#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক
৩.
“এইরে না ধরলে তো এখনই ধপাস!কোন খেয়ালে ছিলে বলো তো তুমি?আমাকে মিস করছিলে বুঝি?”
আবির আমার কোমড় আগের মতো ধরে রাখা অবস্থায়ই আমাকে কথাটা বললো।আমি এখনো ওর শার্টের কলার টেনে ড্যাব ড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।আবির আমাকে ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গি করে আবার ধরে ফেললো আর হাসতে লাগলো।আমি চোখ বন্ধ করে মুখে হাত দিয়ে ওমনভাবেই আছি এখনও।আবির এবার এক ঝটকায় আমাকে দাড় করিয়ে দেয়।আমি শাড়ি ঠিকঠাক করে দাড়িয়ে আবিরের উদ্দেশ্য বলি,
“কেমন আছো আবির? ”
আবির আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত মাপতে শুরু করে। তারপর অবাক কন্ঠে বলে,
“ওয়াও কি হট আর সেক্সি লাগছো তুমি আজ বেবি..আমি জানতাম মেয়েদের শাড়ি পরলে হট লাগে কিন্তু কোনো মেয়েকে এতো হট লাগতে দেখিনি এর আগে..”
আমি আবিরের ভাষায় একটুও অবাক হলাম না। কারণ ও যে এমন তা আমি জানতাম।তবে আমার এসব কথাবার্তায় জড়তায় একদম চুপসে গেলাম।এর আগে কখনো কেউ আমাকে এমনভাবে বলেনি।আমি একটু কড়া গলায় আবিরকে বললাম,
“ভাষা ঠিক করো আবির।আমার সাথে এমন ভাষায় কথা বলবে না।”
আবির আমার কথায় শরীর কাপিয়ে হো হো করে হেসে দিল।হাসি থামিয়ে আস্থার স্বরে বললো,
“উফ্ রিলাক্স ইশু আমি তো মজা করছিলাম।তুমিও না এতো বেশি সিরিয়াস হয়ে যাও তা আর কি বলবো।যায়হোক তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে।কিউট লাগছে…”
আমি কিছু বললাম না পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললাম,
“খালামণিও এসেছে?”
আবির আমার দিকে একটু এগিয়ে এলো তারপর আমার কাঁধের চুলগুলো পিছনে সরিয়ে দিলো আবির আমার কাঁধে হাত দেওয়ার সাথে সাথে আমি একটু পিছনের দিকে সরে গেলাম।তা দেখে আবির বাঁকা হাসলো আর বললো,
” যতই দূরে সরো তুমি আবিরে রাঙাবো তোমায় আমিই!আম্মু এসেছে..ইভেন সবাই এসেছে..”
আমি আবিরের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আবির কথাটা বলে চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
“বাই দা ওয়ে তোমার পেট আর কোমর কিন্তু একটু বেশিই নরম..আই লাইক ইট!”
আমি আবিরের দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আবির আমার কানের ধার থেকে একটু নিচে আমার গলার কাছে গিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো।আবিরের এমন কাজে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। আমি সরে এসে আবিরের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।তা দেখে আবির বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো তারপর পকেটে হাত দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।
আমি চোখ ভরা বিরক্তি নিয়ে আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আবির আমার দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই।আমার আম্মুর খালাতো বোনের ছেলে।তবে সম্পর্ক ভালো হওয়ায় যোগাযোগ আছে খুব ভালোই।আবির বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে তাও দত্তক নেওয়া।বিয়ের পর খালামণির বাচ্চা না হওয়ায় আবিরকে দত্তক নেয় খালু।ছেলেটা বড্ড ঘাড় ত্যাড়া।দেখতে বেশ ভালোই।আবিরকে আমার ভালো না লাগলেও আবিরের একটা গুণ আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগে আর তা হলো ওর আঁকার হাত অসাধারণ। বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছে ও।সবাই বলে ও চারুকারু বিভাগের জন্য পারফেক্ট কিন্তু ও বলে এটা নাকি ওর সখ আর ও সখকে প্রফেশন হিসেবে নিতে চায় না।
আমি ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে সামনে তাকালাম আর সাথে সাথেই আমার পিলে চমকে উঠলো।সামনে রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে পর্বভাই।আমার ঠিক সামনে সে দাড়িয়ে আছে আমাকে ফিরে তাকাতে দেখে পর্বভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না তাই না?ছেলে দেখলেই তার কলে ঝাপিয়ে পরতে ইচ্ছে করে না?খুব ভালো লাগে না যখন ছেলেরা পেটে কোমরে ছুঁয়ে দেয়? ”
আমি কোনো কথা বলছিনা। কথাগুলো যেন আমার বুকে বিষাক্ত তীরের মতো গেঁথে যাচ্ছে।মাথা নিচু করে আছি চোখ থেকে আপনাআপনিই পানি পরতে লাগলো।ডান হাত দিয়ে পানিটা মুছে নিলাম একবার। পর্বভাই আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে বললো,
“ভালোই তো চলছিল পাবলিক প্লেসে রোম্যান্স! ফাইভ স্টার হোটেলে একটা রুম বুক করে দিই কি বলিস?”
আমি কোনো কথা বলার সাহস পাচ্ছি না চুপচাপ দাড়িয়ে দাড়িয়ে পর্বভাইয়ে কথা শুনছি। আমাকে কাঁদতে দেখে চাচিমণি আমাদের দিকে এগিয়ে আসে বলে,
“কি হয়েছে ইশু তুই কাঁদছিস কেন?পর্ব তুই কিছু বলেছিস ইশুকে?
পর্বভাই আমার হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
” এখন কিছু হয়নি তবে হবে।তোমরা যাও নাফিসার গায়ে হলুদে ইশু যাবে না হলুদে”
আমি চমকে উঠলাম শেষ পর্যন্ত নিজের বোনের গায়ে হলুদেও যেতে পারবো না।আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“পর্বভাই প্লিজ এমন করো না আপু গায়ে হলুদ আমি যাবো না…?প্লিজ পর্বভাই ছেড়ে দাও এমন করো না”
পর্বভাই আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে সামনের দিকে যেতে যেতে বললো,
“আর একটা কথা শুনতে চাই না আমি।চোখের থেকেও যেন আর একফোঁটা পানি না পরে।চোখ মোছ”
ভেতরে যেতেই আচমকা আবির আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় হাতে একটা আপেল আপেলে ছোট ছোট কামড় দিচ্ছে আর এক ভ্রু উঁচু করে পর্বভাইয়ের ধরে থাকা আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছে।আপেলটা পাশের বিনে ফেলে পর্বভাইয়ের একটু কাছে এসে দাঁড়ায় বলে,
“আরে এপিসোড ব্রো! কি অবস্থা? এই রকম ভরা মজলিসে তুমি আমার ইশুর হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছো। দিস ইজ নট ফেয়ার…”
নিচের ঠোঁট উল্টে বলে আবির।পর্বভাই চোয়াল শক্ত করে আবিরের উদ্দেশ্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আমাকে এই নামে ডাকবেনা বলেছি না?আর ও তোমার ইশু না..সামনে থেকে সরো এবার”
আবির পকেটে হাত দিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
“সেটা তো সময় বলে দেবে যে ও কার পাখি?তোমার না আমার?”
পর্বভাই কোনো কথা না বলে আবিরের ডান বাহুতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে আবির পর্বভাইয়ের কলার চেপে ধরে।পর্বভাই রক্ত চক্ষু নিয়ে আবিরের ধরে থাকা কলারের দিকে তাকাতেই আবির কলার ছেড়ে দেয় বাঁকা হেসে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।পর্বভাই আমাকে টানতে টানতে আমার রুমে নিয়ে যায়। চাচিমণি আমাদের পিছু পিছু আসছে আর আমাকে ছেড়ে দিতে বলছে কিন্তু পর্বভাই সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন। রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাথরুমে নিয়ে যায়।আমার বুক থেকে আঁচল টান দিয়ে সরিয়ে দেয়।কাঁধে কাছে পিন দিয়ে রাখায় পিটটা ভেঙে যায়।কাঁধটাও বেশ খানিকটা কেটে যায়।আমি বুকে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
“পর্বভাই… ”
পর্বভাই আমার ডান হাত মুচড়ে ধরে আর তার ডান হাত আমার পেটে রাখে তারপর বলতে লাগে,
“এখানে ধরে ছিল না?এখন কেন বুকে হাত দিচ্ছিস কেন তুই?আবির যখন কাছে আসলো তখন তো ওকে কিছু বললি না আর আমি আসলেই বুকে হাত দিচ্ছিস কেন ইশুপাখি?”
কথাগুলো বলতে বলতে আমার কপালে নিজের কপাল ঠেকালো পর্বভাই আমি চোখ বন্ধ করে চোখের জল ফেলছি।পর্বভাই আমার পেট থেকে হাত সরিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিলো বললো,
“আমার সামনে না কাঁদলে হয় না ইশুপাখি?একটু বকা দেবো তারও কোনো উপায় নেয় ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না শুরু করে দিস।তোর কান্না যে আমার সহ্য হয় না!”
আমি নাক টানতে টানতে বললাম,
“আমি মটেও ফ্যাস ফ্যাস করে কাঁদি না!”
আমার কথায় পর্বভাই হালকা হাসলো।কপাল থেকে কপাল সরিয়ে আঁচলটা আমার বুকে দিয়ে দিলো আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো,
“চেঞ্জ করে নে হলুদ বোধহয় এতক্ষণে শেষ তুই চেঞ্জ করে খেয়ে শুয়ে পর।আমি তোর খাবার আনছি..”
#চলবে….
(