করতে।এটাই সুযোগ অভিকে কল করার।নিমিষেই মন ভালো হয়ে গেলো আমার।হঠাত মনের মাঝে সুখ পাখি ডেকে উঠলো।আনন্দে ছুটতে ছুটতে নিচে গেলাম আমি।
চলবে,,
(রেসপন্সের আহবান রইলো।)
চলবে..?