গল্পঃ বেপরোয়া ভালোবাসা –
পর্ব ১২ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন
by Mona Hossain
বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ১২ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন
Beporoya Valobasha
Mona Hossain { Part 12 }
দেখতে দেখতে পুরো বাড়ি মেহমানে ভরে গেল। পার্টি বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে কিন্তু যাকে ঘিরে এত আয়োজন তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। পার্টির কোথাও আদি নেই।
আদি বাইরে যাওয়ার সময় আদিবাকে বলেছিল যেন রুমের বাইরে না যায় কিন্তু আদিবা সেই হুকুম শোনে নি সে পুরোদমে নিজের কাজ করে যাচ্ছে…
বেশ কিছুক্ষন পরে আদি ফিরল। এসে আদিবাকে বাইরে ঘুরাঘুরি করতে দেখে ক্ষেপে গেল কিন্তু তেমন রিয়েক্ট করল না আদিবার কাছে গিয়ে আদিবার দিকে একটা দুধের বাচ্চা এগিয়ে দিল । আদিবা অবাক হলেও হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিল।
-“বাচ্চাটা কে ভাইয়া…?
-“আমার বন্ধুর ছেলে। সাবধান একবারো কোল থেকে নামাবি না…
আদিবা কথা বাড়াল না বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই টুকটাক কাজ করতে লাগল। কিন্তু বাচ্চা কোলে থাকায় সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না তবে ঘুরে ঘুরে সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে।
এদিকে আদির বাবা মা আদিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে ব্যাস্ত। আদিও সানন্দে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে কিন্তু তার মনে খটকা লাগছে কারন পার্টিতে বেশিরভাগেই অল্প বয়সী মেয়ে ঘুরঘুর করছে। কেউ দূর সম্পর্কের ফুফুর মেয়ে কেউ খালার মেয়ে মোট কথা এখানে যেন মেয়েদের হাট বসেছে আর তারা আদির দিকে রহস্যময়ী চোখে তাকাচ্ছে।
আদি ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টায় অরিনের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল,
-“কাহিনি কী বলতো…
অরিন চমকে পিছনে ঘুরে জবাব দিল,
-“কিসের কাহিনী..?
“এই মেয়েগুলো কারা..?
-” মা পরিচয় করিয়ে দেয়নি..?
-“দিয়েছে কিন্তু এদের এখানে আসার কারন কী..?
-“মা বাবা তোমার বিয়ে দিতে চায় তাই পাত্রী খোঁজছে…
-“তাই বল…আমিও সেটাই ভাবছিলাম যাইহোক আদিবা কোথায় রে..?
“একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘরের দিকে গেল দেখলাম। আসলে বহুবছর হয় আদিবা কোন গ্যাট টুগেদারে যায় না তাই হয়ত আনইজি লাগছে।
-” যায় না কেন..?
-“তাত জানি না তবে আদিবা লোকজনের ভীড়ে যেতে পছন্দ করে না ইনফেক্ট কারো বাসায় ঘুরতেও যায় না। অনেক আত্মীয় তো ওকে চিনেই না।
আদিত্য অরিনের সাথে কথা বলছিল তখনী একদল ছেলে এসে আদিকে ঘিরে ধরল আদি চোখ ঘুরাতেই আনন্দে দিশেহারা অবস্থা এটা তার ছোটবেলার বন্ধুদের দল।
আদি অরিনকে বিদায় দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে সবার সাথে কোলাকুলি করল
“সবাই কেমন আছিস..কতদিন পর দেখা হল বলতো..
-” আমরা তো ভাল আছি তোর কি খবর আদি? সেই যে হারিয়ে গেলি…
-“আর বলিস না ছোট বেলার পাগলামি বুঝিসেই তো…
-“পাগলামি তো বুঝলাম কিন্তু এখন সব ঠিক আছে তো..? কোথায় সেই মহারানী..?
-“উফফ ফয়সাল থামবি তুই..? একটুও বদলাস নি।
-“তুই ও কিন্তু বদলাস নি। যাইহোক একবার ডাক না আদিবাকে কতবছর দেখি না।
-“চুল সা*লা একদম নজর দিবি না বলে দিলাম
বলেই হেসে উঠল সবাই। সময় বয়ে যেতে লাগল আদির বন্ধুরা আসায় সে পার্টিটা বেশ উপভোগ করছে।কিন্তু এদিকে বাচ্চার যন্ত্রনায় আদিবার নাজেহাল অবস্থা বাচ্চাটা কিছুক্ষন আগে থেকে কান্না শুরু করেছে কিছুতেই থামছে না আদিবা তাই বাধ্য হয়ে আদির কাছে গেল।
-“ভাইয়া একটু শোনবেন…??
আদি পিছন ঘুরে আদিবাকে দেখে সরু চোখে তাকাল।
-“কী ব্যাপার তোর কোল খালি কেন বাচ্চাটা কোথায় বেশ ধমক দিয়ে প্রশ্নটা করেছে আদি।
-“সাদিয়ার কোলে দিয়ে এসেছি…
-“কেন সাদিয়ার কোলে দিবি কেন? বলেছিলাম না তীর কোল থেকে একদম নামাবি না। এখনী গিয়ে কোলে এক মিনিট তো দূর এক সেকেন্ডের জন্যেও কোল থেকে নামাবি না…
-“বলছি ওর বাবা মা কী এখনো ফ্রি হয় নি..??
কথাটা বলার সাথে সাথেই আদি চোখ গরম করে আদিবার দিকে তাকাল এর কারনটা আদিবা না বুঝলেও এটা বুঝতে পারল এত বছরেও আদির আচারনের কোন পরিবর্তন ঘটে নি সে আগের মতই হুটহাট আদিবার গায়ে হাত তুলতে পিছপা হবে না।
আদিবা অসহায় চোখে আদির দিকে তাকিয়ে রইল।
-“এভাবে তাকিয়ে আসিস কেন? আজ সারারাত বাচ্চাটা তোর কাছে থাকবে তাতে কোন আপত্তি আছে তোর..?
আদিবা উত্তর দিতে পারল না..
-“গুড এভাবে সবসময় চুপচাপ আমার কথা শুনবি তাহলে অযথা মা*র খেতে হবে না অন্যথায়….
আদিবা বুঝতে পারল কথা বাড়িয়ে লাভ নেই তাই ফিরে এসে বাচ্চাটাকে কোলে নিল কিন্তু বাচ্চার কান্না কিছুতেই থামছে না। আদিবা হেলেদুলে নানা রকম ভাবে বাচ্চাটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
-“এই মেয়ে বাচ্চাটাকে এভাবে কাঁদাচ্ছ কেন?
প্রশ্নটা শোনে আদিবা পিছন ঘুরে দেখল একজন ভদ্রমহিলা কথাটা বলেছেন।
-“বাচ্চাটার ক্ষুধা পেয়েছে বুঝতে পারছ না? আজকালকার মেয়েরা মা যে কেন হয় বুঝি না।
পাশ থেকে অন্য একজন বলে উঠল
-“আর বলবেন না ভাবী ফিগার খারাপ হয়ে যাবে বলে বাচ্চাকে না খায়িয়ে রাখে ভাবা যায়…? এই মেয়ে ঘরে গিয়ে বাবুটাকে একটু বু*** দুধ খাওয়াও যাও। মা হওয়ার তো যোগ্যতা নেই আবার বাচ্চা নিয়েছে।
আদিবা ওদের কথায় অবাক হল,
“আপনারা এসব কি বলছেন..?
-” একদম কথা বাড়াবে না যাও খায়িয়ে আসো বলছি…
মহিলাগুলোর কথা আদিবার বেশ খারাপ লাগল সে হনহন করে সোজা আদির কাছে চলে গেল…রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-“বাচ্চাটাকে ধরুন…
-“কী বললি তুই…?
-“সবাই আমাকে কত খারাপ খারাপ কথা বলছে জানেন..?
-“কেন কে কী বলেছে..?
-“বলেছে আমি নাকি ওর মা..
-“সময়মত বিয়ে হলে এর মত কয়েকটা বাচ্চার মা হয়ে যেতি খারাপ কি বলেছে?
-“একদম বাজে কথা বলবেন না ওরা বলছে আমি নাকি ইচ্ছে করে বাচ্চাটাকে খেতে দিচ্ছি না।
-“তো দিচ্ছিস না কেন ঘরে গিয়ে খায়িয়ে আন..
-“আপনিও কী পা”গল হয়ে গেছেন? ও কি আমার বাচ্চা যে আমি দুধ খাওয়াতে পারব..?
কথাটা বলার সাথে আদি হা হা করে হেসে উঠল,
-“এভাবে হাসছেন কেন🥺
-“দুধ কী শুধু মায়ের কাছেই থাকে? কিনতে পাওয়া যায় না..? ইডিয়েট আমি বু*** দুধের কথা বলি নি ফ্রিজে দুধ আছে গরম করে খায়িয়ে আন…
আদির কথায় আদিবা লজ্জা পেল সত্যিই তী কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলছে সে আদির সাথে আদিবা কথা ঘুরানোর জন্য তাড়াতাড়ি বলে উঠল
-“বাচ্চা কোলে নিয়ে আমি কি করে দুধ গরম করব..??
-“আমার কোলে দে আমি যাচ্ছি তোর সাথে…
-“আপনার যেতে হবে না আমি করে নিয়ে আসছি
বলে আদির কোলে বাচ্চাটা দিয়ে কোন মতে ছুটে পালিয়ে গেল আদিবা। আদির বেশ হাসি পেল হাসতে হাসতে বলল
-“তাড়াতাড়ি ফিরবি কিন্তু…
।
।
।
আদিবা দুধ নিয়ে ফিরে আসল। বাচ্চাটা হয়ত ফিডার খেয়ে অভ্যস্থ না তাই খাওয়াতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আদি আদিবা দুজন মিলে খাওয়ানো ট্রাই করছিল তখন একজন এগিয়ে এসে বলল,
-“আদি তুই বউ বাচ্চা নিয়ে ফিরেছিস কই তোর মা তো বলল না..?
মহিলার কথায় আদিবা অবাক হলেও আদি মোটেও বিচলিত হল না।
-“যাক তবুও ভাল বিদেশিনী নিয়ে আসিস নি। তা বউয়ের বাসা কোথায়?
আদি উত্তর দেওয়ার বদলে মুচকি মুচকি হাসছে দেখে আদিবার গা জ্বলে গেল নিজেই উত্তর দিতে বাধ্য হল,
-“খালা আপনার ভুল হচ্ছে আমি আদিবা..অনেক বছর দেখা হয় না তাই হয়ত ভুলে গেছেন আমি ভাইয়ার বউ না।
কথাটা বলতেই আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল…ইচ্ছে করল কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগাতে আদিবার গালে, কিন্তু বাচ্চার জন্য দেওয়া হল না।
পড়ুন ভিলেন পর্ব 85 – প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo
-“তুই আদিবা হায় আল্লাহ কত বড় হয়ে গেছিস আমি ত চিনতেই পারি নি। আসলে আদি অন্য কারোর বাচ্চাকে কোলে করে খাওয়াবে আমি ভাবতেই পারিনি তাছাড়া তোর শাড়ি সব মিলে মনে হচ্ছে যেন যুগলবন্দী যাইহোক তোর বাচ্চা বুঝি..?
-“খালা আমার বিয়ে হয়….
কথাটা শেষ করার আগেই আদি হ্যাচাকা টানে আদিবা নিয়ে হাঁটা শুরু করল,
-“ভাইয়া কি করছেন খালা কি ভাবল…?
আদির কানে কথা ঢুকল না সে দ্রুতবেগে হেঁটে যাচ্ছে..
-“ভাইয়া থামুন বাচ্চাটা পড়ে যাবে..
আদি বাসার পিছন দিকে গিয়ে থামল,
-‘তোকে এত পকর পকর করতে বারণ করেছিলাম না..?
-“মানে..?কি বলতে চাইছেন খালা ভুল বুঝছিল আর আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকব..?
আদি কোন উত্তর না দিয়ে আদিবার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিল। আদিবা ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেও পেরে উঠল না কারন তার কোলে বাচ্চা সেই সুযোগে বেশ অনেক্ষন পর আদি তাকে ছাড়ল।
ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে আদিবা ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল
-“ক ক কী করলেন এটা…?
-“পকর পকর করার শাস্তি দিলাম..এরপরেও যদি পকর পকর করিস তাহলে কি হবে বুঝতেই পারছিস.
-“এসবের মানে কী ভাইয়া..? আজ আপনার পাত্রী খোঁজার জন্য পার্টি দেওয়া হয়েছে এখন যদি আমাকে আপনার বউ ভাবে তাহলে আপনার বিয়ে হবে কী করে..?
-“আর আমি এই বাচ্চাটাকে এতিমখানা থেকে নিয়ে এসেছি আর শাড়িটাও ইচ্ছে করেই কিনে এনেছি যাতে সবাই ভাবে তুই বিবাহিত…
-“ম ম মানে কী…??
-“মানেটা তোর গোবর ভরা মাথায় ঢুকবে না তাই চুপচাপ ঘরে যা বাচ্চাটা ঘুমিয়ে গিয়েছে আমার রুমে শুয়িয়ে নিজেও শুয়ে থাকবি একদম বের হবি না…
>> চলবেগল্পঃ বেপরোয়া ভালোবাসা
পার্টঃ ১৩
লেখকঃ মনা হোসাইন।
হুট করে ঘুম ভেঙে গেল আদিবার। কেমন যেন অস্বস্তিবোধ হচ্ছে, মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলে যেমন হয়। তবে শুধু শুধু ঘুম ভাঙেনি,ঘুমের মধ্যে আদিবার মনে হলো কেউ যেন তার পরনের শাড়ির ভাঁজ খুলছে, পেটের দিকে দুটি হাত বিচরন করছে। হাত দুটো ক্রমশো পেট থেকে উপড়ের দিকে উঠছে। আদিবা হুট করে কিছু বুঝে উঠতে পারল না কারন চোখ থেকে এখনো ঘুম বিদায় নেয় নি।পরক্ষনে পেটের একপাশে ক্ষীন ব্যাথায় সমস্ত ঘুম উবে গেল। আদিবা তাড়াতাড়ি উঠতে চাইল কিন্তু পারল না তার উপড় ভারি কিছু চেপে আছে। আদিবা এমনিতেই বিষ্ময়ের মধ্যে ছিল তারমধ্যে তাকে আরাও অবাক করে দিয়ে পেটের ডানপাশটাতে কেউ স্বজরে কামড় বসিয়ে দিলো৷ আদিবা এবার ভয়ে চিৎকার করতে নিল। কিন্তু তার আগেই মুখটা চেপে ধরে এক জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল,
-“একদম ন্যাকামি করবি না।
-“আ আ আদি ভাইয়া আ আ আপনি..?
-“অন্য কেউ হলে খুশি হতি..?
-“কথা ঘুরাবেন না,কি করলেন এটা..?
-“না বুঝার মত কিছু করেছি?
আদিত্যের অদ্ভুত কান্ডে অবাক হয়েছে। আদিবা কিছুক্ষন আগেই বাচ্চাটাকে ঘরে নিয়ে এসে শুয়িয়ে দিয়ে বাচ্চার পাশে নিজেও শুয়ে ছিল। কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারে নি হটাৎ কারোর অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে ঘুম ভেঙেছে।
-“এসব কী ধরনের অসভ্যতা? যখন তখন গায়ে হাত দেন কেন?
-“ভাল লাগে তাই..
-“ভাল লাগে মানে কী..?
-“ভাল লাগার আলাদা কোন মানে হয় নাকি..?
-“লজ্জা বলতে কিছু নেই আপনার.? এসেছেন থেকে অসভ্যতা করে চলেছেন। আমরা আর ছোট নেই আপনি কী বুঝেন না?
-“আমি যতদূর জানি এসব শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই করতে পারে ছোট বাচ্চারা করে জানতাম না তো..
-“লজ্জা করছে না আপনার? শেষবারের মত সাবধান করে দিচ্ছি যখন তখন গায়ে হাত দিবেন না।
-“এখন তাহলে দিনক্ষন ঠিক করে গায়ে হাত দিতে হবে? আচ্ছা প্রতিদিন রাতে দিব ঠিক আছে..?
-“আপনি কিন্তু সীমা পেরিয়ে যাচ্ছেন।
-“তোর সাবধান বানী তোর কাছেই রাখ। একটা কথা কান খুলে শোনে রাখ আমি তোর সাথে যা ইচ্ছে তাই করব তুই চাইলেও করব না চাইলেও করব।
-“আপনি কী ভুলে যান আমি আপনার বোন হই।
-“সরি সরি, কি হোস তুই আমার?
-“এখন কী সেটাও অস্বীকার করবেন?
-“অস্বীকার করছি না কিন্তু তুই হয়ত জানিস না আমি তোকে কোনদিনি বোনের চোখে দেখিনি দেখতে পারবও না।
-“পা*গলের হয়ে গেছেন আপনি।
-“আট বছর আগেই হয়েছিলাম যেদিন তোকে অন্য ছেলের সাথে দেখেছিলাম।
কথাটা বলতে বলতেই আদির মুখভঙ্গি বদলে গেল। চোখ দুটি যেন ভিতরের সব রাখ উগ্রে দিতে চাইছে আদি নিজেকে কন্ট্রোল করার প্রচেষ্টায় আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসল। আদিবা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিচু গলায় বলল,
আদিবা পুরো কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই আদি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-“শুনতে চাইনি, তোর প্রেমকাহিনি শোনার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
-“আপনি ভুল…
-“বল্লাম না কোন কথা শুনতে চাইনি। উঠে কাপড় ঠিক কর বাচ্চাটাকে দিয়ে আসতে হবে।
“আমাকেও যেতে হবে?
-“আদিবা আমাকে রাগাস না..
বলে বেরিয়ে গেল আদিত্য।
-“আজব একটা মানুষ নিজে যা বুঝবে সেটাই ঠিক বাকি সব ভুল। একটা ছেলে এত বদমেজাজি কী করে হয়?
ভাবতে ভাবতে আদিবা শাড়ি ঠিক করতে নিল।কুচি ঠিক করতে যেই আয়নার সামনে দাঁড়াল পেটের দিকে কা**ড়ের দাগ জ্বলজ্বল করে উঠল।আদিবা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। আদি এসেছে পরে থেকে তাকে নানাভাবে হ্যারেস করে চলেছে এটা তারেও প্রমাণ৷ কোনভাবে দাগ ঢাকা গেল না তাই শাড়ি ছেড়ে জামা পরে নিল সাথে সাথে বাইরে থেকে আদির গলা ভেসে আসল
-” আদিবা তোর এখনো হয়নি..? একটা শাড়ি ঠিক করতে এতক্ষন লাগে?
আদিবা আবারও লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল।
বাচ্চাকোলে বেরিয়ে আসতেই আদিও উঠে হাঁটা দিল। এতরাতে দুজন মিলে বাইরে যাচ্ছে দেখে পার্টিতে আসা অনেকেরই ব্যাপারটা হজম হল না। সবাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে দেখে আদির মা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন
-“এতরাতে তোরা কোথায় যাচ্ছিস?
আদির সোজাসাপটা জবাব,
-“আমি নিশ্চুই ছোটবাচ্চা নই মা, যে কোথায় যাচ্ছি তার কইফত দিয়ে যেতে হবে।
আদির কথার ধরন দেখে আদিবা তাড়াতাড়ি বলে উঠল,
-” ভাইয়ার বন্ধুর বাচ্চাকে দিতে যাচ্ছি কাকিমনি। ভাইয়া বাচ্চা নিয়ে ড্রাইভ করবে কিভাবে তাই আমি যাচ্ছি এখনী চলে আসব।
আদি একবার আদিবার দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। চুপচাপ হাঁটা দিল আদিবাও পিছন পিছন গেল। বাসা ভর্তি মেহমান ছিল তারমধ্যে একজন বলেই উঠল,
-“রেহানা তোমার ছেলের জন্য বউ খোঁজার কী দরকার? ছেলে তো নিজেই বউ পছন্দ করে নিয়েছে।
-“ভাবী কি বলছেন এসব? আদির সাথে আদিবার তেমন সম্পর্ক নেই।
-“চোখ থাকতেও যদি অন্ধ হয়ে থাকতে চাও তাহলে তো কিছু বলার নেই বোন।
কথাগুলোতে আদির মা বেশ অপমানিত বোধ করলেন এদিকে ঘড়ির কাঁটা ১২ এর ঘর পেরিয়েছে। আদিরা বাচ্চাটাকে এতিমখানায় দিয়ে ফিরে আসছিল হটাৎ মাঝরাতে গাড়ি থেমে গেল।আদিবা প্রশ্ন করল,
-“কী হল গাড়ি থামালেন কেন..?
-“গাড়ি থেকে নাম..
-“নামব মানে কী?
-“নামবি মানে আমি তোকে নিয়ে যাব না।
-“মাথা ঠিক আছে আপনার?
-“নামবি নাকি জোর করে নামাতে হবে
আদিবা যতদূর সম্ভব তর্কাতর্কি করল কিন্তু কাজ হল না আদি জোর করে রাতের নিস্তব্ধ রাস্তায় নামিয়ে দিল আদিবাকে।
-“আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না ভাইয়া। বাসায় ফিরে সবার কাছে কি জবাব দিবেন?
-“আমার জবাব আমি দিব তোকে ভাবতে কে বলেছে?
-“আ আ আপনি সত্যিই আমাকে রেখে চলে যাবেন?
-“সন্দেহ আছে?
-“আমি অন্ধকার ভয় পাই আপনি জানেন তবুও।
-“নিয়ে যেতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।
-“কী শর্ত?
-“প্রতিদিন রাতে আমার সাথে ঘুমাতে হবে..
-“আপনি…
-“থাক তাহলে সারারাত এখানে..বলে আদি গাড়ি স্টার্ট দিতে নিল
আদিবা ভেবে দেখল এখন বাসায় ফিরা সবচেয়ে বেশি জরুরী পরে কিছু একটা করতে হবে তাই তাড়াতাড়ি বলল,
-“আমি রাজি…
-“কথা দিচ্ছিস তো…?
-“দিচ্ছি দিচ্ছি নিয়ে চলুন প্লিজ।
-“ঠিক আছে…
আদিবারা বাসায় ফিরতে ফিরতে ১ টা বেজে গেল ততক্ষনে মেহমান মোটামুটি বিদায় নিয়েছে। বাসায় ফিরে আদি নিজের ঘরে চলে গেল আদিবাও তার ঘরে গেল। কিছুক্ষন পর পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে গেল সবাই মোটামুটি ঘুমিয়ে গিয়েছে। সারাদিন কাজ করে সবাই ক্লান্ত তবে আদিবার ঘুম পায় নি সে লাইট অফ করে শুয়েছিল হটাৎ চুলে টান পড়ল আদিবার বুঝতে বাকি রইল না কাজটা আদির।
উঠে বসল,
-“কি বলবেন বলুন..
-“এক কথা কতবার বলতে হবে হ্যা..? তোকে বলেছিলাম না আমার সাথে ঘুমাতে।
-“আমি পারব না।
আদির মুট শক্ত হয়ে এল চুলে টান পড়েছে
-“আহ কি করছেন লাগছে তো…
আরে আরে করছেন কী।
আদিবার কথায় কান দিল না আদি চুল ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে গেল।
-“একটা শব্দ করবি তো আমি তোকে মে**রে আবার নিরুদ্দেশ হব।
আদির কথায় আদিবা কিছুটা ভয় পেল এই ছেলের মতিগতির কোন ঠিক নেই যখন যাখুশি করতে পারে। আদি আর কোন কিছু না বলে আদিবাকে আঁশটে পিঁশটে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।
-“অন্তত একটু সরে শোন প্লিজ আমি এভাবে ঘুমাতে পারি না।
-“বিয়ের পর কি করবি..? দেখা গেল তোর বর জড়িয়ে ধরা ছাড়া ঘুমাতে পারে না তখন..?
-“পরের টা পরে দেখা যাবে এখন ছাড়ুন
-“আদিবা সারাদিন অনেক দখন গিয়েছে ঘুমাব ডিস্টার্ব করিস না।
-“ভাইয়া আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।
আদি এবার আদিবার আরও কাছে এসে ঘাড়ের চুল সরিয়ে মুখ ডুবিয়ে দিল। আদিবার সারা শরীর কেঁপে উঠল।
-“ক ক ক কী করছেন।
আদির পক্ষ থেকে উত্তর আসল না সে আদিবার মাঝে ডুব দিয়েছে অনেক আগেই।
-“ভ ভ ভাইয়া আমার কেমন যেন লাগছে.. এমন করবেন না ছা ছা ছাড়ুন….
চলবে….