#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১৭
,
,
,
,
,
চোখের পাতায় কখন ঘুমের রানী এসে ভোর করলো টের পেলাম না। ঘুম ভেংগে গেলো মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে। চোখে মেলে তাকিয়ে দেখি ভাবি দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবাক হলাম সাথে সাথে নিজের কোলের দিকে তাকিয়ে দেখি আসফি ভাই এখনো আগের ন্যায় আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুজে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।লজ্জাতে চোখ দুইটা তুলতে পারলাম না
;আসফি ভাইয়ার জ্বর আছে এখনো
পেটে এখনো গরম অনুভব করায় মাথা নারালাম মানে হ্যা আছে।
;সে কি এখনো কমে নি ডাক্তার তো বললো কমে যাবে
;এতো সহজে আর যাচ্ছেনা
;তুমি কি করে জানো
;উনার জ্বর সহজে আসেনা আর আসলে একদম কাহিল করে তারপরে যায়।
;এর আগেও এসেছিলো বুঝি
;হুম তখন আমি অষ্টম শ্রেনিতে পড়ি। আর ভাইয়া ঢাকায়। তখন আমার এক্সাম চলছিলো তাই রাত জাগে পড়তে হতো তো গনিত পরিক্ষার দিনে রাত ১২ টা বা সাড়ে ১২ টার দিকে হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো ভয় অএয়ে গেছিলাম ওতো রাতে বেল বাজায়। তখন সবাই ঘুমে বড় আব্বু আর বড় আম্মু এয়াতে ঘুমের ঔষধ খান। আর ছোট আম্মু আর আব্বু কানে তুলা দিয়ে ঘুমান। আবার এদিকে ছায়া আপুও বাহিরে পড়াশুনা করতো আফরা আমার চেয়েও ২ বছরের ছোট সে ও ঘুম
;এক মিনিট সব বুঝলাম কিন্তু ছোট আম্মু আর ছোট আব্বু কানে তুলা দিয়ে ঘুমাতেন কেনো।
;সে বিরাট কাহিনী ছোট আম্মু বলেন ছোট আব্বু নাক ডাকে আর ছোট আব্বু বলে ছোট আম্মু নাক ডাকে এ নিয়ে আগে রোজ ঝগড়া হতো বাসায়।তো আলিফ ভাইয়া তখন বুদ্ধি দিয়েছিলো কানে তুলার
;এই ছেলের মাথায় আজগুবি বুদ্ধি দিয়ে ভরে থাকে।
আমি হাসলাম মৃদু।এদিকে আমাদের কথায় আসফি ভাইয়াও নড়ে উঠলেন তাই হাত চালালাম উনার চুলের ভাজে।
;তারপরে কি হয়েছিলো
;তারপরে আমি সে ভয় নিয়েই হাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দরজা খুলতে গেছিলাম। আর দরজা খুলতেই সামনে এসে পড়েছিলো লাল দুই জোড়া আখি।চমকে উঠেছিলাম পিছনে সরতে যেতেই কিসের সাথে বাধা খেয়ে পরে যেতে নিলেই ধরে ফেলেছিলেন শক্ত করে।আমি অবাক হয়েছিলাম উনার হাত দিয়ে যেনো আগুন ঝরছিলো এতোটা গরম হয়ে ছিলো সাথে বাহিরে হচ্ছিলো প্রচন্ড বর্ষা।আমাকে খাড়া করেই উনি নিজের চোখ বুঝে ফেলেছিলেন। সেদিন কিভাবে যে উনাকে রুমে নিয়ে গেছিলাম আমি জানি।সারা রাত জ্বরে পুরেছেন মাথায় পানি ঢালা থেকে সব করেছি কিছুই হয়না সকাল হতেই বড় আম্মু কে ডাকলাম। পুরো দুই সপ্তাহ জ্বরে পরে ছিলেন।
;চিন্তা হচ্ছে বুঝি
;উনার জ্বর আসলে খাওয়া দাওয়া সব উঠে যায় ঔষধ ও নেয়না এমনকি জ্বর আসলে জেদ আর রাগ টাও যেনো বেড়ে যায়।
;চিন্তা করোনা। ভাইয়াকে তুলে হাত মুখ ধুয়াই দেও আমি খাবার বিয়ে আসছি মা গেছেন হুজুরের কাছে।
;ওহ ঠিক আছে ভাবি
ভাবি যেতেই আসফি ভাইয়ার কন্ঠ কানে এলো
;সব টা বললি না কেন
;আপনি জেগে আছেন
;আগে আমার কথার উত্তর দে
;কি।বলিনাই
;এই যে সেদিন রাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলাম
;ফ্রেশ হবেন উঠেন
;উহু ভালো লাগছে এই ভাবে থাকতে
;উঠুন ফ্রেশ হয়ে এসে আবার শুবেন
;তখন তুই পালাবি
উনার বাচ্চাদের মতো বলা কথাটা কানে শ্রবন হতেই হাসলাম। যার সাথে মনের অজান্তেই বাধা পরে গেছি তার থেকে কি চাইলেও পালানো সম্ভব।সম্ভব হলে কি দিবে এই লোকটা নিজের থেকে আড়াল করতে ঠিক কোন না কোন মায়ায় আবার বেধে রাখবে
;যাবোনা বড় আম্মু নাই। উনি আসলে তারপরে
;তা জানিনা কিন্তু আজকে রাতে তোকে আমার কাছে চাই
;পাগল নাকি কেউ জানলে পারে কোলংকারি হয়ে যাবে এমনিতে ভাবি আমাদের এই অবস্থায় দেখে গেছে
;আমি কিছু জানিনা যদি তুই না আসিস আমি কালকে এই অবস্থায় ঢাকা ফিরে যাবো
আমি জবাব না দিয়ে উনাকে তুললাম। এখনো উনাকে যতোই বুঝানো যাক না কেন উনি বুঝবেন না পাগলামী করবেন।
;যান ভিতর থেকে ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসি
ভাইয়া যেতে নিলেই দেখি উনার মাথা ঘুরে উঠায় উনি দেওয়াল চেপে ধরে। আমি তাড়াতাড়ি উনার কাছে এসে উনার হার ধরে ফেলি
;আজকাল দেখছি আমাকে ছোয়ার বাহানা খুজছিস ব্যাপার কি রে
কিছু বললাম না রাগী চোখে তাকিয়ে উনাকে ভিতর দিয়ে বাহিরে এলাম।ভাবি কে খুজতেই দেখলাম ভাইয়া কোলে করে ভাবিকে নিয়ে যাচ্ছে।নিশ্বাস টা ভারি হয়ে এলো।দ্রুত পায়ে কিচেনের দিকে অগ্রসর হলাম। হাত পা কাপছে আমার যতোই চেষ্টা করছি পারছিনা। উনাকে দেখলেন তাল গোল পেকে যায়।কিন্তু এটা অনুচিত আমি বিবাহিত এটা আমার জন্য পাপ। তবুও কেনো এখনো তাকে দেখলেই মন টা হুহু করে উঠে কেন অদ্ভুদ যন্ত্রণা হয়।
নিজেকে সামলায়ে চুলোতে পানি বসালাম। ঝাল করে নুডুলস করবো জ্বর হলে ঝাল খেতে খারাপ লাগেনা। সাথে দুই মগ কফি নিয়ে গেলাম উনার রুমে। রুমে আসতেই অবাক হয়ে গেলাম উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিজা চুল ঝারছে।পরনে শুধুমাত্র টাওজার। গলা শুকিয়ে এলো আমার গলা বেয়ে পানি যখন বুক পেরিয়ে লাভিতে এসে ঠায় নিচ্ছে নিশ্বাস যেনো নিজে নিজে বেড়ে যাচ্ছে।সরিয়ে ফেললাম চোখ। পিছনে মুরে রাগী কন্ঠে বলে উঠলাম
;এমনিতেই জ্বর কমার নাম নেই তার উপরে গোসল করার কোন কারন আছে । চুল মুছেন ভালো করে
;তো ওদিকে ফিরে কথা বলছিস কেন আমার দিকে তাকাতে কি সমস্যা আমার বডি এতোটাও খারাপ না যে তাকানো যাবেনা
আমি কি বলবো ভেবে ফেলাম না ঠোঁট বার বার শুকিয়ে আসছে আর সেটা জিহ্বা দিয়ে ভিজানোর অপ্রাণ চেষ্টা করছি কে বুঝায় এই মানুষ রুপি দানব কে যে উনার এই উদাম শরীর থেকে আমার জান যাচ্ছে ধুর ভালো লাগেনা।
;কি রে তাকা আমার দিকে
হঠাৎ ঘাড়ে পানি পড়ায় শিহরে উঠি। হাত টা কেপে উঠায় ট্রে টা পড়ে যেতে নিলেই উনি আমার হাগের উপর দিয়ে নিজের হাত রাখলেন যার কারনে আমার পিঠ যেয়ে ঠেকলো উনার শক্ত বুকে।
;এতো কাপছিস কেন শ্যামাঙ্গিনী এইটুকুতেই নিশ্বাস আটকে আসলো।কাপাকাপি শুরু হয়ে গেলো।রেডি হয়ে নে শ্যামাঙ্গিনী এখন থেকে রোজ আমার এই সব পাগলামী সহ্য করতে হবে তুই নিজে বেছে নিয়েছিস এই লজ্জা। আমি তো দূরে সরে এসেছিলাম ই তুই কেন তোর অশ্রু দ্বারা আমাকে নিজের কাছে আনলি। কেন বুঝালি তুই ভালো নেই আমাকে ছাড়া কেন রাতে আসতি বলেছিলাম আমি বলি নি তাহলে এখন আমার পাগলামীও না বলেই আসবে সহ্য কর।
হঠাৎ ঘাড়ে উনার ঠোঁট ছোয়াতেই ট্রে ছেড়ে উনার দিকে ফিরে উনার খালি বুকেই মাথা রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করলাম।
__________
আসফি ভাইয়া সন্ধ্যার দিকে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছেন এখনো উঠেন নি। আমি সবার সাথে বসেছি খাবার খেতে। এমন সময় বড় আম্মু বড় আব্বুর উদ্দেশ্য বলে উঠলেন
;হ্যা গো ছেলে টা তো বড় হয়েছে।এবার তো বিয়ে দিতে হবে তাকে তাইনা। ছোট টা বিয়ে করে বাবা ও হতে চলেছে আর এদিকে বড় টাকে বিয়ের কথা বলাই যায় না। এবার তো একটা কিছু করো
;ওর বিয়ে ওই করে নিবে ছোট বাচ্চা না ওই। ওর যাকে পছন্দ হবে ওই তাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে
;এহ বললেই হলো নাকি ছোট আ তো নিজের মন মতোই ঘরের লক্ষি নিয়ে এলো।অবশ্য খারাপ আনেনি। ভালো টাই বেছে এনেছে।(আফরা ভাবির মাথায় হাত দিয়ে)কিন্তু তাই বলে যে আসফিও তাই করবে সেটার কোন কথা আছে।যদি এমন সেমন মেয়ে নিয়ে আসে।মেয়ে ভালো হলে তো হবেনা মেয়ের পরিবার ও তো দেখতে হবে। যদি মেয়ের মায়ের চরিত্র ভালো না হয় তখন।কথায় আছে মেয়েরা মায়ের ছায়া হয়।না বাবা আমি আমার হিরার টুকরা জন্য যেমন তেমন বউ আনবো নাকি।
আমি মাথা নিচু করেই কোন মতো প্লেটের ভাত শেষ করে হাত ধুয়ে রুমে এলাম। দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম চোখ বন্ধ করে।কানে খাকি বাজছে বড় আম্মুর কথাটা।আসলেই কি আমি আমার মায়ের মতো হয়তো সেজন্যই হয়তো বড় আম্মু বললো।আসফি ভাইয়া লাক্ষে একটা উনার পাশে সত্যি আমাকে মানাবে না। আর বড় আম্মু কোন দিন মানবেনা বড় আম্মু যে ওগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন সেটা আমি জানি।
;ভাবি আরু কে ওইভাবে বলাটা উচিৎ হলো
;তিতা হলেও কথা গুলো সত্যি ছিলো।আমি এমন কোন মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ বানাবোনা যার মা কি না তার স্বামিকে বাচ্চাকে ফেলে অন্য কারো হাত ধরে চলে গেছে ভবিষ্যতে ওই ও এমন করবেনা তার কি প্রমান। রক্ত একদিন না একদিন কথা বলেই যায় হোক আমি আসফি কে ম্যাডিসিন দিয়ে আসি,,,,,,,,
;ওকে বললাম আমি রাতে ওকে আমার রুমে চায় কিন্তু ম্যাডামের এখনো আসার নাম গন্ধই নাই। আল্লাহ জানে কি করছে।
;উনি কি জাগনা আছেন। নিশ্চয় এতোক্ষণে রেগে গাল লাল করে ফেলেছেন। কিন্তু কি করবো বড় আম্মু যে কোন দিন ও আমাদের মেনে নিবেনা।কি দরকার মায়া বারানোর।। আচ্ছা একটাবার কি দেখে আসবো।নাহ থাক বড় আম্মু দেখে ফেললে
আসফির চোখ জোড়া আর বেশিক্ষন খুলা থাকলোনা ঔষধের ইফেক্ট এ ঘুমিয়ে গেলো একরাশ রাগ নিয়ে। এদিকে আয়রার চোখে ঘুম টা যেনো আজ ধরা দিলোনা। না জানি কি হতে চলেছে কি নিয়ে আসতে চলেছে পরের দিনের আলো।
চলবে!#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১৮
,
,
,
,
২ দিন পরে সকালে,,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে।ধরফরায়ে উঠে বসলাম আমি।আসফি ভাইয়া এতো সকালে আমার ঘরে তাড়াতাড়ি দৃষ্টি দিলাম দরজার দিকে নাহ দরজা লাগানোই আছে।
;আপনি এখানে
;কেন অন্য কাউকে আশা করছিলি বুঝি
;আমি সেটা মিন করিনি আর আপনি এই অবস্থায় কেনো বিছানা ছেড়ে উঠলেন
;বাহ মনে পরলো বুঝি ২ দিনে পরে আমি অসুস্থ।
;এটা ভুলার বিষয় না
;ওহ তাই মনে রেখে আমাকে ধন্য করে দিলেন তো ম্যাম।সেজন্য দুই দিন হলো না একটাবার দেখতে এসেছিস না জিজ্ঞেস করেছিস কেমন আছি
কল দিলেও রিসিভ ও করতিনা
;বড় আম্মু ছোট আম্মু এমনকি ভাবিও আপনার খেয়াল রাখার জন্য আছে সেখানে আবার আমি যেয়ে কি করবো তাই যায়নি
;হুম তাই যদি মরেও যায় তবুও আসিস না যেনো বাড়ির সবাই তো আছে তুই এসে কি করবি তাইনা
আসফি ভাই রেগে চেয়ার টাকে লাত্থি মেরে সেখান থেকে চলে গেলো।এতোক্ষণে আটকা রাখা পানি আর আটকে রাখতে পারলাম না। কেন এতো কষ্ট ভালোবাসায় কেন নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের আসক্তি। এখানে থাকলেই আমি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবো আমি আজকেই ঢাকা চলে যাবো।
______
;-চোখের সামনে ফোনের স্ক্রীনে জ্বল জ্বল করছে ”love” নামটা। স্পষ্ট দেখাচ্ছে অপরদিকে কল যাচ্ছে কিন্তু সামনের মানুষ টা রিসিভ করছেনা হয়তো রিসিভ করতে চায়ছেনা কল কেটে উপরে স্পষ্ট লিখা উঠছে ৯০ বার কল দেওয়া হয়েছে।
কি এমন দোষ করেছি আরহাম ভাই। যে একটাবার আমার ফোন রিসিভ অব্দি করতে আপনার এতো সমস্যা কেন এতো ঘৃণা। আর যেয়ে নিতে পারছিনা এই ঘৃণার দায়।
পুনরায় নাম্বারে কল দিতেই এবার রিসিভ হলো তিন বার রিং হতেই। ওই পাশ থেকে আরহাম এর ভরাট কন্ঠা স্বর শুনে যেনো শিতল হাওয়া বেয়ে গেলো আরিফার শীরদার বেয়ে
;হ্যালো
;কে বলছেন
;আমি আরিফা
;তোর সাহস হয় কি করে আমাকে কল দেওয়ার
;প্লিজ কল কাটবেন না শেষ বার আপনার সাথে দেখা করতে চায় এই শেষ আর কোন দিন আপনাকে আমার মুখ দেখতে হবেনা আরহাম ভাই কোন দিন ও না
“কোন দিন আপনাকে আমার মুখ দেখতে হবে না আরহাম ভাই কোন দিন ও না” কথাটা যেনো আরহামের মস্তিষ্কে গেথে গেলো। অসম্ভব একটা শূণ্যতা টের পেলো সে তার বুক পাজরে
;কখন দেখা করবি
;আজ বিকালে আপনার বাড়ির সামনের পার্কে
;ঠিক আছে।।
————–
;কই যাচ্ছিস আরু
ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিবো এমন সময় বড় আম্মুর ডাকে থেমে গেলাম।
;ঢাকা ফিরে যাচ্ছি বড় আম্মু ভার্সিটিতে এক্সাম শুরু হবে কয়েকদিন না যাওয়াই অনেক গুলো ক্লাস মিস হয়ে গেছে ওগুলো নোট নিতে হবে। অনেক পড়া বাকি পরে গেছে।
;ইশ আমি কি বেশি কঠোর হয়ে পড়েছিলাম ৩ দিন এ মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে চোখের নিচেও কালি পরে গেছে কিন্তু কি করবো আমার ছেলের ভবিষ্যতটাতো নষ্ট করতে পারবোনা (মনে মনে)
;কিছুক্ষন পরে যা তোর বড় আব্বু আসুক। উনার সাথে যাস একা একা যেতে হবেনা
;এতিম কে একাই চলতে হয় বড় কাকী তাদের নিজের পথ নিজেকেই পার করতে হয়। এমনিতে কাকাই আর আপনার ছোট থেকে কম তো করেন নি এখন বাকিটা আমাকে একাই চলতে হবে।
বড় আম্মুর জায়গায় এই প্রথম কাকী শব্দটা যেনো পছন্দ হলোনা উনার চোখ দুইটাই অজান্তে পানি এলো। যতোই বলুক ছোট বেলা থেকে আরিফা আর ছায়ার চেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন উনি আয়রা কে। তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠলেন
;চুপচাও বস বেশি কথা পছন্দ না আমার তোর বড় আব্বু আসে পরবে একা গেছিস শুনলে আমার সাথে রাগারাগী করবে।
আমি আর কথা বারালাম না চুপচাপ বসে পরলাম সোফায়। বড় আম্মুও চলে গেলো রান্না ঘরে।চোখ পরলো টেবিলের উপর মেয়েদের ছবির উপর। ধ্বক করে উঠলো বুকটা বুকটা কেমন জানি কেপে উঠলো হাত পা অসম্ভব ভাবে কাপছে।মাথার উপরে ফ্যান চলার শর্তেও যেনো দরদর করে ঘাম ঝরছে।
;কই যাচ্ছিস
পিছন থেকে আসফি ভাইয়ার কন্ঠ শুনে যেনো চোখের অশ্রু বাধ মানছেনা এ কেমন অসহয়তা। কেন এমন হচ্ছে। কি হতো যদি আমার মা আমাকে ছেড়ে না যেতো তাহলে হয়তো আজকে আসফি ভাইয় আমার হতো
হঠাৎ হাতে টান পরায় নিজেকে সামলাতে পারিনা।আসফি ভাইয়া তার সামনে সোজা করে দাড় করায়।দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে
;কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি কেন এমন করছিস হ্যা কই যাচ্ছিস তুই
;আসতে বড় আম্মু রান্না ঘরেই আছে প্লিজ দূরে সরেন
;আমি ভয় পায়না কাউকে দেখে
;কিন্তু আমি পায়।এই বাড়ি আমার মালিক মালকিন আর এই বাড়ির আশ্রিতা আমি। আমাকে ভয়ে থাকতে হবে।
আসফি ভাইয়া নিজের রাগ আর ধরে রাখতে পারলেন না গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেরে দিলেন ২ দিন ধরে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া আর ঘুম না হওয়াই আগে থেকেই দুর্বল ছিলাম তাই থাপ্পড়ের জোর সহ্য করতে না পারায় পরে যায় গাল টা জ্বালা করছে প্রচুর ঠোঁট এর কোণাও জ্বলছে হয়তো কেটে গেছে।
;কি হয়েছে মা তুই নিচে বসে আছিস কেন এই আসফি কি হয়েছে
বড় আব্বুর কন্ঠ শুনে ঘাবড়ে গেলাম। আমি ভাবিনি এই সময় বড় আব্বু চলে আসবে। বড় আব্বুর আওয়াজে বড় আম্মুও চলে এসেছে
;আসফি কি হয়েছে ওর গালে দাগ কেন তুই ওর গায়ে হাত তুলেছিস।হ্যা এতো বড় স্পর্ধা কে দিলো তোকে
;আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো তোমার ভাসতি কে জিজ্ঞেস করো
;নাহ নাহ কাকাই আসফি ভাইয়া কেনো আমাকে মারতে যাবে আসলে টেবিলের সাথে বেধে পড়ে গেছি
আমার মুখে কাকাই শব্দ টা শুনে বড় আব্বুর চোখ মুখে আলাদা বিস্ময় দেখলাম সে বিস্ময় চেহারা নিয়ে বলে উঠলেন
;কাকাই!
;খালি কাকাই শব্দ শুনেই এমন রিয়েক্ট করছো তাহলে এর কিছু মহূর্ত আগে ওই যা বলেছে সেটা শুনে কি বলবা
;আসফি ভাইয়া প্লিজ আপনি রুমে যান আপনার জ্বর এখনো কমেনি
আসফি ভাইয়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে।আমি চুপ হয়ে গেলাম কিন্তু এবার বড় আম্মু বলে উঠলো
;কি এমন বলেছে ওই যে ওকে তুই মেরেছিস
;উনি এই বাড়ির আশ্রিতা আর বাড়িটা উনার মালিক মালকিনের (বড় আব্বু আর বড় আম্মু)
আমি মাথা নিচু করে নিলাম বুঝলাম বড় আব্বুর সে করুন দৃষ্টি কান্না পাচ্ছে আমার কিন্তু সত্যি তো এটাই
;আরু মা
বড় আব্বুর করুন কন্ঠ কানে বারি খেতেই চোখ জোড়া পেয়ে অশ্রু আপন মনেই গড়াতে শুরু করলো
;কাকাই
;কি এমন পাপ করলাম রে যে আমার ছোট আরু আমাকে এখন আর বড় আব্বু ডাকছে না এতোটা পর হয়ে গেলাম যে বড় আব্বু ডাকতে ঘৃণা হচ্ছে
;এমা কি বলছেন এসব আপনাকে কেনো ঘৃণা করতে যাবো প্লিজ এইভাবে বলেন না
;পর হয়ে গেছি তাই না রে
;আপনারা ছাড়া আর কে বা আছে আমার আপনারাই তো মানুষ করছেন আপনি আর বড় কাকি যদি না কোলে তুলে নিতেন তাহলে হয়তো এতোদিনে(তাচ্ছিল্যে হেসে),নাহলে যে মহিলা আপনার ভাইকে ছেড়ে চলে গেছে তেমন এক চরিত্র হীন মহিলার সন্তান কে বুকে পিঠে করে মানুষ করলেন।আপনাদের জায়গায় অন্য কেউ হলে নির্ঘাত গলা টিপে মেরেই ফেলতো অবশ্য সেটা করলেই ঠিক হতো।
কথা বলতে বলতে কখন চোখের দুই পাতা বুজে এলো টের পেলাম না। যখন চোখের দুইপাতা খুললাম তখন………..
চলবে!