#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৪
#M_Sonali
প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে চাঁদনীর। কিন্তু ডাইনিং টেবিলের উপর শুধুমাত্র ফল ছাড়া অন্য কিছু না পেয়ে বেশ বিরক্ত হলো সে। খালি পেটে ফল খেলে তার বমি বমি লাগে। কিন্তু এখন ফল ছাড়া এখানে অন্য কিছুই নেই। যে সেটা খেয়ে নিজের ক্ষুধা নিবারণ করবে। তাই বাধ্য হয়েই একটি কলা খেয়ে নিল সে। তারপর একটি আপেল হাতে নিয়ে চলে গেল জানালার কাছে। সে বুঝতে পারছে না সকাল হওয়া সত্বেও বাড়ির বাইরে সবকিছু অন্ধকার অন্ধকার লাগছে কেনো? তাই জানালার কাছে গিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো ব্যাপারটা। ভালোভাবে খেয়াল হতেই সে দেখল দিন হলেও বাড়ির চারিপাশে বিশাল বিশাল বটগাছ লাগানো। যার কারণে বাইরে এমনভাবে ঢেকে আছে যে মনে হচ্ছে এখন সন্ধ্যা।
চাঁদনী আবারো বেশ বিরক্ত হলো। এটা আবার কেমন বাড়ি! চারি পাশে এতো বড় বড় বটগাছ কে লাগাতে বলেছে? কেমন একটা গা ছমছমে পরিবেশ। দূরদূরান্ত অব্দি শুধু গাছ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে ভাবল সে হয়তো বাড়ির পিছন দিকে দেখছে। তাই ওই পাশ থেকে সরে বাড়ির অন্যপাশের জানালাটা খুলে দিল। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। গাছপালা ছাড়া অন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দিনের বেলায়ও মনে হচ্ছে যেন অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশটা। হঠাৎ চাঁদনী খেয়াল করলো গাছের ডালের সাথে বেশ কয়েকটা বাদুর ঝুলে আছে।
বাঁদুর গুলোকে দেখে সে বেশ অবাক হল। হাতে থাকা অপেলটাতে একটা কামড় দিয়ে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো বাঁদুর গুলোর দিকে। বাঁদুরগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা বড়। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ গাছের ডালে ঝুলে আছে তারা। মুখের দুপাশে দুটো চকচকে সরু দাঁত বেরিয়ে আছে। বেশ ভয়ংকর লাগছে দেখতে। এমন বাদুর সে এর আগে কখনোই দেখেনি। কিছুটা ভয় পেয়ে জানালার কাছ থেকে সরে এলো সে। বেশ ভয় লাগছে তার। একেতে অচেনা জায়গা। তার ওপর এমন গা ছমছমে পরিবেশে একা একা এতো বিশাল একটা বাড়িতে থাকতে যে কারোর’ই ভয় লাগার কথা। চাঁদনী আপেলটা খেতে খেতেই পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিল। সে আপেলে এক কামড় করে দিচ্ছে আর হেঁটে হেঁটে এদিক-ওদিক যাচ্ছে। এবং চারিদিকে সুক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে দেখছে। পুরো বাসাটাই এত সুন্দর করে সাজানো গোছানো পরিপাটি যে, চাঁদনী বিশ্বাস করতে পারছে না এ বাড়িতে শ্রাবণ একা থাকে। মনে হচ্ছে যেন দশ-বারোজন কাজের লোক যদি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে, তবেই যেন এরকম চারিদিকে সব সাজানো গোছানো থাকার কথা।
হাঁটতে হাঁটতে নিচতলা পেরিয়ে উপরতলায় চলে গেল চাঁদনী। উপর তলাও একই ভাবে সাজানো গোছানো এবং পরিপাটি। তবে নিচের রুমগুলোর চাইতে উপরের রুমগুলো ভিন্ন টাইপের। প্রতিটা রুমের দরজার সামনে একটি করে বাদুরের ছবি আঁকা। ছবিগুলো দেখে চাঁদনী আপেলে শেষ কামড়টা দিয়ে মনে মনে বলে উঠল,
“এখানে এত বাদুরের ছবি কেন? এই বাসার মানুষ কি বাদুর খুব ভালোবাসে নাকি? যে গাছের ডালে ডালে বাদুর ঝুলে আছে। আবার দরজার সামনে বাঁদুরের ছবি! আজব তো। উনি আসলে জিজ্ঞেস করতে হবে। দরজায় লাগানোর জন্য আর কোনো ছবি পাননি, যে বাদুড় ঝুলিয়ে রেখেছেন। আজব মানুষ!”
কথাটা ভেবেই ভেংচি কেটে আবার সামনে এগিয়ে যেতে লাগল চাঁদনী। বেশ কয়েক পা হেঁটে যেতেই একটা দরজার সামনে গিয়ে থমকে দাড়ালো সে। প্রতিটা দরজা খোলা থাকলেও এই দরজাটা চাপিয়ে রাখা। তাই চাঁদনীর মনে কৌতুহল জাগলো। সে এবার এই রুমে ঢুকে ভিতরটা দেখার জন্য উদ্যত হল। যে ভাবা সেই কাজ। দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিল সে। কিন্তু ভিতরটা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মনে সাহস যুগিয়ে অন্ধকার হাতরে হাতরে লাইটের সুইচ অন করল সে। অন করতেই পুরো রূমটা চোখের সামনে একদম দিনের মতো আলোকিত হয়ে গেল।
সে পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো। দেখল রুমের একপাশ দিয়ে ছাঁদে ওঠার সিঁড়ি উঠে গেছে। এটা দেখে সে বেশ অবাক হল। এটা আবার কেমন বাড়ি? যেখানে ছাদে উঠার জন্যে একটি রুম সিলেক্ট করে রাখা হয়েছে। যে রুমের মধ্যে দিয়ে ছাদে উঠতে হয়। কথাগুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতেই সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল সে। আর একপা দু পা করে উঠতে উঠতে ছাদের দরজায় পৌছে গেলো।
ছাদের দরজায় পৌঁছে আরেকদফা অবাক হলো সে। কারণ ছাদের দরজার সাথেও বিশাল এক বাদুরের ছবি আঁকা। বেশ বিরক্ত হলো সে। ছাদে ওঠার জন্য আর তর সইছে না তার। তাই ছবিটা নিয়ে কোনো কিছু না ভেবেই ছাদের দরজা খুলে সামনে তাকাল। সাথে সাথে যেন অবাক এর শীর্ষে পৌঁছে গেল সে। ছাদের ওপর টা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেখে মনে হচ্ছে যেন রাত হয়ে গেছে। কিন্তু তার জানামতে এখন সকাল ১০ থেকে ১১ টা বাজে হয়তো। চাঁদনীর শরীর ছম ছম করে উঠলো। ভীষণ রকম ভয় পেতে লাগলো সে। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে কিছু একটা দেখে আঁতকে উঠল সে। ভয়টা যেনো আরো দিগুন ভাবে বেড়ে গেলো তার। দেখল সামনে অন্ধকারের মাঝে অসংখ্য লাল রঙের চোখ দেখা যাচ্ছে। যেটা অন্ধকারে কিসের চোখ তা বোঝা যাচ্ছে না।
চাঁদনী ভয়ে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে জোরে একটা চিৎকার দিলো। মুহুর্তের মাঝে ওর মনে হলো ঝড়ের বেগে কিছু একটা এসে সামনে থাকা দরজাটা লাগিয়ে দিল। তারপর ওকে সেখান থেকে নিয়ে হাওয়ায় উড়ে যাবার মত করে অন্য কোথাও নিয়ে গেল। অবাক হয়ে দ্রুত নিজের মুখের সামনে থেকে হাতটা সরিয়ে নিল সে। আর সামনে তাকাতেই দেখলো শ্রাবণের কোলে আছে সে। কোন কিছু না ভেবে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগল চাঁদনী। শ্রাবণ কিছু বলল না। নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এভাবে কিছুক্ষণ কান্না করে নিজেকে সামলে নিলো চাঁদনী। ওর বুক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল সে। দুপা পিছিয়ে গিয়ে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। দেখল সে নিজের রুমে আছে। যে রুমে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেছিল সে। বেশ অবাক হলো সে। কিন্তু সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে অভিমানি গলায় বললো,
“এই লোক এই, কোথায় ছিলেন আপনি? আমাকে একা একা এই ভয়ঙ্কর বিচ্ছিরি বাড়িতে রেখে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন? আমাকে কি বিয়ে করে এখানে মেরে ফেলতে নিয়ে এসেছেন? আর ওইসব কিসের ছবি টাঙিয়ে রেখেছেন দরজার সামনে। বাইরে এতো অন্ধকার কেন? দিনের বেলাতেও চারিদিকে এত অন্ধকার এবং গা ছমছমে পরিবেশ কেন এই বাড়ির? আশেপাশে আর কোন বাড়ি নেই কেনো? ছাদের উপর টা এতো ভয়ংকর কেন? কি ছিল ছাদের উপর ওগুলো? এমন ভয়ঙ্কর ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো! বিশ্বাস করুন আমি বড্ড ভয় পেয়েছি। আর একটু হলে হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মরে যেতাম। ভাগ্যিস আপনি ঠিক সময় এসেছেন। কিন্তু কোথায় গিয়েছিলেন? আপনার বাড়িটা এতো রহস্যময় কেন? আমাকে এত তাড়াতাড়ি ছাদের দরজা থেকে এখানে কিভাবে নিয়ে আসলেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আসলে কে আপনি?”
একনাগাড়ে এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করে তারপর চুপ করল চাঁদনী। জোরে জোরে হাঁপাতে লাগলো সে। এতগুলো কথা একসাথে বলায় বেশ হাপিয়ে গেছে সে। ওকে হাঁপাতে দেখে এক গ্লাস পানি এনে ওর সামনে ধরল শ্রাবণ। ইশারা করে বললো খেয়ে নিতে। চাঁদনী কোন কথা না বলে গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে নিল। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে রইলো সন্দেহের দৃষ্টিতে। শ্রাবণ কোনো কিছু না বলে ওর সামনে থেকে সরে গেল। ফ্রিজ থেকে লিকুইড এর মত কিছু একটা বের করে সেটা গ্লাসে ঢেলে খেতে খেতে ওর সামনে এসে বলল,
“তোমরা মানুষরা এত বেশি প্রশ্ন করো কেন? আর এত কৌতুহল কেন তোমাদের? এই কৌতুহল এর জন্যই তোমাদের সব সময় বিপদে পড়তে হয়। তোমরা কি একটু কৌতূহল ব্যতীত স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারো না?”
ওর এমন প্রশ্নে বেশ বিরক্ত হলো চাঁদনী। কোমরে হাত দিয়ে ঝগড়াটির মত ঝাঁঝালো গলায় বললো,
“এখানে আপনি কৌতূহলের কি পেলেন? কোথায় আমি প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দেবেন! তা নয় আপনি’ই আমাকে উল্টো প্রশ্ন করছেন? আচ্ছা আসলে কে আপনি? এতো রহস্যময় কেন লাগছে আপনাকে? আর এই বাড়িটা কোথায়? আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন?”
“আমি একজন ভূত আর আমি মানুষ খাই। তোমাকে খাব বলে এখানে নিয়ে এসেছি। আর কিছু জানতে চাও?”
কথাটি বলেই ওকে পাশ কাটিয়ে অন্যদিকে চলে গেল শ্রাবন। ওর এমন কথায় চাঁদনীর যেন গা পিত্তি জ্বলে উঠলো। ভীষণরকম রাগ হতে লাগলো। মনে মনে বললো,
“কত্ত বড় সাহস এই ব্যাটার। চাঁদনীকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে!”
সে কোমরে হাত দিয়ে আবারও তার কাছে এগিয়ে গেল। ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“এই যে কি বলছেন কি আপনি এসব? আপনি কি ভাবছেন আপনাকে দেখে আমি ভয় পাব? মোটেও না। এই চাঁদনী ভয় পাওয়ার মেয়ে নয়। কিন্তু তার পরেও আমি জানতে চাই এটা কোন জায়গা? আর বাইরে এমন কেন দিনের বেলায়ও এত অন্ধকার! ওগুলো কি ছিল বাইরে? প্লিজ আমাকে বলুন। এই কৌতুহল মনে নিয়ে থাকা বড্ড মুশকিল আমার জন্য।”
ওর কথার কোন উত্তর দিল না শ্রাবণ। হাতে থাকা গ্লাসের তরল জিনিস টুকু পুরোটাই এক চুমুকে খেয়ে নিলো সে। তারপর ঠোঁটটা চেটেপুটে খেয়ে উঠে দাঁড়ানো। একদম ওর কাছাকাছি এসে ওর দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকালো সে। ওকে এভাবে কাছে এসে তাকাতে দেখে বেশ লজ্জা পেল চাঁদনী। মুহূর্তেই চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল সে। শ্রাবণ কোনো কথা না বলে ওকে পাশ কাটিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। এবার বেশ রাগ হলো চাঁদনীর।
চাঁদনী ওর পিছু পিছু দৌড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কোমরে হাত দিয়ে বলল,
“আপনি এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলে যাচ্ছেন কেন? এভাবে যদি দূরে দূরেই থাকবেন তাহলে বিয়ে করেছেন কেনো আমায়? আমাকে আমার বাবার বাড়ি নিয়ে রেখে আসুন। এখানে থাকতে পারছি না, ভীষণ অস্বস্তি লাগছে আমার এখানে। কেন জানি মনে হচ্ছে চারিদিকে বিপদ আছে আমার জন্য।”
শ্রাবণ ওর মুখের দিকে শান্ত নজরে তাকাল। নিজের মুখটা ওর মুখোমুখি এনে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
“আমার চাইতে বড় বিপদ তোমার জন্য আর কি থাকতে পারে? আমি থাকতে আর কোনো বিপদের ভয় করো না। কারণ তোমার জন্য সবচাইতে বড় বিপদ তো আমি নিজেই।”
কথাটা বলেই বাঁকা হেসে ওকে পাশ কাটিয়ে আবারো চলে গেল ডাইনিং টেবিলের কাছে। এবার যেন রাগে ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করল চাঁদনীর। সে সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রাগী গলায় বলল,
“আপনার এমন হেয়ালিপনা কথা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না। আমার কেন জানি কোন কিছু ভাল লাগছে না। সবকিছু অসহ্য লাগছে। প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন। আমি এখানে আর থাকতে চাই না। বাবার কাছে রেখে আসুন।”
শ্রাবণ কোন উত্তর দিল না। চুপচাপ বসে কিছু একটা ভাবলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নিজের হাতটা চাঁদনীর মাথার উপরে স্পর্শ করলো। সাথে সাথে ঘুমে ঢুলে পরলো চাঁদনী। শ্রাবণ ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। রহস্যময় হাসি দিয়ে মনে মনে বলল,
“তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তো এখানে নিয়ে আসেনি চাঁদপাখি। তোমায় দিয়ে যে অনেক বড় কাজ করবো আমি। নাহলে কি এতক্ষণ সময় ধরে একটা মানুষের তরতাজা রক্তে ভরা শরীর দেখেও নিজেকে সামলে রাখি?”
কথাটা মনে মনে ভেবেই রহস্যময় হাসি দিয়ে চোখের পলকে সেখান থেকে কোথায় যেন চলে গেল শ্রাবণ।
,
,
,
বড় একটি জঙ্গলের ঠিক মাঝখানে বিশাল বড় এক প্রাসাদ। যার চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভিতরটাও একইরকম। এই প্রাসাদের মাঝে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রকম মানুষের মতো দেখতে ভ্যাম্পায়ারের দল। তাদের সকলের চোখগুলোই টকটকে লাল রঙের। হাতে বেশ লম্বা লম্বা নখ। মুখের দুই পাশ দিয়ে বেরিয়ে আছে সরু দুটি দাঁত। দেখতেই ভীষণ ভয়ঙ্কর লাগছে। সকলের পরনেই রয়েছে কালো কুচকুচে রঙের পোশাক।
প্রাসাদের দরজা খুলে সকল ভ্যাম্পায়ারের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল ভ্যাম্পায়ার রুপি শ্রাবণ। তার চেহারায় যেন এখন পুরোপুরি পরিবর্তন চলে এসেছে। চোখ দুটো হয়ে উঠেছে টকটকে রক্ত লাল। হাতে লম্বা লম্বা নখ। মুখের দুই পাশ দিয়ে বেরিয়ে আছে সরু লম্বা দাঁত। চুল গুলো একদম উপর দিকে খাড়া হয়ে রয়েছে। গায়ে কালো রঙের লম্বা পোশাক। ভিষন ভয়ংকর দেখতে লাগছে তাকে। সে সামনের দিকে দাপটের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে থাকা ভ্যাম্পায়ার গুলো তাকে দেখেই মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইল। শ্রাবণ সোজা হেঁটে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সামনে বড় একটি সিংহাসন এর মত বিছানায় আধা শোয়া অবস্থায় বসে আছেন একজন ভ্যাম্পায়ার। যার মাথায় রয়েছে কালো রঙের একটি মুকুট। শ্রাবনকে দেখতে পেয়েই মুখে হাসি ফুটে উঠল তার।
সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। শ্রাবণের সামনে এগিয়ে এসে উত্তেজিত গলায় বলল,
“শুনেছি তুমি নাকি কাজটা করে ফেলেছ। ওই মেয়েটিকে খুঁজে বের করেছো তুমি। যার জন্য আমরা এতদিন হলো অপেক্ষা করছি।”
উনার কথার উত্তরে শ্রাবণ বাঁকা হাসলো। তারপর বললো,
“ভ্যাম্পায়ার রাজপুত্র শ্রাবণ পারেনা এমন কোন কাজ নেই। সেটা আপনি ভাল করে জানেন। আমি তাকে খুজে পেয়েছি। এবং সব রকম পরীক্ষা করে দেখেও নিয়েছি তাকে। সে আমার কাছেই সুরক্ষিত আছে। সময়মতো তাকে আপনার কাছে নিয়ে আসব। তার রক্ত পান করে আমাদের হাড়ানো শক্তি ফিরে পাবো আমরা।”
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৫ ও ৬
#M_Sonali
ঘুম ভেঙে নিজেকে বিছানার উপর আবিষ্কার করে চাঁদনী। মাথাটা ভীষণ রকম ভারী হয়ে আছে তার। সে ধীরে ধীরে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে। তারপর চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে তার সাথে ঠিক কি হয়েছিল। কিন্তু শ্রাবণকে ছাড়া আর কোনো ঘটনাই মনে পরে না তার। রুমটা খালি দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যায় সে। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে রুমে সে ছাড়া অন্য কেউ নেই। এদিকে ভীষণ টয়লেট চাপ দিলে আর কোন কিছু না ভেবে টয়লেটের দিকে দৌড় লাগায় সে। কিন্তু টয়লেটে যাওয়ার সাথে সাথে কিছু একটা দেখে ভয়ে জোরে জোরে চিৎকার করতে শুরু করে দেয় সে।
তখনই কোথা থেকে যেন হাওয়ার বেগে সেখানে ছুটে চলে আসে শ্রাবণ। ওকে দেখতে পেয়েই চাঁদনী দৌড়ে গিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করতে থাকে বাঁচাও বাঁচাও বলে। ওর এমন কান্ডে শ্রাবণ বেশ অস্বস্তি বোধ করে। চাঁদনী তাকে এতটাই আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরেছে যে চাঁদনীর শরীরের ঘ্রাণ একদম তীব্রভাবে পাচ্ছে শ্রাবণ। যার কারণে তার ভেতরের ভ্যাম্পায়ার টা জেগে উঠছে। ইচ্ছে করছে এখনই চাঁদনীর গলায় নিজের সরু দুটি দাঁত বসিয়ে পুরো শরীরের রক্ত চুষে খেতে। কিন্তু সেটা এখন করা যাবে না। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। তাই নিজেকে যতটা সম্ভব সামলে নিয়ে চাঁদনীকে জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয় শ্রাবণ।
সাথে সাথে চাঁদনী তাল সামলাতে না পেরে দেওয়ালের সাথে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। ফলে মাথা ফেটে অল্প একটু রক্ত গড়িয়ে পড়ে তার। রক্তের ঘ্রাণ নাকে যেতেই শ্রাবণ যেন পাগলের মত হয়ে যায়। তার চোখ দুটো মুহূর্তেই লাল বর্ণ ধারণ করে। মুখের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে সরু লম্বা দাঁত। হাতের নখগুলো লম্বা লম্বা হয়ে যায়।
শ্রাবণ বুঝতে পারে এখন কি ঘটতে চলেছে। সে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে রক্তের গন্ধে। চাঁদনীকে এখনই রক্ত চুষে মেরে ফেলার জন্য পাগল পারা প্রায় সে। কিন্তু সেটা এখন কোনোভাবেই করা যাবেনা। তাহলে তার সব প্ল্যান ভেসতে যাবে। নিজেকে অনেক ভাবেই কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে সে। কিন্তু কিছুতেই পেড়ে ওঠেনা। হিংস্রভাবে এগিয়ে যেতে চায় চাঁদনীর দিকে। তখনই দেখে চাঁদনী ছোট বাচ্চাদের মত হাউ হাউ করে কান্না করছে। মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে সে। মুহূর্তে শ্রাবনের কী হয় সে বুঝতে পারে না। তার ভ্যাম্পায়ার রূপটা গায়েব হয়ে গিয়ে মানুষের মত স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসে সে। চাঁদনীর নিষ্পাপ কান্না জড়ানো মুখটা যেন ভিষন রকম আবেগে ভরিয়ে দিচ্ছে তাকে।
এক মুহূর্তের জন্য শ্রাবণ ভুলে যায় সে একজন ভ্যাম্পায়ার। রক্তপিপাসু ভিষন বদমেজাজি একজন ভ্যাম্পায়ার সে। চাঁদনীর মুখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে থেকে ভাবতে থাকে এতটা নিষ্পাপ চেহারা ও কারো হতে পারে? তখনি চাঁদনী কান্না করতে করতে অভিমানী কন্ঠে বলে ওঠে,
“আপনি খুব পঁচা। খুব খারাপ আপনি। আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। শুনেছি বিয়ের পর স্বামীরা তার বউকে অনেক আদর করে। অনেক ভালবাসে। কিন্তু আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসার পর থেকে শুধু কষ্ট দিচ্ছেন। আর আঘাত করছেন। আমি আপনার কাছে থাকতে চাই না। আমাকে আমার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসুন। সেই কালকে থেকে এখন অব্দি শুধু একটি আপেল আর কলা ছাড়া কিছুই খাইনি। অনেক ক্ষুদা লেগেছে তার ওপর আপনি আমাকে এভাবে মারতে পারলেন।”
কথাগুলো বলেই আবারও বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগল চাঁদনী। শ্রাবনের এবার বড্ড মায়া হল। সে মনে মনে ভাবল,
“সত্যি তো ওকে নিয়ে আসার পর থেকে ফল ছাড়া আর কোন কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। মেয়েটার হয়তো বড্ড বেশি ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু এখানে তো ফল ছাড়া আর কিছুই নেই! ওর কিছু জামা কাপড়েরও দরকার। কথাগুলো ভেবে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শ্রাবণ। তারপর ওর কাছে এগিয়ে এসে ওর দু বাহু ধরে ওকে দাড় করালো। হাত ধরে নিয়ে গিয়ে খাটে বসিয়ে বলল,
“তুমি এখানেই থাকো, আমি তোমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে আসছি। খবরদার এখান থেকে উঠবে না আর কোথাও যাবে না।”
কথাটা বলেই রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে গেল শ্রাবন। তারপর হাওয়ার বেগে কোথাও একটা ছুটে চলে গেল সে।
ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে বড্ড রাগ হল চাঁদনীর। সে মনে মনে বলল,
“নিজে মেরে মাথা ফাটিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছে। অথচ মাথার রক্ত টা মুছে না দিয়েই সে বাহানা করে চলে গেল? আমাকে এ কার সাথে বিয়ে দিয়েছে বাবা। আমার এখানে মোটেও ভালো লাগছেনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে এখানে থাকতে।”
কথাগুলো ভেবে দু চোখের পানি মুছে নিল। তারপর ওয়াশ রুমে চলে গেল। ভয়ে ভয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো সে। সেখানে এবার আর কোনো তেলাপোকা দেখতে পেল না। কিছুক্ষণ আগে যখন এসেছিল তখন তেলাপোকা দেখেই চিৎকার করেছিল সে। ওয়াশরুম থেকে নিজের ওড়নাটা হাতে করে নিয়ে এলো বাইরে। তারপর ওড়নার এক সাইডে কামড় দিয়ে কিছুটা অংশ ছিঁড়ে নিলো।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে আয়নায় দেখে দেখে নিজের কপালে ওড়না দিয়ে নিজেই ব্যান্ডেজ করে নিল। বড্ড বেশি রাগ এবং অভিমানে মনটা পুড়ে যাচ্ছে তার। এই মুহূর্তে শ্রাবণ কে সামনে পেলে সে হয়তো এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে থাকবে। চুপচাপ গিয়ে বিছানার উপরে শুয়ে রইল সে। আজকে আর শ্রাবণের সাথে কথাই বলবে না। তখন’ই কোথা থেকে যেন শ্রাবণ এসে হাজির হলো সেখানে। ওকে ডেকে বললো,
“দেখো তোমার জন্য কি এনেছি। এইগুলো খেয়ে নাও। তোমার ক্ষুধা মিটে যাবে।”
ওর কথার উত্তরে একনজর পিছন দিকে ঘুরে ওর হাতের দিকে তাকাল চাঁদনী। দেখল ওর হাতে একটি বিরিয়ানির প্যাকেট। তারপর আবার অন্যদিকে ঘুরে চুপচাপ শুয়ে রইলো।
ওর এমন আচরণে ভীষণ বিরক্ত হলো শ্রাবণ। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে কর্কশ গলায় ডেকে বলল,
“কি হলো আমি কি বলছি শুনতে পাওনা? চুপচাপ উঠে এটা খেয়ে নাও। একটু আগেই না ক্ষুদা লেগেছে বলে বাচ্চাদের মত চিৎকার করছিলে। এখন সব ক্ষুধা কোথায় গেল?”
কথাগুলো বলেই হাতে থাকা বিরিয়ানির প্যাকেট টা পাশে টেবিলের উপর রেখে দিলো শ্রাবণ। কিন্তু এর মাঝেও চাঁদনীর কোনরকম রেসপন্স পাওয়া গেল না। এবার বড্ড বেশি রাগ হলো শ্রাবনের। সে ধমকের সুরে বলে উঠলো,
“এই মেয়ে কি হলো কথা বলছো না কেনো? তোমরা মানুষেরা এত বেশি বিরক্তিকর কেনো হও বলোতো? আমি কতবার করে ডাকছি কানে শুনতে পাওনা নাকি?”
কথাগুলো বলা শেষ হতেই আচমকা চাঁদনী লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। শ্রাবণের একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগল,
“কি ভেবেছেন কি আপনি? আমি আপনার হুকুমের গোলাম? আপনি যখন যেটা বলবেন আমাকে সেটাই মানতে হবে। কে হন আপনি। আপনি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন আমার জীবনে। আবার আমার উপরে চোটপাট করবেন অত্যাচার করবেন। আর আমি সেটা চুপচাপ মেনে নেব। আপনি জানেন পুরো এলাকার মাঝে সবচাইতে সুন্দরী এবং ঝগড়াটি মেয়ে ছিলাম আমি। আমার বান্ধবীরা আমাকে যেমন সুন্দরী বলে ডাকতো তেমনি ঝগড়াটিও বলতো। আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে থেকে এখন পর্যন্ত আপনার সাথে একটু ঝগড়া করিনি। আপনি গতকাল থেকে তোমাকে না খাইয়ে রেখে দিয়েছেন। একটু আগে ধাক্কা দিয়ে মাথা ফাটিয়েছেন। আবার এখন এসে ধমকাচ্ছেন কোন সাহসে? আপনি কি ভেবেছেন আমি এসব চুপচাপ মেনে নেব? কখনই না।”
একনাগাড়ে এতোটুকু বলে জোরে জোরে হাফাতে লাগলো চাঁদনী। ওর কথা শুনে যেন বেক্কলের মত ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ। পেছাতে পেছাতে একদম দেওয়ালের সাথে আটকে গেছে সে। চাঁদনী এগোতে এগোতে একদম তার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চাঁদনী আবারো ছোট বাচ্চাদের মত অভিমানি গলায় বলে উঠলো,
“কোথায় ভেবেছিলাম বিয়ের আগে কোন প্রেম করছি না। তাই বিয়ের পর স্বামীর সাথে চুটিয়ে প্রেম করবো। সারাক্ষণ তার কাছে এটা ওটা বায়না করব। আর সে ভালোবেসে আমার সব বায়না মেটাবে। কত আদর করবে, কত ভালোবাসবে। কিন্তু এমন একটি আনরোমান্টিক রাম ছাগলের সাথে বিয়ে হবে তা কে জানতো? আপনার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটাই তেজপাতা হয়ে গেল। আপনি এত আনরোমান্টিক কেনো? আপনার মত আনরোমান্টিক পৃথিবীতে দুটো আছে বলে মনে হয়না। নইলে এত সুন্দরী একটি বউ সামনে থাকা সত্যেও কেউ ভালো না বেসে আদর না করে এভাবে ধমকায়?”
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে শ্রাবনের কাছ থেকে সরে এসে বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়ে বাচ্চাদের মত কান্না করতে লাগল চাঁদনী। ওর কথা শুনে এবং কান্ড দেখে যেন মাথায় বাজ পরলো শ্রাবণের। সে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করল ও এতক্ষণ এসব কি বলল আবোল-তাবোল। শ্রাবণের এই মুহূর্তে কি করা উচিত সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। বারবার মনে হচ্ছে সে কোন জালে বন্দী হয়ে যাচ্ছে। যে জাল থেকে তার বেরনো মুশকিল।
কান্না করতে করতে আর চোখে শ্রাবণের দিকে আবারও ফিরে তাকাল চাঁদনী। দেখল সে আগের মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার যেন রাগটা মাথায় উঠে গেল তার। আবারও হুড়মুড়িয়ে উঠে দৌড়ে গেল শ্রাবণ এর সামনে। ওর কলার ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,
“এই-যে কি ভেবেছেন কি আপনি? বউকে কান্না করতে দেখলে আদর করে তার কান্না থামাতে হয় সেটাও কি জানেন না? এতক্ষণ ধরে আপনাকে এত কথা শুনিয়ে লাভটা কি হল? আপনি সত্যিই এক নাম্বারের আনরোমান্টিক। আপনাকে দিয়ে কোন কিছু হবে না। আপনি আমাকে বাবার কাছে রেখে আসুন। আপনার আনা কিছু খাব না। আপনার কাছে থাকবোও না। এই মুহুর্তে রাগে আমার ইচ্ছে করছে আপনার গলা টিপে মেরে ফেলতে। যদি ভ্যাম্পায়ার হতাম এখনি আপনার গলায় কামড় দিয়ে সব রক্ত চুষে মেরে ফেলতাম। এমন আনরোমান্টিক জগতেও দেখিনি। আমার স্বামীকে নিয়ে সব স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেল আপনাকে বিয়ে করে।”
ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সবচাইতে রাগি বদমেজাজী ও শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার হল শ্রাবণ। তার ওপর চোখ তুলে কথা বলার মত সাহস কেউ পায় না। অল্পতেই ভীষণ রেগে যায় সে। আর তাকে কিনা একটি সাধারন মানুষ এভাবে কলার ধরে ঝাকিয়ে ধমকে ধমকে কথা বলছে? সেটা যেন কল্পনাও করা যায় না। অথচ শ্রাবণের মাঝে এর বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ছে না। সে তো শুধু হাঁ করে তাকিয়ে মুগ্ধভাবে চাঁদনীকে দেখছে। সে জানেই না সে কেন এভাবে রয়েছে। তার বারবার মনে হচ্ছে সে মায়ায় পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন ভ্যাম্পায়ারের মনে তো ভালোবাসা সৃষ্টি হয় না। কারো প্রতি মায়া ও সৃষ্টি হয় না। ভ্যাম্পায়ারের তো পাথরের মন হয়। তাদের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া ইম্পসিবল। তাহলে এটা কি হচ্ছে শ্রাবণের সাথে। হঠাৎ এ কথাগুলো মনে হতেই অবাক হয়ে গেলো সে। নিজেকে চাঁদনীর থেকে সরিয়ে দ্রুত হাওয়ার বেগে কোথাও একটা চলে গেলো। তবে যাওয়ার আগে চাঁদনীর ওপর যাদু করে তাকে সম্মোহিত করে গেলো।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
অতিরিক্ত ব্যস্ততা ও সময়ের অভাবে লেখার পর রি-চেক করা হয় না। তাই বানানে কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। ধন্যবাদ
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৬
#M_Sonali
শ্রাবণ চলে গেছে প্রায় ১৫ মিনিট হলো। এত তাড়াতাড়ি সে কোথায় গেল কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে চাঁদনীর। এদিকে বড্ড ক্ষুদা লেগেছে তার। তাই কোনো কিছু না ভেবেই বিছানার উপর গিয়ে চুপচাপ বসে। বারবার বিরিয়ানির প্যাকেট এর দিকে তাকায় আর শুকনো ঢোক গেলে। তার আর সহ্য হচ্ছে না। রাগ টাকে দূরে ফেলে রেখে দ্রুত বিরিয়ানির প্যাকেট টা হাতে তুলে নেয়। খুলে দেখে হালকা গরম বিরিয়ানি। অসম্ভব সুন্দর ঘ্রাণ আসছে তার থেকে। চাঁদনীর আর তর সয়না। সে হাত না ধুয়ে খাওয়া শুরু করে দেয়। ৫ মিনিটের মধ্যে এক প্যাকেট বিরিয়ানি সাবাড় করে ফেলে সে। খাওয়া শেষে বুঝতে পারে তার প্রচন্ড পানি পিপাসা লেগেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও কোনো পানি নেই। তাই উঠে বাইরে চলে যায়। ডাইনিং টেবিলের ওপরে ও পানি দেখতে পায় না। শুধু খালি জগ ও গ্লাস রাখা আছে। এবার সে গ্লাস হাতে ফ্রিজের কাছে চলে যায়। ফ্রিজ খুলতেই দেখে অনেকগুলো বোতল রাখা। কিন্তু সবগুলো বোতল’ই কালো রঙের। সে বুঝতে পারেনা ওগুলোর মধ্যে কি আছে। তাই একটা বোতল হাতে নিয়ে সেটার মুখা খুলে নেয়। তারপর ভিতরের তরলটা কাঁচের গ্লাসে ঢালতেই ভীষণ রকম ভয় পেয়ে যায় সে। কারণ বতলটার ভিতরে তাজা রক্ত রাখা। লাল টকটকে রক্ত দেখে তার যেন মাথা ঘুরে ওঠে। হাত থেকে গ্লাসটা নিচে পড়ে টুকরোটুকরো হয়ে যায়। গ্লাসে থাকা রক্তটা ছড়িয়ে পরে ফ্লোরে। সে দ্রুত কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে চিৎকার করে ওঠে। ছোটবেলা থেকেই রক্ত দেখে ভীষণ ভয় পায় সে। আর সামনে এমন বোতলভর্তি রক্ত যেন দম বন্ধ করে দিচ্ছে তার ভয়ে।
ওর চিৎকার শুনে শ্রাবণ যেন কোথা থেকে ছুটে আসে ওর কাছে। ওর কাছে এসে ফ্লোরে তাকাতেই বুঝতে পারে চাঁদনী কি দেখে এতটা ভয় পেয়েছে। যেভাবেই হোক ওকে সামাল দিতে হবে। তাই শ্রাবণ সোজা ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আরেক রুমে নিয়ে আসে। বিছানার ওপর বসিয়ে দেয়। কিন্তু চাঁদনী নিজের মুখ হাত দিয়ে ঢেকে চিৎকার করেই যাচ্ছে। এবার শ্রাবণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“শান্ত হও এভাবে চিৎকার করার মতো কিছু হয়নি।”
ওর কথার উত্তরে চাঁদনী নিজের মুখের সামনে থেকে হাতটা সরায়। তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“বোতলের মধ্যে ওগুলো কি ছিল? এত রক্ত কেন ফ্রিজে রাখা আছে? আপনি কি তাহলে তখন ওই রক্তই খাচ্ছিলেন? কে আপনি? আপনি কি সত্যিই মানুষ! নাকি অন্য কিছু? আমাকে বাবার কাছে রেখে আসুন। আমি আর এখানে থাকতে চাই না। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।”
কথাগুলো বলে ওর থেকে কিছুটা পিছিয়ে যায় চাঁদনী। শ্রাবন বুঝতে পারে ওকে দেখে সে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। যেভাবেই হোক ওর মনের এই ভয়টা ভাঙ্গাতে হবে। তাই সে আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ওর হাতটা আলতো করে ধরে বলে,
“ধুর পাগলী এসব কি বলছ তুমি? মানুষ কি কখনো রক্ত খায়? আমি তোমার মতই একজন রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আর ওটা রক্ত ঠিকই কিন্তু আমিতো এটা খাই নি। ওখানে আরেকটা বোতল আছে যেটাতে লেমন জুস রাখা আছে। তুমি হয়ত দেখোনি। আমি সেই জুস খেয়েছিলাম। রক্তগুলো রাখা আছে একটি প্রয়োজনে। একটু শান্ত হও আমি তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলছি।”
ওর এমন কথায় কিছুটা শান্ত হয় চাঁদনী। নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের জল মুছে ফুঁপিয়ে বলে,
“তাহলে এতগুলো বোতলে রক্ত রাখা আছে কেন ফ্রিজে? আর এ বাসাটা এতো রহস্যময় কেন? আমার কোন কিছুই ভালো লাগছে না। কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে আমার চারিপাশে শুধু বিপদ আর বিপদ। আর আমার জন্য সবচাইতে বড় বিপদ হয়তো আপনি।”
ওর মুখে এমন কথা শুনে শ্রাবণ কিছুটা হকচকিয়ে যায়। বুঝতে পারে সে ধরা পড়ে যাচ্ছে। এখনই কিছু একটা না করলে মুশকিল হয়ে যেতে পারে। তাই চাঁদনীকে কাছে এগিয়ে নিয়ে এসে জোরপূর্বক ওকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
“নিজের স্বামীর প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই? এত অবিশ্বাস কিন্তু ভালো নয় চাঁদ পাখি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাইতো তোমায় বিয়ে করেছি। তুমি একটা কথা ঠিক ধরেছো বাসাটা রহস্যময় আর চারিপাশে বিপদ আছে। কিন্তু আমার দ্বারা তোমার কোন বিপদ নেই। আমি তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবো। এত টুকু বিশ্বাস তুমি রাখতে পারো।”
ওর এমন কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হয় চাঁদনী। নিজেকে সামলে নিয়ে ওর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর বলে,
“বাসার চারিপাশে কি বিপদ আছে শ্রাবন? আর ঐ রক্তগুলোই বা কিসের? আমাকে সবকিছু বলুন প্লিজ। আমি সব জানতে চাই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে সবকিছু বলছি। কিন্তু তার আগে তুমি প্রমিস করো একটুও ভয় পাবেনা। আর এখান থেকে বাইরে যাওয়ার চিন্তাও করবে না।”
ওর কথার উত্তরে চাঁদনী মাথা নেড়ে সায় দেয়। তারপর শ্রাবণ বলতে শুরু করে,
“এই বাড়ির বাইরে গাছের সাথে তুমি যে বাদুর গুলো দেখেছো, সেগুলো কোন সাধারণ বাঁদুর নয়। ওগুলো রক্তখেকো বাদুর। তারা মানুষ বা যে কোন পশুর রক্ত চুষে খায়। তাদের প্রধান খাদ্যই হলো রক্ত। তোমাদের এলাকায় যে রক্ত খাওয়া মানুষের মৃতদেহ পাওয়া যেত। তারাও এই বাদুড়দেরই শিকার ছিলো।”
ওর কথা শুনে যেন চমকে উঠলো চাঁদনী। ভয়ে শীরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল তার। সে আরো কিছু টা কাছে এগিয়ে আসলো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“এসব আপনি কি বলছেন? আমার তো ভীষণ ভয় লাগছে। বাদুড় কখনো মানুষের রক্ত খায়? তাহলে আপনি তো এ বাসায় একাই থাকেন। আপনাকে কিছু করে না কেন? আর আমিও তো এখানেই আছি। জানালাও খোলা থাকে। আমার কোন ক্ষতি করছে না কেন তারা?”
“কারণ তারা যথা সময়ে তাদের খাদ্য অর্থাৎ রক্ত পেয়ে যাচ্ছে। ফ্রিজে থাকা যে রক্তের বোতলগুলো দেখেছ। সেটা এক বতল করে প্রতিদিন তাদেরকে ছাদের ওপর দিয়ে আসি। তারা সেটা খেয়ে সন্তুষ্ট থাকে। তাই আমাদের কোনো ক্ষতি করে না।”
ওর কথা কেন জানিনা কোনভাবেই বিশ্বাস হচ্ছেনা চাঁদনীর। বরং নিজের মনের সন্দেহটা আরো প্রকট ভাবে দেখা দিচ্ছে। কিন্তু শ্রাবনকে সেটা বুঝতে না দিয়ে আবারও প্রশ্ন করে উঠল,
“আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। তাদেরকে মাত্র এক বোতল রক্ত দিতেই তারা আপনার কোন ক্ষতি করবে না! এটা কেমন কথা? আর আপনি এমন বাসায় থাকেন কেন যেখানে এত বিপদ। এ বাসাটা আসলে কোন জায়গায়। এখানে সারাক্ষণ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে থাকে কেন? কেন কোথাও কোন সূর্যের আলো নেই?”
ওর কথার উত্তর দিতে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল শ্রাবণ। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা সে। চাঁদনীর মনে যে ভীষণভাবে প্রশ্নগুলো জেঁকে বসেছে সেটা ভালই বুঝতে পারছে সে। কিন্তু যেভাবেই হোক এই ভয়টা তার মন থেকে দূর করতে হবে। নইলে সময়ের আগে চাঁদনীকে মেরে ফেলতে হবে তার। তাই সে দ্রুত বলে উঠে,
“দেখো তুমি যেমন সন্দেহ করছো তেমন কিছুই নয়। আসলে এই বাড়িটা আমার বাবা মায়ের স্মৃতি। তারা মারা যাওয়ার সময় এটা আমাকে দিয়ে গেছে। আমারতো পৃথিবীতে আপন বলতে আর কেউ নেই। তাই এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যেতে পারছিনা। আর বাড়িটার চারিপাশে জঙ্গলের মতো থাকায় ওই বাদুর গুলো এই জায়গাটাকে বেছে নিয়েছে।”
ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষন চুপ করে থাকে চাঁদনী। মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলে ওঠে,
“হুম বুঝতে পেরেছি। আমার ভীষণ পানি পিপাসা লেগেছে। আমাকে একটু পানি এনে দেন প্লিজ। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি মারা যাবো।”
ওর এমন কথা শুনে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে শ্রাবণ। সে দ্রুত উঠে পানি আনতে চলে যায়। চাঁদনী ও তাড়াতাড়ি তার পিছে পিছে গিয়ে দেখে সে হাওয়ার বেগে বাসা থেকে কোথাও যেন চলে গেল। চাঁদনীর আর বুঝতে বাকি রইল না সে আসলে কিসের পাল্লায় পড়েছে। ছোটবেলা থেকে জিন ভূত আর ভ্যাম্পায়ারের গল্প পড়তে অভ্যস্ত ছিল সে। তাই সে বুঝতে পারে শ্রাবণ একজন ভ্যাম্পায়ার। সাধারণ কোনো মানুষ নয়। ওকেও হয়তো কোন একটা বিশেষ কারণে এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন অব্দি ওর রক্তচুষে ওকে মারছে না কেন। এটা ভেবেই চিন্তায় পড়ে যায় সে। তবে মনে মনে ভাবে যতটা সম্ভব নিজের মাঝে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। কোনভাবেই শ্রাবণকে বুঝতে দেওয়া যাবে না সে সবকিছু বুঝে গেছে।
ভয়ে চাঁদনীর হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। সে কি করবে, এখান থেকে কিভাবে বেচে ফিরবে কোন কিছুই বুঝতে পারে না। সে বুঝে গেছে এটা হয়তো তার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। এমন কোন একটি জায়গায় যেখানে আশেপাশে তো দূর অনেক দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন বাড়িঘর বা জনমানবের চিহ্ন নেই। এখান থেকে বের হওয়া তার জন্য অসম্ভব প্রায়। সে কোনভাবেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারেনা। কিভাবে বাবার সাথে কন্টাক্ট করবে সেটাও জানেনা। কাছে কোন ফোনও নেই যে কোনোভাবে বাবার সাথে যোগাযোগ করবে সে। মনে মনে ভীষণ রকম ভেঙে পড়ে। তখনই দেখে শ্রাবণ হাতে এক বোতল পানি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ওকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে মুখে মৃদু হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে চাঁদনী। যদিও ভিতরটা ভয়ে ফেটে যাচ্ছে তার।
শ্রাবণ একটি গ্লাসে পানি ঢেলে ওর সামনে ধরে। চাঁদনী দ্রুত সেটা হাত থেকে নিয়ে ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে। এই মুহূর্তে যেভাবেই হোক নিজেকে শান্ত স্বাভাবিক রাখতে হবে তার। শ্রাবণকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না সে বুঝে গেছে শ্রাবণের পরিচয়। পানি খাওয়া শেষ হতেই শ্রাবণ হেসে জিজ্ঞেস করে,
“এখন কেমন লাগছে চাঁদ পাখি? আর কোন কিছু লাগবে তোমার?”
চাঁদনী জোরপূর্বক হেসে বলে,
“না আর কিছু লাগবে না। কিন্তু আমার ভীষণ ভয় লাগছে এখানে। আমি একটু বাবার কাছে যেতে চাই।”
ওর কথায় মুহূর্তেই যেন শ্রাবণের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়। সে গম্ভীর গলায় বলে ওঠে,
“ঠিক আছে তোমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন নয়। আগামী আমাবস্যার আগে এ বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবেনা। তাহলে ওই বাঁদুরগুলো রক্তচুষে মেরে ফেলতে পারে তোমায় আর আমাকে।”
চাঁদনী আর কোনো বাড়তি কথা বলল না। চুপচাপ গিয়ে বিছানার ওপর অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল। এখন শ্রাবনকে দেখে এতটাই ভয় লাগছে যে, তার সাথে কথা বলতেও হাত পা কাপাকাপি করছে। নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার। ওকে চুপচাপ শুয়ে পড়তে দেখে শ্রাবণ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। শুয়ে পড়ার পর চাঁদনী চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবতে লাগল,
“হয়তো আগামী আমাবস্যা তার জন্য জীবনের শেষদিন। শ্রাবণ হয়তো সেই আমাবস্যার জন্যই তাকে বিয়ে করে এখানে নিয়ে এসেছে। হয়তো সেদিন তার রক্ত চুষে তাকে মেরে ফেলবে। নিশ্চয়ই এর পিছনে কোন না কোন প্ল্যান আছে তার।”
কথাগুলো ভেবে ভয়ে ওর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়তে লাগল। মনে মনে কান্না করতে লাগলো সে। আল্লাহকে ডাকতে লাগলো সাহায্যের জন্য।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,