অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব -০৪

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৪ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

জারা পিটপিট করে চোখ খুলতেই সারাশরীর ব্যথা অনুভব করলো মাথা ভার ভার লাগলো জারা মাথায় হাত দিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র রং দেখে চমকে গেলো মুখ থেকে আপনা আপনি বেড়িয়ে এলো

-‘ আমি কি মরে গেছি?’

-‘ ম’রে’লে তাও বাঁচতাম’

চমকে পাশে তাকিয়ে দেখে শান ওর দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে জারার দিকে শানের চোখ জোরা লাল করে তাকিয়ে আছে। আঁতকে উঠে বলল

-‘ ক কি হ হয়েছে আ আমার’

-‘ ম’রি’স নি মরতে ম’র’তে বেঁচে আসিস’

তখনই শান্তি কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে আসলো শানের কথা শুনে শানকে জোরে ধমক দিয়ে বলল

-‘ শান মুখ সামলে কথা বলো মেয়েটা অসুস্থ আর তুমি ছিঃ আমার ভাবতে লজ্জা লাগছে তুমি আমার ছেলে হয়ে একটা মেয়ে সাথে এভাবে কথা বলছে তাও আবার মেয়েটা কি না তোমার স্ত্রী’

শান মাথা নিচু করে স্থীর চোখে ফ্লোরে দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো প্রতিউত্তর করল না। জারা হাসার চেষ্টা করে বলল

-‘ মনি তুমি ভুল বুঝছো ভাইয়া তো আমার সাথে মজা করছিল’

শান্তি কঠিন কন্ঠে বলল

-‘ তুমি ছোট ছোটর মতো থাকো আর তুমি আমাকে শিক্ষাছ কোনটা মজা আর কোনটা কটাক্ষ করে বলা? তুমি চুপ করে থাকো আর শান বেরিয়ে যাও আর যেনো তোমাকে এখানে না দেখি’

শান চলে গেলো। কিন্তু বাসায় গেলো না। ফেন্ডের বাসায় গেলো। শান চলে যেতেই জারা বলল

-‘ মনি তুমি ভাইয়াকে শুধু শুধু বকলে’

-‘ চুপ একদম চুপ আগে বলবি না শান সবার অগোচরে তোর সাথে এমন বিহেভিয়ার করে তোকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে আমরা তোর কেউ না না-কি? আমরা ম’রে গেছি?

-‘ মনি এমন করে বলো না প্লিজ আমার কষ্ট হয় তো বুঝ না কেনো?’

-‘ শোন আমাদের যদি কিছু ভাবতিস তাহলে বলতিস’।

জারা মুখটা ছোট করে বলল

-‘ সরি মনি প্লিজ কষ্ট পেও না’

-‘ আচ্ছা হয়েছে থাক আর কথা না বলে খেয়ে নে তোর জন্য স্যুপ আর পাতলা করে সুজি বানিয়ে আনছি খেয়ে নে দেখবি শরীর ভালো লাগবে’

-‘ এখন ক’টা বাজে মনি’

-‘ দুপুর ২ টা’

-‘ ওহ’

-‘ জী এবার উঠেন কাল থেকে কিছু খান নি আমরা তো সবাই ভয় পেয়ে গেছিলাম এতো জ্বর পরে তোকে ডাক্তার কাছে আনলাম তোকে স্যলাইন দিল জ্ঞান ছিল না দেখে আর টেনশনে পরে গেছিলাম ডক্টর বলল তোকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে আমার ছেলে তো তোর জন্য পাগলের মতো করছিল তখন মনে করছিলাম হয়ত তোকে মেনে নিয়ে ভালোবেসে করছে কিন্তু না সুমি বলল (বাসার মেড) শানই না-কি তোকে ছাদে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে তখন বুঝলাম আমার ছেলে নিজের গিলটি ফিলের জন্য করছে সারা রাত না ঘুমিয়ে তোর পাশেই বসে ছিলো জানিস!’

জারা চমকালো। কথা ঘুড়িয়ে জেদ ধরে বলল

-‘ মনি আমি বাসায় যাবো হসপিটালে থাকবো না প্লিজজ কিছু করো’

কেউ জারার জেদের সাথে পারলো না। সেইদিনই জারাকে বাসায় আনা হলো।
_________

তারপরে দিন শান বাসায় এলো। শানের উসখুসক এলোমেলো চুল, পাতলা শরীরে ঢিলা চেকের শার্ট, শার্টের হাতা ফোল্ট করা। জারা তখন বসার রুমে বসে বিরক্তি নিয়ে ফল আর দুধের গ্লাস নিয়ে বসে আছে সামনে টিভিতে জারার ফেবারিট ওয়াগি কার্টুন হচ্ছে ওয়াগি ছেনোরিতাকে বিভিন্ন ভাবে ইমপ্রেস করছে। শান জারাকে ক্রস করার সময় আর চোখে তাকালো একবার। জারার হার্ট বিট বেড়ে গেলো শ্বাস আটকে গেলো শানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো সাথে সাথে টিভিতে দিলো। ওয়াগি আর ছেনোরিতার কিসিং সিন চলছে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো টিভির স্কিনে। ঠাস করে টিভি ওফ হয়ে গেলো। জারা চোখ মুখ কুঁচকে পাশে তাকাতে আঁতকে উঠল কি করবে ভেবে পেলো না এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে গেলে টাল সামলাতে না পেরে আবার বসে পড়লো। শান শক্ত চোখে জারার দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ তুই না-কি বাচ্চা তো টিভিতে এসব কি দেখিস বলবো মা’কে তার গুণধর বউ মার চরিত্রের কথা?’

-‘ আ আসলে ভাইয়া আ আমি বুঝতে পারি নাই’

-‘ হ্যাঁ কি বুঝতে পারিস নি তুই সবই বুঝিস শুধু না বোঝার নেকামো করিস’

শান দাড়ালো না শিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল

-‘ টিভি দেখা ওফ’

আরও আস্তে আস্তে কি কি জানি বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেলো শান। জারা মন খারাপ করে সোফায় পা তুলে গোল হয়ে বসে বাচ্চাদের মত মুখ ফুলিয়ে বিরবির করে বলল

-‘ আমার কি দোষ আমি কি জানতাম না-কি এখনি সব হবে আর এসব কার্টুন কে বানায় হ্যাঁ তাকে সামনে পেলে খবর আছে শুধু শুধু আমি একগাদা বকা খেলাম দূর তারি ছাই ভালো লাগে না কিছু আমি যে তার বউ তার কি মনে থাকে না দেখা হলেই চোখ রাঙানি আর ধমকে তেঁতো তেঁতো কথা শুধু আমার বুঝি কষ্ট হয় না? ‘

সুমি হেসে বলল

-‘ কি গো আম্মা আস্তে আস্তে কি কও পাগল টাগল হইয়া গেলে না-কি গো?’

জারা মুখ ফুলিয়ে বলল

-‘ না হয়ে যাবো দেখো সেদিন আর বেশি দূরে নাই আমাকে দেখতে পাগলা গারদে যাবে তো?’

সুমি এবারও হেঁসে বলল

-‘ দূর পাগলি মেয়ে এসব কথা কইতে নাই’

-‘ শুনো খালা তোমার সাথে আমার অনেক বুঝা পড়া আছে বুঝলে?’

-‘ কেন আম্মাজান আমি আবার কি করলাম’

জারা গম্ভীর কন্ঠে মুখ ভার করে বলল

-‘ কি করো নি সেটা বলো সব পাকিয়ে রাখছ তুমি ‘

সুমি ভয় পেয়ে দৌড়ে জারার কাছে ফ্লোরে বসে বলল

-‘ ও আম্মাজান আমি কি করছি গো?’

-‘ তুমি আমারে মেলা কষ্ট দিছো’

-‘ ও আম্মা তুমি আমার কষ্ট পাইছ? কোন কথায় কষ্ট পাইছ গো?’

-‘ তুমি মনিকে সব সত্যি বলে দিসো কেনো? জানো মনি ভাইয়াকে কতটা বকা দিসে’

-‘ তো কি করতাম আব্বাজান আম্মাজানকে কষ্ট দিসে আমার মাথার ঠিক ছিল না আব্বাজান তোমারে লইয়া কোলে কইরা যখন হসপাতালে লাইয়া গেলো তখন তোমার অবস্থা দেখে হড়বড় করে সব বলে দিয়েছি। ‘

-‘ খুব ভালো করছ আমার সাথে কথা বলবে না আমি তোমার ওপরে রাগ করেছি কাট্টি’

-‘ ও আম্মা তুমি কও আমি কি করলে তোমার রাগ পরে জাইবো?’

-‘ সত্যি রাখবা তো?’

-‘ তুমি খালি কইয়া দেখো না ‘

-‘ শুনো না এই দুধ টা নিয়ে যাও এটা খাইলে আমার মাথা ভনভন করে আর এই ফলগুলো নিয়ে যাও এগুলা চিবিয়ে খেতে গেলে মনে হয় আমি গরুর মতো ঘাস পাতা চিবাচ্ছি’

-‘ গরুর মাথায় তাও বুদ্ধি আছে তোর মাথায় তো তাও নাই তোকে গরুর সাথে তুলনা করলে গরুর অসম্মান করা হবে’

শানের কথা শুনে জারার রাগ লাগলো। রাগে কিছু বলতে পারলো না চোখ দিয়ে পানি এলো। শান সুমিকে উদ্দেশ্য করে বলল

-‘ খালা ওর সাথে ফাও কথা না বলে এদিকে এসে আমাকে খেতে দাও’

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here