আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব -১২

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ দেখতে পেলো অর্শি একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে খুব কাছা কাছি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। দৃশ্যটা দেখার পর আয়াদের বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যথা অনুভব হলো। আয়াদ বুঝতে পারে না অর্শির পাশে অন্য কেউ থাকলে‌ তার‌ এই অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হয়? আয়াদ একটু রেগে গিয়ে নিজের হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। ইচ্ছে করছে তার ছেলেটিকে গিয়ে রিহানের মতো সাজা দিতে। ওহহহ আপনাদের‌ তো বলাই হয় নি। সেই দিন হোটেলে রিহানের ওমন হাল ওয়াসরুমে পরে গিয়ে হয়নি। আয়াদ করেছে রিহানের ওমন হাল। যাই হোক আয়াদ ক্লাসের দরজার দিকে দাঁড়িয়ে আছে রাগি একটা লুক নিয়ে। আয়াদের উপস্থিতি আর্শি আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করলো। আয়াদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরে নিজের রাগকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। হনহন করে অর্শির দিকে ছুটে চলে‌ যায় সে। অর্শির সামনে গিয়ে আয়াদ অর্শি আর ঐ ছেলের মাঝ বরাবর প্রবেশ করে দেয়ালে একটু হেল দিয়ে দাঁড়ায়। আয়াদের এমন হুট করে‌ চলে আসা ছেলেটির একটুও পছন্দ হয়নি‌‌।‌ ছেলেটি একটু রাগ ও কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠস্বর নিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— হ্যালো মিস্টার, কে আপনি? আর এমন হুট করে আমাদের মাঝে চলে এলেন‌ কেনো? আপনার তো দেখি বিন্দুমাত্র ম্যানার নেই!

ছেলেটির কথা শুনে আয়াদ এমন একটা ভাব করলো মনে হচ্ছে আয়াদ তার কোনো কথাই শুনতে পায়নি। আয়াদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্শি। আয়াদকে নিশ্চুপ দেখে ছেলেটি একটু হাক ছেড়ে চেঁচিয়ে রাগি কন্ঠে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলতে লাগলো

— এই হ্যালো, আমি আপনাকে বলছি। কথা কানে যায় না?

আয়াদ এই বার একটু বাঁকা হাসি দিয়ে‌ ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কথা কানে যাবে না তো কোথায় যাবে? কথা কানে আসছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কথা গুলো কি আমায় বলছিস! নাকি অন্য কাউকে? যদি আমায় বলে থাকিস তবে উত্তর‌ দেয়া আমার কর্তব্য আমি কে? এটা জানে‌ না এমন লোক পুরো ভার্সিটিতে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। আমি আয়াদ। আর তোদের মাঝে আমি হুট করে চলে আসি নাই। বরং তুই আমাদের মাঝে ঢোকার চেষ্টা করছিস। আর বাকি রইল ভদ্রতা! সেটা আমার কোনো‌ কালেই ছিলো না। বাই দ্যা ওয়ে কাম টু দ্যা পয়েন্ট তোর তো ভদ্রতা জানা আছে তাই না। সো এখন ভদ্র‌তা বজায় রেখে এখান থেকে কেটে পর। নেক্সট টাইম অর্শির সাথে কথা বলা তো দূর ওর দিকে তাকাবিও না। আউট।

আয়াদের কথা শেষ হতেই ছেলেটি তাচ্ছিল্য পূর্ণ একটা হাসি দিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— যদি না যাই তা হলে কি হবে?

— উহু বেশি কিছু হবে না। যাস্ট তোর সাথে একটু অভদ্রদের মতো আচরন করবো। যা আমি খুব ভালো পারি।

আয়াদের কথা শেষ হতেই অর্শি হাতে তালি দিয়ে আয়াদকে বাহ! বাহ! জানাতে লাগলো। আয়াদ একটু অবাক হয়ে অর্শির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অর্শি বলতে লাগলো

— বাহ! আয়াদ সাহেব বাহ! মানে আমি কারো সাথে কথা বলতে পারবো না। আমার আপনার রেস্টিকশন মতো কাজ করতে হবে। আপনি নিজের মুখে নিজের পরিচয়টা বার বার দিচ্ছেন। বাহ! আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না। আপনি যে একটা নিচু লোক এটা শুধু আমি না। আপনি নিজেও জানেন।

— হাহাহাহা! আমি বাজে হুম সেটা আর কিভাবে প্রমান করবো বল? আর শোন তুই সবার সাথে‌ কথা বলতে পারবি। সবার সাথে আড্ডা দিতে পারবি। এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, কিন্তু তোর সাথে কেউ কথা বলতে পারবে না। আর যদি কেউ তোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তবে তার অবস্থা যে কি হবে তা আমি নিজেও জানি না।

আয়াদের কথা শুনে অর্শি ভিশন রেগে গেলো। এমন সাইকো টাইপের কথা শুনে যে কেউ রেগে যাবে এটা স্বাভাবিক। অর্শি রেগে দিয়ে আয়াদের টিশার্টের কলার চেপে ধরলো। আয়াদ একটুও অবাক হলো না অর্শির ব্যবহারে। বরং আয়াদ মুচকি হেসে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তুই যখন রেগে যাস তখন আমার কেনো জানি ভিশন ভালো লাগে। আহহহ সো সুইট। একদম সুগার ফ্রি মিষ্টির মতো লাগে তোকে।

অর্শি আয়াদের কলার ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে আয়াদকে বলতে লাগলো

— তাই! এই কথা বলেই মনে হয় সবাইকে হাত করেন আপনি। রাইট?

— একদম রাইট।

অর্শি আর কিছু বললো না। আয়াদের সামনে থেকে দৌড়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায় সে। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে অর্শির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

* ভার্সিটি থেকে আয়াদের সাথে‌ রাগা রাগি করে অর্শি বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো সে। “কেনো জানি ভিশন খারাপ লাগছে নিজের কাছে নিজেকে। আয়াদ কি প্রমান করতে চায়? আমি তো ওর থেকে দূরে থাকতে চাই। ও কেনো গায়ে পরে কথা বলে আমার সাথে? আমি কারো সাথে কথা বললে ও কেনো বাঁধা দেয়? তবে কি আয়াদ ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে? উহু ওনার মতো একটা নোংরা মানুষকে আমি পছন্দ করতে পারবো না। আর ওনার আসল রূপ আমি দেখে ফেলেছি। তারপর ও ওনার প্রতি দুর্বলতা থাকা আমায় শোভা দেয় না। কিন্তু যতই ওনাকে অপমান করি না কেনো ওনার পাশে কোনো মেয়েকে দেখলে আমার হিংসে হয় এটা কেনো? আচ্ছা সত্যি তো এমনটা কেনো‌ হয়‌ আমার? আমি তো নিজের ইচ্ছেতে এমনটা করি না। কেনো জানি ওনার পাশে কোনো নারীকে দেখলে আমার কষ্ট হয়, রাগ উঠে ভিশন”। অর্শি কথা গুলো আপন মনে ভাবতে লাগলো। এই অনুভূতির নাম আর যাই হোক কখনও ভালোবাসা বলা যাবে না। কারন ওনাকে আমি ভালোবাসি‌ না। অর্শি কাল রাতের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।

— হ্যালো আয়াদ, আপনি কোথায় আছেন? এই মুহূর্তে আমার আপনার সাথে দেখা করার খুব প্রয়োজন।

ফোন কলের ওপার থেকে এক নিঃশ্বাসে কথাটা গড়গড় করে বলে‌ যায় ডায়না। আয়াদ ভিশন বিরক্তি নিয়ে কলটা পিক করলো। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে বলল

— কেনো কি প্রয়োজন? আমার হাতে সময় নেই। আমি আসতে পারবো না।

— ওকে আমি আসছি।

— আপনি আসবেন মানে? অসহ্য কোথায় আসতে হবে? বলুন।

ডায়না ফোন করে আয়াদকে একটা এড্রেস বলল। আয়াদ নিজের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সেখানকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। আজ এই ডায়নাকে বলে দিবে আয়াদ। তার এই সমস্ত কাজে আয়াদ আর নেই। আয়াদের বুঝতে আর বাকি নেই যে এটা একটা সাইবার ক্রাইম গ্যাংগ। আয়াদ ডায়নার দেয়া এড্রেস মতো আসতেই একটা বিশাল কালো গাড়ি থেকে ডায়না নেমে এলো। আয়াদ ডায়নার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে যায়। যে মেয়ে জিন্স আর শার্ট পরতো আজ সে শাড়ি পরে এলো? ব্যাপারটা কি? আয়াদ ডায়নার থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই ডায়না এসে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল

— সরি মিস্টার আয়াদ। ঐ দিন মাথা ঠিক ছিলো না আমার। প্লিজ আমায় ক্ষমা‌ করে দিন।

— ইট’স ওকে। কিন্তু আমি দুঃখিত আমি আর আপনার হয়ে কাজ করতে পারবো না। কারন আমি ভালোর সাথে কাজ করি‌ খারাপের সাথে নয়। আসছি খোদা হাফেজ।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ ডায়নার সামনে থেকে চলে যেতে নিলো। আয়াদ একটু এগিয়ে যেতেই ডায়না আয়াদকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— স্টপ আয়াদ। আপনি জানেন না আমি কি কি করতে পারি?

আয়াদ ডায়নার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

— আমি জানি আপনি কি করতে পারেন আর ভুলে যাবেন না আমি কি করতে পারি।

কথাটা শেষ করে আয়াদ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে এলো। কাউকে বেশি লাই দিতে নেই। পরে মাথায় উঠে নাচবে।

* আয়াদ ডায়নার সাথে কথা শেষ করে বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে আয়াদ নিজের রুমে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলো। সন্ধ্যার দিকে আয়াদ দেখতে পেলো বাড়িতে অনেক মানুষের আনাগোনা হচ্ছে। আয়াজ বিষয়টা একটু গভীরভাবে দেখতেই দেখতে পেলো অর্শিকে দেখা যাচ্ছে না। আয়াদ একটু কৌতূহলী হয়ে তার মাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে আয়াদকে চমকে দিলো তার মা। আয়াদ তার মা এর কথা শুনে একদম থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ তার মাকে…………………..

#চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here