অজানা অনূভুতি পর্ব -০৮

#গল্পঃঅজানা_অনূভুতি
#লেখীকাঃফারহানা_জান্নাত
#পর্বঃ০৮

মিতুল এর কাছে ফোন দিয়ে আবির ঝর্নার ভাইয়ের নাম্বার টা নেয়। আর ঠিক করে যে রাজুর সাথে দেখা করে মম কে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ। রাজু মম আর ঝর্না বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল এমন সময় রাজুর ফোন বেজে ওঠে। সবার দৃষ্টি রাজুর দিকে যায়। সেটা দেখে রাজু বলে উঠে।

রাজুঃ হুহ এমন ভাবে তাকাই আছে যেনো আমার জিএফ ফোন করছে। আরে আমি বিয়াত্তা আমার বউ আছে বউ এর সাথে কথা বলতেই পারি। সে জন্য কি তোগো পারমিশন নিতে হবে নাকি চোখ নামা সব। আর এটা রং নাম্বার খারা দেখতাছি কে।

রাজুর কথায় মম আর ঝর্না খিলখিল করে হেঁসে উঠে। রাজু ঝাড়ি মেরে ফোনটা রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা কর্কশ গলায় একজন বলে উঠে।

আবিরঃ হ্যালো মিস্টা রাজু। আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। প্লিজ আমি কে জানতে চাইবেন না এখন। আজ রাতে দেখা করতে পারবেন… রেস্টুরেন্টে কিছু বলার ছিল আপনাকে প্লিজ। প্লিজ না করবেন না খুব দরকার ছিল দেখা করাটা।

রাজু বোকা বনে যায়। একে-তো কে চিনতেই পারতিছে না তার উপর এমন আব্দার। মম আর ঝর্নার দিকে তাকালে মম রাজি হতে বলে। ফোন স্পিকারে দেওয়া ছিল সবাই শুনতে পাইছে। রাজু হ্যা বলে ফোনটা কেটে দেয়। মম এবার গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে।

মমঃ ভাইয়া দেখে শুনে তোকে না গুম করে দেয়। ঐটা আবির এর কন্ঠ বুঝতেই পারতিছ। তবে এটা বুঝলাম না তোমার সাথে দেখা করতে চায় কেন। যাই হোক যাওয়ার পর মেসেঞ্জার এ ফোন দিবা কি কি কথা হয় সব শোনবো আমরা। যাও সাবধানে যেও।

রাজু কে ভুল-ভাল বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়ে মম যে রুমে থাকে সেই রুমে ঝর্নাকে নিয়ে আসে। এসে দেখে আরুহি ঘুমিয়ে আছে। আর রাজু রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরে আবির এর সাথে দেখা করার জন্য। রাজু জায়গা মতো পৌঁছে ভিতরে চোখ দিয়ে দেখে আবির আসসে তাই আগেই ফোন বের করে মম এর কাছে ফোন দেয় মম ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে রাখে। রাজু ধির পায়ে আবির এর সামনের চিয়ার এ বসে কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বলে উঠে।

রাজুঃ আ-আ-আপনি এখানে। এখানে তো অন্য কেও থাকার কথা ছিলো। আপনি কি করতিছেন। ওয়েট কোনো ভাবে আপনি আমাকে ফোন করে আনেন নাই তো। তাহলে আমি যাচ্ছি আপনার সাথে আমার কোনো কথা নাই।

(আবির নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বলে উঠে)

আবিরঃ দেখুন মিস্টার আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তাই কোথাও যাবেন না আগে আমার কথা শুনুন আর বসেন এতো উত্তেজনা হবেন না। অর্ডার দেন কি খাবেন তারপর নাহয় আমি ধিরে সুস্হে বলতেছি কেনো ডাকলাম আপনাকে।

ফোন এর ঐ-পাশ থেকে মম বলে উঠে

মমঃ “ঐ ভাইয়া বসো, তুমি আবার বেশি বলে ফেলতিছ। কখন যানি তেমাকে মেরে না দেয়। তাই এতো নাটক বাদ-দিয়ে বসে শুনো কি বলতে চায়। আর ইয়ারফোন ভালোভাবে কানে লাগাই নেও”

মম এর কথায় রাজু মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে বসে কফি অডার করে। আর মাঝে মাঝে আবির এর দিকে তাকায়। এবার আবির মুখ চাওয়া চাওই করে বলে উঠে।

আবিরঃ দেখেন আমি জানি না আপনারা কবে বিয়ে করছেন। মানে আমার মমকে, মম শুধু আমার। তাই প্লিজ আপনি মমকে ডিভোর্স দিয়ে দেন আমি আমার মমকে ফিরিয়ে পেতে চাই। বিনিময়ে যা চাইবেন তাই দিব। আর আপনি কি রকম মানুষ বলেন তো একটা বাচ্চা আছে এমন মেয়েকে বিয়ে করছেন।

রাজুঃ ওহ এই ব্যাপার। তবে যাই বলেন এতো কিউট একটা মেয়ে এখন আমার বউ তাকে কি-ভাবে ছেড়ে দেই বলেন। আমি পাগল নাকি যে বউকে ছেড়ে দিব। তাই আপনি ভুলে যান মম এর কথা। সে এখন আমার বউ মানে শুধু আমার।

রাজুর কথায় আবির রেগে টেবিল এ থাবা মানে। রাজু কিছুটা ভয়ে কেঁপে ওঠে আবার নিজেকে সামলে নেয়। আর ঐদিকে মম বুঝতে পেরে বলে উঠে।

মমঃ হুহ শালা হনুমান, আমাকে তোর চাই তাইনা। বিয়ের পর কম অত্যাচার করিস নি আমাকে। এখন আমাকেই তোর চাই হেন-তেন। আর নিজে এখন রাগ দেখায়। ভাইয়া তুই ওরে একটু বকাঝকা করে চলে আয়। আর একটু কষ্ট পাক ও তারপর ফিরে যাব এর আগে না।

এইদিকে একদিকে আবির এর কথা আর একদিকে মম এর কথায় রাজু রেগে যায়। এবার জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।

রাজুঃ চুপ বা*ল। আর মিস্টার আবির আপনি ও শোনেন মমকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার সময় মনে ছিলো না আপনার। আর কই এতোদিনে তো একটা বাড় খোঁজ নেননি এখন দেখতে পাইছেন সে জন্য আসসেন মম কে ফিরিয়ে নিতে। শুনুন জিনিস কাছে থাকতে মূল্য দিতে হয়। হারিয়ে গেলে বা দূরে গেলে তা সহজে ফিরে পাওয়া যায়না। আর কিছু কিছু জিনিস আছে যা কখনোই ফিরে পাওয়া যায়না। আমি কি বলতে চাইছি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন।

রাজু নিজের মতো কথা শোনায় বাসায় চলে আসে। আর আবির বুঝতে পারে ভুলটা তার। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় ভুলটা তার না মমের। কারণ মম কখন ও তাকে মুখ ফুটে নিজের ভুলের কথা বলে নি। এমন-কি বিপদে পড়লে ও একটা বার এর জন্য আবিরকে বলে নাই। তাই আবির নিজে বিরবির করে বলে উঠে।

আবিরঃ মম তোকে তো আমার করে নিবো যে করেই হোক। আর তারপর এতো কষ্ট দিবো যা সারাজীবন মনে রাখবি। কারণ ভুল আমার না। তুই বিয়ের আগে অন্য ছেলের সাথে মিশবি আর আমি সেটা নিয়ে সন্দেহ করলেই বাড়ি ছেরে যাবি। আর ফিরে আনতে চাইলে আসবি না। যাস্ট ওয়েট আমি কি করি দেখে যা। আমাকে রাগিয়ে দিয়ে তুই ভালো করলি না মম।

এরপর আবির ও তার বাসায় যায়। আর নিজের মনে মনে প্লেন ঠিক করে রাখে। আজ ঝর্নার গায়ে হলুদ। সব কিছু আয়োজন করা শেষ খুব সুন্দর ভাবে পুরো বাড়ি সাজানো হয়ে গেছে। সবাই হলুদ শাড়ি পড়ে ঝর্নাকে হলুদ লাগাতে আর ছবি উঠাতে ব্যাস্হ। মম ও আজ একটা হলুদ শাড়ি পড়েছে। সাথে আরুহিকে একটা হলুদ জামা পরিয়ে দিছে। ছেলের বাড়ি থেকে কয়েকজন আসবে হলুদ লাগাতে তাই সবাই অনেক এক্সাইটেড নিয়ে বসে আছে। একটু পর গেড দিয়ে গাড়ি আসলে মম সেদিকে তাকায় দেখে হলুদ পাঞ্জাবি পড়া-হাতে ঘড়ি-চুল স্পাইক করা আবির ধির পায়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে। সবাই সে-দিকে তাকায় হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তার থেকে বেশি অবাক হয় এর পড়ে যে গাড়ি থেকে নামে তাকে দেখে। কারণ মিতুল সয়ং আসসে হলুদ লাগাতে। এবার ঝর্ণার দাদি তো মিতুল কে বলেই বসে “তা নাত-জামাই বউকে না দেখে বুঝি শান্তি পাচ্ছিলে না। তাই নিজেই চলে আসলে বউকে হলুদ লাগার বাহানা করে দেখতে। জানিস নাতজামাই তোর দাদাশ্বশুর মশায় ও ছিলো এমন। আমাকে বিয়ের আগে যে কতো লুকিয়ে দেখতে আসসে। আমার কিন্তু প্রেমের বিয়ে ছিল”

ঝার্নার দাদির কথা শুনে সবাই জোরে জোরে হেঁসে দেয়। মিতুল কিছুটা লজ্জা পায়। পরক্ষণেই নিজেকে ঠিক করে নিয়ে। তার দাদি-শাশুরিকে হালকা নিজের সাথে জরায় নিয়ে বলে উঠে।

মিতুলঃ কি-যে বলো না আমার সুন্দরী। তোমাকে রেখে কি আর তেমার নাতনিকে দেখতে মন চায়। আমার তো ইচ্ছে করতিছে তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাই। রাজি আছো নাকি আমার সুন্দরী বুড়ি। রাজি থাকলে বলো তোমাকে এখনই বিয়ে করে নিয়ে যাবো।

মিতুল এর কথায় সবাই হেঁসে উঠে। সাথে অনেক ভালে লাগে সবার যে কোনে অহংকার নাই। খুব সহজেই মানুষ এর সাথে মিশে যায়। ঝর্নার দাদী মিতুল এর পিঠে একটা হালকা চড় মেরে হেঁসে উঠে। এরপর সবাই হলুদ মাখা-মাখি করে চলে যায়। মম কিছুটা অবাক হয় আবির এখানে এসে মেয়েদের সাথে ফ্লাট করতিছে। আর এমন ভাবে ছিল যেনো মম কে চিনেই না। মম এর কিছুটা খারাপ লাগলো। আবির যাওয়ার সময় মম এর মুখটা দেখে নিজে-নিজে হেঁসে উঠে। রাত পেরিয়ে দিন হয়। আজ মেহমানে পুরো বাড়ি ভরে উঠেছে। কাল যারা যারা ছিলো না তারা সবাই আজকে চলে আসসে। মম একটা মিষ্টি কালার এর শাড়ি পড়েছে। এইদিকে আবির মিষ্টি কালার এর একটা পাঞ্জাবি পরে নিয়েছে। মিতুল ওরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ঝার্নাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বড় এসে গেলে সবাই গেট ধরে কিছুটা ঝগরা করে টাকা নেন-দেন মিটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ভিতরে আসতেই আবির এর চোখ আঁটকে যায় মম এর উপর। একদম পুতুল এর মতো লাগতিছে সাথে আরুহিকে কোলে নিয়ে আছে। আবির সেদিক থেকে চোখ সরাই স্টেজে বসে পড়ে।

বিয়ে পরার কিছুক্ষণ আগে উপর থেকে চিল্লা-চিল্লির শব্দে সবাই সেদিকে যায় গিয়ে দেখে….

(কেমন হয়ছে গাইস😒🥲)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here