#গল্পঃঅজানা_অনূভুতি
#লেখীকাঃফারহানা_জান্নাত
#পর্বঃ১০
মেয়ের বাসায় এসে সবাই বসে কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে। আগে থেকে সবার জানা আছে মেয়ে সম্পর্কে কারন আয়ান নাকি বলছে মেয়ের কথা যে তার রিলেশন আছে মেয়েটার সাথে। তাই কেও আপত্তি ও করে নাই। কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েটাকে আনা হয় তাদের সামনে। মেয়েটাকে দেখে মম দারায় পরে। সে কখন ও ভাবে নাই তার সামনে তার সব থেকে বড় শত্রু বসে আছে। আর তার বিয়ে নাকি আয়ান এর সাথে। মম একবার আয়ান এর দিকে তাকায় আর একবার সোফায় বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাকায়। আর ভাবতে থাকে আজ থেকে ৪ বছর আগের কথা
মম যখন সবে মাএ ইন্টার ২য় বর্ষে ভর্তি হয়। সেদিন কলেজ এ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে আয়ান বাইক নিয়ে দারায় আছে। আয়ান এর সাথে মম মাঝে মাঝে কলেজ এ যায় সেই জন্য সেদিন ও আয়ান এর সাথে বের হয়। ঐদিন কলেজ এ যখন প্রবেশ করবে তখন দেখে কিছু মেয়ে একটা ছেলেকে মারতেছিল। আয়ান তখন মম কে নামায় দিয়ে নিজের ডিপার্টমেন্ট এ চলে গেছিলো। মম যেখানে মারামারি হচ্ছে সেখানে যায় গিয়ে দেখে একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মম গিয়ে সবাইকে ঠেলে দিয়ে ছেলেটাকে উঠে বসায়। মম কে দেখে শিমু নামের মেয়েটা রেগে গিয়ে মাথার চুল ধরে টেনে উঠায় আর বলে।
শিমুঃ হেই হো আর ইউ। তোমার সাহস হয় কি ভাবে আমাদের কাজে বেঘাট ঘটানো। গেট আউট, নয়তো তোমাকে ও এই ছেলেটার মতো করে ছাড়বো। আমাকে চিনো না তুমি,
মমঃ তুমি কে সেটা আমি জানতে আসি নাই। আগে এটা বলো তোমার সাহস কি করে হয় একটা ছেলেকে এই ভাবে মারার। দেখে তো মনে হচ্ছে নতুন এর আগে দেখি নাই। নতুন এসেই এমন উরতে শুরু করছো নাকি। আর সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি দেখো যাও হেড স্যার কে ডেকে আনো আমি ও দেখবো কে কি করে আমার।
গন্ডগোল দেখে তখন আয়ান ও এদিকে এগিয়ে আসে। আর মম কে টেনে নিয়ে যায়। সেটা শিমু মেয়েটা লক্ষ্য করে। পড়ে মম প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দেয়, সাথে অনেক এ সাক্ষী দেয়। যার কারণে মেয়েটাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেদিন শিমু যাওয়ার সময় বলছিল।
শিমুঃ তোকে আমি দেখে নিবো। আমার সাথে পাংঙ্গা নিয়ে ভালো করিস নাই। তোর সব থেকে প্রিয় জিনিসটা আমি ছিনিয়ে নিব দেখে নিস। মনে রাখিস আমার নাম ও শিমু। এই শিমু কখন ও হারে নাই কারো কাছে। আর সোন তোর নাগর আই মিন ঐযে তোর বফ রে ভালো লাগছে সামলায় রাখিস তোর থেকে সুন্দর আমি। তাই পাখি যেনো উরাল না দেয়।
বর্তমান ঃ
আয়ান এর ডাকে হুস ফিরে মমের। এতোক্ষণ সে আগের কথা গুলো ভাবতেছিল। আর ভাবতিছে তাহলে আয়ান আর মম এর ঝামালার মধ্যে শিমুর কোনো হাত নেই তো। সবাই মিলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে তখন যানতে পারে শিমুর দাদু ২দিন পরে হজ্বে যাবে তাই আজকেই সবাই বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে করার কথা বলে। মেয়ে সবার পছন্দ তাই কেও না করে না। সন্ধার সময় আবির আসলে বিয়েটা কমপ্লিট হয়ে বউ নিয়ে সবাই বাড়ি আসে। আয়ান আর শিমুকে তাদের রুমে পাঠায় দিয়ে মম রুমে এসে আরুহিকে ঘুমায় দিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। আবির রুমে এসে দেখে মম বালিশ এ মুখ রেখে কান্না করতিছে। আবির কিছু বুঝতে না পেরে মম কে বলে।
আবিরঃ কি হয়ছে কান্না করতেছিস কেন। নাকি আমাকে ঘুমাতে দিবি না কোনটা বলতো। ওহ হ্যা আয়ান ওর তো আজকে বিয়ে হলো কেনো কষ্ট হচ্ছে নাকি তোর। ওর মতো একটা ছেলের জন্য কান্না করতেছিস লজ্জা করে না তোর। আর ভুলে যাস না তোর এখন স্বামী আছে বাচ্চা আছে অন্যের জন্য কান্না করা বোকামি ছাড়া কিছু না।
মমঃ আয়ান, তো খারাপ না। আর আয়ান কখন ও খারাপ হতে পারে না। ওকে শিমু ভুল বুঝায়ছে নয়তো আমায় আয়ান কখন ও আমাকে ছেড়ে যেতো না। খুব ভালোবসাতো আমাকে হুট করে বদলে যাবে এটা কখন ও হয়না। নিচ্শয় এর মাঝে কোনো গন্ডগোল আছে। আমি আয়ান এর সাথে কথা বলবো প্লিজ আবির।
আজ আবির কেমন জানি নিরব হয়ে যায় মম এর মুখে এমন কথা শুনে। তারপর ভাবে সে যতদূর যানে আয়ান মমকে অনেক ভালোবাসতো তাহলে এমন পাল্টি খেলো কিভাবে। আজ আর মমকে বকাবকি করলো না নিজের বুকের সাথে জরায় নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মম একসময় কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে আবির ঘুম থেকে উঠে দেখে মম নেয়। মাএ ৬ টা বাজে এতে সকালে কই গেলো সেটাই ভাবতিছে। ঐদিকে সকালে উঠে মম আয়ান কে ফোন দিয়ে টেনে ছাঁদে নিয়ে যায় আর বলে।
মমঃ আয়ান দেখ এখন তো তুই বিয়ে করছিস। প্লিজ এখন সত্যি টা বল, তুই কেনো আমার সাথে এমন করলি তুই তো খুব ভালো বাসতিস আমাকে হঠাৎ এমন হয়ে গেলি কেনো প্লিজ বলনারে। তোর পায়ে পরি, আমি তোকে এখন ও পাগল এর মতো ভালোবাসি, তোর ভাইয়ের সাথে আছি ভালোবেসে না বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ সেই কারনেই,
মমের কথায় আয়ান রেগে গিয়ে বলে।
আয়ানঃ আমার সামনে একদম নাটক করবি না, এসব নাটক আমার ভালো লাগে না। আর ভালোবাসার কথা বলতেছিস তোর থেকে বেশি আমি নিজে তোকে বাসি। নাহলে তোর সত্যি জানার পর ও ছেরে না দিয়ে কাছে রাখতাম না। দেখ এসব কিসের ছবি, ভাইয়ার সাথে লেপ্টে আছিস এসব তো তোদের বিয়ের আগে তার মানে কি হা যে ভাইয়ার সাথে তোর রিলেশন ছিল। আর এখন আমার কাছে এসে নাটক করিস এসব ছবি শিমু আমাকে দিয়েছিল নয়তো কখন ও জানতামই না যে তুই এতো দূর চরিত্রা। তোর মতো মেয়েকে আমি কিভাবে ভালোবাসতে পারলাম যানি না। তোকে ভুলে থাকার জন্য কতো মেয়ের কাছে গেছি সেটা তুই নিজে ও জানিস না। তবুও তোকে ভুলে থাকা আমার সম্ভব হয়নি। তখন শিমু আমাকে অনেক সাপোর্ট করছে, আর হ্যা ভাইয়ার সাথে সংসার কর ভাইয়া তোকে ভালোবাসে ঠকাস না। আর কখন ও ডাকবি না আমাক।
আয়ান চলে যায়। মম কিছু বলবে তার সুযোগ দেয় না, তবে সন্দেহ করবে যে কেও ছবি গুলো দেখে। আয়ান যে ছবি দেখালো সেই ছবি গুলো আবির আর মমের। এটা বিয়ের ৬ মাস আগের ছবি। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিস মম একা একা বসায় আসতেছিল তখন আবির ও হসপিটাল থেকে বাসায় আসতেছিল। মমকে দেখে একসাথে আসে হঠাৎ জোরে পানি হওয়ায় একটা দোকানের বারান্দায় মম আর আবির ঠায় নেয়। সেদিন সেখানে শিমু আর তার ফেন্ডরা ও ছিল। হঠাৎ জোরে ব্রর্জপাত হওয়ায় মম আবির কে জরায় ধরছিল সেই ছবি এগুলো। আয়ান তাকে এসব এর জন্য ভুল বুঝছে ভেবেই মম ওখানে বসে কান্না করতিছে। এদিকে অরুহি কান্না করে যাচ্ছে আবির থাকাতে পারতেছে না। আরুহি কোলে নিয়ে ছাদে এসে দেখে মম বসে কান্না করতিছে আবির মমের কাছে যাওয়া মাএ মম জরায় নিয়ে কান্না করে আবির এর বলা সব কথা খুলে বলে। আবির একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
আবিরঃ মম যা হবার হয়ছে এটা নিয়ে আর কান্না করো না। আমার মেয়েটা কাদিচ্ছে তাকে থামাও রুমে যাও। কেও দেখলে কি বলবে বলো। আর আয়ান এর কথা বলতিছো যে ভুল বুঝছে ওকে ফাইন তাকে আমি সব খুলে বলবো যাতে তোমাকে ভুল বুঝে ঘৃণা না করে ঠিক আছে। যাও আর কান্না করো না। আরুহিকে নিয়ে রুমে যাও।
মম আরুহিকে নিয়ে রুমে যায়। এদিকে আবির অনেক ভেবে আয়ান এর কাছে যায়। আর আয়ানকে বলে বৃষ্টির সেদিনের কথা, আয়না শুনে নিজেও কান্না করে দেয়। যে সে কিভাবে ভুল বুঝতে পারলো। আয়ান আবির এর সামনেই শিমু কে ৩-৪ টা থাপ্পড় মারে। তাদের মাঝে ঝামালা করিয়ে দেওয়ার জন্য। শিমু এবার কান্না করতে করতে বলে।
শিমুঃ আয়ান তুমি আমাকে মারতে পাড়লে। হা মানলাম আমি ভুল করেছি সে জন্য তুমি আমাকে মারবা। দোষ মমের ছিল, কারণ ও আমার সাথে ঝামালা করে কলেজ থেকে বের করে দেয়। তাই রাগের মাথায় সব করছি।
আয়ান রুম থেকে চলে যাবে এমন সময় আবির বলে”ভাইয়া আমি একটু মমের কাছে যাই” আবির সেদিকে তাকায় মাথা নাড়ায় হ্যা বলে। আবির অনুমতি পেয়ে জোরে হেঁটে মমের রুমে যায়। গিয়ে দেখে মম গ্রিন ধরে দারায় আছে। আয়ান দরজা লাগায় সেদিকে যায়, মমের খিয়াল নেয় ও ভাবে আবির রুমে আসসে। হঠাৎ মমকে কেও জরায় ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। এবার মমের ধেন ভেঙ্গে যায়। সে পিছনে তাকাতে যাবে কিন্তু তাকাতে পারে না শক্ত করে জরায় নিয়ে আছে। হঠাৎ করে বুঝতে পারে কেও মাটিতে পড়ে যা সেদিকে তাকায় দেখে আয়ান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। মম জোরে চিল্লিয়ে উঠে…