~নিজের প্রেমিককে আরেক নারীর হাত ধরে ক্যাম্পাসে হাঁটতে দেখছি তবে এটা যে প্রথমবার এমনটা নয়। আমার দেখা অনুযায়ী এটা দ্বিতীয়বার। দুজনকে কি সুন্দর হাস্যজ্জল দেখাচ্ছে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেন তা উপভোগ করছি। হঠাৎ প্রেমিকের সাথে দৃষ্টির মিলনে যেন চমকে উঠলো সে। আমাকে এখানে এভাবে হয়তো আশা করেনি। এমন সময়ে সে দূরের থেকে “ধারা” বলে ডেকে উঠলো। এক মূহুর্ত আর দাঁড়ালাম না সেখানে, নিজের সবটুকু জোর নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলাম।
আশেপাশের কোনো দিক খেয়াল নেই আমার। নিজের মতো ছুটে যাচ্ছি, মনে হচ্ছে এখান থেকে সম্পূর্ণভাবে পালিয়ে যেতে হবে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে গতি কমে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দৃষ্টি একটু উপরে তুলতেই দেখলাম কালো হুডি পরিহিত এক ব্যক্তি। চোখে মুখে খানিকটা বিরক্তির ছাপ তার তবে তা প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। যদিও বিষয়টি আমার চোখ এড়িয়ে গেল না।
— এখানে কি ম্যারাথন হচ্ছে? আপনি কি ভুলবশত রাস্তা ভুল করে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েছেন?
— ক্ষমা করবেন? কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? ঠিক বুঝতে পারলাম না।
— এমন পা*গলা ঘোড়ার মতো দৌড়ালে এমনিতেও বুঝবেন না।
কথাটা শুনে মেজাজ আগের থেকে বেশি খা*রাপ হয়ে গেল। অদ্ভুত মানুষ তো! আমাকে চিনে না পর্যন্ত আর এইসব বলছে কোন সাহসে? হাত দুটো রা*গে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে একাই। কিছু বলতেই যাবো আবার কি মনে করে থেমে গেলাম। “সরি” শব্দটা উচ্চারণ করেই সেখান থেকে চলে এলাম।
ক্লাসে প্রবেশ করেই আগে জিনিয়াকে খুঁজতে শুরু করলাম। তখনই জানালার পাশের থেকে আমার ডাক পড়তেই সেখানে তাকালাম। জিনিয়া বসে আছে আর আমাকে ওখানে যেতে ইশারা করছে। আমিও এক নিরাশ চেহারা নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বসে পড়লাম। এবার জিনিয়া ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
— কিরে ধারা? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
— কেমন আর দেখাবে বল? নিজের সিদ্ধান্তের উপর আক্ষেপ হচ্ছে। চিরকাল খালি নিজের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আক্ষেপ করে গেলাম আর এবারও একই পথে হাঁটা দিয়েছি।
— হেঁয়ালি করছিস কেন? ভালো মতো বলবি তো ঠিক কি হয়েছে?
— তুই যা বলেছিলি তাই হয়েছে।
— মানে? কি বলেছিলাম? কোন ব্যাপারে?
— তূর্যর ব্যাপারে যা বলেছিলি সেটা নিয়েই বলছি। ওকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়াটা বো*কামি ছিল।
— কি করেছে তূর্য?
— আজকে ওকে ক্যাম্পাসে এক মেয়ের সাথে হাতে হাত রেখে হাঁটতে দেখেছি। দুইজনকে দেখে মনে হলো বেশ উপভোগ করছে একে অপরের সঙ্গ।
— তাহলে আবারও একই কাজ করলো তোর তূর্য।
— আমার তূর্য না। ওকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিয়েছিলাম ঠিকই তবে আগের মতো আশা রাখিনি। প্রথমবার ছেড়ে যেতে দ্বিধা বোধ করলো না দ্বিতীয়বার আর কি?
এমন সময় তূর্য ক্লাসে হাঁপাতে হাঁপাতে এলো আর ওকে দেখেই মেজাজটা আবারো বি*গড়ে গেল। তূর্য ধীরে ধীরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি জিনিয়ার দিকে তাকাচ্ছি আর জিনিয়া আমার দিকে। তূর্য আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে গেল।
— ধারা একবার আমার কথা শুনো। তুমি যা দেখেছো বিষয়টা তেমন না।
— ওহ তাই? খুব উপকার করলে ধন্যবাদ।
— আমার কথাটা তো শুনবে একবার? আর তুমি তো বলেছিলে আজকে আসবে না তাহলে আজকে এলে?
— এইটার সুযোগই নিতে চেয়েছিলে তাই না? ব্যাপার না তুমি এখন থেকে এমন সুযোগ প্রতিদিন পাবে।
— মানে কি বলতে চাও? প্রতিদিন কিসের সুযোগ?
— এই যে নিজের পছন্দের নারীর সাথে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ।
— কি বলছো তুমি হ্যা?
— কেন? বুঝতে পারছো না? এতোটা অবুঝ তো তুমি না তূর্য।
— কি বলতে চাচ্ছো তুমি? আর এসব কথা বলে ঠিক কি বুঝাতে….
— “পাবলিকের রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ালে খুশি হতাম।” হঠাৎ কারো গম্ভীর কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকালাম সকলে। একি? এইটা তো সেই ছেলেটা যার সাথে তখন ধাক্কা লাগলো। কালো হুডি,কালো ব্যাগ আর সাথে গলায় ঝুলানো হেডফোন নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আবার বলা শুরু করলো,
— এটা কি আপনাদের পারসোনাল ক্লাসরুম?
তূর্য এবার বি*রক্তির সাথে ছেলেটার দিকে তাকালো। চোখ পাকিয়ে বলল,
— আপনার সমস্যা কোথায় যদি এটা পারসোনাল ক্লাসরুম হয়েও থাকে? নিজের কাজে যান।
— ওয়েল ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমি আমার কাজেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনি রাস্তা আটকে থাকায় আমার যাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে। এমনিতেও যেভাবে আপনারা চিল্লা*চিল্লি করছেন এখানে সবারই স*মস্যা হচ্ছে।
কথাগুলো শুনে আশেপাশে তাকালাম। সবাই হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এতোক্ষণে বুঝলাম আমরা যে এখানে বসে উচ্চস্বরে ঝা*মেলা করছি এতে সবাই অনেকটা বি*রক্ত। শান্ত গলায় তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— তূর্য তুমি এখন যাও। এখানে থেকে সবাইকে বি*রক্ত করার মানে নেই।
— কিন্তু আমাদের কথা তো এখনো শেষ হয়নি।
— কথা বলার মতো আর কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। আশা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়েছো।
তূর্যর চোখ মুখে এতোক্ষণে লাল বর্ণ ছেয়ে গেছে। রা*গে গজগজ করতে করতে চলে গেল তূর্য। সেই অচেনা ব্যক্তির দিকে তাকালাম, তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। উনি এই অসময়ে না এলে হয়তো এখানে একটা সুন্দর নাটক শুরু হয়ে যেত আর আশেপাশের সবাই তা উপভোগ করতো।
ছেলেটা একটা অদ্ভুত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পিছনে গিয়ে একদম লাস্ট সিটে বসে পড়লো। “ওমা! উনি আমাদের ক্লাসে? হিসাব তো মিলছে না। উনি যদি আমাদের ক্লাসেই হয়ে থাকেন তাহলে এতো গুলো মাস কোথায় ছিলেন? আজ হঠাৎ কি আকাশ থেকে পড়লেন না কি?” এগুলো ভাবতে ভাবতেই কেউ হালকা ধা*ক্কা দিল, পাশে তাকিয়ে জিনিয়াকে আবিষ্কার করলাম। জিনিয়া যে এতোক্ষণ এখানে উপস্থিত ছিলো এটা একদম মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো। জিনিয়া কেমন হাবলা টাইপ লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।
— এই কি হয়েছে তোর? ওমন হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?
— না মানে দোস্ত ওই কালুকে চিনিস না কি?
— অ্যা? কালু? এই কালুটা আবার কে?
— আরে ওই যে পিছনে কালো হুডি আর হেডফোন ওয়ালা ওইটার কথা বলছি।
— ওহ্ উনার কথা বলছিস। ওনাকে আমি কিভাবে চিনবো? আমি ও তো আজকে প্রথম দেখলাম।
— কি উনি উনি করছিস? এইসব উনি উনি করলে জামাই জামাই ফিল আসে।
— এই চুপ! মাথার মধ্যে কী তোর হ্যা? যতো আ*জে*বা*জে কথাবার্তা।
— আমার মাথায় আবার কি থাকবে ব্রেন আছে। কিন্তু কালুটা কিন্তু দেখতে সেই।
একটু রিভার্সে গিয়ে ওনার চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করলাম। চেহারা মাথায় আসতে মনে হলো হ্যা দেখতে তো খারাপ না। আবার কি ভেবে পিছনে ঘুরতেই চোখ দুটো আকাশ উঠে গেল। আমতা আমতা জিজ্ঞেস করলাম,
— আপনি এখানে কি করছেন? আপনি না ওই পিছনের সিটে বসে ছিলেন?
— কেন? এইটা রিজার্ভ করা না কি? আপনার ওই ল্যাম্পপোষ্টের মতো দেখতে বয়ফ্রেন্ডের সিট এটা?
— ল্যাম্পপোষ্ট? আর ওইটা আমার বয়ফ্রেন্ড না এখন আমার এক্স।
— এক্স হোক আর ডুপ্লেক্স হোক। আমি এখান থেকে কোথাও নড়ছি না।
— সমস্যা নেই ও আসবে না তাই আপনি বসতে পারেন। আচ্ছা কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
— না থাক। আমি অনেক কিছুই মনে করি।
কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে গেল। মানুষটা তো আসলেই অদ্ভুত। এতো উল্টা উল্টা কথা কিভাবে বলে? তবে আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে। আচ্ছা উনি এতগুলো মাস কোথায় ছিল? হঠাৎ কোথা থেকে আসলো? কিছুই মাথায় আসছে না। এমন সময় পিছন থেকে আওয়াজ এলো, সাথে সাথে ঘুরলাম পিছনে।
— ভার্সিটিতে কোনো নতুন টিচার এসেছে?
— দুইদিন আগেই একজন জয়েন করেছে।
— ওহ্ থ্যাংকস।
— আচ্ছা আপনি এতোগুলা মাস কোথায় ছিলেন? এতো দিন পর ক্লাস করতে এসেছেন?
উনি আবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বলতে লাগলেন,
— এতো দিন প্রয়োজন পড়েনি তাই আসিনি।
— ঠিক বুঝলাম না?
— আপনি বুঝে কি করবেন? আপনার তো বুঝে কাজ নেই। তাই না বুঝে নিজের কাজ করুন।
এই বলে হেডফোন পড়ে মোবাইলে মনোযোগ দিল। এইদিকে ঠিক কি হলো কিছুই বুঝলাম না। এতো দিন পরে ভার্সিটিতে এসেছে তাও আবার প্রয়োজনে? কি মানুষ রে বাবা। এরমধ্যেই ক্লাসে স্যারের আগমন হলো। ক্লাস চলতে চলতেই বুঝলাম পিছনের মানুষটা ঘুমাচ্ছে। টিচার আসছে যাচ্ছে কিন্তু ওনার ঘুম ভাঙছে না। এতো দিন পর কি ঘুমাতে এসেছে ক্লাসে? এই ঘুম ওনার প্রয়োজন?
ক্লাস শেষে একে একে সবার বের হওয়ার পর আমিও বের হলাম। দুই পা আগে বাড়াতেই কেউ হাত ধরে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠা*সা দিয়ে ধরলো।
— কি সমস্যা কি তোমার???
চলবে……………..^-^
#শ্রাবণের_ধারা
~লেখানীতে- ওয়াসেকা_তাবাসসুম~