#আমি_ফাইসা_গেছি(১২)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
কুশান গোলাপ সাহেবের কথা রাখলো।সে তোড়াকে তাদের বাড়িতে এখনি নিয়ে যাবে না বলে ঠিক করলো।কিন্তু কুশান তোড়াকে ছাড়া থাকবে কি করে?এতোদিন সে তার প্রেমিকা ছিলো সেজন্য দুইজন আলাদা থাকাতে কিছু মনে হয় নি।কিন্তু এখন তো তোড়া তার ধর্ম আর আইন অনুযায়ী বিবাহিত স্ত্রী।বিবাহিত স্ত্রীকে একা রাখা কি ঠিক হবে তার?
গোলাপ সাহেব কুশানকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, কি হলো বাবা?বলো কিছু।তবে আমি তোমাকে আরেকটা অপশন দিতে পারি যদি তুমি চাও অপশন টা গ্রহন করতে পারো।
কুশান গোলাপ সাহেবের কথা শুনে ওনার দিকে তাকালো আর ভাবতে লাগলো কি অপশন দিতে চাচ্ছেন গোলাপ সাহেব?
কুশান কিছু বলার আগেই গোলাপ সাহেব বললো,তুমি চাইলে তোড়ার সাথে আমাদের বাড়িতেই থাকতে পারো।
গোলাপ সাহেবের মুখে এরকম প্রস্তাব শুনে কামিনী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।তিনি তখন উচ্চস্বরে বললেন,সেই থেকে ভুলভাল বকে যাচ্ছেন গোলাপ সাহেব। আমরা মানবতার খাতিরে কেউ কিছু বলছি না।কিন্তু এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না।আপনি এতো বড় সাহস কোথায় পেলেন?কোন সাহসে আমার ছেলেকে নিজের বাড়িতে রাখতে চাচ্ছেন?
গোলাপ সাহেব কামিনীর এমন মেজাজ দেখে হেসে উঠলেন,আর বললেন,
এতো জ্বলছেন কেনো বিয়াইন?আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে ঘর জামাই শব্দ টা আপনারা প্রথম শুনলেন?আপনার তিনজন জামাই ই তো ঘরজামাই থাকে।শুনেছি তাদের দিয়ে ঘরের রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘর ঝাড়ু দেওয়া,মেঝে মোছামুছি করা এমনকি কাপড়ও ওয়াশ করে নেন।আর এখন শুনতিছি আপনার হাজব্যান্ড ও ঘরজামাই থাকে। তাহলে কুশান আমাদের বাড়িতে ঘরজামাই থাকলে সমস্যা টা কোথায়?আমরা অবশ্য আপনাদের মতো অতো টা পাষাণ নই।কুশানকে আমরা জামাই আদরেই রাখবো।
কামিনী গোলাপ সাহেবের কথায় কান না দিয়ে কুশানের কাছে দৌঁড়ে গেলো আর বললো,বাবা!তোড়ার বাবা এসব কি বলছে?আর তুই তবুও কিছু বলছিস না?তোকে আমার থেকে আলাদা করতে চাচ্ছে আর তুই চুপচাপ শুনছিস শুধু।এই তোর মায়ের প্রতি ভালোবাসা?তুই কি এখন আমাদের সাথে যাবি না এখানেই থাকবি ক্লিয়ার করে বলে দে তো সবাইকে।
কুশান তখন সবার উদ্দেশ্যে বললো,আমি এখন ক্লিয়ার করে একটা কথাই বলতে চাই যে আমি আমার আম্মুকে ছেড়ে কখনোই শশুড় বাড়িতে থাকতে পারবো না।ঠিক তেমনি তোড়াকে একা একা এখানে রেখে নিজের বাড়িতেও যেতে পারবো না।আমার ফ্যামিলিকেও প্রয়োজন আমার তার সাথে আমার বউ কেও চাই।এর পরেও যদি তোমরা আমার কথা বুঝতে না পারো তাহলে আমার কিছুই করার নাই।
গোলাপ সাহেব তখন বললো, কিন্তু আমি তো এখনি আমার মেয়েকে তোমাদের বাড়িতে পাঠাতে পারবো না।তোমার আম্মু আর বোনদের আগে কথা দিতে হবে আমার মেয়ের সাথে তারা আর খারাপ আচরণ করবে না আর তার স্বাধীনতায় কোনো বাঁধা দিতে পারবে না।তোড়াকে তারা নিজের মেয়ের মতো মনে করবে।
কামিনী তখন গোলাপ সাহেবের কাছে এগিয়ে এসে বললো,এটা জীবনেও সম্ভব না।আমার সংসার আমার কথামতো চলবে।অন্য কাউকে তাতে নাক গলাতেই দিবো না আমি।আর আপনার মেয়ে কখনোই আমার মেয়ে হতেই পারবে না।পর কখনো আপন হয় না এটা নিশ্চয় জানেন আপনি?
গোলাপ সাহেব তখন বললো তাহলে আমরা আমাদের মেয়েকেও পাঠাবো না।
কামিনী তখন বললো, সেটা আপনাদের ব্যাপার।আপনাদের মেয়ে না গেলেও চলবে আমাদের।
কামিনী আর গোলাপ সাহেব একদম কাছাকাছি গিয়ে তর্কাতর্কি করতে লাগলো।কেউ এক চুল ছাড় দিতে রাজি নয়।
কুশান হঠাৎ চিৎকার করে বললো, তোমরা এবার থামবে প্লিজ।আমাকে নিয়েই তো সবার প্রবলেম তাই না?
তাহলে আমিই আর থাকি না।না আমি আমার নিজের বাড়িতে থাকতে চাই, না শশুড় বাড়িতে।না আমার মায়ের দরকার আছে,না আমার বউ এর।আমার কারো প্রয়োজন নাই।এই বলে কুশান চলে যেতে ধরলো।
কুশানকে চলে যাওয়া দেখে তোড়া দৌঁড়ে চলে গেলো কুশানের কাছে।আর বললো, কুশান কই যাচ্ছো?আমাকেও নিয়ে যাও।
কামিনী এবার নিজেও এগিয়ে গিয়ে বললো, বাবা কুশান!মাকে রেখে কোথায় যাবি?
কুশান কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সত্যি সত্যি বেরিয়ে পড়লো।তার আর ইচ্ছা করছে না কারো সাথে কথা বলতে।
তোড়া কোনো উপাই না দেখে দৌঁড়ে গিয়ে কুশানের হাত ধরে বললো, আমিও যাবো তোমার সাথে।
কুশান সেই কথা শুনে তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো,আমি কোথায় যাবো সেটা তো নিজেই জানি না।হয় তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হবে।
–আমিও তাহলে তোমার সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো।যেখানে তোমার পরিবারেরও কেউ থাকবে না আর আমার পরিবারেরও কেউ থাকবে না।যেখানে আমরা দুইজন স্বাধীন ভাবে থাকতে পারবো।
কুশান সেই কথা শুনে তোড়ার হাতে হাত মিলিয়ে বললো হ্যাঁ চলো।দেখি কি আছে আমাদের ভাগ্যে?
কামিনী তখন দৌঁড়ে গিয়ে কুশানকে আটকালো।আর বললো, বাবা কই যাচ্ছিস?
কুশান তখন বললো দেখি কোন দিকে যাওয়া যায়।
কামিনী তখন বললো,কি বলছিস এসব?আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো?
কুশান তখন বললো তাহলে তুমিও চলো আমাদের সাথে।না খেয়ে আর না শুইয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবো।
কামিনী তখন বললো,ঠিক আছে বাবা।আমি গোলাপ সাহেবের শর্ত মেনে নিলাম।তবুও তুই আমাকে এভাবে একা করে দিস না?তোড়াকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চল।
কুশান তখন বললো এসব আমাকে বলে হবে না আম্মু।তোড়ার বাবাকে গিয়ে বলে আসো।তাদের মেয়েকে তারা কি কি শর্তে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।
ইরা মিরা লিরা হঠাৎ কামিনীর কাছে এসে বললো, আম্মু কি করছো কি?তুমি কি পাগল হয়ে গেলে?এই মেয়েটার কথামতো কি আমাদের এখন চলতে হবে?
কামিনী তখন বললো,তাছাড়া যে আর কোনো উপাই নাই।আমি আমার ছেলেকে এভাবে হারাতে পারবো না।আমার একমাত্র আদরের ছেলে সে।আমি থাকবো রাজ প্রাসাদে আর সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে?
ইরা তখন বললো তাহলে আমরা কি তোমার আদরের মেয়ে না?
মিরা তখন বললো আমাদেরকে কি তোমার সন্তান মনে হয় না?
লিরা তখন বললো,Ammu you always do Kushan Kushan, Why mom why? We are not your beloved children?
কামিনী তার মেয়েদের এমন প্রশ্ন শুনে চিৎকার করে বললো,তোরা প্লিজ থামবি এবার?আমার মাথা কিন্তু ভীষণ রকমের গরম আছে।প্লিজ আর গরম করিস না আমার মাথাটা। জামাইদের নিয়ে তোরা বাড়ি চলে যা।আমি কুশান আর ওর বউকে নিয়ে পরে আসতিছি।
ইরা, মিরা,লিরা তার মায়ের এমন কথা শুনে ভীষণ মন খারাপ করলো।তারা আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।শাহিন,মাহিন আর তুহিনকে রেখেই তোড়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
কামিনী এবার গোলাপ সাহেবের কাছে এসে বললো, বিয়াই সাহেব আমার আর আমার মেয়েদের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।আমাদের তোড়ার সাথে এমন টা করা মোটেও উচিত হয় নি।এবারের মতো পাঠিয়ে দিন তোড়াকে।এখন থেকে তোড়া আমাদের বাড়িতে তার নিজের বাড়ির মতোই থাকবে।যেহেতু তোড়া কুশানের বউ আর কুশান আমাদের একমাত্র ছেলে সে হিসেবে আমাদের সংসারে তোড়ার পূর্ণ অধিকার আছে।আজ থেকে সে আমাদের বাড়িতে আমার মেয়ের মতোই থাকবে।
গোলাপ সাহেব সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা ঠিক আছে বিয়াইন।আপনি যে আপনার ভুল বুঝতে পারছেন এটাই অনেক।আর আমাদের ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন বিয়াইন।তোড়া আমাদের ও একমাত্র মেয়ে।সেজন্য ওকে নিয়ে আমাদেরও ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়।
–ওকে বিয়াই সাহেব।আসলে তোড়াও যেমন আপনার একমাত্র আদরের মেয়ে তেমনি কুশানও আমার একমাত্র আদরের ছেলে।এদের জন্য যে আমরা কত টা ভাবি এরা নিজেরাও সেটা জানে না।আমার ছেলেকে আমি বড্ড ভালোবাসি বিয়াই সাহেব। তার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।
কামিনীর এমন কথা শুনে চামেলি হেনা বেগম কে ফিসফিস করে বললো ব্যাপার কি আম্মা?কামিনী এতো সহজে কিভাবে নত হলো?এর পিছনে আবার অন্য কোনো রহস্য নাই তো?যদি ওরা তোড়ার কোনো ক্ষতি করে?
হেনা সেই কথা শুনে বললো, না,না।কিছু করতে পারবে না।আমাদের জামাই বাবাজি ঠিক আছে। ইসঃ এমন নাতি জামাই ই তো চাইছিলাম আমি।পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো বউ কে ছাড়বে না।দেখলে কিভাবে কামিনী কে হ্যান্ডেল করলো?
চামেলি তখন বললো আল্লাহ আমার মেয়েটাকে বাঁচাও আল্লাহ।এই কাল নাগিনীরা যেনো সত্যি সত্যি ভালো হয়ে যায়।
কুশান তার মায়ের কথা শুনে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি আম্মু।আমার ব্যবহারে যদি তুমি একটু কষ্ট পেয়ে থাকো প্লিজ মাফ করে দিও।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনোই কষ্ট দিতে চাই নি।
–ঠিক আছে বাবা।এখন চল বউকে নিয়ে।এই বলে কামিনী নিজেই তোড়ার হাত ধরলো।তিনি এক হাতে তোড়াকে আর অন্য হাতে কুশানকে নিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।
কামিনীর এমন রুপ থেকে সবাই ভীষণ আশ্চর্য হলো।গোলাপ সাহেব খুশিতে গদগদ হলেও চামেলি বেগম খুশি হতে পারলেন না।তিনি শুধু ভাবতে লাগলেন একজন ডেঞ্জারাস মহিলা কি করে এক সেকেন্ডের মধ্যে পালটে যেতে পারে?
তোড়ার চাচী বিড়বিড় করে বললো, এতই কান্ডকারখানা ঘটালো এই তোড়া।আল্লাহই জানে আরো কত কাহিনি দেখাবে সে?
স্বর্ণা তা শুনে বললো আম্মু তুমি একটু বাজে কথা বলা বন্ধ করবে?তুমি তোড়া আপুকে সহ্য করতে কেন পারো না?তোড়া আপু তো তোমার মেয়ের মতোই। তাই না?
স্বর্ণার আম্মু সেই কথা শুনে মুখ ভেংচিয়ে বললো মেয়ের মতো!মেয়ে তো নয়।এই বলে তিনি তার রুমে চলে গেলেন।
স্বর্ণা আর সায়ক দুইজনই খুশি হলো যে তোড়া আবার তার শশুড় বাড়ি চলে গেলো।এবার তোড়া নিশ্চয় আর কোনো অঘটন ঘটাবে না।কারণ কামিনী যদি বাড়াবাড়ি না করে তাহলে তোড়াও আর অতিরিক্ত কিছু করবে না।কারণ তোড়াকে তারা ভালো ভাবেই চেনে।যে তার সাথে খারাপ আচরণ করে সেও তার সাথে খারাপ আচরণ করে।আর যে তার সাথে ভালো আচরণ করে সে তার সাথেও ভালো আচরণ করে।
🖤
কামিনী তোড়াকে বাড়ি নিয়ে গিয়েই তার কিছু গহনা তুলে দিলো তোড়ার হাতে।আর বাড়ির চাবিটা তোড়ার হাতে দিয়ে বললো, আজ থেকে এই চাবিটাও তোমার।
তোড়া কামিনীর এমন ব্যবহারে সত্যি আশ্চর্য হলো।সে বুঝতে পারছে না এটা কি কামিনীর অভিনয় না সে সত্যি সত্যি ভালো হয়ে গেছে?
তোড়াকে চুপচাপ থাকা দেখে কামিনী বললো,কি হলো তোড়া?অবাক হয়ে যাচ্ছো নাকি?অবাক হওয়ার কিছুই নাই।এসব কিছু করছি শুধুমাত্র আমার কুশানের জন্য।আমি ভাবতেও পারছি না কুশান তোমাকে এতো টা ভালোবাসে?তোমার জন্য সে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় থাকতেও রাজি।সত্যি তুমি যাদু জানো তোড়া।এক দিনেই কিভাবে আমার ছেলেকে বশ করে ফেলাইছো?
তোড়া কামিনীর কথা শুধু শুনছে।কিন্তু সে কিছুই বলতে পারছে না।মনে হচ্ছে তার ঠোঁট দুটি কেউ যেনো সুপারগ্লু দিয়ে আঁটকিয়ে দিয়েছে সেজন্য সে কথা বলতে পারছে না।
কামিনী এবার তোড়ার হাত ধরে বললো, তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমার ছেলেটার শুধু যত্ন নিবে।আজ থেকে সম্পূর্ণভাবে ওকে আমি তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম।ওর যেনো কোনো অযত্ন না হয়।আমার কুশান কি কি খেতে পছন্দ করে?কিভাবে চলাফেরা করে?কখন কোন ড্রেস পড়ে? কখন কি করে? সব রুটিন করা আছে।রুটিন অনুযায়ী আজ থেকে তুমি ওর খেয়াল রাখবে।এখন রুমে যাও।ছেলেটা আমার একা একা আছে।
তোড়া কামিনীর কথা শুনে বেকুবের মতো চলেও যাচ্ছে।কারণ তার যে কোনো বোধ শক্তিই নাই।এই কোন কামিনী কে সে দেখছে?
কামিনী হঠাৎ আবার তোড়ার হাত ধরে বললো, তোড়া!বার বার বলছি একমাত্র সন্তান আমার।ওর যেনো কোনো অবহেলা না হয়।কারণ আজ থেকে আমি আর ওকে নিয়ে মাথা ঘামাবো না।
তোড়া তখন মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
তোড়া চলে যাওয়ার পর কামিনী ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলো।তার আজ কেনো জানি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।সে তো ভাবতেই পারে নি এরকম দিন তাকে দেখতে হবে।তার ভালোবাসার সন্তানকে এভাবে অন্য আরেকজনের হাতে তুলে দিতে হবে।কামিনী সব সহ্য করতে পারে কিন্তু কুশানের প্রতি অন্য কারো অধিকার সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।কিন্তু এটাই যে বাস্তবতা।একজন ছেলে তার মাকে যতটুকু ভালোবাসে ঠিক ততটুকু ভালোবাসা যে তার বউকেও দিতে হয়।যেসব ছেলে এই ব্যালেন্স রক্ষা করে চলতে পারে সেই হলো আসল পুরুষ।কারন মা আর বউ এর ভালোবাসা সম্পূর্ণই আলাদা।মা থাকবে মায়ের জায়গায় আর বউ থাকবে বউ এর জায়গায়।দুইজন কেই তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী সমানভাবে ভালোবাসতে হবে।শুধু মা আর বউ না।সবার ভালোবাসাই আলাদা।বাবাকে এক ভাবে ভালোবাসতে হয়,আবার বোনদের ও তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী ভালোবাসতে হয়।এইভাবে ফ্যামিলির প্রতিটা সদস্য কে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী সমানভাবে ভালোবাসলে কোনো সংসারেই আর কোনো অশান্তির সৃষ্টি হতো না।তবে এটা সবাইকে বুঝতে হবে।
🖤
কামিনীর দেওয়া গহনা গুলো এক এক করে পড়তে লাগলো তোড়া।এ যেনো তার কাছে এক অমূল্য ধন।কারণ তার শাশুড়ী তাকে ভালোবেসে গহনা গুলো দিয়েছে।আজ দিয়ে মনে হচ্ছে সে এ বাড়ির বউ।কুশান বিছানায় শুয়ে থেকে শুধু দেখছে।
হঠাৎ কুশান বিছানা থেকে নেমে এলো।আর তোড়াকে এমন সাজগোছ করা দেখে বললো,
মাথা থেকে কি সব ভূত বের হয়ে গেছে?না এখনো কিছু বাকি আছে?
তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে বরং গহনা গুলো খুলে রাখলো।
কুশান তা দেখে বললো আরে আরে খুলছো কেনো?পড়েই থাকো।শাশুড়ী ভালোবেসে দিয়েছে।কিছুক্ষন একটু থাক সে ভালোবাসা।
তোড়া তখন বললো,আচ্ছা কুশান! এগুলো কি আম্মুর বিয়ের গহনা?
–হ্যাঁ।
তোড়া তখন বললো তাহলে আম্মু সেগুলো আমাকে দিলো কেনো?
–তা আমি বলতে পারলাম না।তবে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আজ থেকে আম্মু আমার মতো তোমাকেও ভীষণ ভাবে ভালোবাসবে।
তোড়া তখন বললো কুশান আম্মু কি সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবাসবে?
–না,মিথ্যে মিথ্যে ভালোবাসবে।এখন ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমাকে নিয়ে একটু ভাবো না?
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো, তোমার কথা কি ভাববো?এই বলে তোড়া চলে যেতে ধরলো।
কুশান তখন তোড়ার হাত টেনে ধরে তাকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো,এক বছর রিলেশন করেছি একটা দিন এই গোলাপি রঙের নরম ঠোঁটদুটি স্পর্শ করেও দেখি নি,আর দুই দিন হলো বিয়ে হয়েছে এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও স্বামীর অধিকার ফলায় নি।আমার জন্য কি তোমার একটুও মায়া দয়া হয় না?একবারের জন্যও কি মনে হয় না এই ছেলেটা তার বউ এর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো, তুমি যে বেকুব,একটা হাদারাম ছেলে এজন্য বউ এর আদর সোহাগের অপেক্ষায় বসে আছো।গাধা কোথাকার। ছাড়ো আমাকে।এই বলে তোড়া বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
কুশান বুঝতে পারলো না তোড়ার ভাব সাব? সে কি তাকে আদর করতে বলছে না এখনো রাগ করেই আছে?
এজন্য কুশান আবার চলে গেলো তোড়ার কাছে আর বললো, এই তোড়া!ক্লিয়ার করে বলো না?আমি তোমার মতো অতো প্যাঁচগোছ বুঝি না।
তোড়া কুশানের এমন কথা শুনে মনে মনে হাসতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো একজন ছেলে মানুষ এতো টা সরল কি করে হতে পারে?সে এখন বউকে আদর করবে না বসে থাকবে সেটাও নাকি এখন তাকেই বলে দিতে হবে?
–তোড়া?কিছু বলছো না কেনো?
তোড়া এবার উঠে বসলো বিছানায়,কি বলবো?
–না মানে তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর?
–না।এই বলে তোড়া আবার শুয়ে পড়লো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো এতো ভদ্র স্বামী দিয়ে আমি করবো টা কি?যে বউকে টাচ করার আগেও পারমিশন চায়।
কুশান এখনো বোকার মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।কারণ তোড়ার যে তেজ যদি তাকে আদর করতে ধরে আর সে উলটো রাগ করে তখন কি হবে?তখন তো আবার তার রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতেই আজকের রাত টাও শেষ হয়ে যাবে।
তোড়া এবার আর চুপ করে না থেকে বললো,ওভাবে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?লাইট অফ করে দিও শুয়ে পড়ো।
–তুমি না অন্ধকারে ভয় পাও।
তোড়া তখন বললো আগে পাইতাম।এখন আর পাই না।
কুশান সেই কথা শুনে লাইট অফ করে দিয়ে তোড়ার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে শুরু করবে সে?
তোড়া এবার নিজেই কুশানের পাশ হলো।ডিম লাইটের নীল আলোয় দুইজনকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তোড়া তখন বললো অত দূরে কেনো তুমি কুশান?এই কিছুক্ষন আগেই তো একেবারে প্রেম ভালোবাসা উছলে পড়তেছিলো।এখন এরকম দূরে দূরে কেনো?
–না মানে আমি একটু নার্ভাস ফিল করতেছি বাবু।কিভাবে তোমাকে লাভ করা শুরু করবো বুঝতে পারতিছি না।
তোড়া কুশানের এমন কথা শুনে চিৎকার করে বললো, আরে গাধার বাচ্চা এটাও কি এখন আমাকেই বলে দিতে হবে?আমার কিন্তু এবার ভীষণ রাগ উঠতেছে কুশান।জানোই তো রেগে গেলে আমাকে কেউ কন্ট্রোল করতে পারে না।
—-Ok, ok.রাগ কইরো না কলিজা।প্রথমবার তো।ভীষণ ভয় লাগছে।
তোড়া তখন নিজেই কুশানকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো তো আমার কি দ্বিতীয় বার?এই বলে তোড়া নিজেই কুশানকে জড়িয়ে ধরলো।
চলবে,#আমি_ফাইসা_গেছি(১৩)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
গোলাপি রঙের কাপড়ে সোনালি সুতা দিয়ে কাজ করা কালো পাড়ের একটা সুতি শাড়ি পড়ে নিলো তোড়া।ভেজা চুলগুলো ঘাড়ের উপর এলিয়ে দিয়ে হালকা একটু সাজুগুজু করে রুম থেকে বের হলো সে।রুম থেকে বের হওয়ার আগে চাবির গোছাটা আঁচলে বেঁধে নিতে ভুললো না।
কুশান এখনো ওঠে নি।কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে যে তোড়া সেই কখন থেকে ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নাই।তবে তোড়াকে আজ একটু সকাল সকাল উঠতে হয়েছে।শুধু আজ না এখন প্রতিদিন তোড়াকে সকাল বেলা উঠতে হবে।কারণ কামিনী নিজে তোড়ার হাতে সংসারের চাবি তুলে দিয়েছে।সংসারের পুরো দায়িত্ব এখন তোড়া নিজে পালন করবে। ঘরের একমাত্র বউ হিসেবে সবকিছু দেখার দায়িত্ব এখন তোড়ারই।
টুনি আর জয়া তোড়ার আগেই রান্নাঘরে প্রবেশ করেছে।তোড়াকে আসা দেখে টুনি জিজ্ঞেস করলো,
আজ কি কি রান্না হবে ভাবি?
তোড়া তখন বললো,আগের নিয়ম অনুযায়ীই সবকিছু চলবে।তোমরা খাবারের মেন্যু বের করে রান্নাবান্না শুরু করে দাও।একদম নিজের মতো করে কাজ করবে।আজ থেকে কেউ আর তোমাদের উপর হুকুমদারি করতে পারবে না।তোমাদের সাথে সাথে আমিও রান্না করবো।ওকে?
–ঠিক আছে ভাবি।এই বলে টুনি আর জয়া কাজ শুরু করে দিলো।কত বছর ধরে কাজ করছে তারা এ বাড়িতে।আজ দিয়ে মনে হয় কেউ তাদের সাথে এভাবে কথা বললো। এতোদিন লুতফা ছিলো রান্নাঘরের দায়িত্বে।যে সারাক্ষণ শুধু বকাবকি করতো তাদের।কোনো জিনিস একটু এদিক ওদিক হলেই যা নয় তাই বলে গালিগালাজও করতো।
তোড়া টুনি আর জয়া কে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই দেখে শাহিন,মাহিন,তুহিন একসাথে এদিকেই আসছে।
তোড়া ওদের কে দেখে নিজেই এগিয়ে গেলো।আর বললো,
দুলাভাই আপনারা এতো সকালে?
শাহিন সেই কথা শুনে বললো, প্রতিদিনের অভ্যাস তো সেজন্য ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
–ও আচ্ছা।তা আপনাদের কিছু লাগলে বলিয়েন।চা বা কফি কিছু কি দিবো?
–না, না।লাগবে না কিছু।আমরা আসলে তোমাকে একটা ধন্যবাদ দিতে আসছিলাম।সব তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে তোড়া।আমাদের কে যেভাবে এই বাড়ির লোকজন ব্যবহার করেছে সত্যি আমরা কারো সামনে মুখ দেখাতে পারতাম না।আজ থেকে আমাদের ও একটা কর্ম হবে।আমরাও অফিসে যাবো।সত্যি খুব আনন্দ হচ্ছে আমাদের।
শাহিনের কথা শুনে তোড়া বললো, ইটস ওকে দুলাভাই।ধন্যবাদ দিতে হবে না।আর হ্যাঁ অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজকর্ম করবেন।সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে নিবেন।
তুহিন তখন বললো আমরা আমাদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো।দেখি এখন ভাগ্য আমাদের কোন পর্যায়ে নিয়ে যায়?
হঠাৎ পিছন দিক থেকে মিরা চিৎকার করে ডাক দিলো মাহিন কে।
মাহিন? তুমি ওখানে কি করছো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? আমার কফি দিবে কখন?
এক এক করে বাকি দুই কাল নাগিনীও রুম থেকে বের হয়ে আসলো।আর তারাও তাদের হাজব্যান্ড দের হুকুম করলো।
ইরা শাহিন কে বললো, তার আদা আর লেবু চা কই?
লিরা তুহিন কে বললো, Where’s my black coffee Tuhin?
তোড়া তখন বললো আপু আপনারা জাস্ট কয়েক মিনিট সময় দিন আমি রেডি করে আনছি।
ইরা সেই কথা শুনে বললো, তোমাকে কে বলেছে? আমরা কি তোমার থেকে চেয়েছি?
মিরা তখন বললো, নিজের লিমিটের মধ্যে থাকো।কারণ বেশি বাড়াবাড়ি কিন্তু ভালো নয়।
তোড়া সেই কথা শুনে তিন বোনের কাছে গিয়ে বললো,আমি কি করলাম যে আপনারা আমাকে এভাবে বলছেন?আমি জাস্ট আপনাদের চা,কফি রেডি করতে চাইলাম।
লিরা তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো, তোমার হাতের চা কফি আমরা খাবো?ভাবলে কি করে?
তোড়া তখন বললো সেটা আপনাদের ব্যাপার।টুনি আর জয়া সকালের নাস্তা বানাতে ব্যস্ত আছে।আমি ফ্রি ছিলাম সেজন্য নিজেই রেডি করতে চাইছিলাম।
ইরা তোড়ার কথার গুরুত্ব না দিয়ে শাহিন,মাহিন,আর তুহিনের দিকে চোখ বড় বড় করে বললো, ওভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তোমরা?আমাদের কথা কি তোমাদের কানে যায় নি?
তোড়া তখন বললো আপু?ভাইয়াদের উপর চোখ রাঙানো বন্ধ করুন।কারণ আজ থেকে কোন ছেলেই রান্নাঘরে যাবে না।যার যেটা প্রয়োজন টুনি,জয়া আর আমাকে বলবেন।আর যদি মনে করেন আমাদের হাতের কিছু খাবেন না তাহলে নিজে রান্না করে খাবেন এই বলে তোড়া আবার রান্নাঘরে প্রবেশ করলো।তোড়া যখন হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিলো তার আঁচলে থাকা চাবিটি ঝনঝন করে বাজছিলো।তা শুনে তিন বোন একদম হিংসায় জ্বলে পুড়ে যেতে লাগলো।
এদিকে ইরা তোড়ার এমন কথা শুনে মিরা আর লিরা কে বললো,এই ছোটো লোকের বাচ্চা আমাদের কি বলে গেলো রে?আমাদের রান্না করতে বলছে?এতো বড় সাহস এর?আম্মু কই রে?ডাক দে আম্মুকে?
মিরা তখন বললো আপু শান্ত হ।ওই মেয়েকে এতো বড় পাওয়ার তো আম্মু নিজেই দিয়েছে।জানি না আম্মুর কি হয়েছে?আম্মু কেনো এরকম করলো সত্যি আমার মাথাতেই ঢুকছে না।
তিনবোন বৈঠক করতেই জারিফ চৌধুরী আর কামিনী চৌধুরী তাদের মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাসায় প্রবেশ করলো।
কামিনী তাদের মেয়েদের একসাথে দেখে বললো, মা তোরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস যে?কোনো সমস্যা?
ইরা,মিরা,লিরা কামিনীর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।কারণ তারা তিনজনই তাদের মায়ের উপর ভীষণ ভাবে রেগে আছে।
কামিনীর গলার আওয়াজ শুনে তোড়া তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসলো। আর এসেই বললো,আম্মু কি লাগবে আপনার?আব্বু আপনার কি প্রয়োজন?
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,তোমার শাশুড়ী কে শুধু এক গ্লাস সাদা পানি দাও।আর আমাকে একটু আদা লেবুর চা করে দিলেই হবে আপাতত।
–ঠিক আছে আব্বু।এই বলে তোড়া এক গ্লাস পানি এনে কামিনীর হাতে দিলো তারপর হন হন করে রান্না ঘরে ঢুকলো।
জারিফ চৌধুরী তখন কামিনী কে বললো, দেখছো কামিনী তোড়ার ব্যবহার?একদিনেই কত চেঞ্জ হইছে তোড়া?আসলে ঘরের বউ দের ব্যবহার শশুড় বাড়ির লোকদের উপর নির্ভর করে।শশুড় বাড়ির লোকজন বউ দের সাথে যেমন আচরণ করবে বউ রাও ঠিক তেমন আচরণ ই করবে।
কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা পুরো না শুনেই চেয়ারে গিয়ে বসলো।আর কি যেনো ভাবতে লাগলো?কামিনীর মতিগতি জারিফ চৌধুরী কিছু বুঝতে পারলো না।কামিনী কে অন্য মনস্ক দেখে জারিফ চৌধুরী বললো,
তোমার আবার কি হলো?পানি না পান করে ওভাবে হাতে ধরে আছো কেনো?
কামিনী সেই কথা শুনে জারিফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে পানি পান করতে লাগলো।
হঠাৎ যুথি এসে বললো খালা!খালা।আমি বাড়ি যেতে চাচ্ছি আজ।
–কেনো?আসছিস যখন থাক কিছুদিন।
–না খালা।থাকতে ইচ্ছে করছে না।আম্মুকে ছাড়া একা একা ভালো লাগছে না।ভীষণ বোরিং লাগছে আমার।
কামিনী তখন বললো, কিসের বোরিং রে?সোনিয়া আছে না?ওর সাথে গল্প করতে পারিস না?এভাবে ঘরের মধ্যে চুপ করে বসে থাকলে তো বিরক্ত লাগবেই?
যুথি কামিনীর কথা শুনে চুপ করে রইলো।আসলে যুথি বোঝাতে চাচ্ছে সে আর কেনো এভাবে পড়ে থাকবে এ বাড়িতে?কামিনী তো বলেছিলো কুশানের বউ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।সেজন্য কিছুদিনের মধ্যেই কুশান তোড়াকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবে।তারপর কামিনী যুথির সাথে কুশানের নতুন করে আবার বিয়ে দেবে।কিন্তু কামিনী তো নিজেই তোড়াকে বাড়ি এনেছে আর সংসারের সব দায়িত্ব তাকেই দিয়েছে।
তোড়া তার শশুড়ের জন্য চা এনে দিতেই দেখে যুথি দাঁড়িয়ে আছে। তখন তোড়া বললো, কি লাগবে যুথি তোমার?
–কিছু না।এই বলে যুথি তার রুমে চলে গেলো।
–তোড়া?তোড়া?কই তুমি?
তোড়া কুশানের কন্ঠ শোনামাত্র তার রুমের দিকে যেতেই কুশান নিজে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।
আর তোড়াকে দেখামাত্র বললো, তোমাকে না বলেছিলাম এলার্ম বাজলে আমাকে জাগিয়ে দিতে।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো, আমি কতবার তোমাকে যে ডেকেছি তোমার তো কোনো হুঁশই নাই।এখন তুমি যদি না ওঠো তাতে আমার কি দোষ?
কামিনী হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠলো আর তার রুমের দিকে পা বাড়াতেই কুশান তার মায়ের কাছে চলে গেলো।আর কামিনীর হাত ধরে বললো,সরি আম্মু!আজ জাগা পাই নি।
কামিনী কোনো কথা বললো না।
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, আজ থেকে আর তোকে উঠতে হবে না বাবা।আমি এখন থেকে রোজ রোজ যাবো তোর মায়ের সাথে।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, না আব্বু।তা হয় না।কাল থেকে আমিই যাবো আম্মুর সাথে।
কামিনী এতোক্ষণে কথা বলে উঠলো,
কামিনী বললো, বাবা এখন থেকে আর তোকে কষ্ট করে রোজ রোজ আমার সাথে যেতে হবে না।তোর বাবার সাথে যাবো।এই বলে কামিনী তার রুমে চলে গেলো।
কুশান বুঝতে পারলো তার মা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।এমন কেনো হলো আজ তার?সে তো সকালে উঠতে কখনো আলসেমি করে না?আম্মু নিশ্চয় ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।এখন আম্মুর রাগ ভাঙাবে সে কেমন করে?
এরই মধ্যে তোড়া জিজ্ঞেস করলো,কি খাবে এখন?
কুশান এতে একটু বিরক্তই হলো।সে তখন বললো, খাবো না কিছু।এই বলে সে তার রুমে চলে গেলো।
তোড়া তখন নিজেও কুশানের পিছু পিছু চলে গেলো।আর বললো,সকালে উঠতে না পেরে আর আম্মু কে মর্নিং ওয়াকে না নিয়ে যেতে পেরে সেই রাগ কি আমার উপর ঝাড়ছো তুমি?
–আমি কখন তোমার উপর রাগ ঝাড়লাম তোড়া?
–তাহলে আমার সাথে রাগ রাগ কন্ঠ নিয়ে কথা বললে কেনো? তুমি কিছু খাবে না সেটা তো একটু ভালো করে বলতে পারতে?তা না করে মেজাজ দেখিয়ে বললে কিছুই খাবো না।কিন্তু তুমি তো এসময় কফি খাও।
কুশান তোড়ার কথা শুনে বললো,তোড়া তুমি কি এই সকাল সকাল আমার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছো?আমি তো ভালো ভাবেই বললাম যে আমি কিছু খাবো না।তুমি এখন যাও তো আমার সামনে থেকে।তোমার ঘ্যানর ঘ্যানর আমার ভালো লাগছে না এখন।
–ঘ্যানরঘ্যানর করছি আমি?আমার কথা তোমার কাছে এখনো ঘ্যানরঘ্যানর মনে হচ্ছে?একদিনেই এতো অসহ্য হয়ে গেলাম আমি?
–ও মোর আল্লাহ!বাঁচাও আমাকে।এই বলে কুশান নিজেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
🖤
সকালের নাস্তা রেডি হয়ে গেছে।টুনি আর জয়া সব খাবার এক এক করে টেবিলে আনছে।এক এক করে সবাই নাস্তা করার জন্য আসতে লাগলো।শুধুমাত্র ইরা,মিরা, লিরা আসলো না।কামিনী যখন দেখলো তার মেয়েরা এখনো আসে নি তখন তিনি নিজেই চলে গেলেন মেয়েদের রুমে।
কামিনী কে দেখেও মেয়েরা তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলো।কামিনী তখন ইরার হাত থেকে ল্যাপটপ, মিরার হাত থেকে মোবাইল আর লিরার হাত থেকে বই কেড়ে নিয়ে বললো,
তাড়াতাড়ি নাস্তার টেবিলে চলে যাও।তোমাদের অফিস যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে।
ইরা তখন বললো, আম্মু আমরা বাহিরে করে নিবো নাস্তা।তোমরা করো গিয়ে।
কামিনী তখন বললো আমি মুখে মুখে তর্ক করা মোটেও পছন্দ করি না।যা বলছি সেটাই করো।তাছাড়া আজ তো একটু তাড়াতাড়িই অফিস যেতে হবে তোমাদের।জামাই দের তো সব বুঝিয়ে দিতে হবে।
মিরা সেই কথা শুনে বললো, আম্মু তুমি কি করে এতো চেঞ্জ হয়ে গেলে বলবে কি একটু?না মানে তুমি কি সত্যি আমাদের আম্মু?কেনো জানি চিনতে পারছি না তোমাকে?
কামিনী তখন বললো আমি ঠিকই আছি।তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারছো না কিছু।পাঁচ মিনিটের মধ্যে নাস্তার টেবিলে উপস্থিত চাই সবাইকে এই বলে কামিনী চলে গেলো।
কামিনী চলে যাওয়ার পর পরই তিন বোন একসাথে নাস্তার টেবিলে আসলো।সবাই উপস্থিত হলে তোড়া সবাইকে নাস্তা পরিবেশন করে দিলো।
নাস্তা করতে করতেই হঠাৎ কামিনী বললো,বাবা কুশান?তোর আগেই অফিস যাওয়ার প্রয়োজন নাই।সামনে যেহেতু ফাইনাল এক্সাম তোর, সেজন্য পরীক্ষাটা দিয়েই তবে অফিস যাস।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, তোমার যেটা ভালো মনে হয় আম্মু।
কামিনী তখন তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো, কি বলো তোড়া?
তোড়া কামিনীর প্রশ্ন শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো।কামিনী তাকে জিজ্ঞেস করছে?
কামিনী তখন বললো কি হলো? বলছো না যে কিছু?
তোড়া সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ আম্মু।এক্সাম শেষ হলেই যাক।
ইরা মিরা লিরা তখন মনে মনে ভাবলো তাদের আম্মু তোড়াকে এতো গুরুত্ব কেনো দিচ্ছে?
🖤
শাহিন,মাহিন,তুহিন আজ ভীষণ খুশি।তারা আজ থেকে যে অফিসে যাবে।সেজন্য তারা তিনজন রেডি হয়ে জারিফ চৌধুরীকে ডাকতে গেলো।জারিফ চৌধুরী শাহিন,মাহিন,তুহিন কে দেখে বললো,ওরা তিনজন কোথায়?
শাহিন তখন বললো, বাবা ওরা তিনজন চলে গেছে।
–ওকে নো প্রবলেম।তোমরা আমার সাথে যাবে।
এই বলে সবাই বেড়িয়ে পড়লো বাসা থেকে।
সকালের নাস্তা শেষ করেই তোড়া দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিতে লাগলো।বেশি মানুষ জনের জন্য বেশি বেশি রান্নাবান্না করতে হয়।এজন্য এখন থেকেই চলছে দুপুরের প্রস্তুতি।
হঠাৎ লুতফা আসলো রান্নাঘরে।তোড়া লুতফাকে দেখে বললো, চাচি কিছু বলবেন?
–না,এমনিতেই দেখতে আসলাম কি করছো তোমরা?
তোড়া সেই কথা শুনে লুতফাকে একটা মোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো চাচী বসেন।
–না বসবো না।
তোড়া সেজন্য তার কাজে মন দিলো।হঠাৎ কুশান ও আসলো রান্নাঘরে।আর বললো,তোড়া একটু রুমে আসো তো?
তোড়া কুশানের দিকে না তাকিয়েই বললো, ব্যস্ত আছি এখন।কি বলবে এখানেই বলো?
কুশান তখন বললো আমার একটা দরকারী জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না।প্লিজ খুঁজে দিয়ে যাও একটু।
তোড়া কেটে রাখা সবজিগুলো ওয়াশ করছিলো।কুশানের কথা শুনে এবার সে ঘুরে তাকালো আর বললো,কি জিনিস খুঁজে পাচ্ছো না?
কুশান তখন বললো তোমাকে না কাল ইয়ে গুলো দিলাম।সেগুলো দাও।
–ইয়ে?কি ইয়ে?বুঝলাম না।
লুতফা তখন বললো তোড়া তুমি না হয় কুশানের ইয়ে গুলো খুঁজে দিয়ে আসো।আমি দেখছি এদিকে।
হঠাৎ লুতফার হুঁশ হলো।সে ভাবতে লাগলো ইয়ে টা আবার কি?সবার সামনে জিজ্ঞেস করতেও পারছে না।যদি আবার সবাই তাকে বোকা ভাবে?তখন আবার টুনি আর জয়া তাকে দাম দিতে চাইবে না।রাজত্ব হারিয়েছে ঠিক আছে কিন্তু সম্মান তো হারায় নি সে?বরং আগের থেকে এখনি ভালো আছে সে?কি সুন্দর বসে থেকে দিন পার করছে?কিছুই করতে হচ্ছে না।
তোড়া বুঝতে পারলো কুশান সবার সামনে অভিনয় করছে।সেজন্য তোড়াও একটু অভিনয় করলো।
তোড়া তখন বললো তোমার ইয়ে আলমারির মধ্যে আছে।খুঁজে নাও গিয়ে।
কুশান তোড়ার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।আর মনে মনে বলতে লাগলো একবার শুধু পাই কাছে!
তোড়া তখন বললো ওভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?বললাম তো আলমারির মধ্যে আছে।
–তোমাকে আসতে বলছি তোড়া।তুমি নিজে এসে দিয়ে যাও।
লুতফার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে ইয়ে টা দেখার জন্য।সে তখন বললো, বাবা কুশান!বউ তো ব্যস্ত আছে এখন রান্নাবান্না নিয়ে।চলো আমি তোমাকে খুঁজে দিয়ে আছি।
কুশান তখন বললো লাগবে না চাচী।আপনি বসে আরাম করুন।আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি।এই বলে কুশান তার রুমে চলে গেলো।
কুশানের এমন রাগ দেখে তোড়ার আজ ভীষণ হাসি পাচ্ছে।তোড়া হাসছে আর ভাবছে তখন যে আমাকে বকলে এটাই তার শাস্তি।একবারের জন্যও আমি আজ রুমে যাবো না।তোমাকে এই ভাবেই ঘোরাবো।
তোড়াকে এভাবে হাসতে দেখে টুনি বললো, ভাবি হাসছেন যে?
–কই হাসছি?হাসছি না তো?
জয়া তখন বললো, আমি কিন্তু একটু একটু বুঝতে পারছি ভাবি।আপনি কেনো হাসছেন?
–কি বুঝতে পারছিস?
–ওই যে কুশান ভাইয়া বললো না ইয়ের কথা?আমি কিন্তু বুঝি আসলে ইয়ে টা কি?
তোড়া কোনো কথা বললো না।কারণ তাদের সাথে যে লুতফাও বসে আছে।
টুনি তখন বললো কি বুজছিস রে জয়া?মোক একটু বল না?
তোড়া এবার দুইজনকেই ধমক দিয়ে বললো, কি শুরু করলা তোমরা?তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো।কয় টা বাজে দেখেছো?
🖤
তোড়া যেখানেই যাচ্ছে কুশানও পিছু পিছু সেখানেই যাচ্ছে।তোড়া তখন আবার সেখান থেকে চলে অন্য জায়গায় যাচ্ছে।
যৌথ পরিবার তো কুশান দের সেজন্য বাহিরে এসে কুশান তোড়াকে বলতেও পারছে না যে একটু রুমে এসো।কারণ কেউ না কেউ থাকবেই বাহিরে।
দুপুরের রান্নাবান্না শেষ করে তবে দিয়ে তোড়া নিজের রুমে প্রবেশ করলো।কুশান একা একা রুমে শুয়ে আছে।নতুন বিয়ে করেছে সেজন্য ভার্সিটিতেও যাচ্ছে না সে।কারণ বন্ধুরা তার বিয়ে নিয়ে ভীষণ ভাবে ক্ষেপাবে।সবার মধ্যে সেই যে প্রথম বিয়ে করেছে।
তোড়াকে রুমে আসা দেখে কুশান এক লাফে বেড থেকে নেমে আসলো।আর বললো,কি দরকার ছিলো রুমে আসার?রান্নাঘর তো এখন তোমায় ভীষণ ভাবে মিস করবে।
তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না।সে তার ড্রেস আর তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে ধরলো।
কুশান তখন তোড়ার হাত টেনে ধরে বললো,আমি কিছু বলছি তোমাকে?তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না আমার কথা?
তোড়া তখন কুশানের হাত ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো, আমার লেট হচ্ছে কুশান।কিছুক্ষন পরে সবাই দুপুরের খাবারের জন্য টেবিলে বসবে।
কুশান তখন বললো,সারাক্ষণ যদি শুধু রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া এসবের পিছনেই পড়ে থাকো তাহলে আমাকে সময় দিবে কখন?
–তোমাকে আবার কিসের সময় দিতে হবে?পুরো রাত টা তো পরেই আছে।
–না মানে। আমি কিন্তু সে সময়ের কথা বলছি না তোড়া?তুমি কিন্তু দুই লাইন বেশি বেশি বুঝছো?আমি কিন্তু তোমার মতো অতো অভদ্র না।তুমি তো জানোই ভদ্র একটা ছেলে আমি।
তোড়া সেই কথা শুনে কুশানের কাছে এগিয়ে এসে বললো, হ্যাঁ আমি তো সেটা ভালো করেই জানি তুমি কত টা ভদ্র ছেলে?
তাহলে তুমি কোন সময়ের কথা বলছো কুশান?
–কিছু না।
–ওকে।এই বলে তোড়া আবার ওয়াশরুমের দিকে চলে যেতে ধরলো।
কুশান হঠাৎ করে বললো, তোড়া!আই লাভ ইউ।
কিন্তু তোড়া দাঁড়ালো না।তবে সে মিটিমিটি করে হাসতে লাগলো।
কুশান তখন হঠাৎ করেই তোড়াকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো।আর তোড়ার কাঁধে অনবরত কিস করতে লাগলো।
তোড়া তখন বললো,কি হচ্ছে কি কুশান?
কুশান তখন তোড়ার সামনে গিয়ে বললো, আমার এখন প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
–মানে?
–না মানে আমি এখন ভালোবাসবো তোমাকে?
–বুঝলাম না।
কুশান তখন এক নিঃশ্বাসে বললো, আমি বোঝাতে পারবো না কিছু।আর কিছু বলতেও পারবো না।তোমাকে এখন থেকে নিজের থেকে বুঝে নিতে হবে।আমি যখন ডাক দিবো তখনি তোমাকে রুমে আসতে হবে আর যখন বলবো আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে তখন বুঝতে হবে আমি তোমাকে এখন আদর করতে চাচ্ছি।এই বলেই কুশান তোড়াকে কিস করতে লাগলো।
চলবে,