ভালোবাসা তুই পর্ব -২৯ ও শেষ

#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ২৯
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

আমি নিশিকে ফোনটা দিলাম । নিশি কল রিসিভ করে স্পিকারটা বাড়িয়ে দিল । কলটা রিসিভ করার পর তৎক্ষণাৎ ওপাশ থেকে বলে উঠলো,

” কখন থেকে কল দিচ্ছি রিসিভ করছো না কেন ?

” আমি আমার ফিউচার হাসবেন্ডের ভাবনায় এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে আপনার কলটা খেয়ালই করিনি !

আমি নিশির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালাম ! আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে নিশি কলটা মিউট করে আমাকে বলল,

” আরে এভাবে তাকাস কেন ? তুই দেখতে থাক আমি কি বলি !

নিশির কথায় আমি শান্ত হলাম ! আমি শিওর ওই মিস্টার বলদ নিশির কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। এই বেটার এতো লজ্জা কোথা থেকে আসে বুঝি না ! ওপাশ থেকে বলদটা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,

” কি ভাবছিলে এতো ?

” ভাবছিলাম বিয়ের পর আপনাকে কি রান্না করে খাওয়াবো ? যাতে আপনার কোনো অসুখ- বিসুখ না হয়!

” তুমি যা রান্না করে দিবে আমি তাই অমৃতের মত খেয়ে নেবো !

” সত্যি !! তাহলে তো আমি আপনাকে প্রতিদিন করলা রান্না করে খাওয়াবো ! শরীরের জন্য অনেক উপকারী করলা ! আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে এক গ্লাস করলার জুস বানিয়ে আপনাকে দিবো । আর আপনি অমৃতের মত করে খেয়ে নিবেন । সকালের নাস্তায় করলা ভাজি দিবো । দুপুর ও রাতে করলার তরকারি দিবো ! আপনার জীবনটা করলাময় করে দিবো !

নিশির কথায় আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে ! হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি করার মতো হাসি আসছে । বলদটা বুঝে যাবে তাই আমি মুখ চেপে হাসছি । নিশির কথায় বলদটার অবস্থা খারাপ । সে আমতা আমতা করে বলল,

” তুমি এতো কষ্ট করে রান্না করে দিবে আমি তো অবশ্যই খাবো ! কিন্তু প্রতিদিন না খেলে হবে না ?

” আপনাকে কে বলল আমি রান্না করে খাওয়াবো ? আমার ছোটবেলা থেকে অনেক ইচ্ছে বিয়ের পর জামাইয়ের হাতের রান্না খাবো ! আমার এই শখটা পূরন করতে আপনি অবশ্যই আমাকে রান্না করে খাওয়াবেন !

” আমি তো রান্না করতে পারি না !

” তাতে কি হয়েছে ? প্রথম প্রথম রান্না করতে গেলে আপনার হাত পুড়ে যাবে ! আপনি কি আমার জন্য কষ্ট করে আপনার হাত পুড়াতে পারবেন না ?

ওপাশ থেকে কিছু না বলে ফট করে কলটা কেটে দিলো ! কলটা কাটার পর আমি আর নিশি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম । নিশি হাসতে হাসতে আমাকে বলল ,

” আহারে বেচারা কতো আশা করে হবু বউয়ের সাথে কথা বলার জন্য কল দিয়েছিলো । কিন্তু বউয়ের ফিউচার প্লেন শুনে কথা না বলেই কেটে দিলো!

আমার শুভ্র ভাইয়ের কথা মনে হতেই হঠাৎ করে মন খারাপ হয়ে গেল । উনি কখন আসবেন ? আমি যে প্রচন্ড মিস করছি উনাকে ! আমাকে চুপ করে যেতে দেখে নিশি বলে উঠলো,

” শুভ্র ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে ! চিন্তা করিস না উনি ঠিক এসে যাবে !

আমাদের কথার মাঝে আম্মু রুমে এলো । আম্মুকে দেখে আমরা চুপ করে গেলাম । আম্মু আমাকে বললেন,

” শুভ্রতা ফারহান কল করে বলেছিল কালকে ওর সাথে দেখা করতে । কাল বিকেলে রেডি থাকিস !

” আম্মু তোমরা একটু বেশি বেশি করে ফেলছো না ? আপুর বিয়ে হতে না হতেই আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগছো ! আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কি এই ছেলেটা ছাড়া আর কাউকে পাবে না ? আমি ওই ছেলেটাকে বিয়ে করবো না !

” জেদ ধরে না মা ! ছেলেটা অনেক ভালো তাই তো আমরা ওর কাছে বিয়ে দিতে চাচ্ছি !

” আমি কারো সাথে দেখা করতে পারবো না !

” কালকে তুই ফারহানের সাথে দেখা করবি ! আমি যেন আর একবার ও এই কথাটা না শুনি ।

আম্মু কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ! আমি ফোনটা হাতে নিয়ে আবারও শুভ্র ভাইয়ের নাম্বারে কল করলাম ! কিন্তু শুভ্র ভাইয়ের নাম্বার আবারও অফ বলছে !

রাতে ঘুমানোর সময় নিশাত ভাইয়া নিশির কাছে কল করলো ! নিশি এখানে ঘটে যাওয়া সবকিছু নিশাত ভাইয়াকে বলল ! শুভ্র ভাইয়ের ফোন নাকি হারিয়ে গেছে তাই কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না । আর এই মূহুর্তে শুভ্র ভাই নিশাত ভাইয়ার কাছে নেই তার জন্য কথা ও বলতে পারছে না ।

পরের দিন বিকালে আম্মু আমাকে ফারহানের সাথে দেখা করার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে পাঠালো ! আমি রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে দেখি ওই বলদটা একটা চেয়ারে বসে আছে ! আমাকে দেখেই লজ্জা পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো । আমি যখন চেয়ারে বসতে যাব তখন কেউ ঝড়ের গতিতে এসে আমার হাতটা ধরে ফেলল ! আমি তাকিয়ে দেখি শুভ্র ভাই ! শুভ্র ভাইকে দেখে আমি যেন আমার প্রান ফিরে পেলাম ! শুভ্র ভাই আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন ,

” বিয়ে ঠিক করতে না করতেই নাচতে নাচতে দেখা করতে চলে এলি ! এতো সাহস হয় কীভাবে তর ? আমার কথা একবার ও তোর মাথায় আসেনি !

উনি আমাকে না বলে চট্টগ্রাম চলে গেলেন ! নিশাত ভাইয়ার ফোন দিয়ে তো একবার কল করতে পারতো তাও করলো না ! আর এখন উনিই এসে আমাকে ধমক দিচ্ছে !

” এক্ষুনি বাসায় চল !

কথাটা বলেই শুভ্র ভাই আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টে থেকে বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলো ! বলদটা কিছু না বুঝে হা করে আমাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ! শুভ্র ভাই মাঝ পথে এসে আমার হাতটা ছেড়ে ওই বলদটার সামনে গিয়ে বলল,

” বাসায় গিয়ে আপনার আম্মুকে বলবেন আপনি এই বিয়ে করবেন না ! তারপর ফুপ্পির কাছে ফোন দিয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে দিবেন আর যদি বিয়ে না ভাঙ্গেন তাহলে আপনার হাত-পা ভেঙ্গে নদীতে ভাসিয়ে দিবো ! কথাটা যেন মাথায় থাকে!

শুভ্র ভাই আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বাহির হয়ে সোজা উনাদের বাসায় নিয়ে গেলেন ! গিয়েই চিৎকার করে মামনি কে ডাকতে লাগলেন! শুভ্র ভাইয়ের চিৎকার শুনে মামনি বেরিয়ে এসে বলল,

” এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন ?

#চলবে#ভালোবাসা_তুই
#শেষ_পর্ব
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

শুভ্র ভাই প্রচন্ড রাগে ফুলদানিটা একটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলবো। হঠাৎ করে ফুলদানি ভেঙে যাওয়ার শব্দে আমি কেঁপে উঠলাম। শুভ্র ভাইয়ের যে রাগ না জানি কি করে বসে । আমি একপাশে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি । মামনি শুভ্র ভাইকে বলল,

” আহঃ শুভ্র এভাবে ভাংচুর করছিস কেন ?

শুভ্র ভাই রাগে চিৎকার করে বলল ,

” ভাংচুর করবো না তো কি করবো আম্মু ?? আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা শুভ্রতার বিয়ে ঠিক করে ফেললে !

শুভ্র ভাই রাগে কথাটা বললেও পরক্ষনেই মামনির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

” আম্মু আমি কি শুভ্রতার যোগ্য হয়ে উঠিনি ?? আমি কি শুভ্রতা কে সুখে রাখতে পারবো না ?? তোমার ছেলে কি এতটাই খারাপ যে তার কাছে শুভ্রতাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না ??

” এভাবে কেন বলছিস ? আমার ছেলে মোটেও খারাপ না ! আমার ছেলের কাছে শুভ্রতা সব থেকে বেশি সুখী থাকবে !

” তাহলে কেন তুমি বিয়ে ঠিক করা থেকে আটকালে না! আম্মু তুমি তো জানো আমি শুভ্রতাকে কতটা ভালোবাসি !

” ছেলে পক্ষ অনেক তাড়াহুড়া করেছিল আর তুই ও তখন চট্টগ্রাম ছিলি। আমি কিছু করার সুযোগই পাইনি !

” সুযোগ তো এখনো আছে ! আমি কিছু জানিনা তুমি আর আব্বু এখনই ফুপ্পির কাছে গিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করো !

শুভ্র ভাইয়ের কথায় মামনি মামুকে ফোন করে বাসায় আসতে বললেন ! মামু ঘন্টা খানেক পর বাসায় আসলেন ! তারপর শুভ্র ভাইয়ের জেদের কাছে পরাজিত হয়ে আমাদের বাসায় গেল !

অন্যদিকে নিশির কাছে শুনলাম শুভ্র ভাই নাকি চট্টগ্রাম থেকেই ঠিক করে এসেছেন ঢাকায় আসলে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করবেন । তাই নিশাত ভাইয়াও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই বেস্ট ফ্রেন্ড একসাথেই বিয়ে করবেন । এখন নিশাত ভাইয়ার বাবা-মা আর নিশির বাবা-মা ও আসছে ! এখন দেখার পালা কি হয় ! আমার প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে আমাদের বিয়ে যদি মেনে না নেয় তাহলে কি হবে ?

কিছুক্ষণ আগে নিশির বাবা-মা এসে পৌঁছেছে । নিশাত ভাইয়ার বাবা-মায়ের আসতে আরো আধাঘণ্টা সময় লাগবে ! এখনও কোনো আলাপ- আলোচনা শুরু হয়নি! নিশাত ভাইয়ার বাবা-মা আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ! আম্মু আর নিশির আম্মু মিলে রান্নাঘরে কাজ করছে !

আমি খাটের এক কোনায় বসে নখ কামড়াচ্ছি আর নিশি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজছে ! আমাকে যেহেতু সবাই আগে থেকেই চিনে তাই আমার তেমন সাজার দরকার নেই ! নিশিকে নিশাত ভাইয়ার আব্বু-আম্মু প্রথম দেখবে তাই নিশি সাজছে ! নিশি এমনিতেই অনেক সুন্দর ! আমার যতোটুকু মনে হয় নিশাত ভাইয়া আর নিশির বিয়েতে কোনো বাধা বিপত্তি সৃষ্টি হবে না !

সোফায় আমি আর নিশি পাশাপাশি বসে আছি ! আমাদের ঠিক সামনে নিশাত ভাইয়ার আব্বু-আম্মু আর মামু- মামনি বসে আছে ! শুভ্র ভাই আর নিশাত ভাইয়া ও এখানে আছে ! আমি শুভ্র মাএ নিশির অনুরোধে এখানে বসে আছি তা না হলে আমি এখানে থাকতামই না !

নিশাত ভাইয়ার আম্মু কঠোর চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে থেকে নরম সুরে নিশিকে জিঙ্গেস করলেন,

” তোমার নাম কী ?

” জী নিশি !

” নিশাতকে যতটা ভালোবাসো আমাদের কি ততটাই ভালোবাসবে !

নিশাত ভাইয়ার আম্মুর কাছ থেকে এই প্রশ্ন নিশি আশা করেনি ! নিশি আমতা আমতা করে বলল ,

” জী ! উনাকে যখন ভালোবাসি উনার সাথে জড়িত প্রত্যেকটা মানুষকেও ততটাই ভালোবাসবো !

নিশাত ভাইয়ার আম্মু নিশিকে আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করে বললেন ,

” আচ্ছা এখন তুমি ভিতরে যাও মা !

নিশাত ভাইয়ার আম্মুর কথামত আমি আর নিশি রুমে চলে আসলাম ! রুমে এসে মাথায় এক ঝাঁক দুশ্চিন্তা নিয়ে বসে আছি । মাথায় ওপরে ফ্যান ঘুরছে তাও ঘেমে একাকার হয়ে গেছি ! এমন সময় রোহান ভাইয়া রুমে এসে আমাদের উদ্দেশ্য বলল,

” তোরা দুজন তলে তলে এতো কিছু করে ফেলেছিস আর আমরা কেউ টেরও পেলাম না !

আমি আর নিশি একে অপরের দিকে তাকালাম ! তারপর নিশি রোহান ভাইয়াকে বলল ,

” ভাইয়া এখন প্লিজ মজা করো না ! এমনিতেই অনেক টেনশনে আছি ! তুমি ও এখন নিচ থেকে এলে ওখানে কি হচ্ছে বলনা !

” তোদের বিয়েটা মনে হয় কেউ মেনে নেবে না রে !

রোহান ভাইয়ার কথা শুনে আমাদের অবস্থা এমন যে এখনই কান্না করে দিবো ! রোহান ভাইয়া আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে এই বেহাল অবস্থা দেখে হেসে বলল ,

” তোদের তাড়ানোর ব্যবস্থা হয়ে গেছে ! কিন্তু বিয়ের আগে তোমারা দুজন দুজনের রোমিওদের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারবে না !

রোহান ভাইয়ার প্রথম কথায় খুশি হলেও পরের কথাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল ! রোহান ভাইয়া বললো আর পাঁচ দিন পর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে ! তারমানে এই পাঁচ পাঁচটি দিন আমরা কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারবো না !

বিয়ে আমাদের বাসায় হবে ! নিশাত ভাইয়া এখন শুভ্র ভাইদের বাসায় আছে ! বিয়ের দিনই নিশিকে নিয়ে একেবারে চট্টগ্রাম চলে যাবে ! দেখতে দেখতে তিনদিন চলে গেল ! আজকে আমাদের গায়ে হলুদ ! শুভ্র ভাইকে একবার দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে ! শুভ্র ভাই একদিন কল করেছিল কিন্তু আমি কথা বলার আগেই রোহান ভাইয়া কোথা এসে ফট করে আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে গেছিলো ! অসহ্য যন্ত্রণায় এই তিনটি দিন পাড় করেছি !

আমি আর নিশি স্টেজে পাশাপাশি বসে আছি ! সবাই একে একে এসে আমাদের হলুদ ছুঁইয়ে দিচ্ছে ! আমাদের কাজিন রা নাচানাচি করছে ! অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেল ! অনুষ্ঠান শেষে আমরা গিয়ে শুয়ে পড়লাম !

আমি আর নিশি পুতুলের মতো বসে আছি ! পার্লার থেকে লোক এনে আমাদের সাজানো হচ্ছে । মনের মধ্যে হাজারো অনুভূতি ঘিরে রেখেছে ! এমন সময় সবাই বর এসেছে বর এসেছে বলে চেঁচিয়ে উঠলো! বিয়ে শেষে নিশি কান্না করে নিশাত ভাইয়াদের সাথে চট্টগ্রাম চলে গেল । আমি অবশ্য কান্না করিনি ! আমি কেন কান্না করবো ? শুভ্র ভাই তো বলেছেই আমার যখন ইচ্ছে করবে তখন আমি আব্বু – আম্মুর কাছে চলে আসতে পারবো !

~~~~~~~~~~~~~~

আমি এখন বাসর ঘরে বসে নিশাত ভাইয়ার অপেক্ষা করছি ! চোখে মুখে হাজারও স্বপ্ন ! এখন রাত একটা বাজে এখনও নিশাত ভাইয়ার আসার নাম নেই! বসে থাকতে থাকতে আমার চোখে ঘুম চলে আসছে ! হঠাৎ দরজা আটকানোর শব্দে সামনে তাকিয়ে দেখি নিশাত ভাইয়া চলে এসেছে !

নিশাত ভাইয়া এসে আমার পাশে বসল ! আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আমায় একরাশ লজ্জা ঘিরে রেখেছে । নিশাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থেকে দুষ্ট হেসে বলল,

” লজ্জা পাওয়ার মতো তো কিছু করিনি এখনই এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন ?

” উফফ আপনি সব সময় ইচ্ছে করে আমায় লজ্জায় ফেলেন !

” ওহ আচ্ছা এবার তাহলে লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু করি ? কি বলো !

নিশাত ভাইয়ার কথায় প্রতিবারের মতো এবারও লজ্জা পেয়ে নিশ্চুপ থাকলাম ! কথায় আছে ” নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ” নিশাত ভাইয়া আমার সম্মতি পেয়ে দুজন ভালোবাসার এক অতল সাগরে ডুবে গেলাম!

**************

বাসর ঘরে এসেই শুভ্র ভাই সটান হয়ে শুয়ে পড়ে আমায় বলল ,

” পা দুটো অনেক ব্যাথা করছে একটু টিপে দে তো !

আমি শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি । বাসর ঘরে কেউ বউকে পা টিপতে বলে ? এই ছিল উনার মনে ! বাসর ঘরে আমাকে দিয়ে পা টিপালে সারাজীবন আমাকে কাজ করিয়ে মেরেই ফেলবে ! আমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে শুভ্র ভাই বলল ,

” কি বলেছি শুনতে পাস নি ? এখানে মূর্তির মত বসে না থেকে একটু স্বামী সেবা কর !

” আমি পারবনা !

আমার কথায় শুভ্র ভাই ফট করে উঠে বসে বলল,

” দেখেছিস তুই কত বড় বেয়াদব মহিলা ! বিয়ের প্রথম রাতেই বলছিস পারবনা !

” আমি বেয়াদব তো আপনি কি হ্যাঁ ! বাসর রাতে বুকে পা টিপতে বলছেন !

” আমার বউ আমার যা ইচ্ছে তাই বলবো ! এখন পা টিপে দে তো তা না হলে তোকে খাটের নিচে তেলাপোকার সাথে ঘুমাতে হবে !

শুভ্র ভাই যা বলে তাই করেন ! তেলাপোকার সাথে ঘুমানোর ভয়ে আমি শুভ্র ভাইয়ের পা টিপে দিতে লাগলাম । কিছুক্ষণ পর শুভ্র ভাই বলল ,

” চল ছাদে যাই !

আমি আর শুভ্র ভাই ছাদে গেলাম । চাঁদের আলোয় পুরো ছাদ আলোকিত হয়ে আছে । শুভ্র ভাইদের ছাদে একটা দোলনা আছে । আমরা গিয়ে দোলনায় বসলাম! আমি শুভ্র ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছি। এমন সময় শুভ্র ভাই বলল,

” আমার এক সমুদ্র সুখের সাথি তুই
আমার হৃদয়ের মাঝে প্রান ভোমরা তুই
আমার এক আকাশ ভালোবাসা তুই !!

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here