#আষাঢ়ি_পূর্ণিমা
#পর্ব_৮
#খাদিজা_আক্তার
—আমাকে এখন যেতে হবে।
সাজ্জাদের কথা শুনে আদী নড়েচড়ে বসল। একটু সময় নিয়ে বলল,
—চলে যাবি?
—হ্যাঁ, ঘটনা ঘটেছে এক জায়গায় আর কেস চলবে অন্য জায়গায়। অনেক ঝামেলা আছে। তাছাড়া পোস্টমর্টেমে কী আসবে কে জানে। এমনিতেই সুই””সাইড কেস তারপর অন্য কিছু বের হলে…
সাজ্জাদের কথার মাঝে আদী প্রশ্ন করল,
—অন্য কিছু বলতে?
—দেখ তোর হয়তো শুনতে খারাপ লাগতে পারে। তবে তোদের কথা শুনে মনে হচ্ছে জল অনেক দূর দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমি সবটুকু দেখব। কিন্তু এরজন্য প্রচুর সময় ব্যয় হবে।
—তা হোক, কিন্তু এর শেষটুকু না দেখলে ফুপুকে মুখ দেখাতে পারব না রে। তার ছেলে নেই। স্বামী তো থেকেও না থাকার মতো। এখন আমার ওপরই একমাত্র ভরসা করে আছেন।
এ বলে আদী উঠে দাঁড়িয়ে সাজ্জাদের ডান হাত নিজের দুই হাতে চেপে করুণ গলায় বলল,
—আমাকে হতাশ করে দিস না। বাংলাদেশের আইনকানুন বিষয়ে আমি জানি। তাই তো তোর ওপর ভরসা করে…
সাজ্জাদ, আদীর পিঠ চাপড়ে বলে ওঠল,
—আহা! ভাবিস না। আমি তো বললাম চেষ্টা করব। তুই খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিস আদী। এমন অবস্থায় আমি তোকে কখনো দেখিনি। যা এখন গিয়ে রেস্ট নে। কী হলো না হলো আমি তোকে প্রাইভেটলি জানাব। So, don’t worry man.
সাজ্জাদ হয়তো আদীকে আশ্বস্ত করেছে, কিন্তু সাজ্জাদ কতটুকু পারবে স্বর্ণালিকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া রহস্যের জাল ভেদ করতে?
*
দুই দিন হয়ে গেছে। বড়ো বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যায়নি রাত্রি। ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করেছে স্বেচ্ছায়। তার মন খারাপ— এ কথা এখন আর সে মানতে চায় না। একজন মানুষের দিনরাত্রি মন খারাপ হয় কীভাবে সেটিই রাত্রি বুঝতে পারে না। কিন্তু মন তো খারাপ হয়েই আছে।
ইব্রাহিম উঠেপড়ে লেগেছে রাত্রিকে বিয়ে করার জন্য। বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আরও দুই মাস পর। কিন্তু গতকাল না কি ইব্রাহিম এসে জানিয়ে গেছে, আগামী পনেরো দিনের মধ্যে বিয়ের কাজ শেষ করতে হবে। রাত্রি স্পষ্টই বুঝতে পারছে ইব্রাহিম রেগেমেগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কারো রাগের বলী সে কেন হবে?
—রাত্রি?
হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বরে চমকে ওঠল রাত্রি। ঘরময় অন্ধকার। কপাল হাত রেখে চোখ বুজে সে শুয়ে ছিল। তার ঘরে সচারাচর কেউ আসে না। অভি আসে কালেভদ্রে, কিন্তু সে বেচারা এখন পড়াশোনা নিয়ে মত্ত। তাই তার দেখা মেলা ভার।
মাগরিবের আযান হয়েছে অনেক আগে। ফলে ঘরে এত আলোর সংকট। কিন্তু খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করা আলোয় রাত্রি দেখতে পারছে কারো ছায়ামূর্তি। এ ছায়া আদীর শরীরের। এটি টের পেয়ে রাত্রি খুব দ্রুত নিজেকে ভদ্রস্থ করল, কিন্তু পরিপাটি হওয়ার আগেই আদী ঘরের আলো জ্বেলে দিলো। চোখাচোখি হতেই আদী সামান্য লজ্জায় সিক্ত হয়ে বলল,
—আমি ছাদে অপেক্ষা করছি।
এ বলে আদী বের হতে চাইলে রাত্রি এরই মাঝে নিজেকে পরিপাটি করে বলল,
—রাতের বেলা আমি ছাদে যাই না।
—ও। তাহলে কী করব?
—যা বলতে এলে বলো।
আদী স্থির দৃষ্টিতে রাত্রিকে দেখে বলল,
—মানুষ আকাশের মতো। হুটহাট কেমন রঙ বদলায়।
—তুমিও তো মানুষ। সেক্ষেত্রে তোমাকেও এটি বলা যায়।
আদী হেসে ওঠল। বলল,
—তা যায়। ওকে এখন আসল কথা বলি। শুনলাম তোমার না কি বিয়ে একদম ফিক্সড হয়ে গেছে?
প্রশ্ন করতে গিয়ে আদী বিছানায় বসল। রাত্রি এতক্ষণ যে বালিশে মাথা রেখে শুয়েছিল, সে বালিশ কোলে নিয়ে হাত রাখল। কী আশ্চর্য! বালিশ একই সাথে তপ্ত এবং ভেজা-ভেজা লাগছে। কিন্তু এ নিয়ে আদী কিছু জিজ্ঞাসা না করে পূর্বের প্রশ্নের উত্তর চাইল,
—চুপ করে আছ কেন?
—যে উত্তর তুমি জানো, সে উত্তর আমার কাছে কেন চাইছ?
—রাত্রি, আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। এখনো হয়তো করতাম, কিন্তু স্বর্ণালির সুই””সাইডের খবর পেয়ে আমার সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে। তোমাকে নিয়ে আমার ভয় রাত্রি। কিন্তু তুমি…
অবাক চোখে তাকিয়ে রাত্রি জিজ্ঞাসা করল,
—ভয়? কীসের ভয়?
—আমি জানি তুমি বিয়েতে রাজি নও। ইব্রাহিমকে তোমার পছন্দ হয়নি। ওই শালা কী চিজ আমিও জানি৷ কিন্তু তোমার বাপ চাচা আমার মতো খারাপ পোলার কথা শুনতে চাইলে তো?
আদী হড়হড় করে বলা কথা শুনে রাত্রি আরও চমকে গেল। তার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর এ বিষয়ে আদীর সাথে তার কোনো আলাপই হয়নি। তাহলে আদী এসব জানল কী করে?
—আমি বিয়েতে রাজি নই— এ কথা তোমায় কে বলল?
—ঠিক যেমন করে বুঝতে পারছি তুমি একটু আগে নাকের পানি আর চোখের পানি এ বালিশে মুছেছ। ছিঃ! বাচ্চাদের মতো সর্দি মোছার অভ্যাস তোমার যায়নি?
আদীর কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে মজা করছে। কিন্তু রাত্রি নির্জীব হয়ে রইল। এমন সস্তা কথায় তার মাঝে কখনো কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।
—এত চুপ করে থাকো কেন? এটি যে মিথ্যা তাও তো বলতে পারো।
—মিথ্যা যখন জানো। তাহলে অর্নথক কথা কেন বাড়াচ্ছ?
—বিরক্ত হচ্ছ?
—আদী, তোমার কি সত্যিই কিছু বলার আছে? না থাকলে…
—না থাকলে? চলে যেতে বলছ? তাড়িয়ে দিচ্ছ আমায়?
—আমি কিছুই করছি না। এক মেয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সুই””সাইড করেছে তা নিয়ে তোমার কোনো চিন্তা আছে?
—চিন্তা করি না তোমায় কে বলল? স্বর্ণালি নিজের সবটুকু হারিয়ে মরে গেছে। তবে আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে অন্য কথা জানিয়ে গেছে।
—কী কথা?
—তোমাকে চোখে চোখে রাখতে।
—আমাকে? চোখে চোখে? কী যা-তা বলছ তুমি? এমন সন্ধ্যা বেলায় উলটো পালটা বকে যাচ্ছ কেন? ছাইপাঁশ খেয়ে এসেছ আমার সাথে দেখা করতে?
—সিগারেট ছাড়া আমি অন্য কিছু খাই না সেটি তুমি ভালো করেই জানো। আর সিগারেট খেলে নেশা হয় কখনো শুনেছ?
—উঃ! তুমি যাও। আমি পায়ে পড়ছি তোমার। চলে যাও আমার ঘর থেকে। সম্পর্ক শেষ করতে চেয়েছিলে আমি করেছি। এখন দয়া করে আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আমার জীবন আমি ঠিক গুছিয়ে নিতে পারব। তুমি তোমার বুশরাকে…
আদী আর নিজেকে সংযত রাখতে পারল না। রাত্রির গালে কষে এক চড় বসিয়ে গর্জে ওঠল,
—কিয়ের বুশরা? খালি বুশরা বুশরা করো। এই ছেড়িরে আমি কোনো দামই দেই না। ভাল লাগছিল। এ কারণে কয়ডা দিন কথা কইছিলাম। এহন কথা কইলে কেউ যদি আমার ওপর গইল্লা পড়ে তো আমি কী করতাম? কিছু হইলেই বুশরা বুশরস করো। আমি কোনোদিন কইছি যে এই ছেড়িরে আমি বিয়া করমু, ওর লগে আমার পিরিত চলে? আমি আইছিলাম তোমারে বুঝাইতে, তোমার কাছে জানতে। তুমি এ বিয়ে করবা না কি আমি কোনো ফন্দি কইরা ভাইঙা দিমু। আমি তো জানি তুমি ওই শালা পছন্দ করো নাই। তাছাড়া তুমি লেখাপড়া কইরা চাকরি করতে চাও। আর এক উস্টার কথা কও, সম্পর্ক শেষ, সম্পর্ক শেষ।
আদী এবার রাত্রির দুই বাহু চেপে মুখোমুখি টেনে এনে বলল,
—কোন সম্পর্ক শেষ? দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের? বন্ধুত্বের? না কি এক বছরের তৈরি হইছে যে সেই সম্পর্কের?
আদীর হাতের চাপে রাত্রি বাহু ব্যথায় টনটন করে ওঠছে। চোখে পানি জমছে একটু একটু করে। কিন্তু রাত্রি সবটুকু সময় চুপ করে রইল। আদী এবার রাত্রিকে ছেড়ে দিলো। ধাক্কা দিয়ে যেন পিছনে ঠেলে দিলো।
(চলবে)#আষাঢ়ি_পূর্ণিমা
#পর্ব_৯
#খাদিজা_আক্তার
—আইচ্ছা আমি মানলাম আমাগো সম্পর্ক শেষ। কিন্তু একটা কথা তোমার আইজকা কইয়া দেই। তোমার লগে আমার এক সম্পর্ক শেষ হওয়ার লগে লগে অন্য সম্পর্ক শুরু হয়। এ কারণে সম্পর্ক শেষ, সম্পর্ক শেষ কইয়া আমার মাথা খাইয়ো না। পারলে আমারে একটু বুঝার চেষ্টা কইরো; আমি কী চাই, আমার মন কী চায়।
কথা শেষ করে আদী চলে গেল। এদিকে রাত্রির মনে হচ্ছে সে এখন পৃথিবীর বুকে নেই। চারপাশের সবকিছু কেমন লণ্ডভণ্ড মনে হচ্ছে। নিজের শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আচমকা রাত্রি মেঝেতে বসে পড়ল। অন্য সময় হলে হয়তো বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করত, কিন্তু এখন রাত্রির কিছু করতে ইচ্ছে করছে না। ঝিম ধরা মাথায় হাজারো চিন্তা আর কথাবার্তা ঘুরছে। তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাত্রির চোখের জলে কপোল ভিজতে লাগল অবিরত।
*
প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে অথচ স্বর্ণালির মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি রহস্যের সমাধান এখনো হয়নি। তবে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো স্বর্ণালির মাথায় না কি মগজ নেই এবং দুই পশুতুল্য মানুষ দ্বারা স্বর্ণালি শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে স্বর্ণালির মৃত দেহের সাথে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। লা””শ গোসল করানোর ফলে অনেক আলামত বিলুপ্ত হলেও সব হারিয়ে যায়নি। ফলে তথ্যগুলো পেতে সাজ্জাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। সাজ্জাদ জানিয়েছে,
—দেখ আদী, স্বর্ণালির আগে পোস্টমর্টেম হয়নি। পোস্টমর্টেমের নাম করে ওকে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ওকে শোষণ করেছে। মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃত হলেই সে মৃত মানুষের সাথে এমন জঘন্য আচরণ করে থাকে। তুই নিশ্চয়ই শুনেছিস, কিছুদিন আগে এক ডোমের তথ্য প্রকাশ পায় যে কিনা মৃত মানুষের সাথে এসব করত। এটি মূলত এক ধরনের অসুখ, কিন্তু কথা হচ্ছে এরপর স্বর্ণালির মগজ বের করে সেটি নিয়ে করেছেটা কী? কারণ ঢাকা মেডিক্যালের কেউ স্বীকার যায়নি এ বিষয়ে। এসব দেখে আমার মনে হচ্ছে ওর সুই””সাইডের পিছনে কারো হাত আছে।
—তুই কি নিশ্চিত যে স্বর্ণালি সুই””সাইড করেছে? এমনও তো হতে পারে ওকে খু””ন করা হয়েছে। এরপর সুই”””সাইডের বিষয়টি সাজানো হয়েছে।
—না রে। এ ব্যাপারে আমি একশো ভাগ নিশ্চিত। পোস্টমর্টেম অনুযায়ী রাত নয়টার সময় স্বর্ণালি সুই””সাইড করেছে। এরপর যা হওয়ার একের পর এক হয়েছে। ওর বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আরও কিছু তথ্য সামনে এসেছে।
—কীসের তথ্য?
—স্বর্ণালির সাথে যা হয়েছে তা এর আগেও বেশ কয়েকবার অন্যদের সাথে হয়েছে।
—কী কছ?
—হ্যাঁ, আরও মেয়ে এমন সুই””সাইড করেছিল। এরপর তাদের সাথেও পাশবিক নির্যাতন হয় এবং তাদের মাথা থেকে মগজ বের করে নেওয়া হয়।
—কী সাংঘাতিক ব্যাপার!
—হুঁ, সাংঘাতিক। তবে জটিলও বটে। মূল হোতা পর্যন্ত যেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
এ পর্যন্ত আদী জানতে পেরেছিল। এর বেশি আর জানা যায়নি। পোস্টমর্টেম করে স্বর্ণালির লা””শ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্বর্ণালির ক্ষতবিক্ষত দেহ আদী নিজ হাতেই কবরস্থানে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আর প্রতি মূহুর্তে স্বর্ণালির প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার বুক কান্নায় ভরে ওঠেছিল। মনে মনে সে বলেছিল,
—তুই আমাকে বদলে দিয়ে গেলি, স্বর্ণালি। আমার মাঝে যে হিংস্রতা ছিল তা কেড়ে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলি। তোর এ ঋণ আমি আমৃত্যু শোধ করতে পারব না বোন।
*
আদীর শরীর ভালো নেই। জ্বর, সর্দি ও মাথা ব্যথা একসাথে তার দেহে অতিথি হয়ে এসেছে। নিমন্ত্রণ শেষে কবে নাগাদ যাবে তা আদীর অজানা। অসুখ বিদেয় করার তাড়া আদীরও নেই। অসুখ জিইয়ে রাখার মাঝে এক ধরনের নেশা আছে। সেই নেশার সন্ধান আদীকে অবশ্য দিয়েছিল রাত্রি। গা যখন জ্বরে পুড়ে যেত রাত্রির তখনও দিব্যি ওষুধ ছুঁড়ে দিয়ে বলত,
—আমার ওষুধ খেতে ভালো লাগে না, আদী।
আদী চুপ করে থাকত আর অবাক হয়ে ভাবতো,
—জ্বরের ঘোরে তোমার মুখে আমার নাম কী যে অদ্ভুত লাগে রাত্রি! আব্বা আম্মার দেওয়া নামটি যে তোমার মুখেই বড়ো বেশি আদুরে লাগে।
মনে মনে বললেও মুখে বলতে পারত না আদী। তাছাড়া ওষুধ ছুঁড়ে দেয় বলেও রাত্রির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারত না; বুকের ভেতর ভাঙচুর হতো।
আদী জেগে ওঠল। তার চোখে এখন আধো ঘুম। ঘুমের জন্যই এতক্ষণ সে রাত্রিকে নিয়ে এতসব কল্পনা করছিল।
বাইরে চকচকে রোদ, কিন্তু আদীর শীত করছে। মনে হয় জ্বর আবার বাড়ছে। হঠাৎ করে জ্বর হওয়ার কারণ আদী বুঝতে পারছে না। তবে এ নিয়ে এখন সে ভাবতেও চায় না। আদী এখন রাত্রিকে নিয়ে ভাবতে চায়। কিন্তু রাত্রির তো বিয়ে হয়ে যাবে। তখন সে অন্যের বউ হয়ে যাবে। আদীর মনে হঠাৎ প্রশ্ন এলো,
—অন্যের বউকে নিয়ে কি ভাবা যায়? আর আমি কি রাত্রিকে ভালোবাসি?
এ প্রশ্ন করার পরই চোখের সামনে রাত্রিকে দেখতে পেল আদী। সে বুঝতে পারছে এ তার কল্পনা করা আস্ত এক রাত্রি যার সাথে বাস্তবের রাত্রির কোনো তফাত নেই। আর রাত্রি তার ঘরেই বা কেন আসবে? সেদিন ওকে চড় মেরে চলে আসার পর আদী তো আর রাত্রির খবর নেয়নি। রাত্রিও ফোন করে জিজ্ঞাসা করেনি, সে কেমন আছে। তাছাড়া আজ অনেক মাস হলো রাত্রি তাদের বাড়িতে আসে না। আদীর জ্বর আর ঘুমের ঘোরে হঠাৎ এক অদ্ভুত ইচ্ছে নিজের মাঝে সৃষ্টি হলো। চট করে শরীর থেকে কাঁথা সরিয়ে আদী বিছানা ছাড়ল। অসুস্থ আর ঘুমের জন্য তার চলনবলনে কোনো তাল। কিন্তু বেসামাল হয়েও আদী তার কাল্পনিক রাত্রির দিকে ছুটে গিয়ে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করল,
—রাত্রি, আমি কি তোমায় ভালোবাসি?
কপালে ঠাণ্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলল আদী। চোখ খুলে সময় আন্দাজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। কপালে ঠাণ্ডা লাগার কারণ খুঁজতে গিয়ে বুঝতে পারল তার কপালে কেউ জলপট্টি দিচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে দেখল তার আম্মা মুখ মলিন করে বসে আছে।
—এখন কেমন লাগছে আব্বা?
মায়ের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ শুনে আদী নিঃশব্দে মাথা নাড়িয়ে বোঝাল এখন সে ভালো বোধ করছে। আদীর শরীর বেশ দূর্বল লাগছে। তাই আম্মার দিকেও সে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। চোখ বুজে দিলো, কিন্তু চোখ বুজে দিতেই মনে পড়ল সে কাল্পনিক রাত্রিকে জড়িয়ে ধরেছিল। তবে এরপর কী হয়েছিল আদী মনে করতে পারছে না। তার ক্লান্ত শরীর মনকেও ক্লান্ত করে দিচ্ছে।
*
বাড়িতে বিয়ের আমেজ। তবে যার বিয়ে, তার এসবে মন নেই অথচ সেই বিয়েকে কেন্দ্র করে পাড়াপড়শির ঘুম নেই। বিয়ের সব আয়োজন খুব দ্রুত গতিতে চলছে কারণ বিয়ের আর মাত্র দশ দিন বাকি। দিন যত ফুরিয়ে যাচ্ছে, রাত্রির চিন্তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রাত্রি কী করবে বুঝতে পারছে না অথচ তার মনের কথাগুলো বলার মতো কেউ নেই। আদী ছিল আগে পরম বন্ধু, কিন্তু সেদিনের পর ওকে শত্রু ছাড়া রাত্রি অন্য কিছু ভাবতে পারে না। তবে একটি চিন্তা রাত্রিকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আদীর বলা একটি কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না,
—তোমার লগে আমার এক সম্পর্ক শেষ হওয়ার লগে লগে অন্য সম্পর্ক শুরু হয়।
সত্যিই কি তাই? রাত্রি ভাবতে গেলে কেমন যেন পাগল হয়ে যায়। এছাড়া আদীর দাবি, এক বছরে তাদের মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কোন সম্পর্ক সৃষ্টি হলো তাদের মাঝে এক বছরে?
—রাত্রি আপু?
(চলবে)