কিচিরমিচির পর্ব -০২

#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক
#পর্ব_০২(কপি করা নিষেধ)

“ইশু! ইশু! এখনও ঘুম থেকে উঠিসনি? তাড়াতাড়ি দরজা খোল..এই ইশু উঠেছিস?”

ঘুমের মধ্যে দরজা ধাক্কা ধাক্কির আওয়াজে ধরফর করে লাফিয়ে উঠলাম।হার্ট এখনই লাফাতে লাফাতে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়েছে।বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলাম তারপর কান খাঁড়া করে বোঝার চেষ্টা করলাম বাইরে কে দাড়িয়ে আছে।ঘুমের মধ্যে তেমন একটা ভালো ভাবে বুঝতে পারিনি বাইরে কে ডাকছে।
এর মধ্যে পর্বভাই আরও কয়েকটা ডাক দিতেই আমি বিছানা থেকে নেমে লাফিয়ে লাফিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।

পর্বভাই একটা খয়েরী রঙের ফুলহাতা গেঞ্জি পরে তবে হাতাটা কনুই এর একটু নিচে ফোল্ড করা আর সাথে একটা কালো ট্রাউজার। বড় বড় কোঁকড়া চুলগুলোর কিছু চুল চোখের সামনে এসে পরেছে।এই চোখের সামনে পরে থাকা চুলগুলোই তার সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ করে দেয়। সকাল সকাল পর্বভাইয়ের এত সুন্দর লুক দেখে ছোটখাটো একটা ক্রাশ খেয়ে গেলাম।

পর্বভাই ট্রাউজারের পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।চোখ বড় বড় করে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে।পর্বভাইয়ের এমনভাবে তাকানো দেখে আমি চোখ ছোট ছোট করে নিজের দিকে তাকালাম না সব তো ঠিকই আছে।তাহলে? আমি মাথা তুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই পর্বভাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে গেল।ঢুকেই ওমনি ধুপ করে আমার বিছানায় শুয়ে পরলো। আমি বিছানার সামনে গিয়ে একটু চেচিয়ে বললাম,

“পর্বভাই..”

পর্বভাই আর কিছু বলতে দিলো না আমায় পাশে থাকা বালিশটা মুখের উপর দিয়ে ডানপাশ ফিরতে ফিরতে বললো,

“যা ইশুপাখি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি এখন ঘুমাবো বিরক্ত করবি না একদম তা না হলে গায়ে হলুদে যাওয়া ক্যান্সেল করে দিবো আর এখানে বসিয়ে আমার চুল টানাবো তখন বুঝবি কেমন লাগে..!”

আমি আর কিছু না বলায় শ্রেয় মনে করলাম পর্বভাই এমন জেদী মানুষ দেখা গেল সত্যি সত্যি আমার গায়ে হলুদে যাওয়া ক্যান্সেল করে দিল।আমি একটা ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলাম,

” আপনি যাবেন না গায়ে হলুদে?”

উনি মুখ থেকে বালিশটা সরিয়ে ঘাড়টা হালকা উঠিয়ে আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো। আমি সেখানে দাড়িয়ে থাকার সাহস পেলাম না যেই পিছন ফিরে ওয়ারুমের দিকে দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই পর্বভাই বললো,

“দাড়া..!”

একটা শব্দ দাড়া আর আমি যেন স্টাচু। শুকনো ঢোক গিলে পিছনে ফিরলাম পর্বভাই আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

” গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কি পরবি তুই?”

আমি চোখ পিট পিট করে তাকালাম পর্বভাইয়ের দিকে তারপর বললাম,

“হলুদ শাড়ি পরবো সবাই যা পরে তাই পরবো ”

পর্বভাই শোয়া থেকে উঠে বসলেন আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন।আমি তার পাশে গিয়ে বসতেই সে আমার এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে আদুরে গলায় বললেন,

“দরকার নেই..!”

আমি চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বললাম,

“কি দরকার নেই..?”

পর্বভাই আমার দিকে একটু এগিয়ে এলেন আমার চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললেন,

“সবাই যা পরবে তা পরার দরকার নেই সবাই আর আমার ইশুপাখি কি একই?”

আমি ডানে বামে মাথা নাড়ালাম।পর্বভাই আমার বাহু টেনে আমাকে নিজের বুকে নিয়ে দুইবাহু দিয়ে আবদ্ধ করে নিলেন।ইদানীং পর্বভাই আমাকে অন্যভাবে ট্রিট করছে বুঝতে পারছি।কিন্তু নিজের চাচাতো ভাইয়ের সাথে এমন সম্পর্ক কি আমাদের পরিবার মেনে নেবে?কিজানি? পরিবারের সবাই পর্বভাইয়ের আচারণ দেখছে কিন্তু তবু কিছু বলছে না কেন কে জানে?

পর্বভাই আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“জানিস তো ইশুপাখি তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস কিছুদিন পর তো মাপাখি হয়ে যাবি তুই”

পর্বভাইয়ের কথায় বেশ লজ্জা পেলাম আমি।লোকটা একদম অসভ্য ঠোঁট কাটা।এমনিতেই পর্বভাইয়ার বুকে এমন করে থাকতে বেশ লজ্জা লাগছে তারউপর আবার এসব নির্লজ্জ কথাবার্তা।আমি বেশ আমতা আমতা করে বললাম,

“আপ…আপনি ঘুমাবেন না পর্বভাই?”

পর্বভাই আমাকে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে আমার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“কেন কেন আমার ইশুপাখি কি লজ্জা পাচ্ছে?আমার বুকের মধ্যে থাকতে?কিরে ইশুপাখি তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?”

আমার গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হচ্ছে না কি বলবো বুঝতে পারছিনা আমার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে পর্বভাই আমার মাথায় একটা চুমু খেয়ে একটু দূরে গিয়ে বসলেন।আমি তার বাহু থেকে ছাড়া পেয়ে তড়িঘড়ি উঠে দাড়ালাম বিছানা থেকে।ধীর স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,

“আমি তাহলে কি পরবো ভাইয়া?”

পর্বভাই আমার দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকালো জিজ্ঞেস করলো,

“কে তোর ভাইয়া?”

আমি নির্বিকারভাবে বললাম,

“আপনি..!”

পর্বভাই বিছানা থেকে উঠে আমার সামনে এসে দাড়ালো জিজ্ঞেস করলো,

“তোর আপন মায়ের পেটের ভাই আমি?”

আমি কোনোকিছু না বুঝেই ঝড়ের গতিতে মাথা ডানেবামে নাড়ালাম।তা দেখে পর্বভাই আবার বললো,

“তাহলে ভাই ডাকিস কেন?”

আমি একটা শ্বাস নিয়ে একদমে বললাম,

“ভাইয়াকে তো ভাইয়ায় ডাকবো না?নাকি সাইয়া ডাকবো?”

আমার কথা শুনে পর্বভাই দিলো একটা ধমক আমি চুপচাপ দাড়িয়ে হজমের বড়ি ছাড়ায় সকাল সকাল খালি পেটে তার কথা হজম করছি।পর্বভাই বেশ জোরেই বলে উঠলো,

“চুপ..!এসব ভাষা কোথা থেকে শিখছিস তুই?এটা কোন ধরনের ভাষা?এগুলো কার কাছ থেকে শিখেছিস তুই?

আমি কোনো কথা বলছিনা। পর্বভাই নিজের বকাবকি থামিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলেন আবার শুতে শুতে বললেন,

” তুই আমার পছন্দ করা নীল শাড়ি আর নীল চুড়ি পরবি..আমি নিজে পছন্দ করে কিনে এনেছি।যা এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে। তুই রেডি হয়ে আমাকে ডাক দিবি।ও আর একটা কথা আবিরের থেকে দূরে থাকবি বুঝেছিস?যা এবার..!”

কিহ্ সবাই হলুদ শাড়ি পরবে আর আমি কিনা নীল শাড়ি পরবো না না কিছুতেই না এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমি একবুক সাহস নিয়ে পর্বভাইয়ের উদ্দেশ্য বললাম,

“কিছুতেই না আমি নীল শাড়ি পরবো না আমি হলুদ শাড়ি পরবো।সবাই যা পরবে তাই পরবো।”

পর্বভাই চোখ বন্ধ করে অপরপাশ ফিরে শুয়ে ছিল আমার কথায় অপরপাশ ফিরে থাকা অবস্থায়ই বললো,

“তুই না পরলে সমস্যা নেই আমি শাড়ি পরাতে পারি।আমি নিজে তোকে পরিয়ে দেবো কেমন?এমনিতেই তোর নাভী দেখতে আমার কোনো প্রবলেম নেই বরং ভালোই লাগে একটা তিল আছে না? যা তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি নিজে তোকে পরিয়ে দেবো…যাও ইশুপাখি ফ্রেশ হয়ে আসো তো…”

পর্বভাইয়ের কথায় আমার চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম। ডান হাতটা আপনাআপনিই পেটে নাভীর উপর চলে গেল।আমি চেচিয়ে উঠে বললাম,

“ছি ছি আমি আগেই জানতাম আপনার মধ্যে কোনো না কোনো গোলমাল নিশ্চয়ই আছে।আমার ধারণায় সত্যি বের হলো শেষ পর্যন্ত ছি ছি পর্বভাই আপনি এমন..!”

আমার চোখ টলমল করছে পর্বভাই এপাশ ফিরে আমার দিকে তেড়ে আসার ভঙ্গিমায় বললেন,

“যাবি তুই নাকি আমার থেকে শাড়ি পড়ার তর সয়ছে না তোর? এখনই পরতে চাস নাকি?দিবো পরিয়ে?”

আমি আর একমিনিটও সেখানে দাড়িয়ে থাকার সাহস পেলাম না।পর্বভাইয়ের কাছে শাড়ি পরার কোনো সখ নেই আমার। তাই না না বলে চিৎকার করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।আসতে আসতে পর্বভাইয়ের হালকা আওয়াজে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।বদমাশ একটা!

————
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পর্বভাইকে রুমে দেখতে পেলাম না।আমি অত মাথা না ঘামিয়ে খেতে চলে গেলাম নিচে।সবার খাওয়া শেষ একমাত্র আমি বাকি। নাফিসা আপু এখনো বসে বসে রুটি ছিঁড়ছে আমি চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললাম,

“কিরে বিয়ে কনে এখনও খাওয়া শেষ করলি না এতো ধীর হলে কিভাবে হবে?শেষে দেখা যাবে তোর সাঝ উঠাতে উঠাতেই বাসর রাত শেষ আর ভাইয়া ঘুম ”

নাফিসা আপু খেপে গিয়ে বললো,

“চুপ থাক বেয়াদব বড় বোনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও শিখিসনি…”

আমি হো হো করে হেসে দিলাম তা শুনে আম্মু রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে ধমক দিয়ে বললো,

“ইশশ…!ইশু এইভাবে কেউ হাসে?ছি ছি মানুষ শুনলে কি বলবে?”

নাফিসা আপু আম্মু কথায় ফোড়ন কেটে বললো,

“বেয়াদব ছাড়া আর কি বলবে”

আমি রুটি ছিড়ে মুখে দিতে দিতে বললাম,

“হাসার নিয়ম কানুন আবার কবে বের হলো?”

নাফিসা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আম্মু আবার আমাকে ধমক দিয়ে বললো,

“এই আর একটা কথাও না খেয়ে যার যার রেডি হতে চলে যাও”

আমি চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম রেডি হতে।
———
রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি পর্বের।ইশুর রুমে ইশুর বিছানায় ইশুর গায়ের গন্ধ আছে আর গন্ধটা পর্বের খুবই পছন্দের তাই ভেবেছিল সেখানে ঘুমটা ভালো হবে।কিন্তু সেখানে গিয়ে পরলো আরেক বিপদে ইশিতার গায়ের গন্ধটা যেন ইশিতাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তীব্র থেকে আরও তীব্র করে দিচ্ছে।তাই আর ঘুমাতে পারলো না ইশিতা ওয়াশরুমে যাওয়ার পর নিজের রুমে গিয়ে ইশিতার জন্য কেনা শাড়ি ইশিতার বিছানায় রেখে।নিজে রেডি হয়ে বাড়ির উঠানে চলে গেল ডেকোরেশনের লোকদের তাগাদার কাজ করছে পর্ব।
পরণে তার নীল পাঞ্জাবি আর জিন্স। হাতে কালো মোটা বেল্টের ঘড়ি।পায়ে বেল্টওয়ালা জুতো।কোকড়া চুলগুলো বরাবরের মতো চোখের সামনে স্থান পেয়েছে।মিনিটে মিনিটে সেই চুল বাম হাত দিয়ে পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়া যেন তার মুদ্রা দোষ।পাঞ্জাবির হাতাগুলো গুটাচ্ছে আর মেন গেটের দিকে তাকাচ্ছে বার বার কারণ আজ তার প্রিয় রঙে তার ইশুপাখিকে দেখবে।তর যেন আর সইছে না।
নীল শাড়িতে সেই অপ্সরীর আদল চোখে ধরা দিতেই সেখানেই চোখ আটকে যায় পর্বের।ফর্সা শরীরে নীল রং ঠিক যেন গোলাপের উপর একফোঁটা পানি পড়লে গোলাপটাকে যতটা বিশুদ্ধ দেখায় ঠিক তেমন লাগছে দেখতে।ডাগর ডাগর চোখগুলো কাজলে ছোঁয়ায় মনে হচ্ছে কোনো মায়াবিনী জাদুকরি।মোঠা পুরু ঠোঁটটায় জেল দেওয়া।মাজা পর্যন্ত চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে।হাত ভর্তি পর্বের দেওয়া নীল চুড়ি।শাড়িতে যেন পরিপূর্ণ নারী লাগছে তাকে।
পর্ব কয়েকটা জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো।তারপর শুকনো ঢোক গিললো।এগিয়ে ইশিতার দিকে যাবে তার আগেই ইশিতার বাবা পর্বকে ডাক দিলো,

“পর্ব এদিকে আয় তো একটু কথা আছে তোর সাথে”

পর্ব ইশিতার থেকে চোখ সরিয়ে ইশিতার বাবার কাছে চলে গেল।

————
আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি পর্বভাইরা আর আমরা একসাথে থাকি একটা বিশাল দোতলা বাড়িতে।পর্বভাইয়ের আব্বু আমার বড় চাচ্চু।আমার একটাই চাচ্চু আর সেটা বড় চাচ্চু।এখন প্রায় বিকেল চারটা বা সাড়ে চারটা নাফিসা আপু গায়ে হলুদ শুরু হবে ছয়টায়।তবে আমার রেডি হতে একটু বেশি সময় লাগে তাই আগে আগে রেডি হয়ে বসে আছি।

আমাকে শেষ পর্যন্ত খারুসটার দেওয়া নীল শাড়িই পরতে হলো।খারুসটা কেমনভাবে যেন তাকিয়ে ছিল। ধূর ওসব বাদ আমি নিজের মনে মনে এসব বক বক করছি আর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।বেখায়লিতে কিছু একটায় বেধে পরে যাবো তার আগেই কে যেন এসে আমার কোমড় জরিয়ে নিলো নিজের সাথে।আমি চোখমুখ খিঁচে তার শার্টের কলার টেনে ধরে দাড়িয়ে আছি।সে শুধু আমার কোমড় জরিয়ে নেয় তার হাত শাড়ি ভেদ করে আমার কোমড়ে বিচরণ করছে।আমি পিট পিট করে চোখ মেলতেই চিরচেনা সেই ফাজিল ছেলেটাকে দেখলাম নিচু স্বরে বললাম,

“আবির…!”

#চলবে..?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here