#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২১
– সবাইকে সবটা বলে দিলেই পারতি!অহেতুক এতগুলো মিথ্যে কথা বলার দরকার ছিল না।
– এখানে মিথ্যে বলে যদি আমি কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে তার জন্য আমার বিন্দুমাত্র আফসোস বা অনুশোচনা কোনোটাই নেই।আমার যা ভালো মনে হয়েছে আমি তাই করেছি।তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে জল না গড়ানোই ভালো।শুধু মাত্র একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ আমার পরিবারের চোখে ছোট হয়ে যাক এটা আমি চাই নি।এতটাও মনুষ্যত্বহীন হতে পারি নি।আমি চাই নি আমার ফুপি তার নিজের বাড়িতে আসতে লজ্জা পাক।আপনাকে সবাই এতটা ভরসা করে আমি সেই ভরসার জায়গাটা এমনি এমনি তো ভেঙ্গে দিতে পারি না।জানি না তখন কেন আমার এতো কান্না পাচ্ছিল যদি বাসার কেউ দেখে নিতো তাহলে তাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত! আমি হয়তো রাগের মাথায় তাদেকে সবকিছু বলেও দিতাম!তারপর যা হতো সেটা নিশ্চয়ই খুব বেশি ভালো কিছু হতো বলে আমার মনে হয় না।নিজেকে আর কান্নাকে আড়াল করতেই বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে বসে ছিলাম!তখন ফ্লোরে রক্ত দেখি।পরে কপালে এত রক্ত দেখে ভয় পেয়েই হয়তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।হতে পারে বাথরুমে পড়ে যাওয়ায় কাটা অংশে আবার আঘাত পেয়েছি বলে ক্ষতটা একটু বেশিই হয়েছিল।সামান্য একটা ভুলের জন্য কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে এতটা অন্যায়ও কেউ করে নি।
কথাগুলো শেষ করে মলিন মুখে একটু হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে গোধূলি চলে আসতে নিলেই দীপ্ত গোধূলির হাতটা ধরে ফেলে।দীপ্তের এহেন কান্ডে কিছুটা হকচকিয়ে যায় গোধূলি।
একটু আগে_______
হসপিটাল থেকে গোধূলিকে বিকালের আগেই বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।ফ্রেশ হয়ে হালকা পাতলা খাবারও খাওয়ানো হয়েছে।গোধূলি ওর রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পায় যে সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে।আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। এই সময়টা যে গোধূলি ছাদে একা কাটাতে ভালোবাসে এটা মোটামুটি বাড়ির সবারই জানা।তাই গোধূলিকে কেউ কিছু বলে নি।শুধু সাবধানে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।তাও আদিবাই গোধূলিকে ছাদে দিয়ে আসে।কালকে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে যা অবস্থা হয়েছে।তাই আদিবা গোধূলিকে একা যেতে দেয় নি।আদিবা ছাদে গিয়ে গোধূলিকে দোলনাটায় বসিয়ে দিয়ে বলে এসেছে শান্ত হয়ে যেন ওইখানেই বসে থাকে একটু পরে ও এসে আবার নিয়ে যাবে।ছাদের চারপাশের রেলিং আর লাইটগুলোর জন্য ঠিকঠাক ভাবে সূর্যাস্তটা দেখা যাচ্ছিল না।তাই গোধূলি দোলনা থেকে উঠে গিয়ে রেলিং এর কিনার ঘেঁষে দাঁড়ায়।সূর্য ডুবার পরমুহূর্তেই রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে ওই সীমাহীন আকাশের বুকে।গোধূলি চারপাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেই ব্যস্ত।মাত্র ফুট দেড়েক দূরত্বে কেউ এসে যে ওর দাঁড়িয়ে আছে সেই দিকে কোনো খেয়ালই নেই।হঠাৎ দীপ্তের গলার আওয়াজ পেয়েও ওর মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি।গোধূলি খুব স্বাভাবিক ভাবেই দীপ্তের দিকে ফিরে।ওকে দেখে যে কেউ ভাববে যে,হয়তো গোধূলি জানতো দীপ্ত আসবে!
বর্তমান ______
গোধূলি বেশ অবাক হয়ে তাকায় দীপ্তের দিকে
ততক্ষণে দীপ্তও নয়ন জোড়া তোলে গোধূলির দিকে থাকায়।ওর ব্যান্ডেজ করা হাতের উপর গোধূলির হাতগুলো রেখে অপর হাতের সাহায্যে আবদ্ধ করে বলে,
– গোধূলি!যদি আমি তোর কাছে কিছু চাই তুই কি আমায় ফিরিয়ে দিবি?
….
– বল!ফিরিয়ে দিবি?
– আপনাকে কিছু দেওয়ার মতো সামর্থ্য কি আমার আছে?
– প্লিজ বল না দিবি!
গোধূলির খুব ভয় হচ্ছে।দীপ্ত ভাইয়া এমন করছে কেন?উনাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিই বা থাকতে পারে?উনি আমার কাছে কি চাইবেন?আচ্ছা আগে তো শুনি কি বলে।মনে সাহস জুগিয়ে গোধূলি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
– কি?
– সুযোগ!
– মানে?
– ভুল শুদ্রানোর সুযোগ!
….
– আমি কি সেই সুযোগটুকু পাওয়ারো যোগ্য নয়?
…..
– কি দিবি না?
– দিলাম!
গোধূলি একটু সময় নিয়ে উত্তরটা দেয়।দীপ্তের চোখে মুখে খুশির ঝলক।ও যে এতক্ষণ এই উত্তরটাই প্রত্যাশা করছিল।হাত ছেড়ে দিয়ে গোধূলিকে জড়িয়ে ধরে দীপ্ত।হঠাৎ করেই দীপ্তের এমন অপ্রত্যাশিত ছোয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে যায় গোধূলি।গোধূলি অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
– কি করছেন?
– উফস সরি!
গোধূলিকে ছেড়ে দেয় দীপ্ত।
– আসলে বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম।সরি হে!তুই কিছু মনে করিস না!
দীপ্তের কথায় কপাল কুচকায় গোধূলি।পরক্ষণেই দীপ্ত
গোধূলির দুগাল মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়!এবার গোধূলি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে দীপ্তের দিকে।দীপ্তের এমন হুটহাট স্পর্শ করাটা গোধূলির কাছে ঠিক হজম হচ্ছে না।
– সরি রে!আমি বুঝতে পারি নি থাপ্পড় গুলো এতো বেশি জুড়ে লেগে যাবে!তুই যদি সবার সামনে ওই ভাবে না যেতি তাহলে ওই বনির বাচ্চাও তোকে দেখে ওই কমেন্ট করতে পারতো না আর আমি তোকে মারতামও না।
গোধূলি ওর গাল থেকে দীপ্তের হাতগুলো সড়িয়ে দিয়ে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাস করে,
– বনি আমাকে কি বলেছিল?
গোধূলির প্রশ্নে দীপ্ত মুখটা গোমড়া করে বলে,
– তোকে হট বলেছিল!
দীপ্তের কথা শুনে গোধূলি আশ্চর্য হয়ে বলে,
– কি!সিরিয়াসলি?এই একটা শব্দের জন্য আপনি আমার কপাল ফাটিয়ে দিলেন?তাও আবার যেখানে আমার কোনো দোষই নেই।
দীপ্ত গোধূলির দিকে ওর কপাল-হাত আর গোধূলির কপাল দেখিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে,
– সব দোষই তোর!তুই যদি না যেতি তাহলে এই যে এইসবের কিছুই হতো না।
গোধূলি অবাকের চরম পর্যায়ে।ও বুঝতে পারছে না যে ওর কপাল কাটার সাথে দীপ্তের কপাল বা হাতের কি সম্পর্ক।তাই সন্দিহান চোখে দীপ্তের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমার সাথে আপনার এই সবের কি সম্পর্ক?
হকচকিয়ে যায় দীপ্ত।কথাটা ওর মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে।পরিস্থিতি সামাল দিতে দীপ্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
– ওই সব তুই বুঝবি না!
গোধূলি কিচ্ছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে দীপ্তের দিকে।তারপর কঠোর কন্ঠে বললো,
– আমার বুঝার দরকারও নাই।তবে আপনার বুঝার দরকার আছে।রায়ান ভাইয়া আমার দুলাভাই হয়।তার সাথে আমি একটু ইয়ারকি ফাজলামি করতেই পারি। এতে আপনার এত রিয়েক্ট করার মতো আমি তো কিছু দেখছি না।আর রইলো বাকি বনি?উনি বিদেশের আদব কায়দায় বড় হয়েছেন।আপনিও তো অনেক বছর বিদেশে ছিলেন আমার থেকে সেটা আপনার ভালো জানার কথা!ওই শব্দ গুলো ওইখানকার কমন ল্যাঙ্গুয়েজ। সো এতে এত রিয়েক্ট করার কিছু নাই।হতেই পারে উনি হয়তো পজিটিভ অর্থেই বলেছিলেন সেটা আপনি নেগেটিভ ভাবে নিয়েছেন?
গোধূলির কথা শুনে দীপ্ত কড়া গলায় বললো,
– থাপ্পড় খাওয়ার পর দেখছি তোর সাহস বেড়ে গেছে!মুখে মুখে তর্ক করছিস!তুই আমাকে পজেটিভ নেগেটিভ শিখাবি?
আসলেই গোধূলি আজকে দীপ্তকে ভয় পাচ্ছে না!কোনো ধরনের সংকুচতাও নেই।সাবলীল ভাবে কথা বলছে।তবে এবার দীপ্তের ধমকে গোধূলির স্বরে খানিকটা ভাটা পড়ে।গোধূলি মিনমিনে স্বরে বললো,
– ভুল তো কিছু বলি নি।
দীপ্ত ওই প্রসঙ্গে আর থাকতে চাইছে না।মানে ওর ভালো লাগছে না।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
– বাদ দে ওই সব কথা।আচ্ছা একটা কথা বল,তুই কি আমার উপর রেখে আছিস?
দীপ্তের কথা শুনে এক ঝাক অভিমান এসে ভীড় করেছে গোধূলি মনের আকাশে!গোধূলি গম্ভীরমুখে বলে,
– সবাইকে সত্যিটা বলি নি বলে এটা ভেবে নিবেন না যে আমি সবকিছু ভুলে গেছি!
গোধূলি কথাটা বলে আদিবার আশায় না থেকে নিজেই চলে গেল।দীপ্ত অবশ্য সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু গোধূলি বাঁধা দেয়।গোধূলির বলা কথাটা দীপ্তের বুকে তীরের মতো গিয়ে বিধেছে।অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো গোধূলির চলে যাওয়ার পথের দিকে।
•
সন্ধ্যার পরে রায়ানদের বাসার সবাই গোধূলিকে দেখতে আসে সাথে বনি বহ্নিও এসেছে।গোধূলি সবার সাথেই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে।ইনফ্যাক্ট বনির সাথেও।কিন্তু বনিকে দেখে আরেকজন লুচির মতো ফুলছে!না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ্য করতে!রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া করেই চলে যায়।গোধূলির রুমে আজ আদিবা থাকবে।ওকে একা রাখা ঠিক হবে না বলে আদিবা চলে এসেছে থাকবে বলে।নার্সদের আসতে বারণ করে দিয়েছে দীপ্ত! সবাই জিজ্ঞাস করায় বলে,
– বাড়িতে এত মানুষ থাকতে নার্সের কি দরকার।পরিবারের লোকজনদের থেকে কি নার্সরা বেশি যত্ন নিবে নাকি?সব ফাঁকিবাজ!রাতের বেলায় নাক ডেকে ঘুমাবে তখন তোমাদের মেয়ে আবার বাথরুমে গিয়ে পড়ে মাথা ফাটাবে।
দীপ্তের কথা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায় শুধু গোধূলি ছাড়া।রাতে ওর দেখাশোনা করতে নার্স আসবে শুনে বেশ খুশিই হয়েছিল।কিন্তু দীপ্ত গোধূলির সেই খুশিকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিলো না।ফলে মনমরা হয়েই শুয়ে পড়েছে গোধূলি।আদিবা ঘুমিয়েছে অনেকক্ষন হয়েছে কিন্তু গোধূলির চোখে ঘুম নেই।আদিবার ফোনে কল আসতেই গোধূলি ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে।আদিবা তড়িঘড়ি করে উঠে ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।আদিবা চলে যেতেই চোখ খুলে মুচকি হাসি দেয় গোধূলি।রায়ান কল দিয়েছে।রুমে কথা বললে গোধূলির ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে বলে আদিবা রুম থেকে চলে যায়।ব্যালকনিতে লাইটটা জ্বালানো বলে রুমের ভিতর থেকে আদিবাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে!গোধূলি আদিবার কথা শুনতে না পেলেও আদিবা যে রায়ানের সাথে প্রেমালাপ করছে তা ঠিকই বুঝা যাচ্ছে।বোনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল গোধূলি।পরমুহূর্তেই দেখতে পেলো ওর দিকে একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে!
#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২২
ড্রিম লাইটের আলোয় তাঁর অবয়ব দেখে বুঝা যাচ্ছে উক্ত বিশাল দেহের ছায়ামূর্তিটি কোনো পুরুষ মানুষের!গোধূলি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে।চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে।অনেকক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে গোধূলি কাঁথার ভেতর থেকে অনুমান করছে হয়তো সেই ছায়ামূর্তিটি চলে গেছে!তাই মুখের সামনে থেকে কাঁথাটা হালকা সড়িয়ে উঁকি দিতে নিলেই ওর পঞ্চআত্মা উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা!ছায়ামূর্তিটি ঠিক ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে!গোধূলি তড়িঘড়ি করে আবার কাঁথার আড়ালে মুখ লুকিয়ে জুড়ে জুড়ে দোয়া দরুদ পড়তে থাকে।পরমুহূর্তেই বুঝতে পারে কাঁথাসমেতই ওকে কেউ কোলে তুলে নিয়েছে।গোধূলি খুব ভয় পেয়ে যায়।নিজের ব্যালেন্স রাখতে গিয়ে সেই ছায়ামূর্তির গলা আঁকড়ে ধরে।বিশাল দেহের ছায়ামূর্তির কাছে গোধূলি আয়তন খুবই সামন্য!গোধূলিকে কোলে তোলে নিয়ে নির্বিকার ভাবে হেঁটে কোথাও চলে যাচ্ছে।
– ও আব্বু আম্মু তোমাদের সাথে আমার দেখা হলো না গো!আজরাইল এসে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে জান কবজ করবে বলে!তোমাদের মেয়েকে তোমরা হয়তো আর খুঁজে পাবে না গো!এই দেখো সিঁড়ি দিয়ে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে!আমাকে নিয়ে মনে হয় আকাশে উঠে গেছে এখন এইখান থেকে আমাকে ছেড়ে দিলেই আজরাইলের কার্যসিদ্ধি হয়ে যাবে।
গোধূলি নিজে নিজে বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছিল।গোধূলিকে বিড়বিড় করতে শুনে ছায়ামানব থেমে যায়।গোধূলি মুখের কাছে কান দিয়ে শুনার চেষ্টা করছিল গোধূলি কি বলছে!গোধূলির বিড়বিড় শুনে চরম হাসিতে মেতে উঠে সেই ছায়ামানব!হাসির মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে গোধূলি সারা শরীরে ঝাকি লাগছে। হাসির আওয়াজ শুনেই থমকে যায় গোধূলি।ওর কাছে হাসির আওয়াজটা খুব চেনা চেনা লাগছে।তাই সব ভয় ডর সাইডে রেখে চোখ বুজে মাথার উপর থেকে কাঁথাটা এক টানে সড়িয়ে ফেলে।পিটপিটিয়ে চোখে মাথা তুলে তাকায় উপরের দিকে।কাকে দেখছে ও?এটা যে দীপ্ত।মুহুর্তেই গোধূলির রাগ উঠে যায়।গলা স্বর উঁচু করে বলে,
– আপনি?
দীপ্ত গোধূলির দিকে বিরক্তিকর লুক দিয়ে বলে,
– তা নয় তো কি?আজরাইল?সিরিয়াসলি গোধূলি! তোর মাথায় আর অন্য কোনো কিছুর কথা এলো না?ডিরেক্ট আজরাইল!সো ফানি। হা হা হা…
গোধূলির রাগ যেনো থরথর করে বেড়ে চলেছে।ছটফট করতে করতে চোখ রাঙিয়ে বললো,
– একদম হাসবেন না বলে দিচ্ছি!আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?আমাকে কোল থেকে নামান বলছি।
দীপ্ত বিরক্তির সুরে বলল,
– হে হে নামাচ্ছি!আমারও কোনো ঠেকা পড়ে নি যে তোকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরবো!
গোধূলি চিৎকার দিয়ে বললো,
– তো নিয়েছেন কেন?আমি বলেছি আমাকে কোলে করে নিয়ে ঘুরতে?
– হুসস!আস্তে কথা বল।তোর গলা শুনতে পেয়ে আদিবাপু চলে আসবে!এই তুই এত জোরে কথা বলিস কেন রে?বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলে দীপ্ত।
– চলে আসুক!তাতে আমার কি!আর আপনি আমাকে আমার ঘর থেকে এমন চোরের মতো নিয়ে আসলেন কেন?
– তোর জন্য!
– মানে?
…..
– ধুর!এই আপনি আমাকে নামান তো!নামান বলছি।তা না হলে এখন আমি কিন্তু চেচাবো!একবার তো মাথা ফাটালেন!এখন কি পুরোপুরি মেরে ফেলার জন্য ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার প্ল্যান করছেন নাকি?
কথা বলেই জিভ কাটে গোধূলি!মুখ ফসকে বলে ফেলেছে কথাটা।
– সরি সরি সরি!আমি ওই ভাবে বলতে চাই নি!আসলে মুখ ফসকে কথাটা বেড়িয়ে গেছে!
– হে তা তো বেরুবেই!আমি যখন ভুল করেছি তার জন্য কথা তো আমাকে শুনতেই হবে!
– সরি!
মুখটা গোমড়া করে বলল গোধূলি।
দীপ্ত শীতল কণ্ঠে বলে,
– হয়েছে থাক আর সরি বলতে হবে না।আমি কিছু মনে করি নি।
– সত্যি তো!
– হুম!
– তাহলে এমন গম্ভীরমুখে বলছেন কেন?
– এমনি!
– ঠিক আছে!এখন তো অন্তত আমাকে কোল থেকে নামান!আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে!
দীপ্ত আর এক সেকেন্ডও দাঁড়িয়ে না থেকে গোধূলিকে দোলনাটায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
– অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম ঘুমাতে পারছিলি না!চাঁদহীন বা চাঁদনী রাত আর মেঘলা বা মেঘমুক্ত আকাশ দুটোই তোর খুব প্রিয়!মুর্দা কথা রাতের আকাশ দেখা তোর পুরানো অভ্যাস! ভাবলাম হয়তো সেই অভ্যাসের জেরেই ঘুম আসছে না।তুই অসুস্থ ঠিক সময় ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর খারাপ করবে।তাই ছাদে নিয়ে আসলাম যাতে আকাশ দেখার জন্য আর নির্ঘুম না থাকতে হয়!
দীপ্ত এবার কর্কশ গলায় বলে,
– হয়েছে এবার!উত্তর পেয়েছিস?শান্তি মিলেছে তোর!নে এবার এই চাঁদ তারা হীন অন্ধকার আকাশ দেখে আমাকে উদ্ধার কর!
এত্তক্ষন তো ভালো ভাবেই কথা বলছিল।আর এখন কথার ছিরি দেখো!মনে মনে বলে গোধূলি।
– তা আমি কি আপনাকে বলেছিলাম আমাকে ছাদে নিয়ে আসতে?
….
– এই এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড!আমি যে রাতে ঘুমানোর আগে ছাদে আসি এটা আপনি জানলেন কি করে?
…..
– কি হলো বলুন!
….
– এখন কেন কথা বলছেন না?এত্তক্ষন তো অনেক কথা বলছিলেন!
…..
– ধুর!
গোধূলি দীপ্তের কোনো উত্তর না পেয়ে বিরক্ত হয়ে আকাশ দেখায় মনোযোগ দেয়।অন্যদিকে আদিবা রুমে এসে গোধূলিকে দেখতে না পেয়ে ভাবে হয়তো ওয়াশরুমে গেছে।আদিবা গিয়ে দেখে গোধূলি ওয়াশরুমে যায় এই নি!হঠাৎ করেই আদিবার ছাদের কথা মনে পড়ে।
– মেয়ের সাহস দেখেছ!এই রাতের বেলায় অসুস্থ শরীর নিয়ে ছাদে চলে গেছে!বড্ড বার বেড়েছে দেখছি।এবার তো ওকে একটু বকনি দিতেই হবে!
আদিবা ছাদের উদ্দেশ্য ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।
এইদিকে গোধূলি ঘুমে টলোমলো করছে।দীপ্ত আস্তে করে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ে।তা না হলে ঘুমে ঢলে পড়ে গিয়ে নাক মুখ ভেঙ্গেচুরে আরেক কান্ড বাধাবে!
– সাজি!সা…
আদিবা ওর পুরো কথা শেষ করতে পারে নি।দীপ্তকে দেখে থেকে গিয়ে বলে,
– দীপ্ত তুই এখানে?
– হুসস!
দীপ্ত ঠোঁটের কাছে আঙ্গুল নিয়ে মাথা নাড়িয়ে আদিবাকে কথা বলতে বারন করে।আর ইশারায় বুঝায় ও ঘুমিয়ে গেছে।
গোধূলি দীপ্তের কাঁধে হেলান দিয়ে দিব্যি ঘুমাচ্ছে।এই দিকের কিছুই ওর কান অব্দি যাচ্ছে না।
– গোধূলি তো ঘুমিয়ে গেছে রে দীপ্ত। এখন ওকে আমি ঘরে নিয়ে যাব কি রে?
– কেন আমি আছি কি করতে!আমাকে কি তোমার চোখে পড়ে না!অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কথাটা বলে দীপ্ত।
– হে! কিছু বললি দীপ্ত?
দীপ্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
– না!আমি আবার কি বলব!
– না আমার মনে হলো তুই কিছু একটা বললি!যাকগে বাদ দে।দেখ তো সাজি তো ঘুমিয়ে গেছে।এই সাজি উঠ।সাজি…
আদিবাকে দীপ্ত থামিয়ে দিয়ে বলে,
– আপু থাক।ও যখন ঘুমিয়ে পরেছে তাহলে আর ডাকার দরকার নেই।আমি না হয় ঘর অব্দি দিয়ে আসি!
– হুম সেটাই ভালো হবে।তুই একটু নিয়ে যা তো ভাই আমি আসছি।
দীপ্ত গোধূলিকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।ঘর থেকে চলে আসার আগের গোধূলির ঘুমন্ত চেহেরাটার দিকে তাকিয়ে থেকে ব্যান্ডেজ করা জায়গাটায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েই চলে আসে।
চলবে…..
👉.