অজানা অনূভুতি পর্ব -০৯

#গল্পঃঅজানা_অনূভুতি
#লেখীকাঃফারহানা_জান্নাত
#পর্বঃ০৯

বিয়ে পরার কিছুক্ষণ আগে উপর থেকে চিল্লা-চিল্লির শব্দে সবাই সেদিকে যায় গিয়ে দেখে মমকে পিছন থেকে জরায় নিয়ে আছে আবির। তা দেখে কিছু মহিলা বলতে শুরু করে। “”কি নির্লজ্জ মেয়ে এভাবে পুরুষ মানুষ এর সাথে লে-প্টে আছে। তাও আবার ঘরের দরজা বন্ধ না করেই। আর এই ছেলে এই লজ্জা করে না মেয়েদের দেখলেই কি জরা-জরি করতে মন চায়। ছি রাজুর মা কেমন মেয়েকে বাড়িতে যায়গা দিছো যে পু-রুষ মানুষ এর সাথে লে-প্টে থাকে। একটা বাচ্চার মা হয়ে এমন ছি ছি ছি আমার মেয়ে হলে মে-রেই ফেলতাম।””

পিছন থেকে আর একজন বলে “” এতো মানুষ এর সামনে মান সন্মান তো কিছু রাখলো না ছেলেটা। রাজুর মা এক কাজ কর এই ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দে তার পর যা করার তাই করবে। এখানে এসব ন-ষ্টা-মি চলতে না।

মম বিরক্ত নিয়ে সব কথা শুনতিছে। আবির ইচ্ছা করে মানুষ দেখে এমন করছে তা বুঝতে পাড়ে। আর আবির বিশ্ম-য় নিয়ে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। আর ভাবে রাজুর বউ মম হলে বিয়ে দেওয়ার কথা বলবে কেন। তাহলে কি আবির এর মাথায় কিছু ঢোকে না কি করবে বুঝতে পাড়ে না। পরক্ষণেই যে রুমে আছে সেই রুমে ভালো ভাবে তাকাই দেখে বুঝতে পারে মম আর রাজুর বিয়ে হয়নি। মম মজা নিছে আবির এর থেকে। কারণ দেওয়াল এ রাজু আর তার বউ এর ছবি আছে। এবার মম রেগে যায় সবার এমন অ-সভ্য কথা শুনে তাই চিল্লিয়ে বলে।

মমঃ কি সমস্যা আপনাদের বলুন তো। কিছু একটা হলেই সেটা নিয়ে বড় কোনো গন্ড-গোল না পাকালে হয়না আপনাদের। আর ওনি আবির আমার বর এবার আপনাদের শান্তি। আবির এর সাথে আমার ঝামালা চলতেছিল সে জন্য তার সাথে কথা বলতেছিলাম না দেখে জরায় ধরছে। আর কিছু বলতে হবে আপনাদের।

সবাইকে হালকা পাতলা কিছু কথা বুঝিয়ে দেয় রাজু। তারপর সবাই চলে যায় বিয়ে পড়ানোর ওখানে। আবির মম এর দিকে রাগি চোখে তাকায় আরুহিকে কোলে নিয়ে নিচে যায়। একটু পর বিয়ে কমপ্লিট হলে ঝর্ণা বিদায় নিয়ে যায়। আর আবির মম কে ঝাড়ি মেরে সব গোছ করতে বলে। মম ও সব কিছু ঠিকঠাক করে নিয়ে আবির এর সাথে ফিরে যায়। বাসায় গিয়ে মম কারো সাথে কথা না বলে আরুহিকে নিয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবির রুমে এসে দেখে মম ঘুমাই গেছে তাই কিছু না বলে নিজে ও ফ্রেশ হয়ে মম এর পাশে শুয়ে পড়ে। সকালে মম ঘুম থেকে উঠে দেখে আবির শক্ত করে জরায় নিয়ে শুয়ে আছে। মম সেদিকে তাকায় কিছুটা মন খারাপ করে উঠে নিচে গিয়ে একটু আকটু সবার সাথে কথা বলে নিজের জন্য কফি বানায় নিয়ে বারান্দায় এসে বসে কফি খাচ্ছে আর ভাবতিছে মনে মনে।

মমঃ ইশ আবির তুমি জানো না আমার মাঝে এক অজানা অনুভূতি কাজ করে তেমার জন্য। আমি জানি না সেই অনুভূতিটা কি কেন এমন হয়। আমি তো তোমাকে ভালেবাসি না তাহলে। তুমি আমার জামাই সে জন্য নাকি অন্য কোনো কারণ। আমার এই অজানা অনুভূতির মানে টা কি বুঝতে পাড়ি না আমি। আমার অজানা অনুভূতি জুরে শুধু তোমাকেই নিয়ে।

রুম থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসায় মম রুমে গিয়ে দেখে আবির আরুহিকে নিয়ে হাটাহাটি করতিছে। আরুহি কান্না করতিছে দেখে। মম গিয়ে আরুহিকে নিয়ে খাওয়ায় দিয়ে নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে রুমে আসে। আরুহিকে নিয়ে শুয়ে আছে মম এমন সময় পেটে ব্যাথা পেয়ে পেটে হাত দিয়ে দেখে আবির নখ দিয়ে খাম-চি দিয়ে আছে। মম জোর করে আবির এর হাত সরায় আবির কে বলতে লাগে।

মমঃ আবির একদম পাগলামি করবা না। আমি তেমার দোষে বাড়ি ছাড়ছিলাম। এখনো কিন্তু তুমি নিজে আমাকে বাড়ি ফিরে আনছো তাই অত্যা-চার বন্ধ করো নয়তো কিন্তু আবার বাড়ি ছাড়তে বাদ্ধ হবো এবার আর খুজে পাবে না আমাকে। তাই প্লিজ আর এখন একটা বাচ্চা আছে আসা করি আমার কথা বুঝতে পারছো তুমি। ছাড় আর যাও মিতুল ভাইয়াদের বাড়ি যাবা নাকি আজকে সেখানে তো আজ বউ-ভাত।

আবির মম কে কাছে টেনে রাগি সুরে বলতে শুরু করে।

আবিরঃ তো কি করবো তোকে আমি আদর করবো তাই না। শোন সব ভুল তোর ছিল আর আমি ভুল বুঝলাম তাতেই বাড়ি ছেড়ে গেলি তুই। আর এখন আমার সাথে মজা ও করছিস। কি বলছিলিস তোর বিয়ে হয়ছে তাই না। তো এখন তোর গায়ে হাত দেওয়াতে এমন ব্যাথা পাস কেনো। যা রেডি হো মিতুল-দের বাসায় যাব।

মম আবির কে ধাক্কা দিয়ে সরায় উঠে রেডি হয়ে নেয়। তারপর আরুহিকে নিয়ে আবির এর সাথে মিতুল দের বাসায় যায়। মম মিতুল দের বাসায় এসেই আবির এর কোলে আরুহিকে দিয়ে ঝর্নার কাছে চলে যায়। গিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে যখন নিচে আসবে তখন একটা মহিলা তাকে ডাক দেয় সেখানে গিয়ে দেখে পাশে আবির বসায় আছে। মম মহিলাটার কাছে গেলে মহিলাটি বলে “বাহ কি লক্ষি মেয়ে, তোমার নাম কি মা। বাসা কই কি করো। তোমার বাবা-মা কি করে। আর মিতুল তোমার কে হয়। আমি মিতুল এর খালা মুনি হয়। তা মা তোমার কি বিয়ে হয়ছে নাকি” একসাথে এতো কথা শুনে মম বিষম খায়। তবে বুঝতে পারলো এতো কিছু শোনতে চাওয়ার কারন কি। মম আবির এর দিকে তাকাই একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে মহিলা টির পাশে বসে বলে।

মমঃ আমার নাম মম খালামুনি। আর খালামুনি আমাকে দেখে কি আপনার বিবাহিত মেয়ে মনে হচ্ছে। আমি বাচ্চা একটা মেয়ে, এখনই কি বিয়ের বয়েস হয়ছে বলেন। ইন্টার কমপ্লিট করছি আন্টি। আর মিতুল ভাইয়ার বউ এর ফেন্ড আমি। বাবা-মা তেমন কিছু করে না।

মম এর কথায় হয়তো মহিলাটি খুশি হয়ছে। মারাত্মক হাসি দিচ্ছেন ওনি। মম আবির এর দিকে তাকায় ঢোক গিয়ে কেমন একটা রাগি ভাব নিয়ে তাকায় আছে মনে হয় এখনই গিলে খাবে। তবে মম যানে সবার সামনে কিছু বলবে না তাই মম আর ও রাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এবার মহিলাটি একটা ছেলেকে ডাক দিয়ে বসতে বলে মম এর দিকে তাকায় বলে” এই যে মা এটা হচ্ছে আমার ছেলে। মাস্টার্স কমপ্লিট করছে জব এর এপ্লাই করতিছে। আমার ছেলে কিন্তু সবদিক দিয়ে ভালো দেখো। আমার ছেলেকে কি পছন্দ হয়ছে তোমার বলো। তাহলে তোমার বাবা-মার সাথে কথা বলবো আমি” মহিলাটির কথাটা বলতে দেরি হয়ছে কিন্তু আবির এর উঠে দাড়াতে দেড়ি হয়নাই। আবির উঠে এসে মম এর কোলে আরুহিকে দিয়ে বলে।

আবিরঃ আরুহি কান্না করতিছে যাও ওরে খাওয়াই দেও। ছোট বাচ্চা কতক্ষণ থেকে না খেয়ে থাকবে একটু খাওয়াও। আর কেমন মা তুমি বাচ্চার খেয়াল রাখ না। সে তখন আমার কোলে দিয়ে গেছো আর কোনো খবর নাই। যাও ঝর্নার কাছে যাও। ও একা আছে আর আরুহিকে সাথে নিয়ে থাকবা।

মম বিরক্ত হয়ে আরুহিকে নিয়ে চলে যায়। আর মহিলাটা কেমন অবাক হয়ে তাকাই আছে এখানে কি হচ্ছে সেটা যেনো বুঝতেই পারতিছে না। একবার মম এর যাওয়ার দিকে তাকায় একবার আবির এর দিকে তাকাই। সেটা দেখে আবির বলে।

আবিরঃ সরি আন্টি কিছু মনে করবেন না। মম আমার বউ আর ঐ বাচ্চাটি দেখলেন সেটা আমাদের সন্তান আরুহি। মম এতোক্ষণ আপনার সাথে মজা করতেছিল। আর আপনার ছেলে ভালো আছে অন্য মেয়ে খোঁজেন। আমার বউ এর থেকে নজর টা সরায় রাখেন মনে রাখবেন ও বিবাহিত এমন কি একটা বাচ্চা ও আছে।

আবির কথা গুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো। মহিলাটি সেই বোকার মতো তাকায় আছে সেইদিকে। আর কিছু কিছু মেয়ে তো হাস-ফাস করতিছে কাল কে কতো মজা করলো আবির এর সাথে এখন শুনতিছে বিবাহিত এমন কি একটা বাচ্চা ও আছে। সব শেষে ঝর্না আর মিতুল ঝর্নাদের বাসায় যায়। আর আবির মম বাসায় চলে আসে। রাতে খাওয়া দাওয়া করে মম আরুহিকে ঘুমায় দিয়ে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আবির মম এর গালে দুইটা চড় বসায় দেয়। মম গালে হাত দিয়ে আবির এর দিকে তাকায় আছে। কি এমন করলো যে তাকে চড় মারলো। মম প্রশ্ন করবে তার আগে আবির বললো।

আবিরঃ ঐ তোর সাহস হয় কিভাবে নিজেকে অবিবাহিত দাবি করার। আর তোর হাতে চুড়ি কই নাকের ফুল করে বিধবা সাজার ইচ্ছে হয়ছে নাকি যা এখান থেকে আর চুড়ি নাকের ফুল পড়ে আয় নয়তো আবার দুইটা দিব গালে। কি ভাবছিস, তোকে আমি নিয়ে আসসি দেখে আদর এ মাথায় উঠায় রাখবো আমি, এটা ভাবিস না কখন ও তুই ভুল করলে শাস্তি পাবি এটাই মনে রাখিস।

মম কান্না করে দেয় এবার। তারপর চুড়ি আর নাকের ফুল পড়ে ঘুমাতে যায়। মাঝখানে আরুহিকে রেখে দেয়। কিন্তু তার কেমন জানি ঘুম ধরতিছে না। আবির এর দিকে তাকায় দেখে চোখ বন্ধ করে আছে হয়তো ঘুমাই গেছে। মম আরুহিকে সাইট এ শুয়ে দিয়ে আবির এর কাছে গিয়ে আবির এর বুকে মাথা রেখে কান্না করতিছে। এখন ও গাল তার ব্যাথা করতিছে। মম কাছে আসায় চোখ খুলে তাকাই আবির। এখন ও ঘুমাই নাই চোখ বন্ধ করা ছিল তার। আবির দেখে যে মম কান্না করতিছে কিছু বলতে গিয়ে ও বললো না। সকালে সবাই নাস্তা করার পর আবির হসপিটালে যায় আর বাকিরা বসে আড্ডা দেয় তখন আবির এর মা জানাই একটু পর আয়ান এর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। মম কিছুক্ষণ আয়ান এর দিকে তাকায়। এই মানুষটাকে সে পাগল এর মতো ভালোবাসতো। হয়তো এখন ও বাসে এতো সহজে কি কাওকে ভুলা যায়। সবাই মেয়ের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। ওখানে গিয়ে মম সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখে অবাক হয় একটু না অনেকটাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here