তুমিময় বসন্ত পর্ব -১৩+১৪

#তুমিময়_বসন্ত
১৩+১৪
#writer_Mousumi_Akter

–কেটে গিয়েছে দুইদিন। এই দুইদিন মন সারাক্ষণ ছটফট করেছে এক সেকেন্ড এর জন্য শান্ত হয়নি।সারাক্ষণ একটায় কথা ভেবে গিয়েছি দোকানদার আমাকে কি বলতে চেয়েছিলো।নিশ্চয়ই অভির কিছু।অভির কোনো ফোন বা মেসেজ।কি বলেছে অভি, আমাকে খুজে খুজে পা*গল হয়েছে নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই অভিও ছটফট করছে আমার জন্য।অভির সাথে কথা বলার জন্য যেমন অশান্ত হয়ে পড়েছে মন অন্য দিকে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি আমার।কাউকে ভালবাসলে তার সাথে দেখা হওয়া বা কথা বলা দুইটা ই আনন্দের।অভিকে বলবো বলে ভেবে রেখেছি অসংখ্য কথা।আমার সাথে যেসব ঘটেছে অভি জানলে নিশ্চয়ই ভীষণ রেগে যাবে কারণ আমিতো জানি অভি আমায় কত বেশী ভালবাসে।আয়াস ছুটি নিয়েছে সারাদিন বাড়িতে আমি আয়াস এর চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনভাবেই যেতে পারছি না।আয়াস সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।কোন ভাবেই ওর নজর এড়িয়ে যেতে পারি না আমি।কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।এমন হলে দম বন্ধ কষ্টে মা*রা যাবো আমি।সন্ধ্যার খানিক টা আগে আয়াস কে বাইরে পাঠানোর জন্য বললাম,

“আমাকে কয়েক টা থ্রি পিছ কিনে দিবেন।গরমে শাড়িতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা।আপনি কি আমার কষ্ট বুজতে পারেন না।চোখের সামনে একটা মেয়ে শাড়ি পেচিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছে আর আপনি দিব্বি খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরে গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছেন।”

আয়াস চা এর কাপ টি-টেবিলে রেখে ভ্রু কুচকালো আর বললো,

“স্ট্রেইঞ্জ বিয়ে করা বউ তুমি আমার।কে বলেছে গরমে শাড়ি পেচিয়ে হাঁপাতে।খুলে ফেলো এসব শাড়ি।আমার সামনে এত ঘোমটা দিয়ে থাকো কেনো আমিতো ভেবেই পাই না।।”

“আপনি আমাকে শাড়ি খুলে থাকতে বলছেন।কি নোংরা মাইন্ড আপনার।”

“ওকে তাহলে আমার মতো হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াও।আমার কাছে কিন্তু ভীষণ ভালো লাগবে।এটুকু বলেই আয়াস আবার চায়ের কাপে চুমুক দিলো।”

“আপনি কি আমায় থ্রি পিছ কিনে দিবেন।লাস্ট বার জিজ্ঞেস করছি।”

“আয়াস বললো সিওর কেনো দিবোনা।আমিও ভেবেছি কিনে দিবো বাট তুমি তো বাইরে যেতে রাজি হওনা।চলো যায় দুজনে।”

” আমার খুব ইচ্ছা করছে আপনার সাথে আজ রাতে একটু বাইরে ঘুরতে।এখন বাইরে গেলে তো পরে আর যেতে পারবো না কষ্ট হয়ে যাবে।”

আমি তার সাথে ঘুরতে যাবো শুনে সাথে সাথে আনন্দে তার চোখ চকচক করে উঠলো।আয়াস বললো,

“এই শোনো তোমার কি কি কালার পছন্দ বলোতো।আমি কিন্তু মেয়েদের জিনিস ভালো একটা কিনতে পারিনা।”

“আপনি যা এনে দিবেন আমি তাই পরবো”

আয়াস খুশি মনে বাইরে বেরিয়ে গেলো।আয়াস বাইরে যাওয়ার সাথে সাথে আমি দোকানে গেলাম।আমি দোকানে যাওয়ার সাথে সাথে দোকানদার বললো,

“আপা আপনার ফোন এসছিলো।কিন্তু স্যার এর সামনে মিথ্যা বললেন কেনো?এক্স বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলবেন তাইনা?”

“এটা আপনার জানতে হবে না।”

“যদি কিছু মনে না করেন এক টা কথা বলি আয়াস স্যার এর মতো স্বামি পেয়ে এক্স বয়ফ্রেন্ড এর কথা ভাবছেন ব্যাপার টা ভীষণ অবাক করা ব্যাপার।আপনার কথা আর কি বলবো আজকাল সব মেয়েরাই এমন করে।ভালো স্বামি রেখে খারাপ বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালিয়ে যায়।আসলে ভালো ছেলেদের কপালে ভালোবাসা নেই।জানেন কি হয়েছে কিছুদিন আগে এক মহিলার এক্স বয়ফ্রেন্ড তার স্বামি কে খু*ন করেছে।আমাদের আয়াস স্যার এর সাথে যেনো এমন কিছু কইরেন না।”

“কোনো কিছু না জেনে কথা বলা ঠিক নয়।ফোন টা দিন।”

দোকান দার আমার রাগী চোখ দেখে আর কিছুই বললো না।যে নম্বর থেকে ফোন এসছিলো সে নম্বর এ কল দিতেই আমার বুক কেঁপে উঠলো।ফোনের ওপাস থেকে ভেষে এলো একটা মেয়েলি কন্ঠ।হাত ভয়ে কাঁপছে আমার অস্বাভাবিক গতিতে।কেনো জানিনা এত কাঁপছে।ঠোঁট মুখ সব থর থর করে কাঁপছে।মেয়েটা কল রিসিভ করে বললো,

“কে বলছেন? ”

আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না কে রিসিভ করেছে।অভির ফ্যামিলির কেউ হবে নাতো।পরিচয় দেওয়া কি ঠিক হবে।কোনো অসুবিধা নাতো।কিন্তু এই মুহুর্তে যেভাবেই হোক অভির সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে।তাই আর কোনো কিছু না ভেবেই বললাম,

“অভি আছে?.”

“আপনার পরিচয় টা প্লিজ।”

“আপনি আমায় চিনবেন না প্লিজ অভিকে ফোনটা দিন।”

“পরিচয় দিলে ভালো হতো।তাছাড়া অভি কথা বলতে চাইছে না। ”

“অভি এই নাম্বার থেকে ফোন করেছিলো।আপনি জাস্ট একবার বলুন মুগ্ধতা ফোন করেছে।অভি কথা বলবে।”

“আমি অভির ওয়াইফ নুসরাত জাহান।ফোনটা অভির ই রেখে গিয়েছে।”

–মাথার মাঝে ভীষন জোরে চক্কর মেরে উঠলো।বুকের কাঁপন মহা প্রলয় এর মতো শুরু হলো।শরীরের কম্পন ক্রমশ আরো অস্বাভাবিক হতে শুরু করলো।কানের মাঝে ভয়ানক গতীতে এই কথাটা বেজে চলেছে আমি অভির ওয়াইফ।নিজে কানে শুনলেও আমার মন সে কথা মানতে রাজি নয়।কোনো ভাবেই আমার বিলিভ হচ্ছেনা অভির ওয়াইফ আছে।আমার মন কিছুতেই মানতেই চাইছে না।

নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,

“হোয়াট।অভি আপনাকে শিখিয়ে দিচ্ছে তাইনা?দেখুন এখন মজা করার সময় নেই আমার কাছে।আমার অনেক ইমারজেন্সি কথা আছে অভির সাথে।প্লিজ অভিকে ফোনটা দিন।”

“দেখুন আপনার বিশ্বাস না হওয়ার ই কথা।তবে সত্যি অভির ওয়াইফ আমি।আমি জানি আপনাকে হাজার বার বললেও আপনি সেটা বিশ্বাস করবেন না।আমি আপনাকে কোনো মিথ্যা বলছিনা।”

“আপনি মিথ্যা বলছেন।আপনি মিথ্যা বলছেন।আমার অভি বিবাহিত হতে পারেনা।”

“আপনি কি জানেন অন্যর স্বামিকে আমার বলা কতটা জঘন্যতম পাপ।অভির সাথে আমার বিয়ে হয়েছে আর আপনি কিনা আমার বলে দাবি করছেন।হতে পারে আপনার রিলেশন ছিলো কিন্তু সেই সম্পর্ক কি বিবাহিত সম্পর্কের থেকে বেশী শক্তিশালী।আপনার সম্পর্ক যদি সঠিক হতো নিশ্চয়ই আপনাদের বিয়ে হতো কিন্তু হয়নিতো তাইনা?এখন আপনাকে মেনে নিতে হবে এই সত্য।”

“এসব কিছুই আমি বিশ্বাস করিনা।অভি বিয়ে করবে কিভাবে।অভির তো আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার কথা ছিলো আমাকে ভালবাসতো।”

“মানুষ মুখে যা বলে তাই কি আদেও করে।ওয়েট আপনি কি সেই মেয়ে যে মেসেজ করছিলেন।”

“হ্যাঁ আমি সেই মেয়ে।”

“আপনার মেসেজ নিয়ে অভি আর আমার তুমুল অশান্তি হয়েছে।অভি আমার কাছে মাফ চেয়েছে সে তার বিবাহিত পবিত্র সম্পর্ক ছেড়ে আর কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবেনা।অভি সরাসরি আপনাকে কিছু বলতে পারছেনা তাই আমাকে দিয়ে বলাচ্ছে।বিলিভ করা আর না করা আপনার ব্যাপার।এতদিন রিলেশন এ ছিলো লজ্জা আর মানবিকতার জন্য কিছুই বলতে পারছে না মুখের উপর।একটা মেয়ে হয়ে নিশ্চয়ই অন্য একটা মেয়ের সংসারে অশান্তি লাগাবেন না আপনি।বিবাহিত জানার পরেও কি আর কখনো কন্ট্যাক্ট করবেন আপনি,করা কি উচিত।আপনি যদি আর দ্বীতীয় কোনদিন পৃথিবীর কোনো নাম্বার থেকে কোনরকম ফোন বা মেসেজ করেন তাহলে আমাকে অভির সংসার ছেড়ে চলে যেতে হবে।আপনি কি সেটা চাইবেন।”

“আপনি অভির ওয়াইফ তার কি প্রুভ আছে?”

“আপনি একটা হোয়াটস এপ্স নাম্বার দিন আমি সব প্রুভ দিচ্ছি।সব প্রুভ দেওয়ার পরে নিশ্চয়ই আর অভির সাথে যোগাযোগ করবেন না।”

“ওকে দিচ্ছি।”

“দোকানদার কে বললাম,ভাই হোয়াটস এপ্স নাম্বার আছে আপনার।”

“দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে বললো হুম আছে বাট।”

“চোখের পানি মুছে বললাম,ভাই আমি আর ফোন করতে আসবো না।জাস্ট আমাকে একটা হেল্প করুণ।বোন হিসাবে বলছি।আপনার হোয়াটস এপস নাম্বার টা দিন।জাস্ট এই হেল্প টুকু করুন।”

“কাঁদবেন না প্লিজ। আয়াস স্যার জানলে আমাকে সারাজীবন জেলে থাকতে হবে। ”

“উনি জানবেন না কোনদিন কিছুই।প্লিজ আমাকে হোয়াটস এপ্স নাম্বার টা দিন।”

ছেলেটা হোয়াটস এপস নাম্বার দিলে আমি মেয়েটা কে দিলাম।সাথে সাথে একটা ছবি চলে এলো।ছবির সাথে ক্যাপশন লেখা এইটা অভির বাড়ি দেখছো।এই বাড়িটা অভির ই।পরবর্তী ছবি পাঠিয়ে লিখেছে
এটা অভির ঘর দেখেছো।পরবর্তী ছবি পাঠিয়ে লিখেছে অভির রুমের আলমারি আলমারি দেখেছো।পরবর্তী ছবি পাঠিয়ে লিখেছে অভির রুমের বেডের কর্ণার দেখেছো যেখানে শুধু অভির ছবি লাগানো।একে একে বিভিন্ন ছবি পাঠাচ্ছে যার সবটায় আমার চেনা।ছবি গুলো একদম সত্য ছিলো।এগুলোর পর যা দেখলাম আমি তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।অভি আর মেয়েটার ঘনিষ্ট ছবি।মেয়েটার মুখে স্টিকার মারা থাকলেও অভির মুখটা ক্লিয়ার।অনেক গুলো ছবি পাঠিয়েছে।ছবি গুলো নকল ভাবার কারন নেই কেননা সব ই অভির রুমে থেকে তোলা।অভির হাত,হাতের আঙুল,সব আমার চেনা।মেয়েটা ক্রমশ আরো কিছু ঘনিষ্ট ছবি দিলো।আমার পুরা পৃথিবী নড়ে উঠলো।সমস্ত পৃথিবী কাঁপছে আমার।মেয়েটাকে একটা মেসেজ দিলাম অভিকে বলে দিবেন আমি জীবনে ওকে ক্ষমা করবো না।আমি এমনিতেও ওর কাছে ফিরে যেতাম না বিকজ আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।জাস্ট একটু কথা বলার জন্য।এত বড় সত্য অভি লুকিয়েছে জানতাম না আমি।ধন্যবাদ আপনাকে।দোকানদার ছেলেটাকে বললাম আপনার এই উপকার আমি কোনদিন ভুলবো না।কথাটা বলেই ফোনটা দিয়ে চলে এলাম।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার অভি আমাকে এইভাবে ঠকালো।কোনদিন বুঝতেই পারলাম না।আমি এভাবে ঠকেছি দিনের পর দিন।অভির জন্য পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েছি বারবার।মানুষ এত নিঁখুত অভিনয় কিভাবে করে।আমার সমস্ত শরীর অবস হয়ে যাচ্ছে।একটা পা ও বাড়াতে পারছি না।মাথার উপর সব মহা প্রলয় এর মতো তুফান তুলেছে।পৃথিবীতে যেনো ভুমিকম্পন শুরু হয়েছে।চারদিকে যেনো ঝড় শুরু হয়েছে।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে।মন পুড়ে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে।আয়াস আমায় জোর করে বিয়ে করলেও ভালবাসে অভির মতো ঠক আর প্রতারক নয়।এই অভির কারণে আয়াসের সাথে কত খারাপ ব্যাবহার করেছি আমি।কেনো অভির জায়গা আয়াস আসে নি আমার জীবনে।জীবন টা এমন বাজে একটা জায়গা কেনো এসে দাঁড়ালো।কোনোরকম রাস্তা ক্রস করে ছুটে এসে রুমে এসে বিছানায় উপুড় হয়ে ভীষণ কাঁদলাম।ভেতরের কষ্ট গুলো কাঁন্না ছাড়া প্রকাশ করার আর কোনো উপায় নেই।আমি যে এত চেষ্টা করছি কাঁদবো না কিন্তু কিছুতেই কাঁন্নার বাধ আটকাতে পারছিনা।হাত পা ভীষণ জোরে ছোড়াছুড়ি করতে করতে হাতের চুড়ি কখন ভেঙেছে, কখন হাত কেটেছে কিছুই জানিনা।বিছানার চাঁদর টেনে নিচে ফেলে দিলাম অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে।বিছানায় রাখা বালিস ফেলে দিলাম নিচে।বিছানা ছেড়ে ফ্লোরে এসে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে বসে ভীষণ ভাবে কেঁদেই যাচ্ছি।বাবার মুখটা বারবার মনে পড়ছে,আম্মুর মুখ টা ভীষণ মনে পড়ছে।আপন জন কাছে থাকলে বোধহয় কষ্ট অনেক কমে।বাবা আর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারলে বোধহয় এই কষ্টের বোঝা কমে যেতো আমার।প্রায় এক ঘন্টা কাঁন্নাকাটির পরে ফ্লোরে হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে বসে আছি রুমের লাইট অফ করে।

দূর থেকে বক্সে চালানো গান ভেষে আসছে।গান টা বোধ হয় আমার জন্য ই বাজছে।

Saari raat aahein bharta
Pal pal yaadon me marta
Maane na meri mann mera
Thode thode hosh madhoshi si hai
Neend behoshi si hai
Jaane kuch bhi na man mera
Kabhi mera tha par ab begana hai ye
Deewana deewana samjhe na ho…

Kabhi chup chup rahe
Kabhi gaaya yeh kare
Bin poochhe teri taarife sunaya yeh kare
Hai koi Haqiqat tu ya koi fasana hai
Kuch jaane agar to itna ke
Yeh tera deewana hai re
Mann mera, maane na mann mera

এরই মাঝে আয়াস এসে বারান্দার লাইট জ্বালাতে জ্বালাতে আমাকে ডাকলো,

” মুগ্ধতা কোথায় তুমি?লাইট অন করোনি কেনো?”

বলেই দরজা ধাক্কা দিলো।সাথে সাথে বারান্দার লাইটের আলো এসে আমার গায়ে পড়লো।আমি কাঁন্না ভেজা চোখে মুখে তুলে আয়াসের দিকে তাকালাম।

আয়াস আমাকে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে বললো,

“মুগ্ধতা কি হয়েছে তোমার?এভাবে বসে আছো,চোখে মুখের এমন অবস্থা কেনো?”

আয়াসের মুখে মুগ্ধতা কি হয়েছে তোমার শুনেই যেনো ভেতরের কষ্ট আরো প্রবল বেগে বেরিয়ে এলো।আয়াসের দিকে একবার তাকিয়ে সব বাঁধা অতিক্রম করে সাথে সাথে উঠে ছুটে গিয়ে আয়াস কে জড়িয়ে ধরে খুব জোরে কেঁদে দিলাম।কাঁদতে কাঁদতে একেবারেই বেসামাল হয়ে পড়লাম।আয়াস কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা।আমার এমন ব্যবহারে আয়াস শুধু অবাক না ভীষণ অবাক।যার সাথে পশমের স্পর্শ লাগলে আমি রেগে যায় তাকে আমি জড়িয়ে ধরেছি এটা অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার।আমি ই বা কেনো আয়াস কে জড়িয়ে ধরলাম জানিনা।তবে বাড়িতে থাকতে যখন ই কিছু নিয়ে কষ্ট হতো আম্মু বা খালামনিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে হালকা হতাম।আশে পাশে কেউ নেই হয়তো সেই অভ্যাসের কারণেই আয়াস কে জড়িয়ে ধরেছি।আয়াস বারবার প্রশ্ন করে কোনো উত্তর না পেয়ে আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে শান্ত কন্ঠে বললো,

“প্লিজ মুগ্ধতা কেঁদোনা।তোমার কাঁন্না আমি সহ্য করতে পারছি না।পৃথিবীতে সব থেকে কষ্টের মুহুর্ত কি জানো প্রিয়জনের চোখের পানি।সব সহ্য করা গেলেও ভালবাসার মানুষের চোখের পানি সহ্য করা যায় না।আমি ভালবাসি তোমাকে মুগ্ধতা,ভীষণ ভালবাসি।তাই কখনো তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারবো না।আমার সামনে কখনো কাঁদবে ও না।”

“আয়াসের কথা শুনে আমি এবার আরো জোরে কেঁদে দিলাম।”

আয়াস এবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস টেনে বললো,

“তোমাকে ভালবাসি তাই বলে তোমার চোখের পানির কারণ হতে চাইনা।কষ্ট হচ্ছে তোমার আমার সাথে থাকতে তাইনা।আসলে জোর করে কারো সাথে থাকা যায়না।অভির জন্য কষ্ট হচ্ছে তোমার তাইনা?অভির কাছে যেতে চাও তাইনা?যদি অভির কাছে গেলে তোমার মুখে হাসি ফোঁটে তাহলে আমি তাই করবো মুগ্ধতা।তোমার মুখের হাসির জন্য এটুকু ত্যাগ আমি করতে পারবো।চলো এক্ষুনি অভির কাছে দিয়ে আসবো তোমায়।।”

আয়াস কে জোরে ধাক্কা মেরে বললাম,

“কি অভি অভি করছেন তখন থেকে।আমি কি বলেছি আমাকে অভির কাছে দিয়ে আসুন।খুব মহান হতে ইচ্ছে করছে আপনার।আমাকে অন্য একজনের কাছে দিয়ে কি প্রুভ করতে চাইছেন আপনি অনেক মহান তাইনা?যাওয়ার হলে কি আমি নিজে যেতে পারবোনা।”

“জানিনা অভি তোমায় কতটা ভালবাসে তবে আমার জায়গা থেকেও আমি তোমায় আমার মতো করে ভীষণ ভালবাসি,বড্ড বেশী ভালবাসি মুগ্ধতা।তবে জোর করে আর আটকে রাখতে চাইবো না তোমায়।”

“আমার সামনে আর কখনো অভির নাম উচ্চারণ করবেন না প্লিজ।আমি কখনো অভির নাম শুনতে চাই না।ও একটা ঠকবাজ।অভি দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়েছে।”

“জানিনা কি হয়েছে।জানতেও চাইবো না।।তুমি প্লিজ এভাবে আর কেঁদোনা।চলো ভেতরে চলো হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

আয়াস আমাকে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলো।চোখ মুখে পানি দিলাম অনেক্ষন ধরে। অনেক টা হালকা লাগছে এখন নিজের কাছে।কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলে বোধহয় অর্ধেক কষ্ট হালকা হয়ে যায়।
আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে ভাবছি যাকে আমি খারাপ ভেবেছিলাম,আমাকে বিয়ের পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য আছে ভেবেছিলাম এসব কিছুই তার মাঝে নেই।তাকে আমি ভালবাসিনা অথচ সে আমার জন্য সারাক্ষণ ভেবে চলেছে।বিছানার চাঁদর ঠিক করে বালিস তুলে বিছানা ঠিক করে দিলো আয়াস।আমার সামনে এক গ্লাস পানি এনে বললো চোখের পানি ঝরিয়েছো মাথায় পেইন হবে ওষুধ টা আগে থেকেই খেয়ে নাও।আমি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আয়াসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মানুষ টা কত কেয়ারিং।
গ্লাস টা নিয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম।

এরপর আয়াস তার ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো আর বললো,

” এবার আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলো।”

এতদিনে বাড়ির কারো সাথে কথা হয়নি আমার।আয়াস একাই তাদের সাথে কথা বলে আমি রাগ করে কথা বলিনা।আয়াসের ফোনটা হাতে নিয়েই ভীষণ অবাক হলাম।আয়াসের ফোনের ওয়ালপেপারে আমার ভীষণ সুন্দর একটা ছবি।এই হলুদ ড্রেস টা গত বছর বসন্ত উৎসবে পরেছিলাম।মাথায় তাজা ফুলের ব্যাড় দেওয়া আমার।নিজের ছবি দেখে নিজেই ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম।আয়াস বুঝতে পারলো আমার ছবই নিয়ে কিছু ভাবছি।আমি ফোনে পরিবারের সবার সাথে কথা শেষ করলাম।কথা শেষ করে মন আরো হালকা লাগছে।

আয়াসের দিকে ফোন এগিয়ে দিতেই আয়াস বললো,

ছবিটা এক বছর ধরে রোজ ঘুমোতে যাওয়ার সময় দেখি আর ঘুম থেকে উঠেও দেখি।খুব সুন্দর না মেয়েটা।কল্পনাতে যে কত গাল ধরে টেনেছি আর চুমু দিয়েছি তার হিসাব নেই।কবে যে সত্যি সত্যি দিবো তাই ভাবছি।

আয়াসের কথা বেশ লজ্জা পেলাম আমি।

চলবে,,

(সবাই কে পহেলা রমজানের শুভেচ্ছা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here