আমার গল্পে আমি খলনায়িকা পর্ব -১৬

আমার গল্পে আমি খলনায়িকা
পর্ব—১৬
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

বিগত পর্বে আমি প্রত্যয়কে রোদেলার কাছে রেখে এসে কিছুতেই নিজের চিন্তা দূর করতে পারছিলাম না।এদিকে প্রত্যয়ের কথাবার্তায় স ন্দে হ হতে থাকে আমার ও বোধহয় সবটা জানতে পেরে গেছে।কিন্তু ও জানলো কিকরে সবটা।প্রত্যয়কে হোটেল থেকে নিয়ে আসার কথা আমি আর রোদেলা ছাড়া কেউ জানে না।আমি রোদেলাকে স ন্দে হ করি।হয়তো ওই প্রত্যয়কে সবটা জানিয়েছে।কিন্তু ও এরকমটা কেনো করবে।এসব করে কি লাভ ওর।তারপর—–

রোদেলাকে আবারো একটা ফোনকল করলাম আমি।ও ফোন রিসিভ করতেই আমি ওকে বলে উঠলাম।

—রোদেলা একটা সত্যি কথা বলবে?

—বলুন,দোয়েল আপু।

—তুমি আমার সাথে কোনো গে ম খে ল ছো না তো?

—মানে কি করেছি আমি?

—প্রত্যুষ কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে।আজকে ওর কনফিডেন্স লেভেল দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম।বলো প্রত্যয়কে হোটেল থেকে স রি য়ে আনার কথা ও জানলো কিকরে?

—কি বলছেন কি আপনি,প্রত্যুষ সবটা জেনে গেছে?

—না ট ক করো না আমার সাথে,ও সবটা জানেনি।তবে ওর কথা শুনে সেটাই মনে হচ্ছে।

—আমি কোনো না ট ক করছি না।আর আপনার মাথায় গ ন্ড গো ল নেই তো?আমি যেখানে প্রত্যয়কে মু ক্ত করে আনার জন্য এতো কিছু করলাম।ফাইনালি সেটা সম্ভবও হলো।আপনার কি মনে হয় আমি এসব প্রত্যুষকে সাথে নিয়ে করেছি।একবার ভাবলেন না এসব করে কি লাভ আমার?

—লাভ ক্ষ তি র হিসেব আমি জানি না।শুধু এইটুকুই জানি।কেউ একটা গে ম খে ল ছে আমার সাথে।কিছু একটা তো চলছে যা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না।

—দেখুন,আপনি শুধু শুধু স ন্দে হ করছেন আমায়।আমি সত্যি প্রত্যুষের সাথে নেই।আর তার সবথেকে বড়ো প্রমাণ হলো আমি প্রত্যয়কে…..
এইটুকু বলে রোদেলা থেমে গেলো।আমি ওকে জিজ্ঞেস করি।

—কি হলো থেমে গেলে,কি বলতে চেয়েছিলে বলো?

—না থাক,

—পুরোটা বলো,কি বলতে চেয়েছিলে।প্রত্যয়কে তুমি কি?

—আমি প্রত্যয়কে পছন্দ করি,ও আমার বন্ধু হয়।প্রত্যুষ যেখানে ওর ক্ষ তি করতে চায় আমি কেনো প্রত্যুষের পক্ষ নেবো।

—ব্যস বুঝেছি আর বলতে হবে না।আমি আজ প্রত্যয়ের সাথে একটু দেখা করতে যাবো।আমার বিশ্বাস ও আমায় খুব শীঘ্রই চিনতে পারবে।

—সেটা তো খুবই ভালো কথা।আমিও চাই ও যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সবাইকে চিনতে পারুক।তা কখন যাচ্ছেন?

—এইতো একটু পরেই।তবে আমি একা যাবো।তুমি যাবে না।

—ঠিক আছে।আপনি যান।আমার থেকেও প্রত্যয়ের ওপর আপনার অধিকার বেশী।ও আপনার পরিবারের লোক।আপনি যদি চান আমি ওর সাথে কখনোই দেখা করবো না।

ফোনটা রেখে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ি।প্রত্যয় আজ আমায় দেখে আগের মতো অস্বাভাবিক আচরণ করলো না।একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।

—প্রত্যয়,কেমন আছো?রাতে কেমন ঘুম হলো তোমার?

—ভালো,ভালো ঘুম হয়েছে।

—আমায় এবার চিনতে পারছো তো,মনে পড়ছে কি কিছু?

—হ্যাঁ,মনে পড়েছে।মনে পড়েছে আমার।

—কি বললে তুমি।আরেকবার বলো।

—দোয়েল,দোয়েল ভাবী তুমি।কল্লোল ভাইয়া কোথায়,আব্বা আম্মা তারা কোথায় সবাই?

—আব্বা আম্মা ভালো আছে।সবাই খুব ভালো আছে।

কল্লোলের বিষয়টা প্রত্যয়ের থেকে আড়াল করে গেলাম।নিজের ভাইয়ের চলে যাওয়ার খবরটা শুনে ও হয়তো আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে।ওর সবকিছু মনে পড়েছে এটাই সবথেকে আনন্দের আমার কাছে।এর থেকে আনন্দের আর কিছুই হতেই পারে না।

—কি হলো,কি ভাবছো চুপ করে আছো কেনো?আমায় তোমরা এখানে কেনো রেখেছো,আমায় আমার বাড়িতে নিয়ে চলো।

—অবশ্যই তুমি তোমার বাড়িতে ফিরবে।তবে এখনই যে নয়।একটু অপেক্ষা করতে হবে।

—এক্ষুণি নয় কেনো,কেনো অপেক্ষা করতে হবে?

—বাড়িতে এমন কেউ আছে যে চায় না তুমি ঐ বাড়িতে ফিরে যাও।তাকে বাড়ি থেকে বি তা ড়ি ত না করতে পারলে তোমার যে স্থান হচ্ছে না বাড়িতে।

—কার কথা বলছো তুমি?

—দাঁড়াও দেখাচ্ছি‌।

ফোন থেকে প্রত্যুষের একটা ছবি বের করে প্রত্যয়ের সামনে ধরলাম।তারপর বলতে লাগলাম।

—এই যে প্রত্যুষ!যে তোমার এই অবস্থা করেছে।ওর একটা ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত তুমি যে নিরাপদ নও।

প্রত্যুষের নাম শুনে আর ওকে দেখামাত্র প্রত্যয় ভ য়ে থরথর করে কাঁ প তে লাগলো।

—সরাও,এটা সরাও আমার সামনে থেকে।আমি ওকে দেখতে পারছি না।সরাও প্লিজ।

আমি তৎক্ষনাৎ ফোনটা ঘুরিয়ে নিলাম।কিন্তু ওর এই অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ বোধগম্য হচ্ছে না আমার।

—প্রত্যয় কি হলো,তুমি প্রত্যুষকে দেখে এরকম করছো কেনো?

—ওকে দেখলেই আমার ভ য় হয়।আমার সামনে কখনো ওর নাম নেবে না আমি।ওর ছবিও দেখাবে না।ও আমায় খুঁজে পেলে আবারো ঐ জায়গাটায় নিয়ে যাবে।তখন তুমিও বাঁ চা তে পারবে না আমায়।

—ঠিক আছে ওর কোনো বিষয়ে কথা বলবো না তোমার সাথে।আর তুমি এতো ভয় পেয়ো না।দেখো আমরা সবাই আছি তোমার সাথে।আমি আছি,রোদেলা আছে।প্রত্যুষ তোমায় ছুঁতেও পারবে না।

এ যেনো প্রকৃত প্রত্যয়কে নিজের সামনে দেখছি আমি।প্রত্যয় এরকমই সাধাসিধে শান্ত স্বভাবের ছিলো।প্রত্যুষ যতোই প্রত্যয় সেজে থাকুক না কেনো ওর র গ চ টা আচরণ বারবার প্রমান করে ও প্রত্যয় নয়।কিন্তু আমি আগে সেটা বুঝতে পারি নি।ভাবতাম হয়তো প্রত্যয়ের স্বভাবের পরিবর্তন এসেছে ও নিজেকে বদলাতে চাইছে।আজ আমার কাছে সবটা জলের মতো পরিষ্কার।প্রত্যুষ এতোই খা রা প ব্যবহার করেছে প্রত্যয়ের সাথে যে ওর নাম শুনলেই ভয় পেয়ে যাই।হয়তো এই কারণেই ও প্রত্যয়কে পুরোপুরি শে ষ করে দেয় নি,এভাবে ক্রমাগত ক ষ্ট দিয়ে ও সেই আনন্দটা তাড়িতে তাড়িয়ে উপভোগ করতো।এসব কিছুর হিসেব আমি ঠিক বুঝে নেবো,যেদিন প্রত্যুষের পা লা নো র জায়গা থাকবে না সেদিন।সেই সময়ের অপেক্ষা করে যাচ্ছি।

এরপর আর বেশী দেরী না করে আমি প্রত্যয়ের কাছ থেকে চলে আসলাম।প্রত্যুষ আবারো সন্দেহ করুক আমায়,আমি চাই না সেটা।যতো দ্রুত সম্ভব বাসায় চলে আসলাম।






পরের দিন সকাল দশটার দিকে।একটা মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো আমার ফোনে।ওপেন করতেই দেখি রোদেলার মেসেজ।

‘তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাসার নিচে চলে আসুন,আমায় আসতেছি।এক সেকেন্ড ও লেইট করবেন না।’

যদিও এই মেসেজের কোনো কুলকিনারা খুঁজে পেলাম না আমি,রোদেলার কথামতো রেডি হয়ে নিচে চলে আসলাম।একটু পড়েই একটা ট্যাক্সি চলে আসে গেটের সামনে।রোদেলা ভেতর থেকেই আমায় ডাক দিয়ে ভেতরে আসতে বলে।আমি ওর কথামতো কাজ করলাম।গাড়ির সিটে বসেই ওকে প্রশ্ন করতে যাবো তার আগেই ও নিজে থেকেই বলে উঠলো।

—সামনের এই হলুদ ট্যাক্সিটা দেখতে পাচ্ছেন?

—হ্যাঁ,তো?

—ওটাতে প্রত্যুষ আছে।ও কোথায় একটা যাচ্ছে।

—হ্যাঁ,তো।আমরা ওর পিছু নিচ্ছি কেনো?

—আপনি তো সব বিষয়ে স ন্দে হ করেন আমায়।এবার একটু মাথা খাটান।ফলো যখন করছি নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।

—কিন্তু ও যাচ্ছেটা কোথায়,প্রত্যয়ের বাসার দিকে যাচ্ছে না তো?

—হতেও পারে!

—মানে,তুমি এটা এতো ইজিলি বলছো কিকরে?ও প্রত্যয়ের খোঁজ একবার পেয়ে গেলে কি হবে ভাবতে পেরেছো?

—হ্যাঁ,জানি।অনেক কিছু হবে।আজ হয়তো অনেক কিছুই হবে।

—তোমার ভাবনাটা কি বলবে আমায়,কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি।

—এখন আপাতত বুঝতে হবে না।শুধু দেখে যান কি ঘটছে।

আমাদের ভাবনাই সঠিক হলো।প্রত্যয়ের বাসার সামনে প্রত্যুষের গাড়িটা থামলো।প্রত্যুষ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।এটা দেখে ভ য়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।না জানি কি ঘটতে চলেছে আজ।আমি আর রোদেলাকে প্রত্যুষকে অনুসরণ করতে থাকি।রোদেলা আমায় প্রত্যয়ের ঘরের পেছন দিকটায় নিয়ে যায়।সেখানে একটা ভাঙা জানালা আছে।আমি আর রোদেলা জানালা দিয়ে ভেতরের দিকে তাকালাম।দেখতে পাই প্রত্যয় দরজাটা খুলতেই প্রত্যুষ ভেতরে ঢুকলো।এরপরের যে দৃশ্য দেখতে পাই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো আমার।রোদেলা ক্রো ধে র দৃষ্টিতে ভেতরের দিকে তাকিয়ে আছে।আমার মুখমন্ডল ঠিক কি এক্সপ্রেশন তৈরী করবে সেটা বোধহয় মুখমন্ডল নিজেও ঠিক করতে পারছে না।

ঘরে ঢুকেই প্রত্যুষ আর প্রত্যয় একে অপরকে আ লি ঙ্গ ন করলো।দুজনের মুখেই হাসি।প্রত্যয় প্রত্যুষকে উদ্দেশ্য করে বললো

—আমার না ট ক টা কেমন হয়েছে দাদাভাই, দেখো ওদের দুজনকে কতো কায়দা করে বো কা বানালাম আমি।

প্রত‌য়ের কথা শুনে আমি পুরোপুরি বা ক রু দ্ধ।তারপর এতোদিন যা ঘটেছে এই দুই ভাইয়ের পরিকল্পনার অংশ ছিলো।আর আমরা কি ভেবে এসেছি,প্রত্যয় আর প্রত্যুষ দুজনেই সমান কা ল প্রি ট!!

চলবে……..

(ফেসবুকের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক শব্দ একটু ঘুরিয়ে উপস্থাপন করতে হয়েছে,যাতে আবারো রিপোর্ট না আসে।সবাই পড়ে নিজ দ্বায়িত্বে বুঝে নেবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here