#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৪
ইমার রাগী গলায় এমন কথায় ইয়াদ চমকে উঠে তাকালো ইমার দিকে।
ইয়াদ রেগে বললো, তোমার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না। তুমি আমার সাথে উচু গলায় কথা বললো ?
ইয়াদের রাগী গলায় ইমার কলিজা কেঁপে উঠে। ইমা কখনোই অন্যায় মুখ বুজে সয্য করে না, নিজের ওপর কেউ মিথ্যা অপবাদ দিলে সেটা আরো বেশী সয্য হয় না তার। প্রতিবাদ করতে না পারলেও নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা অবশ্যই সে করে। কিন্তু ইমা বুঝতে পারেনি ইয়াদের কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রামণ করতে হলে মুখের বলাতে কাজ হবে না বরং প্রামণ জোগাড় করতে হবে।
ইয়াদ ইমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো, আর একটা আওয়াজ যদি আমার কানে আসে তাহলে সেটাই করবো যেটা একটু আগে বলেছি।
ইয়াদ আগের মতো শুয়ে পড়লো আর ইমা তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কত কত স্বপ্ন ছিলো ইমার নিজের বিয়ে নিয়ে। এক নিমিষে স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো তার। ফ্লোর থেকে উঠে টলতে টলতে ইমা বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। বেলকনির চেয়ারটাতে বসে আকাশের দিকে তাকালো। কী সুন্দর আর স্বচ্ছ আজকের আকাশ। তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে যেনো ইমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
ইমা আনমনে বলে উঠলো, বাবা তুমি থাকলে কী আমার জীবনটা এমন হতো ? সয্য করতে পারতে তোমার ইমা মায়ের এতো কষ্ট ?
ইমা চোখ বন্ধ করে নিলো আর চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। ইমা হঠাৎ অনুভব করলো তার গালের পানিটা কেউ স্বযত্নে মুছে দিলো আর তাতে ইমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফোটে উঠলো। কী অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ইমার এখন, চোখের কোণে পানি আবার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
ইমা হাসিটা বজায় রেখে বললো, বাবা
ইমরুল বললো, হ্যাঁ মা বল ?
ইমা চোখ খুললো না কারণ চোখ খুললে আর সে খুঁজে পাবে না তার বাবাকে। কারণ আর বাবা কেবলই তার অনুভুতি, কল্পনা।
ইমা বললো, আমার চোখের কোণে পানি দেখে তোমার কষ্ট হয় না ?
ইমরুল ভেজা গলায় বললো, হয় রে মা খুব বেশি কষ্ট হয়, কলিজাটা ছিঁড়ে যায়। আমার তো সবসময় তোর হাসি মুখটা দেখতে ইচ্ছে করে। সেই পিচ্চি ইমার মতো যার হাঁসির শব্দে আমার বাড়িটা মুখরিত হয়ে থাকতো।
ইমা এবার আর হাসিটা বজায় রাখতে পারলো না ডুকরে কেঁদে উঠে বললো, তাহলে আমায় একা রেখে চলে গেলে কেনো আর মাও আমার কথা একবার ভাবলো না।
এবার আর ইমরুলের কোনো উত্তর নেই। ইমা চোখ খুললো কোথায় তার বাবা ? কেউ নেই তার পাশে সে নিষঙ্গ একা, কেউ নেই তার পাশে, কেউ না।
ইমা আবার চোখ বন্ধ করে নিলো কাঁদতে লাগলো নিশ্বাসে যাতে তার কান্নার শব্দ কাউকে বিরক্ত করতে না পারে। অনেকটা সময় পর ইমার হালকা শীত লাগতে শুরু করলো। উঠে রুমের দিকে পা বাড়ালো। সোফায় শুয়ে পড়লো গুটিশুটি মেরে, সোফা আকাড়ে বড় হওয়ায় সমস্যা হলো না ঘুমাতে।
১৮.
আরমান বেলকনিতে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে যাচ্ছে। মাত্র একদিনে তার চেহারার রঙ বদলে গেছে। সে ইমাকে হারিয়ে ইমার মর্ম বুঝতে পেরেছে। তার জীবনের কতটা জায়গা জুড়ে ইমার বসবাস ছিলো সেটা ইমার একদিনের অনুপস্থিতি তাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। গ্রাম বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্ম বুঝতে পারে না যখন হারিয়ে ফেলে তখনই সে বুঝতে পারে কী হারিয়েছে। আরমানের অবস্থাও তাই হয়েছে। যখন ইমা ছিলো তার এক বিন্দু মূল্য সে দেয়নি, শুধু দিয়েছে অপমান অবহেলা আর মায়ের কাছে শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হতে। একদিনে আরমানের চেহারা বদলে গেছে স্টাইলিশ চুল, অ্যাটিটিউড নিয়ে চলাফেরা, কিছুই নেই তার। ইমার নিষ্পাপ মুখ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। উসকো চুল, কুঁচকানো শার্ট, না ঘুমানোর জন্য চোখগুলো রক্তলাল বর্ণ ধারণ করেছে। আরমানকে দেখে ক্রাশ খাওয়া মেয়েগুলো এই অবস্থায় তাকে দেখলে ক্রাশ খাবে না বরং পাগল ভেবে ভয় পাবে। আরমান আজ ভার্সিটি যায়নি। বলেছে সে অসুস্থ যেতে পারবে না।
ভাইয়া আসবো ?
কথার গলা শুনলো বেলকনি থেকেই, আরমান সিগারেট ফেলে দিলো হাত থেকে। কথা তার রুমে আসে না বললেই চলে, তাহলে আজ কী মনে করে তাও আবার এতো রাতে ?
কথাগুলো চিন্তা করতে করতে আরমান বললো, হ্যাঁ আয় কিছু বলবি ?
কথা রুমে এসে দেখে আরমান রুমে নেই তাই এদিক ওদিক তাকালো আওয়াজ কোথা থেকে আসছে জানার জন্য। বেলকনির দিকে চোখ গেলে দেখতে পেলো আরমানকে।
সেদিকে পা বাড়িয়ে বললো, সরি ভাইয়া এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য।
বেলকনিতে পা রাখতেই কথার নাকে তীব্র সিগারেটের গন্ধ ধাক্কা খেলো। বমি চলে এলো কথার, তাই বেলকনি থেকে কয়েক পা পিছিয়ে রুমে অবস্থান করলো।
আরমান বললো, না ঠিক আছে কী দরকার সেটা বল এখন।
কথা মাথা নিচু করে বললো, আসলে ভাইয়া ইমা আপুর বিয়ের জন্য তিনদিন কলেজ মিস করেছি। অনেক পড়া জমা হয়ে গেছে, ফ্রেন্ডের কাছে থেকে সব জেনে নিয়ে সেগুলো কমপ্লিট করছিলাম আগামীকাল কলেজের জন্য। কিন্তু ইংরেজিতে নতুন একটা অধ্যায় শুরু করেছে গতকাল আর আমি সেটার কিছুই বুঝতে পারছি না। নিজে নিজে অনেক চেষ্টা করেছি শেষে না পেরে বাধ্য হয় তোমার কাছে আসলাম।
আরমান বোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাইয়ার কাছে আসতে হলেও কথাকে বাধ্য হয়ে আসতে হয়৷ না আসার কোনো উপায় যখন পায় না তখন আসে। এমনটা না হয়ে আর পাঁচটা ভাইবোনের মতো তাদের সম্পর্কে ভালোবাসা, মানঅভিমান, ঝগড়া খুনসুটি মিলে একটা মিষ্টি সম্পর্ক হতে পারতো। আরমান চাইলেই সম্পর্কটা তেমন হতো। কথা যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সে এই পরিবারের অন্য সবার মতো সাদা চামড়ার মানুষ নয়। তাকে পদে পদে বৈষম্যটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে আর তাই একটা সময়ের পর সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সবার থেকে। যেমন শামুক খোলসের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কথা আরমানের সাথে দুরত্ব তৈরি করতে থাকে আর আরমানও কখনো চেষ্টা করেনি সেই দুরত্ব মিটিয়ে নেওয়ার। যার ফলস্বরূপ তাদের সম্পর্কটা আজ এখানে এসে দাড়িয়েছে।
আরমান মনে মনে বললো, নিজের বোনের কষ্টটা কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি সেখানে তোমার কষ্ট বুঝার চেষ্টা করবো কী করে ? আমি আসলে মানুষটাই ভালো না তাই ভালো ভাইও হতে পারিনি আর না পেরেছি ভালো,,,,
আরমান বললো, তুই বেডে বস আমি আসছি।
কথা চুপচাপ গিয়ে আরমানের বেডে বসে পড়লো। আরমান তখন কথার পিছিয়ে যাওয়া দেখেই বুঝতে পেরেছিলো সে সিগারেটের গন্ধে পিছিয়ে গিয়েছে। তাই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্রাশ করে তারপর রুমে এলো। কথাকে বই বের করতে বলে হাতমুখ মুছে পরে সামনে এসে বসলো। কথা একবারের জন্যও চোখ তুলে তাকায়নি। তাকালে হয়তো দেখতে পেতো নিজের ভাইয়ের বিধস্ত অবস্থা। কথা অনেক ভালো স্টুডেন্ট তাই আরমান অল্প বুঝাতেই সব বুঝে গেলো।
পড়া শেষে আরমান বললো, অনেক রাত হয়ে গেছে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
কথাও বাধ্য মেয়ের মতো বই গুছিয়ে উঠে সামনের দিকে পা বাড়ালো তখনই আরমান আবার পেছন থেকে বললো, কথা শুন ?
এবার কথা ঘুরে তাকালো আরমানের দিকে কিন্তু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কথার বুক কেঁপে উঠলো। এ কোন ভাইকে দেখছে সে, তার সামনে বসা মানুষটা তার ভাইয়া আরমানই তো নাকি অন্যকেউ সেই চিন্তায় পরে গেলো কথা।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে কথা বললো, ক,,কী হয়েছে ভাইয়া ?
আরমান অনেকটা ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ইমা কেমন আছে ?
কথা যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার ভাইয়া জিজ্ঞেস করছে ইমা আপু কেমন আছে ? আরমানের আচরণে সবসময় মনে হয়েছে ইমা তার সামনে মরে গেলেও সে ছুঁয়ে দেখবে না আর আজ সেই মানুষের মুখে ইমার খবর জানতে চাওয়া স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি অবাক করলো কথাকে।
আরমান উত্তর না পেয়ে আবার বললো, কী হলো কথা বলছিস না কেনো ?
কথা বললো, আপু ভালো আছে অনেক ভালো আছে এই নরক থেকে চলে গিয়ে।
কথার উত্তর আরমানের বুকে তীরের মতো বিঁধল সত্যি কী ইমার জন্য এই বাড়ি নরকে পরিনত করেছিলো সে।
কথা আবার বললো, আজকে ইমা আপুকে একদম প্রিন্সেস মনে হচ্ছিলো কী যে সুন্দর লাগছিলো বলে বুঝতে পারবো না ভাইয়া।
কথা কী বলছে সেটা আরমানের কানে আঘাত করলেও মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারছে না। বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছে ইমা ভালো আসে এই নরকের চেয়ে অনেক ভালো।
আরমান আনমনে বলে উঠলো, ঠিক আছে তুই এখন যা।
কথা চলে গেলো আরমানের কী হয়েছে সেটা চিন্তা করতে করতে আর আরমান বেডে গা এলিয়ে দিলো। তার চিন্তা ভাবনা এখন সব একজনকে ঘিরেই আর সেটা ইমা।
১৯
একই স্বপ্নে ঘুম ভাঙলো ইয়াদের, কিছু সময় মাথাটা চেপে ধরে বসে রইলো। এই স্বপ্ন থেকে সে কবে মুক্তি পাবে তার জানা নেই। ইয়াদ নিজেও এখন চায় না এই স্বপ্ন থেকে মুক্তি পেতে কারণ এই স্বপ্ন প্রতিদিন তার প্রতিশোধের নেশা আরো বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুন। দূর থেকে ভেসে এলো আযানের ধ্বনি। ইয়াদ বেড থেকে নামতে গেলে তার চোখ পড়ে সোফায়। গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে ইমা শাড়ীটা গায়ে ভালো করে পেঁচিয়ে রেখেছে তবু মৃদু কাঁপছে শীতে। রুমে এসি চলছে শীত লাগারই কথা। শীতে ইমার গোলাপি ঠোঁট থেমে থেমে কেঁপে উঠছে। ইয়াদের চোখ আঁটকে গেলো ইমার কাঁপা ঠোঁটে। ইয়াদ শুধু ইমার চোখই খেয়াল করেছে আগে কিন্তু আজ পুরো মুখটা স্ক্যান করছে সে। মৃদু কাপা গোলাপি ঠোঁট, সরু নাক, ঘন পাপড়িতে ঘেরা গোলগাল চোখ, দুধে আলতা গায়ের রং এক কথায় ইয়াদের চোখের সামনে কোনো মানবী নয় বরং জান্নাতের হুর শুয়ে আছে এটাই মনে হচ্ছে ইয়াদের। এতো সুন্দর আর নিক্ষুত একটা মানুষ কী করে হতে পারে ? নিজের অজান্তে ইয়াদ পা বাড়ালো সোফার দিকে ইমার সামনে গিয়ে ফ্লোরে হাটু মুড়ে বসলো। ইয়াদের ইচ্ছে করছে এটা হুর নাকি কোনো মানবী সেটা ছুঁয়ে দেখতে কী নিষ্পাপ মুখ। ইয়াদ নিজের হাতটা ইমার কাঁপতে থাকা ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলো। ইমার ঠোঁটে ছুঁই ছুঁই করছে ইয়াদের হাত। মুহুর্তে ইয়াদ ছিটকে দূরে সরে এলো এটা সে কী করছিলো ? ভাবতেই ইয়াদের নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। ইয়াদ উঠে তৎক্ষনাৎ ওয়াশরুমে চলে গেলো ইচ্ছে মতো চোখেমুখে পানি দিতে লাগলো। এমন একটা ভুল সে কী করে করছিলো ভেবে পাচ্ছে না ইয়াদ। এটা কী তার বিপরীত জেন্ডারের প্রতি আকর্ষণ নাকি অন্যকিছু,,, না না ইয়াদ এর অন্য কোন নাম দিতে চায় না, এটা তার বিপরীত জেন্ডারের প্রতি আকর্ষণ মাত্র। যতোই হোক সে একজন পুরুষ মানুষ তার সামনে এতো আবেদনময়ী নারী অবস্থান করলে এটুকু হয়তো স্বাভাবিক। ইয়াদ নিজেকে অনেক উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে শান্ত করলো। ওযু করে রুমে এসে জায়নামাজে দাড়িয়ে গেলো। আযানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেছে ইমার তবে উঠতে ইচ্ছে করছে না একদমই আর চোখও খুলতে ইচ্ছে করছে না। রাতে ভালো ঘুম হয়নি কারণ রুমের লাইট জ্বালিয়ে রাখা ছিলো সারারাত। ইয়াদ ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাই ইমা লাইট অফ করবে কী করবে না দিধায় পড়ে গিয়েছিলো পড়ে লাইট অন রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে। আলসেমি বাদ দিয়ে চোখ মেলে তাকালো সে তবে চোখের সামনে যা দেখছে তা বিশ্বাসই হচ্ছে না তার। সাদা পাজামা পাঞ্জাবি আর টুপি পরে নামাজ আদায় করছে ইয়াদ। ইমা ভালো করে নিজের চোখ কচলে আবার তাকালো না সে ভুল দেখছে না। তবে ইয়াদকে এই পোশাকে যেনো আরো বেশী সুন্দর লাগছে। মুখ থেকে শুভ্র আভা বের হচ্ছে ইমার মনে হচ্ছে। না চাইতেও ইমা বারবার মানুষটার প্রেমে পড়ছে তবে ইমা জানে এই প্রেম হালাল তাই নিজেকে বাঁধাও দিচ্ছে না। সবকিছু সময়ের উপর ছেড়ে সে প্রেমে পড়ছে নিজের স্বামীর। ইমার চিন্তা ভাবনার মাঝেই ইয়াদের নামাজ শেষ হয়ে গেলো।
উঠে জায়নামাজ ভাজ করতে গেলে ইমা বলে উঠে, তুলতে হবে না আমি নামাজ পড়বো।
ইয়াদ হঠাৎ ইমার কথা শুনে চমকে তার দিকে তাকালো আবার মুহুর্তেই কপাল কুঁচকে ফেললো এই মেয়ে আবার নামাজও পড়ে ? প্রশ্নটা জাগলো ইয়াদের মনে তবে প্রকাশ করলো না। জায়নামাজ রেখে চলে গেলো কাবার্ডের দিকে। ইমা ততক্ষণে ওয়াশরুমে চলে গেছে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বের হলো। ইমা নামাজে দাঁড়ালে ইয়াদ একটা টাউজার আর সাদা রঙের সেন্ডো গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চেঞ্জ করে মিনি ছাঁদে এসে ট্রেডমিলে দৌড়াতে লাগলো আর ইমার তখনকার মুখটা মনে পড়তে লাগলো। ইমা নামাজ শেষ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে ইয়াদকে দেখতে পেলো না দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভেতর থেকে বন্ধ মানে বাইরে যায়নি। জায়নামাজ ভাজ করে ছাঁদে এসে দেখলো ইয়াদ ট্রেডমিলে দৌড়াচ্ছে ইমা একটু আগের ইয়াদ আর এই ইয়াদের মধ্যে মিল খুঁজে পেলো না। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রুমে এলো সব গুছিয়ে নিতে। সব কাজ শেষ করে ইমা ছাঁদে এসে ইয়াদের এক্সারসাইজ দেখতে লাগলো তবে একটু আড়াল থেকে যাতে ইয়াদ জানতে না পারে। ইমা আবার প্রেমে পড়লো ইয়াদের নতুন রুপে। এই একা একজন লোক আর কতো রুপ লুকিয়ে রেখেছে নিজের মধ্যে ভেবে পায়না ইমা। ইয়াদের এক্সারসাইজের সময় শেষ হলে সে একটু বসে রেস্ট নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালে ইমা দ্রুত সরে এসে সোফায় বসে পড়লো একটা ম্যাগাজিন হাত নিয়ে। ইয়াদ নিজের জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যেতেই রুমের দরজায় কেউ নক করে। ইমা দরজা খোলে দেখে ইয়ানা দাড়িয়ে আছে ধোঁয়া উঠা কফির মগ হাতে নিয়ে।
ইয়ানা মুচকি হেঁসে বললো, গুড মর্নিং ভাবি।
ইমাও হেঁসে উত্তর দিলো, গুড মর্নিং।
ইয়ানা কফিটা এগিয়ে দিয়ে বললো, ওয়াশরুম থেকে বের হলে ভাইয়ার এটা প্রয়োজন হবে। সবসময় আমি দেই আজ তুমি দাও ভাইয়ার ভালো লাগবে।
ইয়ানা ইমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো আর ইমা কফির মগটা কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। তার হাত থেকে ইয়াদ কফি খেয়েই পারে না ইমা সেটা জানে। কী হবে এবার ?
#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৫
কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে ইমা হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকালো। ইয়াদ শুধু প্যান্ট পরে খালি গায়ে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো। ইয়াদকে খালি গায়ে দেখে ইমা কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিলো। এর আগে কখনো কোনো ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখেনি তাই একটু বেশি অস্বস্তি হচ্ছে। ইমা ইয়াদের বুকের দিকে তাকিয়ে একটা লোমের অস্তিত্ব খোঁজে পেলো না।
ইমা বিড়বিড় করে বললো, শুনেছি যাদের বুক ভর্তি লোম থাকে তাদের নাকি বুক ভরা দয়ামায়া আর ভালোবাসা থাকে।আমি সবসময় চাইতাম আমার স্বামীর যেনো বুক ভর্তি লোম থাকে আর আমার জন্য থাকে বুক ভরা ভালোবাসা। আপনার বুকে লোম নেই বলেই হয়তো ভালোবাসা তো দূর আপনার একটু দয়ামায়াও নেই।
কথাটা আওড়াতেই ইমার চোখ থেকে টুপ করে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়লো। ইমা সাথে সাথে মুছে নিলো সেটা।
কাঁপা গলায় বললো, আ,,,আপনার কফি।
ইমার গলা শুনে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো। ইমা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ। কপির মগ ইমার হাতে দেখতেই মুখে রাগের আভাস ফুটে উঠলো ইয়াদের, হাতে থাকা হেয়ার ব্রাশটা ড্রেসিংটেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
রেগে বললো, তুমি ভাবলে কী করে আমি তোমার হাতের কফি খাবো ?
ইমা ভয়ে ভয়ে বললো, ই,,,ইয়ানা আপু আমার হাতে দিয়ে বললো আপনাকে দিতে,,,,,
ইয়াদ রেগে বললো, যার তার হাতের কফি এই আবরার হামিদ ইয়াদ খায় না। সেটা হয়তো তার বোন ভুলে গেছে তাই তোমার হাতে দিয়ে গেছে। দরকার হলে রাস্তার পাশের ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে সবচেয়ে অপ্রিয় জিনিস চা খেয়ে নিবো তবু তোমাদের মতো কোনো মেয়ের হাতের কফি খাবো না। কে বলতে পারে একদিন হয়তো এই কফির মগে বিষ মিশিয়ে খুন করতে পারো।
ইয়াদের কথায় ইমা বিস্ফুরিত চোখে তাকালো ইয়াদের দিকে। ইমার চোখে ভাসছে চরম বিষ্ময় সে কাউকে বিষ দিতে পারে, সেটা কেউ ভাবছে এটা যেনো ইমাকে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে নিয়ে গেলো। ইয়াদ লম্বা কদম ফেলে ইমার সামনে গিয়ে হাতের মগটা নিয়ে সজোরে আছাড় মারলো ফ্লোরে। মগ ভাঙার শব্দে ইমা ভয়ে চমকে উঠলো। কাঁপা-কাঁপি আগের থেকেও বেড়ে গেলো।
ইয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, এই ভাঙা মগ আর পরে যাওয়া কফি নিজের হাতে পরিষ্কার করবে। তোমার হাতে কফির যোগ্যতা এতটুকুই বুঝতে পেরেছো মিসেস আবরার হামিদ ইয়াদ।
পরের কথাটা ইয়াদ তাচ্ছিল্যের সুরে বললো তারপর আবার গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কাজ করতে লাগলো। ইমা কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে ভাঙা মগের টুকরো কুড়াতে লাগলো।
হঠাৎ ইয়াদ বলে উঠলো, আর একটা কথা এই মগ ভাঙার কথা বা এই রুমের কথা যেনো বাইরে না যায় এমন কী আমার বোনের কানেও না। কথাটা মাথায় রেখো মিস ওহ্ সরি মিসেস।
ইমা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। অন্যমনস্ক হয়ে ভাঙা টুকরো তুলতে গেলে হাতে লেগে যায় আর ইমা আহ্ করে উঠে। ইয়াদ আগের মতো ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইমার দিকে। ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল থেকে লাল রক্তের শ্রোত বয়ে যাচ্ছে। আঙ্গুলটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে ইমা। ইয়াদ ইমার দিকে আগানোর জন্য পা বাড়াতে গিয়ে আবার থমকে গেলো। অন্যকারো যন্ত্রণাময় চিৎকার ইয়াদের শান্তির কারণ হয় তাহলে আজ এই মেয়ের হাতের সামান্য রক্ত কেনো এতো বিচলিত করছে ইয়াদের মনকে, সেটা ইয়াদ বুঝতে পারছে না। ইয়াদের মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধ চলছে এখন। মন বলছে অনেক রক্ত বের হচ্ছে গিয়ে সাহায্য কর আর মস্তিষ্ক বলছে এই মেয়ে তোর সামনে মরে যাক তাতে তোর কী ? মস্তিষ্কের কাছে আজ ইয়াদের মন হেরে গেলো কারণ জোরটা মস্তিষ্কের বেশি ছিলো।
আবার ড্রেসিংটেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে গলায় বিরক্তি ভাব ফুটানোর চেষ্টা করে বললো, এখানে হাত ধরে বসে থেকে নাটক না করে ড্রয়ারে ফাস্টএইড বাক্স আছে ব্যান্ডেজ করে নিয়ে তারাতাড়ি নোংরাটা পরিষ্কার করো৷ অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা আমি একদম সয্য করতে পারি না।
ইমা ইয়াদের কথা মতো উঠে দিয়ে বেডের সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বাক্স খুজে বের করে সোফায় বসে ব্যান্ডেজ করার চেষ্টা করতে লাগলো। তবে এক হাতে সুবিধা করতে পারছে না। ইয়াদ শার্টের বোতল লাগাচ্ছে আর আড়চোখে ইমার দিকে তাকাচ্ছে। ইমা বারবার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছে না। আঙ্গুলটা বেশ অনেকটা কেটেছে তাই ব্যাথা করছে। ইয়াদ দেখছে ইমা করতে পারছে না তাই বিরক্ত হয়ে নিজে যাওয়ার জন্য আগাতে গিয়েও আবার পিছিয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়া ভাবি তোমাদের জন্য সবাই নিচে অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি এসো।
ইয়ানার গলা শুনে ইয়াদ আর ইমা দরজার দিকে তাকালো। ইয়ানা দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই সোফায় ইমার দিকে চোখ গেলো।
ইমার হাতে রক্ত দেখে ব্যস্ত হয়ে বললো, ভাবি কী হয়েছে তোমার ?
রুমে ঢোকার জন্য পা বাড়াতেই ফ্লোরে ভাঙা মগ নজরে এলো তার।
ইয়ানা ফ্লোরে তাকিয়ে বললো, এটা কীভাবে ভাঙলো ?
ইমা কী বলবে বুঝতে পারছে না ? ইয়ানা একবার ইমার দিকে তাকাচ্ছে আবার ইয়াদের দিকে তাকাচ্ছে।
ইমা কিছু বলবে তার আগেই ইয়াদ বলে উঠলো, আমার হাত থেকে পরে গেছে আর সেটা তুলতে গিয়ে ইমার হাত কেটে গেছে।
ইয়াদ নির্লিপ্ত গলায় বললেও ইয়ানার সন্দেহ হচ্ছে তাই ইয়াদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইয়াদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বেডে বসে শো পরতে লাগলো আর তা দেখে ইয়ানা ইমার দিকে এগিয়ে গিয়ে সোফায় বসে ইমার হাত ধরে দেখলো।
ইয়ানা আফসোসের গলায় বললো, ইস কতটা কেটে গেছে। তোমার কী দরকার ছিলো এটা তোলার একটা সার্ভেন্টকে বললেই হতো।
ইয়ানার কথা শুনে ইমা ইয়াদের দিকে তাকালো আর ইয়াদও ইমার দিকে আড়চোখে তাকালো। ইয়ানা মনোযোগ দিয়ে ইমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো।
ইমা তা দেখে মনে মনে বললো, এতো ভালো বোনের এতো বাজে একটা ভাই কীভাবে সম্ভব ?
ইয়াদ মনে মনে বললো, আমার বোন পুরো আমার বিপরীত কারণ এই পৃথিবীর নির্মম সত্যি আর কুৎসিত চেহারা আমি ওকে দেখতে দেয়নি। সব খারাপ জিনিস ওর চোখের আড়ালে রেখেছি আর তাই এতো সুন্দর ওর মন। নারকেলের শক্ত খোলসটা যদি আমি হই তাহলে ভেতরের নরম অংশটা ইয়ানা। বাইরের পৃথিবীর সব খারাপ জিনিস থেকে শক্ত খোলসটা যেমন ভেতরের নরম অংশটা আড়ালে আগলে রাখে আমিও ইয়ানাকে খারাপ জিনিস থেকে আড়ালে আগলে রেখেছি। ইয়ানার সামনের খারাপ জিনিসের উপর কালো পর্দা দিয়ে রেখেছি। তবে সেটা সরাতে হবে খুব তাড়াতাড়ি কঠিন বাস্তবের সামনাসামনি হতে হবে ইয়ানাকে তার সময় এসে গেছে।
হয়ে গেছে ভাবি এবার নিচে চলো।
ইয়ানার গলার আওয়াজে ইয়াদ ইমা দুজনেরই ভাবনার ইতি ঘটে।
ইয়ানা ইমাকে সোফা থেকে উঠাতে উঠাতে বলে, ভাবি তুমি আমার সাথে চলো আর ভাইয়া তোর হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
ইয়াদ ছোট করে বলে, হুম।
ইমা যেতে যেতে বলে উঠে, কিন্তু নোংরাটা পরিষ্কার করা হলো না তো।
ইয়ানা তার উত্তরে বলে, তুমি চলো আমি সার্ভেন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি পরিষ্কার করার জন্য।
ইমার আর কিছু বললো না ইয়ানার সাথে যেতে লাগলো বাইরে এসে হঠাৎ ইয়ানা আবার বললো, ভাবি তুমি বয়সে আমার এক বছরের ছোট আর সম্পর্কে বড় তাই তোমাকে তুমি করে বলছি, তুমি কী রাগ করো এতে ?
ইমা ব্যস্ত হয়ে বললো, এমা না না তা কেনো হবে আপু ? আপনি আমাকে যা ইচ্ছে বলতে পারেন।
ইয়ানা ইনোসেন্ট ফেস করে বললো, আপু বলছো ঠিক আছে কিন্তু আপনি আপনি কেনো করছো নিজেকে বুড়ি বুড়ি মনে হয় তো।
ইমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, তাহলে কী বললো ?
ইয়ানা মুচকি হেঁসে বললো, আপু বলো প্রবলেম নেই কিন্তু আপনি বলা যাবে না তুমি করে বলতে হবে বুঝেছো ?
ইমাও মুচকি হেঁসে বললো, ঠিক আছে।
কথায় কথায় ডাইনিং টেবিলে পৌঁছে গেলো দুজনে। রুবিনা কবির, ইয়াসির হামিদ আর ইশান আগে থেকেই ছিলো টেবিলে।
ইশান ইমাকে দেখে হাসি মুখে বললো, গুড মর্নিং সুইট ভাবি।
ইমাও সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো, গুড মর্নিং ভাইয়া।
ইশান মুখ গুমরা করে বললো, ভাবি আমি তোমার থেকে ছোট তাহলে আমাকে ভাইয়া কেনো বলছো ?
একটা মজার বিষয় দেখেছো ভাবি ? আপু তোমার থেকে একবছরের বড় আবার তুমি আমার থেকে এক বছরের বড় ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না ?
ইমা ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। এক ভাইয়ের মুখ থেকে কথা বের করতে হলে মনে হয় বোম মারতে হবে আরেক ভাই বলতে শুরু করলে থামতে চায় না। ইমার কাছে সব আজব মনে হচ্ছে।
রুবিনা কবির ইশানকে ধমক দিয়ে বললো, তুমি এতো বেশি কথা বলো কেনো ইশান ? খাওয়ায় মন দাও চুপচাপ।
রুবিনা কবিরের ধমকে ইমা একটু ভয় পেয়ে গেলো কিন্তু রুবিনা সেটা স্থায়ী হতে দিলো না।
ইমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো, গুড মর্নিং বৌমা।
ইমাও বললো, গুড মর্নিং।
রুবিনা আবার বললো, এখানে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো ? গতকাল একটু ঝামেলা ছিলো বুঝতেই পারছো তাই তোমার খোঁজ নেওয়ার সময় পাইনি।
ইমা মাথা নিচু করে বললো, না না আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
রুবিনা কবির বললো, ঠিক আছে কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে আর শুনো ইয়াদ, ইয়ানা আর ইশান আমাকে মা বলে ডাকে তাই তুমিও মা বলেই ডেকো কেমন ?
ইমা মনে মনে বললো, আপনার বড় ছেলে আপনাকে মা বলে আর কই ডাকে আসছি পর থেকে তো রুবিনা কবির রুবিনা কবির বলে গলা শুকিয়ে ফেলেছে।
রুবিনার আচরণে তাকে খারাপ মনে হচ্ছে না ইমার কাছে তাই ইয়াদের এতো রাগের কারণ বুঝতে পারছে না। ইমাটা আসলেই বড্ড বোকা তাই বুঝতে পারছে না মানুষ নিজেকে যেমন দেখায় সবসময় সে তেমন হয় না। সবাই টুকটাক কথা বললেও ইয়াসির হামিদ বেশ বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে। ইমার হাত কাটা কেনো জিজ্ঞেস করলে ইয়ানা সবটা খোলে বলে। সব শুনে রুবিনা চামচ এগিয়ে দেয় খাবার খাওয়ার জন্য। ইয়াদ রেডি হয়ে টেবিলে এসে বসতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো আর ইমাও। রুবিনা মাঝে মাঝে ইমাকে জিজ্ঞেস করছে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে কী না, কিছু লাগবে কী না। ইয়াদের এসব একদম সয্য হচ্ছে না। রুবিনা কবির ইমার প্রতি যতটা যত্নশীল ব্যবহার করছে ইমার প্রতি ইয়াদের রাগে ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাওয়া শেষে যে যার কাজে চলে গেলো। ইমা নিজের রুমে চলে গেলো। তার অনেকটা সময় পর ইয়ানা নক করলো।
ভাবি আসবো ?
ইমা বেডে বসে ছিলো উঠে দাঁড়িয়ে বললো, হ্যাঁ আপু আসো।
ইয়ানা রুমে ঢোকে বললো, বিরক্ত করলাম না তো ?
ইমা বললো, আরে না আপু, আমারও বোরিং লাগছিলো একা একা।
ইয়ানা বললো, চলো বেলকনিতে যাই।
ইমা বললো, রোদ লাগবে তো এখন।
ইয়ানা বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো, আকাশ মেঘলা আজ চলো।
বেলকনি মানে মিনি ছাদে গিয়ে বসে দুজনেই চুপচাপ অনেক সময় পার করলো।
হঠাৎ ইয়ানা বললো, ভাবি আমি জানি মগটা তখন এমনই এমনই ভাঙেনি ওটা ভাইয়া ভেঙেছে।
ইয়ানার কথায় ইমা চমকে তার দিকে তাকালো ইয়ানাও ইমার দিকে তাকালে ইমা চোখ নামিয়ে নেয়।
ইয়ানা আবার বলে, আমি তোমাকে ভাইয়ার সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই সেগুলো জানলে হয়তো তোমার জন্য সহজ হবে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে আর তোমার জানাটাও প্রয়োজন।
চলবে,,,,#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৬
আমি তোমাকে ভাইয়ার সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই সেগুলো জানলে হয়তো তোমার জন্য সহজ হবে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে আর তোমার জানাটাও প্রয়োজন।
ইমা কৌতুহল নিয়ে বললো, কী কথা আপু ?
ইয়ানা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, আমার জন্মের আগেই ভাইয়া কীভাবে যেনো মাথায় আঘাত পেয়েছিলো যার জন্য পুরো এক বছর কোমায় ছিলো। যখন কোমা থেকে বের হয় তখন অতীতের অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছিলো। আমাকে পেয়ে নাকি ভাইয়া অনেক খুশি হয়েছিলো দিনগুলো ভালোই কাটছিলো। আমার বয়স যখন দুই বছর তখন জন্ম হয় ইশানের। তিন ভাইবোনের কোলাহলে নাকি সারা বাড়ি মেতে থাকতো। কিন্তু ভাইয়াকে ১০ বছর বয়সে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পড়াশোনার জন্য আমার বয়স তখন কেবল চার বছর আর ইশানের মাত্র দুই বছর। ভাইয়া যেতে চাইছিলো না তাও মা নাকি জোর করে পাঠিয়ে দেয়।
ইমা অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনছে ইয়ানার কথা। ইয়ানা থেমে গেলে ইমা বলে উঠলো, তারপর কী হলো ?
ইয়ানা আবার বলতে লাগলো, ভাইয়া চলে যাওয়ার পর অনেকদিন পর্যন্ত মায়ের সাথে কথা বলেনি শুধু আমার সাথে আর ইশানের সাথে কথা বলতো। তবে ছোটবেলা থেকে একটা বিষয় খেয়াল করতাম বাবা আমার আর ভাইয়ার থেকে ইশানকে অনেক বেশি ভালোবাসতো এমন কী মাও। পরে অভিমান ভুলে ভাইয়াও মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলতে শুরু করে। দেখতে দেখতে আট বছর পার হয়ে যায়। মা ভাইয়াকে বলে তার আঠারো তম জন্মদিন অনেক ধুমধামে বাড়িতে পালন করতে চায়। ভাইয়াও রাজি হয়ে যায় তাই জন্মদিনের দুদিন আগেই দেশে চলে আসে। যেদিন ভাইয়ার আঠারো বছর পূরণ হয় সেদিন এখানকার ফ্রেন্ডদের সাথে দুপুরে লান্স করতে আর ঘুরতে গিয়েছিলো কারণ রাতে বাড়িতে পার্টি ছিলো। কিন্তু ছোট একটা এক্সিডেন্ট করে ভাইয়ার গাড়ি, তাদের এক ফ্রেন্ডের অনেকটা আঘাত পায় আর সবাই তাকে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়। পার্টি শুরু হওয়ার অনেক সময় পার হয়ে গেলেও ভাইয়া ফেরে না। আমার বয়স তখন ১২ বছর আর ইশানের ১০ বছর সারাদিন শুধু মারামারি করতাম দুজনে। পার্টি প্রায় শেষের দিকে ভাইয়া ফিরে আসে তবে তাকে দেখে বাবা-মা থমকে গিয়েছিলো। আমার আজও চোখে ভাসে সেই দিনের প্রতিটা মুহূর্ত। আমার হাসিখুশি ভাইয়ার মুখ সেদিন লাল হয়ে গিয়েছিলো রাগে। তাকে দেখে ভয় পেয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। বাবা-মা অনেক অনেক বকা দেয় ভাইয়াকে কিন্তু সে একটা টু শব্দও করেনি মাথা নিচু করে হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে ছিলো।
এতটুকু বলে ইয়ানা দম নিলো। সেদিনের কথা মনে পড়লে ইয়ানা আজও ভয়ে কেঁপে উঠে। তার সবসময় হাসিখুশি থাকা ভাইয়াকে এতোটা রেগে যেতে প্রথম দেখেছিলো সেদিন ইয়ানা।
ইয়ানাকে চুপ করে যেতে দেখে ইমা বলে, উনি এতো রেগে ছিলেন কেনো আপু ?
ইয়ানা মলিন হেঁসে বলে, জানি না আর সেটা আজও জানা হয়নি আমাদের। তবে বাবা-মা মনে করে তাকে জোর করে বিদেশে পাঠানোর জন্য বাবা-মায়ের উপর এতো রেগে থাকে এখনো৷
ইমা বললো, সেদিন তারপর কী হয়েছিলো ?
ইয়ানা ইমার দিকে তাকিয়ে আবার বললো, বাবা-মা ভাইয়াকে বকছিলো আর এদিকে আমি আর ইশান আইসক্রিমে নিয়ে কাড়া কাড়ি করছিলাম। হঠাৎ আমার হালকা ধাক্কায় ইশান অসাবধানতার জন্য নিচে পরে যায় আর জোরে কেঁদে দেয় ব্যাথা পাওয়ার জন্য। মা এমনই রেগে ছিলো তাই আরো রেগে এসে আমাদের কাছে দাঁড়ায়। ইশান আর আমাকে ইচ্ছে মতো বকা দিয়ে এক পর্যায়ে আমাকে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠায় কিন্তু সেটা ধরে ফেলে ভাইয়া।
———
ইয়াদ রাগে ফুসফুস করছে রুবিনার হাত ধরে আর ইয়ানা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। অনেক সময় পরেও যখন আঘাত অনুভব করে না তখন চোখ মেলে তাকায় ছোট ইয়ানা। তাকিয়ে দেখে তার ভাইয়া তার মায়ের হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। রাগে ইয়াদের পুরো মুখ টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে আর রুবিনা বিষ্ময়কর চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াদ রেগে দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে বললো, সাবধান মিসেস রুবিনা কবির আমার বোনের গায়ে হাত তুললে সেই হাত আমি ভেঙে দিতেও দুমিনিট ভাববো না।
এক ঝটকায় রুবিনা কবিরের হাত ছেড়ে দিলো ইয়াদ। রুবিনা অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ইয়াদের এমন আচরণে। তিনি বিশ্বাস করতে পারছে না এটা ইয়াদ। কখনো মায়ের উপর কথা না বলা ছেলেটা আজ মায়ের নাম ধরে কথা বলছে ? কীভাবে বিশ্বাস করবে রুবিনা ?
ইয়াসির হামিদ ধমক দিয়ে বলে উঠলো, ইয়াদ এটা কী ধরনের বেয়াদবি উনি তোমার মা হন। মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা তুমি ভুলে গেছো নাকি ?
ইয়াদ রুবিনার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠে, জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। কিছু মানুষ মা হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না। কিন্তু উপরওয়ালা তাদেরই মা বানিয়ে দেয়। উনি যদি সত্যিকার মা হতেন তাহলে মাত্র ১০ বছরের ছোট একটা ছেলেকে এতো দূরে একা পাঠিয়ে দিতে পারতেন না কখনো।
ইয়াসির বলে উঠলো, সেটা তোমার ভালোর জন্য করেছে ইয়াদ।
ইয়াদ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, ওহ্ মিস্টার ডি কে, ইউ জাস্ট শাট আপ।
ইয়াসির অবাক হয়ে বললো, ডি কে হোয়াটস দ্যাট, ইয়াদ আমি তোমার বাবা হই।
ইয়াদ উত্তর দিলো না ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাঁসলো।
———–
ইমা কৌতুহল নিয়ে বসে আছে। ইয়ানা চুপ করে যেতেই ইমা আবার অস্থির হয়ে উঠলো পরেরটা শোনার জন্য।
ইয়ানা বললো, সেদিন হঠাৎ করেই ভাইয়া এমন রাগি হয়ে গেলো। ভাইয়ার ধারণা হলো আমি বাবা-মায়ের কাছে ভালো নেই৷ তার দুদিন পরই আমাকে সাথে নিয়ে ইউকে ব্যাক করে ভাইয়া। তারপর থেকে ভাইয়ার রাগ কমার বদলে দিনদিন বাড়তেই থাকে। বাবা-মায়ের সাথে কথা বলা একদম বাদ দিয়ে দেয় তবে আমাকে কখনো কথা বলতে বাঁধা দেয়নি। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম ভাইয়া মেয়েদের সয্য করতে পারে না। ভাইয়া কতো হ্যান্ডসাম সেটা তো জানোই, মেয়েরা মাছির মতো ভনভন করতো ভাইয়ার আশেপাশে আর তাতে সে আরো রেগে যেতো। পড়াশোনা, ক্যারাতে, পিস্তল চালানো, এক্সারসাইজ এসব নিয়ে পরে থাকতো সবসময়। তবে আমার খেয়াল রাখতে একটুও ভুলতো না। ভাইয়ার জন্য আমার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো না কারণ সে বলতো মেয়েদের সাথে মিশলে আমিও ঐ মেয়েদের মতো নিকৃষ্ট হয়ে যাবো। দু একজন ছেলে ফ্রেন্ড ছিলো তবু নাম মাত্র ফ্রেন্ড আর বাকি সব ভাইয়াই ছিলো আমার। দেখতে দেখতে ভাইয়ার পড়াশোনা শেষ হয়ে যায় কিন্তু আমার পড়াশোনা তখনও বাকি আর ভাইয়া আমাকে সেখানে একা রেখে আসবে না তাই নিজের সাথে দেশে নিয়ে আসে আর এখনকার ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেয়। আমার হাসিখুশি ভাইয়াকে আমি বারো বছর আগে হারিয়ে ফেলেছি। আজও জানি না সেদিন কী হয়েছিলো কেনো ভাইয়া এতো রেগে বাড়ি ফিরেছিলো আর কেনোই বা মেয়েদের সয্য করতে পারে না। ইশানকেও আমার মতো ভালোবাসতো ছোটবেলায় কিন্তু সেদিনের পর থেকে ইশানের সাথে ভালো করে কথাও বলে না। আমরা দেশে ফিরেছি তিন বছরের মতো হলো কিন্তু ভাইয়া আমি ছাড়া কারো সাথেই তেমন কথা বলে না। জানি না কী হয়েছিলো সেদিন তবে এক মুহুর্তে আমাদের পরিবারের রং পাল্টে গিয়েছে সেদিন।
কথা শেষ করে ইয়ানা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ইমা গভীর চিন্তায় পরে গেলো কী এমন হয়েছিলো সেদিন যাতে একটা হাসিখুশি মানুষ এমন হয়ে গেলো। কোনো বড় রহস্য লুকিয়ে আছে এর মধ্যে। যা হয়তো ইয়াদ আর এই পরিবারের বিশেষ কেউ ছাড়া আর কারো জানা নেই। আবার ইয়ানার গলার স্বরে ইমার ভাবনার সুতো ছিঁড়লো।
ভাইয়া তোমাকে সহজে মেনে নিবে না তবে একবার যদি তার মনে জায়গা করে নিতে পারো তাহলে ভালোবাসার সাগর খুঁজে পাবে। এই পৃথিবীতে ঘৃণা করার অনেক মানুষ আছে ভাইয়ার কিন্তু ভালোবাসার জন্য একমাত্র আমি ছাড়া কেউ নেই। তাই তুমি যদি একবার জায়গা করতে পারো তাহলে সুখের সীমা থাকবে না। আমার ভাইয়ার জীবনে প্রথম নারী তুমি তাই চেষ্টা করো তার মনে লুকিয়ে রাখা রহস্যের সন্ধান পাওয়ার। একবার তার রাগের কারণ খোঁজে বার করতে পারলে সহজে তার সমাধানও পেয়ে যাবে।
আরো কিছু সময় কথা বলে ইয়ানা চলে গেলো আর ইমার মাথায় ইয়ানার কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। দু’দিনে ইয়াদ যা যা বলেছে তাই মনে করার চেষ্টা করছে কারণ ইয়াদের কথার মাঝেই হয়তো এই রাগের উৎস খোঁজে পাবে ইমা।
২০.
আজ দুদিন পর কলেজে যাচ্ছে কথা কিন্তু একটা রিকশাও পাচ্ছে না। এদিকে ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে তার।
বিরক্তি ভরা কন্ঠে কথা বললো, কেনো যে মায়ের সাথে রাগ করে গাড়িটা নেই না তার ঝাল আজ বুঝতে পারছি। রাস্তায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার চাইতে হয়তো মায়ের দুটো তেতো কথা শুনাও ভালো হতো।
কথা উল্টো দিকে তাকিয়ে আছে রিকশার আশায় কিন্তু দেখা নেই। অনেক সময় তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে তাকাতেই লাফ দিয়ে পেছনে সরে গেলো কথা। বুকে থু থু দিলো ভয়ের চোটে হার্ট বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম তার।
রাগী গলায় বললো, আপনি ?
ইশান কথার একদম কাছে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে কথার কাঁধের উপর দিয়ে কথার দৃষ্টি অনুসরণ করছিলো। কথা পেছনে ফিরতেই দুজনে একদম মুখোমুখি হয়ে যায় হয়তো এক ইঞ্চি দুরত্বও ছিলো না তাদের মাঝে। তাই ইশানকে এমনভাবে দেখে কথা ভয়ে লাফিয়ে পেছনে সরে যায়।
ইশান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটু ভাব নিয়ে বললো, হ্যাঁ আমি।
কথা দাঁতে দাঁত চেপে বললো, হ্যাঁ আপনি সেটা আমিও দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আপনি এখানে আর আমার এতো কাছে দাঁড়িয়ে কী করছিলেন ?
ইশান আগের ভঙ্গিতে বললো, আপনি এতোটা মনোযোগ দিয়ে কী দেখছিলেন সেটা দেখার চেষ্টা করছিলাম আর কী ? এক মিনিট আমি তোমাকে আপনি আপনি কেনো করছি ? পিচ্চি একটা মেয়েকে আপনি আপনি করছি। ইট’স নট ফেয়ার ইশান ভেরি ব্যাড।
কথা দাঁতে দাঁত চেপে ইশানের কথা শুনছে। ছেলেটা দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম কিন্তু কথার একদম সয্য হয় না একে। কারণ এর অতিরিক্ত বকবক ভালো লাগে না কথার।
কথা বললো, আপনার বকবক শেষ ? এবার আপনি আসতে পারেন।
ইশান বললো, আরে পিচ্চি রেগে যাচ্ছো কেনো বলো তো ? কারো জন্য ওয়েট করছিলে নাকি ?
কথা বিরক্ত হয়ে বললো, হ্যাঁ আপনার খালুজান রিকশাওয়ালার জন্য ওয়েট করছি।
ইশান বোকা বনে গেলো কথার উত্তর শুনে। তার খালু তাও আবার রিকশাচালক, সিরিয়াসলি ?
কথা ইশানের অবস্থা দেখে মজা পাচ্ছে কিন্তু হাঁসতে পারছে না।
ইশান কথাটা একটু ভেবে উচ্চস্বরে হাঁসতে লাগলো। ইশানের হাসি দেখে কথা নিজেই এবার বোকা হয়ে গেলো। সে কী কোনো জোকস বলেছে ? কথা ইনডিরেক্টলি অপমান করলো তাও হাঁসছে আজব লোক তো।
ইশান হাসি মুখেই বললো, কোথায় যাবে চলো আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।
কথা সিরিয়াস ভাবে বললো, ধন্যবাদ, আমার কারো হেল্প লাগবে না।
তখনই একটা রিকশা দেখতে পেয়ে কথা সেটাকে ডেকে এনে উঠে বসলো। ইশানের দিকে একবার তাকিয়ে চালককে বললো যেতে। কথা চলে গেলে ইশান সেদিকে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটাকে জালাতে ভালো লাগে ইশানের। এতো কম বয়সে এতোটা সিরিয়াস দেখে একটু বেশি জালাতে ইচ্ছে করে ইশানের। কথা বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে তাকালে সেটা দেখতে আরো ভালো লাগে। কেনো লাগে ইশানের কাছে তার উত্তর নেই। ইশান মুচকি হেঁসে গাড়ীতে উঠে সিট বেল লাগিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে রওনা হলো।
——
ইয়াদ বরাবরের মতো কপাল কুঁচকে কাজ করছে আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রনিত। পকেটে তার ফোনটা অনবরত ভাইব্রেট করে যাচ্ছে। এখান থেকে গিয়ে ফোন রিসিভ করলে চাকরি থাকবে না আর রিসিভ না করলে গার্লফ্রেন্ড থাকবে না। টেনশনে রনিত এসি রুমে ঘামতে শুরু করেছে। ইয়াদের কোনো দিকে হুঁশ নেই সে মনোযোগ দিয়ে ফাইল চেক করছে। হঠাৎ ইয়াদের ফোন ভাইব্রেট করে উঠে টেবিলের উপর। ইয়াদ তাকিয়ে দেখে জাম্বীর নাম্বার।
রনিতের দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি নিজের ডেস্কে যাও দরকার হলে ডাকবো।
রনিত মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেলো ইয়াদের বলতে লেট হলেও যেতে লেট হয়নি।
মনে মনে বললো, যে স্যারকে কল দিয়েছে তাকে সামনে পেলে একটা চুমু খেতাম এখন। এ্যা ছি এটা কী বলছি কে না কে তাকে চুমু খাবো ? এখন কথা বাদ দিয়ে গার্লফ্রেন্ডের কল রিসিভ করি নাহলে চুমুর বদলে ঝাঁটার বাড়ি খাওয়াবে আমাকে।
হ্যাঁ জাম্বী বলো কোনো সমস্যা ?
জাম্বী খুশি খুশি গলায় বললো, স্যার বারো বছর ধরে আপনি যাদের খুঁজছেন তাদের একজনের খোঁজ পেয়েছি স্যার।
চলবে,,,,
চলবে