এলি ম্যান পর্ব -০৬

#গল্প – #এলি_ম্যান (৬ষ্ঠ #পর্ব)

সকাল ৯টায় ঘুম ভেঙেছে সালাহউদ্দিন-এর। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে নামল সে। আসে পাশে দেখে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল। ব্রাশ করা অবস্থাতেই ফোন বাজার শব্দ শুনতে পেলো সে। তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে চলে আসল। ফোনের স্ক্রিনে প্রিয় মানুষটার কলের চিহ্ন দেখে বেশ খুশি হলো সে। ফোনটা রিভিউ করতেই ওপাশ থেকে প্রিয় মানুষটার কন্ঠ শুনতে পেলো সে। রাতের ঘটনা বিস্তারিত বলে বুঝিয়ে দিল ফোন না দেওয়ার কারণ। বিনা ঝগড়াতেই কথা শেষ হলো তাদের।

স্টিফেন সাহেবের নিজ ঘরের রোবট মিকি খাবার গুছিয়ে দিতে ব্যস্ত। সে একটার পর একটা বাটি এনে টেবিলে রাখছে। পাশেই সোফায় বসে আছেন স্টিফেন সাহেব। সালাহউদ্দিনকে দেখেই ডেকে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিল। সালাহউদ্দিন বারবার মিকি’র দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। ওর দিকে তাকাতেই তার গালে ব্যাথা করে। কি থাপ্পড়টাই না মেরেছিল এই বদমাশ রোবটটা।

মুখে খাবার নিয়েই স্টিফেন সাহেবকে প্রশ্ন করল সালাহউদ্দিন,
‘ স্যার, কালকে রাতে যে রোবট গুলো দেখিয়ে বললেন সেগুলো মানুষের অনূভুতি বুঝতে পারবে। এটা কিভাবে সম্ভব? ‘

‘ কম্পিউটারের দাবা খেলেছ কখনো? ‘

‘ জ্বি অনেকবার খেলছি। কেন! ‘

‘ সেখানে খেয়াল করেছ যে কম্পিউটার তোমার চাইতেও ভালো বুঝতে সক্ষম।’

‘ অবশ্যই, আমি আমার লাইফে অনেক মানুষকে হারিয়েছি। কিন্তু কম্পিউটারের সাথে পেরে উঠি না।’

‘ এটা এই জন্যই যে, ঐ সফটওয়্যার এর মধ্যে ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স সেট করা থাকে। তোমার মতো আরো কয়েকশত দাবাড়ুর মস্তিষ্কের বুদ্ধি এই গেমে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘

‘ জ্বি এই জিনিসটা আমিও বুঝি। কিন্তু রোবট… ‘ সালাহউদ্দিনকে থামিয়ে দেন স্টিফেন সাহেব।

‘ আসলে সাধারণত রোবটের মধ্যে কম্পিউটারের মতো করেই সব সেট করা থাকে। যার ফলে তাকে যেই কমান্ড দেওয়া হয় সে ঐ কাজ গুলোই করে। কিন্তু যদি কম্পিউটারের মধ্যে গেমসের মতোই বেশ কিছু ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স দিয়ে দেওয়া হয়। আর তার ভিতরে এটা সেট করে দেওয়া হয় যে মানুষ ট্রল করার সময়ে কেমন ভাবে কথা বলে। আর রাগ করার সময়ে কেমন চেহারা করে আর ভাষা কিভাবে ব্যবহার করে। তবে এই রোবট গুলো অবশ্যই বুঝতে সক্ষম হবে। কিন্তু কিছুকিছু মানুষ আছে। এরা রাগ করলে যেমন হাসলেও তেমনই হয়ে থাকে। এদের ক্ষেত্রে রোবট গুলো কিছুই বুঝতে পারবে না। এখানেই মানুষের তৈরি রোবট আর স্রষ্টার তৈরি মানুষের মধ্যেকার ফারাক। মানুষ কখনো স্রষ্টার মতো নিখুঁত জিনিস তৈরি করতে পারবে না। ‘

স্টিফেন সাহেবের কথাটা সালাহউদ্দিন-এর কলিজায় লাগল। আসলেই অসাধারণ একটা কথা বলেছেন উনি। স্রষ্টার মতো পরিপক্ব কেউ নেই। ওনার “কুন” শব্দের উচ্চারণেই “ফায়াকুন” তথা সব কিছু হয়ে যায়।

সালাহউদ্দিন ওনার উত্তরে বেশ খুশি হয়েছে। মুচকি হাসতে হাসতে দ্রুত খাওয়া শেষ করে নেয় সে। আজকে তাকে তীর আর ধনুক তৈরির কাজ করতে হবে। স্টিফেন সাহাবের কারখানাতে কোন জিনিসের যেন কমতি নেই। তাই এই কাজে তাকে কোন প্রকারের বেগ পেতে হবে না।

দুপুর দুইটা বারো মিনিট…

দুপুরের খাবার শেষে রেস্ট নিল সালাহউদ্দিন। অতঃপর কারখানায় চলে গেল নিজের কাজ করতে। তার বর্তমান সম্বল কেবল ছোট একটা পিস্তল। তাই তীরটা বানিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। রেডিমেড একটা ধনুক কিনে এনেছে সালাহউদ্দিন। তার উপরে বিভিন্ন জায়গায় রাবার এবং অন্যন্য রঙিন প্লাস্টিক লাগিয়ে সেটাকে বেশ সুদর্শন করে নিল সে। এবার কেবল তীর তৈরির পালা। সালাহউদ্দিন তীর তৈরি করতে বিশেষ একটা পদ্ধতি ব্যবহার করে। সে রড, বোর্ড, প্লাস্টিক, স্টিল এবং তীর তৈরির অরিজিনাল পদার্থ ব্যবহার করে না। সে ব্যাটারীর মতো একটা খোলস তৈরি করে তীরের আকৃতিতে। তারপর তার ভিতরে খোপ খোপ করে এসিড এবং অন্য প্রয়োজন পদার্থ যোগ করে নেয়। তীরের মাথাতে সেটার বিদ্যুৎ আউটপুট। আর তীরের পিছনের সাইটে রাবারের ভিতরে সাবধানে বসানো হয়েছে স্টিলের প্লেট। যেটার সংযোগ দেওয়া হয়েছে ভিতরে, বিদ্যুৎয়ের ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা হয় এটিকে।

সালাহউদ্দিন-এর পিঠে থাকা তীরের বক্সটা একটা ব্যটারীর মতোই। যার বাইরের সাইটে প্লাস্টিক এবং রাবারের মোটা আবরণ দেওয়া আছে। যাতে করে কোন ভাবেই নিজের কাঁধে বিদ্যুৎয়ের স্পর্শ না লাগে। বক্সের নিচের দিকে এটাচিং প্লাগ লাগানো আছে। তাই তীর গুলো সেখানে লাগতেই তীরের ভিতরে বিদ্যুৎ সঞ্চয় হতে থাকে।

তীরের সূচালো মাথাটা তৈরী করা হয়েছে স্টিল দিকে। সেটার তিন কোনায় তিনটা স্প্রিং দিয়ে এমন ভাবে লাগানো হয়েছে। যাতে করে স্টিলের ক্যাপ টা যদি কমপক্ষে ঘন্টায় ত্রিশ কিলোমিটার গতিতে ধাক্কা খায় তবেই এটার ভিতরে লাগানো স্প্রিং কুঁচকে যাবে। এবং ভিতরের বিদ্যুৎ চলে আসবে সামনের স্টিলের ক্যাপ টাতে।

বিষয়টা এমন যে, যখনই সালাহউদ্দিন ত্রিশ কিলোমিটার গতিতে তীর নিক্ষেপ করবে তখন তীরটা কোথাও গিয়ে ধাক্কা খেতেই তীরের মাথায় বিদ্যুৎ চলে যাবে। এবং সেই জিনিসটাকে বিদ্যুৎপৃষ্ট করে দিবে। এই একটা তীর একসাথে সর্বোচ্চ ৬-৭ জন লোককে হত্যা করতে পারবে। যদি লোক গুলো সবাই একসাথে থাকে। এবং তারা একে অপরকে স্পর্শ করা অবস্থায় থাকে।

আঁট টা তীর তৈরি করে নিল সে। আর তীরের বক্স তৈরি করে দিবেন স্টিফেন সাহেব। তিনি এসব বৈদ্যুতিক বিষয়ে খুব পারদর্শী। তাই সালাহউদ্দিন সিস্টেম ডিজাইন করে ওনার কাছেই দিলেন বানিয়ে দেওয়ার জন্য।

লেখকের iD- #সালাহউদ্দিন_তারিক (salahuddin.tarik)

দুপুর ৩: ৩০ মিনিট….

FBI এর স্পেশাল টিম, টেক ডট কম। এর মধ্যে মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বিকাল ৪:০০ টা নাগাদ। ইতোমধ্যেই সবাই উপস্থিত হওয়া শুরু করে দিয়েছে। বিশ মিনিটের মধ্যেই সবাই এসে বসে পড়ল নিজ নিজ সিটে। কেউ কেউ চুপ করে আছে। কেউবা কানাকানি কথা বলছে। এরমধ্যেই এক লোক তার সহযোগী মিস্টার লিয়ান এর দিকে তাকিয়ে। লোকটি বুঝে উঠতে পারল না ওনাকে দেখে হাসাহাসি করার কি হলো। এমন সময়ে সে খেয়াল করল লোকটি হাসাহাসির সময়ে তার প্যান্টের দিকে তাকাচ্ছে। মিস্টার লিয়ান দ্রুত প্যান্টের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল ওনার প্যান্টের সামনে সাদা কিছু পরে ভিজে আছে। উনি অন্য দিকে ঘুরে সেগুলোতে হাত লাগাতেই বুঝতে পারল কেউ একজন নিজের চকবার আইসক্রিমটা ওনার প্যান্টের উপরেই বিসর্জন দিয়েছে। উনি তাড়াতাড়ি রুমাল বের করে সেগুলো মুছে নিল। আর ঐ লোকটির কানেকানে বলব, ‘ভাই, এগুলো আইসক্রিম এতো হাসির কিছুই নেই।’

এমন সময়েই রুমে প্রবেশ করল ইভানা। সবাই মুহুর্তের মধ্যেই চুপ হয়ে গেল। একদম পিনপিনে নিরবতা বিরাজ করছে রুমে। ইভানা প্রথমেই পুলিশ প্রধান মিস্টার গ্রোনাড কে প্রশ্ন করে বসলেন,

‘ তা মিস্টার গ্রোনাড সাহেব। কোন সুরাহা করতে পেরেছেন কি? ‘

‘ সরি ম্যাডাম, আমার টিম পুরোপুরি চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই আর তার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না ‘

‘ হয়েছে আর খুঁজতেও হবে না তাহলে। এবার আমি যা যা বলি সেটাই করুন। রাস্তায় সিসি টিভি ক্যামেরা বাড়িয়ে দিন। তুষার এবং রিজভী দু’জনকে আরো সতর্ক হতে বলুন। আর রাস্তায় হুডি পরা কাউকে দেখলেই দাঁড় করাবেন। চোখ চেক করে দেখবেন তার রং সবুজ ধরনের কিনা। ‘

ইভানা নিজেই একশ্বাসে সব বলে দিল। মিস্টার গ্রোনাড কিছুই বলতে পারল না। শুধু সাথে সাথে কয়েকবার জ্বি ম্যাডাম জ্বি মেডাম করল। আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে ইভানার দিকে। ইভানা মিটিংয়ের মধ্যেও বারবার নিজের চুল ঠিক করতেছে। এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যেও সে আজ সাজতেছে। অথচ কখনই সে নিজের তেমন যত্ন নেয় না। তাই তাজ্জব হয়ে সবাই ইভানার দিকে তাকিয়ে রইল। একজন তো ভুলে মুখ ফসকে বলেই ফেলল,
‘ ম্যাডাম আপনাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। ‘

ইভানা বড়বড় চোখ করে লোকটার দিকে তাকাল। চেহারাটা অগ্নিমূর্তি ধারণ করতেই বলে উঠল। দাঁড়ান, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন। আপনারা একজনও একটা কাজ ঠিক মতো করতে পারলেন না। আর এখানে আসছেন আবার আমার রূপের প্রশংসা করতে। লজ্জা নেই আপনাদের! এভাবে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকুন।

ইভানার কাজে সবাই হতবাক। কিন্তু ইভানা মোটেও বিচলিত নয়। সে যেন একটা স্কুল শিক্ষিকার মতোই একটা বাচ্চা ছেলেকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। সে এসবের কোন তোয়াক্কা না করেই সবাইকে সবার কাজ বুঝিয়ে দিল।
রাত হওয়ার আগেই আরো অনেক জায়গায় ক্যামেরা বসিয়ে দেওয়া হলো। তুষার এবং রিজভীকে আরো তৎপর হওয়ার তাগাদা দেওয়া হলো।

রাত ১২ : ১৪ মিনিট…

তুষার ক্যামেরায় সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেয়ে দ্রুত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে কল দিল। যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি সব কিছু গুছিয়ে বলে দিল সে। পুলিশ টিম খুব দ্রুত রওনা দিল সেখানে। গাড়ির সাউন্ড দিয়ে শত্রুপক্ষকে সতর্ক করতে চায়নি তারা। তাই এবার নিঃশব্দে চলে আসল তারা। সবাই নিজেদের পিস্তল তাক করল সন্দেহ ভাজন শত্রুর দিকে।

সালাহউদ্দিন আবছা অন্ধকারে শত্রুর জন্য অপেক্ষা করছিল। এই মুহূর্তেই সে দেখতে পেলো তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লেজার লাইটের লাল আলো পড়ছে। সে বুঝে গেল পুলিশ তাকে দেখে ফেলেছে। গুলি তাক করে রেখেছে। এখন একটু নড়াচড়া করলেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যাবে তার শরীর।

(চলবে ইনশা আল্লাহ) ( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)

© #লেখক – সালাহউদ্দিন তারিক (জুনিয়র মুগলি)

.

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here