#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক
১০.
আমি একটু ইতস্তত করে মাথা উপর নিচ করলাম।তা দেখে ডাক্তার সিয়াম আবার ভ্রু কুঁচকালেন।বললেন,
“কি মিস? কেউকে খুঁজেছেন? কাকে খুঁজেছেন?নাম কি রোগীর?কিছু বলুন…!
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। আসলে অপরিচিত কারও সাথে হুট করে কথা বলতে পারি না।আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে পর্বভাইকে খুঁজতে লাগলাম।পর্বভাইকে না পেয়ে অবশেষে মুখ খুললাম বললাম,
” হ্যা আমার বড় চাচা কাল দুপুরের দিকে আনা হয়েছে।স্ট্রোক করেছিলেন।আরিফ আহমেদ।”
ডাক্তার সিয়াম কিছুক্ষণ আমার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন।তারপর বললেন,
“আপনার নাম কি?”
আমি ছোট একটা ঢোক গিলে আবার আশে পাশে তাকালাম তাতে ডাক্তার সিয়াম আমার দিকে একটু এগিয়ে এলেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে উত্তর দিলাম,
“ইশিতা কাবির…!”
ডাক্তার সিয়াম সামনে দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে ইশারা করলেন তার সাথে যেতে। বললেন,
“আপনার বাবার নাম..?”
আমি তার পিছন পিছন হাঁটছি। আমার হাতে বাসা থেকে পাঠানো বড়বাবার জন্য কিছু খাবার।হাটতে হাটতে সে আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমি ছোট শ্বাস ছেড়ে বললাম,
” অনিক কবির।”
সে ভ্রু কুঁচকালো আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“কিভাবে সম্ভব সে আপনার চাচা কিন্তু আপনাদের টাইটেল আলাদা এটা কিভাবে সম্ভব?”
আমি থতমত খেয়ে গেলাম এটা তো আমিও জানি না এর আগে কখনো এভাবে ভেবেও দেখিনি আসলেই তো।তারপর কিছুক্ষণ নিজে মনে ভেবে তার চোখের দিকে তাকালাম বললাম,
“সম্ভব না হওয়ার কি আছে? আমার এক ফ্রেন্ডের বাবার নাম মির্জা মিলনূর রহমান কিন্তু তার দাদার নাম দেলোয়ার হোসেন তাহলে এটা হলে আমাদেরটা না হওয়ার কি আছে হয়তো আব্বুর নামই শুধু কবির রাখছে এমনিতে তো আমরা আহমেদ বংশই”
ডাক্তার সিয়াম ভ্রু কুঁচকালো সন্দিহান দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে হয়তো এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না আমার কথা।তাই আমি একটু ঝাড়ি দিয়ে বললাম,
“আপনি এতো কিছু জেনে কি করবেন?আমার চাচার রুম কোথায় তাই বলেন…!”
সে এবার একটু ইতস্ততবোধ করলো হয়তো। আমার দিকে চেয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি তাকে ক্রস করে সামনে দৌড় দিই।কারণ সামনে পর্বভাই আমাদের দিকেই আসছে।পর্বভাই আমাকে দৌড়ে আসতে দেখে সেখানে থেমে যায় দাঁড়িয়ে আমি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। আমি গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললাম,
“আপনি আপনি আমাকে রেখে চলে গেলেন বড়বাবাকে কোন রুমে রাখা হয়েছে তাও জানি না আমি..”
পর্বভাই আমার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে সিয়ামের দিকে তাকায় তারপর আমার দিকে এক ভ্রুু উঁচু করে তাকায়।কোনো কথা না বলে এক ঝটকায় আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে।আমি কিছু বলছি না চুপচাপ তার সাথে হাঁটছি। কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম আব্বু বড়বাবার পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে।পর্বভাই আর আমি ভিতরে ঢুকতেই আব্বু উঠে দাঁড়ালো বললো,
“পর্বভাই আমি একটু বাসায় যাচ্ছি আমার আবার সাড়ে দশটার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হবে।”
পর্বভাই কিছু বললোনা শুধু মাথা নাড়ালো।আব্বু কেবিন থেকে বের হবে তার আগেই বড়বাবা আব্বুকে ডাক দিলো।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ইশু তুই কি ভার্সিটিতে যাবি?”
আমি মাথা নাড়ালাম তা দেখে বড়বাবা বললো,
“আচ্ছা তাহলে তুই এখন যা পর্ব তোকে দিয়ে আসবে।”
আমি একটু অবাক হলাম মাত্র আসলাম আবার এখনই চলে যাবো তাই বললাম,
“মাত্রই তো আসলাম এখনই চলে যাবো?একটু থাকি তারপর যাবো এমনিতেও ভার্সিটিতে তেমন কোনো প্রয়োজনীয় ক্লাস নেই শুধু লাইব্রেরি থেকে কিছু নোট করার আছে তাই যাবো..”
বড়বাবা একটু জোরে শ্বাস নিলো বললো,
“আর থেকে কি করবে এমনিতেও কাল ডিসচার্জ করে দিবে।যা ভার্সিটিতে যা…তাছাড়া তোর বাবার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”
আমি আর কথা বাড়ালাম না পর্বভাই আব্বু আর বড়বাবাকে বিদায় দিয়ে চলে এলো।
———
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে দাঁড়িয়ে দু’ঘন্টারও বেশি সময় ধরে একজোড়া মায়াবী চোখ আঁকার চেষ্টা করছে আবির।সারা শার্টে রং লেগে আছে বিভিন্ন রঙে ভর্তি হয়ে আছে। একটা রং আর একটা রঙের সাথে মিশে নতুন আর একটি রঙের সৃষ্টি করছে।সাদা শার্ট আর নীল জিন্স পরা।স্ট্যান্ডে পেইনটিংটা দাঁড় করানো।অবশেষে সক্ষম হলো সেই চোখ আঁকতে যেই চোখে তার সকল প্রকার নেশা। এবার ঠোঁট আকার পালা।
“কিরে আবির এখনো সেই চোখই এঁকে যাচ্ছিস এবার থাম ভাই ইশিতা তোর জন্য না…!”
অভির কথায় আবির রক্ত চক্ষু করে তাকায় অভির দিকে বলে,
“তুই কি এখন আমার হাতে রক্তাক্ত হতে চাইছিস?”
অভি কিছু বললো না হঠাৎ অভির ফোন বেজে উঠলো অভি কল রিসিভ করে একটু দূরে সরে গিয়ে দাড়ালো।আবির নিজে আঁকায় মন দিলো।অভি ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আবিরের দিকে তাকালো।কি মনযোগ দিয়ে আঁকছে সব ধ্যান জ্ঞান ঐ আঁকায় ছেলেটা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে চারুকলায় পড়তে পারতো।অভি আবিরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ধীর স্বরে বললো,
“আগামী ২৩ তারিখ ইশিতা আর পর্বের বিয়ে…।তুই যেভাবে খোঁজ রাখতে বলেছিলি সেভাবে খোঁজ রেখেছি..”
আবির হাত থেমে গেল।গলাটা ব্যাথা করছে খুব।চোখটাও ঝাপসা হয়ে গিয়েছে।ঢোক গিলতেও কষ্ট হচ্ছে। আবির কোনো কথা বললো না সবকিছু গোছাতে লাগলো।সব গুছিয়ে ইশিতার পেইন্টিং এ ওর নিজের হাতে আঁকা ইশিতার ঠোঁটে চুমু খেলো।ফিসফিসিয়ে বললো,
“২২ তারিখ তোমার জন্য খুব স্মরনীয় দিন হবে ইশু বেবি।সারা জীবন মনে রাখবে তুমি ২২ তারিখ।অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবো তোমাকে..।”
অভি তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু আবিরকে দেখছে।আবির স্ট্যান্ডটা নিয়ে ভিসি স্যারের অফিস রুমের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অভিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তুই যা..আমি আসছি ভিসি স্যারের সাথে আমার কিছু দরকারি কাজ আছে।.. দাড়া এগুলো নিয়ে যা পেইন্টিং এর যেন কিছু না হয় যদি হয় তাহলে তোর শরীরে একফোঁটাও রক্ত থাকবে না।”
অভি আবিরের পেইন্টিং এর সব জিনিস পত্র নিয়ে চলে গেল।
ভিসি স্যারের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আবির। কিছুক্ষণ পরই ডাক পড়লো তার ভিতরে ঢুকতেই ভিসি স্যার বললো,
“কি আবির পড়াশোনার কি খবর?অবশ্য তোমাকে পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস না করাই ভালো কারণ না পড়লে তো আর তুমি টপার হতে না…”
আবির কিছু বললো না চেয়ার টেনে চেয়ারে বললো।মুচকি হাসলো বললো,
“আসসালামু আলাইকুম স্যার..!চুরি করেও টপার হওয়া যায়…যায়হোক আসলে স্যার আমার একটা দরকারি কথা ছিল আপনার সাথে..”
ভিসি স্যার সামনে রাখা পানির গ্লাস থেকে এক ঢোক পানি খেয়ে বললো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম..! হ্যা বলো কি বলবে..?”
আবির নড়েচড়ে বসলো গলা ঝেড়ে বললো,
“আসলে স্যার আমি বাসায় কিছু রিসার্চ করছি।যেহেতু রিসার্চ করছি তো আমার বিভিন্নধরনের কেমিক্যালের প্রয়োজন হচ্ছে। মানে বিভিন্ন এসিডের তো তেমনি একটা এসিড প্রয়োজন আমার যেটা ল্যাবে দেখেছি আমি তো আপনার থেকে অনুমতি নিতে এসেছি মানে এসিডটা আমার অনেক বেশি প্রয়োজন…”
স্যার মন দিয়ে আবিরের কথা শুনলো।তারপর চিন্তিত মুখ করে বললো,
“রিসার্চ করছো ভালো কথা নতুন কিছু আবিষ্কার করলে আমাদেরই সুনাম তবে ল্যাব থেকে এভাবে এসিড নেওয়া…ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না?”
আবির তড়িঘড়ি বললো,
“স্যার এসিডটা সত্যি খুব দরকার আমার…প্লিজ স্যার প্লিজ…!”
স্যার ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো,
“কি এসিড..?লাগবে তোমার..?”
আবির বাঁকা হেসে ভরাট কন্ঠে উত্তর দিলো,
” সালফিউরিক এসিড..”
#চলবে…
(