শত ডানার প্রজাপতি পর্ব -১৮+১৯

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৮

স্টেজের দিকে যাচ্ছিলাম হ্ঠাৎ ই আমার হাতে টান পরে । কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে অন্ধকারে টেনে নিয়ে যায় । আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে ! অগ্নি ছাড়া অন্যকেউ হতেই পারে না । আমাকে অন্ধকারে স্টেজের পিছনে নিয়ে যায় । পাশের গেস্ট হাউসের দেয়ালের সাথে আটকায় । আমি নড়চড় করতে পারছিনা । উনার শক্তির সাথে পেরে উঠা অসম্ভব ।
আমি রেগে বলি ,

– “কি করছেন আপনি? এমন বিহেভ কেন করছেন ? ”

উনি আমার চেয়ে দ্বিগুণ রেগে উত্তর দেয় ,

– “কেন আমার স্পর্শ ভালো লাগছে না ? আমার কাছাকাছি থাকা ভালো লাগছে না ? ”

– “কি যাতা বলছেন ছাড়ুন আমাকে ? ”

– “ওহ !! আমার স্পর্শ ,আমার কাছে থাকা এসব ভালো লাগছে না ? একটু আগে তো খুব হেসে হেলেদুলে উৎসের সাথে কথা বলছিলে । তখন তো তোমার চেহারায় এমন বিরক্তি দেখা যায়নি । এখন কেন ? ”

-” আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন ? এসব কি বলছেন? আর তাছাড়া আমি যদি এমন কিছু করেও থাকি তাহলে আপনার সমস্যাটা কোথায় ? ”

উনি পাশের দেয়ালে জোরে ঘুষি মেরে রেগে বললেন,

– “আমার সমস্যা কোথায় মানে ? আমার সমস্যা আছে । একশোবার আছে । তুমি কেন উৎসের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে ? ”

– “তো রেগে কথা বলতে বলছেন ? বায় দ্যা ওয়ে আপনি কি জেলাস ? কিন্তু কেন ? আপনি তো আমাকে নিজের স্ত্রী মানেন না ! না আমাকে ভালোবাসেন । তো আমি অন্যকারো সাথে থাকা না থাকায় আপনার কি আসে যায় ? ”

– “আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই । তুমি উৎসের সাথে কথা বলবে না ব্যসসস ! ”

– “উৎস ভাইয়ার সাথে কথা বলবো না ,ইশান ভাইয়ার সাথে কথা বলবো । আসলে আপনি কি চান বলুন তো ? কেন আমার উপর বার বার এমন অধিকারবোধ দেখান ? আপনার নিজের উপর আমার কতটুকু অধিকার খাটাতে দেন ? আপনি যখন কথায় কথা সুপ্তি সুপ্তি করেন তখন আমার কেমন লাগে তা একবার বুঝার চেষ্টা করেছেন? আমার কতটা জ্বলে তা কি একবার বুঝেছেন ?
যদি নিজের উপর আমার অধিকার না দিতে পারেন তাহলে আমার উপরও অধিকার খাটানোর অধিকার আপনার নেই । ”

আমি নিজের কথা শেষ করে অন্যদিকে মুখ করে বড় বড় শ্বাস নেই । চোখে অশ্রুকনার ভিড় জমেছে । রাগ দুঃখ কষ্ট সব একত্রে মিশ্রিত হয়ে কান্না আসছে । উনি আমার কাছে আসে শুধু আমাকে কষ্ট দিতে । উনার সাথে আমার হৃদয়ের থেকে বেশি কষ্টের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । আমি যতবার উনার দিকে ভালোবাসার আশায় পা বাড়াই । উনি ফলসরূপ আমাকে আঘাত আর কষ্ট দেয় । উনি অনেক আগেই হাতের বাঁধন হাল্কা করে দিয়েছে ।আমি উনার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে উনাকে সামনের থেকে সরিয়ে দেই । সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে আসি । উনার সাথে থাকলে আমি এই মুহুর্তে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো ।

_______________________

ইয়াশা আপুকে হলুদ ছোঁয়াই । সবাই গ্রুপ ডান্স করছে কেউ কেউ আবার কাপল ডান্স করছে । আভরিন এসেছিলো কিন্তু সবার তেমন এক পাত্তা না পেয়ে চলে যায়। আভরিনের উপর এখনো সবাই রেগে আছে । নানুজান তো আভরিনের চেহারা দেখতেও নারাজ ।অনয় ভাইয়ার বাড়ির লোকেরা যাওয়ার পর অনয় ভাইয়া আসে । সবাই একসাথে ডি জে গানে ডান্স করে । একসময় ইয়াশা আপু আমাকে টেনে তাদের মাঝে নিয়ে যায় । অনেক মানুষের ভিড় আর ধাক্কাধাক্কি । আমি কিছুতেই বের হতে পারছি না । আচমকাই অগ্নি কোথা থেকে যেন আমার সামনে এসে দাড়ায় । দুহাত দিয়ে আমাকে নিজের বেড়াজাল আটকায় । যেন কেউ আমার কাছে ঘেষতে না পারে । আমি উনার দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকাই কিন্তু উনি সে দিকে কোনো তেক্কার করে না । উনি আমার দিকে গাঢ় দৃষ্টি তে তাকিয়ে । আমি উনার চোখে চোখ রেখে উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি । দুজনের চোখে চোখে যুদ্ধ হচ্ছে । এক সময় পিছন থেকে কারো ধাক্কায় উনার বুকে এসে পড়ি । উনিও আমাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে । সরে আসার চেষ্টা করলে উনি হাতের বাধন আরো শক্ত করে ধরে ।

__________________________

কিছুক্ষণ পূর্বেই ফাংশন শেষ হয়েছে । অগ্নির সব মেয়ে কাজিন গুলো কি জানো ফিসফিস করছে । উনাদের নাকি আলাদা পার্টি আছে ।নিশিত ,আতিফা ,আনায়া ,আদিবা এমনকি ইয়াশা আপুও আছে তাদের দলে । হিয়া আপু অনেক আগেই নিজের রুমে চলে গেছে । আমি যেতে চাইলে যেতে দেয় না । ইয়াশা আপুর নির্দেশ যাওয়া যাবেনা । ছাদের কাচের রুমে সবাই গোল করে বসে । মাঝে দুইটা জুসের বতলের মত কিছু রাখা । আর কয়েকটা গ্লাস । এক এক করে সবাই গ্লাসে জুস নেয় ।ইয়াশা আপু আমার হাতেও ধরিয়ে দেয় এক গ্লাস । আমি ছোট ছোট করে সবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি ,

– “আপু এগুলো কি ? ”

আনায়া দাঁত বের করে হেসে বলে ,

– ” বিদেশি অরেঞ্জ জুস ভাবী ! ”

– “তোমরা পেলে কি করে ? ”

নিশিত বলল,

– “ভাইয়ারা এনেছে তাদের থেকে চুরি করেছি ! ”

– “ও মাই গড চুরি করেছো! যদি জানতে বহুত রেগে যাবে । ”

ইয়াশা আপু আমার পিঠে চাপড় মেরে বললেন ,

– “আরে মাইয়া চিল মারো । কিছু টের পাবে না ! ”

সবাই গ্লাসে নিয়ে গিলে ফেলে । আমিও ভয়ে ভয়ে গ্লাসটা হাতে নিয়ে জুসটা মুখে দেই । মুখে ছোঁয়াতেই কেমন জানো অরেঞ্জ ফ্লেবার মিষ্টি তিক্ত স্বাদ পাই ।শরীর কেমন জানো গরম ভাব । গলা দিয়ে নামার সময় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলো ।
কিছুক্ষণের মাঝেই শরীর কেমন জানো হাল্কা হাল্কা লাগছিলো । সব কিছু ডাবল দেখছিলাম । টেষ্ট যেমনি হোক না কেন ভালো লাগছিলো । নিজেকে কেমন জানো মুক্ত স্বাধীন লাগছিলো । আবার আরেক গ্লাস জুস নিয়ে গিলে ফেলি । কিছুক্ষণের মাঝেই নেশা হয়ে যায় । আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই কেমন জানো পাগলামো করছে । আমার কেন জানো শুধু হাসি আসছে । মনে হচ্ছে মনের সব ফিলিংক্স যেন উপড়ে বের হয়ে আসছে । আমি দু হাত মেলে ঘুরতে লাগি । হঠাৎ ই বড় এক থাম্বার সাথে আটকিয়ে যাই । মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি সামনে দুইটা অগ্নি দাড়িয়ে আছে । পাশেই অনয় ভাইয়া ,নিহাদ ভাইয়া ,অভয় ভাইয়াকেও দুটো করে দেখা যাচ্ছে । আমি ফিক করে হেসে দেই । ঘাঁড় বাঁকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দুলতে দুলতে প্রশ্ন করি ,

– “আপনারা সবাই কি টুইন ? এই যে এখানে একজন ঐখানে একজন । ওয়াও !! ”

আমার কথায় ফিক করে অনয় ভাইয়া হেসে দেয় । আমি সেদিকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে অগ্নির কাছে চলে যাই । উনার গলায় নিজের হাত পেঁচিয়ে কপাল কুঁচকিয়ে উনার দিকে তাকাই । অগ্নি আমার দিকে নিজের ভয়ংকর অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে । হু কেয়ার্স ? আমি আদো আদো গলায় জিগ্যেস করি ,

– “এই যে রাক্ষসরাজ সব সময় কেন এমন অগ্নিরুপ ধারণ করেন বলেন তো ? নাম অগ্নি বলে কি সব সময় অগ্নিরুপ ধারণ করতে হবে ? বলুন বলুন ? ”

উনি দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দেয় ,

– “তুমি কি চুপ করবে ? ”

– “না না আমি একদম চুপ করবো না । আমি তো এখন গান গাইবো । আপনি শুনবেন ? ”

পিছন থেকে নিশিত ,আতিফা ,আনায়া ,আদিবা এসে একত্রে সুর তুলে বললেন ,

– “বলো ভাবী বলো আমরা শুনবো ”

আমি অগ্নির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে জোরে গান ধরি ,

“বন্ধুর দুইটা চোখ ,আরে বন্ধুর দুইটা চোখখখ ”

বন্ধুর দুইটা চোখ যেন দুই নালা বন্ধুক ”

“আরে গুল্লি পাইরা ”

ডিস্কাও~~~~ডিস্কাও

“আরে গুল্লি মাইয়া ভাঙলো আমার মনেরই সিন্দুক রে মনেরই সিন্দুক ”

আমি এতোটুকু গাইতেই দেখি ইয়াশা আপু নিশিত ,আতিফা ,আনায়া ,আদিবা সবাই নাচতে শুরু করেছে । অগ্নি রেগে আমার হাত টেনে নিজের সামনে দাঁড় করায় । ভাইয়ারা হাসতে হাসতে পরে যাচ্ছে । আমি পিটপিট চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । আমার মুখে শয়তানি হাসি । অগ্নি আমাদের সবাই কে ইচ্ছে মত ঝেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকায় । ধমক দিয়ে বললেন ,

– “যা তামাশা করার করেছো । এবার রুমে চলো । ”

– “না আমি যাবো না । ”

– “হুর আমি বলেছি রুমে চলো । ”

– “আমি বলেছি তো আমি যাবো না । ”

উনি রেগে গর্জন করে বললেন,

– “হুররররর !”

– “আচ্ছা আমি যাবো কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ”

উনি ভ্রু কুঁচকিয়ে বললেন ,

– “কি?? ”

– “আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে । ”

উনি রেগে ছোট্ট একটা শ্বাস ছাড়ে । আমাকে কোলে তুলে নেয় । আমি উনার বুকে মাথা রেখে আদো আদো চোখে উনার দিকে তাকাই । উনি আমাকে কোলে করে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে ।

(কাল গল্প নতুন মোর নিবে😶)
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৯

অগ্নি ধপ করে উনার বিছানায় আমাকে ফেলে । আমি বিছানায় শুয়ে উনার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে । উনার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ।উনি আমার কাছে এসে আমার সামনে বসে আমার মাথা টিকলি খুলছিলেন । এমন সময় হ্ঠাৎ নিজের দুহাতে উনার গলা পেঁচিয়ে ধরে । উনার বুকে নিজের মাথা ছোঁয়াই।আদো আদো গলায় বলি ,

– “কেন এমন করেন বলুন তো? কেন বার বার রেগে যান ? আমাকে কি একটু আদর করা যায় না ? বলুন যায় না কি ? ”

উনি অন্যদিকে তাকিয়ে আমার হাত উনার গলা থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন,

– “হুর তুমি এখন তোমার মাঝে নেই । নেশা পুরোপুরি চড়ে গেছে । একটু ঘুমাও আমরা সকালে কথা বলবো কেমন ? ”

অগ্নির এমন কথায় আমার খুব অভিমান হয় । আমি রেগে ছোট ছোট চোখ করে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বললাম,

– আমার কোনো নেশা টেশা হয় নি । আমি তো একটু জুস গিলেছি । আ’ম এবসুলেটলি ফাইন । এসব আপনার আমার থেকে দূরে যাবার বাহানা । আমি বুঝি সব । সব বুঝি !
কিন্তু আজ তো আমি আপনাকে নিজের থেকে পালাতে দিবোনা । একদমই দিবো না । ”

– “হুর ঐটা জুস ছিলো না । ঐটা কাসিস অরেঞ্জ । একপ্রকার নেশা জাতিয় ড্রিংক্স ।
এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো প্লিজ ”

আমি ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলি,

– “উহু একদম না । আমি একটুও ঘুমাবো না । একটুও না ! ”

অগ্নি তখনো নিরোত্তর। আমার কি হলো জানিনা হুট করে নিজের গায়ের থেকে উড়না ছুঁড়ে নিচে ফেলে দেই । লেহেঙ্গার টপস শর্ট হওয়ায় পেটটা দৃশ্যমান । অগ্নি কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে সাথে সাথে অন্যদিকে নিজের চোখ ফিরিয়ে নেয় ।অন্যদিকে তাকিয়ে বড় নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললেন,

– “হুর উড়না টা পড়ো ”

আমি ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেই ,

– “উহু পড়বো না । এটা পচা । আমি একদম পড়বোনা । খুব গরম লাগে ! ”

অগ্নি কয়েক সেকেন্ড ছোট ছোট শ্বাস নিয়ে বেড থেকে নেমে উড়নাটা আমার গায়ে জড়িয়ে দেয় । অগ্নি গায়ে জড়িয়ে দেওয়ার কয়েক মুহূর্ত পরে আমি আবার তা নিচে ফেলে দিয়ে হাসতে লাগি । অগ্নি আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে ।
আমি সে দিকে খেয়াল না দিয়ে অগ্নির গলা আবার পেঁচিয়ে ধরি । বুকে মাথা রেখে বাঁ পাশে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিঝুঁকি করতে করতে বলি,

– “আপনাকে অনেক কথা বলার আছে । অনেকককক কথা ! ”

উনি আমার পিঠে আলতো করে হাত রেখে বললেন,

– “হুম বলুন শুনছি ”

আমি মাথা উঁচু করে উনার দিকে মায়া চোখ করে তাকিয়ে বলি,

– “জানেন আপনাকে আমার কতটা ভালোলাগে ? এই যে এতো গুলো ভালোলাগে। আর আজকে এই হলুদ পাঞ্জাবি তে তো মাশাল্লা !
আপনার কথা ,আপনার মিটমিট করে হাসি ,আপনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার কত ভালোলাগে ? এই যে আপনার ঠোঁটের নিচে কালো তিলটা আমাকে কতটা টানে আপনি জানেন ? আমি জানি আপনি জানেন না এসব । কেন জানতে চান না ? কেন আমার দিকে একটু ভালো করে তাকান না ? আমি কি সুন্দর না ? ”

অগ্নি আমার কথায় হেসে দেয় । আলতো করে আমার এক গালে নিজের হাত রেখে আমার চোখে চোখ রেখে মাতাল গলায় বললেন ,

-“হুর তোমার নিজের ও জানা নেই তুমি কতোটা সুন্দরী । মাথায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মত সুন্দরী । যার থেকে চোখ সড়ানো বড্ড দায় । সকাল বেলা যখন আমার সামনে ভেজা চুলে দাড়াও । চুলের পানি গুলো যখন তোমার পিঠ ছুঁয়ে দেয় সেই দৃশ্য আমাকে কতটা অগোছালো করে দেয় তোমার কোনো আইডিয়া আছে ? মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমার সেই কত আগের চেনা । কত পুরনো সম্পর্ক তোমার সাথে । তোমার ঠোঁটের হাসিতে এক অদ্ভুত শক্তি আছে নিমিষেই সামনে থাকা মানুষের সব মন খারাপ উদাও করে স্নিগ্ধতায় ভরে দেওয়ার শক্তি । ”

আমি উনার কথায় মজে গিয়েছি । দিন দুনিয়া আমার কোনো কিছুর কোনো খেয়াল নেই । আজ ইচ্ছে করছে নিজেকে উনার সামনে বিলীন করে দেই । যদি এতে শাস্তি স্বরূপ আমার মৃত্যুও হয় তাই সই । এই একরাতের জন্য আমি শতবার মৃত্যু স্বাদ ভোগ করতে রাজি । আচমকাই আমার কি হলো জানা নেই হুট করে উনার ওষ্ঠ জোড়া নিজের ওষ্ঠ এর মাঝে নিয়ে নেই।প্রথম কয়েক সেকেন্ড উনি থম মেরে থাকে । হয়তো বুঝে উঠতে পারছিলো না কি হচ্ছে । কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই উনি সাড়া দেয় । আমি আস্তে আস্তে উনার মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছিলাম । দুজন এক হয়ে যাচ্ছিলাম । সত্যিকার অর্থে উনার স্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছিলাম । আজ যেন আমার ভালোবাসা সত্যিকার অর্থে পূর্নতা পাচ্ছিলো । ভালোবাসার এক নতুন সাগরে ভেসে যাচ্ছিলাম ।

সকালের মিষ্টি রোদের দুষ্টু আলো মুখের উপর পড়তেই আমার ঘুম ভাঙে । মাথা প্রচন্ড রকম ব্যথা করছিলো । মাথায় দু হাতে চাপ দিয়ে ধরে উঠে বসি । পুরো মাথা ভ্যানিস হয়ে আছে । কিছু সময় থম মেরে বসে থাকার পর রাতের কথা পুরোপুরি মনে আসে । আমি পাশে চোখ তাকিয়ে দেখি অগ্নি নেই । সারারুমে চোখ বুলিয়ে দেখি রুমের আসবাবপত্র ফুলদানী ভাঙা । এসব কে করেছে? অগ্নি ? কিন্তু কেন? আর সে কই ? তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে অগ্নিকে খুঁজতে লাগি । ওয়াশরুমে নেই, রুমে নেই ,তবে কি বারান্দার দিকটায় আছে ?
আমি আর কিছু চিন্তা না করেই বারান্দার দিকে দ্রুত পায়ে যাই । আমি যা ভেবেছিলাম তাই । হ্যা অগ্নি দাড়ানো ।আমি ঝট করে ছুটে যেয়ে অগ্নিকে পিছন থেকে শার্ট খামচে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরি । বড় বড় শ্বাস ফেলতে লাগি । ভয় হচ্ছিলো ভেবেছিলাম উনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে । আমি কান্না জড়িত গলায় বলি ,

– “আই লাভ ইউ । আই লাভ ইউ । আমি আপনাকে ভালোবাসি । আপনি বুঝেন না ? কেন বার বার আমার কাছে এসে এভাবে ছেড়ে চলে যান ? ”

বলেই আরো শক্ত করে উনাকে জড়িয়ে ধরি । অগ্নির কোনো সাড়া শব্দ নেই । বেশ কিছু সময় কেটে যায় । আমি অগ্নির হাত ধরতেই টের পাই হাতটা ভেজা ভেজা । আমি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্ত ।আমি তাড়াতাড়ি করে উনাকে টেনে বিছানায় বসাই ।পুরো রুমে মেডিসিনের বক্স খুঁজতে লাগি । ড্রেসিংটেবিলের শেষ নিচের ড্রয়ারে পাই । মেডিসিন এনে উনার পায়ে সামনে হাটু গেরে বসি । হাত অনেকটা কেটে গেছে । মনে হচ্ছে কাচের কোনো কিছু শক্ত করে চেপে ধরেছিলো । হাতে এখনো ছোট ছোট কাচের টুকরা লেগে আছে ।খুব সাবধানতার সাথে তা পরিষ্কার করে । হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগি । হঠাৎ ই উনি শীতল কন্ঠে বললেন ,

– “স্যরি হুর । কাল রাতে যা কিছু হয়েছে সবকিছুর জন্য স্যরি । কাল আমিও কিছুটা ড্রাংক ছিলাম । নেশার ঘোরে তোমার সাথে এই ভুল করে ফেলেছি । ”

উনার কথায় আমি স্থব্দ হয়ে বসে আছি । কি বলবো ? কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না । উনি আবার বলতে শুরু করলেন ,

– “আমি বারবার তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি । যতবার তোমার কাছে আসি আমার প্রথম ভালোবাসার কথা স্বরণ হয়। আমি কোথাও তোমাকে খুঁজে পাইনা বার বার আমার ভালোবাসার কথা মনে পড়ে । গতরাতেও তাই হয়েছে । আমি তোমাকে ঠকাতে চাই না হুর। কিন্তু সত্যি তো এটাই যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না । তোমার প্রতি জাস্ট আমার এট্রাকশন আছে । তুমি ভালোবাসা ডিজার্ভ করো । যা আমি কোনো দিন তোমাকে দিতে পারবোনা ।
কিন্তু হ্যা আমি তোমাকে ঠকাতে পারবো না । আমার ভুলের মুষল আমি দিবো ।তোমার প্রাপ্য অধিকার আমি তোমাকে দিবো । কিন্তু কখনো ভালোবাসতে পারবো না । ”

আমি ভাবলেশহীন ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি । উনার চোখে জল চোখ মুখ লাল হয়ে আছে । চোখে মুখে স্পষ্ট অপরাধবোধ । উনি মাথা নিচু করে বসে আছে । আমি শীতল কন্ঠে বললাম ,

– “আপনি বলছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না । হুম আমি মানলাম । আমি তো আপনার থেকে দূরে ছিলাম । তাহলে কেন আমাকে নিজের মায়ায় ফেললেন ? কেন আমার এতো কেয়ার করলেন ? কেন আমাকে ভালোবাসতে বাদ্ধ করলেন ? বলুন ? ”

উনি এখনো চুপ করে আছে ।উনার কোনো উত্তর নেই । আমি কান্না করতে করতে বলি ,

– “জানি আপনার কাছে কোনো উত্তর নেই । আর না থাকবে । আসলে ভুল আমার ছিলো যে আমি আবার কাউকে ভালোবাসার অপরাধ করেছি।আমার বুঝা উচিত ছিলো ভালোবাসা আমার জন্য নয় ।আপনি বলছেন আমাকে ভালোবাসেন না । হুম মানলাম নেই আমার জন্য ভালোবাসা । তাহলে কেন বারবার আমার উপর নিজের অধিকার খাটাতে আসেন ? এটারও উত্তর নেই তাই তো ?
আপনি স্ত্রীর অধিকার দিয়ে কি আমার উপর দয়া করতে চাইছেন ? আমাকে কি আভরিন ভেবেছেন ?
চাইনা আপনার কোনো অধিকার আর না কোনো দয়া।ছোট থেকে শুধু মানুষের দয়ার উপর বেঁচে এসেছি ।আমি আর চাইনা কারো দয়া।হ্যা ,কিছুদিনের জন্য নিজের অবস্থান আর বাস্তবতা ভুলে গিয়েছিলাম । কিন্তু এখন বেশ বুঝতে পারছি ।সবকিছু আমার সামনে স্পর্শ । আজ এখনি এই মুহূর্তে আমি ভুলে যাচ্ছি আমি আপনাকে ভালোবাসতাম । কাল রাতে আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিলো । আর আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক ছিলো । কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী আপনার সাথে একবছর থাকবো । কিন্তু আমাদের মাঝে কোনো প্রকার সম্পর্ক থাকবেনা । একই ছাদের নিচে অপরিচীতদের মত থাকবো । ”

উনার চুপ করে আছে । আমি ছোট নিশ্বাস ছেড়ে বলি,

– “জানেন এই মুহূর্তে আমার আপনাকে কি করতে ইচ্ছে করছে ? আপনাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে । না হয় নিজের শরীর কুচিকুচি করে কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে । ”

উনি মাথা নিচু করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন ,

– “আমাকে খুন করে দেও এতে হয়তো কিছুটা শান্তি পাবো । আমি পারছিনা এই অপরাদবোধ নিয়ে বাচঁতে ।তোমার চেয়ে অনেক বেশি অশান্তি তে আমি আছি । আমাকে খুন করে মুক্তি দেও । ”

আমি আর কোনো কথা বললাম না । উনি এখনো মাথা নত করে বসে আছে । আমি সেখান থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াই । এই লোকে চেহারা দেখার মত ইচ্ছে আমার মাঝে নেই।ওয়াশরুমের দরজায় দাড়িয়ে বললাম,

– “আজ নিজের থেকে আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন । কিন্তু একদিন এমন সময় আসবে যেদিন আপনি আমাকে খুঁজবেন। কিন্তু তখন আর আমি আপনার থাকবো না । আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো । ”

বুক ফেটে কান্না আসছে । শাওয়ার ছেড়ে ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কান্না করি ।এমনটাই কি আমার সাথে হওয়ার ছিলো ? আমার জীবনে কি ভালোবাসা পাবার কোনো অধিকার নেই ? আমার জীবনে ভালোবাসা সবচেয়ে বড় অভিশাপ । নিজের ভাগ্যের উপর তাচ্ছিল্যের হাসি আসছে ।আমাদের স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কটা অগ্নির কাছে ছেলেখেলা ! তার মনে আমার জন্য কোনো অনুভূতি নেই ভালোবাসা নেই । এখনো উনার সবটা জুড়ে উনার প্রথম ভালোবাসা রয়েছে ।
সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর কোনো দিন উনার দিকে ফিরে তাকাবো না । যেমন সবার জন্য ভালোবাসা নয় । তেমনি আমার জন্যও না ।

চলবে ….❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here