#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২১
_____________________________
ঝাপসা নয়নে, দাতেঁ দাতঁ চে/পে পো/ড়া হাতের দিকে তাকিয়ে আছে সূচনা।কানে আসছে গা জ্বা/লানো সব কথা।
মিসেস আনহা মিসেস আফিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলেই যাচ্ছেন-
–‘কী দরকার এত আহ্লাদ দেখানোর,এত বছর খায়িয়ে পড়িয়ে বড় করেছিস,লেখাপড়া করিয়েছিস তা কি কম ছিল?এখন আবার বিয়ে করিয়ে সাথে আরেকটা উট/কো ঝামে/লা কাধে নিয়েছিস।এত দরদ কেন তোর?আমাদের দেখতে পারিস না।হ্যা রে আফিয়া আমাদের বোন হয়ে এমন বোকা কিভাবে তুই।কোথাকার কোন মেয়ে নিয়ে আসছিস কে জানে,এখন আবার আমার বোন, বোন জামাইর ঘাড়ে বসেছে।আমার ভাগ্নে ভাগ্নীগুলোর ওপর তো চা/প পড়ে।তাদের পড়ালেখা,খাওয়া-পড়ার কি কম খরচ, সাথে তো দুইজন আছেই,বিয়ে করিয়ে আবার এখানে ঠাই দেয়ার কি আছে।বোন সহ পাঠিয়ে দিবি।চাকরি তো করছেই সেই তোদের অফিসেই।সমস্যা কী?এ বাড়িতেই রাখতে হবে কেন?যতসব, ফা/লতু।
সূচনার এবার রা/গ হওয়ার পাশাপাশি,কথাগুলো আঘা/ত করলো তার আত্মসম্মানে।আজ পর্যন্ত খাওয়া -পড়া নিয়ে কখনো কোনো কথা শুনতে হয়নি।কখনো খো/টা দিয়ে বলে নি কেউ।তার বাবার যা টাকা আলহামদুলিল্লাহ তার জন্য।যা আছে সব ই তার।কিন্তু এমন না যে সে এলো পাথারি সব খরচ করেছে।আর এই যে আঠারো বছরে তার বাবা-মা কি তার পেছনে কম খরচ করেছে।কিন্তু কখনো তার বাবা-মা ভুল ক্রমেও তো এরকম কথা শোনায়নি।এজন্যই বুঝি তারা বাবা-মা।মিসেস আনহা আর মিসেস রিমা যদি সূচনার পরিবারের কেউ হতো তাহলে হয়তো এতক্ষণে অনেক কথা শুনিয়ে দিত সূচনা।নিজেকে কোনোরকমে সামলে রেখেছে সে।মিসেস আফিয়া তাদের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না।অতি সাবধানে সূচনার পো/ড়া জায়গাটায় মল/ম লাগিয়ে দিচ্ছেন।সূচনার দৃষ্টি একবার হাতে তো আরেকবার মিসেস আফিয়ার মুখপানে যাচ্ছে। অতি শান্ত, শীতল তার চোখ-মুখ। কোনো ঝড়ে/র কী আভাস?পরিস্থিতি যখন পরিমানের চেয়েও শান্ত-স্বাভাবিক থাকে, তখন তা কোনো ঝড়ে/র পূর্বাভাস দেয়।সূচনা তো তাই জানে।তাহলে এখন কী হবে?সূচনার হাতে মল/ম লাগানো হলে মিসেস আফিয়া শান্ত গলায় বললেন-
–‘তুই রুমে যা, আর হাতে পানি লাগাস না এখন।
সূচনা যেতে ইতস্তত করলেও মিসেস আফিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করলেন।রান্নাঘর থেকে চলে আসলো সূচনা।রুমে আসতে আসতে মনের ভেতর খচখচ করছিল তার, বারবার প্রশ্ন জাগছিল- “যদি প্রণয় ওই সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকত,তাহকে কেমন রিয়েক্ট করতো?কিছু বলতে পারত?নাকি চুপ করে থাকত মাথানিচু করে?উত্তর খুজে পেল না সূচনা।তার খা/রাপ লাগছে, তার জন্য এমন হয়েছে, সাবধানে কাজ করলে হয়তো এই দুর্ঘ’টনা ঘটতো না।আর তারা অতকিছু বলার সাহস ও পেত না।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই রুমে আসলো সূচনা। বিছানায় বসতে নিয়েও বসলনা।ব্যালকনিতে গেল, খোলা হাওয়া পাওয়া যাবে একটু,হাত ও জ্ব/লছে,সাথে শরীর ও।সেটা কী রা/গে?তাদের সেসব কথার জবাব দিতে না পারায়?সূচনার প্রায় ই হয় এমন।কেউ তার সম্পর্কে বা তার পরিবার সম্পর্কে উল্টা-পাল্টা কিছু বললে সেটার জবাব দিতে না পারলে রা/গে দুঃখে গা জ্ব/লে তার।এটা অদ্ভুত এক রো/গ না কি সেটা জানা নেই তার।তবে বিরক্তি/কর। ব্যালকনিতে দাড়াতেই বাতাসের প্রবল ঝাপ/টা ছুয়ে গেল সমস্ত শরীর।বু/ক ভরে শ্বাস নিল সূচনা।কিছুটা স্বস্তি মিলছে এখন।কাধে কারো স্পর্শ পেতেই খানিক চম/কে পেছনে তাকালো সূচনা।প্রণয় শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সূচনার দিকে। সূচনা ও শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।সূচনার পো/ড়া হাতটা কিছু না বলে নিজের হাতের মাঝে নিল প্রণয়।কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ছেড়ে দিল।স্বাভাবিক স্বরে বললো-
–‘ কিছু হয়নি, বেশি লাগেনি, ঠিক হয়ে যাবে।
সূচনা একটু মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘আমি ব্যথা পেয়েছি আর আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন কিছু হয়নি।
–‘কী করব এখন?তুমি কী ভেবেছিলে সিনেমার নায়কদের মতো স্লো মোশন এ দৌড়ে আসব,হাত ধরে আধা ঘণ্টা তাকিয়ে থাকব তারপর পরবর্তী আধা ঘণ্টা অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিব?নো চান্স।আমার অবর্তমানে কেউ একজন আমার থেকেও যত্ন করে তোমার ক্ষ’ত তে মলম লাগিয়ে দিয়েছে, এখন যদি তারপর ও আমি অতিরিক্ত তদারকি করতে আসি তাহলে সেটা হবে অতিরিক্ত কেয়ার বা ন্যাকা/মি।আমি ওসব করতে পারি না। তাছাড়া শরীরের ক্ষত যত গভীর ই হোক না কেন, মনের ক্ষত তার চেয়ে বহুগুণ তীব্র। এখন মুখে অস্বীকার করবে জানি,তবে তুমি মানুষ, রোবট না।যদিও সেসব লজিকলেস কথা। তবে ঔসব কথা ইগনোর করতে গেলেও করা যায় না, একটু হলেও খারা/প লাগে।
সূচনা কিঞ্চিৎ লজ্জা বোধ করলো।সে তো সেভাবে বলে নি।এমনি বলে ফেলেছে কিন্তু প্রণয় যে এভাবে বিষয়টা বলবে, সেটা বুঝতে পারেনি সূচনা।আমতা আমতা করে বললো-
–‘হ্যা,,তবে আমি এমনি বলেছি। সেভাবে বুঝাইনি ব্যাপারটা
–‘হু।
–‘ভাবি হাতে নাকি ব্যথা পেয়েছ?দেখি।বেশি লেগেছে?
দুজনের কথার মাঝেই দিনার কণ্ঠ।দুজন একসাথে পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখল দিনা,ইরা আর তিথি দাড়িয়ে আছে। মুখশ্রীতে কিছু টা চিন্তিত ভাব।
সূচনা হাসল।মাথা নেড়ে বললো-
–‘না এখন ঠিক আছে, অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছে মামি।
ইরা শাসনের স্বরে বললো-
–‘ সাবধানে কাজ করবে না। ধ্যান কোথায় থাকে।ভাইয়ার দিকে।(চোখ টিপ দিয়ে)
সূচনা চট করে তাকালো প্রণয়ের দিকে।এতক্ষণের গম্ভীর ভাবটা নেই প্রণয়ের মুখশ্রীতে। সে ও যেন অবাক,দৃষ্টি উৎসুক যেন জানতে চায় -সত্যি ই কি তার ধ্যানে থাকে।সূচনা কিছু টা অস্বস্তি বোধ করল।তার এভাবে তাকানো টা মোটেও ঠিক হয়নি। অস্বস্তি হচ্ছে এখন, ঝট করে সরিয়ে নিতেও কেমন যেন লাগছে। কেন তাকলো সে উত্ত শূন্য।
____________________________
মিসেস আনহা আর রিমা এখনো কানাকানি করছে। মিসেস আফিয়া যথেষ্ট শান্ত ছিলেন এতক্ষণ। কিন্তু এবার তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল তার।তে/তে উঠলেন যেন।বাজ/খাঁই গলায় বললেন-
–‘তোরা কী চাস হ্যা?প্রতিবারই ছেলেটাকে নিয়ে কথা শোনাতে হবে তোদের?কী সমস্যা ওকে নিয়ে,বলতে পারবি,ছেলেটা কি করেছে তোদের?
মিসেস আনহা মুখ বা’কিয়ে বললেন-
–‘আমাদের কিছু করেনি, কিন্তু ও কে হয়, কেন ওর জন্য এত দরদ,রক্তে/র সম্পর্ক আছে তোনার? নেই তো।তাহকে কীসের দরদ এত। না বাপ আছে না মা৷ সারাজীবন তোমাদের টা খরচই হবে কিছু দিতে পারবে? পারবেনা।তাহলে এরকম মানুষদের রেখে লাভ কী?এটা তোমার বাড়ি নিশ্চয়ই কোনো এনজিও৷ সংস্থা না যে যাকে তাকে আশ্রয় দিয়ে দিবে। তোমরা না থাকলে ওরা এখন রাস্তার ছেলে মেয়ে হতো আর এখন,,,
মিসেস আনহা শেষ করতে পারলেন না কথা।মুখের কথা মুখেই থেকে গেল। রান্নাঘর কাপি/য়ে যেন আওয়াজে তুললো তার গালে পড়া চ/ড়।চমকে উঠলেন মিসেস রিমা।মিসেস আনহা যেন প্রতিক্রিয়া দেখাতেই ভুলে গেছেন।কল্পনা ও করতে পারেননি, মিসেস আফিয়া যে তার গা/য়ে হাত তুলতে পারেন।নিহা, ফিহা রান্নাঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিল।ইতিমধ্যে দিনা,তিথি আর ইরার আগমন ঘটেছে রান্নাঘরে।তারাও আশ্চর্য বনে গেছে। ফিহা অবশ্য কিছু টা আন্দাজ করেই নিয়েছিল। কারণ প্রণয়কে নিয়ে সমস্যা টা তার মা/য়েরই বেশি।সবসময় ই প্রণয়ের ব্যপারে খা/রাপ কিছু বলতে দু পা এগিয়ে থাকেন। সে বুঝে উঠতে পারে না,কি সমস্যা তাকে নিয়ে? তার সাথে না যোগাযোগ হয় না কিছু। তাহলে কেন বলতে হবে এত কথা? কিছু মানুষ হয়তো থাকে,যারা শুধু শুধু ই অন্য কে নিয়ে টা/নাহেঁচড়া করে,অন্য কে কষ্ট দিয়ে সুখ পায়,পৈশাচি/ক সুখ।আচ্ছা তার মা ও কি তাহলে সেই লোকেদের দলে চলে গেছে?না হলে এমন করবে কেন?ফিহা মনে মনে এসব ই ভাবছিলো, তখনই কানে এলো তার মা/য়ের স্বর।কাঁপা কাঁপা গলায় উনি বললেন-
–‘তু,,তুই আমাকে মা/রতে পা,,পারলি?তাও ওই ছেলের জন্য যার কোনো পরিচয় নেই, যার কোনো,,
–‘চুপ একদম চুপ।তোর কি বিন্দু মাত্র লজ্জা নেই?যে কারণে গা/য়ে হাত তুললাম তারপরও সেই কথাই বলছিস।ছি/হ! এখন তো ভাবতেই গা রি রি করছে তোরা আমার বোন।যে ছেলের কথা বলছিস সে রাস্তার ছেলে কেন হতে যাবে?সে আমার ছেলে, আমার একমাত্র ছেলে।সে আমাদের ঘাড়ে আসে খায় না।নিজের স্ত্রী আর বোনকে খাওয়ানো পড়ানোর মতো তার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে।তার নিজস্ব ফ্ল্যাট ও আছে যেটা তার নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে কেনা।সে চাইলেই পারে সেখানে যেয়ে থাকতে।কিন্তু সে তোদের মত মানসিকতার না। সম্পর্কের বন্ধন কী সে সম্পর্কে অবগত সে।সম্পর্ক রক্ষা করতে জানে। আর কেন থাকবে সে আলাদা নিজের মা-বাবা,বোনদের ছেড়ে?অন্তত আমি বেচে থাকতে আমার ছেলে আমার কাছে ই থাকবে। যার যা বলার ইচ্ছে বলুক।প্রণয় আমার ছেলে।আমার ছেলে ও।
দিনার দিকে তাকিয়ে বললেন-
–‘দিনা আমি চাইনা আমার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে এমন অসুস্থ মন মানসিকতার মানুষ উপস্থিত থাকুক যারা আমার ছেলে আর ছেলের বউকে নিয়ে বা/জে কথা বলে। তোর কী মতামত?
দিনা সহসা উত্তর দিলো-
–‘আমি চাইনা আম্মু আমার ভাই আর ভাবিকে নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনো ধরনের বা/জে কথা বলা হোক।
যদি তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে তাহকে থাকুক না হলে,,
–‘বুঝেছি।
মিসেস আফিয়া আনহা আর রিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
–‘ আমি মুখে বলে অপমান করতে চাই না আর।বুঝে নিলে ভালো।
মিসেস আফিয়ার কথা শেষ হতেই নিহা দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো তার মা/য়ের কাছে আর বললো-
–‘এরকম বাড়িতে থাকর মতো ইন্টারেস্ট আমাদের বেই যেখানে ডেকে এনে আমাদের অপমান করা হয়,তাও আবার এমন কারো জন্য। মাম্মা চলো।
মিসেস আফিয়া শান্ত গলায় নিহাকে বললেন-
–‘আমি চাই না একটু আগে তোর মা/য়ের গালে যেটা পড়েছে সেটা তোর গালে পড়ুক।
নিহা দাত কিড়মিড় করে বললো-
–‘মাম্মা চলো,ফিহা চল।
ফিহা কিছু টা ভয় নিয়েই বললো-
–‘আমি যাবনা,আমার প্রণয় ভাইয়া, আর ভাবি কাউকে নিয়ে ই কোনে সমস্যা নেই।তোমরা গেলে যাও।
মিসেস আনহা চট করে তাকালেন ফিহার দিকে।ফিহা ভাবলেশহীন। মিসেস আনহা কেন যেন কিছু বলতে পারলেন না। কোনোরকম শরীরটা টেনে নিয়ে বের হলেন রান্না ঘর থেকে।বের হওয়ার সময় দেখা হলো সূচনার সাথে।নিহা বিরক্তি নিয়ে তাকালো সূচনার দিকে।সূচনা শান্ত চোখে তাকালো তার দিকে। সে জানে না কিছু কী হয়েছে এখানে।
.
.
.
–‘প্রণয় তোর মাথা খারাপ কী বলছিস এগুলো?
–‘আমি ঠিক ই বলছি মামি,এটাই বেস্ট ডিসিশন। আরও আগেই করতে চেয়েছিলাম আমি তোমার জন্য করতে পারিনি।কিন্তু আমার মনে হয় সময় এসে পড়েছে।
প্রণয়ের কথা শুনে তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন মিসেস আফিয়া, ইসহাক সাহেব, দিনা,তিথি সবাই।
#চলবে
( বিয়েতে প্যাচ লাগিয়ে দিয়েছি😁।কি মনে হয় কি হবে?আজকে মাথা ব্যথা ছিল বিকেল থেকে তাই লিখতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুঃখীত☹️।হ্যাপি রিডিং❤️। আসসালামু আলাইকুম।)